#তবে_ভালোবাসো_কী ২
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
পর্ব ২৬
অতি সাধারণ একজন মানুষ অহনার বাবা। সমসময় ঝগড়া, মারামারি থেকে সাতহাত দূরে থাকেন তিনি। শান্তশিষ্ট তার স্বভাব আচরণ। তিন মেয়েই তার কলিজার টুকরা তবে অহনা তার একটু বেশি আদরের। মধ্যবিত্ত হয়েও মেয়েদের কখন চাওয়া পাওয়া অপূরণ রাখেনি তিনি। অসীম ভালোবাসা তাঁদের প্রতি। যখন স্ত্রীর মুখে শুনেছিলো অহনা একজনকে পছন্দ করে আর ঐ ছেলেও নাকি অহনাকে পছন্দ করে বেশ অবাক হয়েছিলেন তিনি। এতে তার কোনো আপত্তি নেই। সংসার করবে যে সে নিজের পছন্দে বিয়ে করতেই পারে। এটা বর্তমান যুগে বড় কিছু না । সে শুধুই চায় তার মেয়ে যাতে সুখী হয়। সকালে যখন অহনা তাকে বলল রিদ আসছে তার সাথে দেখা করতে সে সম্মতি দিয়েছে।
যথা সময়ে রিদ এসেছেও। ইং করা আকাশি রঙের শার্ট আর কালো পেন্ট পরেছে। মাথার চুলগুলোও সেট করা। অহনার বাবার কাছে ছেলেকে মন্দ লাগলো না। ভদ্রই লাগছে। অহনার বাবা অতি কৌশলে অহনার ফুপ্পিকে এই বিষয় জানালো না। তারা এমনেও একটু বেশি বোঝে তাই তাঁদের জানানো উচিত না। রিদকে দেখে কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ ছিল অহনা। মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হয়নি তার। এ কোন রিদ! প্রতিদিন সে কোন রিদকে দেখতো! কোথায় লুকিয়ে ছিল এই হলিউড মুভির জেন্টলম্যান হিরো! রিদের চোখ টিপ দেওয়ার পর ধেন ভাঙে অহনার। দুষ্ট হাসি ঘুরপাক খাচ্ছে রিদের মুখ জুড়ে। গাড়ি দিয়ে এসেছে আজ সে। আরহামও এসেছে রিদের সাথে। এই অসুস্থ বন্ধুকে রিদ একপ্রকার জোর করেই নিয়ে এসেছে। তার এতো বিশেষ একটি দিনে বেস্টফ্রেন্ড না থাকলে কিভাবে হবে। অহনার বাবার সাথে কুশল বিনিময় করে নিলো রিদ। কী সংস্কারী তার আচরণ! রিদ দরজা খুলে দিলো। অহনা বাবাকে নিয়ে ভিতরে যেয়ে বসলো। রিদ ড্রাইভিং সিটে বসলো। গাড়ি চালাচ্ছে সে। অহনার বাবা আরহামকে দেখে বললেন,
-তোমাকে আমি কোথায়ও আগে দেখেছি বাবা?
-বাবা উনি আরহাম ভাইয়া। হানিফ ভাইয়ার বন্ধু উইযে আর্মি।
-ওহহ! হ্যাঁ চিনেছি। তোমার ছবি আমি নিউসপেপারেও দেখেছিলাম।
-জানো বাবা উনিই কিন্তু মাহানুরের হাসব্যান্ড।
-ওওও! যাক মাহানুর মা তার যোগ্য পাত্র পেয়েছে।
আরহাম আনমনে হাসলো। সবাই কত ভালো জানে মাহানুরকে! অথচ তার আসল রুপ তো শুধু সে-ই দেখেছে।
গাড়ি তার আপন গতিতে চলতে থাকলো। পথে অহনার বাবা রিদকে একে একে প্রশ্ন করছে রিদ ভদ্র বেশে উত্তর দিচ্ছে। আরহাম নিজেও চমকিত। মানুষ ভালোবাসার জন্য কী না করে! বখাটে রিদও আজ তার ভালোবাসার জন্য আদর্শ পুরুষ হয়ে গিয়েছে।
মাহানুর আজ ভার্সিটিতে এসেছে। সিয়াম, মুহিবও তার সাথে। কাম্পাসে বসে সিয়ামের থেকে এতদিনের নোট গুলো লিখে নিচ্ছে সে। পাশেই একটি কোকের বোতল। কিছুক্ষন পর পর সেটায় চুমুক দিচ্ছে। মুহিব সেই তখন থেকে খেয়াল করছে সিয়ামের মনম’রা মুখ। কেমন যেনো একটা বিষণ্ণ দেখাচ্ছে তাকে। এখন আর কিছু না ভেবে জিগ্যেসই করে বসলো।
-তোর আজ হয়েছেটা কী শা’লা? মুখের বারোটা বাজিয়ে রেখেছিস কেনো?
-গরমে আমার বিরক্ত লাগছে।
-ইসসস!
-হো। যা আমার জন্যও একটা কোকের বোতল নিয়ে আয়। যা।
-যাইতাসি।
মুহিব উঠে চলে গেলো। মাহানুর নিজের কাজ করতে করতেই বলল,
-কত সুন্দর মিথ্যা বলিস শা’লা! গুনাহ হইবো গুনাহ।
-একটু আরেকটু বললে কিছু হইবো না।
-হো তোর কানে কানে আইসা বলছে!
সিয়াম কিছু বলল। বুক ফেটে যাচ্ছে তার। চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে। ছেলে বলেই এখনও স্ট্রং হয়ে বসে আছে। মেয়ে হলে এতক্ষণে কান্নাকাটি করে দুনিয়া ভাসিয়ে দিতো! মাহানুর বুঝতে পারছে সিয়ামের অবস্থা। তারও ভীষণ খারাপ লাগছে। যদি সে পারতো তাহলে এখন রিদের স্থানে সিয়ামকে বসিয়ে দিতো। তবে তার যে সাধ্যে নেই! কণ্ঠস্বর খাঁদে ফেলে সিয়াম বলল,
-অনেক খুশি না অহনা?
-হুম। অনেক।
-বিয়ে হয়ে যাবে ওর! কয়েকমাস পর রিদের বাচ্চার মাও হবে!
-হবেই তো। দুই বছর ধরে ভালোবাসিস অথচ মুখ ফুটে বলতে পারলি না।
-ওর মনে আমার প্রতি কোনো ফিলিংস ছিলই না। ভাইয়ের নজরে দেখে আমাকে।
-তোহ! তুই নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলি সিয়াইমা!
তাচ্ছিল্যা হাসলো সিয়াম। কপালে আঙুল ঢেকিয়ে বসে রইলো। অহনার কথা মাথায় আসতেই মস্তিক ঝিম ধরে যাচ্ছে তার। এক তরফা ভালোবাসা কেনো সবসময় কষ্ট দেয়! গম্ভীর কণ্ঠে মাহানুরকে প্রশ্ন করলো,
-তোদের বিয়ের এক সপ্তাহ হয়ে যাবে। আরহাম ভাইকে ভালোবাসতে পেরেছিস তুই? নাকি পরিবার পরিবার করেই মনকে বন্দি করে সংসার সাজিয়ে বসেছিস?
মাহানুরের হাত থেমে গেলো। মাথা তুলে তাকালো সিয়ামের পানে। তার শান্ত মনকে নাড়িয়ে দিয়েছে এই একটি প্রশ্ন। ভালোবাসতে পেরেছে সে? না ভালোবাসতে পারেনি তবে ভালো লেগেছে। আর তার ধারা ভালোবাসা-বাসি হবেও না! মাহানুর বলল,
-এক বছরেও ভালোবাসা হয় না আর তুই বলছিস এক সপ্তাহে হয়ে যাবে!
-তুই তো বোকা! একদিনে ভালোবাসা যায়। প্রথম দেখাও ভালোবাসা যায়।
-আমি তাকে কখনই ভালোবাসতে পারবো না। কারণ আমার ধারা ঝগড়া হবে, মারামারি হবে, তর্ক হবে, বেয়াদবি হবে কিন্তু ভালোবাসা মনে হয় না হবে।
-ভালোবাসা ছাড়া সংসার হয়?
-ভালোলাগা দিয়ে চালিয়ে নেবো। তাকে আমার এখন ভালো লাগে।
স্পষ্ট উত্তর মাহানুরের। সিয়াম হাসলো। শব্দ করে হেসে ফেললো সে। মাহানুর বিরক্ত হয়ে বলল,
-পাগলের মতো হাসছিস কেনো?
-ভালোলাগা থেকেই ভালোবাসা তৈরি হয়। এখন ভালোলাগে খুব জলদি তুই আরহাম ভাইকে ভালোবেসে ফেলবি। দেখিস।
-ইম্পসিবল।
-তুই জাস্ট মিলিয়ে নিস আমার কথা। আরহাম ভাইয়ের মনের অবস্থা কী? সে কী সম্পূর্ণ ভাবে তোকে মেনে নিয়েছে?
