#তবে_ভালোবাসো_কী ২
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
পর্ব ২৮
-এটা কী অসভ্যতামি হচ্ছে না?
-এটাকে স্বামীর ভালোবাসা বলে অসভ্যতামি না! তোমার ডিকশেনারীতে কী ভালোবাসা, ভালো ব্যবহার, একটু আদর এইসব নেই নাকি?
মাহানুরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিসে বলল আরহাম। আরহামের গরম নিঃশাস অনুভব করতেই শিরশির করে উঠলো মাহানুরের সর্বাঙ্গ। হাত, পা অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে লাগলো তার। আরহাম আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো মাহানুরের কোমর। নিজের বলিষ্ঠ, স্বাস্থবান দেহের সাথে একদম মিলিয়ে নিলো। ঘাড়ের চুল সরাতেই মাহানুরের সম্বিৎ ফিরলো। ত্বরিত বলল,
-আই থিঙ্ক আমার আরেকটু সময় প্রয়োজন। যাকে এখন পর্যন্ত ভালোভাবে চিনলামই না তাকে কিভাবে নিজের শরীর দিয়ে দেই?
-ইউ আর অ্যাডাল্ট রাইট?
-ইয়েস।
-তাহলে এটা তো জানার কথা ফিজিক্যাল রিলেশনশিপে এতো চেনাজানার প্রয়োজন নেই। এন্ড ইউ আর নট এ লিটল বেবি! আর আরহাম চৌধুরী সময় অপচয় করতে একদমই পছন্দ করে না।
-মনের দিক দিয়ে আমি এখনও বাচ্চাই। যতসব।
কাচুমাচু মুখ করে বলল মাহানুর। সে ভীষণ বিরক্ত আরহামের ওপর। আবার একটু ভীতও। আরহাম ভীষণ মজা পেলো মাহানুরের কথায়। হো হো করে শরীর ঝাঁকিয়ে হাসতে লাগলো সে। মাহানুর যে অ্যাডাল্ট বিষয় ভীত এটা এতক্ষণে বুঝে ফেলেছে আরহাম। তাই মাহানুরকে আরেকটু ভয় দিতে কুটিল স্বরে বলল,
-জানো নুর ভাবছি আমরা জলদি বেবি নিয়ে নেবো। যতবার ছুটিতে আসবো ততবার একটা করে বেবি নেবো। অনেক বড় ফ্যামিলি হয়ে যাবে আমাদের। গ্রেট আইডিয়া না?
-চুপচাপ ছাড়ুন আমাকে। কী সব বা’লছাল বলছেন!
-তারপর শুনোই না আমি তো এখন থেকেই তাঁদের নাম ভাবা শুরু করেছি! চলো ফার্স্ট বেবির জন্য আজই প্রসেসিং শুরু করি।
-ছি!
