তবে_ভালোবাসো_কী ২ #Mehek_Enayya(লেখিকা) পর্ব ২৫

0
289

#তবে_ভালোবাসো_কী ২
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
পর্ব ২৫

জয়া বেগমের সাথে মিলে রান্না করছে মাহানুর। আজ সারাদিন বেশ ভালো কেটেছে তার। জয়া বেগমের সাথে গল্পে গল্পে তার মনও ভালো হয়ে গেলো। বিকালে আবার অহনা এসেছিলো আরহামকে দেখতে। ততক্ষণে রিদ চলে গিয়েছিলো তাই দুইজনের আর দেখা হয়নি। অহনা মাহানুরের ডিসিশন শুনে ভীষণ খুশি হয়েছিল। আরো কিছু জ্ঞান দিয়েছিলো মাহানুরকে। বাসা থেকে কল এসেছিলো। মাহানুর সবাইকে বলল সে এখন এখানেই থাকবে। মেহরাব খান মেয়ের ডিসিশনে মুগ্ধ। রাতের রান্না দুইজন মিলেই সেরে ফেললো। জয়া বেগম কাজ শেষে মাহানুরকে বললেন,
-আমি এইরকম একটা দিনেরই আশায় ছিলাম। কবে আমার একটা ছেলের বউ আসবে। কবে আমি একজন গল্পের সাথী পাবো।
-এসে পরেছি আমি আর একা একা লাগবে না। বাকি কাজ আমি করে নেবো নে আপনি যান। ফ্রেশ হয়ে রেস্ট করুন মা।
-নতুন বউকে দিয়ে একা কাজ কিভাবে করাই আমি!
-একবার বউ বলেন আরেকবার মেয়ে! এটা কিন্তু ঠিক নয় মা।
-আচ্ছা আচ্ছা মেয়ে।
-হুমমম। এখন যান।
-যাচ্ছি। যাক আমার চিন্তা শেষ। আমার রাগী ছেলেকে সামলানোর জন্য একজন এসে পরেছে!
মাহানুর মুচকি হাসলো। জয়া বেগম চলে গেলেন। মাহানুরকে কাজে সাহায্য করছে রুমকি আর রাবেয়া। সকালেই তাঁদের সাথে পরিচিত হয়েছে মাহানুর। পাঁচ বছর আগে আরহামের বাবা তাঁদের নিয়ে এসেছিলো এই বাসায়। দুইজন এতিম। মা বাবা নেই পরিবারের সদস্যরাও তাঁদের দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক ছিল না। আরহামের বাবার মায়া হয়। তাই নিয়ে আসে। রুমকির সতেরো বছর আর রাবেয়ার বিশ। রাবেয়া টেন পাশ। তাকে আরো পড়াইতে চেয়েছিলো আরহামের বাবা কিন্তু রাবেয়া আর পড়েনি। রুমকিও এই বছরই টেন পাশ করেছে। রুমকিকে মাহানুরের কাছে ভালো লেগেছে। অনেক মিশুক আর হাস্যজ্জ্বল মেয়ে। রাবেয়া আবার চুপচাপ। মাহানুরের সাথে তেমন কথা বলেনি। মাহানুরের মনে হলো রাবেয়া তাকে পছন্দ করেনি অথবা এখানে আশা করেনি।
