তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡 #DcD_দীপ্ত #পর্ব__________53

0
582

#তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡
#DcD_দীপ্ত
#পর্ব__________53

:+কে ওখানে? (নিদ্র)

কথা’টা বলে আমেনার কোল থেকে মাথা তুলে বাসলো নিদ্র । আমেনার কোলে মাথা রেখে শুয়েছিল সে । হঠাৎ দরজার দিকে চোখ যাওয়ায় দেখলো, ছায়ার মতো কিছু একটা । দরজা’টা হালকা ফাক ছিল । নিদ্রর গলার আওয়াজ পেয়ে দরজার কাছ থেকে ছায়া’টা সরে গেল । নিদ্র তরি ঘরি করে দরজার কাছে আসলো । দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো নিদ্র । কিন্তু কাওকে দেখতে পেল না । আমেনা শাড়ীর আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছে রুম থেকে বেরিয়ে নিদ্রর কাধে হাত রেখে বললো ।

:+কি হয়েছে । এদিক ওদিক কি খুজচ্ছিস ।(আমেনা)

আমেনার কথা শুনে, নিদ্র আমেনার দিকে ফিরে অন্যমনস্ক হয়ে বললো ।

:+আমি এখানে কাওকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম মনে হয় ।(নিদ্র)

আমেনা এদিক ওদিক তাকিয়ে বলতে লাগলো ।

:+এখানে কে আসবে এখন । তৃপ্তি তো ঘুমে ।(আমেনা)

আমেনার কথা শুনে, নিদ্র তৃপ্তির রুমের দরজার কাছে গিয়ে, দরজা’টা হলকা খুলে ভিতরে তাকালো । দেখলো তৃপ্তি বেডের উপর লম্বা হয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছে । কিন্তু এখানে কে দরিয়ে ছিল তাহলে । তৃপ্তির রুমের দরজা আবার টেনে দিয়ে, অন্যমনস্ক হয়ে ভাবছে নিদ্র । আমেনা নিদ্রর কাছে এসে বললো ।

:+তুই হয়তো ভুল দেখছিস । এখানে কে আসবে এখন । এমন’টা হয় মাঝে মাঝে । এটা আমাদের চোখের ভুল । যা রুমে,,,যা ।(আমেনা)

নিদ্রকে টেনে রুমের ভিতর দিয়ে গেল আমেনা । নিদ্র আনমনা হয়ে আবার বেডের উপর শুয়ে পড়লো । আমেনা যেটা যানতে রেগে নিদ্রর কাছে আসছিল, সেটা আর উনার যানা হলো না । নিদ্রর রুম থেকে বেরিয়ে আসলো আমেনা । রুম থেকে বেরো তেই তিনি মুখো মুখি হন নীলার । আমেনা নীলাকে এখানে দেখে বেশ অবাক হলো । এখনি তো তারা এখান থেকে গেল । তাহলে এখন কোথা থেকে আসলো নীলা । অবশ্য আসলেও আসতে পারে । সিরি তো এখান থেকে মাত্র কয়েক হাত তাফাত । আমেনা চিন্তিত সুরে নীলাকে বললো ।

:+তুমি কখন আসলে ।(আমেনা)

আমেনার কথা শুনে, নীলা এক গাল হেসে বললো ।

:+এই মাত্র আসলাম । সুইটি কোথায় আন্টি । সুইটিকে দেখতে আসছি ।(নীলা)

:+একটু আগে তুমি এখানে দাড়িয়ে ছিলে ।(আমেনা)

নীলার কথা শেষ হতে, আমেনা স্পষ্ট গলায় নীলাকে জিজ্ঞেস করলো । নীলা অবাক দৃষ্টিতে আমেনার দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+কি বলছেন আন্টি । আমি তো সবে মাত্র আসলাম । আমি এখানে কখন দারিয়ে ছিলাম ।(নীলা)

