সুখ_একটি_প্রজাপতি (২৪)

0
103

#সুখ_একটি_প্রজাপতি (২৪)

অভিনবকে কল করে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল ঝিল। ওপাশ থেকে ভেতরে ভেতরে ব্যস্ত হয়ে পড়ল অভিনব। তবে বাইরেটা স্থির। ঝিল কান্নারত অবস্থাতেই বার বার বলছে, “আমি সেক্রিফাইজ করতে পারব না অভিনব। আমি পারব না হারাতে। সবকিছু চাই আমার। আমি কখনোই অপশনের মুখে পড়তে চাই না। আমি ম রে যাব তাহলে। আমি ম রে যাব। সত্যিই ম রে যাব।”

ঝিলের কান্না যেন আজ বাঁধ ভেঙেছে। এত এত কষ্ট হচ্ছে ওর। হৃদয়ের মধ্যভাগ যেন আজ উজাড় করে দিয়েছে কষ্ট নামক অনুভূতির সবটুকু। এত অনুভূতি আসলেই ভালো নয়। ওর কান্না ভেজা কণ্ঠটা নিশ্চয়ই অভিনবর চিত্ত কাঁপিয়ে তুলছে। তবু সে ধীর স্থির অনড়।
“কাঁদছেন কেন প্রজাপতি?”

কারো কণ্ঠে এত ভালোবাসা থাকতে পারে? অভিনবর কণ্ঠটা এই মুহূর্তে ঝিলের জন্য স্বর্গীয় সুখ। ছেলেটার বাহুডোরে নিজেকে মেলে ধরতে পারলে বোধহয় ভালো লাগত। অভিনব পুনরায় বলল, “পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন আমায় ছাড়বেন না প্রজাপতি। আমায় ছেড়ে দিলে পুনরায় ফিরে পাওয়া কঠিন হয়ে উঠবে।”

ধক করে উঠে ঝিলের বুক। অভিনবর কণ্ঠটা আজ এমন কেন? ওর গলায় একটা তেতো তরল এসে ঠেকে। অভিনবর মুখটা ভেসে উঠে দু চোখে। হারিয়ে ফেলার ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে রয়।
“প্রজাপতি, শুনছেন আমার কথা?”

“হুম।”

“এখনো কান্না করবেন?”

“উঁহু।”

“গুড। একটা কথা প্লিজ স্মরণে রাখবেন। আমরা চাইলেই সব হবে না। সময় কে সময় দিতে হবে। তবেই না পরিস্থিতি সুন্দর হবে।”

“আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না। ভয় হচ্ছে খুব। মনে হচ্ছে আমি হারিয়ে ফেলব।”

“ভালোবাসেন তাই ভয় হয়। একই ভাবে আমার আপনার পরিবার ও আমাদের ভালোবাসে। তাই ভীষণ ভয় পায়। দু পরিবার একে অপরকে ক্ষতিকর ভেষজ মনে করছে। তাই তো একে অপরের থেকে লুকানোর প্রচেষ্টায়। অথচ এক কালে এদের সম্পর্কটা খুব সুন্দর ছিল।”

সবগুলো কথা মনোযোগ দিয়ে শুনল ঝিল। এবার ওর মনে কিছুটা শক্তি এসেছে। ভালো লাগছে এখন। অভিনব ওকে সাহস দিতে পুনরায় বলল, “পরিস্থিতি যেমনই হোক, যেভাবেই হোক না কেন, আমাদের তো বিয়ে হয়েছে ঝিল। আমরা একে অপরের জন্য সর্ব উৎকৃষ্ট। যেখানে প্রেম আছে, মনের মিল আছে। একে অপরকে হারানোর ভয় আছে সেখানে আদৌ কি বিচ্ছেদ হয়? এটা কি সম্ভব প্রজাপতি। কখনোই সম্ভব নয়। মনে রাখবেন শারীরিক বিচ্ছেদ কেবল একটা গণনযোগ্য দূরত্ব।”

এবার ঝিলের মন ভালো হতে শুরু করেছে। ভেতর থেকে স্বস্তি আসছে। মেয়েটি বলল,
“একটা কথা বলবেন অভিনব।”

ওর কণ্ঠটা পেয়ে হাসল অভিনব। চারপাশ থেকে মৃদু সমীরণ এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে শরীর।
“বলেন প্রজাপতি।”

এই প্রজাপতি শব্দটা ঝিলের অন্তরে কেমন কম্পন ধরিয়ে দেয়। শ্বাস হয় ভারী। অদৃশ্য এক শান্তিতে পুলকিত হয় বুক।
“প্রশ্ন করলেন না তো ঝিল। কোন রাজ্যে হারালেন?”

“আচ্ছা, আপনি আমায় কেন প্রজাপতি ডাকেন?”

শব্দ করে হেসে ফেলল অভিনব। ঝিল এবার কিছুটা লজ্জা পেয়েছে। কল রাখতে চাইলেই অভিনব বলে, “লজ্জা পাবেন না প্রজাপতি।”

“উহু লজ্জা কেন পাব।”

“তাহলে ঠিক আছে।”

“হুম। রাখছি আজ।”

“সেকি, শুনবেন না?”

“কি শুনব?”