অদ্ভুত ভঙ্গিতে বলে উঠলো মাহানুর। আরহাম ঠোঁট টিপে হাসছে। কিন্তু মুখের হাবভাব একদম সিরিয়াস। আরহামের হাতে জোরে চিমটি কাটে মাহানুর। আরহামের শক্ত বাঁধন ঢিলা হতেই ধপ করে উঠে যায় মাহানুর। মুখে বিজয়ের হাসি তার। আরহামও সাথে সাথেই উঠে দাঁড়ায়। সটান হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
-কোথায় আর পালাবে নির্বোধ! তোমার শেষ ঠিকানাই যে আমার বক্ষস্থলে।
-আমি হলাম একজন মুক্ত পাখি যাকে ধরা মুশকিল ফৌজি সাহেব।
-কঠিন কাজকে সহজ করাই আমার কাজ।
আরহাম কয়েক পা এগিয়ে গেলো মাহানুরের নিকট। মাহানুরের হাসি মুহূর্তেই বিলুপ্ত হয়ে গেলো। আলগোছে সরে যেতে নিলে আরহাম তার একহাত চেপে ধরে। মাহানুর যেনো সেখানেই পাথরের মূর্তি হয়ে গেলো। আরহাম আরো কাছে আসলো। দুইজনের মধ্যে মাত্র আঙুলে দূরত্ব। ঘোর লাগা নজরে তাকিয়ে মুখ এগিয়ে নিলো আরহাম। মাহানুর নিস্পলক তাকিয়ে রইলো। ধরধর করে কাঁপছে সে। আরহাম হয়তো লি’পকিস করবে ভেবে লজ্জায় আর ভয়ে ভিতর ভিতর শেষ সে। কিন্তু আরহাম মাহানুরকে অবাক করে দিয়ে তার গালে নরম ভাবে নিজের ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দেয়। তৎক্ষণাৎ আবার দূরে সরে যায়। মাহানুরের মধ্যে কোনো পরিবর্তন হলো না। আরহাম বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
-এখন স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে না থেকে লাইট বন্ধ করে দেও। অনেক ঘুম আসছে আমার।
মাহানুরের ভাবনা ছেদ হলো আরহামের কথায়। রোবটের মতো হেঁটে লাইট অফ করে আরহামের পাশে শুইয়ে পরলো। বেশি রিএক্ট আর করলো না সে। এমনে ও আরহাম তো তার হাসব্যান্ডই আবার সে তাঁদের সম্পর্ককে স্বাভাবিক করতে চায়। তাই চুপচাপ ঘুমের দেশে পারি জমালো।
____________________
মেডিক্যালের ক্যাম্পাসে বসে বই পড়ছিলো সুনহেরা । সকালে তাড়াহুড়ো করে এসেছে আজ। পড়াও ঠিক মতো হয়নি। ক্লাসে পড়া না পারলে অপমান হতে হবে তাই এখন বান্ধবীদের রেখে সে এখানে একা একা বসে পড়ছে। এখান থেকে দূরে দেখা যাচ্ছে আয়াস তার কয়েকটা বন্ধুর সাথে আড্ডা দিচ্ছে। সুনহেরা পড়ার ফাঁকে বার বার সেখানে তাকাচ্ছে। আচমকা একজন মেয়ে এসে আয়াসের পাশে দাঁড়ায়। পাশে বলতে একদম গা ঘেঁষে। আবার আয়াসের কাঁধে হাতও রেখেছে। বার বার আয়াসের হাত ধরছে। আয়াসও কী খুশি! সুনহেরার না চাইতেও নজর আর মন শুধু সেদিকেই যাচ্ছে। মেয়েটাকে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার। বিড়বিড় করে নিজেকে নিজেই বলল,
-বি পেসেন্স সুনহেরা বি পেসেন্স। হতেই পারে মেয়েটা জাস্ট ফ্রেন্ড। এতো রাগ করিস না তুই।
কোনোরকম বুঝ দিয়ে নিজেকে শান্ত করতে পারলেও চিত্তকে পারলো না সে। তার ওপর মেয়েটা পারে না আয়াসের কোলে উঠে বসে। না আর সহ্য শক্তি নেই সুনহেরার। চেয়ার থেকে উঠলো সে। রাগে চোখ, মুখ লাল হয়ে গিয়েছে তার। বইটা ব্যাগে ভরে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বড় বড় কদম ফেলে আয়াসের দিকে এগিয়ে যায়। আয়াস খেয়াল করেনি সুনহেরাকে। ক্রোধের মধ্যেও মুখে নকলি হাসি ফুটিয়ে আয়াসদের স্মুখীন যেয়ে দাঁড়ায়। আগাগোড়া মেয়েটাকে দেখে আয়াসকে বলল,
-আপনাকে খুজছিলাম আমি।
-কে তুমি?
আয়াসের কিছু বলার পূর্বেই পাশের মেয়েটা প্রশ্ন করলো সুনহেরাকে। সুনহেরা আয়াসের দিকে তাকিয়েই বলে,
-আমি সুনহেরা। আপনি?