আমেনা একবার নীলার মুখ’টা ভালো করে দেখে নিলো । এই মেয়ে এখানে দারিয়ে ছিল বলে আমেনার মনে হয় না । আবার খটকাও লাগছে এই মেয়ের উপর । নিদ্র ভুল দেখতে পারে এটা হতে পারে না । আমেনা নীলাকে আস্তে করে বললো ।

:+আমি মনে হয় কিছু ভুল দেখে ছিলাম । তৃপ্তি এখন ঘুমাচ্ছে । ওর শরীর’টা ভালো না । এক্সিডেন্ট হয়েছে । আর,,,,,,,।(আমেনা)

আমেনা আরো কিছু বলার আগেই, নীলা চট করে চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে উঠলো ।

:+এক্সিডেন্ট হয়েছে মানে? ও ঠিক আছে । আমি একটু দেখি ।(নীলা)

এই বলে আমেনাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে, তৃপ্তির রুমের দিকে চলে গেল নীলা । আমেনা কিছু বলতে যাচ্ছিল । কিন্তু কিছু একটা ভেবে আর বললো না । আমেনা নিজের রুমে চলে গেল । আর এদিকে নীলা তৃপ্তির রুমের ভিতরে এসে দেখলো, তৃপ্তি বেডের উপর আধ শোয়া হয়ে চোখ দু’টো বুঝে আছে । বুঝা চোখের পাতার কোন দিয়ে, চোখের পানি গাল বেয়ে পরছে । প্লাস্টার বাঁধা হাত’টা পেটের উপর । নীলা আস্তে করে তৃপ্তির বেডের পাসে গিয়ে দারালো । তৃপ্তি তখনো নীলার অস্তিত্ব টের পায়নি । আর পাবেও বা কি করে । নীলা তো খালি পায়ে তৃপ্তির রুমে আসছে । তৃপ্তির কান্না করার কারন বুঝতে পারছে না নীলা । বেডের পাসে বসে আস্তে করে তৃপ্তির ডান হাতের উপর নিজের ডান হাত রাখলো নীলা । তৃপ্তি চমকে উঠে নীলার দিকে তাকালো । এরপর তাড়াতাড়ি নীলার হাত নিজের হাত থেকে ছারিয়ে চোখের পানি মুছতে লাগলো । চোখের পানি মুছতে মুছতেই তৃপ্তি বলে উঠলো ।

:+তুমি কখন আসলে আপু ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা শুনে, নীলা পা দু’টো বেডের উপর উঠিয়ে, গোল হয়ে বসে বললো ।

:+আগে বল কান্না করছিলি কেন? (নীলা)

:+হাত’টা প্রছন্ড বেথ্যা করছে । সিনসিন বেরেই চলছে । ঘুমতে পারছি না বেথ্যার জন্য ।(তৃপ্তি)

নীলার কথা শেষ হতেই, বলে উঠে তৃপ্তি । নীলা তৃপ্তির মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা প্রজন্ত চোখ বুলালো । এরপর শান্ত গলায় নীলা বললো ।

:+এই এক্সিডেন্ট হলো কি করে? হাতে কি হয়েছে ।(নীলা)

ভ্রু নাচিয়ে বললো নীলা । তৃপ্তি নীলাকে অনুরোধ শুরে বললো ।

:+টেবিলের উপর পানি আছে, একটু দেবে প্লিজ । আর পাসেই একটা বক্সে ঔষধ আছে । ওখান থেকে রোলাক্স নামের একটা ঔষধরে পাতা আছে । ওখান থেকে একটা টেবলেট দাও । আগে হাতের বেথ্যা কমিয়ে নেই, তারপর তোমাকে সব বলছি ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা মতো নীলা তৃপ্তিকে রোলাক্স নামের ঔষধ খায়িয়ে দিলো । এরপর টেবিলের উপর পানির গ্লাস রেখে আবার বেডের উপর উঠে বসে নীলা বললো ।

