স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2 #ফাতেমা_তুজ #part_38

0
196

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_38

জামানের বিয়ে শেষ হয়েছে আজ দুদিন হলো।
মনিকা কে সারপ্রাইজ দেওয়ার পর রিফাতের সাথে মনিকার একটু ভাব জমেছে। এই প্রথম রিফাত ওকে ডিনারে নিয়ে এসেছে তাই।
ফারাবি আবার ফারহান কে জমের মতো ভয় পাওয়া শুরু করেছে। ফারহান অফিসে গেছে আজ দুপুরে।
বলেছে সন্ধ্যা সাত টার মধ্যে ফিরে আসবে।
এখন বাজে 6’49 ফারাবি হাত পা গুটিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে আছে।
টিভি তে কার্টুন দেখছে আর পপকর্ন খাচ্ছে।
হঠাৎ দরজার কলিং বেল বেজে উঠলো। ফারাবি টিপ টিপ পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।
ফারহান কে দেখে লম্বা এক হাসি দিলো। প্রচন্ড গরমে ফারহান ঘেমে গেছে। কি জানি এসি গাড়ি থাকতে মানুষ টা ঘামলো কি করে ?
ফারাবির বেশ মায়া হলো। হাজার হোক ওর ই তো হাসবেন্ড।
ফারহান টাই ঢিলে করতে করতে সোফা তে এসে বসলো।
ফারাবি কিচেনে ছুটে গেল। ফারহান সামান্য অবাক হলো। মিনিট খানেক পর ফারাবি গ্লাস হাতে ফিরে এলো।
ফারহান ভ্রু বাঁকিয়ে বলল
_ এটা কিহহ ?

_ লেবুর শরবত , গরম থেকে এসেছেন ভালো লাগবে।

_ ওহহ দে।

ফারাবি শরবত দিতেই ফারহান এক ঢোক গিলে নিলো। ফারাবি অসহায় জনতার মতো ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।
ফারহান খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বলল
_ চিনি বেশি কেন ফারাবি ?

ফারাবি অবাক হয়ে বলল
_ আরে আমি মাত্র এক চামচ চিনি দিয়েছি। এতো ডায়েট ফায়েট করার কি দরকার ?

_ বেশি কথা বলিস তুই । যাহহ মাথা টা ব্যথা করছে একটু টিপে দে।

_ আমি ?

ফারহান মাথা টা উঠিয়ে বলল
_ তাহলে কে ?

ফারাবি মুখ টা গোমড়া করে ফারহানের পাশে বসলো। ফারহান বাচ্চা দের মতো সোফা তে পা উঠিয়ে ফারাবির কোলে মাথা রাখলো।
ফারাবি গলা উঁচিয়ে বলল
_ কোলে কেন ?

_ হুসসস। মাথা টিপে দে এখন।

_ দিচ্ছি , কিন্তু আপনি অসভ্যতামু করবেন না বলে রাখলাম।

_ আচ্ছা বাবা আমি কিচ্ছু করবো না।

ফারাবি মুচকি হেসে ফারহানের মাথা টিপে দিতে লাগলো। ফারহানের চুল গুলো কেমন উসকো খুসকো লাগছে।
ফারাবি চুলে হাত বোলাতে বোলাতে শান্ত স্বরে বলল
_ চুল এমন দেখাচ্ছে কেন ? ভালো করে ওয়াস করেন নি নাকি ?

ফারহান সামান্য ভ্রু কুঁচকালো। তারপর লম্বা করে শ্বাস নিয়ে ফারাবির পেটে চুমু খেয়ে উঠে বসলো।
বিস্ময়ে ফারাবি হতবাক , ফারহান এক গাল হেসে ফারাবি কে কোলে বসিয়ে দিলো।

_ আরে আরে কি করছেন কি ? মাথা টা নষ্ট হলো নাকি ?

_ উহহুহহ এবার হবে। আমার সাথে তোর ওহহ মাথা নষ্ট হবে।

_ মানে ?

_ মানে টা প্রাক্টিক্যাল বোঝাবো।

বলেই ফারহান ফারাবি কে টেনে উপরে নিয়ে গেল। ফারাবির মাথা ফাঁকা হয়ে গেছে। এই লোকটার মতলবের কিছুই বুঝতে পারছে না ওহহ।
ফারহান তার অধর কোনে স্টাইলিশ রহস্যময় হাসি টানিয়ে রেখেছে।
ফারাবি মুচরাচ্ছে দেখে ফারহান রাগী চোখে তাকালো।
ফারাবি দমে গেল , তবে বিস্ময় টা কাটিয়ে উঠতে পারলো না।
রুমে এসে ফারহান এক গাল হেসে ফারাবি কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
ফারাবি হাঁসফাঁস করতে করতে বলল
_ কি হলো কি আবার ? ছাড়ুন আমার অস্বস্তি হচ্ছে ?