-সুনহেরা! আমি তো আয়াসের জিএফ।
আয়াস ভড়কে গেলো এই তারছেড়া মেয়ের কথা শুনে। মেয়েটার নাম লুবা তার জাস্ট ক্লাসমেট। একটু গায়ে পরা স্বভাবের বলে বেশি কথা বলে না কিন্তু আজ এতো বড় কেলেঙ্কারি বাঁধিয়ে ফেলবে ভাবনায়ও ছিল না তার। সুমহেরা হাত মুঠি করে ফেললো। বড় একটি হাসি দিয়ে বলল,
-আমি আয়াসের ওয়াইফ।
-আয়াসের ওয়াইফ! বাট ও তো সিঙ্গেল এন্ড আই লাভ হার!
-তোর লাভ হার এর গুষ্টি!
রেগে লুবার চুলের মুঠি ধরে টেনে আয়াসের থেকে দূরে সরায় সুনহেরা। লুবা ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠলো। আশেপাশে মানুষজন জড়ো হলো। সুনহেরা চিৎকার করে বলল,
-খচ্চর ছেড়ি, লেংটি ইঁদুর আমার জামাইর লগে পিরিত করতে গিয়েছিলি তুই! তোকে তো আমি জিন্দাই গেড়ে ফেলবো। কত বড় সাহস মাইয়ার!
-ইউ স্টুপিড গার্ল লিভ মি। আয়াস এই পাগলের থেকে ছাড়াও আমাকে।
আয়াস নিজেও স্তব্ধ সুনহেরার রাগ দেখে। প্রথমে অবাক হলেও এখন তার অন্যরকম ভালো লাগছে। সুনহেরা আরো শক্ত করে ধরে বলল,
-তুই পাগল, তোর জামাই তোর ১৪ গুষ্টি পাগল বেশরম মাইয়া। আবার যদি আমার জামাইয়ের আশেপাশেও দেখি গরুর প’টি এনে তোর মুখে লাগিয়ে দেবো। একদম ন্যাচারাল ফেসপ্যাক!
সুনহেরা ছেড়ে দিলো লুবাকে। অনেকটা রাগী লুকে একবার সুনহেরাকে দেখে অপমানিত হয়ে সেখান থেকে পালালো লুবা। সুনহেরা রাগী কণ্ঠে আয়াকে বলল,
-আর আপনাকে তো আমি পরে দেখছি। বউ থাকতেও আবার অন্য মেয়ের সাথে ডলাডলি!
আশেপাশের সবাই অবাক হয়ে তাঁদের দেখছে। সুনহেরা সেটা পরোক্ষ করে কঠিন কণ্ঠে তাঁদের বলে,
-এখানে মিষ্টি বিলি হচ্ছে না আপনারা আসতে পারেন।
-আমরা তো ফ্রীতে ড্রামা দেখছি বইন।
লোকদের মধ্যে একজন বলে উঠলো উক্ত উক্তি সুনহেরা তাঁদেরও বড় একটি নকলি হাসি দিয়ে বলল,
-তাহলে এখন ড্রামা শেষ নেক্সট ড্রামার আগে কল করে দেবো নে তখন আবার চলে আইসেন। ওকে?
সবাই যার যার কাজে চলে যেতেই সুনহেরাও মেইন গেট দিয়ে বাহিরে চলে গেলো। আয়াস দৌড়ে এসে কয়েকবার ডাকলো কিন্তু সুনহেরা তো সুনহেরাই! আয়াসের আবার ক্লাস আছে তাই সে বাসায় গিয়েই সুনহেরার রাগ ভাঙাবে বলে মনস্থির করলো। সুনহেরা মুখ গোমড়া করে নরম পায়ে হাঁটছে। ফুটপাতের একটা বেঞ্চে বসে পরলো সে। আজ একটুও মন ভালো না তার। দুনিয়ার যাবতীয় চিন্তায় বিভোর সে এমন সময় কোথা থেকে দৌড়ে একটি পিচ্চি ছেলে তার সামনে আসলো। সুনহেরা মাথা তুলে তাকালো। অনেক ছোট ছেলে। হয়তো পাঁচ ছয় বছরের! শান্ত কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,
-কিছু বলবে বাবু?
