#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_23
চোখ হাত আর পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে রিক কে।
শরীরে ব্যথার ছাঁপ গুলো স্পষ্ট। চারিদিকে অন্ধকার আর অন্ধকার। রিক চোখ বাঁধা নিয়েই চার পাশে চোখ বুলাচ্ছে।
তবে কিছুই দেখতে পারছে না। পাগলের মতো করছে , যেন বহু বছর ধরে আলো দেখে না ওহহ।
রিক চিৎকার করে উঠলো। তবে সে চিৎকারের প্রতিধ্বনি বার বার ফিরে আসছে। রিক মাটিতে বসা অবস্থায় আর্তনাদ করে বলল
_ কেউ আমার চোখ খুলে দাও। কে আমাকে বেঁধে রেখেছো ?
চার পাশ থেকে একটা পোঁকা মাঁকড়ের আওয়াজ ও শোনা যাচ্ছে না।
রিক আবার চিৎকার করলো। রিকের চিৎকারের প্রতিধ্বনির সাথে আর ও কিছু হাসির প্রতিধ্বনি ভেসে উঠলো।
মধ্য রাতে সেই সব প্রতিধ্বনি আর খিল খিল হাসি অশরীরীর মতো লাগছে। রিকের চিত্ত কেঁপে উঠলো । তরতর করে ঘামছে ওহ গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।
আবার কিছু হাসির শব্দ ভেসে আসলো। সব গুলো কন্ঠস্বর ই মেয়েলি গলা। গলার স্বর গুলো কেমন চেনা চেনা লাগছে ওর।
রিক ভয়ার্ত কন্ঠে বলল
_ কে কে তোমরা?
রিকের কন্ঠের সাথে তাল মিলিয়ে ভেসে উঠলো কে কে তোমরা ?
তারপর ই বিকট শব্দ করে হো হো করে হাসি।
রিকের কপালের ঘাম গুলো সব নাকে এসে লাগছে।
ভয় হচ্ছে ওর , সব কেমন বিদঘুটে লাগছে।
রিক কাঠ হয়ে যাওয়া ঠোঁট টা জ্বিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে বলল
_ বলো কে তোমরা? কি চাও আমার থেকে ?
আবার সেই খিল খিল হাসি । রিক কেঁপে উঠলো।
একটা মেয়েলি গলা থেকে উচ্চারন হলো
_ আমি তোমার বউ বেবি। যাকে ছাড়া তোমার ঘুম আসতো না বলতে।
রিক নাক কুঁচকে বলল
_ মৌ
_ মৌ কে মৌ আমি তো তোমার প্রান সোনা । আমাকে তুমি ভুলে গেলে সোনা। আমার শরীরের ঘ্রান না নিলে তুমি তো অপূর্ন থাকতে।
আমাকে চিনতে পারছো সোনা?
রিক শুকনো ঢোক গিলল। খানিক টা উঁচু কন্ঠে বলল
_ সিমা আমাকে খুলে দাও। আমি তোমাদের সব বলছি।
আমার কথা শোনো
_ কি বলবে বাবু । এই যে আমি তোমাকে না স্পর্শ করলে তোমার হৃদস্পন্দন থেমে যায় ?
