💖 স্বপ্নের প্রেয়সী 💖
Part – 13
________________________
সেই দিনের পর থেকে আমি পড়াশুনাতে অনেক মনোযোগী হয়ে গেছি,মানে ইংরেজি তে। এভাবেই কেটে যায় একটি সপ্তাহ। ফারহান ভাইয়া আমাকে রোজ পড়ান এখন। কিন্তু আজ দুইদিন ধরে ফারহান ভাইয়া ও রিফাত ভাইয়া ঢাকাতে গেছেন। তাদের পরীক্ষার কিছু কাজ নিয়ে। আমরা ঢাকা থেকে আব্বুর বিশেষ ট্রান্সফারের কারণে দুই বছর আগে সিলেট আসলে ও রিফাত ভাইয়া ঢাকাতেই পড়াশুনা করেন।আর ফারহান ভাইয়া তো আমাদের সিলেট আসার সাত দিনের মাথায় সিলেটে ওনার বড় মামার বাড়ি চলে এসেছেন। কিন্তু ওনার বড় মামার বাড়ি হালি শহর থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে। যার কারণে ওনি এক দিন বাদে বাদে রিফাত ভাইয়ার সাথে দেখা করতে আমাদের বাসায় আসতেন। দুই বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা যার কারণে ফারহান ভাইয়া ঢাকা থেকে সিলেট সেটেল হলেন। সেই ছোট থেকে এদের বন্ধুত্বের প্রশংসা সবার মুখে মুখে। দুটি তে পারে ও বটে। কিন্তু পাঁচ মাস যাবত ওনি হালি শহরে ওনার ছোট আন্টির বাড়ি চলে এসেছেন। আমাদের বাসা থেকে এক কিলোমিটার দূরে ওনার আন্টির বাসা। আগে ওনার আন্টি কোরিয়া থাকতেন এখন সিলেটে শশুড় বাড়িতে সেটেল হয়েছেন। শশুড় বাড়ির লোক বলতে বৃদ্ধা শাশুড়ি ওনার শশুড় কয়েক মাস আগে মা রা যান। আর তাই বৃদ্ধা শাশুড়ির জন্য সিলেটে চলে এসেছেন তা ও এক বছরের জন্য। এক বছর পরে ওনার শাশুড়ি কে নিয়ে আবার কোরিয়া চলে যাবেন। এখন ওনাদের বাসায় ওনি ওনার হাসবেন্ড , ছেলে , মেয়ে, শাশুড়ি আর ফারহান ভাইয়া থাকেন।
দুই দিন পর আজকে রিফাত ভাইয়া আমাকে ভিডিও কল দিয়েছে। কিন্তু আমি কল ধরতে পারি নি শুধু মাত্র আমার ঘুমের জন্য। তাই তাড়াতাড়ি রিফাত ভাইয়া কে কল ব্যাক করলাম। কল করলাম একবার , কিন্তু ধরলো না। আবার কল দিলাম এবার ধরেছে। কিন্তু ভিডিও কলে ফোন ধরা মানুষটিকে দেখে আমার শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। আমি না পারছি ফোন টা রাখতে আর না পারছি ধরে রাখতে।কেমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, কারণ ফোন টা যে ধরেছে তিনি আর কেউ নন দ্য ওয়ান এন্ড অনলি গ্রেট ফারহান ভাইয়া।
বেশ কিছুক্ষণ কাঁচুমাচু করে কেটে গেল। কিন্তু ফারহান ভাইয়া একটা কথা ও বলে নি শুধু এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছেন। যেন কতদিনের তৃষ্ণাতে ওনার চোখ গুলো আজ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া বললেন, “ফারাবি কেমন আছিস। ঠিকমতো খাস না নাকি? কেমন শুকনো শুকনো লাগছে।”
আমি বললাম, “ভালো আছি। না খাই তো , এমনি ফোনে শুকনো শুকনো লাগছে।”
তারপর চুপ হয়ে গেলাম কয়েক সেকেন্ড পর বললাম
“আপনি কেমন আছেন?”
উনি হালকা হেসে বলল, ” হুমম ঠিক ঠাক। তো পড়াশুনা চলে কেমন?”
আমি একটু সাহস জুগিয়ে বললাম, “হুমমম। সব কমপ্লিট যা , যা পড়া দিয়েছিলেন সব।”
ফারহান ভাইয়া আর পড়াশোনা নিয়ে কিছু বললেন না কিন্তু যা বললেন তাতে আমি উওর দিতে পারলাম না। তিনি বললেন, “তুই কি আমাকে মিস করেছিস?”
