💖 স্বপ্নের প্রেয়সী 💖
Part – 9
__________________
আজকে আবার ফারহান স্যার পড়াতে আসছেন। ধুর ভালো লাগে না। পুরোনো সব স্মৃতিতে এতটাই বিভোর ছিলাম যে ফারহান স্যার এর পড়া পড়ি নি। এমনিতেই পড়ি না তার মাঝে ওনি রেগে দ্বিগুণ পড়া দিয়ে চলে গেলেন। এই মানুষটির কখন কি মতিভ্রম তা বোঝার উপায় নেই। মানুষ না ছাই , পারলে ওনি আমার জীবনের ইতি টেনে দিয়ে চলে যান। এত পড়া আমার মাথা মন্ডু কিছুই বুঝি না। আর এই বেটা হনুমান নাকি আমার স্যার। ঢাকাতে থাকতে তো ফারহান ভাইয়াই বলতাম ইনফেক্ট সিলেটে আসার পর এমনকি ওনি যখন আমাকে প্রথম দিন পড়ালেন সেই দিন ও ফারহান ভাইয়া ই বলতাম। কিন্তু তার পরের দিন এসেই কত গুলো বুলি ঝেড়ে দিলেন। বললেন, “ফারাবি তুই এখন কোন ক্লাসে পড়ছিস বল তো।”
আমি বললাম, “ক্লাস টেন ভাইয়া।”
উনি আমার দিকে না তাকিয়ে বললেন, “এখন কি তুই পিচ্ছি বাচ্চা?”
আমি বললাম, “তা কেন হতে যাব। আমার তো ষোলো বছর হতে চলল। আর এক মাস ও নেই। তাহলে বাচ্চা কেন থাকব।
(আমি তো ওনার সামনে কথাই বলতে পারি না। আজকে কীভাবে এত গুলো কথা বললাম কে জানে। আসলে এই লোকটার মাথা গেছে। না হলে এমন আজগুবি প্রশ্ন কেউ করে? আজব প্রাণী , যার কথার কোনো আগা মাথাই নেই! )
ফারহান ভাইয়ার কথায় ধ্যান ভাঙ্গে। ওনি আমার কাছে এসে আমার কোমরের পাশটা জড়িয়ে ধরে এক হাতে মাথার চুল ধরে বললেন, “আজকাল বেশ কথা বলসিছ। সাহস বেড়ে গেছে মনে হয়। আমাকে ভয় পাস না তাই না?”
আমি তো ভয়ে শেষ। একে তো এই লোকটি আমার কোমরের পাশটা জড়িয়ে আছেন। তার মধ্যে আবার বাজে ভাবে চুল ধরে আছেন। যার ফলে হার্ট কাঁপছে আর মাথায় বেশ ব্যথা ও পাচ্ছি। কথা বলতে পারছি ই না। ফারহান ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে খানিকটা দূরে সরে গেলেন।আমি তো এখন কাঁপছি। এমনিতেই এই লোকটাকে আমি জমের মতো ভয় পাই। তার মধ্যে ওনি এত কাছে চলে এসেছিলেন। সময়ের সাথে সাথে ওনার আচারণ আমাকে ব্যকুল করে তুলছে। হয়ত বয়স বৃদ্ধির কারণেই সবটা অন্যরকম লাগে। আমাদের জীবনে বয়স জিনিসটা বড্ড যন্ত্রণার। বয়সের কারণে আজ সেটা ঠিক কাল সেটা ভুল হয়ে যায়। কিছুক্ষণ নীরবতা বিরাজ করল আমি মাথা নিচু করে আছি। ওনার আচারণ প্রায় আমাকে বিব্রত করে। তবে পাত্তা দেই না তেমন। ফারহান ভাইয়া বললেন, “আমাকে স্যার বলবি। যখন কেউ থাকবে না তখন স্যার বলেই ডাকবি। সবার সামনে ভাইয়া ই বলবি। গট ইট?”
এই বলেই ওনি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলেন। আমি হা হয়ে আছি। কি আক্কেল, স্যার বলার কি আছে!
অতীত….