আমার সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো তোমার জীবনের সব থেকে সেরা।
রিক চিৎকার করে উঠলো। পাগল পাগল মনে হচ্ছে ওর। সব ঝামেলা গুলো এক হলো কি করে তাই বুঝতে পারছে না ওহ।
রিক শান্ত কন্ঠে বলল
_ দেখো এভাবে কিছু হবে না। আমাকে মুক্ত করো আমি তোমাদের সব বুঝিয়ে বলছি।
মিতা প্লিজ আমাকে মুক্ত করো।
রিকের কথা তে হো হো করে হেসে উঠলো সবাই।
রিক মাথা চেপে ধরে চিৎকার করে উঠলো। সামনে থাকা ওয়াইনের বোতল টা ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
কাল রাতে ঘটে যাওয়া মুহুর্ত গুলোই ভাবছিলো ওহ।
ওয়াইনের গ্লাসে ওয়াইন ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো।
চোখ দুটো রক্ত লাল হয়ে আছে। এক বিকৃতি হাসি হেসে একা একাই বির বির করলো
” ছাড়বো না কাউকে , সবাই কে শেষ করে ফেলবো ”
*
ফারাবির ঘুম ভেঙেছে দুপুর একটায়। এর মাঝে কতোবার ওকে ডেকে গেছেন ওর মা তার হিসেব নেই।
হাই তুলতে তুলতে আরমোড়া ভাঙলো ফারাবি। ক্লান্ত শরীর টা এক ঘুমেই চাঙা হয়ে গেছে।
শরীরের জন্য ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজন। আবার এই ঘুমের জন্য ই মানুষ মরে যায়। প্রতি টা জিনিসের ই ভালো খারাপ দিক আছে । আমাদের উচিত সব কিছু সঠিক ভাবে ব্যবহার করা।
ওয়াসরুমে গিয়ে দাঁত ব্রাশ করছে ফারাবি।
ওর একটি বিশেষ বাজে স্বভাব আছে তাহ হলো পেস্ট খেয়ে ফেলা।
যার জন্য ওহ এখনো বেবি জেল দিয়ে দাঁত ব্রাশ করে।
ফ্রেস হয়ে এসে চুল গুলো কোনো মতে আঁচরিয়ে ই ফারাবি ভৌ দৌড়।
প্রচন্ড খিদে পেয়েছে ওর। কাল রাতে ডিনার বলতে একটা রোল খেয়েছে।
কারন তখন ওর খেতে ইচ্ছে করছিলো না।
ডাইনিং এ এসে খোঁজা খোঁজি করছে ওহহ। নাস্তা নেই টেবিলে, অবশ্য এতো বেলা অব্দি নাস্তা থাকবেই বা কি করে ?
এখন তো লাঞ্চ এর টাইম হয়ে গেছে।
ফারাবি মুখ টা গোমড়া করে কিচেনে চলে আসলো।
কিচেনে ওর মা আর বড় রান্না করছেন। ফারাবি ধীর পায়ে হেঁটে ফ্রিজ খুলে ফ্রিজ থেকে জুস বের করে এক গ্লাস জুস নিয়ে নিলো।
এক পিস পেস্ট্রি কেক ছিলো সেটা দেখেই ওর চোখ চকচক করে উঠলো।
আপাতত এই দুটো টেই পেট ঠান্ডা হয়ে যাবে।
ফারাবি কেক আর জুস নিয়ে উপরে উঠে গেল।
রিফাতের মা এক পলক সে দিকে তাকিয়ে বলল
_ বুঝলি ছোট, আমাদের ফারাবি টা এখনো বাচ্চাই রয়ে গেল।
দুদিন বাদে বিয়ে হবে , বাচ্চা হবে আর এখনো ওর ই বাচ্চামো গেলো না।
ফারাবির মা হালকা হেসে বললেন
_ তার জন্য ই তো কাছের লোকের বাড়িতে পাঠাতে চাই আপা।
ভালো খারাপ সব কিছু ই যেন মানিয়ে নেয়। আর ভাবি আর ভাই তো ওকে খুব আদর করে।
রিক টা ও খুব ভালোবাসে , বিয়ে টা দিতে পারলেই শান্তি।
রিফাতের মা হালকা হেসে বললেন
_ তবে যাই বলিস না কেন তুই আগে আগে কথা দিয়ে ঠিক করিস নি।
যদি ফারাবি রাজি না হতো ?
ফারাবির মা মলিন হাসলেন। ভাইয়ের অনুরোধ ফেলতে পারেন নি ওনি। ওনার ভাই কেঁদে উঠেছিলেন সেদিন। বাবা মারা গেছে ছোট বয়সে ভাই দের হাত ধরেই বড় হয়েছেন ওনি।
এমন বাবার মতো ভাইয়ের অনুরোধ কি করে ফিরিয়ে দিবেন ওনি ?