পিঙ্ক রঙের থ্রী পিস পরেছিল মাহানুর। ঘামে ভিজে চুবচুব হয়ে গিয়েছে। শরীরের সাথে আটসাট হয়ে লেগে রয়েছে। টুকটাক কাজ শেষ করে ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে রান্নাঘর থেকে বের হয় মাহানুর। ড্রইংরুমে আরহাম আর শিবুকে ল্যাপটপ দিয়ে কিছু একটা করতে দেখলো মাহানুর। গলা উঁচু করে ভালোভাবে তাকালো। আরহাম উঁচু স্বরে বলল,
-রুমকি এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিয়ে যা।
আরহামের বলতে দেরি পানির গ্লাস নিয়ে ছুটে যেতে দেরি নেই রাবেয়ার। কিন্তু আরহাম তো রুমকিকে বলেছে! মাহানুর সরু চোখে সবটা পরোক্ষ করলো। এতক্ষন মলিন থাকলেও এখন রাবেয়ার চোখ, মুখে চঞ্চলতা ছড়িয়ে পরছে। লাজে রাঙা দুইগাল তার। আরহামের স্মুখীন যেয়ে কেমন নজরে তাকে দেখতে থাকলো। আরহাম গ্লাস নিয়ে এক চুমুকে সবটুকু পানি খেয়ে গ্লাস দিয়ে দিলো। ভুল করেও রাবেয়ার দিকে তাকালো না একদম। মাহানুর কিছুই বুঝলো না এইসবের মানে।
হাঁটতে হাঁটতে ড্রইংরুমে এলো সে। শিবু তাকে দেখে ভদ্রতা ভাবে উঠে দাঁড়িয়ে পরলো। হাসি মুখে সালাম দিলো। মাহানুর অবাক হলো বটে শিবুর এতো ভক্তি দেখে। সেও সালামের উত্তর দিয়ে তাঁদের সাথে বসলো। রাবেয়া তখনও গাব গাছের মতো দাঁড়িয়ে আছে। মাহানুর শিবুর সাথে কথা বলতে থাকলো।
-আপনি ঠিক আছেন শিবু ভাই? কোথায়ও আঘাত লাগেনি?
-না ম্যাম। আপনি ঠিক আছে সেটা দেখে খুশি লাগছে। স্যারের ক্ষতও দ্রুত সেরে যাবে।
-ঠিক মতো মেডিসিন নিলে সেরে যাবে।
-আপনি এসে পরেছেন না এখন স্যারের সেবাযত্ন করে সুস্থ করেই তুলবেন। আশা রাখি।
মাহানুর হকচকিয়ে গেলো। চোরা চোখে আরহামের দিকে তাকালো। চোখ বন্ধ করে সোফায় মাথা এলিয়ে বসে আছে সে। হয়তো অসুস্থ লাগছে। মাহানুর কিছুটা শক্ত কণ্ঠেই রাবেয়াকে বলল,
-রাবেয়া একটু দেখে এসো তো চা হয়ে গিয়েছে কী না।
-আচ্ছা।
-আর হ্যাঁ তৈরি হলে সবাইকে দিয়ে দিও।
রাবেয়া মাথা নাড়িয়ে চলে যেতে নিলে আরহাম চোখ বন্ধ অবস্থায়ই রাবেয়াকে ডেকে উঠলো।
-রাবেয়া এখানে আয়।
রাবেয়া একপ্রকার ছুটে এলো। প্রশ্নবোধক নজরে তাকিয়ে রইলো। আরহাম একই ভঙ্গিতে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
-মা অবশ্যই তোদের সাথে নুর আই মিন মাহানুরের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে?