:+এবার বল কি করে হয়েছে এসব ।(নীলা)

বাড়িতে আসার পর, তৃপ্তি আমেনাকে যা বলেছিল । নীলাকেও তা বলতে লাগলো । আর নীলা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলো । নিদ্রর বানানো কথা গুলো বলতে তৃপ্তির বেশ লাগছে ।

———————————————

বিকাল ৫টা বেজে ৩৯ মিনিট……….
নিদ্র তৃপ্তিকে নিয়ে ছাদে যাচ্ছে । রুমে বসে বোড় হচ্ছিল তৃপ্তি । তাই সে নিদ্রর কাছে ছাদে যাবে বলে বায়না ধরে । নিদ্র আজ ক্লাবে যায়নি । তৃপ্তি সুস্থ না হবা প্রজন্ত সে ক্লাবে ঠিক মতো যেতে পারবে না বলে দিয়েছে জেক আর রাহুলকে । ছাদের দরজা খুলে, ছাদের ফ্লোরে পা রাখলো নিদ্র আর তৃপ্তি । ছাদে তৃপ্তিকে দার করিয়ে ছাদের দরজা প্রথমে লাগিয়ে দিলো নিদ্র । এরপর তৃপ্তিকে নিয়ে দোলনায় বসালো । পশ্চিম আকাশে সূর্য অস্ত যাচ্ছে । দৃশ্য’টা অনেক মন মুগ্ধ কর । থেমে থেমে দমকা হাওয়া আসছে । সেই হাওয়ার সাথে তৃপ্তির খোলা চুল গুলো মৃদু উরছে । সারাদিন রোদে পুরে ফুল গাছ গুলো কেমন শুকিয়ে গেছে । নিদ্র গাছ গুলোতে পানি দেয়ার জন্য, ছাদের পানির টাংকির সাথে একটা চিকন পাইপ ফিট করছে । তৃপ্তি দোলনায় ধিরে ধিরে দোল খেতে খেতে পশ্চিম আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে । সূর্য’টা ধিরে ধিরে দুরের কিছু গাছ পালার আরাল হচ্ছে । নিদ্র পাইপ’টা ফিট করে গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছে । আর কিছুখন পর পর তৃপ্তির দিকে তাকাচ্ছে । গাছ গুলোতে পানি দেয়া শেষ করে তৃপ্তির কাছে আসলো নিদ্র । তৃপ্তি এক মনে পশ্চিম আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে । সূর্য’টা আর একটু খানি দেখা যাচ্ছে । একটু পরেই হয়তো পুরো ডুবে যাবে, আর দেখা যাবে না আজকের জন্য । নিদ্র আস্তে করে তৃপ্তিকে দু’হাতে কোলে তুলে নিলো । তৃপ্তি চমকে উঠে নিদ্রর দিকে তাকালো । নিদ্র তৃপ্তির চোখে চোখ রেখে বললো ।

:+সুধু সূর্য দেখলে হবে । সন্ধা যে হয়ে আসছে । সেদিকে খেয়াল আছে । নিচে যাবি না ।(নিদ্র)

নিদ্রর কথা শুনে, তৃপ্তি ডান হাত’টা নিজের বুকের উপর গুটিয়ে বললো ।

:+আরো একটু এখানে থাকবো । পুরো সূর্য’টার অস্ত যাওয়া দেখবো ।(তৃপ্তি)

:+ওকে তাহলে আমিও দেখবো ।(নিদ্র)

