স্বপ্নের প্রেয়সী 💖 Extra part 42

0
221

💖 স্বপ্নের প্রেয়সী 💖
Extra part
42
_______________________

ক্যাফের একটা টেবিলে রিমি বসে আছে।
আর তার পাশেই বসে আছেন ফাহিম ভাইয়া।
ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে কাঁপছিল।
রিমি রে দেখা করার জন্য আর কোনো ক্যাফে পেলি না।
আজকে তো তোর বজ্জাত হনুমান ভাই আমাকে আর তোকে উগান্ডায় পাঠিয়েই ছাড়বে।
আমাকে এভাবে কাঁপতে দেখে ফারহান ভাইয়া বললেন
– কি হয়েছে ?
এভাবে কাঁপছিস কেন ?

আমি ভয়ে কিছুই বলতে পারলাম না।
ফারহান ভাইয়া আমার বাহু ধরে বললেন
– আর ইউ ওকে ?

আমি শুধু মাথা ঝাকালাম, তারপর আবার তুতলিয়ে বলা শুরু করলাম
– নাহহ নাহহ আমারর একদদম ই ভালো লাগছে না।
আপনি আমাকে নিয়ে বাসায় চলুন।
ফারহান ভাইয়া আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে বললেন
– আরে এতো ভয় পাচ্ছি স কেন ?
চল ভেতরে যাওয়া যাক।

👇
( ফারহানের এতো সব কান্ডে ও কেন ফারাবি বুঝতে পারে না ফারহানের অনুভূতি?

কতো বার বলেছি আমি আমার জানা নেই তবু ও আমার পাঠক দের এই মন্তব্য চলেই আসে।
আমি আবার বলছি ,,,,, ছোট থেকেই ফারহান কে ভয় পায় ফারাবি।
সেখানে ফারহান যদি মুখ ফুটে নাই বলে সে ভালোবাসে তো ফারাবি বুঝবে কি করে ? যদি ও ফারহানের আচারন প্রেমিক এর মতোই ছিল।
ধরুন ফারাবি বুঝতে পারলো ,,,,, কিন্তু ফারাবি কি ফারহান কে গিয়ে বলবে আপনি আমাকে ভালোবাসেন কি না ?
যেখানে সব থেকে বেশি ভয় ফারহান কেই পায় ?
এখানে ফারাবির ন্যাকামো প্রকাশ পায় নি পেয়েছে ভয় ।যার কারনে মাথায় আসে নি ফারহান ওকে ভালোবাসতে পারে।
আশা করি এই বার সবাই বুঝতে পারবেন।)

ফারহান ভাইয়া আমার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেলেন।
রিসিপশন থেকে কফি অর্ডার দিয়ে দিলেন।
আর আমি রিমি দের দিকে তাকিয়ে আছি , কিন্তু রিমি তো তাকাচ্ছে ই না।
উফফফ এই মেয়েটা আজকে ডুবিয়ে ই ছাড়বে।

ফারহান ভাইয়া আমাকে আলতো হাতে জড়িয়ে বললেন
– এতো ভয় পেয়ে লাভ নেই।
যা হবার তা হবেই

এই বলেই রিসেপশনে কথা বলতে লাগলেন।

ওনার কথার মানে আমি বুঝলাম না।
এই মূহুর্তে বুঝার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে ও নেই।
আমি রিমির দিকে ব্যস্ত, যদি একবার তাকায় , তো বেঁচে যাই।
কিন্তু এই মেয়েটা তাকাচ্ছে ই না।
ফারহান ভাইয়া রিশিপশন থেকে কথা বলে আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলেন।
যা ভয় ছিল, সব এখন বাস্তবে পরিনত হচ্ছে ।
ফারহান ভাইয়া আমার হাত ধরে সোজা রিমি দের টেবিলে নিয়ে গেলেন।
আমি তো এখন পারছি না শুধু , এই প্লাবিক প্লেস এ কান্না করতে।
রিমি আমাদের দেখেই উঠে দাঁড়ালো, বেচারির মুখটা দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম ভয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে।
ফাহিম ভাইয়া ও উঠে দাঁড়ালো।
ভাইয়া যথেষ্ট নম্র, ভদ্র, ফারহান ভাইয়া কে ওনি আগে থেকেই চিনতেন।
কিন্তু এই মুহূর্তে ফাহিম ভাইয়া ও কিছু বলতে পারছেন না।
হাজার হোক প্রেমিকার সাথে দেখা করতে এসে প্রেমিকার ভাইয়ের কাছে ধরা খেয়েছে।
ফারহান ভাইয়া আমাকে চেয়ার টেনে বসালেন, তারপর অন্যটিতে নিজে ও বসলেন।
কিছুক্ষণ এভাবেই কেটে গেল ।
ফারহান ভাইয়া নীরবতা ভেঙে বললেন
– তোমরা দাড়িয়ে আছো কেন ?
বসো

