স্বপ্নের_প্রেয়সী #ফাতেমা_তুজ #part_21

0
132

#স্বপ্নের_প্রেয়সী
#ফাতেমা_তুজ
#part_21

ফারাবি মুখ চেপে ধরে হাঁটু গেড়ে বসে পরেছে। কাঁদছে ওহহ , এমন ভাবে কাঁদছে যেন এই দিনটার জন্য ই কতো শত বছর অপেক্ষা করছিলো ওহহহ।
ফারহানের চোখে মুখে অসাধারণ খুশি। ফারাবির কান্নায় আজ ওর কষ্ট হচ্ছে না বরং খুব আনন্দ হচ্ছে ওর।
কারন আজ ফারাবির চোখের পানি ভালোবাসার জন্য।
ফারহান ফুল গুলো নিচে রেখে উঠে দাঁড়ালো ।
ফারাবির কাছে গিয়ে ফারাবি কে কোলে তুলে নিলো।
ফারাবি ঝাপটে ধরলো ফারহানের গলা।
এতো টাই শক্ত করে ধরেছে যে ফারহান খানিকটা ব্যথা ও পাচ্ছে।
ফারহান মৃদু হাসছে , ফারাবির অভিমান গুলো আজ চিরতরে বিদায় করবে ওহ।
কেন চলে গিয়েছিল ওকে ছেড়ে সব বলবে ওহ।
ফারাবির চোখের নোনা জ্বলে ফারহানের গলা ভিজে গেছে।
মেয়েটা মুখ লুকিয়ে কাঁদছে। ফারাবি কে কোলে নিয়ে একটা বোর্ট এ উঠে পরলো ফারহান।
বোর্ট টা ইঞ্জিন চালিত হলে ও এটাকে রিমোর্ট দিয়ে কন্ট্রোল করা যায়।
মিটার সেট করে দিলে একা একাই চলতে পারে এটা।
ফারাবি কে বোর্ট এর মাঝে বসিয়ে দিলো ফারহান ।
ফারাবি এখনো কেঁদে চলেছে। ফারহান আনমনে হেসে ফারাবির কোমর জড়িয়ে কোলে মাথা রাখলো।
ফারাবি কেঁপে উঠলে ও কান্না থামলো না।
ফারহান মৃদু হেসে ফারাবি কে সুরসুরি দিতে দিতে বলল
_ বউ কাঁদলে স্বামীর অকল্যাণ হয়।

ফারাবি কাঁদতে কাঁদতে ভ্রু কুঁচকালো।
ফারহান ইনোসেন্ট ফেস করে বলল
_ সত্যি বলছি।

ফারাবি কান্না থামানোর চেষ্টা করলো । কিন্তু ওর কান্না থামছে না। ফারাবি অসহায় মুখ নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল
_ আমি কান্না থামাতে পারছি না।

ফারহান এক গাল হাসলো। ফারাবি এমনি , যখন অতিরিক্ত পরিমানে খুশি হয়ে কাঁদে তখন কিছুতেই কান্না থামাতে পারে না।
আর তখন কাঁদতে কাঁদতে বলে আমি কান্না থামাতে পারছি না।
ফারাবির হেচকি উঠে গেছে। লাল শাড়ি টা এলোমেলো হয়ে গেছে। কিন্তু সেই দিকে ওর কোনো খেয়াল ই নেই।
ফারহান ঝরা হাসলো ফারাবির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলল
_ আমি থামিয়ে দিতে পারি , থামাবো ?

ফারাবি মাথা ঝাঁকালো । ফারহান মোহনীয় হেসে ফারাবির গলাতে ডিপলি চুমু খেলো।
ফারাবি হিচকি তুলতে তুলতে ভ্রু কুঁচকালো।
ফারহানের চোখে মুখে নেশা যাহহ ফারাবি কে ও নেশাক্ত করে তুলছে।
ফারাবি সামান্য ভরকে গেল। ফারহান কে সহ্য করা সত্যি ই খুব কঠিন।
ফারহানের স্পর্শ মাদকতার মতো কাজ করে।
তবে ফারহানের স্পর্শ গুলো সহ্য করা খুব বেশি ই কঠিন।
ফারহান লম্বা হাসলো , ফারাবি শাড়ি ভেদ করে ফারাবি কে জড়িয়ে কাছে টেনে নিলো।
ফারহান তার এক হাত ফারাবির চুলে গলিয়ে দিলো ফারাবির নাকে নাক লাগিয়ে বলল
_ বউ টা রাগ করে থাকতো । তিন টে বছর দূরে ছিলাম কেন জানিস ?
এই দেখ তোর কাছে এসে আমি পাগল হয়ে গেছি।
তোকে একটু ভালোবাসার জন্য মরিয়া হয়ে গেছি।
তোকে না দেখলে বুকের ভেতর যন্ত্রণা হয়।
তখন আমাকে দেখলে তুই প্রতি মুহুর্ত যন্ত্রণা পেতি। আমাকে দেখলেই ঘৃনা হতো। বার বার মনে হতো আমি তোকে জোড় করে বিয়ে করেছি।
আর আমাকে ভালোবাসতে পারতি না তুই।
আমি যে তখন আর ও বেশি মরে যেতাম।