এই বলে তৃপ্তিকে নিয়ে দোলনায় বসে পরলো নিদ্র । তৃপ্তি পা দু’টো দোলনার উপরে টান টান করে মেলে দিয়ে, নিদ্রর বুকে মাথা ঠেকালো । আর প্লাস্টার বাঁধা বাম হাত’টা তৃপ্তির বুকের উপর ঝুলে রইলো । নিদ্র শক্ত হাতে তৃপ্তির কোমড় জরিয়ে ধরে নিজের সাথে তৃপ্তিকে মিসিয়ে নিলো । এরপর তৃপ্তির ঘাড়ে ঠোঁট জোরা ছোয়ালো নিদ্র । তৃপ্তি চমকে উঠে চোখ মুখ খিচে বুঝে নিয়ে ঘাড় মোচড়ালো । কিন্তু নিদ্রকে কিছু বললো না । নিদ্র চিবুক’টা তৃপ্তির ঘাড়ের উপর রেখে আস্তে করে রিনরিনিয়ে বললো ।

:+হাত বেথ্যা করছে ।(নিদ্র)

তৃপ্তির চোখ দু’টো বুঝা ছিল । নিদ্রর মোহিত কন্ঠের কথা শুনে ধিরে ধিরে চোখ দু’টো খুলে বললো ।

:+এখন বেথ্যা করছে না । তবে দুপুরের দিক’টায় একটু বেথ্যা করছিল ।(তৃপ্তি)

নিদ্র তৃপ্তির কোমড় থেকে হাত সরিয়ে নিলো । এরপর তৃপ্তির প্লাস্টার করা বাম হাতের উপর নিজের বাম হাত রাখলো । আর ডান হাত দিয়ে, তৃপ্তির বাম হাতের আঙুল ধিরে ধিরে টানতে টানতে বললো ।

:+ডক্টর বলছে, হাতের আঙুল গুলো নাড়া চাড়া করতে । আঙুল গুলো নাড়া চাড়া করিস না তুই ।(নিদ্র)

নিদ্রর কথা শুনে, তৃপ্তি নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+নাড়া চাড়া করি তো । এই দেখো ।(তৃপ্তি)

এই বলে তৃপ্তি ধিরে ধিরে হাতের আঙুল নাড়াতে লাগলো । নিদ্র তা দেখে বললো ।

:+এই তো গুড । এভাবে ধিরে ধিরে নাড়া চাড়া করবি । তাহলে তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবি ।(নিদ্র)

নিদ্রর কথার প্রতি উত্তরে তৃপ্তি কিছু বললো না । নিদ্র নিজেই ধিরে ধিরে টানতে লাগলো তৃপ্তির হাতের আঙুল গুলো । সূর্য’টা প্রায় ডুবে গেছে । হঠাৎ তৃপ্তির চোখ পাসের একটা বিল্লিং এর ছাদের উপর গেল । সে দেখলো কিছু মেয়ে তাদের দিকে ডেব ডেব করে তাকিয়ে আছে । তৃপ্তির তাকানো দেখে, মেয়ে গুলো নড়ে চড়ে দাড়ালো । তবে একটা মেয়ে তাকিয়েই ছিল তাদের দিকে । তৃপ্তি মুখ বাকিয়ে আবার সূর্যর দিকে তাকালো । আর নিজেকে নিদ্রর সাথে আরো একটু মিশে নিলো । হটাৎ সেই বিল্লিং এর ছাদ থেকে একটা মেয়ে চেচিয়ে বলে উঠলো ।

:+নিদ্র ভাইয়া নাকি । কেমন আছেন? (মেয়ে)

মেয়েটির চেঁচানি শুনে নিদ্র আর তৃপ্তি সেদিকে তাকালো । নিদ্র একটু হেসে উঠে বললো ।

:+আরে মেঘা যে । অনেক দিন পর দেখা । তা কেমন আছো ।(নিদ্র)

নিদ্রর কথা শুনে মেঘা একটু হাসলো । এরপর বললো ।

:+আমি ভালো আছি ভাইয়া । আপনি কেমন আছেন ।(মেঘা)

নিদ্রও হেসে বললো ।

:+আমিও ভালো আছি । তা এতোদিন কোথায় ছিলে । দেখলাম না যে ।(নিদ্র)

