হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো #মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা #পর্ব ১০

0
348

#হে_সখা_মম_হৃদয়ে_রহো
#মুগ্ধতা_রাহমান_মেধা
#পর্ব ১০

রাতের আকাশটাকে কালো গালিচার মতো লাগছে।বিশাল জায়গা জুড়ে নিজেকে মেলে ধরেছে।সুবিশাল আকাশটাতে কয়েকটা তাঁরা মিটমিট করছে।তারকাদের উজ্জ্বলতায় বুঝার দায় নেই আজ অমাবস্যা।শীতল সমীরণ এদিক সেদিক গন্তব্যহীন ছুটছে।গাছের পাতাগুলোকে নিজ দাপটে নড়াচড়া করাচ্ছে।নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে পাশাপাশি ছাঁদের রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দু’জন মানব-মানবী।শীতল সমীরণ ছুঁয়ে দিচ্ছে দু’জনকেই।মানবীর শাড়ীর আঁচলটা,খোলা চুলগুলো বাতাসের সাথে উড়ছে।আঁচল ধরে রাখার কোনো স্পৃহা মানবীর মধ্যে নেই।দুনিয়ার কোনো বিষয়ই তাকে এখন আর ভাবায় না।তার হৃদয় স্পর্শ করতে পারে না।এ হৃদয় একজন খুব যত্ন করে নিজের অজান্তেই ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে।

পাশে দাঁড়ানো মানবের মুখেও কথা নেই।সে হয়তো নিজের মধ্যে কথা সাজাচ্ছে।কথাদের হিসেব-নিকেশে ব্যস্ত সে।হয়তোবা বুঝে উঠতে পারছে না কি বলা যায়!

মানব-মানবী দু’জনই যেনো নিরবতার খেলা খেলতে ব্যস্ত।কোনো একজন কথা বললেই অপরজন জিতে যাবে।তাই যেনো উভয়ই মুখে কুলুপ এঁটেছেন।কথা না বলার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।তবে বেশিক্ষণ এই প্রতিযোগিতা চললো না।হেরে গেলেন মানবী নিজেই।নিরবতা ভাঙ্গলেন।
ধরা গলায় বললেন,

“আপনি এখানে কেনো স্যার?আপনার তো এখন রাইমা আপুর সাথে থাকার কথা,সুখের খেলায় মেতে উঠার কথা।যতই হোক আজ আপনাদের ফুলশয্যা।প্রত্যেকটা মেয়েরই এই দিনটা নিয়ে কত স্বপ্ন থাকে!”

প্রতিজ্ঞার প্রথম কথাগুলো সংকল্প এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিলো।সে জানে মেয়েটা এখন নিজের মধ্যে নেই।ঐ আকাশের পানে চেয়ে সংকল্প বললো,
“তোমারও ছিলো নাকি?”

প্রতিজ্ঞা তাচ্ছিল্যের হাসি হাঁসলো।চেহারায় মলিনতা স্পষ্ট।উল্টোদিকে ফিরে বললো,
“ছিলো!একটা মানুষকে ঘিরে অনেক অনেক স্বপ্ন-শখ-আহ্লাদ-ইচ্ছে ছিলো।কিন্তু আজ সব শখ-আহ্লাদ বৃথা।আমার সকল অপেক্ষা বৃথা।”

সংকল্প যেনো চাইলো প্রতিজ্ঞার দিকে।প্রতিজ্ঞা হুট করে সংকল্পের দিকে ফিরলো।নাহ!সংকল্প তাকায়নি।সে তো ঐ দূরের আকাশ দেখতে মত্ত।
প্রতিজ্ঞা সংকল্পে অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।ধরা গলায় বললো,
“আমায় কেনো ভালোবাসলেন না,সংকল্প?”

শব্দের দল কর্ণগোচর হতেই সংকল্প ফিরলো।ঐ গভীর চোখগুলায় চোখ নিবদ্ধ করতে গিয়েও করলো না।দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।স্বাভাবিকভাবেই বললো,
“ভালোবাসা প্রকাশ করো নি তুমি!”