-এটা আপনাকে একটা ভাইয়া দিতে বলেছে।
সুনহেরা ছেলেটার কথা শুনে তার হাতের দিকে তাকায়। পিঙ্ক কালার রেপিং পেপারে মোড়ানো মাঝারি সাইজের একটি বাক্স। সুনহেরা চমকিত কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,
-কে দিয়েছে এটা? আর আমাকেi কী দিতে বলেছে?
-হ্যাঁ আপু। উইযে ঐখানের একটা ভাইয়া আপনাকে দিতে বলেছে।
ছেলেটা মেডিক্যালের গেটের দিকে ইশারা করছে। সুনহেরা মুচকি হাসলো। যাবতীয় রাগ, অভিমান মেঘের সাথে উড়ে গেলো তার। মনে মনে ভাবলো হয়তো আয়াস তার রাগ ভাঙানোর জন্যই এটা পাঠিয়েছে। হাত বাড়িয়ে নিয়ে নিলো। ব্যাগ থেকে একটা চকলেট বের করে ছেলেটাকে দিয়ে বলল,
-ধন্যবাদ তোমাকে। নেও এটা খেতে খেতে যাও।
চকলেট পেয়ে খুশিতে দৌড় লাগলো ছেলেটা। সুনহেরা ফুরফুরে মনেই রিকশা ডেকে বসে পরলো। আজ আর ক্লাস করবে না সে। বাসায় গিয়ে এখন রেস্ট করবে।
আরহাম আর রিদ এসেছে আরহামের আরেক বাড়িতে। অনেক শখ করে এই ছয়তলা বাড়ি বানিয়েছিলো আরহাম। প্রথমে তারা ফ্যামিলি নিয়ে এখানে থেকে ছিল কয়েকমাস তারপর ঐ বাড়ি বানালো আর সেখানে চলে গেলো। সবগুলো ফ্লাটই ভাড়া দেওয়া শুধু চারতলার একটি ফ্লাট খালি। চাবি চালিয়ে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো দুইজন। রিদ সবটা পরোক্ষ করে বলল,
-বাবাগো এতো বড় ফ্লাটে আমার সাথে তো ভুতেরাও থাকবে!
আরহাম কিছু বলল না। রিদ কিছুটা উস্কোখুস্ক করছে মনে মনে। আমতা আমতা করে বলল,
-ভাড়া কত করে নেস তুই?
-তোর জেনে লাভ আছে?
-তাইলে আবার! আমিও তো এই বাসায়ই থাকুম এখন থেকা।
-প্রথম একমাস কোনো ভাড়া নাই এটা আমার তরফ থেকে বোনাস। তারপরের মাস থেকে তিন হাজার টাকা করে দিবি।
রিদ ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে কণ্ঠস্বর খাঁদে ফেলে বলল,
-এই চার রুমের বিশাল ডায়নিং আলা ফ্লাট মাত্র তিন হাজার টাকা? বোকা পেয়েছিস আমাকে? রিয়েলটা বল।
-তুই তো বোকাই!
-ভাই শয়তানি করিস না। সত্যিটা বল।
-তোর থেকে আমি টাকা নিতামই না কিন্ত আমি চাই তোকে দায়িত্বশীল বানাতে। এখন টাকা না নিলে তুই ঠিক মতো কাজ করবি না আর অধম হয়ে পরবি।
-বুঝলাম। কিন্ত আরেকটু বাড়াইয়া কো?
-বাড়াবাড়ি কম কর শালা। কম্পিউটার চালাতে পারিস?