নিদ্রর কথা শুনে, মেঘা মাথা চুলকে বলে উঠলো ।

:+আর বলবেন না ভাইয়া । নানার বাড়ি গিয়েছিলাম সিলেটে । ওখানে গিয়ে ফেঁসে গেছিলাম । প্রথমে বড় মামার মেয়ের বিয়ে । তারপর ছোট মামার ছেলের বিয়ে । মানে এই নিয়ে লম্বা একটা সফর হয়ে গেছে । পুরো বোড় হয়ে গেছিলাম আমি । অনেক কষ্টে সেখান থেকে ছুটে আসছি । তা ভাইয়া আপনার সাথে মেয়েটা কে? আমাদের ভাবি নাকি ।(মেঘা)

তৃপ্তিকে উদ্দেশ্য করে শেষের কথা গুলো বললো মেঘা । নিদ্র কিছু বলতে যাবে তার আগেই, তৃপ্তি আস্তে করে নিদ্রকে বলে উঠলো ।

:+ভাইয়া আমার হাত বেথ্যা করছে । আমি নিচে যাবো, ঔষধ খেতে হবে । প্লিজ চলো ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা শুনে, নিদ্র তৃপ্তির মুখের দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+এই না বললি হাত বেথ্যা করছে না ।(নিদ্র)

:+এখন করছে । প্লিজ নিচে চলো ।(তৃপ্তি)

নিদ্রর কথা শেষ হতেই, চট করে বলে উঠে তৃপ্তি । নিদ্র মেঘার দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+সরি মেঘা তোমার সাথে পরে কথা বলবো । এখন যেতে হবে ।(নিদ্র)

:+ইট’স ওকে ভাইয়া । আমি বুঝতে পারছি । ভাবি জেলাস ফিল করছে, আমার সাথে কথা বলাতে ।(মেঘা)

নিদ্রর কথা শুনে, মেঘা একটু হেসে বলো কথা’টা । মেঘার সাথের মেয়ে গুলো, মেঘার দিকে চোখ বড় বড় করে সুধু তাকিয়ে আছে । নিদ্র মেঘার উদ্দেশ্য একটা হাসি দিয়ে, তৃপ্তিকে নিয়ে ছাদ থেকে নেমে যেতে লাগলো । তৃপ্তি হাটতে হাটতে মাথা কাত করে পিছনে ঘুরে, নিদ্রর চোখের আড়ালে মেঘার উদ্দেশ্য একটা মুখ ভেংচি কাটলো । এরপর সামনে ঘুরে মুচকি হেসে ছাদ থেকে নেমে গেল । মেঘা সুধু তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো ।

:+মেঘা তোর কষ্ট হচ্ছে না একটুও ।(মেয়ে)

মেঘার পাসে দারিয়ে থাকা একটা মেয়ে বললো । মেঘার চোখ দু’টো ছলছল করে উঠলো । তবুও সে নিজেকে শান্ত করে বললো ।

:+ইট’স ওকে । ছেরে’দে না । আমি না হয় আরেক জনকে খুজে নেবো ।(মেঘা)

মেঘার কথা শুনে, পাসে দারিয়ে থাকা আরেক’টা মেয়ে বললো ।

:+কয়েক’টা মাস ছিলি না ঢাকায় । তার মধ্যেই নিদ্র ভাইয়া বিয়ে করে নিলো ।(মেয়ে)

:+ধুর,, ভালো লাগছে না আমার । আমি গেলাম, তোরা আয় । (মেঘা)

এই বলে মেঘা পিছনে ঘুরে চোখের পানি মুছে ছাদ থেকে নেমে গেল । আর মেয়ে গুলো মেঘার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো ।