ফারাবি শিউরে উঠলো। ফারহানের লাগামহীন ছোঁয়া ফারাবির শরীরে বিচরন করছে।
ফারহান তার খোঁচা খোঁচা দাড়ি দিয়ে ফারাবির গালে সুরসুরি দিচ্ছে।
ধীর কন্ঠে আলতো হেসে বলল
_ আই কান্ট কন্ট্রোল , আমি সত্যি এখন পুরো নেশাক্ত হয়ে গেছি।

ফারাবি শিউরে উঠলো। ফারহান তার এক হাতে ফারাবি কে আর ও কাছে টেনে নিলো।
ফারাবি কেমন ভরকে গেছে। ফারহান প্রশস্ত হেসে ফারাবির ঠোঁটে সময় নিয়ে চুমু খেল ।
ফারাবি স্পষ্ট অনুভব করছে ফারহানের চোখের নোনা জল।
ফারাবি কেঁপে উঠলো , ফারহান কে জড়িয়ে ধরলো সর্ব শক্তি দিয়ে।
ফারহানের স্পর্শ গুলো বুঝিয়ে দিচ্ছে ফারাবির প্রতি কতোটা নেশা ওর।
ফারহানের ভালোবাসা এতোটাই গাঢ় যে ফারাবির চোখ দিয়ে নোনা জল গরিয়ে পরছে।
দুজনের চোখ থেকেই অশ্রু ঝরছে। দুজনেই ভালোবাসায় মত্ত , ফারাবি কে ছেড়ে দিতেই ফারাবি ফারহান কে টেনে ধরলো।
ফারহানের দু গালে হাত রেখে নাকের নাক রেখে চোখ বন্ধ করে বলেই দিলো

আমি আপনাকে ভালোবাসি ফারহান। খুব খুব ভালোবাসি, আপনার মতো ভালোবাসতে না পারলে ও আমি আমার মতো করে আপনাকে ভালোবাসি।

ফারহান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এই একটা শব্দ শোনার জন্য পাগল হয়ে আছে পাঁচ টে বছর।
এই একটা কথা শোনার জন্য নিজেকে আঘাত করেছে কতো শত বার।
ফারহান এক ভয়ঙ্কর কাজ করে ফেলল।
ফারাবির গলায় মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
ফারাবি চমকালো , ওহ ও কেঁদে দিলো তবে চোখে মুখে খুশির ঝলকানি।
একটা মানুষ কতোটা ভালোবাসলে এভাবে কেঁদে উঠে তা সত্যি ওর জানা নেই।
এই মানুষ টার জন্য তো জান দিতে ও দু সেকেন্ড ভাববে না ওহহ।
ফারাবি তার দু হাত ধীরে ধীরে ফারহানের পিঠের উপর রাখলো।
আলতো হাতে জড়িয়ে বলল
_ এভাবেই কাঁদবেন আপনি ?

ফারহান নাক টেনে বলল
_ আমার লজ্জা লাগছে ফারাবি।

ফারাবির অধর কোনে হাসি ফুটে উঠলো।
ফারহান তার উষ্ণ ঠোঁট দিয়ে ফারাবির ঘাড়ে চুমু খেল।
ফারাবি অনুভব করছে সে ও একজনের বউ। তার ও একজন প্রান আছে , যার কাছে ফারাবি নিরাপদ।
যার সাথে ফারাবি পবিত্র। যার প্রতি টা স্পর্শের অধিকার আল্লাহ তায়লা প্রদত্ত।
যে ছোঁয়া স্বয়ং আল্লাহ তায়লা হালাল করেছেন।
ফারাবি ঝরা হাসলো, এই মানুষ টাকে কখনোই হারাতে দিবে না ওহ।