-নোপ। ব’ন্দুক চালাতে পারি, ব্যাটবল এর ব্যাট চালাতে পারি, লাঠি চালাতে পারি আবার মাঝে মাঝে জুতা, ঝাড়ুও চালাতে পারি।
অতি সিরিয়াস ভনিতায় বলল রিদ। আরহাম কপাল কুচকে বিরক্তিকর নজরে রিদের দিকে তাকালো। রিদ দাঁত বের করে বড় একটি হাসি দিলো। আমতা আমতা করে বলল,
-মন খারাপ করে থাকতে ভালা লাগে না তাই একটু মুড রিফ্রেশ করছি।
-এটাই ভালো। কিন্ত কম্পিউটার চালান শিখতে হবে।
-সমস্যা নাই একটু আরেকটু পারি।
-তাহলে ঠিক আছে। আমি একজনকে বলে দিয়েছি তোর জন্য কাজের কথা। প্রথম প্রথম সেলারি একটু কম বাট ধীরে ধীরে বাড়বো। আগামীকাল থেকে যাবি ঠিকানা দিয়ে দেবো।
-আইচ্ছা।
রিদ এক রুমের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে তো পুরাই অবাক। সম্পূর্ণ রুম আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো। বিস্মিত কণ্ঠে বলল,
-কে থাকে এই রুমে?
-আমি মাঝে মাঝে এখানে আসি। তুই এই রুমেই থাকবি।
-আরেহ বাস! সাজানো সংসার পেয়ে গেলাম!
বিছানায় চিৎ হয়ে শুইয়ে পরলো রিদ। আরহাম সিঙ্গেল সোফায় বসলো। ফোনে চোখ বুলাতে বুলাতে বলে,
-যখন একা অনুভব হবে বা ভয় করবে আমাদের বাসায় চলে যাবি। বুঝলি?
-হো। এখন বল সকালে তোর আর মাহানুরের মধ্যে কী হয়েছিলো?
রিদের কথায় দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো আরহাম। ক্লান্ত স্বরে বলল,
-সে জব করতে চাচ্ছে কিন্ত আমি না করেছিলাম তাই একটু লেগেছিলো। তারপর আমার ১৪ গুষ্টি উদ্ধার করে বাপের বাড়ি গিয়েছে।
-আর আসবো না?
-হোপ বেটা! বিকালে হয়তো এসে পরবো। কী যে রাগ দেখায় ভাই! আমারই ভয় করে!
রিদ উঁচু স্বরে হাসতে লাগলো আরহামের কথা শুনে। রিদকে হাসিখুশি দেখে আরহামও হেসে ফেললো।
গুনগুন গান গাইতে গাইতে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে সুনহেরা। ড্রইংরুমে সায়রিন আর হাজেরার সাথে মাহানুরকে দেখে অবাক হয়ে যায়। বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যায়।
-ভাবি কেমন আছেন?
-অনেক ভালো সুনহেরা। তুমি ভালো আছো?
-একদম।
-এতো জলদি চলে আসলে? বসো বসো।
সুনহেরা মাহানুরের পাশে বসলো। কপালের ঘাম মুছতে মুছতে সুনহেরা বাহানা স্বরূপ বলল,
-আসলে ভাবি এতো গরমে একটু অসুস্থ লাগছিলো তাই চলে আসলাম।
সুনহেরার কথা শুনে উঠে দাঁড়ায় হাজেরা। চিন্তিত কণ্ঠে বললেন,
-অসুস্থ লাগছিলো! তুমি বসো আমি লেবুর শরবত বানিয়ে নিয়ে আসছি।
-না মা সেসবের দরকার নেই। আপনি বসুন না।
-তুমি মাহানুরের সাথে কথা বলো আমি আসছি।
মাহানুর ভীষণ ইমপ্রেস হলো তার বড়মার ব্যবহার দেখে। খানিকটা হেসে বলল,
-তুমিও অনেক ভালো একজন শাশুড়ি পেয়েছো আর আমিও।
-হ্যাঁ। ভাইয়া কী আজ চলে যাবে?
