💖 স্বপ্নের প্রেয়সী 💖
Part – 15
__________________________
অনেকটা সময় পার হয়ে গেল। কিন্তু আমার চোখ জোড়া যাকে খুঁজে চলেছে সেই মানুষটির দেখা নেই।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই কিন্তু তাকে দেখতে পাচ্ছি না।মন টা অস্থির লাগছে কিছুই ভালো লাগছে না।এর মাঝে কয়েকবার ডাক্তার এসে খবর নিয়ে গেছেন। কিছুক্ষণ আগে নার্স এসে আমার স্লাইন বদলিয়ে গেছেন। ফারহান ভাইয়ার করা নির্দেশ পেসেন্ট কে একা রাখা যাবে না।এক মুহূর্তের জন্য এরা আমাকে একা রেখে যায় নি।সেই কাল রাতে গোসল করেছি।
বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে গোসল করার , আমি যতো শীত হোক না কেন কখনো গোসল মিস করি না।গোসল না করলে শান্তি পাচ্ছি না।নার্স কে বললাম গোসল করবো কিন্তু নার্স মুখের উপর না করে দিলেন।ওনার ভাষ্য মতে
-ফারহান স্যার না আসা অব্দি ম্যাম কোনো ডিসিশন নেওয়া যাবে না।
( এই বিশাল মাপের নার্সিংহোম টা ফারহান ভাইয়ার বাবার। ফারহান ভাইয়ার বড় ভাইয়া ডক্টর হতে চান।
তিনি আমেরিকা তে এমবিবিএস পড়ছেন।যার জন্য বাংলাদেশে ছয়টা নারসিংহোম করেছেন ওনার বাবা।
ছেলে মেয়েদের অসম্ভব ভালো বাসেন। অল্প বয়সে বিয়ের পিরিতে বসেন ফারহান ভাইয়ার বাবা অর্থাৎ ফরহাদ চাচ্চু। ভালোবেসে বিয়ে করেন তিনি।তখন রোমা আন্টি অথার্ৎ ফারহান ভাইয়া আম্মু মাত্র দশম শ্রেণীর ছাত্রী বয়স সতেরো আর চাচ্চু অনার্স প্রথম বর্ষের বয়স একুশ। ফারহান ভাইয়ার নানা আন্টিকে তার ভাইয়ের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাওয়ায় তাদের এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের পিরিতে বসতে হয়। ফারহান ভাইয়ার নানা অসম্ভব ভালোমানুষ মেয়ের এক কথাতেই রাজি হয়ে যায়।কিন্তু শর্ত ছিলো এখনি বিয়ে করতে হবে।যাতে পরবর্তীতে কোনো সমস্যা না হয়।
ওনাদের বিয়ের দু বছরের মাথায় রাফান ভাইয়া হন।
আর তারপর যখন রাফান ভাইয়ার তিন বছর তখন এই বেটা বজ্জাত হনুমান ফারহান ভাইয়ার আগমন হয়।
যাতে আমাকে জ্বালাতে পারেন।তবে ফারহান ভাইয়ার ছোট বোন রিমি অনেক ভালো। আমরা সমবয়সী রিমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ঢাকাতে আমাদের হাজারো স্মৃতি জড়িয়ে আছে।কিন্তু ইদানিং এই রিমি টা না কেমন হয়ে গেছে।জানি না কেন এমন করছে ওও। আগে রোজ কথা বলতাম আর এখন সপ্তাহে একবার। ঢাকায় ব্যাক করে মেয়েটার সাথে কথা বলতে হবে আমায় ।)
এই সব ভাবতে ভাবতে প্রায় সন্ধ্যা ছয় টা বেজে গেছে ।
ফারহান ভাইয়ার দেখা নেই।বেডে শুয়ে থাকতে থাকতে শরীর আরো ক্লান্ত লাগছে। নার্স কে ডাকলাম নার্স আমাকে বলল
– ইয়েস ম্যাম।কোনো সমস্যা হচ্ছে?
আমি বললাম ” না তেমন কিছু না।কিন্তু বেশ অস্বস্তি হচ্ছে একে তো গোসল করি নি আর তার উপর সেই কখন থেকে শুয়ে আছি। আপনাদের ফারহান স্যার না আসা অব্দি গোসল না করতে পারি একটু ব্যলকনিতে যেতে পারি কি?”