মাহানুর চুপ হয়ে যায়। ভাবনায় ডুবে যায় সে আজ সকালের। রাতে রক্তে ভিজে গিয়েছিলো আরহামের বেন্ডেজ। মাহানুর যখন বিষয়টা খেয়াল করলো অজান্তেই তার বক্ষ কেঁপে উঠেছিল। সে নিজেই আরহামের বেন্ডেজ পরিবর্তন করে দেয়।
কিসের এতো দরৎ তার আরহামের প্রতি! দুইদিন আগেও তো এমন ছিল না! আবার আরহাম কালো জাদুটাদু করলো নাতো! এইরকম উদ্ভুত সব চিন্তা ভাবনা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো মাহানুর। সকালে আরহামের আগে তার ঘুম ভেঙেছিল কিন্তু অলসতার জন্য উঠলো না। একই ভঙ্গিতে শুইয়ে রইলো। ততক্ষণে আরহামেরও ঘুম ভেঙে গিয়েছে। ফোন বাজছে তার। রিদের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলতে থাকলো। মাহানুর এক চোখ খুলে সবটা পরোক্ষ করে নিলো। কথা শেষ হলে ফোন রেখে ঘুমন্ত মাহানুরের দিকে তাকায় সে। হাত দিয়ে মাহানুরের মুখ থেকে ছোট ছোট চুলগুলো সরিয়ে দিলো সযত্নে। ঝুঁকে মাহানুরের কপালে গভীর চুমু বসিয়ে দিলো। তারপর বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুম চলে গেলো। মাহানুর অকেজো হয়ে বিছানায়ই পরে রইলো। কী ছিল এটা! কেনো ছিল? কিভাবে কী হলো! এইরকম হাজারো প্রশ্ন নিয়ে উঠে বসে সে। তখন এই বিষয় বেশি না ভাবলেও এখন সিয়ামের কথায় ভাবছে সে। তবে কী আরহাম তাকে ভালোবাসে?
-কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি?
-কোথাও না। চল ক্লাসে যাই আবার অহনার সাথেও দেখা করতে হবে।
-হুম চল।
_______________
চলন্ত গাড়ি রিদদের বাসায় এসে থামলো।সারারাস্তা অহনার বাবার সাথে খাতির জমিয়ে নিয়েছে রিদ। আরহামও দুই একটা কথা বলেছিলো। রিদ আগে আগে বের হয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিলো। অহনা আর অহনার বাবা বেরিয়ে আসে। সুবিশাল বাড়ি রিদদের। অহনার বাবা শান্ত নজরে চোখ বুলালো। অহনা কাচুমাচু হয়ে বাবার সাথে দাঁড়ালো। রিদ অহনার বাবার সাথে কথা বলতে বলতে ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে। অহনা আরহাম একসাথে। অহনা নিচু স্বরে বলল,
-আরহাম ভাই আমার তো অনেক নারভাস লাগছে। আপনি কেনো আপনার বউকে নিয়ে আসলেন না!
-আমার বউ তো আর তোমার মতো সাদাসিধে মেয়ে নয় যে আমার কথা শুনবে আর চলে আসবে রিদের জান!
অহনা লাজুক হাসলো। সদর দরজায় রিদের আব্বা আর ভাইয়েরা দাঁড়িয়ে ছিল। আরহাম এগিয়ে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে নিলো। রিদের আব্বার অনেক পছন্দের আরহাম। এইরকম প্রতিষ্ঠিত ছেলে কার না ভালো লাগে! শুধুই আপসোস তার কোনো মেয়ে ছিল না। এগিয়ে এসে অহনার বাবার সাথে হ্যান্ডশেক করলো। অহনা তাকে সালাম দিলো। রিদের মার বেশ পছন্দ হলো অহনাকে। মনে মনে ভাবলেন ছেলের পছন্দ আছে! বড় দুই পুত্রবধূও এতো সুন্দর না। এ তো মোমের পুতুল! সে অহনাকে ধরে ভিতরে নিয়ে যায়। রিদের আব্বার সাথে কথা বলতে বলতে ভিতরে যেয়ে বসে অহনার বাবা। এতো বিশাল আলিশান বাড়িঘর দেখে তার মনে অজানা ভয়ও হচ্ছে। ক্ষণেই টেবিল সেজে উঠলো বিভিন্ন ধরণের খাবারে। এতো আদিখ্যেতা দেখে আরহামের মনে ঘটকা লাগলো। সে রিদের আব্বাকে চিনে। নিশ্চই বড় কিছু হবে! রিদের বাবা মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,
-ছেলে আমার অনেক ফাস্ট। গতকাল বললাম আর আজই আপনাকে নিয়ে এসে পরলো! যাক ভালো হয়েছে। কী কাজ করেন আপনি ভাই?
-ফলের কোম্পানিতে চাকরি করছি ভাই।
-যাক। কত বেতন আপনার?
অহনা মাথা তুলে তাকালো। ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে রইলো। রিদের হাসি হাসি মুখভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে গেলো। কিছু বলতে উদ্যত হলে আরহাম তার হাত চেপে ধরে থামিয়ে দেয়। অহনার বাবা স্মিত হেসেই বললেন,
-বিশ হাজার টাকা।
-বিশ হাজার টাকা! এতো কম টাকায় সংসার কিভাবে চলে!
-আল্লাহ রহমতে চলে ভাই।
-আমার মেজো পুত্রবধূর পার্লারেই মাসে এতো টাকা খরচ হয়! তারপর আমাদের এই বাড়ি তো দেখলেন। আরো তিনটা বাড়ি আছে আমার। সবগুলোই ভাড়া দেওয়া। আমাদের নিজস্ব ব্যবসাও আছে।
অহনার বাবা চুপচাপ শুনলো। রিদ চটে যাচ্ছে বাবার ওপর। অহনা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। রিদের আব্বা আবারও বললেন,
-তা আপনাদের বাড়ি কয়টা?
-একটাই। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ।
-আপনাকে দেখেও বোঝা যাচ্ছে! আমার বড় দুই ছেলের বউ আমার নিজের পছন্দ করা। জায়গা-জমিন, টাকা পয়সার অভাব নেই। আর দেখেন ছোটটায় নিজে পছন্দ কইরা নিজের কপাল পুড়ালো!
এবার আরহামেরও রাগ হলো। হাত সরিয়ে নিলো রিদের থেকে। রিদ ক্ষিপ্ত কণ্ঠে ভালোভাবেই বলল,
-এইসব কী পেচাল পারছো আব্বা! বিয়ের কথা বলো।
-রিদ চুপ করো তুমি। বড়রা কথা বললে ছোটদের বলতে নেই। তাছাড়াও তাঁদের মেয়ে তাঁদের যোগ্যতার বাহিরে ছেলে পছন্দ করেছে সেটা শুনবে না তারা!
রিদের বড় ভাই বলল। রিদের ফর্সা মুখ রক্তিম হয়ে উঠলো। কঠিন চোখে ভাইয়ের দিকে তাকালেন। অহনা একবার রিদকে দেখছে তো একবার নিজের বাবাকে। এখনও শান্ত ভাবেই বসে আছে অহনার বাবা। রিদের বাবা হাসি মুখেই বললেন,
-আসলে আপনাদের মতো কিছু মানুষকে দেখলে আমার বড়ই হাসি আসে। এদের কাজই ভালো পরিবারের ছেলেদের ফাঁসি নিজের মেয়েদের তাঁদের গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া! আমি আমার রাজকুমার ছেলের জন্য অবশ্যই দাসী আনবো না!
চোখ দিয়ে টপটপ জল গড়িয়ে পরছে অহনার। তার জন্য আজ তার বাবাকে এতটা অপমানিত হতে হচ্ছে। রিদের কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে অহনার চোখের পানি দেখে। আরহাম অবস্থা বেগ পেতে দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
-আঙ্কেল এভাবে বাসায় ডেকে এনে আপনি তাঁদের অপমান করতে পারেন না। বিয়ের জন্য রাজি না আপনি সেটা সরাসরি বললেই তো পারতেন।
-আরেহ আরহাম বাবা তুমি এদের মতো মানুষদের চেনো না। এরা তো লোভী জাত এদের এভাবেই শিক্ষা দেওয়া উচিত।
ধয্যের বাধ ভাঙলো রিদের। বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো সে। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল,
-মুখ সামলিয়ে কথা বলো আব্বা। তুমি ভুলে যেয়েও না এর পরিনাম কতটা খারাপ হবে!
-তুমি চুপ থাকো। ওরা তোমার ওপরও কালো জাদু করেছে তাইতো ওদের ছাড়া তুমি কিছুই দেখছো না!
অহনাও উঠে দাঁড়ালো। রাগে তারও শরীর কাঁপছে। রিদের বাবার স্মুখীন এসে দাঁড়ালো সে। বলল,
-যা করেছি আমি করেছি আমার বাবাকে এভাবে অপমান করতে পারেন না আপনি।
-ওরে আমার বাবার কন্যা! এতই যখন বাবার চিন্তা ছিল তাহলে আমার ছেলেকে ফাঁসানোর আগে তাল ছিল না?