ওরা দুজন অপরাধীর মতো দু দিকে বসে পড়লো।
কিছুক্ষণ পর ওয়েটার এসে কফি দিয়ে গেলেন।
ফারহান ভাইয়া কফি কাপে চুমুক দিয়ে বললেন
– উমমম কেউ নিচ্ছো না কেন ?
ফারহান ভাইয়া আমায় ধমকে বললেন
– কফি টা নিতে বলেছি তো।
ওনার ধমকে আমরা কফি হাতে নিলাম।
ফারহান ভাইয়ার চোখ রাঙানিতে কফি কাপে একটি চুমুক ও দিয়ে নিলাম।
এই মূহুর্তে কফির স্বাদ আমার মনে পৌছাচ্ছে না।
ভয়ে তো পারি না শুধু কেঁদে দিতে।
কি ঝামেলা রে

এই ভয়ার্ত মূহুর্তে ও ফারহান ভাইয়া আমায় লজ্জায় ফেলতে দু বার ভাবলেন না।
আমার চুমুক দেওয়া কফি টা নিজে নিয়ে নিলেন।
আর ওনার টা আমায় দিলেন।
কি লজ্জাজনক পরিস্থিতি,
আর ওনি আয়েস করে কফি খেয়ে যাচ্ছেন।
ভয়ে , আর লজ্জা মিলে গরমিল হয়ে গেছে।
এই মূহুর্তে কি রিয়্যাকশন দেওয়া উচিত তা আমার ছোট্ট মস্তিষ্ক টা মেলাতে পারছে না।
ফারহান ভাইয়া একমনে কফি শেষ করে নিলেন। তারপর আমাদের সবার দিকে তাকিয়ে বললেন
– কি ব্যাপার কেউ কফি খাচ্ছে না কেন?
এটা ভালো না ?
চেন্সজ করে দিবো কি ?

আমি ভয়ে ঢোক গিললাম, ওনি এতো শান্ত ভাবে কথা বলছেন কেন।
এটা কি সমুদ্রের ঝড় তোলার আগে সেই নিস্তব্ধ পরিবেশ ?
এই মূহুর্তে আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না।
ফারহান ভাইয়া হাতে হাত গুঁজে ফাহিম ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বললেন
– তুমি আমাকে চেনো তো ?

ফাহিম ভাইয়া শান্ত ভাবে বললেন
– জি ভাইয়া আপনি রিমির ভাই।

ফারহান ভাইয়া মৃদু হাসলেন। তারপর বললেন
– তো রিমির সাথে তোমার রিলেশন কি ?

অতি সাধারন ভাবেই ফাহিম ভাইয়া উত্তর দিলেন
– আমি রিমি কে ভালোবাসি।
আর রিমি ও আমায় ভালোবাসেন।
এই মূহুর্তে রিমি আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড , এর বাইরে আপাতত কোনো রিলেশন নেই।
বাকিটা সবার ইচ্ছে অনুযায়ী হবে।

ফারহান ভাইয়া কিঞ্চিত হাসলেন।
তারপর বললেন
– তো তোমার সম্পর্কে সবটা বলো , একটু শুনে নিই।
দেখি আমার বোন কাকে ভালোবাসলো।