-আমি সিউর জানিনা সে কবে যাবে।
-বলেনি আপনাকে?
-না।
সুনহেরা আর কিছু জিগ্যেস করলো না। শুধুই মাহানুরকে বিব্রত অবস্থায় ফেলতে চায় না সে। হাজেরার আনা শরবত খেয়ে নিজের রুমে চলে আসলো। দরজা লাগিয়ে লাফিয়ে বিছানায় উঠে বসলো। কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে বাক্সটা বের করলো। এক্সসাইটেড হয়ে দ্রুত খুলতে লাগলো। পেপার খুলে বাক্স খুলতেই আহাম্মক বনে গেলো। একটা কাগজ ওপরে। নরম হাতে কাগজটা তুলতেই সুনহেরার চোখের স্মুখীন ভেসে উঠলো কয়েকটা ছবি। কাগজ কিনারে রেখে ত্বরিত ছবিগুলো হাতে নিলো। হাত অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে তার। তার আর তার এক্সের কিছু আপত্তিকর ছবি। অনেকটা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের। কিন্ত সুনহেরা ভা’র্জি’ন। তার স্পষ্ট মনে আছে সে শুধুই একবার তার এক্সকে কিস করেছিল আর হাত ধরা এই পর্যন্তই তাঁদের সম্পর্ক। তাহলে এই ছবি গুলো কী অন্যকারো! তার ফেস লাগিয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে! রাগে, ভয়ে কেঁদেই দিলো সুনহেরা। ছবিগুলো দ্রুত নিজের ব্যাগে ভরে ব্যাগ কাবাডে রেখে দিলো। যদি আয়াস এই ছবিগুলো দেখে তাহলে সে তো সত্যি মনে করবে! তাকে অবিশ্বাস করবে! যদি দুশ্চরিত্রা মনে করে তাকে ছেড়ে দেয়! না আর ভাবতে পারছে না সুনহেরা। বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায় তার শরীর।
________________
সন্ধ্যার একটু আগে বাসায় আসে মাহানুর। আসার সময় সুনহেরার চিন্তিত মুখ দেখে তাকে জিগ্যেস করেছিল কিছু হয়েছে কী না। কিন্ত সুনহেরা তেমন কিছুই বলেনি। আগামীকাল থেকে সেও অফিসে জয়েন হবে ভেবেই খুশিতে তার মন নাচছে। জয়া বেগম তার রুমে বিশ্রাম করছেন আরহাম, রিদ বাসায় নেই। মাহানুর বড় বড় পারি ফেলে নিজের রুমে এসে পরলো। দরজা ফাঁক করতেই আশ্চর্যজনক একটি দৃশ্য দেখতে পেলো সে। রাবেয়া আরহামের শার্ট বুকে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে রাখছে। যেনো সে আরহামকেই জড়িয়ে ধরে আছে। মাহানুর বুকে দুইহাত গুঁজে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন দেখতে থাকলো রাবেয়ার কান্ড। শক্ত কণ্ঠস্বরে বলল,
-তুমি এখানে কী করছো রাবেয়া?
রাবেয়ার হাত থেকে পরে গেলো শার্ট। ভুত দেখার মতো পিছনে ফিরলো। শার্টটা কোনোরকম তুলে ভাঁজ করে সোফায় রাখলো। হকচকিয়ে গিয়ে নত স্বরে বলল,
-আমি আরহাম ভাইয়ার শার্ট রাখতে এসেছিলাম।
-হুম দেখলাম।
রাবেয়া দ্রুত পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে মাহানুর কঠিন ও রুক্ষ কণ্ঠে বলে,
-তোমার আরহাম ভাইয়ের এখন বিবাহিত তোমার আর এইসব করতে হবে না। আমার জামাই এর সব কাজ করার জন্য আমি আছি। বুঝেছো?