অধর প্রসারিত করলো প্রতিজ্ঞা।চেহারায় অসহায়ত্ব।থেমে থেমে বললো,
“অপেক্ষায় ছিলাম আসেননি। মিস করছিলাম বুঝেননি। আপনজন ভেবেছিলাম মানেন নি। দুঃখের ভাগ নিতে চেয়েছিলাম শেয়ার করেন নি।আপনি রাগী সেটা জানতাম, কিন্তু নিষ্ঠুর সেটা বুঝিনি।ভালোবাসা প্রকাশ করার আগেই অন্যের হয়ে যাবেন,ভাবতে পারি নি।

সংকল্প ধীরে ধীরে বললো,
“একদিন সময় সব ঠিক করে দিবে।সুদিন আসবে।”

“হাহ!সুদিন আসবে কিন্তু এসে দেখবে আমি আর নাই।কর্পূরের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছি।”

বুকে তীব্র ব্যাথা সংগোপনে ঢেকে রেখে স্বাভাবিক গলায় সংকল্প বললো,
“নিজেকে সামলাও।সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

প্রতিজ্ঞা শব্দ করে হেঁসে উঠলো।পুরোটা ছাঁদ যেনো তার হাসির শব্দে ঝনঝনিয়ে উঠলো।দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,
“সময়,সময়,সময়!এই সময়ই তো আমার থেকে আমার প্রাণপুরুষকে কেঁড়ে নিলো।”

“প্রাণপুরুষ” শব্দটা তড়িৎ গতিতে সংকল্পের বুকে গিয়ে লাগলো।যেনো ইলেকট্রিক শক্ খেলো মাত্র।”প্রাণপুরুষ”!একবার,দুইবার,তিনবার একে একে দশবার শব্দটা আওড়ালো সংকল্প।হৃদয়ের কতটা মাধুরি মিশিয়ে ভালোবাসলে একটা মানুষকে প্রাণপুরুষ বলে সম্বোধন করা যায়!সে কারো “প্রাণপুরুষ”, প্রাণের পুরুষ।কিন্তু নিয়তিতে অন্য কিছুই ছিলো বটে।

মলিন কন্ঠে বললো,
” সময় যেমন সব কেঁড়ে নিয়েছে,একদিন এই সময়ই তোমাকে সব ফিরিয়ে দিবে।দেখো,এমনভাবে ফিরিয়ে দিবে যা তুমি কল্পনাও করতে পারছো না।”

প্রতিজ্ঞা কিছু বললো না।কিছু সময় চুপ করে রইল।সংকল্পও যেনো এই নিরবতাকে সমর্থন করলো।

প্রতিজ্ঞার ভেতর থেকে আহাজারি বেরিয়ে আসতে চাইছে।চোখদুটো থেকে জল গড়িয়ে পরছে।সামনে প্রাণপুরুষকে দেখে তার বুকে হামলে পড়তে ইচ্ছে করছে।তাকে জাপটে ধরে শব্দ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।সকল অভিযোগ, অভিমান,দুঃখ-কষ্ট ভেতর থেকে উগড়ে দিতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু সে কাছে গেলো না। দূর থেকেই উগড়ে দিতে লাগলো,

“আপনাকে পেয়ে গেলে হয়তো জীবন রূপকথার মতো সুন্দর হতো,কিন্তু আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি তা আপনার জানা হতো না।”

সংকল্প শুনলো,চোখ বুঁজে ভেতরের কষ্টগুলোকে গলাচাপা দিলো।গম্ভীর কন্ঠ বললো,
“এতোদিন যখন প্রকাশ করো নি, এখন সময় হারিয়ে আর প্রকাশ করো না,মেয়ে।আমার ভীষণ কষ্ট হবে যে।আমি যে এখন তোমার জন্য নিষিদ্ধ।”

“নিষিদ্ধ” এই শব্দটাই যেনো প্রয়োজন ছিলো প্রতিজ্ঞাকে উত্তেজিত করে দেওয়ার।
সে অস্থির চিত্তে বলতে শুরু করে,