*

বোর্ট এর মাথায় শুয়ে আছে ফারহান আর তারউপর শুইয়ে আছে ফারাবি ।
ফারহানের প্রতি টা হৃদস্পন্দন মনোযোগ দিয়ে শুনছে ফারাবি।
হৃদস্পন্দন গুলো যেন গুন গুন আওয়াজ করে সুর তুলছে।
ফারহান তার শক্ত পোক্ত হাত দুটি দিয়ে ফারাবি কে জড়িয়ে রেখেছে ।
বাতাস বইছে সা সা করে , চারিদিকে অন্ধকার আর অন্ধকার।
শুধু বোর্ট এ জ্বলছে হ্যারিকেন এর ডিজাইন করা ল্যাম্প সেট।
জ্বলজ্বল করছে তিনটে মোম , আর তার ই পাশে রাখা ছোট্ট দুটো পাখি।
যারা কিচির মিচির করছে , আকাশের মোহনীয় চাঁদ টা যেন খিল খিল করে হাসছে।
ফারহানের দৃষ্টি ঐ চাঁদের দিকে থাকলে ও তার ভাবনা তে শুধু ফারাবির বিচরন।
ফারাবি প্রান ভরে নিশ্বাস নিচ্ছে। ফারহানের গায়ের মারাত্মক ঘ্রান টা ওকে পাগল করে দিচ্ছে।
কে জানে শরীরে কি মাখে , না হলে এতো মোহনীয় ঘ্রান হলো কি করে ?
ফারাবি তার ডান হাতে ফারহানের বুকে আঁকি বুকি করতে লাগলো।
ফারহান ভ্রু কুঁচকে বলল
_ আঁকি বুকি করছিস নাকি ?

ফারাবি ছোট্ট করে বলল
_ হু

ফারহান তার এক হাতে ফারাবির চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল
_ কি আঁকছিস ?

_ দুটো বাচ্চার ছোট ছোট হাত পা।

ফারাবির কথায় ফারহান চমকালো। খানিকটা সন্দিহান স্বরে বলল
_ কার বাচ্চা ?

ফারাবি আনমনেই উত্তর দিলো
_ আমার আর আপনার ছোট্ট দুটো বাচ্চা।

ফারহান এক গাল হেসে বলল
_ বাচ্চার জন্য রেডি তাহলে আমার বউ টা ?

ফারাবি ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কিহহ ?

_ বললাম দুটো বাচ্চা আনার জন্য রেডি তুই ?

_ আপনি

_ কি আপনি আপনি করছিস ? তুই তো বললি দুটো বাচ্চা আঁকি বুকি করছিস।

ফারাবি লজ্জা পেল।
ফারহান মোহনীয় হেসে বলল
_ আমার বউ টাই তো একটা পিচ্ছি বাচ্চা। আগে সে বড় হয়ে যাক , তারপর দুটো ছোট ছোট হাত পা আনার ব্যবস্থা করবো।

ফারাবি ঝরা হাসলো। হঠাৎ করেই সে কেন বাচ্চার কথা ভাবলো তা ওহ জানে না।
ফারহান প্রাণখোলা হেসে বলল
_ বউ আমার না কেমন কেমন ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে।

ফারাবি চমকে ফারহানের বুক থেকে উঠে পরলো।
ফারহান মুখ টা গোমড়া করে বলল
_ আমি তিন বছর ধরে নিজেকে সামলিয়েছি ।
যাতে তোর উপর কোনো প্রভাব না পরে তাই এতো দূর চলে গেছি।
এখন তো তুই এডাল্ট ও হয়ে গেছিস।

ফারাবির ভীষন লজ্জা লাগছে।
ফারহান হেচকা টান মেরে ফারাবি কে কাছে নিয়ে আসলো।
ফারাবির চুলে নাক ডুবিয়ে বলল
_ ম্যাডাম এতো ভয় পাবেন না। আমি খারাপ হলে ও অতো খারাপ নই।
আপনার জন্য সহস্র বছর অপেক্ষা করতে রাজি।
যেদিন তোর মনে হবে তুই আমার ভালোবাসা নিতে প্রস্তুত আমি সেদিন ই সব ভালোবাসা উজার করে দিবো।

