স্বপ্নের প্রেয়সী 💖 Part – 37

0
185

💖 স্বপ্নের প্রেয়সী 💖
Part – 37
____________________________

আজ আমি নিজেই ঘুম থেকে উঠে পড়লাম।
কাল ঘুমানোর আগে এলাম দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম।
ফ্রেস হয়ে এসে বই নিয়ে পড়তে বসলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পর চোখের সামনে এক মগ কফি দেখতে পেলাম।
আমি উপরে না তাকিয়েই কফি টা হাতে নিতে নিতে বললাম
– ঠ্যাংস গো।
এটার ই দরকার ছিল ।

কফি কাপে একটি চুমুক দিয়ে শিউরে উঠলাম।
ভালো করে বোঝার জন্য আরেকটা চুমুক দিলাম।
তারপর ই উপরে চোখ তুললাম দেখি ফারহান ভাইয়া দাড়িয়ে আছেন।

আমি খানিকটা বিব্রত বোধ করে বললাম
– আপনি

ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন
– কাকে ভেবেছিলি?

আসলেই তো কাকে ভেবেছিলাম।
ধ্যাত
ওনার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললাম
– আপনি কষ্ট করে কফি না বানালে ও হতো।

ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে বলল
– এইটুকু করাই যায় ।
আচ্ছা ভালো করে পড় , আমি তোর গাছের যত্ন নিয়ে আসি।
আমি মুচকি হেসে সম্মতি জানালাম।
ফারহান ভাইয়া ব্যালকনিতে চলে গেলেন।
আর আমি কফি কাপে চুমুক দিয়ে আবার পড়াতে ফোকাস করলাম।

এভাবেই হাসি মজা আর ব্যস্ততার মাঝে কেটে গেল বেশ কিছুদিন।
এর মাঝে দু বার স্কুলে ও যেতে হয়েছে।
আনিকা আমায় দেখে আর রাগে ফুঁসে কিন্তু মুখে কিছু বলে না।
এর মধ্যে টেস্ট এক্সাম ও হয়েছে, কিন্তু শর্ট করে 2 দিনে।
200 মার্ক এর মধ্যে, বেশ হার্ড হয়েছে প্রশ্ন।
তবু ও আলহামদুল্লিহ স্কুলে ফাস্ট হয়েছি।
যদি ও আমি আমার ক্লাসের ফাস্ট গাল না , আমি থ্রাট গাল।
সব বিষয়ে বেশি পেতাম শুধু ইংরেজির জন্য পিছিয়ে যেতাম।
আর এই কয়েকমাস এ ফারহান ভাইয়া বেশ ভালো করে ইংরেজি মাথাতে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
যার ফল স্বরূপ এই রেজাল্ট ।
__________________________

রাতে ডিনার শেষে পড়তে বসেছিলাম।
আম্মু এসে বলে গেল , কালকে স্কুলে গিয়ে এক্সাম ফর্ম এর ফাইনাল স্বাক্ষর দিতে হবে।
আমি ঠিক আছে বলে আবার পড়ায় মনোযোগ দিলাম।
ইদানিং পড়তে পড়তে বুকে বই নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ি।
তাই সন্ধ্যা বেলা তেই এলাম দিয়ে রাখি।
সকাল বেলা এলামের শব্দে জেগে উঠলাম।
ফ্রেস হয়ে এসে কিছুক্ষণ পড়লাম তারপর একটু রিফ্রেস হওয়ার জন্য ব্যালকনিতে গিয়ে ঘোরাঘুরি করলাম।
রেডি হয়ে নাস্তা করে গলায় স্কুল কার্ড ঝুলিয়ে বেরিয়ে পরলাম।
রিকশা করে স্কুলে চলে আসলাম।
স্যার রা বেশ কিছুক্ষণ আমাদের স্পিচ শুনালেন।
তারপর, পর পর স্বাক্ষর করালেন।
হেড স্যার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
– ওয়েল ডান মামুনি।
এভাবেই এগিয়ে যাও , আমার বিশ্বাস তুমি পারবে।
আমি স্যার কে ধন্যবাদ জানালাম।
স্যার আরো কিছুক্ষণ আমাকে বিভিন্ন ধারনা দিলেন।
তারপর স্যার কে বিদায় জানিয়ে স্কুল গ্রাউন্ড এ চলে আসলাম।
অডিটোরিয়াম ছাড়িয়ে যাচ্ছিলাম তখনি আনিকার কথায় থমকে গেলাম।
আনিকা আর ওর সাঙ পাঙ আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছিলো।
– আরে যানিস আজকাল কিছু মেয়ে স্মাট ছেলে দেখলেই হাত করে নেয়।
সব হলো জালিয়াতি, বেশি ভাব দেখায়।

আমি নিজের রাগ কে সংবরন করে ও করতে পারলাম না।
তাই ওদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।
আমায় দেখে ব্রু কুঁচকে তাকালো ওরা ।
আমি এক তাৎছিল্যর হাসি দিয়ে বললাম।
আমি না হয় জালিয়াতি করে ফারহান ভাইয়া কে হাত করেছি।
আচ্ছা এই মুহূর্তে হাত করা ছেড়ে দিলাম।
দেখা যাক ঠিক কতোটুকু তুই তোর স্পেশাল ফরমালিটিস দিয়ে পাত্তা পাস।
আর হাত করে নিতে পারিস