নার্স কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলেন।ওনি কি বলবেন ওনার স্যার তো পারমিশন দিয়ে যান নি তাই না।
ওনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন
– আম সরি ম্যাম।এক্সচুয়ালি স্যারের পারমিশন ছাড়া আমি আপনাকে ব্যলকনিতে ও নিতে পারবো না।
আমি ওনার কথায় মন খারাপ করে বসে রইলাম
তারপর বললাম
– ইটস ওকে। আপনি
আমার কথা শেষ হতে না দিয়ে কোথাও থেকে আগমন ঘটলো ফারহান ভাইয়ার। আমি আর কিছু বলতে পারলাম না।
ফারহান ভাইয়া শার্টের হাতা গুজতে গুজতে বললেন
-থ্যাংকস নার্স।আপনি খুব ভালোভাবে আপনার ম্যামের খেয়াল রেখেছেন ।
নার্স হালকা হেসে বললেন
– ইটস মাই ডিউটি স্যার।
ফারহান ভাইয়া একটা খাম বের করে নার্স কে দিলেন।
নার্স আশ্চর্য হয়ে বললেন
– এটা কি স্যার?
ফারহান ভাইয়া বললেন
– আপনার হাসবেন্ডের অপারেশনের জন্য ষাট হাজার টাকা লাগবে তাই না?
নার্স দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন
– ইয়েস স্যার।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– এতে এক লাখ টাকা আছে।আপনার হাসবেন্ডের অপারেশন আর বাচ্চার পড়াশুনার জন্য।
নার্সের চোখের কার্নিশে পানি চলে আসলো। নার্স কি বলবে বুঝতে পারছে না।ওনি এই হসপিটালে এক মাস হলো চাকরি নিয়েছেন। এই মুহূর্তে হসপিটাল থেকে লোন নিতে পারবেন না ওনি। হসপিটাল অথরিটির কাছে কোনো স্টাফের চাকরির ছয় মাস না হওয়া অব্দি লোনের পারমিশন নেই। কিন্তু ওনার হাসবেন্ডের অবস্থা খুব ই খারাপ। ওনি অনেক জায়গায় লোন নেওয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু পায় নি।আজকে সকালে ফারহান ভাইয়া আমাকে হসপিটালে নিয়ে আসার সময় ওনাকে এইসব কথা কাউ কে ফোনে বলতে শুনেছেন।আর তাই ফারহান ভাইয়া আমাকে দেখে রাখার জন্য বিশেষ ভাবে ওনাকে নিয়োগ করেন।আর উনি ওনার দায়িত্ব যথাসম্ভব খুব ভালো ভাবে পালন করেন ও।
নার্সের মধ্যে টাকাটা নিতে সংকোচ দেখা গেল।ফারহান ভাইয়া বললেন সংকোচ করবেন না আমি দয়া করছি না।আপনাকে আপনার পাপ্যটাই দিচ্ছি।এই যে আপনি আপনার ম্যাম কে নিজের ছোট বোনের মতো ট্রিট করলেন এটা তার সম্মান প্রদর্শন মাত্র , নিন। নার্স চোখের কার্নিশ থেকে পানি মুছে বললেন
– আম রিয়েলি রিয়েলি গ্রেটফুল স্যার।থ্যাংকস স্যার , থ্যাংকস আ লট।
তারপর নার্স টাকা টা গ্রহন করলেন।আমি শুধু চেয়ে আছি।
এতো অস্বস্তির মাঝে ও ভালো লাগা কাজ করছে।শান্তি লাগছে অনেক এই রকম কতো জনে পারে তাই না, মন টা নিমেষেই ভালো হয়ে গেলো।
নার্স আরো কিছুক্ষন থেকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন।
নার্স চলে যাওয়ার পর ফারহান ভাইয়া রুমে রাখা টু সিটের সোফা টাতে পা উঠিয়ে আধ শোয়া হয়ে বসে রইলেন। কিছুক্ষণ পর পর মাথায় হাত দিচ্ছেন। দেখে মনে হচ্ছে মাথা ব্যথা করছে।আমার কেমন যেন খারাপ লাগলো।সবাইকে আমার জন্য কষ্ট করতে হচ্ছে।বেশ কিছুক্ষণ পার হয়ে গেল কিন্তু আমার অস্বস্তি কাটছে না। আমি বললাম
– স্যার মাথা ব্যথা করছে।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
– নাহহ তেমন কিছু না।
তারপর আমার কাছে এসে বেডের পাশে রাখা ঢুল টাতে বসলেন আর বললেন
– ফারাবি শোন, আমাকে আর স্যার বলতে হবে না তোকে।
আমি হা হয়ে গেলাম আর তারপর ই বললাম
– আপনিই তো বলেছিলেন স্যার বলতে।
ফারহান ভাইয়া কিছুক্ষন ভেবে বললেন
– এখন আর প্রয়োজন নেই।তুই এখন মন দিয়ে পড়ছিস তাই।
আমি বললাম
– ওও আচ্ছা তাহলে কি বলব?