ফারহানের কথা তে ফারাবির খানিক টা খারাপ লাগলো।
তবে ওহহ সত্যি ই এখন চায় না এসব।
প্রথমত পরিবারের কেউ ওদের বিয়ের সম্পর্ক জানে না।
সবাই কে জানাতে হবে, সবার রিয়্যাকশন দেখতে হবে।
সব কিছু সামলাতে হবে। যদি এখনি ওরা একে অপর কে পূর্ন করে নেয় তাহলে আর ও ঝামেলা হতে পারে।
এমনিতেই সবাই খুব কষ্ট পাবে তারউপর এসব।
ফারাবির মন খারাপ হয়ে গেল। ফারহানের পূর্ন অধিকারে ওহ সম্মতি জানালো না তাই।
কিন্তু এভাবে কি আদৌ ঠিক ?
যদি ও ওদের সম্পর্কের কোনো বাঁধা নেই।
কারন ওরা স্বামী স্ত্রী সেটা ধর্ম মতে ও আর এখন তো আইন মতে ওহ।
ফারাবি এখন আঠারো পূর্ন করে নিয়েছে এখন ওর অধিকার স্বাধীন।
ফারাবি দীর্ঘশ্বাস ফেলল ফারহান তা বুঝতে পারলো।
ফারাবির নাকে চুমু খেয়ে ফারহান বলল
_ একদম মন খারাপ করবি না জান। এমন না যে একটা শারীরিক সম্পর্কের জন্য কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে।
আল্লাহ্ আমাদের এক করে দিয়েছেন। কারো সাধ্য নেই আমাদের দুজন কে আলাদা করার।
আর এটা ও ভাববি না যে আমি কষ্ট পেয়েছি।
তুই শুধু আমার , তোর উপর আমারি অধিকার।
আর আমি জানি আমার মিষ্টি ফারাবি ও আমাকে চায়।

ফারাবি লাজুকতা নিয়ে ছলছল চোখে তাকালো।
ফারহান তার উষ্ণ উষ্ঠ দ্বয় ফারাবির চোখে ছোঁয়ালো।
ফারাবি কে ঠিক করতে ফারহান ভ্রু কুঁচকে বলল
_ তুই কি চাচ্ছিস আমরা এখনি একে অপরকে

ফারাবি লম্বা হাসলো। ফারহান তার দু হাতে ফারাবি কে আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে কানের নিচে হালকা কামড় দিলো।
ফারাবি উহহ করে বলল
_ আপনি একটা অসভ্য।

ফারহান তার উষ্ণ ঠোঁট দিয়ে ফারাবির গালে চুমু এঁকে বলল
_শুধু তোর ই জন্য।

ফারাবি মৃদু হাসলো ফারহান ঝরা হেসে বলল
_ কেক টা কি কাটবেন না আপনি ?
দুটো বছর তো এমনি এমনি চলে গেছে।

ফারাবি মাথা ঝেকে সম্মতি জানালো। ফারহান একটা বক্স থেকে ছোট্ট একটা রেড ভেলভেট এর কেক বের করলো।
উপরে দুটো চেরি বসানো , আর একটা হার্ট সেপ করা চকলেটের উপর বসে আছে দুটো সুন্দর পুতুল।
ফারাবি মোহনীয় হাসলো , ফারহান বাঁকা হেসে বলল
_ ডল দুটো কে ভালো করে লক্ষ্য কর।

ফারাবি নাক কুঁচকে ডল দুটোর দিকে তাকালো।
মূহুর্তেই ফারাবি গাল দুটো কমলা রঙের আকার ধারণ করলো।
ফারহান প্রানখোলা হেসে বলল
_ আমি ভেবেই রেখিলাম আজ আমরা লিপস টু লিপস চুমু খাবো।
সো পুতুল দুটো কে ঐ ভাবেই রেখেছি।

ফারাবি লজ্জায় নুইয়ে পরছে। যতবার পুতুলের দিকে চোখ যাচ্ছে ততবার সেই দৃশ্য মনে পরে যাচ্ছে।
চাঁদের আলোতে ফারাবির অবয়ব স্পষ্ট। এক চিলতে আলো এসে ফারাবি কে রাঙিয়ে যাচ্ছে।
লাল শাড়ি তে ফুটে উঠেছে ফারাবির সৌন্দর্য ।
মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে ফারহান। এ যে শুধু তার স্বপ্নের প্রেয়সী।

**ধূসর রঙের প্রজাপতি অবশ্যই পড়বেন।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here