“হ্যাঁ করিনি!সময়ের অপেক্ষা করছিলাম।প্রথম যখন বুঝতে পারি আমি আপনাকে ভালোবাসি,তখন আপনি কানাডায় ফিরে গিয়েছেন!কিভাবে জানাতাম?
ভার্সিটিতে কত কত স্টুডেন্ট টিচারদের প্রপোজ করে,আপনাকেও করেছে।আমি চাই নি আমি তাদের কাতারে পরি।আমার ব্যক্তিত্বের সাথে ঐগুলা যায় না।কিন্তু ভালোবাসাও অস্বীকার করতে পারতাম না।
একজনকে ভালোবেসে এক কঠিন ব্যক্তিত্বের অষ্টাদশী আজ দিশেহারা এক ভঙ্গুর নারী।”

সংকল্প চুপ করে রইলো।শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না সে।প্রতিজ্ঞা দু’কদম এগিয়ে গেলো।শান্ত গলায় বললো,

“জানেন তো!আমরা মানুষ, স্বভাবতই নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আমাদের ঝোঁক বেশি থাকে।আমার স্বভাবও তার ব্যতিক্রম নয়।আপনার প্রতি আমার ঝোঁক যে কমার নয়।বরং দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।”

সংকল্প চোখ মেলে প্রতিজ্ঞার পানে তাকালো।মেয়েটার মলিন দৃষ্টি, চেহারায় না পাওয়ার কষ্টের ছাপ,সংকল্পকে ভেতর থেকে পু*ড়াচ্ছে,বড্ড পু*ড়াচ্ছে।ইচ্ছে করছে,জাপটে ধরতে মেয়েটাকে।বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে।এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে যেনো পৃথিবীর কোনো শক্তি ছাড়াতে না পারে।তার বুকে মাথা রেখে মেয়েটা আহাজারি করুক, উগড়ে দিক বুকের ভেতরে জমানো সকল অপেক্ষা,সকল দুঃখ।নিমিষেই দূর হয়ে যাক সকল দুঃখ-কষ্ট।কিন্তু সংকল্প কিছুই করতে পারছে না।তার হাত-পা বাঁধা।তার কাছে এখন চুপ করে থাকাই শ্রেয়।হয়তোবা মেয়েটা এভাবেই কিছু বলে শান্তি পাক।সে নাহয় শ্রোতা হিসেবেই মেয়েটার দুঃখ-কষ্ট একটু কমাক।

প্রতিজ্ঞা সংকল্পের দিকে আরো দু’কদম এগিয়ে ডান হাত বাড়াতে বাড়াতে করুণ স্বরে বললো,
“আপনাকে একটু ছুঁই? ওপপস,না না আপনি তো পরপুরুষ। পরপুরুষকে ভালোবেসে যে ভুল করেছি,তাকে ছুঁয়ে সে ভুূলের পরিমাণ আমি বাড়াতে চাই না।”

বলে হাত নামিয়ে ফেলে প্রতিজ্ঞা।সংকল্পকে স্পর্শ করা হয় না আর।সংকল্পের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে।ডুকরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।মেয়েটার প্রতিটা কথা তার ভেতরের কষ্টগুলোর জানান দিচ্ছে।তার প্রতিটা বাক্য যেনো বি*ষবাক্য, তীরের মতো বুকে বিঁধছে।

প্রতিজ্ঞা পিছিয়ে গেলো।নিজের আগের জায়গাটায় দাঁড়ালো।আকাশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
“যে পুরুষকে শুধু ভালোবেসে প্রতি পদে পদে মৃত্যুসম শাস্তি ভোগ করছি,না জানি সেই পুরুষের স্পর্শ কত বি*ষাক্ত!”

প্রতিজ্ঞার প্রতিটা কথা সংকল্পের গায়ে কাঁটার মতো বিধছে।এই মেয়েটা কি জানে তার কথাগুলো কতটা পীড়াদায়ক!
সংকল্প প্রসঙ্গ পরিবর্তনে উদ্যত হলো।সে নিতে পারছে না এসব। নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,
“অনেক রাত হয়েছে।ঘরে যাও!”