সেইদিনের পর থেকে কেউ আমাকে আর হয়রান করে নি।আর আকাশ ভাইয়া রা সব ভালো হয়ে গেছেন। ওনাদের এমন পরিবর্তনে সবাই খুশি। ইনফেক্ট আকাশ ভাইয়ার আম্মু তো ফারহান ভাইয়ার হাত ধরে কেঁদেই দিলেন।আকাশ ভাইয়া আগে যথেষ্ট মিষ্টি ভাষী নম্র ছেলে ছিলেন। অষ্টম শ্রেণির গন্ডী পেরিয়ে নবম শ্রেণীতে উঠা মাত্রই বাজে ছেলেদের পাল্লায় পড়ে হয়ে উঠলেন বখাটেদের লিডার। তখন ফারহান ভাইয়া এস এস সি পরীক্ষার্থী। দিন দশেক ফারহান ভাইয়া আকাশ ভাইয়ার এমন পরিবর্তন দেখেছেন। যে ছেলাটা ফারহান ভাইয়া কে এত সম্মান করত তার মধ্যে এত বাজে পরিবর্তন ফারহান ভাইয়ার বোধগম্য হয় নি। তারপর একদিন ফারহান ভাইয়া আকাশ ভাইয়াকে ডেকে সব কিছু বুঝিয়েছেন। মাস দুয়েক আকাশ ভাইয়া ভালো হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ফারহান ভাইয়ার পরীক্ষার পর আবার চাটে পড়ে গেল। ফারহান ভাইয়া ও স্কুল পেরিয়ে কলেজ এ গেলেন আর আকাশ ভাইয়া কে ঠিক করার তেমন সময় সুযোগ কিছু ই পেল না। আকাশ ভাইয়া পরবর্তীতে ফারহান ভাইয়া কে এড়িয়ে চলত। তাই লোকমুখে আকাশ ভাইয়ার নামে বাজে কথা শুনলে ও কখনো সেভাবে চোখে পড়ে নি।ফারহান ভাইয়ার কোনো ধারণাই ছিল না আকাশ ভাইয়া এতটা বখে গেছেন। কথায় আছে না সঙ্গ দোষে লোহা ও ভাসে। সেই অবস্থাই বিরাজ করছে এখন।
সেইদিন ফারহান ভাইয়া ওদের কে মে রে সকাল বেলা বেস্ট ডক্টর দিয়ে ট্রিটমেন্ট করিয়েছেন। দুই দিন হসপিটালে এডমিট ছিল ওরা। তারপরে ফারহান ভাইয়া ওদের দুজন কে অনেক বোঝায়। আর নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে ওদের ঐ ভাবে মে রেছে তার জন্য ক্ষমা ও চায় ।যদি ও ফারহান ভাইয়ার ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ছিল না। তবু ও তিনি ক্ষমা চাইতে ইতস্তত বোধ করেননি। অবশেষে ফারহান ভাইয়া ওদের বোঝাতে সক্ষম হয় আর ওরা ফারহান ভাইয়ার পা ধরে ক্ষমা চায়। ফারহান ভাইয়া ওদের ক্ষমা করে দিয়ে বুকে টেনে নেয়। আকাশ ভাইয়া নিজের ভুল বুঝতে পেরে সেদিন আমার পা ধরে মাফ চেয়ে ছিল। আকাশ ভাইয়ারা দশম শ্রেণির গন্ডি টপকিয়ে কলেজে ভর্তি হয় নি আর তাই ফারহান ভাইয়া ওনাদের কলেজ এ ভর্তি করিয়ে দেয় আর ওনাদের পড়াশুনার সমস্ত দায়িত্ব নেয়। অবশেষে আকাশ ভাইয়ারা আগের মতো সেই নম্র ছেলে হয়ে উঠেন। এভাবেই পেরিয়ে যায় বেশ কয়েকটি মাস। তারপর থেকে ফারহান ভাইয়ার সাথে আমার প্রায় ই দেখা হয় কিন্তু কথা হতো না। এভাবেই কেটে যায় দিন আমি ও সপ্তম শ্রেনির গন্ডি পেরিয়ে অষ্টম শ্রেণিতে নাম লেখাই।
এখন ফারহান ভাইয়া অনেক বেশি কঠোর হয়ে গেছেন।
যদি ও ওনি আগে থেকেই কম কথা বলতেই পছন্দ করেন কিন্তু এখন আমাকে প্রায় বকা দেন। আমি ও বড় হচ্ছি আমার মধ্যে ও পরিবর্তন আসছে। কম বেশি অনেক কিছু ই বুঝতে শিখেছি। তাই ওনার সাথে আমার তুমুল বিতর্ক বাঁধতে থাকে। কিন্তু সেটা প্রকাশ্যে নয় মনের গোপনে।আমার ঘাড়ে সত্যি ই দুইটা মাথা নেই যে ওনার সাথে সরাসরি ঝগড়া করতে যাব। তাই মনে মনে হাজারো গালি দেই প্রতিদিন। অষ্টম শ্রেণিতে উঠার পর থেকে এই ফারহান ভাইয়া আমার জীবন টাকে নরক করে দিয়েছে। আমার সেই ভালো ফারহান ভাই যেন আজকাল জম। কেমন যেন তার ব্যবহার। বুঝতে পারি না একদম ই। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গেলে ও দেখি কোথায় থেকে যেন হাজির হয়ে যায়। বন্ধুদের সঙ্গে হাসাহাসি করার সময় দেখি ওনি আমার পেছনেই দাড়িয়ে কি ঝামেলা রে বাবা! এই আপদ টাকে মন চায় উগান্ডা তে পাঠিয়ে দেই। কিন্তু সে সাহস যে আমার নেই। আমি ওনার সামনে গেলেই বুকের ভেতর পানি শূন্যতা
অনুভব করি। মনে হয় সারা শরীর অসাড় হয়ে আছে।
কি করব ওনি তো আমাকে কথায় কথায় ধমক দেন ।
অষ্টম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার আগে বন্ধুরা মিলে সবাই আড্ডা দিচ্ছিলাম। ফুচকার আড্ডা ফুচকা নিয়ে বটতলায় সব বন্ধু বান্ধবীরা হাসি ঠাট্টা করছিলাম আর খাচ্ছিলাম। পাশে সিনিয়র ভাইয়ারা আর আপুরা ও ছিল। ওমন সময় কেউ একজন আমাকে তার দিকে ঘুড়িয়ে জোরছে একটা থা প্প ড় দিল। আমার চোখের কোণে পানি টলমল করছিল।এত গুলো স্টুডেন্ট এর সামনে এভাবে অপমান! আমার দোষ কী এতে? সবাই তো আড্ডা দিচ্ছে আমি দিলেই দোষ!