তবু ও কথা দেওয়া উচিত হয় নি। ভাগ্যিস মেয়েটা দ্বিমত করে নি।
*
লম্বা লম্বা দম ফেলে নিজের রুমে আসলো ফারহান। ক্লান্ত ওহ , সারাদিন কাজের প্রচন্ড চাপ ছিলো।
সকালে নিউজ পেপারে নিজেদের ছবি দেখে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে ওর।
ভাগ্য ভালো ছিলো যে ছবি টা পেছন থেকে তোলা।
সকাল থেকে ঘুমোতে পারে নি ওহ। তার আগেই ফ্রেস হয়ে অফিসে ছুটে গিয়েছি। বড় একটা প্রজেক্ট আছে সামনে। তার জন্য দরকার অনেক গুলো টাকা। তবে লোন নেওয়া যাবে না। কারন এতে করে ইন্টারেস্ট হবে ।
ফারহান খানিকটা চিন্তায় পরে গেল। বাবার থেকে টাকা নেয় না ওহ।
তবে ধার তো নেওয়াই যায় ?
ফারহান আন মনে ভাবতে ভাবতে ফরহাদ চৌধুরীর কাছে গেলেন।
সন্ধ্যা সাড়ে সাত টা বাজে। এই সময় লাইব্রেরি তে বসে বই পড়েন ওনি।
লাইব্রেরির কাছে গিয়ে নক করলো ফারহান।
ফরহাদ চৌধুরী প্রশস্ত হেসে বললেন
_ আরে আয় ।
ফারহান এক গাল হেসে ফরহাদ চৌধুরীর কাছে গেলো।
রকিং চেয়ার থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসে ফরহাদ চৌধুরী বললেন
_ কিছু দরকার ?
_ তুমি জানলে কি করে?
ফরহাদ চৌধুরী লম্বা হেসে বললেন
_ ছেলে মেয়েরা বড় হলে বাবা মায়ের কাছে কম আসে।
দরকার ছাড়া তেমন একটা আসে না তারা।
ফারহান মুখ টা ছোট করে বলল
_ আব্বু রাগ করেছো ? আমি কি করবো বলো বিজন্যাস টা বি ডি তে সিফট করাতে কাজ বেড়ে গেছে।
ফরহাদ চৌধুরী সামান্য হাসলেন।হাতের বই টা একটা তাকে রেখে বললেন
_ তিন বছর আগে সিঙ্গাপুর না গেলে ও পারতে।
আমার বিজনেস টা দেখলে তোমার ক্ষতি হতো না কোনো।
_ আব্বু তুমি তো জানোই আমি কেমন। আই নো তোমার প্রপার্টি তে আমার অধিকার আছে। তবে আমি এটা বিশ্বাস করি নিজ থেকে কিছু আলাদা করা দরকার।
আর তাই
_ আর তাই তুই নিজের বাবার থেকে টাকা নিয়ে বিজনেস অব্দি শুরু করলি না।
সেটা ও ব্যংক থেকে লোন নিয়ে বিজনেস করলি।
ফারহান মৃদু হাসলো। ফারহান যখন লোন নিতে ব্যংক এ যায় বিনাবাক্যে তারা লোন দিয়ে দেন। তবে কিছু মানুষ জড়তা সৃষ্টি করে। নানা রকম কথা উঠায় নিজেদের এতো টাকা থাকতে কেন লোন নিলো ফারহান ।
হাজারো ঝামেলা , এক পার্টি তে ওদের অপমান করার প্ল্যান ও হয়েছিলো ।
তবে ফারহান ভরা সভায় যে স্পিচ দিয়েছিলো তাতে করতালি তে ভরে উঠে পুরো পার্টি।
ফারহান নিজ থেকে পরিচয় গড়তে চেয়েছে। লোকে যেন বলতে না পারে বাবার টাকায় চলে ওহ।
তাছাড়া জীবনে নিজ থেকে কিছু করা টাই মূল সার্থকতা।
ফারহান আলতো হেসে বলল
_ তবে আজ একটা আর্জি নিয়ে আসছি।
_ কিহহ ?