-জি আরহাম ভাই।
-আমি যদি তোদের বড় ভাই হই তাহলে সে তোদের ভাবি। ভাবি বলে ডাকবি।
মুখ ভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে গেলো রাবেয়ার। রাগী মুখে একবার মাহানুরকে দেখলো। চাপা কণ্ঠে বলল,
-আচ্ছা ভাই।
বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো রাবেয়া। মাহানুর হালকা হেসে আরহামের দিকে তাকালো। রঙিন প্রজাপতিরা উড়ছে তার মন জুড়ে। আজ সে খেয়াল করলো আরহাম তাকে নুর বলে ডাকে। তার ছোটকাল থেকে ইচ্ছে ছিল কেউ তাকে নুর বলবে কিন্তু কেউই বলে না। এখন তাহলে ইচ্ছে পূরণ হলো! মাহানুর আরো কিছুক্ষন থেকে আরহামের অর্থাৎ তাঁদের রুমে চলে আসলো। মাহানুর এতদিন আরহামকে জানা বা বোঝার প্রয়াসই করেনি। তার না ছিল সংসারের প্রতি ইন্টারেস্ট আর না ছিল আরহামের প্রতি। নিজের ইগো, রাগ, জেদকেই বেশি প্রায়োটি দিয়ে ফেলেছিলো সে। আজ যখন সে জেদে বসে সংসার করার ঝোক মাথায় নিয়েছে এখন সে একটু একটু চিনছে আরহামকে। অনুভূতি গুলোও আরহাম নামের পুরুষটিকে পছন্দ করতে চাইছে।
রুমে এসে হাঁফ ছাড়লো মাহানুর। সন্ধ্যার দিকে বড় বড় দুইটা ট্রলীব্যাগ করে তার যাবতীয় জিনিস পাঠানো হয়েছে। ঐ বাসার সবাই যেনো আরো খুশি মাহানুরের এখানে আসাতে! তাইতো এতকিছু দিয়ে দিয়েছে। সবার প্রতি অভিমান জমলো মাহানুরের। স্পেশালি বাবার প্রতি। ব্যাগগুলো থেকে জামাকাপড় সহ অনন্যা জিনিস বের করতে থাকলো মাহানুর। বিছানা ভরে গেলো তার জামাকাপড় ও নিত্যদিনের ব্যবহারের জিনিস দিয়ে। একটি ব্যাগের একদম নিচে একটা বাক্স পেলো মাহানুর। মোটামুটি বড় একটি বাক্স। অতি আগ্রহ নিয়ে বিছানায় বসলো বাক্সটি নিয়ে। সম্পূর্ণ খুলতে ভিতরে অনেকগুলো চকলেট পেলো। সবই তার ভীষণ প্রিয়। আর রঙিন কাগজের একটি চিঠিও পেলো। এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো মাহানুরের মনে। সে জানে এটা কার কাজ। এই ছেলেটার সাথে সে কখনই রাগ করে থাকতে পারবে না। রক্তেরও উর্ধে আত্মার সম্পর্ক বলে কথা!
চিঠি খুলে মনোযোগ দিয়ে পড়তে শুরু করলো।

“প্রিয় শাকচুন্নি,,
আমি জানি মেডাম আমার ওপর ভয়ংকর চটেছে। আমার সাথে কথা না বলার শপথও করেছে! আই এম সরি শাকচুন্নি। আমি চাই না তোদের সম্পর্ক নষ্ট হোক। আরহাম ভাইকে প্রথমে আমারও পছন্দ ছিল না কিন্তু এখন আমি দেখি সে-ই বেস্ট তোর জন্য। তোর কথা ভেবেই মেজোবাবাকে বলেছি আমি।
এবারের মতো মাফ কইরা দে বইন। কথা দিচ্ছি আর কোনোদিন এমন করবো না। তুই শশুরবাড়ি চলে গেছিস আমরা সবাই অনেক দুঃখে আছি। আম্মু, চাচির কাজে মন লাগছে না। ফায়াজ, ফিহা তোর জন্য কাঁদছে। বাবা,চাচ্চু আর ভাইয়া কিছুক্ষন পর পর তোর কথা বলছে। ভাবি ভাবছে এখন সে কার সাথে ঝগড়া করবে! মেজোবাবা রেগে তোকে বকলেও তুই চলে যাওয়ার পর থেকে সে তোর রুমেই যেয়ে বসে আছে। অফিসেও যায়নি। এখনও সে তোর রুমে। তোর বই খাতা নেড়েচেড়ে দেখছে। আমার কথা আর কী বলবো! জাস্ট বলবো এখন আমি অনুভব করছি বোনের বিদায়ে কেনো ভাইয়েরা কান্না করে! আমরা সবাই তোর জন্য অনেক খুশি আবার তোর অনুপস্থিতে বিষণ্ণও। যাক রাগ, জেদ কম করিস বইন। আমার আইডি থেকে ব্লকটা খুলে দিস। মন খারাপ লাগলে চকলেটগুলো নিয়ে খাওয়া শুরু করবি। ওকে। টাটা বায় বায়।

