💖 স্বপ্নের প্রেয়সী 💖
Part – 12
________________________
কমপ্লেক্সের সামনে ফারহান ভাইয়া গাড়ি থামলেন। তারপর আমার হাত ধরে নামিয়ে রিফাত ভাইয়া কে কল দিলেন
“রিফাত কতদূর আছিস?”
রিফাত ভাইয়া
-………….
ফারহান ভাইয়া বলল, “ওও আচ্ছা। তাহলে তো কাছেই আমরা কমপ্লেক্স এর বাইরেই অপেক্ষা করছি। একসাথেই ভেতরে যাব। আয় তোরা।”
রিফাত ভাইয়ার কথা শুনতে না পারলে ও ফারহান ভাইয়ার কথায় বুঝতে পেরেছি রিফাত ভাইয়ারা খুব কাছেই আছে।তাই আমাদের এখানে দাড়িয়ে থাকতে হবে। পাঁচ মিনিটের মাথায় রিফাত ভাইয়ারা এলো রিফাত ভাইয়া এসেই আমার মাথায় গাট্টা মে রে বলল, “কিরে ফারাবি তুই দেখি একদম ঠিক আছিস। হ্যাঁ রে ফারহান,ফারাবি এত ব্রেভ হলো কীভাবে?”
আমার এখন লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।
যদি ফারহান ভাইয়া সব বলে দেয় তার ওপর আমি ওনাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। ছি ছি ই কি লজ্জা! আমি চুপচাপ দাড়িয়ে আছি। কি বলব আমি, তখন ই রানা ভাইয়া আর জামান ভাইয়া একসাথে বলে উঠল, “ফারহান থাকলে ফারাবিকে ভয় পেতে হবে নাকি।ফারহান ই বাকি সবাইকে ভয় পাইয়ে দিবে! আর তাছাড়া আমাদের ফারাবি বেশ সাহসী। ও কিছুতেই ভয় পায় নি। তাই না ফারাবি?”
আমি কি বলব সত্যি বললে মান সম্মানের ফালুদা হয়ে যাবে। তাই আমি শুধু হালকা মাথা নাড়ালাম। তারপরই দেখলাম ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলেন। এর অর্থ আমি যে কত সাহসী তা ফারহান ভাইয়া খুব ভালো করেই জানে। যা বাকিরা জানে না।
তারপর সবাই কথা বলতে বলতে কমপ্লেক্স এর ভেতরে ঢুকলাম। লিফ্ট দিয়ে এই কমপ্লেক্স এর সর্বোচ্চ তলা, আঠারো তলা তে উঠলাম।
কিন্তু এই পার্টি টা কিসের জন্য তা এখনো আমি জানি
না। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলাম তারপর ই সবাই কে ডিনার এর জন্য ডাকা হলো এবং বলা হলো ডিনারের পর সব কিছু ঘোষণা করা হবে। কিন্তু কিসের ঘোষণা আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। সব কিছুই আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে হচ্ছে। আজকের সব কিছু ই এলো মেলো ধ্যাত!
ডিনারের জন্য রুফটপে নেওয়া হলো। আমি হা হয়ে আছি, আমি অনেক গুলো রুফটপ রেস্টুরেন্টে গিয়েছি। কিন্তু এই রুফটপ রেস্টুরেন্ট টা সম্পূর্ণ আলাদা।
সব আধুনিকতার ছোঁয়া রয়েছে এতে ,সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ও কিছু কম নেই। ডেকোরেশন টা অসম্ভব সুন্দর। ঝড় বৃষ্টি রোদে যাতে রেস্টুরেন্টে আসা পাবলিকদের কারোই কোনো সমস্যা না হয় তার জন্য রয়েছে আর্টিফিশিয়াল সিলিং। যখন তখন খুলে দেওয়া হয় আবার লাগিয়ে দেওয়া হয়। অথার্ৎ পবিত্র কাবা শরিফ এ যেমন আর্টিফিশিয়াল ছাঁদ দেওয়া আছে যাতে ঝড় বৃষ্টি রোদ তাদের কাবু
করতে না পারে খানিকটা তেমনি। আধুনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি রয়েছে পৃথিবীর সুন্দর সুন্দর ফুলের মেলা সাথে বিরল প্রজাতির গাছ। রাতের লাইটিং এ অসাধারণ লাগছে সব কিছু। আর রুফটপ থেকে পুরো শহরকে দেখা যাচ্ছে। কত সুন্দর সমস্ত কিছু যা ধারণার বাইরে।
বড় মা আর আম্মু আমাকে ডিনারের জন্য ডাকলেন।
তখনি মনিকা আপু এসে বলল, “আন্টি ফারাবি আমাদের সাথে ডিনার করে নিবে। চিন্তা করো না।”
বড় আম্মু আর আম্মু ঠিক আছে বলে চলে গেলেন।
মনিকা আপু আমার হাত ধরে বলল, “ফারাবি আমরা সবাই এক সাথে আড্ডা দবো আর ডিনার করব চলো।”
আমি বললাম, “আচ্ছা ঠিক আছে,চলো।”
ডিনারের জন্য টেবিলে বসলাম। সবাই আছে এখানে, শুধু ফারহান ভাইয়া নেই। আমার কি তাতে আমি আমার মতো বসে রইলাম।
হঠাৎ ফারহান ভাইয়ার আগমন ঘটল ফারহান ভাইয়া আমাকে একটি প্লেট দিয়ে বললেন, “নে তোর ডিনার।”
আমি অবাক হয়ে আছি। কারণ বাকি সবাই তো অন্য কিছু খাচ্ছে তাহলে আমার জন্য অন্য কিছু কেন?
