#সুখ_একটি_প্রজাপতি (৩১)
সকালের নরম রোদ ঝিলের চোখ মুখে লাগতেই এক চিলতে হাসির উদয় হলো। অভিনব জানালার পর্দা সরিয়ে দিয়েছে। গায়ে পাতলা ফিনফিনে একটা গেঞ্জি। সারারাত রুমে হিটার চালানো থাকে। সেই সুবাদে রুম উষ্ণ। দারুণ এক মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে এসে লাগছে। বুক ভরে শ্বাস নিল ঝিল। হাত দুটো মেলে দিয়ে ঘুম ভাঙল। অভিনবর ঠোঁট জুড়ে হাসি। কি মোহনীয় লাগছে মেয়েটিকে। নাকের দিকটায় হাল্কা তেল জমে আছে। অভিনব নিজ হাতে মুছে দিল।
“শুপ্রভাত প্রজাপতি।”
“শুপ্রভাত। আজকের দিনটা বেশ সুন্দর তাই না?”
“হুম। তোমার মতো।”
“উহু তোমার মতো।”
“আচ্ছা আমাদের মতো।”
“হুম।” বলেই অভিনবর গলা জড়িয়ে ধরল ঝিল। আদুরে হাতে মেয়েটির পিঠে হাত বুলায় ছেলেটা। ধীরে ধীরে কানের কাছে মুখ এগিয়ে নেয়। সুরসুরি লাগছে বিধায় ঝিল নড়েচড়ে উঠে।
“এই এই কাছে আসবা না। সারাক্ষণ শুধু জ্বালাতন।”
“তোমায় জ্বালাতে আমার ভালো লাগে।”
“সকাল সকাল শুরু হয়ে গেছে। ছাড়ো এখন।”
“না আরেকটু থাকতে দাও প্লিজ।”
ঝিল নিশ্চুপ হয়ে উঠল। থেকে থেকে অভিনব তার উষ্ণ ঠোঁটের দ্বারা আ ক্র মণ করে যাচ্ছে। এত ভালো লাগছে ঝিলের। এই ছেলেটা ওর জীবনকে কতভাবে রাঙিয়ে দিচ্ছে। তবু একটা শূন্যতা কোথাও রয়ে গেছে।
কলিং এর শব্দে ঝিলকে ছাড়ল অভিনব। ঝিল উঠে এসে অভিনবর চুল গুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে। মেয়েটি অভিনবর তুলনায় খাটো বিধায় কিছুটা উঁচু হতে হলো। অভিনব বিষয়টা দেখতে পেয়ে স্মিত হাসল। তারপর কোমর চেপে ধরে উঁচু করল। ঝিল ইচ্ছে মতো চুল এলোমেলো করে দিচ্ছে। অন্যদিকে কলিং চেপে অস্থির হয়ে যাচ্ছে এমি। ঝিল নামতে চাইলে অভিনব বিরক্তি প্রকাশ করল।
“এমি’র আসার জন্য এই সময়টাই ছিল।”
“ও কি করে জানবে, তুমি এই অসময়ে রোমান্স করবে।”
“তাও ঠিক।”
“ছাড়ো এখন।”
“হুম।”
ঝিল দরজা খুলে দিল। এমি ঝিলকে দেখে একবার হাসল। ঝিলের এলোমেলো টিশার্ট আর অভিনবর গলায় নখের দাগ ওর নজর এড়ায় নি। সেই জন্যেই হাসছে সে। এদিকে ঝিল ঘুরে বেড়াচ্ছে। রান্না ঘরে প্রবেশ মাত্রই লজ্জা দিল এমি।
“শাওয়ার নেও নি কেন অনা?”
একি লজ্জা! ঝিল তখুনি সরে এল। ওর লাল হয়ে যাওয়া মুখের পানে তাকিয়ে অভিনব বলল, “কি হয়েছে! এত ব্লাস করছো কেন?”