——————————————–

রাত বাজে ১২টা…………….
সবাই ঘুমে বিভোর । আমেনা আজ তৃপ্তির সাথে শুয়েছে । রাতে যদি কোনো কিছুর প্রয়োজন পড়ে মেয়ে’টার । এই জন্য আমেনা তৃপ্তির সাথে শুয়েছে । নিদ্র নিজ রুমে নিশ্চিতে ঘুমাচ্ছে । ফরহাদ আহমেদ কিছুখন এপাস ওপাস করে তিনিও ঘুমিয়ে গেছেন । বৌকে জরিয়ে না ধরলে উনার ঠিক মতো ঘুম হয় না । অবশ্য রাতে ঘুমিয়ে গেলে, উনি কোথায় থাকেন, আর বৌ । মানে আমেনা কোথায় থাকে, উনার ধরনার বাহিরে । সবার ঘুম আসলেও আমেনার চোখে ঘুম নেই । ঘুমন্ত তৃপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন তিনি । খনে খনে ঠোঁট জোরা ছোয়াচ্ছেন মেয়ে’টার কপালে । হঠাৎ আমেনার ফোন বেজে উঠলো । আমেনা প্রথমে একটু চমকে উঠলো । পরে বুকে ফু দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো । বেডের পাসের ছোট টেবিল থেকে ফোন হাতে নিলো আমেনা । ফোনের স্কিনে ভেসে উঠা নান্বার দেখে উনার কলিজার পানি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো । ফোন’টা কয়েক বার রিং হয়ে কেটে গেল । আমেনা কি করবেন বুঝতে পারছেন না । হঠাৎ ফোন’টা আবার বেজে উঠলো । আমেনা আস্তে করে তৃপ্তির ডান হাত’টা নিজের গায়ের উপর থেকে সরিয়ে বেডে রাখলো । তৃপ্তি অঘর ঘুমে তলিয়ে আছে । আমেনা বেড থেকে নেমে, বেলকনিতে চলে গেলেন । বেলকনিতে গিয়ে কাচের দরজা’টা ভেঝিয়ে আমেনা কল রিসিপ করলো । ফোন কানে ধরতেই ওপর পাস থেকে একটা মেয়ে হেসে বলে উঠলো ।

:+কেমন আছেন শাশুড়ী মা । ফোন ধরতে লেট হলো যে । ঘুমিয়ে পড়েছিলেন নাকি ।(মেয়ে)

মেয়েটির কথা শুনে, আমেনা থ হয়ে গেলো । কি জবাব দেবেন এখন তিনি । আমেনার নিস্তব্ধতা দেখে মেয়েটি বললো ।

:+কি হলো শাশুড়ী মা । এতোদিন কল করিনি বলে রাগ করছেন । আরে রাগ কইয়ের না । পড়া লেখা নিয়ে একটু বিজি ছিলাম তাই কল করার সময় পাইনি । তবে এখন থেকে নিয়োমিত কল করবো । কি হলো কথা বলছেন না যে ।(মেয়ে)

মেয়েটির কথা শুনে আমেনা তোতলিয়ে উঠলো ।

:+হ্যাঅ,,আ আ আমি, আ আসলে,,,,,।(আমেনা)

আমেনার এমন তোতলানো শব্দ শুনে অপর পাসের মেয়েটি বিচলিত ভঙ্গিতে বলে উঠলো ।

:+কি হয়েছে শাশুড়ী মা? শরীর খরাপ? এভাবে কথা বলছেন কেন? (মেয়ে)

আমেনা এবার নিজেকে সামাল দিলো । যা হবে পরে দেখা যাবে, এখন মেয়েটার সাথে ভালো ভাবে কথা বলা যাক । এই ভেবে পুরো’টা ভাগ্যের উপর ছেরে দিলো আমেনা । এরপর শন্ত কন্ঠে বললেন ।

:+তেমন কিছু না । ইদানীং শরীর’টা ভালো যাচ্ছে না । কেমন জ্বর জ্বর ভাব । তার উপর এখন ঘুমের মধ্যে তুই কল করছিস । তাই প্রথম কথা’টা এমন তোতলিয়ে বেরিয়েছে ।(আমেনা)