উনি আমার মুখ দেখে বুঝে গেলেন যে আমি কি ভাবছি।তখনি বললেন ‘এত ভাবুক হওয়া লাগবে না। তোর মাশরুমে এলার্জি আর আমার ও আর আজকের বেশ কয়েকটি আইটেমে মাশরুম আছে। তাই রিস্ক নিলাম না। যার জন্য এই খাবার গুলো র ব্যবস্থা করতে গিয়েছিলাম।’
এর্লাজির কথাটা মনে হতেই বললাম,”ওও হ্যাঁ তাই তো।”
আসলে আমার মাশরুম খেলে সবসময় প্রবলেম হয়
না। কিন্তু মাঝে মাঝে হয়ে যায়। ফারহান ভাইয়ার খাবার আর আমার খাবার টা সেম। শুধু ওনি ম্যাশ পটেটো নেন নি।এটা খেলে নাকি ওনি মোটু হয়ে যাবেন। আর আমার ম্যাশ পটেটো বেশ ভালো লাগে। আমি মোটু হলে হবো নো প্রবলেম। তবে আমার ফেবরেট ফুড তো ছাড়ব না।
প্লেট টা ওপেন করতেই আমি চমকে গেলাম। কারণ এখানে সব আমার ফেবরেট ফুড। আহা সাসলিক , বুটি কাবাব, সরমা , ফিস ফ্রাই , বিফ কালা ভুনা আর বাটার নানের সাথে কিছু স্পেশাল সস। সাথে আছে জুস , বাদামের কাপ কেক, আইসক্রিম তাও লেমন ফ্লেবার আর শাহি টুকরা।
আহা সব আমার ফেবরেট, আমি আয়েস করে নিয়ে খেতে লাগলাম। ফারহান ভাইয়া আমার পাশে বসে আছে আমার যেন তাতে কোন ধ্যান ই নেই। আমাদের খাওয়া শেষ হতে হতে দশটা বিশ বেজে গেল। এখন আমরা রুফটপ থেকে নেমে সেন্টারে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়ার আব্বুর সাথে আর ও কিছু বিজনেসম্যান কে দেখতে পেলাম। তারা তাদের বক্তব্য রাখলেন। যার ফলে আমি সব বুঝতে পারলাম।
এই কমপ্লেক্স টার গ্র্যান্ড ওপেনিং ছিল আজ। ফারহান ভাইয়ার বাবা 50% শেয়ারে আছেন। আর পাঁচ টা কোম্পানি 10% করে শেয়ারে আছেন। এই কমপ্লেক্স টা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বনামধন্য ডিজাইনার দের দিয়ে করা।
বাহহ বেশ ভালো উদ্যোগ ছিল এটা। এতে আমাদের দেশের মানুষ বিদেশী স্বাদ নিতে পারবেন।
পার্টি শেষের দিকে তখনি আম্মু এসে বলল, “দেখেছিস ফারহানের বেশ পছন্দ আছে কিন্তু।”
আমি সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বললাম, “কোন ব্যাপারে?”