ফুঁপিয়ে উঠলো অহনা। কম্পিত কণ্ঠে চিৎকার করে বলল,
-আপনার ছেলেকে রাখুন নিজের পেটে ঢুকিয়ে। যার এইরকম মানসিকতার পিতা তাকে আমি কেনো আমার জুতাও বিয়ে করবে না। আমার বাবাকে অপমান করার কোনো রাইট নেই আপনার মতো নিচু মানসিকতার মানুষের।
রিদের বাবা হকচকিয়ে গেলো। এইরকম বাচ্চা মেয়ে তাকে এভাবে বলল! সে সুযোগ পেয়ে বললেন,
-দেখেছো রিদ এই বেয়াদব মেয়েকে তুমি বিয়ের জন্য পাগল হচ্ছিলে!
অহনা কোনো প্রতিক্রিয়া করলো। বাবার হাত ধরে বলল,
-চলো বাবা।
-কিন্ত মা,
-আমি এর এক মুহূর্তও এখানে থাকবো না। আলহামদুলিল্লাহ আমার গরিব। বড়োলোক হলে আজ এদের মতোই মানুষদের মানুষ মনে করতাম না।
শান্ত মানুষ রেগে গেলে ভয়ংকর ঠিক যেমন অহনার বাবা এখন নিজের মেয়েকে দেখছে। অহনা বাবাকে নিয়ে বড় বড় পা ফেলে বাহিরে বেরিয়ে এসেছে। আঁখিজোড়া দিয়ে অশ্রু বন্যা বইছে তার। রিদ দৌড়ে আসলো। অহনা অহনা বলে চিৎকার করতে করতে। ক্ষণেই ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছে সে। অহনার বাবার স্মুখীনই অহনার হাত চেপে ধরলো। সে জ্ঞানহীন মানব যেনো! অহনার বাবা সামনে হাঁটা ধরলো। অহনা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। রিদ অস্থির হয়ে বলল,
-আব্বার তরফ থেকে আমি মাফ চাচ্ছি অহনা। তোমার বাবার পা ধরেও মাফ চাইবো প্লিস এভাবে চলে যেয়েও না।
অহনা নিশ্চুপ। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। রিদ অহনার দুই কাঁধে হাত দিয়ে কিছুটা ঝাঁকিয়ে বলল,
-কিছু বলো অহনা তোমার চোখের পানি, তোমার চুপ্পি আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। অনেক কষ্ট।
-চলে যাও রিদ। পথ ছাড়ো।
-ছাড়বো না। কান্না থামাও।
অহনা চেঁচিয়ে উঠলো,
-ছাড়ো আমাকে রিদ। আর কত অপমান করাবে আজ আমাদের? মন ভরেনি তোমার?
-আমি জানতাম না আব্বা এমন কিছু করবো।
-তুমি কিছুই জানতে না রিদ! কিছুই না।
কেঁদে চোখের, নাকের পানি এক করে ফেলেছে অহনা। রিদ ছেলে মানুষ তবে সে নিজের ইমোশন বেশিক্ষন আটকে রাখতে পারে না। অহনার কান্না দেখে তার রক্তিম চোখও টলমল করছে। অহনা বড় নিঃশাস টেনে বলল,
-তোমাকে আমি ভালোবাসি অনেক। কিন্তু আমি কিভাবে ভুলে যাই তোমার থেকেও আমি বেশি ভালোবাসি আমার বাবাকে। সে আমার জন্মদাতা রিদ। আজ এতো জঘন্য ভাবে তার অপমান হয়েছে! তাও আবার আমার জন্য! তুমি জানো এখন আমার কেমন অনুভূতি হচ্ছে? তোমার আব্বাকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলতে মন চাইছে।
-তোমার যা মন চায় করো কিন্তু আমাকে ছাড়ার কথা বলিও না। আমি পরিবার ছেড়ে দেবো। আজ থেকে আমি এতিম হয়ে যাবো। ঘর জামাই হয়ে থাকবো।
রিদ উম্মাদ হয়ে গিয়েছে। সে এখন নিজের মধ্যে নেই। তার মাথায় শুধু ঘুরছে অহনা আর অহনা। আরহাম দূর থেকে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে কাছে যেতে গিয়েও পিছিলে আসলো। অহনা বলল,
-তোমাকে আমিও ভালোবাসি আমারও কষ্ট হবে। তবে যে পর্যন্ত তোমার আব্বা আমার বাবার কাছে ক্ষমা না চাইবে সে পর্যন্ত আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। আর না আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক থাকবে।
অহনা দ্রুত চলে যেতে নিলে রিদ তার হাত চেপে ধরলো। করুণ কণ্ঠে বলল,
-তুমি এভাবে আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না। আমাকে একা করে যেতে পারো না অহনা!
অহনা নাক টেনে পিছনে ফিরে। দূরত্ব ঘুচিয়ে অনেকটা নিকটে চলে যায় রিদের। এক ফোঁটা অশ্রু গালে এসে পরেছে রিদের। কী বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে মুখটি। অথচ কিছুক্ষন পূর্বেও কত হাস্যজ্জ্বল ছিল। অহনা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে দু পা উঁচু করে রিদের ভেজা গালে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
-আমার কোনো ধনী রাজকুমার চাইনা রিদ। আমাকে একটুও যদি ভালোবেসে থাকো তাহলে যে পর্যন্ত তোমার আব্বাকে মানাতে না পারবে সে পর্যন্ত আমার চোখের সামনে এসো না। ভালো থাকো আর আমাকে ভালো থাকতে দিও।
চলে গেলো অহনা। রিদ একই ভাবে জমিনে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো। র’ক্তলাল চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে তার। দুই হাত মুঠি করে চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে উঠলো,
-অহনাআআআআআআ।
আরহাম দৌড়ে বন্ধুকে এসে জড়িয়ে ধরলো। ঝাঁকি দিয়ে দিয়ে কাঁপছে রিদের শরীর। আরহাম শক্ত করে ধরে রাখলো। রিদের মাও দৌড়ে এসেছে। আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদছেন তিনি। রিদ আরহামের কাঁধে মাথা রেখে বিড়বিড় করে বলল,
-ও আমাকে ছাড়তে পারে না। কিভাবে এতো স্বার্থপর হলো অহনা! আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না আরহাম।
-শান্ত হো বন্ধু। শান্ত হো। আমি তো তোর সাথে আছি। আমি দেখবো অহনা কিভাবে তোকে ছেড়ে যায়!
-অহনাকে ছাড়া বাঁচবো না আমি। যেকোনো মূল্যেই আমার ওকে চাই আরহাম।
-আচ্ছা। আমি অহনাকে আনতে যাবো তুই শান্ত হো।
আচমকা রিদের কী হলো বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো সে। আরহাম বুঝলো না রিদের মনোভাব। রিদ ধুরুম ধুরুম পা ফেলে বাড়ির ভিতরে গেলো। পিছন পিছন আরহামও গেলো। বাড়ির প্রত্যেকটা আসবাবপত্র তুলে তুলে ফেলছে রিদ। রিদের বীভৎস রুপ দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেলো। কাঁচের টেবিল একহাত দিয়ে ঘুষি মেরে চুর্ণবিচুর্ণ করে দিলো। র’ক্ত ঝরতে লাগলো হাত দিয়ে। রিদের আব্বা সহ সকলে ভীত চোখে তাকিয়ে রইলো। রিদ আর্তনাদ করে বলল,
-সব ধ্বংস করে দেবো আমি। সব শেষ করে দেবো।
রিদের মেজো ভাই আর আরহাম রিদকে ধরলো। আজ নিজের মধ্যে নেই। সম্পূর্ণ ভেঙে চুরমার সে। আঙুল তুলে আব্বাকে বলল,
-আজ তোমার প্রতি ঘৃণা আমার আরো বেড়ে গেলো। ছি!তুমি কারো বাপ হওয়ার যোগ্যতাই রাখো না।
রিদের আব্বা কিছু বলতে পারলেন না। রিদকে দেখে সে নিজেও ভয় পেয়ে জড়োসড়ো হয়ে গিয়েছে। রিদ ভারী নিঃশাস নিয়ে বলল,
-আজ থেকে আমি পরিবার ত্যাগ করলাম। লাগবো না আমার কোনো বা’লের আপনজন। আমি রিদ আমি আজ থেকে এতিম। তোমাদের ছোট ছেলে আজ থেকে তোমাদের জন্য ম’রছে। তোমার বড় দুই পুত্রকে নিয়ে তোমার পরিবার সাজাও।
আরহামকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলে রিদের মা এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন। কাঁদছেন তিনিও। কান্নারত্ব কণ্ঠে বললেন,
-আব্বা এমন করিস না। এটা তোর বাড়ি তোর সব। তুই কেনো চলে যাবি!