_ অস্বস্তি হচ্ছে ?

_ হুহহ

ফারহান বাঁকা হেসে ফারাবির কানের কাছে মুখ নিয়ে আসলো।
ফারহানের গরম নিশ্বাস ফারাবির কানে এসে আঁচড়ে পরছে। ফারাবির শরীরে অদ্ভুত শিহরন জেগে উঠলো।
ফারহান ফিসফিস করে বলল
_ এবার সব অস্বস্তি ঠেলে দিবো।

ফারাবি কাঁপা স্বরে বলল
_ মানে ?

_ মানে এখন তুই আর আমি এক সাথে সাওয়ার নিবো।

ফারহানের কথা তে ফারাবির চোখ দুটো গোল গোল হয়ে গেল। ফারহান দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগলো। ফারাবি নিজেকে ফারহানের বাহুডোর থেকে ছাড়িয়ে বলল
_ দেখুন আমি সাওয়ার নিয়েছি। আমি আর সাওয়ার নিবো না এখন।

_ আচ্ছা ?

_ হুমমম

ফারহান একটু একটু করে ফারাবির কাছে আসতে লাগলো। ঠোঁটের কোনে বিগলিত হাসি।ফারাবি ফাঁকা ঢোক গিলে নিলো। ফারহান দু হাতে খামচে ধরলো ফারাবি কে। দুজনের মাঝে আর এক ইঞ্চি ও দুরুত্ব নেই। ফারাবির হার্ট বিট বেড়ে গেল। ফারহান মোহনীয় হেসে ফারাবির নাকে নাক ঘষতে লাগলো।
_ তাহলে জান তুই চাচ্ছিস আমি এমন কিছু করি যার জন্য তুই ইচ্ছে করেই সাওয়ার নিবি ?

_ দেখুননন আমি সেইই সব কিছু ।

_ আমি বুঝে গেছি, আমার বউ কি চাচ্ছে।

ফারাবি অসহায় মুখ করে তাকিয়ে রইলো। ফারহান ডেভিল স্মাইল দিয়ে ফারাবি কে কোলে তুলে নিলো।
ফারাবি বাচ্চা দের মতো লাফাতে লাগলো।
ফারহান ভ্রু কুঁচকে বলল
_ ওকে ইয়ার , আমি তেমন কিছু করছি না। বাট এখন আমরা এক সঙ্গে সাওয়ার নিবো। এন্ড দ্যাটস ফাইনাল।

ফারাবি থমথমে মুখ করে তাকিয়ে রইলো। ফারহান বাঁকা হেসে বলল
_ বাথটবে কিস করার এক্সপেরিয়েন্স টা আজ হয়ে যাক।

ফারাবি কাঁদো কাঁদো মুখ করে রইলো। ফারহান ঝরা হেসে ফারাবি কে কোলে করেই নিয়ে গেল।
অগত্যা ফারাবি কে ফারহানের সাথে ডাবল সাওয়ার নিতেই হলো।

*

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছে যাচ্ছে ফারাবি সাথে ফারহান কে হরেক রকমের গালি।
ফারহান বাথরুম থেকে চেঞ্জ করে এসে স্পষ্ট শুনতে পেল ফারাবির বিখ্যাত ভাষন।
তবে কিছুই বলল না কারন মেয়েটাকে শুধু শুধু সাওয়ার নেওয়ালো।
অবশ্য অন্য টাইমে ও এক সাথে সাওয়ার নেওয়া যেত।
কিন্তু ঐ যে ফারহানের ড্রেভিল মন। বউ কে জড়িয়ে গোসল করবে যখন মনে হয়েছে তো এখনি করবে।
ফারাবি পেছন ঘুরে দেখলো ফারহান দাঁড়িয়ে আছে। ফারহান কে দেখে রাগে গজ গজ করতে করতে বেডে ট্রাওয়াল টা রেখে দিলো।
ফারহান হাত দিয়ে চুল ঝারা দিতে লাগলো। যার ফলে ফারহানের চুলের পানি ফারাবির গায়ে এসে পরলো। ফারহানের এমন কান্ডে ফারাবি অবাক হয়ে তাকালো।
ফারহান মেকি হাসি দিয়ে কিছু বলবে তার আগেই গট গট করে ফারাবি রুম থেকে বের হয়ে গেল। ওর এমন কান্ডে ফারহান পেট চেপে হাসতে লাগলো। মিনিট দশেক পর ফারাবি আসলো। ফারহান ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কোথায় পালাবি আর সেই আমার কাছে তো ফিরে আসতেই হবে।