আম্মু বলল, “এই যে আমাদের ড্রেস গুলো দিয়েছে সব ই তো অনেক সুন্দর।”
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। তার মানে এই হনুমানের দেওয়া ড্রেস পড়েছি আমরা। তাই তো বলি এত মিলিয়ে সবার জামা কাপড় কেন।
তবে বলতে হবে বজ্জাতের চয়েজ অনেক ভালো। একটু পরে ফারহান ভাইয়ার আম্মু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “মাশআল্লাহ আমাদের ফারাবি কে তো রাজকুমারীর মতো লাগছে।”
আমি বললাম, “আন্টি তোমাকে আমার থেকে ও অনেক বেশি সুন্দর লাগছে।”
আন্টি আমার কপালে চুমু এঁকে দিলেন। তারপর বললেন
“আমাদের লক্ষী মেয়ে।”
আন্টি আমাকে অনেক ভালোবাসে সেই ছোট থেকেই।
নিজের মেয়ের থেকে কম কিছু নই ওনার কাছে।আন্টি কে ও আমার বেশ ভালো লাগে। তাই তো আমাদের মাঝে বেশ ভাব। অবশেষে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটল। আমরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
_______________________
তখনি ফারহান ভাইয়ার ডাকে আমার ঘুম ভাঙ্গে। আমি ঘুমু ঘুমু চোখে বললাম, “আমি যাব না কোথাও আর। নন্দনে যাওয়ার কথা আর মুখে ও আনব না। প্লিজ ফারহান ভাইয়া আমাকে ফেলে দিবেন না। ধরে রাখেন প্লিজ।”
আমার এমন কথায় ফারহান ভাইয়া ভরকে গেলেন। কিসের মধ্যে আমি কি বলছি। ফারহান ভাইয়া আমার রুমে ঠাঁই দাড়িয়ে আছেন।
তারপর আমার মুখে এক গ্লাস পানি ছুড়ে দিলেন। আমি ধুরমুরিয়ে উঠলাম। তারপর দেখতে পেলাম ফারহান ভাইয়া দরজার মাঝে পিঠ ঠেকিয়ে পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছেন। আমি সবটা বুঝার চেষ্টা করলাম। কিছু একটা খেয়াল করেই সাথে সাথে ওড়না জড়িয়ে নিলাম। উফফফ আমার মাথা টা এখনো ঝিম ধরে আছে। দুপুরে খেয়ে পড়তে বসেছিলাম কারণ ফারহান ভাইয়া বিকেলে পড়াতে আসবেন। আর আমি সেই পুরনো স্মৃতি তে ডুবে গিয়েছিলাম আর সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এখন কি হবে? আমি যে পড়া কমপ্লিট করি নি! আমি কি করব এখন ওনি কি আমায় আবার বকা দিবেন।
সব কিছু ভেবে চুপসে গেলাম। কি করার আছে আমার আর? আমি সব সময়ের মতো নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলাম।
কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া বললেন, “ঘুম হয়েছে তোর?”
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম? “হুম হয়েছে।”
মাথা নিচু করে আবার বললাম, “আম সরি স্যার।”
ফারহান ভাইয়া ইষৎ নিচু হয়ে বললেন, ” কেন? ”
আমি মাথা নিচু করেই বললাম, “আমি পড়া কমপ্লিট করতে পারি নি।”
ফারহান ভাইয়া কিছু বললেন না। আর আমি মাথা নিচু করেই আছি। কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া বললেন, “আচ্ছা সমস্যা নেই।”
আমি চুপ করেই আছি। তিনি আমাকে বকা দিলেন না যে ,নাকি এটা ও একটা স্বপ্ন!
ফারহান ভাইয়া জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বললেন
“তুই যমুনাতে যাওয়ার কথা ভাবছিলি। খুব ভয় পেয়েছিলি না রে। কিন্তু সেই দিন গুলো অনেক সুন্দর ছিল। সব কিছুই সাজানো গল্পের মতো। কিন্তু এখন সব পানসে হয়ে গেছে। কেমন তিক্ততা এসেছে।”
আমি ওনার কথা কিছু ই বুঝলাম না। ওনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমাকে পুনরায় বললেন, “আচ্ছা শোন আর মাত্র দুই মাস পর পরীক্ষা। পড়াশোনা কমপ্লিট করতে হবে তো তাই না।এভাবে করলে চলবে না। সুন্দর করে সব কমপ্লিট করবি ঠিক আছে?”
আমি হা হয়ে আছি। আজকে ওনি আমাকে অনেক ঠান্ডা মেজাজে পড়া বোঝালেন। তারপর কিছু পড়া দিয়ে চলে গেলেন। আমি ও ভেবে নিয়েছি আজ থেকে মন দিয়ে পড়াশুনা করব।
_____________________
( আসসালামুআলাই রির্ডাস। আশা করি মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন। গল্পটি কেমন হলো জানাবেন। কালকে রাতে বৃষ্টি হওয়ায় কারেন্ট ছিল না। আর ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল। যার জন্য গল্প লিখতে পারি নি। সকাল সকাল উঠে গল্প লিখতে বসলাম শুধু আপনাদের জন্য। একটি কমেন্ট করে জানাবেন কেমন হলো। আর কারো কোনো কিছু বুঝতে অসুবিধা হলে আমাকে জানাবেন আমি চেষ্টা করব বুঝিয়ে দেওয়ার। সবাই ভালো থাকবেন। ভুল ত্রুটি হলে ধরিয়ে দিবেন আর আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকবেন। )
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
💜 হ্যাপি রিডিং 💜
চলবে
ফাতেমা তুজ