-আমার মানসিক শান্তি চাই আম্মা যেটা এই বাড়িতে নেই। আজ আর আমাকে আটকিয় না।
মাকে উপেক্ষা করে চলে গেলো রিদ। আজ নিজের কথায় অনড় সে। আরহাম একবার রিদের আব্বার দিকে তাকিয়ে সেও চলে গেলো।
রাস্তায় এসে ধপ করে বসে পরলো রিদ। কী থেকে কী হয়ে গেলো কিছু সময়ের মধ্যে। এইরকম তো হওয়ার কথা ছিল না! কেনো এমন হলো। আরহাম রিদকে বলল,
-আমার সাথে বাসায় চল দোস্ত।
-চলে যা আরহাম। তোদের কাউকে আমার প্রয়োজন নেই। আজ আমার সব শেষ।
-পাগলামি বন্ধ কর তুই। চুপচাপ উঠ রিদ।
-চলে যা এখান থেকে। দূর হো।
আরহাম অধয্য হয়ে পরলো। রিদকে দাঁড় করিয়ে সপাটে চড় বসিয়ে দিলো রিদের গালে। শক্ত পাঁচ আঙুলের ছাপ বসে গেলো রিদের ফর্সা গালে। গালে হাত দিয়ে অসহায় নয়নে তাকিয়ে রইলো আরহামের দিকে। আরহাম এবার জোর করেই রিদকে নিজের গাড়িতে বসিয়ে দিলো। ব্যথার্ত হাত দিয়েই ড্রাইভ করতে থাকলো।
অহনা মূর্তির মতো রিকশায় বসে আছে। নির্জন রাস্তা ধরে রিকশা চলছে। অহনার বাবা কিছু বললেন না আর। অহনার আঁখিজোড়ায় বারবার ভেসে উঠছে তাঁদের দুইজনের রঙিন মুহূর্ত। মস্তিকে ঝড়তুফান চলছে। এভাবে সে রিদকে হারিয়ে ফেলবে কল্পনায়ও ভাবেনি। হাতের ফোনের দিকে তাকালো অহনা। ওয়ালপেপারে তার আর রিদের হাত ধরা একটি ছবি দেওয়া। অহনার নয়ন পুনরায় অশ্রুতে ভরে গেলো। সজোরে রাস্তায় দূরে ছুঁড়ে ফেললো হাতের ফোন। রাখবে না রিদের কোনো মেমোরি। মনে করতে চায় না সে আর রিদের সাথে কাটানো মুহূর্তের কথা। সবকিছু মুছে ফেলতে চায় তার মন ও মস্তিক থেকে। তবে তা কী আদৌ সম্ভব!
__________________
মাত্রই ক্লাস শেষ হয়েছে মাহানুরদের। ভার্সিটির মেইন গেটের সামনে এসে অহনাকে কল দিলো। কিন্তু নাম্বার বন্ধ আসছে। ভর দুপুর। প্রচুর গরম। সেই সাথে মাহানুরের মেজাজও গরম হয়ে গেলো। মাথায় আবার হিজাব বেঁধেছিলো। তাই বেশি খারাপ লাগছে। আবার অহনার জন্য চিন্তাও হচ্ছে। আরো কয়েকবার কল করলো তখনও ফোন বন্ধ। সিয়াম মুহিবও কল দিলো কিন্তু সেই একই অবস্থা। তারা কেউই বুঝলো না আসলে হয়েছেটা কী। মাহানুর এবার আমতা আমতা করে আরহামকে কল করলো। সেও প্রথমবার রিসিভ করেনি। দ্বিতীয়বার দিতে রিসিভ করে। মাহানুর চট করে বলল,
-সমস্যা কী আপনাদের সবার? কেউই আমার কল ধরছে না। অহনাকেও সেই কখন থেকে কল দিচ্ছি ফোন বন্ধ।
-বাসায় এসো নুর।
মাহানুর কিছু বলতে নিলে কল কেটে গেলো ঐপাশ থেকে। মাহানুর বিরক্ত হয়ে সিয়াম, মুহিবদের থেকে বিদায় নিয়ে আরহামের পাঠানো গাড়িতে উঠে বসলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই বাসায় এসে পরলো মাহানুর। ড্রইংরুমে জয়া বেগমকে চিন্তিত হয়ে বসে থাকতে দেখা গেলো। রাবেয়া আর রুমকিও তার পাশেই দাঁড়ানো। মাহানুরকে দেখে রাবেয়া মুখ বাঁকালো। মাহানুর জয়া বেগমের পাশে বসে পরলেন। ভীষণ ক্লান্ত সে। জয়া বেগমকে জিগ্যেস করলো,
-মা কিছু হয়েছে? আমি আমার ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যেতাম আপনার ছেলে বলল বাসায় চলে আসতে!
-আর বলো না মা! ওপরে যেয়ে দেখো।
-কী হয়েছে ওপরে?
-আরহাম ভাই তার বন্ধু রিদ ভাইকে র’ক্তাক্ত অবস্থায় বাসায় নিয়ে এসেছে ভাবি।
মাহানুর পিলে চমকে গেলো রুমকির কথা শুনে। সকল ক্লান্তি উধাও হয়ে গেলো তার। সিঁড়ি বেয়ে একপ্রকার ছুটে চললো ওপরে। তাঁদের রুমে এসে দেখলো রুম খালি। পাশের গেস্টরুম থেকে কথার আওয়াজ আসছে। মাহানুর কাঁধের ব্যাগ বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে পাশের রুমে চললো। দরজার সামনে আসতেই বিছানায় হাঁটুমুড়ে বসা রিদকে দেখলো সে। নরম পায়ে ভিতরে প্রবেশ করলো সে। রিদের এই অবস্থা কেনো? এখন তো রিদকে তাঁদের নিজের বাসায় থাকার কথা! পাগলের মতো নাচানাচি করার কথা! এতো আঘাত তার কিভাবে হলো! বিচলিত দৃষ্টিতে বিছানার পাশে বসা আরহামের দিকে তাকালো সে। ফার্স্টএইড বক্স তার হাতে। মাহানুর অবাক হয়ে জিগ্যেস করলো,
-এইসব কী? রিদ ভাইয়ার এই অবস্থা কিভাবে হলো?
আরহাম শান্ত ভঙ্গিতে সবটা বলল মাহানুরকে। মাহানুর স্তব্ধ। কিছুক্ষনের মধ্যে এতো কিছু হয়ে গেলো! এর জন্যই অহনার ফোন বন্ধ আসছে। রিদের এ অবস্থা তাহলে অহনার অবস্থা না জানে কী! মাহানুর রিদের হাতের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় র’ক্ত জমাট বেঁধে আছে। উদ্বিগ্ হয়ে আরহামকে বলল,
-তার হাত থেকে র’ক্ত বের হচ্ছে বেন্ডেজ করে দিচ্ছেন না কেনো?
-করতে দিলে তো! মাহানুর মেল ভার্সন ও। ঘাড়তেরামি শুরু করেছে!
মাহানুর আরহামকে চোখ রাঙালো। কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসলো। আরহামের হাত থেকে ফার্স্টএইড বক্স নিয়ে নিজেই লাগাতে উদ্যত হলো। রিদ বিমর্ষ স্বরে বলল,
-থাক ভাবি এইসবের আর দরকার নাই।
-আছে।
রিদ একটু দূরে সরে গেলো। মাহানুর বুঝলো রিদ সরম পাচ্ছে তার হাতে বেন্ডেজ করাতে। নিষ্ক্রিয় কণ্ঠে মাহানুর বলল,
-আমার কিন্তু দুইটা বড় ভাই আছে। আপনাদের বয়সীই। তো আপনিও কী আমার বড় ভাই না? কেনো লজ্জা পাচ্ছেন? বোনের সামনে কিসের লাজ? বোনরা কী ভাইদের সেবা করে না?