এই মূহুর্তে রিমির দিকে তাকাতেই দেখলাম, চোখ জোড়া ছলছল করছে।
ওর চোখ দেখেই বুঝে গেলাম, ও নিজেকে বিচ্ছেদ এর জন্য প্রস্তুত করতে চাইছে।
কিন্তু পারছে না , যার দরুন চোখ দুটো পানি তে পূর্ন হয়ে যাচ্ছে।

বিষয় টা দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে ।
কিন্তু এমতাবস্থায় আমার যে কিছুই করার নেই।
আমরা পরিস্থিতির স্বীকার, দেখা যাক কি হয়।

ফাহিম ভাইয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কোনো রকম ভনিতা না করেই সমস্ত টা বললেন।
উনি যে এতিম, কি ভাবে কি হয়েছে, ওনি কি করছেন এখন সমস্ত কিছু।

ফারহান ভাইয়ার মুখের অবস্থা দেখে ঠিক বুঝলাম না ওনি কি ভাবছেন।
বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো।
হঠাৎ করেই ফারহান ভাইয়া রিমি কে বলল
– চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি পড়লে ঠাপ্পর কিন্তু একটা ও মাটিতে পড়বে না।

আমরা কেউ অবাক হলাম না, কারন আমরা এটা এক প্রকার ভেবেই নিয়েছিলাম।
হয়তো ওদের বিচ্ছেদের জ্বালা সহ্য করতেই হবে।
রিমি কে দেখে আমার ই কান্না পাচ্ছে।
কোনো রকম কান্না চেপে রাখছি।
ফারহান ভাইয়া চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন।
সাথে আমরা ও উঠে দাঁড়ালাম।
ফারহান ভাইয়া ফাহিম ভাইয়া কে বললেন
– আজকেই যেন ওর চোখে শেষ পানি হয়।
নেক্সট যেন ওর চোখে পানি না দেখি।
তাহলে কিন্তু তোমার খবর আছে।

রিমি এবার আর চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না।
কান্না করতে করতে সোজা ফারহান ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরল।
আশে পাশের অনেক এই দেখছেন।
কিন্তু তাতে আমাদের কিছুই যায় আসে না।
ফারহান ভাইয়া রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
– ভাইয়া কে বোকা পেয়েছিস?
লুকিয়ে প্রেম করবি আর জানতে পারবো না।
আমি না চাইলে প্রেম তো দূরে থাক কখনো দেখা ও করতে পারতি না।
এখন শোন একটু ও কাঁদবি না ,তাহলে কিন্তু রেগে যাবো আর তোদের দুজন কে আলাদা করে দিবো।

ফারহান ভাইয়ার এমন কথায় আমরা সবাই হেসে দিলাম।
রিমি চোখের পানি মুছে বলল
– লাভ ইউ ভাইয়া।
ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন
– এখন ভাইয়াকে লাভ ইউ বললে হবে, এখন তো অন্য একজন কে লাভ ইউ বলতে হবে।
ফারহান ভাইয়ার কথায় রিমি বেশ লজ্জা পেল।
ফারহান ভাইয়া ফাহিম ভাইয়া কে বললেন
– ফাহিম তুমি আমার দু ব্যাচ জুনিয়র ।
আমি তোমাকে তুমি টুমি বলতে পারছি না।
আমি তো তুই করে বলবো।
আর হ্যাঁ তুই ও আমাকে আপনি করে বলতে পারবি না।
তুমি করে বলতে হবে।

ফাহিম ভাইয়া হেসে বললেন
– ঠ্যাংস ভাইয়া।

ফারহান ভাইয়া ব্রু কুঁচকে বললেন
– উহুহমম নো ঠ্যাংস।

এই বলেই ফাহিম ভাইয়া কে জড়িয়ে নিলেন।
এই মূহুর্তে কতো টা যে শান্তি অনুভব করছি তা বলে বোঝানো যাবে না।
রিমির চোখ মুখে অজ্রস খুশির ঝিলিক।
ফারহান ভাইয়া ফাহিম ভাইয়া কে ছেড়ে বললেন
– কালকে সকাল এ বাসায় চলে আসবি আম্মু আব্বুর সাথে কথা বলবো ।
সন্ধ্যার আগেই রিমি কে ড্রপ করে দিস।
আর এখন আমরা যাচ্ছি, কাবাব মে হাড্ডিয়া হতে চাই না আর।