প্রতিজ্ঞা চমৎকার হাসলো।বললো,
“কষ্ট লাগছে?খারাপ লাগছে?তাহলে বুঝে নিন আমার কেমন লাগছে!
আপনি আমার না হয়েও আমাকে রোজ পু*ড়িয়েছেন, সংকল্প।ভিতরটা জ্ব*লছে,বড্ড জ্ব*লছে।হৃদয়টা যেনো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে।”

সংকল্প চোখ বুজে সব শুনছে,সহ্য করছে।আর কি-ই বা করার আছে!মন তো অঘটন ঘটাতে চাচ্ছে।সামনের মেয়েটাকে নিয়ে ছুট্টে কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে করছে।যেখানে কোনো বাঁধা থাকবে না,চেনা-জানা মানুষ থাকবে না।শুধু তারা দু’জন থাকবে।সুখে থাকবে,ভালো থাকবে।কিন্তু তা অসম্ভব।
ভাবনার মাঝেই ঐ ভঙ্গুর নারীর চিকন কন্ঠের বাক্য ভেসে এলো।

“আমার হৃদয়ে আপনার বসবাস ছিলো সংকল্প,আর সে বাসস্থান আজ ধ্বংসস্তূপ বৈ কিছুই নয়!

আপনি আমাকে ভালো না বেসেও কি নিখুঁতভাবে আমাকে ভেঙ্গেচুরে গুঁড়িয়ে দিলেন!আপনার কাজকর্ম আপনার মতোই প্রশংসনীয়।”

সংকল্প আঁতকে উঠলো।নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো আদৌও কি কাউকে ভালো না বেসে তাকে ভাঙ্গা যায়!কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর সে পেলো না।ধরে নিলো,যায় হয়তো!কিছু বলবে তার আগেই প্রতিজ্ঞা বাঁধা দিলো।নিজেই বললো,

“আরো অনেক কিছু বলার ছিলো সংকল্প,কিন্তু সময় ফুরিয়ে যাবে আপনাকে নিয়ে আমার কথা ফুরোবে না।

আপনি নাহয় আমার অব্যক্ত কথাগুলি অনুভব করে নিয়েন,আমার প্রতিটা অব্যক্ত কথা আপনাকে জানান দিবে আমি আপনাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি!”

বলে আর একমুহূর্তও ছাঁদে দাঁড়ালো না মেয়েটি।দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো।মেয়েটা কাঁদছে, কাঁদুক। কাঁদলে কষ্ট হালকা হয়।কিন্তু সংকল্প ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো।আবারো জীবনের হিসেব কষা শুরু করলো।মনে যেমন অনেক প্রশ্ন,তেমনি অনেক দোটানা।ছেলে মানুষের কাঁদতে নেই।তাই হয়তো সংকল্প কাঁদতে পারছে না।
সেই মুহুর্তে আহমেদ মেনশন ছেড়ে শো শো করে বেরিয়ে গেলো একটা সাদা গাড়ি।সংকল্প জানে গাড়িটা কার!একটু আগে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা রঙের শাড়ী পড়া মেয়েটার।ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।সংকল্প চেয়ে রইলো যতক্ষণ না গাড়িটা অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো।সাথে সংকল্প এটাও টের পেলো তার গাল ভিজে এসেছে,চোখ বেয়ে নেমে আসা অশ্রুনামক কিছু জলবিন্দু গাল ভিজিয়ে দিচ্ছে……

খাটে হেলান দিয়ে মেঝেতে থম মে*রে বসে আছে প্রতিজ্ঞা।কতক্ষণ এভাবে বসে আছে জানা নেই।আসার পর থেকেই এখানে বসে আছে।খোলা চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে উড়ছে।মুখে কথা নেই,মনে ভাবনা নেই।সব যেনো ফুরিয়েছে।এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।কি দেখছে কে জানে!ফর্সা গালে অশ্রুর দাগ বসে গেছে।এখন চোখে জল নেই।হয়তো অশ্রুও ফুরিয়েছে,শুকিয়ে গেছে তার উৎস।ভেতরটা কেমন শূণ্য শূণ্য লাগছে।খা খা করছে বুকটা।হঠাৎ করে কি হয়ে গেলো বুঝেই উঠতে পারলো না।সবটা স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে,একটা দুঃস্বপ্ন।খুব কি মন্দ হতো যদি আসলেই সবটা একটা স্বপ্ন হতো!খুব কি ক্ষতি হতো!