ইতি
তোর আয়াইসা।

টপটপ গড়িয়ে পরা অশ্রুকণা দিয়ে ভিজে গেলো রঙিন কাগজ। মুখে তার হাসি অথচ চোখে সমুদ্র নেয় পানি। পরিবার কী জিনিস ভয়ংকর ভাবে উপলব্ধি করতে পারলো মাহানুর। এরাই যে তার প্রথম ও একমাত্র ভালোবাসা। ফ্রেশ হয়ে এসে বাবাকে আবারও কল দিবে মনে মনে ভাবলো মাহানুর। চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো। আলমিরা, কাবাড খুলে আরহামের জামাকাপড় সরিয়ে জায়গা ফাঁক করে নিজের জামাকাপড় গুছিয়ে রাখলো। কাজ শেষ হলে ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসলো। এতক্ষনে তার নজর যায় আরহামের রুমের সাথে এটাচ বেলকনির দিকে। স্বচ্ছ কাঁচের দরজার ঐপাশে যাওয়ার আগ্রহ বাড়লো মাহানুরের।
বসা থেকে দাঁড়িয়ে এক পা দু পা এগিয়ে গেলো। দরজা খুলতেই আশ্চর্যে চোখ গোলগোল হয়ে গেলো তার। বিমোহিত মন নেচে উঠলো যেনো। এটা বেলকনি নাকি ছাদ! মাহানুর এগিয়ে গেলো। বেশ বড় ছাদের মতোই জায়গা। চারপাশে অর্ধেক লোহার রেলিং দেওয়া। বাকি অর্ধেক ফাঁকা। ফুল, ফলের গাছের অভাব নেই। একটি টেবিল দুইটি চেয়ার পাশেই বড় একটি দোলনা। আরহামের রুমটা বাগানের সাইটে। তাই বেলকনির বাহিরে তাকালে শুধু বড় বড় গাছ আর গাছ দেখা যায়। মাহানুর দৌড়ে সেখানে গেলো। একটু চেয়ারে বসলো। একটু দোলনায় ঝুললো। স্বপ্নের মতো জায়গা দেখে ছোট বাচ্চা হয়ে গিয়েছে সে। রেলিং ধরে বাহিরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। আকাশ চমকাচ্ছে, মৃদু বাতাস। এখান থেকে বৃষ্টিবিলাস দেখতে কতই না মনোমুগ্ধকর হবে! অপূর্ব দৃশ্য দেখে মনকে শান্ত করা যাবে। দোলনায় ঝুলবে আর বর্ষণ উপভোগ করবে। মাহানুর পারে না খুশিতে আত্মহারা হয়ে নাচতে থাকে।
শাওয়ার নেওয়ার চিন্তা বাদ পরলো তার মন থেকে। রেলিং ধরে আঁখিজোড়া বন্ধ করে নিঃশাস টানলো। শরীরের সকল বিরক্তি যেনো অদৃশ্য হয়ে গেলো। হাত উঁচু করে চোখ বন্ধ রেখেই মৃদু কণ্ঠে একটা গান ধরলো সে। তার অন্যতম পছন্দের গান এটা।

“যদি বারে বারে একই সুরে প্রেম তোমায় কাদায়
তবে প্রেমিকা কোথায় আর
প্রেমী বা কোথায়,,,,

যদি দিশেহারা ইচ্ছা রাতে প্রেমী ডেকে যায়
তবে ইশারা কোথায় আর আশারা কোথায়,,
যদি মিথ্যে মনে হয় সব পুরোনো কথা
যদি চায়ের কাপেতে জমে নীরবতা,,,

যদি মিথ্যে মনে হয় সব পুরোনো কথা
যদি চায়ের কাপেতে জমে নীরবতা
তবে বুঝে নিও চাঁদের আলো কত নিরুপায়,,,
লা লালা,লা লালা, লালালালা লা লা,,,,,,,,,,,,,

দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মাহানুরকে দেখছে আরহাম। কিছুক্ষন আগেই এসেছে সে। মাহানুরের বাচ্চামো, নাচানাচি সবটাই তার নজরে বন্দি হয়েছে। পকেটে একহাত ঢুকিয়ে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। সব মানুষের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে একটা বাচ্চা স্বভাব। অনেকেই সেটা প্রকাশ করে আবার অনেকেই লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করে। এই যেমন মাহানুর সবাইকে দেখায় সে কত বড় হয়ে গিয়েছে অথচ এখন একা হয়ে তার মধ্যেও বাচ্চামো ভাব ফুটে উঠেছে। আরহাম শান্ত ভাবে ভাবলো মাহানুরের কথা। আদর্শ ও ভদ্রতার জন্য একজন মায়ের শিক্ষার ভীষণ প্রয়োজন সন্তাদের। মায়েরা পরম মমতা দিয়ে সন্তাদের ছোট ছোট বিষয় অনেক ভাবে বোঝায়। মাহানুর এই শিক্ষা, ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যদিও সে পারিবারিক শিক্ষা ভালোই পেয়েছে। একজন মা ছাড়া সন্তান তো এমনেই ছন্নছাড়া সেখানে মাহানুরকে যথেষ্ট ভালোই মনে হলো আরহামের। শুধুই একটু অতিরিক্ত রাগী, জেদি। তবে এই রাগ, জেদ কমলে তার বেয়াদবিও কমে যাবে। মাহানুরকে শান্তভাবে সবটা বোঝাবে অযথা রাগ করবে না। ধয্য ধরে মাহানুরকে নিজের প্রেমে ফেলবে আরহাম। মনে মনে ভাবলো সে। এখন আর মাহানুরকে সরমে ফেললো না। যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই রুম থেকে চলে গেলো আরহাম।
_____________
ফুপ্পির বাসায় এসেছে অহনা। এতদিন পর বাবা আর বোনকে পেয়ে দিন দুনিয়ার কোনো খবর নেই তার। বিকালে আরহমদের বাসায় গিয়েছিলো আপসোস রিদের সাথে দেখা হয়নি। আজ সারাদিন ফোনেও তাঁদের কথা হয়নি। ডিনার করে মাত্রই নিদিষ্ট রুমে এসেছে অহনা। আতিকা বিছানায় ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। অহনা ফোন হাতে নিয়ে সোফায় বসলো। স্ক্রিনে রিদের বিশ মিসড কল উঠে রয়েছে। অহনা চিন্তিত হলো এতো কল দেখে। দ্রুত ফেইসবুক লগ ইন করলো। মেসেজ দিয়ে ইনবক্স ফুল করে ফেলেছে রিদ। যেহেতু আতিকা সামনে তাই আর কল দিলো না। এমনেই আসার পর থেকে আতিকা শুধুই তাকে নিয়ে হাসছে। পাকনা পাকনা কথা বলে তার উপহাস করছে। অহনা রিদকে অনলাইনে দেখে মেসেজ পাঠালো।
-তুমি ঠিক আছো? এতো কল কেনো?
অহনার মেসেজ পাঠাতে দেরি হলেও রিদের রিপ্লায় দিতে দেরি নেই। চট করে মেসেজ পাঠালো।
-কোথায় ছিলেন তুমি সারাদিন? আমি ভাঙা হারিকেন দিয়ে তোমাকে খুঁজে চলছি!
-ফুপ্পিদের বাসায় এসেছি না তাই একটু ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু কিসের জন্য খুঁজছিলে?
-শশুরআব্বা এসেছে? ভালো আছে?
-আছে তো। তুমি বলবে কী হয়েছে আমাকে অযথা চিন্তায় কেনো ফেলছো?
-অনেক বড় একটা গুডনিউস আছে জানেমান।
-গুডনিউস! বাট তুমি তো ছেলে গুডনিউস কিভাবে দেবে?
-আরেহ আমার বোকা অহনাগহনা! ঐ গুডনিউস তো আমাদের বিয়ের পর তুমি দেবে আমি অন্য গুডনিউস এর কথা বলছি জান।
-কী?