ফারাবি থমথমে মুখ করে রইলো। ফারহান ফোন স্ক্রল করতে করতে আড়চোখে ফারাবি কে দেখে যাচ্ছে।
ফারাবি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
_ নিচে আসুন ?

_ কেন ?

_ ডিনার করবেন না ?

_ আমি তো এখনো খাবার অর্ডার করি নি ?

ফারাবি ভেঙ্চি কেঁটে বলল
_ আমি রান্না করেছি।

ফারাবির কথা টা ফারহানের মাথা তে ঢুকলো না। তাই ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কি বললি ?

_ বললাম যে খেতে আসুন আমি রান্না করেছি।

ফারহান অবাকে চরম পর্যায়। ফারাবি মুখ টা গোমড়া করে বলল
_ এগ ফ্রাইড রাইস রান্না করতে পারি তাই ঐ টাই করেছি।
ইচ্ছে হলে খেয়ে দেখুন।

ফারহান ফোন টা বেডে রেখে উঠে দাঁড়ালো। ফারাবির সামনে গিয়ে আগা গোড়া পরখ করে নিয়ে বলল
_ এগ ফ্রাইড রাইস ?

ফারাবি মাথা কাত করে সম্মতি জানালো। তারপর বলল
_ সব কিছু কেঁটে কুটে রেখেছিলাম। তাই এখন রান্না টা করে আসলাম।

ফারহান আর এক মুহূর্ত দেরি করলো না। ডাইনিং এ বসে এক প্লেট এগ ফ্রাইড রাইস মুহুর্তেই সাবার করে দিলো।
ফারাবি এক চামচ মুখে দিচ্ছে আর ফারহানের দিকে তাকাচ্ছে।
ফারহান চেটে পুটে খেয়ে নিলো। হঠাৎ করেই ফারাবির মনের ভেতর অদ্ভুত শান্তি ছেয়ে গেল।
ফ্রাইড রাইস টা আহামরি টেস্ট হয় নি। তবে ফারহান কে তৃপ্তি করে খেতে দেখে ফারাবির বেশ ভালো লাগলো।
ফারহান এক গাল হেসে বলল
_ আমার লাইফের বেস্ট ডিস ছিলো।

ফারাবির চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। একটা মানুষ আর কতো ভাবে ভালোবাসা বোঝাবে ওর জানা নেই।
এতো কেন ভালোবাসে ওকে ?

ফারহান ফারাবি কে টেনে দাঁড় করিয়ে দিলো। ফারাবির চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরার আগেই ফারহান তা ঠোঁটের সাহায্য শুষে নিলো।
ফারাবি ফারহানের বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো। ফারহান মৃদু হেসে ফারাবির মাথায় চুমু এঁকে দিলো।
বেশ কিছুক্ষণ পর ফারহান ফারাবি কে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল
_ কাল একটা সারপ্রাইজ আছে।

ফারাবি প্রশ্নবোধক দৃষ্টি তে তাকালো। ফারহান মোহনীয় হেসে বলল
_ সারপ্রাইজ বলে দিলে কি সারপ্রাইজ হয় ?

ফারাবি ঠোঁট প্রশস্ত করে তাকালো। ফারহান চোখ টিপ মেরে বলল
_ অনেক ভালোবাসা হয়েছে। এবার চলুন আপনার বইয়ের সাথে প্রেম করার সময় হয়েছে।

মুহুর্তেই ফারাবি মুখ টা গোমড়া করে নিলো। ফারহান সে দিকে পাত্তা না দিয়ে ফারাবি কে রুমে নিয়ে বই হাতে বসিয়ে দিলো।
ফারাবি এক বার বইয়ের দিকে তাকাচ্ছে একবার ফারহানের দিকে।
দুটোই যন্ত্রণা দায়ক , না ছাড়া যায় আর না সহ্য করা যায়।

**সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করুন। আপনাদের প্রতি আগ্রহী আমি।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here