#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_19
বোন টি আমার এমন করে না। ভাইয়া খুব বকেছি না ? আই প্রমিস আর এমন করবো না। সত্যি বলছি যখন রাগ হবে তখনি একটু একটু বকা দিবো।
ফারহানের কথায় কান্নার মাঝে ও হেসে উঠলো রিমি।
ফারহান বোকা বোকা করে চেয়ে বলল
_ একটু রাগ করে না হয় বকেছি তার জন্য এমন করবি ?
রিমি নাক টেনে ভাঙা গলাতে বলল
_ তুমি না মাত্র ই বললে আর বকবে না তারপর আবার বললে রাগ উঠলে একটু একটু বকবে। মোরাল অব দ্যা স্টোরি তো একি হলো।
ফারহান আমুদের স্বরে বলল
_ যেমন ?
_ ভাইয়া তুমি অনেক খারাপ।
এই টুকু বলেই ভাইকে জড়িয়ে ধরলো রিমি। কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ তুললো।
ফারহান রিমির মাথায় চুমু একে বলল
_ আম সরি বোনটি।
_ নট ওকে। তোমাকে পানিসম্যান্ট দিবো আমি।
_ ওকে আম রেডি টু ইউর পানিসম্যান্ট ।
রিমি নাক টানতে লাগলো। ফারহান রসিকতা করে বলল
_ নাকের পানি সব আমার শার্ট এ মুছার ধান্দা করলি নাকি ?
_ তুমি
ফারহান বিগলিত হেসে বোন কে কাছে টেনে নিলো।
ফারাবি সরু চোখে তাকিয়ে আছে। ওর খুব হিংসে হচ্ছে , ইসস ফারহান কে যদি এখনি জড়িয়ে ধরা যেত।
ফারহান আলতো হাতে রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। ফারাবির দিকে তাকিয়ে দেখলো ফারাবি কেমন জেলাছি মুডে তাকিয়ে আছে।
ফারহান হাসলো রিমি তো ওর বোন তাই ফারাবি জেলাস মুডে আছে। এখানে যদি অন্য কোনো মেয়ে থাকতো তাহলে কি করতো ?
ফারহান আনমনেই হেসে উঠলো।
রিমি কে ছেড়ে দিয়ে নাক দিয়ে ঘ্রান নিয়ে বলল
_ কোথা থেকে যেন পোঁড়া পোঁড়া গন্ধ পাচ্ছি।
_ কোথায় আর কি পুড়ছে ? আমি তো পাচ্ছি না।
ফারাবি চমকে উঠলো। ফারহানের দিকে বাঁকা চোখে তাকালো। ওহ মোটে ও জেলাস ফিল করছিলো না। ওর তো শুধু ইচ্ছে হচ্ছিলো ফারহান কে একটু জড়িয়ে ধরতে।
ফারহান মোহনীয় হেসে বলল
_ বল আমাকে কি পানিসম্যান্ট দিতে চাস ?
_ প্রমিস ?