-জি।
-যাও এখন।
রাবেয়া চলে গেলো। মাহানুর নিঃশাস ত্যাগ করে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো। লম্বা শাওয়ার নিয়ে বের হয় সে। চুল মুছে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। রাতের রান্না জয়া বেগম প্রস্তুত করেই রেখেছেন। মাহানুর এক পাতিলা চা বানালো। এক কাপ শাশুড়িকে দিয়ে আসলো। কিছুক্ষন গল্প করলো দুইজন। শাশুড়ির রুম থেকে বের হতেই সদর দরজা দিয়ে আরহাম আর রিদকে হাসতে হাসতে ভিতরে আসতে দেখলো সে। মাথায় ওড়না দিয়ে এগিয়ে গেলো। রিদ মাহানুরকে দেখে কোনোরকম হাসি থামিয়ে বলে,
-ভাবি কখন এসেছো?
-অনেকক্ষণ আগেই। যান ফ্রেশ হয়ে আসুন রিদ ভাই তারপর চা দিচ্ছি।
-এখনই আসছি।
রিদ আরহামকে রেখেই চলে গেলো। আরহাম কিছু বলতে উদ্যত হতেই মাহানুর তাকে উপেক্ষা করে চলে গেলো। আরহাম ঠোঁট কামড়ে বউয়ের কান্ড হজম করলো। সেও ফ্রেশ হতে চলে গেলো। মাহানুর রান্নাঘরে এসে দুইজনের জন্য নুডুলস রান্না করলো। মাথা উঁচু করে দেখলো ততক্ষনে রিদ আর আরহাম ড্রইংরুমের সোফায় এসে বসেছে। রাবেয়া দুইজনের জন্য নুডুলস নিয়ে গেলো আর মাহানুর চা। নুডুলস দেখে রিদ হামলে পরলো সেটার ওপর। এক চামুচ মুখে দিতেই তারিফ স্বরে বলে,
-বাহ্ বাহ্! বিয়ে তো এইরকম মজার মজার রান্না পারা মেয়েকেই করতে হবে! বেটা আরহাম জিতেছিস।
মাহানুর লজ্জা পেলো। সোফায় বসে রিদকে চা কাপে ঢেলে চিনি মিলিয়ে দিলো পরিমান মতো। আরহাম এর জন্যও একই পরিমান চিনি দেয়। সেটা দেখে দাঁড়িয়ে থাকা রাবেয়া উৎসুক হয়ে বলল,
-আরহাম ভাইয়া এতো চিনিয়ালা চা খায় না। এটা আপনি খেয়ে ফেলেন আমি তার জন্য বানিয়ে নিয়ে আসছি।
ক্রোধে সকলের আড়ালে হাত মুঠিবদ্ধ করে ফেললো মাহানুর। ঠাশ করে চড় বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করলো তার রাবেয়াকে। শব্দ করে কাপটা টেবিলেই রাখলো মাহানুর। মুখ ফুটে কিছুই বলল না। আরহাম ধমকের স্বরে রাবেয়াকে বলল,
-তোকে বলেছি আমি আবার চা বানিয়ে নিয়ে আয়? চুপচাপ বস তুই।
রাবেয়ার মুখ ছোট হয়ে গেলো। আরহাম টেবিল থেকে চায়ের কাপটা তুলে নিলো। এক চুমুক দিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলো। বাঁকা হেসে মাহানুরের থমথমে মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-তার হাতের বিষও আমি অমৃত মনে করে পান করে ফেলবো। এ তো শুধুই চিনিযুক্ত এক কাপ সুস্বাধু চা!
>>>>চলবে।
(আসসালামু ওলাইকুম। আজকের পর্ব কেমন হয়েছে সবাই বলবেন। ওকে? ❤)