আনিকা ব্রু কুঁচকে বলল
– এই কয়েকদিনের মধ্যেই একে বারে ফারহান ভাইয়া।
বাহহহ

আমি কিছু না বলে শুধু তাৎছিল্যর হাসি হাসলাম।

আমার ফোনে কোনো সিম নেই।
তাই আনিকা র হাত থেকে ওর ফোন টা নিয়ে সুন্দর করে ফারহান ভাইয়ার নাম্বার টা ডায়াল করে কল করে দিলাম।

যদিও বেশ সাহস দেখিয়ে কল করলাম , কিন্তু ভয় হচ্ছে।
এই লোকটা যখন তখন বকা দিতে পারেন।
বিশ্বাস নেই, হালকা ভয় নিয়েই কল পিক করার অপেক্ষা করলাম।
ফোনটা লাউড স্পিকার এ দিলাম।
কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া কল পিক করে বলল
– হ্যালো কে বলছেন।

আনিকা কে ইশারা করে বললাম কথা বলতে।
আনিকার মুখে বাঁকা হাসি দেখতে পেলাম।

আনিকা কন্ঠস্বর পরিষ্কার করে বলল
– আমি আনিকা।

ওপাশ থেকে ফারহান ভাইয়া বলল
– হুমম বলো।

আমি সামান্য ব্রু কুচকালাম।
ভেবেছিলাম এই বুঝি ওকে দিবে এক ঝারি।
আনিকা আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বোঝালো।
দেখ কে পাত্তা পায় আর না পায়।

আনিকা বলল
– আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।
এক্সচেলি নাম্বার টা ফারাবি নিজে এসেই আমাকে দিয়েছে।
ও নাকি আপনার পাত্তা পাওয়ার আশা করে না।
তাই আমি ই চলে আসলাম আপনার সাথে কথা বলতে।
আপনাকে আমার বেশ পছন্দ।
আপনি এতো সুন্দর, স্মাট পুরো হিরো।

ওপাশ থেকে ফারহান ভাইয়া ঠান্ডা স্বরে বলল
– তাই বুঝি ।

আনিকা খুশিতে গদগদ হয়ে বলল
– একদম।

আনিকা আমার দিকে তাকাতেই আমি মুখ চেপে হাসছি।
কারন আমার কাছে মনে হচ্ছে এই মেয়ে পাগল হয়ে গেছে।
কারন ফারহান ভাইয়ার অলরেডি গার্লফেন্ড আছে।
আনিকা কথা বলাতে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
ফারহান ভাইয়া বলল
– তো সুইট কিউট আনিকা ফারাবি হঠাৎ কেন তোমাকে নাম্বার টা দিলো।

আনিকা খুশিতে এতোই আত্মহারা হয়ে পড়েছে যে সমস্ত টাই বলে দিল।

ওপাশ থেকে ফারহান ভাইয়া কিছু না বলাতে।
আনিকা বলা শুরু করলো
– তো ফাইনালি বুঝতে পেরেছেন এই বাজে মেয়ে আপনাকে এত কম গুরুত্ব দেয়।আর এই কয়েকদিনের মধ্যেই আপনাকে স্যার না বলে ভাইয়া বলা শুরু করেছে।
কি আজবব

ওপাশ থেকে ফারহান ভাইয়ার হাসি শুনতে পেলাম।
ফারহান ভাইয়া বলল
– ইউ নো আনিকা , তোমার মতো গাধা খুব কম আছে।

আমি জানতাম ফারাবি ই গাধা, এখন দেখি তুমি তার
থেকে হাজার গুন বেশি গাধা আর সবথেকে বড় বিষয় গাঁয়ে পড়া।

আনিকা র মুখ টা তখন দেখার মতো ছিলো।
আমি কিছু বললাম না আর।
ফারহান ভাইয়া আবার বলা শুরু করলো
– ওওও আমাকে আজ থেকে নয় আরো 15 বছর আগে থেকে ভাইয়া বলে।
ওকে কোলে নিয়ে কতো ঘুরেছি , আর ইউ নো তোমার মতো মেয়ে কে দেখলেই অসহ্য লাগে।
আর হ্যা ফারাবি কে জিজ্ঞাসা করো কিছুদিন আগে ও কোলে নিয়েছি।
ওর সম্পূর্ণ অধিকার আছে , আর ও তোমার মতো গায়ে পড়া না।
তারপর বেশ কিছু বুলি ঝেরে ফারহান ভাইয়া কল কেটে দিলেন।

আনিকা র ফেস ছিলো অমাবস্যার চাঁদের মতো।
আমি আনিকা কে বললাম
– শুনতে পেয়েছিস, ওনি আমার আব্বুর বন্ধুর ছেলে।
সেই ছোট থেকে আমরা সবাই কে চিনি।
সো কারো সম্পর্কে না জেনে কথা বলবি না।
আর আমি কাউ কে হাত করতে চাই না তোর মতো।
যত্তসব