রিদ নিশ্চুপ মাহানুরের দিকে তাকিয়ে রইলো। মাহানুর স্যাভলনে তুলো ভিজিয়ে রিদের হাত পরিষ্কার করে দিতে দিতে বলল,
-ওকে ভাইবোন সম্পর্কে যেহেতু এতো সরম তাহলে সেটা বাদ দিলাম। উনি আপনার বন্ধু লাইক ভাইয়ের মতোই। সেই সম্পর্কে আমি আপনার ভাবি। আর জানেন তো ভাবি মায়ের সমতুল্য। তাই আমার সাথে একদম বাড়াবাড়ি করবেন না বলে দিলাম।
অসহ্য যত্ননায়ও রিদ স্মিত হাসলো মাহানুরের কথায়। এইরকম আপনজনের মতো শাসন তার আম্মা আর অহনা ছাড়া আজ পর্যন্ত অন্যকোনো নারী করেনি! তার আপন ভাবিরাও কখন তাকে এইরকম ভাবে বলেনি। রিদের মনে হলো এখন শুধু আরহামই তার আপনজন নয় মাহানুরও তার বোন অথবা ভাবি।
>>>চলবে। #তবে_ভালোবাসো_কী ২
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
পর্ব ২৬
অতি সাধারণ একজন মানুষ অহনার বাবা। সমসময় ঝগড়া, মারামারি থেকে সাতহাত দূরে থাকেন তিনি। শান্তশিষ্ট তার স্বভাব আচরণ। তিন মেয়েই তার কলিজার টুকরা তবে অহনা তার একটু বেশি আদরের। মধ্যবিত্ত হয়েও মেয়েদের কখন চাওয়া পাওয়া অপূরণ রাখেনি তিনি। অসীম ভালোবাসা তাঁদের প্রতি। যখন স্ত্রীর মুখে শুনেছিলো অহনা একজনকে পছন্দ করে আর ঐ ছেলেও নাকি অহনাকে পছন্দ করে বেশ অবাক হয়েছিলেন তিনি। এতে তার কোনো আপত্তি নেই। সংসার করবে যে সে নিজের পছন্দে বিয়ে করতেই পারে। এটা বর্তমান যুগে বড় কিছু না । সে শুধুই চায় তার মেয়ে যাতে সুখী হয়। সকালে যখন অহনা তাকে বলল রিদ আসছে তার সাথে দেখা করতে সে সম্মতি দিয়েছে।
যথা সময়ে রিদ এসেছেও। ইং করা আকাশি রঙের শার্ট আর কালো পেন্ট পরেছে। মাথার চুলগুলোও সেট করা। অহনার বাবার কাছে ছেলেকে মন্দ লাগলো না। ভদ্রই লাগছে। অহনার বাবা অতি কৌশলে অহনার ফুপ্পিকে এই বিষয় জানালো না। তারা এমনেও একটু বেশি বোঝে তাই তাঁদের জানানো উচিত না। রিদকে দেখে কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ ছিল অহনা। মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হয়নি তার। এ কোন রিদ! প্রতিদিন সে কোন রিদকে দেখতো! কোথায় লুকিয়ে ছিল এই হলিউড মুভির জেন্টলম্যান হিরো! রিদের চোখ টিপ দেওয়ার পর ধেন ভাঙে অহনার। দুষ্ট হাসি ঘুরপাক খাচ্ছে রিদের মুখ জুড়ে। গাড়ি দিয়ে এসেছে আজ সে। আরহামও এসেছে রিদের সাথে। এই অসুস্থ বন্ধুকে রিদ একপ্রকার জোর করেই নিয়ে এসেছে। তার এতো বিশেষ একটি দিনে বেস্টফ্রেন্ড না থাকলে কিভাবে হবে। অহনার বাবার সাথে কুশল বিনিময় করে নিলো রিদ। কী সংস্কারী তার আচরণ! রিদ দরজা খুলে দিলো। অহনা বাবাকে নিয়ে ভিতরে যেয়ে বসলো। রিদ ড্রাইভিং সিটে বসলো। গাড়ি চালাচ্ছে সে। অহনার বাবা আরহামকে দেখে বললেন,
-তোমাকে আমি কোথায়ও আগে দেখেছি বাবা?
-বাবা উনি আরহাম ভাইয়া। হানিফ ভাইয়ার বন্ধু উইযে আর্মি।
-ওহহ! হ্যাঁ চিনেছি। তোমার ছবি আমি নিউসপেপারেও দেখেছিলাম।
-জানো বাবা উনিই কিন্তু মাহানুরের হাসব্যান্ড।
-ওওও! যাক মাহানুর মা তার যোগ্য পাত্র পেয়েছে।
আরহাম আনমনে হাসলো। সবাই কত ভালো জানে মাহানুরকে! অথচ তার আসল রুপ তো শুধু সে-ই দেখেছে।
গাড়ি তার আপন গতিতে চলতে থাকলো। পথে অহনার বাবা রিদকে একে একে প্রশ্ন করছে রিদ ভদ্র বেশে উত্তর দিচ্ছে। আরহাম নিজেও চমকিত। মানুষ ভালোবাসার জন্য কী না করে! বখাটে রিদও আজ তার ভালোবাসার জন্য আদর্শ পুরুষ হয়ে গিয়েছে।
মাহানুর আজ ভার্সিটিতে এসেছে। সিয়াম, মুহিবও তার সাথে। কাম্পাসে বসে সিয়ামের থেকে এতদিনের নোট গুলো লিখে নিচ্ছে সে। পাশেই একটি কোকের বোতল। কিছুক্ষন পর পর সেটায় চুমুক দিচ্ছে। মুহিব সেই তখন থেকে খেয়াল করছে সিয়ামের মনম’রা মুখ। কেমন যেনো একটা বিষণ্ণ দেখাচ্ছে তাকে। এখন আর কিছু না ভেবে জিগ্যেসই করে বসলো।
-তোর আজ হয়েছেটা কী শা’লা? মুখের বারোটা বাজিয়ে রেখেছিস কেনো?
-গরমে আমার বিরক্ত লাগছে।
-ইসসস!
-হো। যা আমার জন্যও একটা কোকের বোতল নিয়ে আয়। যা।
-যাইতাসি।
মুহিব উঠে চলে গেলো। মাহানুর নিজের কাজ করতে করতেই বলল,
-কত সুন্দর মিথ্যা বলিস শা’লা! গুনাহ হইবো গুনাহ।
-একটু আরেকটু বললে কিছু হইবো না।
-হো তোর কানে কানে আইসা বলছে!
সিয়াম কিছু বলল। বুক ফেটে যাচ্ছে তার। চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে। ছেলে বলেই এখনও স্ট্রং হয়ে বসে আছে। মেয়ে হলে এতক্ষণে কান্নাকাটি করে দুনিয়া ভাসিয়ে দিতো! মাহানুর বুঝতে পারছে সিয়ামের অবস্থা। তারও ভীষণ খারাপ লাগছে। যদি সে পারতো তাহলে এখন রিদের স্থানে সিয়ামকে বসিয়ে দিতো। তবে তার যে সাধ্যে নেই! কণ্ঠস্বর খাঁদে ফেলে সিয়াম বলল,
-অনেক খুশি না অহনা?
-হুম। অনেক।
-বিয়ে হয়ে যাবে ওর! কয়েকমাস পর রিদের বাচ্চার মাও হবে!
-হবেই তো। দুই বছর ধরে ভালোবাসিস অথচ মুখ ফুটে বলতে পারলি না।
-ওর মনে আমার প্রতি কোনো ফিলিংস ছিলই না। ভাইয়ের নজরে দেখে আমাকে।
-তোহ! তুই নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলি সিয়াইমা!
তাচ্ছিল্যা হাসলো সিয়াম। কপালে আঙুল ঢেকিয়ে বসে রইলো। অহনার কথা মাথায় আসতেই মস্তিক ঝিম ধরে যাচ্ছে তার। এক তরফা ভালোবাসা কেনো সবসময় কষ্ট দেয়! গম্ভীর কণ্ঠে মাহানুরকে প্রশ্ন করলো,
-তোদের বিয়ের এক সপ্তাহ হয়ে যাবে। আরহাম ভাইকে ভালোবাসতে পেরেছিস তুই? নাকি পরিবার পরিবার করেই মনকে বন্দি করে সংসার সাজিয়ে বসেছিস?
মাহানুরের হাত থেমে গেলো। মাথা তুলে তাকালো সিয়ামের পানে। তার শান্ত মনকে নাড়িয়ে দিয়েছে এই একটি প্রশ্ন। ভালোবাসতে পেরেছে সে? না ভালোবাসতে পারেনি তবে ভালো লেগেছে। আর তার ধারা ভালোবাসা-বাসি হবেও না! মাহানুর বলল,
-এক বছরেও ভালোবাসা হয় না আর তুই বলছিস এক সপ্তাহে হয়ে যাবে!
-তুই তো বোকা! একদিনে ভালোবাসা যায়। প্রথম দেখাও ভালোবাসা যায়।
-আমি তাকে কখনই ভালোবাসতে পারবো না। কারণ আমার ধারা ঝগড়া হবে, মারামারি হবে, তর্ক হবে, বেয়াদবি হবে কিন্তু ভালোবাসা মনে হয় না হবে।
-ভালোবাসা ছাড়া সংসার হয়?
-ভালোলাগা দিয়ে চালিয়ে নেবো। তাকে আমার এখন ভালো লাগে।
স্পষ্ট উত্তর মাহানুরের। সিয়াম হাসলো। শব্দ করে হেসে ফেললো সে। মাহানুর বিরক্ত হয়ে বলল,
-পাগলের মতো হাসছিস কেনো?
-ভালোলাগা থেকেই ভালোবাসা তৈরি হয়। এখন ভালোলাগে খুব জলদি তুই আরহাম ভাইকে ভালোবেসে ফেলবি। দেখিস।
-ইম্পসিবল।
-তুই জাস্ট মিলিয়ে নিস আমার কথা। আরহাম ভাইয়ের মনের অবস্থা কী? সে কী সম্পূর্ণ ভাবে তোকে মেনে নিয়েছে?