প্রতিজ্ঞা উল্টোদিকে ঘুরে খাটের উপর দু’হাত ভাজ করে তার উপর মাথা রাখে প্রতিজ্ঞা।তার অনেক অভিযোগ সৃষ্টিকর্তার কাছে।করুণ কন্ঠে বললো,
“আল্লাহ যেই স্বপ্ন কোনোদিন পূরণ হবে না,সেই স্বপ্ন নিয়েই কেনো সবসময় আমরা পরে থাকি।কেনো সেই অপূর্ণ থাকা স্বপ্নটা দেখি আমরা?এই অপূর্ণতা পো*ড়ায় আল্লাহ,বড্ড পো*ড়ায়।সহ্য করার মতো না।”

“অপূর্ণ স্বপ্নগুলো মৃত্যুসম দুঃখ দেয়।এরা গলায় কাটার মতো বিঁধে থাকে।মৃত্যুর আগে না কখনো গিলে ফেলা যায়,আর না কখনো উগড়ে ফেলা যায়।এরা প্রতি মুহুর্তে মনে করিয়ে দেয়, দেখো আমরা অপূর্ণ,আমরা আফসোস।”

ভালোবাসা তো কখনো বিশ্বাস করি নি।কিন্তু হুট করে ভালোবেসে ফেললাম।কেনো ভালোবাসলাম যদি অপূর্ণই থেকে যাবে?

কষ্ট হচ্ছে,বড্ড কষ্ট হচ্ছে।শোনো বিধাতা,এই ভালোবাসা নামক মরণ যন্ত্রণা সহ্য করা যায় না,এভাবে বেঁচে থাকা যায় না।
আমাকে সাহায্য করুন।আমার যে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।বুকটা ফেটে যাচ্ছে।বারবার ঐ নতুন বর-বউয়ের ছবি মানসপটে ভেসে উঠছে।এভাবে বেঁচে থাকা যায় না, সত্যিই যায় না।
আমার অন্তরটা পুই*ড়া গেছে,আল্লাহ।
তাকে ফিরিয়ে দিন।তাকে বলুন না,আমার কাছে ফিরে আসতে।ফিরিয়ে দিন না তাকে আমার কাছে।আগের মতো করে দিন সব।এবার আমি একটুও সময় নিবো না এক ছুট্টে চলে যাবো তার কাছে। সব বলে দিবো তাকে, সব বলে দিবো।তারপর তাকে আমার করে নিবো।ফিরিয়ে দিন না তাকে!

“যাস না ফেলে আমারে,
দিবস রজনী কাটে তোর পথ চেয়ে।
চোরাবালিতে হাঁটতে গিয়ে
পড়ে গেছি ভরা নদীতে,
কি উপায়?

নৌকা হয়ে উঠিয়ে নে আমায়,
তবুও তুই ফিরে আয়।

সাঁতার জানি না আমি,
মৃত্যু করেছে আঁড়ি,
তুই ছাড়া বাঁচার নেই কোনো উপায়,
তুই ফিরে আয়,ফিরে আয়।

আছি আমি এখানে,
ফেলে গিয়েছিস যেখানে,
পিছু ফিরে দেখ সেখানে,
রয়েছি তোর পথ চেয়ে,
ডাকছি তোর নাম ধরে।

তুই ফিরে আয় ঐ পথ ধরে,
আগলে নে এই আমাকে,
আমি রয়েছি তোর পথে ফুল হয়ে,
বরণ করে নিতে তোকে,
তবুও আমার কাছে তুই ফিরে আয়।

মনভোলানো রাতে,
তুই আমি সেই ছাঁদে,
আমি গল্প বাড়িয়েছি,তুই শুনছিলি।
একলা একা পথে,
বাড়িতে ফিরে এসে,
মত্ত হয়েছি তোর ভাবনাতে।