-আব্বা আমাদের বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গিয়েছে। সে চায় তোমার আব্বা আম্মা এসে আমাদের বাড়িঘর দেখে যাক আর বিয়ের কথা দ্রুত পাক্কা করে ফেলতে। জলদি জলদি তোমাকে আমাদের বাড়ির বউ করতে চায় আব্বা।
-মজা করছো?
-উফফ আমার জান আমি মজা কেনো করবো! সত্যিই আব্বা বলেছে।
-আমার বিশ্বাস হচ্ছে না! তিনি আমাকে মেনে নিয়েছে খুশিতে না আমি হার্টএট্রাক করি!
-থাক তাহলে এতো খুশি হইয়ো না। তুমি হার্টএট্রাক করলে আমি বাসর কার সাথে করবো?
-অসভ্য! তোমার শুধু বাসর বাসর!
-তাইলে আবার! শুনো আগামীকালই আমি তোমার বাবাকে আর তোমাকে নিতে আসবো। তুমি শশুরআব্বাকে বলে দিও।
-বলতে না সে জানে।
-তাহলে আরো ভালো। ঠিকানা পাঠিয়ে দেও।
-আচ্ছা।
-আমি ডিনার করে আসছি।
-হুম যাও।
ফোন বুকের সাথে জড়িয়ে বসে রইলো অহনা। খুশির শেষ নেই তার। মন খুলে নাচতে মন চাইছে তার। সত্যিই রিদ তার হয়ে যাবে! শুধুই তার! আর ভাবতে পারলো না অহনা। মাহানুরকে সবটা মেসেজ করে পাঠালো। সিয়াম আর মুহিবকেও বলল।

আয়নার সামনে বসে চুল আছড়াচ্ছে সুনহেরা। কোমর সমান কোঁকড়ানো চুল তার। আয়াস ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় বসে অনলাইন ক্লাস করছিলো। না চাওয়ার সত্ত্বেও তার সবটা ধেন সুনহেরার দিকে যেয়েই ঠেকছে। সুনহেরার আঁকাবাঁকা কেশে হারিয়ে যেতে যাচ্ছে অস্থির চিত্ত। অনেক কষ্টে নিজের মনকে বুঝ দিয়ে ল্যাপটপে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। সুনহেরা বিরক্ত। চুল আছড়াচ্ছে একদিক দিয়ে আবার ঝট লেগে যাচ্ছে আরেকদিকে দিয়ে। এক পর্যায় বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে। চিরুনি ছুঁড়ে ফেললো মেঝেতে। এমনেই তার মেজাজ গরম। বিকেলে বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলো আসার পথে তার দেখা হয় ফুয়াদের সাথে। কী বিকৃত হাসি তার। সুনহেরা দ্রুত রিকশা ডেকে চলে আসলো। প্রথমে সে ভেবেছিলো হয়তো বেপারটা একসিডেন্টলি ঘটে গিয়েছিলো কিন্তু অনেকক্ষণ গবেষণা করে বুঝলো ফুয়াদ তার পিছনে লোক লাগিয়েছে। যারা তার সব খবরই ফুয়াদকে দেয়। রাগ, টেনশন দুইটাই হচ্ছে সুনহেরার। আবার ঘৃণাও হয়। আয়াস ল্যাপটপটা বন্ধ করে সুনহেরার দিকে তাকায়। ছোটোখাটো হয়ে সোফায় বসে কিছু ভাবছে সে। আয়াস চশমা ঠিক করে শান্ত স্বরে বলল,
-হঠাৎ এতো রেগে যাওয়ার কারণ?
-এইযে গোড়ার ডিমের চুল। সব কেটে টাক হয়ে যাবো।
চেঁচিয়ে বলল সুনহেরা। আয়াস নিজেই ভয় পেয়ে গেলো সুনহেরার রাগী রক্তিম মুখশ্রী দেখে। থমথমে কণ্ঠে,
-আম্মুরা বলে রাতে চুল আছড়াতে নেই।
-কেনো?