_ ওকে ডান।
রিমি যেন হাতে চাঁদ পেয়েছে। বোকা বোকা ফিলিং থেকে খানিকটা টলটলে মুড নিয়ে বলল
_ আমি চাই খুব তাড়াতাড়ি তুমি বিয়ে করে আমার জন্য ভাবি নিয়ে আসো। আর বড় ভাইয়া কে তাক লাগিয়ে দাও।
রিমির কথা শুনে ফারাবির চোখ রসগোল্লা হয়ে গেছে। ফারহান বাঁকা চোখে ফারাবির দিকে তাকাতেই ফারাবির কাশি উঠে গেল।
রিমি দ্রুত পানি দিতেই ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। ফারহান বাঁকা হেসে দাঁড়িয়ে রইলো। রিমি কেমন করে তাকিয়ে আছে , এদের ভাব দেখে মনে হয় এদের মাঝে কিছু আছে।
তবে সন্দেহ করার মতো কিছু পাচ্ছে না ওহহ।
ফারাবি বার বার ঢোক গিলছে , আর তার মজা নিচ্ছে ফারহান।
*
মাঝে কেটে যায় আরো পাঁচ টি দিন। এই পাঁচ দিন ফারহান ফারাবিদের বাসাতেই ছিলো আর রিমি ও।
পাঁচ দিনে অফিস যাওয়া হয় নি। মূলত ফারাবি কে রিকের হাতে ছেড়ে যাবে না ওহহ তাই যায় নি। পরিস্থিতি এমন যে রিক কে কিছু বলতে ও পারছে না।
না হলে সব কিছু গড়মিল হয়ে যাবে। শেষে জীবনের প্রিয় মানুষ টা কে হারিয়ে ফেলবে।
যদি ও কোনো ভাবেই ওহ সেটা হতে দিবে না। তবু ও রিক্স নেওয়ার মানেই হয় না। এটা কোনো বিজনেস নয় যে হেরে গেলে আবার দাঁড়াবে।
এটা ও জানের বিষয় , এটা নিয়ে কোনো রিক্স নয়।
ফারাবির ধারে কাছে ও ঘেঁষতে পারে নি রিক। রিক খুব বিরক্ত হচ্ছে, তবু ও আঠার মতো লেগে আছে।
একটু সুযোগ পেলেই তার কালো হাত দিয়ে ফারাবি কে স্পর্শ করে দিবে।
ফারাবি এখন একদম সুস্থ। ফারহানের তিন বেলা বিশেষ যত্নে ঠান্ডা পালিয়ে ছে জামা কাপড় নিয়ে।
প্রচন্ড খেয়াল রেখেছে ওর , তবে ফারাবি ভেবে পায় না গত দু বছরেও রিক কে নিয়ে তেমন ঝামেলা হলো না কেন।
রিক আসতো তবে খুব ই কম। আর তখন ফারাবি নিজেকে সামলে নিতো।
হয়তো এই দিন গুলোর অপেক্ষায় ছিলো ওহ।
ফারহান ছাঁদে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাল ফারাবির জন্মদিন , তাই সবাই অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত।
তবে ফারাবির মুখে তেমন কোনো উপচে পরা খুশি নেই।
রিফাত একের পর একেক জনের সাথে ফোনে কথা বলে যাচ্ছে।
ফারহান ফোনে মুখ গুঁজে কিছু একটা দেখছে আর মিটিমিটি হাসছি।
রিফাত ভ্রু কুঁচকে সামনে আসতেই ফারহান ফোন অফ করে দিলো।
রিফাত বাঁকা হেসে বলল
_ কে সে হুমম ? যার জন্য মুখে এতো কিউট হাসি ?
_ কেউ নাহহ তো, এমনি হাসছিলাম
ফারহানের সহজ উত্তর রিফাতের হজম হলো না। রিফাত ভ্রু কুঁচকে বলল
_ ফাঁকি দিচ্ছিস ?
_ নাহহ , তবে তুই তাকে খুব ভালো করেই চিনিস।
রিফাত ভ্রু কুঁচকে রইলো। তার বেস্ট ফ্রেন্ড প্রেম করে অথচ সেই জানে নাহ।
ফারহান এক গাল হেসে বলল
_ এতো ভাবিস না , নাহলে যখন জানবি তখন মাথা নষ্ট হয়ে যাবে।
রিফাত এখনি চিন্তায় পরে গেল।
পর মুহূর্তেই কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলো। রিক বড় সড়ো আয়োজন করছে , সবার সামনে ফারাবি কে প্রপোজ করবে।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওর ফারাবি কে চাই ই চাই।