এমন প্রশ্ন করে আমি বেক্কেল বনে গেলাম।
ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে বললেন
– কেন?শুধু ফারহান বলতে চাচ্ছিস?
আমি তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম
– নাহহ নাহ না।আমি তা বলতে চাই নি।
ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে বললেন
– শুধু ফারহান বললেও সমস্যা নেই। কিন্তু এখনো সবার সামনে ভাইয়া ই বলতে হবে। সবার আড়ালে ফারহান বলতেই পারিস।
আমার অনেকটা কাছে এসে এই কথা টা বলেই চোখ মারলেন।আমি বিব্রত হয়ে বললাম
– মানেন
ফারহান ভাইয়া আমার থেকে খানিকটা দূরে সরে গিয়ে বললেন
– মানে কিছু ই না, তুই একটা বাচ্চা এটা তার ই প্রমান।
আমি কিছুই বুঝলাম না আজব তো এখন আর কোনো প্রশ্ন করলে এই লোকটা আমাকে আর ও কি কি বলবে কে জানে। তাই চুপ হয়ে রইলাম। তারপর ই ফারহান ভাইয়া কে বললাম
– একটা কথা বলব
ফারহান ভাইয়া বললো
– পরে বলিস।
আমি বললাম
– কেন?
ফারহান ভাইয়া আমার কাছে এসে বলল
– ছি ফারাবি শরীর দিয়ে উগ্র গন্ধ বের হচ্ছে।
আমি ভ্রু কুচকালাম।ওনি ফিক করে হেসে বললেন
– আরের মজা করছিলাম। তুই তো গোসল করিস নি তাই এখন তোকে গোসল করাবো।
আমি চমকে গেলাম তারপর তুতলিয়ে বললাম
– আপপনিনন করাবেন মানে?
-আরে আমি করাবো না, তোর গোসলের ব্যবস্থা করাবো গাঁধা।
ওনি আমার কাছে এসে ভ্রু নাচিয়ে বললেন
– আমার হাতে গোসল করতে চাচ্ছি নাকি?
আমি তুতলিয়ে বললাম
– নাহহ তোতত।
ওনি আবার হাসলেন।আজকাল এই লোকটা একটু বেশি ই হাসছেন।অবশ্য হাসলে ওনাকে খারাপ লাগে না উল্টো বেশ ভালো লাগে।স্নিগ্ধ হাসিতে যেন ওনাকে আর ও সুন্দর করে তুলে।
ফারহান ভাইয়া আমাকে বললেন
– আমাকে তুই একটু বেশি ই ভয় পাস।বাট আই লাইক ইট।
ফারহান ভাইয়া কে একটা কিছু বলতে যাবো তখনি নার্স এসে বললেন
– স্যার অল কামপ্লিট।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– ওকে।
আমি হা হয়ে আছি। নার্স কি কামপ্লিট করার কথা বললেন তা আমার বোধগম্য হলো না।
_____________________
( আসসালামুআলাইকুম রির্ডাস। গল্প টা আজকে ছোট হয়েছে জানি।কিছু সমস্যার কারনে গল্প টা দিতে দেরি ও হয়েছে। তাই সবার কাছে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। কিন্তু কষ্ট লাগে আমার এতো গুলো রিডার্স থাকতে ও আমি তাদের কমেন্ট পাই না।কিছু মতামত আশা করছি। আর এই গল্প টি 25+ পার্ট করার ইচ্ছে আছে।আশা রাখবো পেজ এ 1000+ ফলোয়ার পাবো এই গল্প টি তে। আপনাদের সাহায্য আশা করছি।আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক দিয়ে পাশে থাকুন।)
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
💜 হ্যাপি রিডিং 💜
চলবে
ফাতেমা তুজ