“বলতে পারব না।”
ঝিল মুখ ঢেকে চলে গেল। বোকা বনে গেল অভিনব। ঝিল শাওয়ার শেষে নাস্তার টেবিলে বসল। এমি নিজেও বসেছে ওদের সাথে। কথায় কথায় অভিনব বলল, “এক সপ্তাহ তোমার ছুটি এমি।”
“দুদিনের জন্য ছুটির কথা ছিল। হঠাৎ এক সপ্তাহ!”
“উইনিপেগ যাচ্ছি।”
“ও আচ্ছা। কবে যাচ্ছ তোমরা?”
ঝিল একটা স্যান্ডউইচ এ কামড় বসিয়ে বলল, “আজকেই।”
“শুভ কামনা অনা। উইস আ হ্যাপি এন্ড সেফ জার্নি।”
“ধন্যবাদ এমি।”
রাতের ফ্লাইটে উইপেগ চলে এল ঝিল আর অভিনব। প্ল্যাকার্ড হাতে অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে। ড্যানিয়াল আগেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। সেই হিসেব অনুযায়ী ওদের রিসিভ করতে একজনের আসার কথা। অভিনব চার পাশে চোখ বুলিয়ে শক্ত করে ঝিলের হাতটা ধরল। এমন ভাবে ধরে রেখেছে যেন দু বছরের বাচ্চা। এত যত্নে ভালো লাগল ঝিলের। ছেলেটার ফর্সা হাতটা চেপে ধরে চলতে লাগল। কিছুদূর যেতেই প্ল্যাকার্ড হাতে একটা লোক দেখতে পেল। অভিনব লোকটার সাথে কুশলাদি বিনিময় করল। গাড়িতে থাকাকালীন সময়ে ঝিল একদমই চুপ রইল। জানালা দিয়ে হা হয়ে দেখছে বাইরের শহর। ঝকঝকে তকতকে শহরের পানে তাকিয়ে ওর মন খারাপ হলো খুব। আমরা চাইলেও আমাদের মাতৃভূমি এতটা পরিষ্কার করতে পারব না। তবে অনেকটা ঝকঝকে করা সম্ভব। কিন্তু সেসব কেবল ভাবনা। একটা হাহাকার ডিঙিয়ে উইনিপেগের সৌন্দর্য দেখতে লাগল ঝিল। ম্যাপল গাছের পানে তাকিয়ে চোখ দুটো জুড়িয়ে আসছে। কানাডার সব সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে এই ম্যাপল পাতাতে। সোজা রাস্তার চারপাশে সোনালি গাছ গুলো দারুণ লাগছে। ঝিল হা হয়ে তাকিয়ে। অভিনব ওর দিকে তাকিয়ে হাসল। মেয়েটির মুগ্ধতার সীমা নেই। খানিক বাদে একটা প্যালেসের সামনে এসে গাড়ি থামল। অভিনব ঝিলের দৃষ্টি আঁচ করে বলল, “এই প্যালেসেই বিশাল আয়োজনে ক্রিশমাস এর আয়োজন করা হয় প্রতি বছর।”
“আচ্ছা। এটা খুব সুন্দর।”
ভেতরে যেতে ঝিলকে কিছু সাবধানতার বানী শুনালো অভিনব। কোন খাবার খাওয়া যাব সেসব নিয়ে ধারণা দিল। প্যালেসের বিশাল বাগান ডিঙিয়ে যাওয়ার পথে ঝিল কিছু ছবি তুলল। এত সুন্দর কেন সব?