ডায়মন্ড রিং কিনেছে , সাথে একটা নেকলেস ও আছে।
সবার কাছে ভালো সাজা তো লাগবেই।
ফারাবির মামা বাড়ির অবস্থা ও বেশ ভালো ।
তবে সব ই পৈতৃক সম্পত্তির জোড়। ফারাবির মামা নিজ টাকাতে তেমন কিছুই করে উঠতে পারেন নি।
আর তার ছেলেটা হয়েছে আরেক কুলাঙ্গার ।
*
হু হু করে বাতাস বইছে ফারাবির মন ভালো নেই। যতো দিন যাচ্ছে ফারহানের থেকে আলাদা হওয়া ঘনিয়ে আসছে।
সেদিন যখন শুনলো ওহহ , ওর বাবা ওর মা কে বলছেন এ বিয়ে সম্ভব না। তখন ওর মা কেঁদেছিলেন , ভাই কে কথা দিয়েছেন ওনি।
ফারাবির চোখ থেকে অনড়গল পানি পরছে। কেন সেদিন কেউ ওকে না বলেই কথা দিয়ে দিলো। জীবন টা ও কাঁটাবে, একবার জানতে ও চাইলো না ওর মতের কথা।
যখন জানালো ওকে তখন সব হাতের বাইরে।পরিবারের সম্মান আর মায়ের প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে চুপ করে গেল ওহ।
কিন্তু এ যে সম্ভব নয়। সবাই চাইলে ও এ সম্পর্ক সম্ভব নয়।
ফারহান ওর অতীত , ওর বর্তমান আর ওর ভবিষ্যত ওহ।
জীবনে যদি কারো প্রতি প্রেমের অনুভূতি হয়ে থাকে তাহলে সে শুধু ফারহান।
অভিমানে গত তিনটে বছর কাটলে ও ফারহান কে ভুলে নি ওহ।
বারংবার ওর কথাই ভেবেছে। ফারহানের প্রতি ওর প্রেম জেগেছে বহু আগেই ।
তবে অভিমানে আজ ও বলা হয় নি।তিন বছর আগের সেই দিনটা যাহহ ও অভিশাপ স্বরূপ নিয়েছিল আজ মনে হচ্ছে সেটা ওর জীবনের বড় পাওয়া।
যে মানুষ টা কে সবাই চায় সে মানুষ টা শুধু ওকে চায়। ফারাবির চোখ থেকে টপটপ করে পানি পরছে। আর সে পানি মেঝে তে পরে বিক্ষিপ্ত হয়েছে।
জানালার গ্রিলে এ মাথা ঠেকিয়ে আছে ফারাবি। রুমে কারো অবস্থান অনুভব করতেই চোখ মুছে নিলো ওহ।
রিফাত দাঁড়িয়ে আছে , ফারাবি ঠোঁটের কোনে হাসি ফোটানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে বলল
_ কিছু বলবে ভাইয়া ?
রিফাত কিছু বলল না। বোনের বিক্ষিপ্ত দৃষ্টি ওকে আঘাত করছে । হাসি খুশি বোন টার এমন অবস্থা কি করে ?
ফারাবি এক গাল হাসলো। রিফাত মৃদু স্বরে বলল
_ ছোট চাচ্চু ডাকছে, মনি আন্টি এসেছে। কি যেন বলবে তোকে ।
ফারাবি মাথা ঝাঁকিয়ে চলে গেল।
রিফাত তপ্ত শ্বাস ফেলে মনিকা কে কল দিলো। এখন একমাত্র মনিকার বকবকানি ই পারে ওর মন কে শান্তি দিতে।
মেয়েটা কেমন যেন , সামনে থাকলে ও ভাল্লাগেনা দূরে গেলে আর ও ভাল্লাগেনা ।দিন শেষে একটু টুকরো সুখের খোঁজে যেমন সবাই বাড়িতে ফিরে। ঠিক তেমনি ওর হাসির কারনটা মনিকা হয়ে উঠে।
হয়তো এটাই ভালোবাসা, বিচিত্ররঙা ভালোবাসা ।
যার সান্নিধ্যে পেতে প্রতি টা প্রেমিক পুরুষ ই পাগল হয়ে যায়।
*
মনি আর আরিফ কাউচ এ বসে আছে। দুজন গল্প করতে ব্যস্ত, ফারাবি দরজায় নক দিয়ে বলল
_ আসবো ?
_ আরে আয় , নক দেওয়ার কি প্রয়োজন ?
ফারাবি আলতো হেসে রুমে আসলো। আরিফ আর মনির বরাবর চেয়ার টেনে বসলো।
আরিফ হালকা হেসে বলল
_ মামুনি একটা কথা বলি তুমি কি রিক কি বিয়ে করতে চাও ?