মাহানুর চুপ হয়ে যায়। ভাবনায় ডুবে যায় সে আজ সকালের। রাতে রক্তে ভিজে গিয়েছিলো আরহামের বেন্ডেজ। মাহানুর যখন বিষয়টা খেয়াল করলো অজান্তেই তার বক্ষ কেঁপে উঠেছিল। সে নিজেই আরহামের বেন্ডেজ পরিবর্তন করে দেয়।
কিসের এতো দরৎ তার আরহামের প্রতি! দুইদিন আগেও তো এমন ছিল না! আবার আরহাম কালো জাদুটাদু করলো নাতো! এইরকম উদ্ভুত সব চিন্তা ভাবনা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো মাহানুর। সকালে আরহামের আগে তার ঘুম ভেঙেছিল কিন্তু অলসতার জন্য উঠলো না। একই ভঙ্গিতে শুইয়ে রইলো। ততক্ষণে আরহামেরও ঘুম ভেঙে গিয়েছে। ফোন বাজছে তার। রিদের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলতে থাকলো। মাহানুর এক চোখ খুলে সবটা পরোক্ষ করে নিলো। কথা শেষ হলে ফোন রেখে ঘুমন্ত মাহানুরের দিকে তাকায় সে। হাত দিয়ে মাহানুরের মুখ থেকে ছোট ছোট চুলগুলো সরিয়ে দিলো সযত্নে। ঝুঁকে মাহানুরের কপালে গভীর চুমু বসিয়ে দিলো। তারপর বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুম চলে গেলো। মাহানুর অকেজো হয়ে বিছানায়ই পরে রইলো। কী ছিল এটা! কেনো ছিল? কিভাবে কী হলো! এইরকম হাজারো প্রশ্ন নিয়ে উঠে বসে সে। তখন এই বিষয় বেশি না ভাবলেও এখন সিয়ামের কথায় ভাবছে সে। তবে কী আরহাম তাকে ভালোবাসে?
-কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি?
-কোথাও না। চল ক্লাসে যাই আবার অহনার সাথেও দেখা করতে হবে।
-হুম চল।
_______________
চলন্ত গাড়ি রিদদের বাসায় এসে থামলো।সারারাস্তা অহনার বাবার সাথে খাতির জমিয়ে নিয়েছে রিদ। আরহামও দুই একটা কথা বলেছিলো। রিদ আগে আগে বের হয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিলো। অহনা আর অহনার বাবা বেরিয়ে আসে। সুবিশাল বাড়ি রিদদের। অহনার বাবা শান্ত নজরে চোখ বুলালো। অহনা কাচুমাচু হয়ে বাবার সাথে দাঁড়ালো। রিদ অহনার বাবার সাথে কথা বলতে বলতে ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে। অহনা আরহাম একসাথে। অহনা নিচু স্বরে বলল,
-আরহাম ভাই আমার তো অনেক নারভাস লাগছে। আপনি কেনো আপনার বউকে নিয়ে আসলেন না!
-আমার বউ তো আর তোমার মতো সাদাসিধে মেয়ে নয় যে আমার কথা শুনবে আর চলে আসবে রিদের জান!
অহনা লাজুক হাসলো। সদর দরজায় রিদের আব্বা আর ভাইয়েরা দাঁড়িয়ে ছিল। আরহাম এগিয়ে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে নিলো। রিদের আব্বার অনেক পছন্দের আরহাম। এইরকম প্রতিষ্ঠিত ছেলে কার না ভালো লাগে! শুধুই আপসোস তার কোনো মেয়ে ছিল না। এগিয়ে এসে অহনার বাবার সাথে হ্যান্ডশেক করলো। অহনা তাকে সালাম দিলো। রিদের মার বেশ পছন্দ হলো অহনাকে। মনে মনে ভাবলেন ছেলের পছন্দ আছে! বড় দুই পুত্রবধূও এতো সুন্দর না। এ তো মোমের পুতুল! সে অহনাকে ধরে ভিতরে নিয়ে যায়। রিদের আব্বার সাথে কথা বলতে বলতে ভিতরে যেয়ে বসে অহনার বাবা। এতো বিশাল আলিশান বাড়িঘর দেখে তার মনে অজানা ভয়ও হচ্ছে। ক্ষণেই টেবিল সেজে উঠলো বিভিন্ন ধরণের খাবারে। এতো আদিখ্যেতা দেখে আরহামের মনে ঘটকা লাগলো। সে রিদের আব্বাকে চিনে। নিশ্চই বড় কিছু হবে! রিদের বাবা মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন,
-ছেলে আমার অনেক ফাস্ট। গতকাল বললাম আর আজই আপনাকে নিয়ে এসে পরলো! যাক ভালো হয়েছে। কী কাজ করেন আপনি ভাই?
-ফলের কোম্পানিতে চাকরি করছি ভাই।
-যাক। কত বেতন আপনার?
অহনা মাথা তুলে তাকালো। ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে রইলো। রিদের হাসি হাসি মুখভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে গেলো। কিছু বলতে উদ্যত হলে আরহাম তার হাত চেপে ধরে থামিয়ে দেয়। অহনার বাবা স্মিত হেসেই বললেন,
-বিশ হাজার টাকা।
-বিশ হাজার টাকা! এতো কম টাকায় সংসার কিভাবে চলে!
-আল্লাহ রহমতে চলে ভাই।
-আমার মেজো পুত্রবধূর পার্লারেই মাসে এতো টাকা খরচ হয়! তারপর আমাদের এই বাড়ি তো দেখলেন। আরো তিনটা বাড়ি আছে আমার। সবগুলোই ভাড়া দেওয়া। আমাদের নিজস্ব ব্যবসাও আছে।
অহনার বাবা চুপচাপ শুনলো। রিদ চটে যাচ্ছে বাবার ওপর। অহনা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। রিদের আব্বা আবারও বললেন,
-তা আপনাদের বাড়ি কয়টা?
-একটাই। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ।
-আপনাকে দেখেও বোঝা যাচ্ছে! আমার বড় দুই ছেলের বউ আমার নিজের পছন্দ করা। জায়গা-জমিন, টাকা পয়সার অভাব নেই। আর দেখেন ছোটটায় নিজে পছন্দ কইরা নিজের কপাল পুড়ালো!
এবার আরহামেরও রাগ হলো। হাত সরিয়ে নিলো রিদের থেকে। রিদ ক্ষিপ্ত কণ্ঠে ভালোভাবেই বলল,
-এইসব কী পেচাল পারছো আব্বা! বিয়ের কথা বলো।
-রিদ চুপ করো তুমি। বড়রা কথা বললে ছোটদের বলতে নেই। তাছাড়াও তাঁদের মেয়ে তাঁদের যোগ্যতার বাহিরে ছেলে পছন্দ করেছে সেটা শুনবে না তারা!
রিদের বড় ভাই বলল। রিদের ফর্সা মুখ রক্তিম হয়ে উঠলো। কঠিন চোখে ভাইয়ের দিকে তাকালেন। অহনা একবার রিদকে দেখছে তো একবার নিজের বাবাকে। এখনও শান্ত ভাবেই বসে আছে অহনার বাবা। রিদের বাবা হাসি মুখেই বললেন,
-আসলে আপনাদের মতো কিছু মানুষকে দেখলে আমার বড়ই হাসি আসে। এদের কাজই ভালো পরিবারের ছেলেদের ফাঁসি নিজের মেয়েদের তাঁদের গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া! আমি আমার রাজকুমার ছেলের জন্য অবশ্যই দাসী আনবো না!
চোখ দিয়ে টপটপ জল গড়িয়ে পরছে অহনার। তার জন্য আজ তার বাবাকে এতটা অপমানিত হতে হচ্ছে। রিদের কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে অহনার চোখের পানি দেখে। আরহাম অবস্থা বেগ পেতে দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
-আঙ্কেল এভাবে বাসায় ডেকে এনে আপনি তাঁদের অপমান করতে পারেন না। বিয়ের জন্য রাজি না আপনি সেটা সরাসরি বললেই তো পারতেন।
-আরেহ আরহাম বাবা তুমি এদের মতো মানুষদের চেনো না। এরা তো লোভী জাত এদের এভাবেই শিক্ষা দেওয়া উচিত।
ধয্যের বাধ ভাঙলো রিদের। বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো সে। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল,
-মুখ সামলিয়ে কথা বলো আব্বা। তুমি ভুলে যেয়েও না এর পরিনাম কতটা খারাপ হবে!
-তুমি চুপ থাকো। ওরা তোমার ওপরও কালো জাদু করেছে তাইতো ওদের ছাড়া তুমি কিছুই দেখছো না!
অহনাও উঠে দাঁড়ালো। রাগে তারও শরীর কাঁপছে। রিদের বাবার স্মুখীন এসে দাঁড়ালো সে। বলল,
-যা করেছি আমি করেছি আমার বাবাকে এভাবে অপমান করতে পারেন না আপনি।
-ওরে আমার বাবার কন্যা! এতই যখন বাবার চিন্তা ছিল তাহলে আমার ছেলেকে ফাঁসানোর আগে তাল ছিল না?