একটা সাদা গ্রাউন পরা মেয়ে ছুটে এসে ঝিলকে জড়িয়ে ধরল। হঠাৎ এমন করায় ঝিল চমকে উঠেছে। অভিনব চোখের ইশারায় স্বাভাবিক হতে বলল। মেয়েটি স্পষ্ট ইংলিশে বলল, “অসাধারণ। তোমাকে দেখে ভালো লাগছে।”
“ধন্যবাদ।”
ঝিল খুব স্বল্পবাক্য ব্যয় করছে। বস্তুত সে অস্বস্তি বোধ করছে। কথায় কথায় জানতে পারল এই মেয়েটির নাম অলিভিয়া। সে ড্যানিয়ালের ফিয়ন্সে। খুব দ্রুতই তারা বিয়ে করবে।
“হেই অভিনব।”
ড্যানিয়ালকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এল অভিনব। দুজনের বন্ধুত্বের কথা জানত ঝিল। তবে এতটা মধুর সেটা বুঝে নি। অলিভিয়া ঝিলকে সাথে নিয়ে হাঁটতে লাগল। একবার পেছনে তাকাল মেয়েটি। চোখের ইশারায় সম্মতি দিল অভিনব।
“তুমি ছবির থেকেও বেশি সুন্দর অনা।”
“ধন্যবাদ। আর তুমি খুব ভালো।”
“হা,হা। এমন কেন মনে হলো?”
“পরিচয় ছিল না আমাদের। অথচ কত সুন্দর মিশে গেলে।”
“তাহলে তুমি দ্বিগুণ ভালো।”
শব্দ করে হাসল ঝিল। অলিভিয়া ওকে প্যালেসের ভেতর নিয়ে এসেছে। একটা জুসের গ্লাস দিতেই নাকোচ করল ঝিল।
“খেতে পারো এটা। ম্যাপল সিরাপ,নো অ্যালকোহল।”
বিনয়ের সাথে হেসে গ্লাস নিল ঝিল। চুমুক দিতেই বুঝতে পারল এটা খুব মিষ্টি। খেতে খারাপ নয়। অলিভিয়া নিজেও পাশে বসেছে। চারপাশ রঙিন আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। আর্টিফিশিয়াল ফুলের পাশাপাশি রয়েছে আসল ফুল ও। চোখ জোড়ানো দৃশ্যের মাঝেও ঝিলের চোখ আটকে গেল অভিনবর মনচোরা হাসিতে। ছেলেটা কিছু একটা নিয়ে হেসে যাচ্ছে। অলিভিয়া সেটা লক্ষ্য করে মৃদু হাসল।
“খুব ভালোবাসো?”
“হুম।”
“তোমাদের লাভ স্টোরি শোনাবে তো?”
“নিশ্চয়ই।”
অলিভিয়া তার পরিচিত কিছু মেয়ের সাথে ঝিলের পরিচয় করিয়ে দিল। অনেক রাত্রি বিধায় বেশি সময় গল্প হলো না ওদের। ঝিল ক্লান্ত। অভিনব দু হাতে আগলে নিল ওকে। অগোচরে ঠোঁটে স্পর্শ করে বলল, “কোনো অসুবিধা হলে সোজা আমায় বলবে।”
“হুম।”
“ডিনার করবে না?”
“না। পেট ভরে গেছে। ম্যাপল সিরাপটা মজা ছিল।”
“আর চুমু?”
“সেটা আরও বেশি মজা ছিল।”
ঠোঁট টিপে হাসল অভিনব। রুমে এসে ফ্রেস হলো ওরা। কিছু তাজা ফুল রাখা হয়েছে ঘরে। অভিনব সেটাতে হাত বুলাতে বুলাতে সুর তুলল,
“এই রাত তোমার আমার,
ঐ চাঁদ তোমার আমার।
শুধু দুজনের….
এই রাত শুধু যে গানের।”
চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি
ইনশাআল্লাহ আগামীকাল তথা ২১ ফেব্রুয়ারি আমি থাকছি ঢাকার বইমেলায় নবকথন প্রকাশনীর স্টল নং ৫৮১ তে। সম্ভাব্য সময় ২’৩০-৩’৩০। যদি কেউ আসেন তো পাঠক বলে পরিচয় দিলেই হবে।💜