_ আমি টাকা ধার নিতে চাই।
ফরহাদ চৌধুরী চমৎকার হাসলেন। পকেট থেকে চেক বের করে বললেন
_ সাইন করা আছে যতো লাগবে নিয়ে নিও।
ফারহান স্মীত হাসলো। তার বাবা প্রচন্ড বুদ্ধি সম্পূর্ণ বিজনেস ম্যান।
কয়েক বছরে পুরো দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন।
মূলত জেদ ই ছিলো ওনার শক্তি।
*
ফারাবি কে সেই ভোর বেলা দেখেছিলো ফারহান এখনো দেখে নি ওহ।
মন টা কেমন কেমন করছে। কি ভাগ্য আজ ওদের তৃতীয় বিবাহ বার্ষিকী আর ওরা দুজন দুজনার থেকে দূরে।
লম্বা করে শ্বাস ফেলল ফারহান । সারা দিন এতো কাজের চাপ ছিলো যে মেয়েটা কে একটা কল ও করে নি।
_ স্যার আপনার ডিনার রেডি।
_ ঘরে রেখো যাও। আর শোনো একটা ব্ল্যাক কফি দিয়ে যেও।
_ ওকে স্যার।
সার্ভেন্ট চলে যেতেই ফারহান লেপটপে মনোযোগ দিলো। মাথায় প্রচন্ড চাপ আজ। টেন্ডার নিয়ে কনফিউশন এ আছে।
প্রায় ঘন্টা খানেক লেপটপে কাজ করে উঠলো ফারহান।
কাউচ এ লেপটপ টা রেখে দিয়ে সটান হয়ে বসে নিলো।
একটু জুস মুখে দিয়ে ফোন হাতে নিলো। রাত সাড়ে এগারোটা , ফারাবি নিশ্চয়ই ঘুমে। মেয়েটা সারাক্ষণ ঘুম নিয়ে পরে থাকে।
হাজার চিন্তা ভাবনা কাটিয়ে ফারহান ফোন টা করেই ফেলল।
কি আশ্চর্য এক বার রিং হতেই ফোন রিসিপ হয়ে গেল।
ফারহানের মুখ টা চুপসে গেল। ক্ষীন কন্ঠে বলল
_ ঘুমাস নি কেন ?
_ ঘুম আসছিলো না।
_ ঘুম কুমারীর ঘুম আসছিলো না আমি কি ঠিক শুনছি?
_ হুমম আপনি ঘুমান নি কেন ?
_ আমি এতো তাড়াতাড়ি ঘুমাই নাকি।
_ অতো রাতে ঘুমিয়ে আবার সকাল ছয়টায় কি করে উঠেন ?
_ অভ্যাস হয়ে গেছে বউ।
ফারাবি লজ্জা পেল। ফারহান স্মিত হাসছে , মিনমিনে গলাতে বলল
_ এখনি সময় ঘুমিয়ে নে , পরে কিন্তু সুযোগ পাবি না।
ফারাবি ঠোঁট বাকালো। ওর লজ্জা লাগছে বেশ , তবে প্রশান্তি লাগছে কারন আজ দুজন ই দুজন কে অনুভব করছে।
_ ঘুম কুমারী ঘুমিয়ে পরলি নাকি ?
_ উহুমমম ঘুম আসবে না।
_ আমি আসি তাহলে ?
_ এই না না
ফারহান খিল খিল করে হাসলো। ফারাবি লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
_ একটা সত্যি কথা বলবো?
_ হুমম বল।
ফারাবি লজ্জা মেশানো অনুভূতি তে বলল
_ আমার না আপনাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে।
ফারাবির কথা শেষ হতে না হতে ফোন টা কেঁটে দিলো ফারহান।
ফারাবি ভ্রু কুঁচকে রইলো। অনেক গুলো কল করলো কিন্তু ফোন রিসিপ হচ্ছে না। ফারাবি চিন্তায় পরে গেল, হঠাৎ করে ফোন টা কেঁটে দিলো কেন ফারহান ?
** ধূসর রঙের প্রজাপতি উপন্যাস টা অবশ্যই পড়বেন। এটাতে দারুন কিছু অনুভূতি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করবো ইনশআল্লাহ ।
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।
চলবে