ফুঁপিয়ে উঠলো অহনা। কম্পিত কণ্ঠে চিৎকার করে বলল,
-আপনার ছেলেকে রাখুন নিজের পেটে ঢুকিয়ে। যার এইরকম মানসিকতার পিতা তাকে আমি কেনো আমার জুতাও বিয়ে করবে না। আমার বাবাকে অপমান করার কোনো রাইট নেই আপনার মতো নিচু মানসিকতার মানুষের।
রিদের বাবা হকচকিয়ে গেলো। এইরকম বাচ্চা মেয়ে তাকে এভাবে বলল! সে সুযোগ পেয়ে বললেন,
-দেখেছো রিদ এই বেয়াদব মেয়েকে তুমি বিয়ের জন্য পাগল হচ্ছিলে!
অহনা কোনো প্রতিক্রিয়া করলো। বাবার হাত ধরে বলল,
-চলো বাবা।
-কিন্ত মা,
-আমি এর এক মুহূর্তও এখানে থাকবো না। আলহামদুলিল্লাহ আমার গরিব। বড়োলোক হলে আজ এদের মতোই মানুষদের মানুষ মনে করতাম না।
শান্ত মানুষ রেগে গেলে ভয়ংকর ঠিক যেমন অহনার বাবা এখন নিজের মেয়েকে দেখছে। অহনা বাবাকে নিয়ে বড় বড় পা ফেলে বাহিরে বেরিয়ে এসেছে। আঁখিজোড়া দিয়ে অশ্রু বন্যা বইছে তার। রিদ দৌড়ে আসলো। অহনা অহনা বলে চিৎকার করতে করতে। ক্ষণেই ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছে সে। অহনার বাবার স্মুখীনই অহনার হাত চেপে ধরলো। সে জ্ঞানহীন মানব যেনো! অহনার বাবা সামনে হাঁটা ধরলো। অহনা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। রিদ অস্থির হয়ে বলল,
-আব্বার তরফ থেকে আমি মাফ চাচ্ছি অহনা। তোমার বাবার পা ধরেও মাফ চাইবো প্লিস এভাবে চলে যেয়েও না।
অহনা নিশ্চুপ। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। রিদ অহনার দুই কাঁধে হাত দিয়ে কিছুটা ঝাঁকিয়ে বলল,
-কিছু বলো অহনা তোমার চোখের পানি, তোমার চুপ্পি আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। অনেক কষ্ট।
-চলে যাও রিদ। পথ ছাড়ো।
-ছাড়বো না। কান্না থামাও।
অহনা চেঁচিয়ে উঠলো,
-ছাড়ো আমাকে রিদ। আর কত অপমান করাবে আজ আমাদের? মন ভরেনি তোমার?
-আমি জানতাম না আব্বা এমন কিছু করবো।
-তুমি কিছুই জানতে না রিদ! কিছুই না।
কেঁদে চোখের, নাকের পানি এক করে ফেলেছে অহনা। রিদ ছেলে মানুষ তবে সে নিজের ইমোশন বেশিক্ষন আটকে রাখতে পারে না। অহনার কান্না দেখে তার রক্তিম চোখও টলমল করছে। অহনা বড় নিঃশাস টেনে বলল,
-তোমাকে আমি ভালোবাসি অনেক। কিন্তু আমি কিভাবে ভুলে যাই তোমার থেকেও আমি বেশি ভালোবাসি আমার বাবাকে। সে আমার জন্মদাতা রিদ। আজ এতো জঘন্য ভাবে তার অপমান হয়েছে! তাও আবার আমার জন্য! তুমি জানো এখন আমার কেমন অনুভূতি হচ্ছে? তোমার আব্বাকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলতে মন চাইছে।
-তোমার যা মন চায় করো কিন্তু আমাকে ছাড়ার কথা বলিও না। আমি পরিবার ছেড়ে দেবো। আজ থেকে আমি এতিম হয়ে যাবো। ঘর জামাই হয়ে থাকবো।
রিদ উম্মাদ হয়ে গিয়েছে। সে এখন নিজের মধ্যে নেই। তার মাথায় শুধু ঘুরছে অহনা আর অহনা। আরহাম দূর থেকে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে কাছে যেতে গিয়েও পিছিলে আসলো। অহনা বলল,
-তোমাকে আমিও ভালোবাসি আমারও কষ্ট হবে। তবে যে পর্যন্ত তোমার আব্বা আমার বাবার কাছে ক্ষমা না চাইবে সে পর্যন্ত আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না। আর না আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক থাকবে।
অহনা দ্রুত চলে যেতে নিলে রিদ তার হাত চেপে ধরলো। করুণ কণ্ঠে বলল,
-তুমি এভাবে আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না। আমাকে একা করে যেতে পারো না অহনা!
অহনা নাক টেনে পিছনে ফিরে। দূরত্ব ঘুচিয়ে অনেকটা নিকটে চলে যায় রিদের। এক ফোঁটা অশ্রু গালে এসে পরেছে রিদের। কী বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে মুখটি। অথচ কিছুক্ষন পূর্বেও কত হাস্যজ্জ্বল ছিল। অহনা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে দু পা উঁচু করে রিদের ভেজা গালে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
-আমার কোনো ধনী রাজকুমার চাইনা রিদ। আমাকে একটুও যদি ভালোবেসে থাকো তাহলে যে পর্যন্ত তোমার আব্বাকে মানাতে না পারবে সে পর্যন্ত আমার চোখের সামনে এসো না। ভালো থাকো আর আমাকে ভালো থাকতে দিও।
চলে গেলো অহনা। রিদ একই ভাবে জমিনে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো। র’ক্তলাল চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে তার। দুই হাত মুঠি করে চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে উঠলো,
-অহনাআআআআআআ।
আরহাম দৌড়ে বন্ধুকে এসে জড়িয়ে ধরলো। ঝাঁকি দিয়ে দিয়ে কাঁপছে রিদের শরীর। আরহাম শক্ত করে ধরে রাখলো। রিদের মাও দৌড়ে এসেছে। আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদছেন তিনি। রিদ আরহামের কাঁধে মাথা রেখে বিড়বিড় করে বলল,
-ও আমাকে ছাড়তে পারে না। কিভাবে এতো স্বার্থপর হলো অহনা! আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না আরহাম।
-শান্ত হো বন্ধু। শান্ত হো। আমি তো তোর সাথে আছি। আমি দেখবো অহনা কিভাবে তোকে ছেড়ে যায়!
-অহনাকে ছাড়া বাঁচবো না আমি। যেকোনো মূল্যেই আমার ওকে চাই আরহাম।
-আচ্ছা। আমি অহনাকে আনতে যাবো তুই শান্ত হো।
আচমকা রিদের কী হলো বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো সে। আরহাম বুঝলো না রিদের মনোভাব। রিদ ধুরুম ধুরুম পা ফেলে বাড়ির ভিতরে গেলো। পিছন পিছন আরহামও গেলো। বাড়ির প্রত্যেকটা আসবাবপত্র তুলে তুলে ফেলছে রিদ। রিদের বীভৎস রুপ দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেলো। কাঁচের টেবিল একহাত দিয়ে ঘুষি মেরে চুর্ণবিচুর্ণ করে দিলো। র’ক্ত ঝরতে লাগলো হাত দিয়ে। রিদের আব্বা সহ সকলে ভীত চোখে তাকিয়ে রইলো। রিদ আর্তনাদ করে বলল,
-সব ধ্বংস করে দেবো আমি। সব শেষ করে দেবো।
রিদের মেজো ভাই আর আরহাম রিদকে ধরলো। আজ নিজের মধ্যে নেই। সম্পূর্ণ ভেঙে চুরমার সে। আঙুল তুলে আব্বাকে বলল,
-আজ তোমার প্রতি ঘৃণা আমার আরো বেড়ে গেলো। ছি!তুমি কারো বাপ হওয়ার যোগ্যতাই রাখো না।
রিদের আব্বা কিছু বলতে পারলেন না। রিদকে দেখে সে নিজেও ভয় পেয়ে জড়োসড়ো হয়ে গিয়েছে। রিদ ভারী নিঃশাস নিয়ে বলল,
-আজ থেকে আমি পরিবার ত্যাগ করলাম। লাগবো না আমার কোনো বা’লের আপনজন। আমি রিদ আমি আজ থেকে এতিম। তোমাদের ছোট ছেলে আজ থেকে তোমাদের জন্য ম’রছে। তোমার বড় দুই পুত্রকে নিয়ে তোমার পরিবার সাজাও।
আরহামকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলে রিদের মা এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন। কাঁদছেন তিনিও। কান্নারত্ব কণ্ঠে বললেন,
-আব্বা এমন করিস না। এটা তোর বাড়ি তোর সব। তুই কেনো চলে যাবি!