পাল্টা প্রশ্ন করে ঝিল যেন কিছুটা বোকা বনে গেল। আমতা আমতা করে বলল, “না মানে, মানে হচ্ছে।”

“মানে মানে করছেন কেন? আপনি কি ভয় পাচ্ছেন।”

“না।”

“তাহলে।”

“জানি না। ধ্যাত, আপনি ইচ্ছে করে এমনটা করলেন।”

“কেমন করলাম?”

“উফ। প্লিজ থামেন তো।”

“না থামব না।”

“তাহলে বসে থাকেন।”

“বসে ও থাকব না।”

“তাহলে কি করবেন?”

“ভালোবাসব।”

কেমন একটা অনুভূতি হলো ঝিলের। মেয়েটি এবার কথা বলল না। অভিনবর কণ্ঠের স্বরটা এবার শীতল হয়ে এল।
“নিচে নেমে আসবেন প্রজাপতি? ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে।”

“কেন? আপনি এসেছেন নাকি।”

“হুম। নামতে পারবেন?”

“মজা করছেন?”

“একদম ই না।”

ঝিল এবার হেসে ফেলল। অভিনব বল‍ল, “সত্যিই এসেছি প্রজাপতি।”

অভিনবর রসিকতা বুঝতে পেরে বিশ্বাস না হওয়া স্বরে ঝিল বলল,
“এসেছেন যখন তো উপরে উঠে আসুন। আপনি তো আগে উঠে আসতেনই। ইনফেক্ট বারান্দা খোলাও আছে।”

“আপনার কি মনে হয় আমি দেয়াল বেয়ে বারান্দা দিয়ে আসতাম?”

“কেন। বারান্দা দিয়েই তো যেতেন আপনি।”

“যেতাম তবে আসতাম না।”

ঝিল যেন কিছু বুঝতে পারছে না। অভিনব বলল, “আপনার বাড়ির গার্ডকে টাকা খাইয়ে বাড়ির ভেতরে মেডিসিন ছড়িয়ে সবাইকে ঘুমন্ত করতাম। তারপর ভেতরে চলে আসতাম। বারান্দার দরজা খুলে রাখতাম। যাতে আপনি ভাবেন আমি বারান্দা দিয়ে এসেছি। যাওয়ার সময় বারান্দা দিয়ে নেমে যেতাম। নামা যতটা সহজ উঠা ততটাই কঠিন।”

“এমন কেন করতেন?”

“স্পেশাল ফিল করানোর জন্য। সিনেমার নায়কদের মতো প্রেমিক এসে দেয়াল বেয়ে প্রেমিকার সাথে দেখা করবে এটা সব মেয়েরই স্বপ্ন।”

“কচু।”

“কেন? সত্যি না। আপনি কিছু অনুভব করেন নি?”

“অনুভব করি নি তেমন নয়। তবে এই যুক্তিটা ভীষণ অদ্ভুত।”

“তাই?”

“হুম। আর এসব গল্প কে বলেছে আপনাকে?”

“তরুণ বলেছিল। ভার্সিটিতে থাকাকালীন বাংলাদেশের মেয়েদের মন নিয়ে আমাদের বন্ধুদের বলত এসব।”

অভিনব ও তার বন্ধুমহলের বোকামি শুনে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাচ্ছে ঝিলের। মেয়েটির এমন হাসি অভিনবর ভালো লাগে। ইচ্ছে হয় আরেকটু শুনতে।
“বলদ হয়েছে আপনারা। এগুলো সব গুল। তবে কারো কারো এমন অনুভূতি থাকতেও পারে। আমি এসবের ধারে নেই। আমার মন বলে শুধু মনের কথা। সিনেমার গল্প তো সিনেমাতেই সুন্দর।”

“এই জন্যেই তো এত ভালোবাসি ঝিল। আপনি আমার প্রজাপতি। যাকে নিজের করতে হলে প্রজাপতির মতো কষ্ট করতে হবে। জানেন তো প্রজাপতির ডিম থেকে প্রথমে একটি শুঁয়োপোকা বের হয় তারপর ধীরে ধীরে সেটা থেকে তৈরি হয় প্রজাপতি। ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের জীবনের সুখ একটি প্রজাপতি। প্রথমেই ফল পাওয়া যায় না ধীরে ধীরে আসে আমার মাঝে। আপনি আমার কাছে তেমনি ঝিল। তাই আপনাকে প্রজাপতি বলে ডাকি। আমি জানি আপনি হবেন আমার। তবে এর মাঝে অনেকটা সময় দিতে হবে। সুখের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ঝিল। ভালোবাসি আপনাকে। আপনি কখনো পথচ্যুত হবেন না প্রজাপতি।”

ঝিলের বুক ভারী হয়ে এল। নিশ্বাস গুলো কেমন দাপাদাপি করছে। অভিনবর বুকে ঝাপিয়ে পড়তে ইচ্ছে হয়। তবে সব চাওয়া তো আর সম্ভব নয়। ওর কণ্ঠটা কিছু বলার পূর্বেই পেছন কেউ এসে দাঁড়ায়। অবয়বটা দেখে ঝিলের চিত্ত কেঁপে উঠে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটা ওকে বেশ নড়বড়ে করে দেয়।

**পা মচকে ফেলেছি। গল্পের পর্ব ছোট বলে অভিযোগ না করার অনুরোধ।**

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here