তুই ফিরে আয়
আমার পাশে আয়
আমি চেয়ে দেখি
তোকে মন ভরে।

তোর চলার পথে ছড়ানো ছিলো যত কাচ ভাঙা,
আমি নিয়েছি তুলে,
রক্তাক্ত করেছি হাত,
লুকিয়েছি ক্ষত অনর্গল।
তবুও তুই কি দিলি?
দিলি তো দিলি এক বুক যন্ত্রণা।

আমার ছিলো কি দোষ?
ভালোবেসে করেছি ভুল,
তুই কি তা মেনে নিতে পারতি না?
তুই ফিরে আয় না, ফিরে আয় না।

ভালোবাসায় ভালো আছে টা কী
সেই তো দিলি ফাঁকি,
আমার কি হবে,বল না!
তুই ফিরে আয় না।

আমায় রেখে আঁধারে
তুই কি আছিস সুখে?
অন্ধকারে থাকে আলো নাকি
কোথায় বল!
তুই ফিরে আয় না
আমার মন যে মানে না
তুই অন্যকারো সে যন্ত্রণা।”

খাটের উপর মাথা রেখে আনমনেই কিসব বললো প্রতিজ্ঞা। দৃষ্টি ঝাপসা।এতোক্ষণ থেমে থাকা অশ্রু আবার বের হচ্ছে। এ কেমন যন্ত্রণা,বুক পু*ড়ছে।প্রতিজ্ঞা উঠে দাঁড়ালো।দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই মাথাটা ভন ভন করে উঠলো।পরে গেলো বিছানায়।মাথাটা দু’হাতে চেপে ধরলো।আবার উঠার চেষ্টা করলো।উঠে দাঁড়ালো।দ্বিতীয়বারের মতো পরে যেতে নিলেই নিজেকে সামলে নিলো।গাল ফুলিয়ে বুকভরা নিঃশ্বাস নিলো।ঢোক গিলে এগিয়ে গেলো বেলকনির দিকে।
ভোর হয়ে এসেছে প্রায়।পূব আকাশে সূর্য উঁকি দিচ্ছে।আকাশটা আগুনের মতো রং ধারণ করেছে যেনো সূর্যের পাশে কোথায় ভয়ানহ আগুন লেগেছে।ভোরের পাখিরা কিচিরমিচির করছে।পরপর অনেক গুলো পাখির ঝাঁক উড়ে গেলো।ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে দিচ্ছে প্রতিজ্ঞাকে।চুলগুলো উড়ছে,আঁচলটা উড়ছে।কিন্তু তার কোনো হেলদুল নেই।এই সূর্যোদয় তাকে আকর্ষণ করছে না।এই পরিবেশ তাকে মুগ্ধ করতে পারছে না।এই প্রকৃতি তার দুঃখ দূর করতে পারছে না।অনেকসময় পরে প্রতিজ্ঞা ঐ পূব আকাশে চেয়ে করুণ
কন্ঠে শোধালো,

“কতটা রাত হলে আবার সকাল হবে আগের মতো?”

#চলবে…

[আমি একদম প্রথম পর্বেই বলেছিলাম গল্পটা হবে এলটা মেয়ের ভালোবাসা নিয়ে।একটা মেয়ে কতটুকু ভালোবাসতে পারে, তার এক ঝলক ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করবো।সেখানে মেয়েটার কষ্ট,দুঃখ,ভালোবাসা প্রকাশ থাকবেই।বরং না থাকাটাই অস্বাভাবিক।এতে আপনারা ন্যাকামি,ছ্যাছ*ড়ামি খুঁজে পান।আমি সত্যিই বুঝি না।লেখাটা শুরু করার আগেই আমি জানি আমি গল্পে পাঠক পাবো না।তবুও লিখছি,কারণ ভালোবাসা প্রকাশ! শিক্ষক ছাত্রীর প্রেমগল্প এভেইলেবল আছে।এটা আলাদা,আলাদা, আলাদা।শেষটা সুন্দরে বিশ্বাসী আমি।ধন্যবাদ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here