আমেনার কথা শুনে, মেয়েটি একটু হেসে বললো ।

:+আপনি না আসলে,,,,,,। আচ্ছা যে জন্য কল করলাম । শুনুন ।(মেয়ে)

মেয়েটির কথা শুনে, আমেনা চিন্তায় পড়লো । উনার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে সুরু হলো । তবুও তিনি বললেন ।

:+বল আমি শুনছি ।(আমেনা)

মেয়েটি একটু সময় নিয়ে বললো ।

:+আমি আসছি দেশে । ৩ মাস পর । এখন জুন মাস চলছে । আমি অক্টোবর মাসে দেশে আসছি । শুনতে পেয়েছেন আপনি । আমাকে দেওয়া ওয়াদার কথা মনে আছে আপনাদের ।(মেয়ে)

মেয়েটির কথা শুনে, আমেনার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল । তিনি শুকনো ঢোক গিলে বললেন ।

:+হ্যা,, মনে আছে ।(আমেনা)

মেয়েটি ফিক করে হেসে উঠলো আমেনার কথা শুনে । এরপর বললো ।

:+ভালো,, তাহলে আমি একে বারে শপিং করে দেশে যাবো । শাশুড়ী মা একটা কথা বলতাম ।(মেয়ে)

আমেনা চোখ দু’টো বুঝে নিয়ে বললো ।

:+হুম বল ।(আমেনা)

মেয়েটি আমতা আমতা করে বললো ।

:+ওকি ঘুমিয়ে পড়ছে ।(মেয়ে)

মেয়েটির কথা শুনে আমেনা চট করে চোখ দু’টো খুললো । এরপর বললো ।

:+হুম ।(আমেনা)

আমেনার হুম শব্দ শুনে মেয়েটি একটা জোরে নিশ্বাস ছেরে বললো ।

:+ওহ । আমি যে দেশে আসতেছি এটা ওকে এখন যানাবেন না । আমি দেশে যেদিন আসবো । সেদিন ওকে যানাবেন । আর আমাকে এয়ারপোর্টে থেকে নিয়ে যেতে বলবেন ।(মেয়ে)

:+ঠিক আছে ।(আমেনা)

মেয়েটির কথা শেষ হতেই আমেনা ছোট করে বললো । মেয়েটি এই প্রর্যায় তাড়া দিয়ে বললো ।

:+আচ্ছা শাশুড়ী মা । কল কাটছি তাহলে । আপনি ঘুমোন । আপনার ঘুমের ডিস্টার্ব করলাম আমি । নিজের শরীরের জন্ত নিয়েন । ভালো থাকবেন,, রাখছি ।(মেয়ে)

মেয়েটির কথা শুনে আমেনা আস্তে করে বললো ।

:+তুইও ভালো থাকিস । নিজের জন্ত নিস । সবাই ভালো আছে ।(আমেনা)

:+হ্যা,,বাবা, মা, বোন সবাই ভালো আছে । রাখছি তাহলে,, বায় । আমার অনেক কাজ আছে এখন ।(মেয়ে)

আমেনার কথা শেষ হতেই, এই বলে মেয়েটি কল কেটে দিলো । আর আমেনা কান থেকে ফোন সরিয়ে চোখের সামনে আনলো । উনার এখন মন চাচ্ছে এই ফোন’টাকে ভেঙে ফেলতে । কি দরকার ছিল তখন এমন ওয়াদা করার । ফরহাদ আহমেদকে খুব ঝারতে ইচ্ছে করছে আমেনার । অবশ্য ফরহাদ আহমেদকেই বা তিনি কি বলবেন । তিনি নিজেই তো ওয়াদা করেছেন নিজের ছেলেকে বিয়ে দিবে তার সাথে । পড়া লেখা আগে শেষ করতে বলেছে মেয়েটিকে ।

#চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,

[।কপি করা নিশেদ।]

[।বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here