-আমার মানসিক শান্তি চাই আম্মা যেটা এই বাড়িতে নেই। আজ আর আমাকে আটকিয় না।
মাকে উপেক্ষা করে চলে গেলো রিদ। আজ নিজের কথায় অনড় সে। আরহাম একবার রিদের আব্বার দিকে তাকিয়ে সেও চলে গেলো।
রাস্তায় এসে ধপ করে বসে পরলো রিদ। কী থেকে কী হয়ে গেলো কিছু সময়ের মধ্যে। এইরকম তো হওয়ার কথা ছিল না! কেনো এমন হলো। আরহাম রিদকে বলল,
-আমার সাথে বাসায় চল দোস্ত।
-চলে যা আরহাম। তোদের কাউকে আমার প্রয়োজন নেই। আজ আমার সব শেষ।
-পাগলামি বন্ধ কর তুই। চুপচাপ উঠ রিদ।
-চলে যা এখান থেকে। দূর হো।
আরহাম অধয্য হয়ে পরলো। রিদকে দাঁড় করিয়ে সপাটে চড় বসিয়ে দিলো রিদের গালে। শক্ত পাঁচ আঙুলের ছাপ বসে গেলো রিদের ফর্সা গালে। গালে হাত দিয়ে অসহায় নয়নে তাকিয়ে রইলো আরহামের দিকে। আরহাম এবার জোর করেই রিদকে নিজের গাড়িতে বসিয়ে দিলো। ব্যথার্ত হাত দিয়েই ড্রাইভ করতে থাকলো।
অহনা মূর্তির মতো রিকশায় বসে আছে। নির্জন রাস্তা ধরে রিকশা চলছে। অহনার বাবা কিছু বললেন না আর। অহনার আঁখিজোড়ায় বারবার ভেসে উঠছে তাঁদের দুইজনের রঙিন মুহূর্ত। মস্তিকে ঝড়তুফান চলছে। এভাবে সে রিদকে হারিয়ে ফেলবে কল্পনায়ও ভাবেনি। হাতের ফোনের দিকে তাকালো অহনা। ওয়ালপেপারে তার আর রিদের হাত ধরা একটি ছবি দেওয়া। অহনার নয়ন পুনরায় অশ্রুতে ভরে গেলো। সজোরে রাস্তায় দূরে ছুঁড়ে ফেললো হাতের ফোন। রাখবে না রিদের কোনো মেমোরি। মনে করতে চায় না সে আর রিদের সাথে কাটানো মুহূর্তের কথা। সবকিছু মুছে ফেলতে চায় তার মন ও মস্তিক থেকে। তবে তা কী আদৌ সম্ভব!
__________________
মাত্রই ক্লাস শেষ হয়েছে মাহানুরদের। ভার্সিটির মেইন গেটের সামনে এসে অহনাকে কল দিলো। কিন্তু নাম্বার বন্ধ আসছে। ভর দুপুর। প্রচুর গরম। সেই সাথে মাহানুরের মেজাজও গরম হয়ে গেলো। মাথায় আবার হিজাব বেঁধেছিলো। তাই বেশি খারাপ লাগছে। আবার অহনার জন্য চিন্তাও হচ্ছে। আরো কয়েকবার কল করলো তখনও ফোন বন্ধ। সিয়াম মুহিবও কল দিলো কিন্তু সেই একই অবস্থা। তারা কেউই বুঝলো না আসলে হয়েছেটা কী। মাহানুর এবার আমতা আমতা করে আরহামকে কল করলো। সেও প্রথমবার রিসিভ করেনি। দ্বিতীয়বার দিতে রিসিভ করে। মাহানুর চট করে বলল,
-সমস্যা কী আপনাদের সবার? কেউই আমার কল ধরছে না। অহনাকেও সেই কখন থেকে কল দিচ্ছি ফোন বন্ধ।
-বাসায় এসো নুর।
মাহানুর কিছু বলতে নিলে কল কেটে গেলো ঐপাশ থেকে। মাহানুর বিরক্ত হয়ে সিয়াম, মুহিবদের থেকে বিদায় নিয়ে আরহামের পাঠানো গাড়িতে উঠে বসলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই বাসায় এসে পরলো মাহানুর। ড্রইংরুমে জয়া বেগমকে চিন্তিত হয়ে বসে থাকতে দেখা গেলো। রাবেয়া আর রুমকিও তার পাশেই দাঁড়ানো। মাহানুরকে দেখে রাবেয়া মুখ বাঁকালো। মাহানুর জয়া বেগমের পাশে বসে পরলেন। ভীষণ ক্লান্ত সে। জয়া বেগমকে জিগ্যেস করলো,
-মা কিছু হয়েছে? আমি আমার ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যেতাম আপনার ছেলে বলল বাসায় চলে আসতে!
-আর বলো না মা! ওপরে যেয়ে দেখো।
-কী হয়েছে ওপরে?
-আরহাম ভাই তার বন্ধু রিদ ভাইকে র’ক্তাক্ত অবস্থায় বাসায় নিয়ে এসেছে ভাবি।
মাহানুর পিলে চমকে গেলো রুমকির কথা শুনে। সকল ক্লান্তি উধাও হয়ে গেলো তার। সিঁড়ি বেয়ে একপ্রকার ছুটে চললো ওপরে। তাঁদের রুমে এসে দেখলো রুম খালি। পাশের গেস্টরুম থেকে কথার আওয়াজ আসছে। মাহানুর কাঁধের ব্যাগ বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে পাশের রুমে চললো। দরজার সামনে আসতেই বিছানায় হাঁটুমুড়ে বসা রিদকে দেখলো সে। নরম পায়ে ভিতরে প্রবেশ করলো সে। রিদের এই অবস্থা কেনো? এখন তো রিদকে তাঁদের নিজের বাসায় থাকার কথা! পাগলের মতো নাচানাচি করার কথা! এতো আঘাত তার কিভাবে হলো! বিচলিত দৃষ্টিতে বিছানার পাশে বসা আরহামের দিকে তাকালো সে। ফার্স্টএইড বক্স তার হাতে। মাহানুর অবাক হয়ে জিগ্যেস করলো,
-এইসব কী? রিদ ভাইয়ার এই অবস্থা কিভাবে হলো?
আরহাম শান্ত ভঙ্গিতে সবটা বলল মাহানুরকে। মাহানুর স্তব্ধ। কিছুক্ষনের মধ্যে এতো কিছু হয়ে গেলো! এর জন্যই অহনার ফোন বন্ধ আসছে। রিদের এ অবস্থা তাহলে অহনার অবস্থা না জানে কী! মাহানুর রিদের হাতের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় র’ক্ত জমাট বেঁধে আছে। উদ্বিগ্ হয়ে আরহামকে বলল,
-তার হাত থেকে র’ক্ত বের হচ্ছে বেন্ডেজ করে দিচ্ছেন না কেনো?
-করতে দিলে তো! মাহানুর মেল ভার্সন ও। ঘাড়তেরামি শুরু করেছে!
মাহানুর আরহামকে চোখ রাঙালো। কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসলো। আরহামের হাত থেকে ফার্স্টএইড বক্স নিয়ে নিজেই লাগাতে উদ্যত হলো। রিদ বিমর্ষ স্বরে বলল,
-থাক ভাবি এইসবের আর দরকার নাই।
-আছে।
রিদ একটু দূরে সরে গেলো। মাহানুর বুঝলো রিদ সরম পাচ্ছে তার হাতে বেন্ডেজ করাতে। নিষ্ক্রিয় কণ্ঠে মাহানুর বলল,
-আমার কিন্তু দুইটা বড় ভাই আছে। আপনাদের বয়সীই। তো আপনিও কী আমার বড় ভাই না? কেনো লজ্জা পাচ্ছেন? বোনের সামনে কিসের লাজ? বোনরা কী ভাইদের সেবা করে না?
রিদ নিশ্চুপ মাহানুরের দিকে তাকিয়ে রইলো। মাহানুর স্যাভলনে তুলো ভিজিয়ে রিদের হাত পরিষ্কার করে দিতে দিতে বলল,
-ওকে ভাইবোন সম্পর্কে যেহেতু এতো সরম তাহলে সেটা বাদ দিলাম। উনি আপনার বন্ধু লাইক ভাইয়ের মতোই। সেই সম্পর্কে আমি আপনার ভাবি। আর জানেন তো ভাবি মায়ের সমতুল্য। তাই আমার সাথে একদম বাড়াবাড়ি করবেন না বলে দিলাম।
অসহ্য যত্ননায়ও রিদ স্মিত হাসলো মাহানুরের কথায়। এইরকম আপনজনের মতো শাসন তার আম্মা আর অহনা ছাড়া আজ পর্যন্ত অন্যকোনো নারী করেনি! তার আপন ভাবিরাও কখন তাকে এইরকম ভাবে বলেনি। রিদের মনে হলো এখন শুধু আরহামই তার আপনজন নয় মাহানুরও তার বোন অথবা ভাবি।
>>>চলবে।