আমি উত্তর দিতে পারলাম না কারণ টা আমি নিজেই জানি না। আসলেই কি মিস করি নি নাকি করেছি? নিজের মনেই প্রশ্ন আওড়াতে লাগলাম। আমার মন টা বড্ড পাষাণ হয়ে গেছে। আমি কোনো সঠিক উত্তর খুজে পেলাম না। কেমন সব কিছু কনফিউশনে চলে গেছে। আমি নিশ্চুপ, অন্যদিকে ফারহান ভাইয়া অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন।
আমি বলব যখন হ্যাঁ মিস করেছি। ঠিক তখনি রিফাত ভাইয়া ফারহান ভাইয়া কে বলল, “কে ফারহান?”
ফারহান ভাইয়া বলল, “ফারাবি নে কথা বল।”
এই বলেই ফোন টা রিফাত ভাইয়া কে দিয়ে চলে
গেলেন।
( কারো ভালোবাসার অনুভূতি যদি তার ভালোবাসার মানুষটি না বুঝতে পারে সেটা যে কতটা কষ্টের তা সত্যিই সেই মানুষটি বাদে আর কেউ বুঝতে পারে না। ঠিক তেমনি ফারহানের মনের ভেতর চলছে শুধু দহন। কিন্তু সে তার ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারছে না।)
রিফাত ভাইয়ার সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো। কিন্তু মনটা অস্থির লাগছে , কিছু ই ভালো লাগছে না। রিফাত ভাইয়ার সাথে কথা বলেই রাত এগারোটায় গোসল করতে ছুটলাম।বড্ড বাজে অনুভূতি হচ্ছে। ঝরনা ছেড়ে প্রায় এক ঘন্টা বসে রইলাম। একে তো হিম লাগানো শীত। তার উপর ঠান্ডা পানিতে বসে থাকায় শরীর অসাড় হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে ঘুমাতে চলে গেলাম। মনের অস্থিরতা কাটছেই না। কেন এমন হচ্ছে, বার বার কেন ফারহান ভাইয়ার চোখের সেই আকুলতা ভেসে উঠছে?
মনে হচ্ছে ভুল করে বসেছি। কিছুই ভালো লাগছে না চোখে ঘুম নেই , মনে নেই শান্তি কিন্তু শরীর যে বড্ড ক্লান্ত।
বেশ কয়েক ঘন্টা পর শরীরের প্রতি টা কোষ ক্লান্তির সাথে পেরে না উঠতে পেরে সংকুচিত হয়ে ঢলে পড়ল ঘুমের দেশে।
অন্য দিকে
___________
কেউ একজন ব্যালকনিতে দাড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছেন। যেই মানুষটির সিগারেটের নামেই এলার্জি সেই মানুষটি নিমেষেই শেষ করে দিল ছয় টি সিগারেট। মনে হচ্ছে পুড়িয়ে দিতে চাচ্ছে বুকে জমে থাকা কষ্ট টাকে। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিল। হাতে থাকা সপ্তম সিগারেট টা ফেলে দিয়ে পা দিয়ে পিষে নিল। তারপর বলল, “ফারহান ক্ল্যাম ডাউন। কিছু পাওয়ার জন্য কষ্ট করতেই হবে। তবে এখন কাজ হচ্ছে প্রিয় মানুষটির ঘোর লাগানো চোখের অনুভূতি নেওয়া।”
ফারহান ভাইয়া এক মুহূর্ত দেরি না করে প্লেনের টিকেট কাটলেন। সকাল ছয় টার টিকেট। তারপর ই রিফাত ভাইয়া কে টেক্সট করে জানিয়ে দিলেন ফারহান ভাইয়ার কাজ যেহেতু শেষ তাই সে সিলেট ব্যাক করছে। এভাবেই ব্যালকেনিতে দাড়িয়ে হাতে সেই ওড়না টা জড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “হে চাঁদ তোমার থেকে ও স্নিগ্ধ কাউকে পেতে চাচ্ছি। আমার ভালোবাসার সাক্ষী স্বরূপ সঙ্গী হয়ে থাকবে প্লিজ।”
চাঁদের দিকে তাকিয়ে ওড়নাটাকে বুকে জড়িয়ে চুমু দিলেন এভাবেই রাতটি নির্ঘুম কাটিয়ে দিলেন।
____________________
পরের দিনই ফারহান ভাইয়া সিলেটে চলে আসলেন।
হালি শহরে আসতে আসতে আটটা বেজে গেল। ওনি সোজা আমাদের বাসায় এসেছেন। ওনাকে সকাল বেলা আসতে দেখেই বড় মা আর আম্মু বললেন, “ফারহান সব ঠিক আছে তো বাবা?”
ফারহান ভাইয়া বললেন, ” হুম কাকি সব ঠিক ঠাক আছে। কিন্তু এখন তাড়াতাড়ি খেতে দাও খুব ক্ষিধে পেয়েছে।”
আম্মু হেসে বললেন, “ভেতরে গিয়ে বস। আমি এখনি নাস্তা দিচ্ছি।”
বড় মা বললেন ‘ তা ফারহান বাবু এত ফাস্ট চলে আসলেন যে। কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি?’