-ভুত এসে সেই মানুষটার ভিতরে ঢুকে যায়।
-ছি ছি! ডাক্তার হয়ে এইসবে বিশ্বাস করেন!আপনি তো এখনও বাচ্চা! মাম্মাস বয়।
উপহাস স্বরে বলল সুনহেরা। আয়াস বিছানায় ছেড়ে নেমে দাঁড়ায়। এগিয়ে যায় সুনহেরার দিকে। কিছুটা ঝুঁকতেই সুনহেরা চঞ্চল চাহনি ভীত হয়ে গেলো। আয়াস পাশে মেঝেতে পরে থাকা চিরুনিটা তুলে নিলো। সুনহেরা হতভম্ব। কী সব ভেবেছিলো সে! নিজের ভাবনা চিন্তার কথা ভেবে মনে মনে হাসলো সুনহেরা। মনে মনে বলল,
-এই রসকসহীন মানুষকে নিয়ে এইরকম কিছু ভাবাও পাপ! সে তো সেই প্রথমদিনের কথা মাথায় নিয়েই ঘুরছে।
আয়াস কিছুটা পিছিয়ে যেয়ে দাঁড়ালো। আবারও চশমাটা ঠিক করে নিলো। ঠান্ডা কণ্ঠস্বরে বলল,
-আমি চুল আছড়ে দেবো? যদি কিছু মনে না করেন।
সুনহেরা ঘোরের মধ্যে থেকেই হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো। সে এইরকম কিছু আশা করেনি এমনই মুখ ভঙ্গি তার। আয়াস সোফায় বসলো আর সুনহেরা মেঝেতে। সযত্নে আয়াস স্ত্রীর কেশ আছড়ে দিচ্ছে। হাত চালিয়ে ম্যাসাজ করে দিচ্ছে। আরাম পেয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো সুনহেরা। স্বামীর থেকে সেবা পাচ্ছে সে। এইরকম ভাগ্য কয়জনের হয়! মুচকি মুচকি হাসছে সুনহেরা।
সে যে ধুরুম করে এই চশমিশ বাঁদ’রের প্রেমে পরে গিয়েছে সেটা উপলব্ধিও করতে পারচ্ছে। এইরকম একজন মানুষের প্রেমে না পরে কিভাবে থাকা যায়! মেয়েরা শুধুই একজন আদর্শ স্বামী চায়। যে তাঁদের মানসিক শান্তি দিতে সক্ষম হবে। অথচ আয়াস পুরোটাই এখন সুনহেরার মানসিক শান্তিতে পরিণত হয়েছে। বিয়ে করবে না , বিয়ে করবে না বলে চিল্লাচ্ছিলো অথচ এখন প্রেমে পরে দিশেহারা সে!
সুনহেরার ইচ্ছে জাগলো একদম কাছে থেকে আয়াসকে এক পলক দেখতে। আর আয়াসের ইচ্ছে জাগলো সুনহেরার চুলের ঘ্রাণ নেওয়ার। একবার নিলে তো আর পাপ হবে না! আর সুনহেরাও দেখবে না।
সুনহেরা মাথা ওপরে তুলে আয়াসকে দেখতে আর আয়াসও সেই সময়ই সুবাস নিতে কিছুটা ঝুঁকে। আকস্মিক ঘটনায় অনাকাঙ্ক্ষিত একটি কান্ড ঘটে গেলো মুহূর্তে। সুনহেরার ললাটে স্পর্শ করে ফেললো আয়াসের রুক্ষ ওষ্ঠজোড়া। অনাকাঙ্ক্ষিত চুম্বনও বলা যায় সেটাকে। সুনহেরা সেভাবেই চোখ বন্ধ করে ফেললো। আয়াস হতবাক হয়ে চশমার আড়ালে শুধু তাকিয়ে রইলো।

<<<<চলবে। (আচ্ছা, এই তিন জুটির মধ্যে আপনাদের পছন্দের কারা?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here