এই বলে চলে আসলাম।
স্কুল থেকে বেরিয়ে একটা ড্রাক চকলেট কিনে রিকশা তে উঠে বাসায় চলে আসলাম।

বাসায় এসে সাওয়ার নিতে বাথরুমে চলে আসলাম।
সাওয়ার শেষে ট্রাওয়াল দিয়ে চুল পেঁচিয়ে লান্স করে নিলাম।
লান্স শেষ করে বই হাতে ছাদে চলে আসলাম।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল কিন্তু ফারহান ভাইয়া আসছেন না।
আজকে কি অনলাইন ক্লাস নেই।
এসব ভাবনা ছেড়ে রুমে চলে আসলাম।
কিছুক্ষণ রেস্ট করে আবার বইয়ের পাতায় ডুবে গেলাম।
এভাবেই সন্ধ্যা হয়ে গেল।
সন্ধ্যার নাস্তা রুমে ই নিয়ে আসলাম।
এক টুকরো মুখে দিতেই কোথায় থেকে ফারহান ভাইয়া আর রিফাত ভাইয়া উদয় হলেন।
আমি মুখে খাবার চিবোতে চিবোতে বললাম
– কি হয়েছে?

রিফাত ভাইয়া একটা প্যাক দিয়ে বললেন রাত 10 টার সময় রেডি হতে।
আমি ব্রু কুঁচকে বললাম
– এতো রাতে ?

ফারহান ভাইয়া বললেন
– গাঁধা আজকে থার্টি ফাস্ট নাইট আর রাত 12 টার পর নিউ ইয়ার।
সো সবাই বের হবো।
আমি মাথা চুলকোতে চুলকোতে বললাম।
আসলে মনেই ছিলো না।

রিফাত ভাইয়া হেসে বলল
– গাঁধা।
আমি আর কিছু বললাম না।

রাতে রিফাত ভাইয়াদের কথা মতো প্যাক খুলে ড্রেস বের করে নিলাম।
একটা স্কাই ব্লু কালারের লং গ্রাউন একদম সিম্পল, তেমন কোনো ডিজাইন নেই।
কিন্তু বেশ ইউনিক লাগছে।
চুলে সুন্দর ডিজাইন করে খোপা করে নিলাম।
তারপর ফুল দিয়ে তৈরি ব্যান পড়ে নিলাম আর সাথে হালকা করে সেজে নিলাম।
আমাদের বাসা থেকে একটু দূরে স্টেডিয়ামের মাঠে বিশাল বড় অনুষ্ঠান হবে।
তাই বাসার সবাই যেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলাম।
ওখান থেকে হালকা নাস্তা করলাম।
স্টেডিয়াম টা অপূর্ব ভাবে সাজানো হয়েছে।
বিভিন্ন নাচ গানের মাধ্যমে থার্টি ফাস্ট নাইট সেলিব্রেশন চললো।
বেশ মজা লাগছে, সবাই মিলে হৈ হুল্লর করলাম।
কিছুক্ষণ পর বলা হলো নিউ ইয়ার এর আর দুই মিনিট বাকি।
সবাই হাতে ফানুস নিয়ে দাঁড়ালাম তারপর একযোগে কাউন্ট করা শুরু করলাম।
10
9
8
7
6
5
4
3
2
1
আর সাথে সাথে চারদিক থেকে বাজি উঠে গেল।
আকাশে বিভিন্ন ধরনের আকৃতি হচ্ছে আর আমরা সবাই এক যোগে ফানুস উড়ানে শুরু করলাম।
সবাই হৈ হুল্লর করতে করতে হ্যাপি নিউ ইয়ার সেলিব্রেশন করলাম।
এভাবেই হাজারো খুনসুটি আর ব্যস্ততাতে কেটে গেল একটি মাস।
অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত দিন ও এসে পড়লো।
এস এস সি এক্সাম, পিপারেশন যথেষ্ট ভালো হলে ও টেনশনের কমতি নেই।
পরীক্ষা চলাকালীন বেশ পরিশ্রম করেছি।
কারন আমার প্রমিস আমাকে রাখতেই হবে।

________________________________

📌.

এই গল্প শেষ হলে বেশ কয়েকটা অনুগল্প পোস্ট করবো।
অনুগল্প গুলো লেখা আছে।
আর তারপর নতুন গল্প শুরু করবো।
নতুন গল্পের নাম হলো

✨ বান্ধবীর ভাই যখন বর ✨

এই গল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তী পার্ট এ করবো।

( আসসালামুআলাই রির্ডাস । সবাই কে অসংখ্য ধন্যবাদ এভাবে পাশে থাকার জন্য।
লেখা শেষ হওয়ায় আরেকটি পার্ট দিয়ে দিলাম।
আশা করি ভালো লাগবে ।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক আর
ফলো দিয়ে পাশে থাকুন )

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

💜 হ্যাপি রিডিং 💜

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here