ফারহান ভাইয়া বললেন, “আরে না কাকি কোনো সমস্যা হয় নি। কাজ শেষ তাই চলে এসেছি। কিন্তু তোমার ছেলেকে রেখে এসেছি যাতে তার জানে মানের সাথে ঠিক ঠাক কিছু দিন চলতে পারে।”
বড় মা ফারহান ভাইয়ার কান ধরে বললেন, “তাইইই। নাকি নিজের গালফেন্ড কে এই সিলেটে পেয়ে গেছিস তাই চলে এসেছিস?”
ফারহান ভাইয়া বললেন,”উফফফ কাকি লাগছে। এখন খেতে দাও আন্টির বাসাতে যেতে হবে তো।”
বড় মা বললেন, “আচ্ছা আয় আগে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে নে।”
বড় মা ফারহান ভাইয়া কে নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন।
তারপর ফারহান ভাইয়া বললেন, ” ফারাবি কে দেখছি না।ওর তো সকাল সকাল পড়তে বসার কথা সাথে নাস্তা করার ও কথা।”
আম্মু বললেন, ” দাড়া দেখে আসছি। ”
ফারহান ভাইয়া বললেন, “আচ্ছা তুমি খাবার রেডি কর আমি ওকে নিয়ে আসছি।”
এই বলেই ফারহান ভাইয়া আমার রুমে আসলেন। আমি কম্বল জড়িয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে আছি। ফারহান ভাইয়া আমাকে কয়েকবার ডাক দিলেন কিন্তু আমি উঠছি না।ফারহান ভাইয়া আবার ডাক দিলেন কিন্তু তা ও উঠছি না। তখনি ফারহান ভাইয়া আমাকে টেনে উঠাতে গেলেন।আমার কপালে তার হাতের স্পর্শ লাগায় তিনি কেঁপে উঠলেন। তিনি আবার কপালে হাত দিলেন তারপর গলায় হাত ছুঁইয়ে বললেন, “ওও মাই গড এত জ্বর কীভাবে হলো!”
ফারহান ভাইয়া এখান থেকেই আম্মু আর বড় মা কে ডাকতে লাগলেন। ফারহান ভাইয়ার ডাকে আম্মু আর বড় মা ছুটে আসলেন। তারপর ফারহান ভাইয়া কে জিজ্ঞাসা করলেন, “কি হয়েছে?”
তখন ফারহান ভাইয়া বললেন, “ফারাবির গায়ে তো প্রচুর জ্বর।”
এই কথা শুনা মাত্র বড় মা আমার কপালে হাত দিলেন।তারপর বললেন, “মেয়েটার শরীর তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।”
আর ঐ দিকে আম্মু পানি পট্টি দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন।আম্মু মাথায় পানি পট্টি দিচ্ছে কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। কারণ আমার জ্বর মারাত্মক। সচরাচর আমার জ্বর হয় না।আর যখন হয় তখন যেতে চায় না। ফারহান ভাইয়া থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মেপে বললেন, “এখনো 103 ডিগ্রি। ওকে হসপিটালে এডমিট করাতে হবে। আমি ওকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি তোমরা নিচে আস।”
ফারহান ভাইয়া আমাকে কোলে করে নিচে নামিয়ে আনলেন। আমার কোনো জ্ঞান নেই। আমার জ্বর সম্পর্কে সবার ভালো অভিজ্ঞতা আছে। যার জন্য আমাকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে গেলেন। হসপিটাল নিয়ে যাওয়ার পর ই ডাক্তার ইনজেকশন দিলেন। বড় আব্বু কে আর আব্বু কে ফোন দেওয়া হয়েছে তারা সোজা হসপিটালে আসবেন। আমি অচেতন হয়ে পড়ে আছি। কোনো জ্ঞান নেই আমার।ফারহান ভাইয়া আমার হাত ধরে বসে আছেন। বেশ চিন্তিত ওনি ঐ দিকে আম্মু আর বড় মা চোখের পানি ফেলতে ব্যস্ত। আচানাক ফারহান ভাইয়া আমার হাতে চুমু এঁকে দিলেন।
_________________
( আসসালামুআলাই রির্ডাস। আলহামদুল্লিহ আমার পেজ এ আপনাদের সবার চেষ্টার ফলে 500+ ফলোয়ার হয়েছে মাত্র 12 দিনে। আশা রাখছি আমার এই গল্প শেষের আগে 1000 হাজার ফলোয়ার ছুঁয়ে যাবে। এর জন্য আপনাদের রেসপন্স আশা করছি। আপনাদের ছাড়া সম্ভব না। প্লিজ আপনাদের বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন। 🙂গল্প টি কেমন হচ্ছে জানাবেন।)
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
💜 হ্যাপি রিডিং 💜
চলবে
ফাতেমা তুজ