ফারহান ভাইয়ার কথায় ওরা লজ্জা পেলো।
তারপর ওদের বিদায় জানিয়ে চলে আসলাম।
ফারহান ভাইয়া গাড়ি ড্রাইভ করছেন, কিছুক্ষণ ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
এই মানুষটা সত্যিই খুব অদ্ভুত, সমস্ত কিছু কি সুন্দর করে সামলে নেন।
আসলেই আমি খুব ভাগ্যবতী, ওনাকে আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবো।
ইসসস আরো আগে কেন ওনার ভালোবাসা বুঝলাম না।
কতো সুন্দর মূহুর্ত মিস হয়ে গেল।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে বললেন
– এতো কি ভাবছিস ?

আমি চমকে বললাম
– তেমন কিছু না।
ফারহান ভাইয়া ব্রু কুঁচকে বললেন
– সত্যি?

আমি মুচকি হেসে বললাম
– হুমম।
আচ্ছা আপনি জানতেন ওদের কথা?
ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন
– তোর কি মনে হয় ।
আমি অস্ট্রেলিয়া তে চলে যাবো আর তোদের খবর রাখবো না।
এতো টা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন নই আমি।

আমি মুখ গোমড়া করে বললাম
– আমি কি বলেছি না কি ?
ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন
– আহা মন খারাপ করে না।
তুই এতো পিচ্ছি কেন বল তো ?
বিয়ের পর ও না জানি কতো বছর আমায় উপশ করে থাকতে হবে।

আমি লজ্জা পেয়ে বললাম
– ধ্যাত কি সব বলেন।
কোনো কিছুই বাধে না নাকি ?

ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে বললেন
– উহুমম বাঁধে নাই তো।
আর হ্যাঁ আমি কিন্তু ফাহিম এর বিষয়ে সেই প্রথম থেকেই সব জানতাম।

আমি অবাক হয়ে বললাম
– তাহলে আবার জিজ্ঞাসা করলেন কেন ?

ফারহান ভাইয়া ড্রাইভিং করতে করতেই বললেন
– আমি দেখতে চেয়ে ছিলাম ওর কতোটুকু সৎ সাহস আছে।
আসলেই ছেলেটা বেশ ভালো, ভালোই হলো আমি আমার ছোট ভাই ও পেয়ে গেলাম।
ছোট সময়ে আম্মু আব্বুর কাছে বায়না করতাম
– ভাইয়ার ছোট ভাই আছে তাহলে আমার কেন ছোট ভাই নেই?

তখন আম্মু আব্বু হেসে বলতেন
– তোর ভাইয়ার তো বড় ভাই নেই।
কিন্তু তোর তো বড় ভাই আছে।

আমি বিষয় টা মাথায় খেলিয়ে ভাইয়া কে ভেঙ্চি কাটতাম।

ওনার কথাতে আমি মুচকি হাসলাম।
কতো সুন্দর করে সবাই কে আপন করে নেন।
উনি কতোটা স্নিগ্ধ তাই না, কেউ কি জানে এই শক্ত , রাগি মুখ নিয়ে থাকা, মানুষটার মাঝে ও এতো টা বাচ্চামো আছে।

আমি কিছু না ভেবেই বলে ফেললাম
– আপনি পুরোই বাচ্চা।

ফারহান ভাইয়া হেসে বললেন
– তাহলে তো এবার আমরা দুজন ই বাচ্চা হয়ে গেলাম।
আহা কবে যে বড় হবো আমরা ,আর আমাদের বাচ্চা হবে।

এই বলেই হাসতে লাগলেন।
আমি খানিকটা লজ্জা পেয়ে বললাম।
ধ্যাততত
__________________________

( আসসালামুআলাই রির্ডাস । এক্সট্রা পার্ট দেওয়ার একটি ই কারন ।
শুধু মাত্র তোমাদের জন্য ই ।
আশা করি ভালো লাগবে।
বেশি কিছু বলব না শুধু বলব এভাবেই সাপোর্ট করো।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক ,ফলো আর তোমাদের বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকো। )

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

💜 হ্যাপি রিডিং 💜

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here