তুমি ও বারন করো নি , কিন্তু তবু ও আমি তোমার থেকে জানতে চাইছিলাম।
ফারাবি চমকালো, মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছে না। আরিফ আবার প্রশ্ন করলো। ফারাবি আমতা আমতা করতে লাগলো। কিছু বলবে তার আগেই ফারাবির মা , বাবা আর রিকের মা বাবা হাজির।
ফারাবি ভদ্র হেসে সালাম জানালো।ফারাবির বাবা ফারাবির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
_ আমার মেয়েটা আমার ঘরে আসবে কিছু দিন আর।
ফারাবির বুকে চিন চিন ব্যাথা শুরু হলো। এ যে সম্ভব না , ও তো চায় না এ বিয়ে। তবে বারন করার মতো পথ ও নেই। ওর মায়ের হাসি খুশি মুখ টায় কি করে মলিনতা এনে দিবে ওহ ?
তবে আদৌ কি এ খুশি সম্ভব ?
ফারাবির চোখ দুটো ভিজে গেল। এমন কেন হচ্ছে ওর সাথে ?
কেন এলোমেলো ওর জীবন টা। সবাই খোসমেজাজে গল্প করতে ব্যস্ত।
হাসি খুশি মুখ গুলো দেখতেই ফারাবির চিত্ত কেঁপে উঠলো।
ফারাবি রুম থেকে বেরিয়ে গেল। এ সম্ভব না , কিন্তু কি করে বলবে ওহ ?
এদের সবার হাসি রাখতে গিয়ে একজনের সুখ কেড়ে নিতে পারবে না ওহ। সে অধিকার ওর নেই ।
আর ফারহান কে ছাড়া অন্য কারো ঘর করা স্বপ্নে ও ভাবতে পারবে না।
ফারহান ই তোর জীবন , আর ভবিষ্যত।
করিডোর দিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে হেঁটে যাচ্ছে ফারাবি।
এমন ভাবে হাঁটতে থাকায় দেয়ালের সাথে ধাক্কা লেগে যায় ওর।
হাল্কা আর্তনাদ করে উঠে ফারাবি। ফারহান নিচে যাচ্ছিলো , ফারাবির গলা শুনে দৌড়ে আসে।
ফারাবি মাথায় হাত দিয়ে আছে। ফারহান ব্যস্ত হয়ে ফারাবির মাথায় হাত বুলাতে থাকে।
চোখে মুখে কষ্টের ছাপ, যেন ব্যথা টা ও পেয়েছে।
ফারাবি আলতো হাতে ফারহানের শার্ট ধরে নিলো ।
ফারহান ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই দেখলো ফারাবির চোখে অশ্রু কনা।
মুখে অসহায়তা , ফারহান হালকা হেসে চলে গেল।
ফারহান তার বিক্ষিপ্ত মন ফারাবি কে দেখাতে চায় না। কিছু কষ্ট না হোক পাক দুজনেই। আর এ আগুনে পুরে খাঁটি হোক ভালোবাসা।
ফারাবি বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। ফারহান কেন ওকে জড়িয়ে বলল না আমি আছি তো ।
কেন বলল না একদম কাঁদবি না তুই।
ফারাবি ছুটে নিজের রুমে চলে আসলো।
ফারহানের সাথে অন্যায় করেছে ওহ , কেন সবাই কে বলতে পারছে না ওহ।
কেন চিৎকার করে বলতে পারছে না আমার অতীত বর্তমান ভবিষ্যত সব কিছু ফারহান।
কেন পারছে না পরিবারের খুশি টাকে ম্লান করতে।
কেন? কেন ?
ফারাবি মুখ চেপে কাঁদতে লাগলো। সত্যি কি সেদিন কোনো কিছু করার ছিলো না ?
নাকি অভিমান গুলো ই বাঁধা দিয়েছে?
**ফারহান আমাকে না জানিয়েই একটা কাজ করছে😒
অন্তত আমাকে তো জানাতেই পারতো। আমি কি বারন করতাম নাকি 😜
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।
চলবে