চোখের কোণে টলমলে পানি নিয়ে সোজা বাসার দিকে রওনা দিলাম। সবাই আমার যাওয়ার পানে হা হয়ে তাকিয়ে আছেন। আমি বাসায় গিয়ে সোজা গোসল করে নেওয়ার জন্য বাথরুমে ঢুকলাম। ঝরনা ছেড়ে কতক্ষন কাঁদলাম ওনি আমার সাথে সবসময় কেন এমন করেন তিনি? কেঁদে চোখ লাল করে ফেলেছি সেদিন আর দুপুরে আমার খাওয়া হলো না। বিকেলে বারান্দাতে বসে আছি ওমন সময় বড় মা হাতে একটা ইয়া বড় শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলল তাড়াতাড়ি রেডি হ। শপিং ব্যাগ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ বড় কোনো শপিং কমপ্লেক্স থেকে আনা। আমি বড় মা কে কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই বেড়িয়ে গেল। এই বাসায় ও কেউ আমাকে ভালোবাসে না। সবাই ফারহান বলতে অজ্ঞান। সেইদিনের কথা আমাদের স্কুল থেকে শিক্ষাসফরে নেওয়া হবে সাভার নন্দন পার্কে। ষষ্ঠ আর সপ্তম শ্রেণির স্টুডেন্ট দের শিক্ষা সফরে নেওয়া হয় না। তাই গত দুবছরে কোনো সুযোগ ই ছিল না। এ বছর যেতে পারব ভেবেই মহা আনন্দে বাসায় চলে আসলাম। যেই না বাসার সবাইকে বলব শিক্ষা সফরের কথা দেখি বেটা ব জ্জা ত হনুমান ফারহান ভাইয়া বসে আছেন। বাসার সবাই ওনাকে জামাই আদর করছেন। উফ ঢং দেখলে আর বাঁচি না। যাই হোক আমার তাতে কি? আমি আমার যাওয়ার দিকে মনোযোগ দিই।
উফ ভাবতেই কেমন ডান্স দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। বাসার সবাইকে বলার জন্য সোজা হয়ে দাড়িয়েছি যখন ফারহান ভাইয়ার উক্তি, “কিরে ফারাবি। দরজার কাছে দাড়িয়ে আছিস
কেন?”
আমি মনে মনে কয়েকটা গালি দিয়ে বললাম তাতে তোর কি। আমি যেখানে ইচ্ছে সেখানে দাড়াব। কিন্তু তা প্রকাশ করলাম না। এর সামনে কিছু বলবই না যাহ! উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে চলে যেতে লাগলাম। তখনি ফারহান ভাইয়া নিজের উক্তি ঝেড়ে দিলেন, “কাকি এবার না ফারাবির স্কুল থেকে সাভার নেওয়া হচ্ছে তাও একটা পার্কে। আর ঐ পার্কের রাইডস গুলো অনেক রিস্কি বাচ্চারা প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ে।”
বাহ ফারহানের বাচ্চা বাহ আমার সুখ তোর সহ্য হয় না, তাই না। সুন্দর ভাবে আমার যাওয়া ক্যান্সেল হয়ে গেল। তাহলেই বলুন এই ভিন গ্রহের প্রাণী আমার জীবনের কতটা বাজিয়ে দিচ্ছে। ভাবনার ছেদ কেটে বড় মার দেওয়া শপিং ব্যাগটা খুললাম। ও মাই গড এত সুন্দর গ্রাউন! জাম রঙের মধ্যে হালকা ক্রিম কালারের কম্বিনেশনে অসাধারণ একটা গ্রাউন। সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি আর জুতো। উফফফ মনটা পুরো ভরে গেল। দুপুরের সমস্ত ঘটনা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে রেডি হতে চলে গেলাম।
[ আসসালামুআলাইকুম রির্ডাস। আশা করি মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন। আমার এই গল্প টা শেষ হলে কয়েকটি অনুগল্প দেওয়ার ইচ্ছে আছে। তার জন্য আপনাদের রেসপন্স ও তো দেখতে হবে। রেসপন্স ভালো না হলে একজন রাইটারের গল্প লেখায় আগ্রহ চলে যায়।আপনাদের রেসপন্স আশা করছি। দয়া করে কমেন্ট করে জানাবেন গল্প টি কেমন হচ্ছে। ভুল ত্রুটি হলে ধরিয়ে দিবেন। কেউ বাজে মন্তব্য করবেন না প্লিজ। আর আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকবেন।]
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।
💜 হ্যাপি রিডিং 💜
চলবে
ফাতেমা তুজ