#সুখ_একটি_প্রজাপতি (২২)
“আপনি আমায় ভুল বুঝলেন প্রজাপতি? এত সহজে ছেড়ে গেলেন! আপনি ভুলে গেলেন আপনার জায়গাটা। এত বছর অপেক্ষা করেছেন অথচ এই সামান্য কয়টা দিনেই অধৈর্য হয়ে পড়লেন! এভাবে ছেড়ে গেলেন আমায়।”
শব্দ গুলো উচ্চারণ করার সময় অভিনবর দু চোখ লাল হয়ে উঠেছে। ঝিল ভাষাহীন পাথর বনে গেছে। মেয়েটি নিজ ভুলে পু ড় ছে কেবল। অশ্রুসজল হয়ে উঠেছে অক্ষিযুগল। এত এত কষ্ট হচ্ছে যে ওর হৃদয় খানা বুক চিরে বের হতে চাচ্ছে। মেয়েটির এমন দশা দেখে কিছুটা দমে গেল অভিনব। কাছে এসে বলল, “কেমন করে এই ভুল করলেন ঝিল?”
ভাঙা গলায় উত্তর করল মেয়েটি। “আমার কথাটা শুনেন আপনি। বিশ্বাস করেন তখন আমি এতটাই বিধ্বস্ত ছিলাম যে বুঝতে পারি নি কেমন করে ভুলটা করে বসলাম।”
উত্তরের বিপরীতে অভিনব তাচ্ছিল্য করল। ছেলেটি আর এক মুহূর্তে দাঁড়াল না। চলে গেল ত্রস্থ পায়ে। পেছন থেকে পাগলের মতো ডেকে চলেছে মেয়েটি।
“অভিনব,অভিনব,অভিনব শুনেন আমার কথাটা। অভিনব শুনেন প্লিজ। শুনে যান একবার।”
মেয়েটির চিৎকারে ছুটে এল মৌনতা। রীতিমতো কাঁপছে ঝিলের শরীর। বিধ্বস্ত হয়ে উঠেছে মুখখানি। শুকিয়ে গেছে কোমল দুটি ঠোঁট। রুগ্ন দেখাচ্ছে ওকে। মৌনতা সমানতালে পিঠে হাত বুলাচ্ছে। বার বার বলছে, “শান্ত হ ঝিলি। শান্ত হ বাবু। কি হয়েছে তোর?”
“মৌন, অভিনব অভিনব চলে যাচ্ছে। ওনাকে আমি ভুল বুঝলাম। কেন ভুল বুঝলাম ওনাকে। আমি এখন কি করব। কি করব আমি।”
অস্থিরতার কারণে ঝিলের শরীর থেকে নোনা জল নেমে এসেছে। মৌনতা পুনরায় মেয়েটির মাথাটা চেপে ধরল। ধীরে ধীরে পিঠ চাপরে বলল, “কিচ্ছু হয় নি। অভিনব ভাইয়া কোথাও যায় নি। তুই শান্ত হ।”
“আমি স্পষ্ট দেখেছি মৌন। তুই প্লিজ যেতে দে আমায়। ওনি চলে যাচ্ছেন।”
“শান্ত হ ঝিলি। স্বপ্ন দেখেছিস তুই।”
“স্বপ্ন!”
“হু। দুপুরে অল্প একটু খেয়ে ঘুম দিলি। এখন তো প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।”
“সত্যিই স্বপ্ন ছিল?”
“হ্যাঁ রে। তুই নিজেকে শান্ত কর।”
মৌনতার কথা গুলো আরেকটু গভীরে নিয়ে গেল মেয়েটিকে। ওর দুটি চোখ এখনো বিচলিত। চারপাশে চোখ বুলিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে মৌনতা মিথ্যে বলছে কি না। ধীরে ধীরে সমস্ত বিষয় বুঝতে পারল সে। মৌনতা পানি এনে দিল। সেটা পান করার পর কিছুটা শান্ত হলো ঝিল।
“সকালে বলেছিলাম, মানুষটা বোধহয় আমায় ঠকাচ্ছে। আসলেই আমি ভুল মৌন।”
“শুধু শুধু সেসব ভেবে এখন কষ্ট পাওয়ার কোনো মানেই নেই ঝিলি। তুই ভরসা রাখ। নিশ্চয়ই কোনো কারণ রয়েছে।”
“তাই যেন হয় রে মৌন। কিন্তু অভিনব এখন কোথায় আছে। কেমন আছে বল তো।”
“সেটা তো আল্লাহ তায়ালাই বলতে পারবেন।”
সৃষ্টিকর্তার নাম নেওয়ার ফলে ঝিলের মাথায় এল নামাজের কথাটা। মেয়েটি অজু করে এসে নামাজে বসল। মোনাজাতের সময় চোখ ভরে উঠল। অভিনবর সুস্থতার দোয়া করল।
মাইলের পর মাইল চলছে গাড়ি। অভিনব সিটে হেলান দিয়ে বসা। চোখ বন্ধ কপালে রেখেছে হাত। হাল্কা করে মালিশ করে যাচ্ছে। শরীরে ভীষণ জ্বর। গোলাপি রঙা ঠোঁট কেমন ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করেছে। মুখ শুকিয়ে গেছে। রাহিন বার বার তাকাচ্ছে। ছেলেটির অবস্থা দেখে ওর মন খারাপ হলো। বরাবরই অভিনবর প্রতি মায়া বেশি ওদের। কেন যেন এই ছেলেটিকে ভীষণ ভালোবাসতে চায় সকলে। রাহিন একটুখানি জলে গলা ভিজিয়ে নিল।
“ইহান।”
“হু?”
“মির্জা বাড়ির মেয়েকে ছাড়া যায় না?”
“ছাড়তে পারব না রাহিন। আমার মন মস্তিষ্ক পাগল হয়ে যাবে।”
“যদি কখনো এমন পরিস্থিতি আসে, মির্জা বাড়ির মেয়ে অথবা আমাদের বেছে নিতে হয় তখন কি করবি?”
“জানি না কি করব। তবে এতটুকু বলতে পারি ঝিলকে ছাড়া সম্ভব নয়।”
রাহিনের ভেতরটা কেমন করে উঠল। ওর দু চোখে পুনরায় হতাশা নেমে এসেছে। একটা ভয়াবহ ঘটনা উদয় হওয়ার কল্পনায় ছেলেটি অসুস্থ বোধ করছে।
নতুন ফোনে সিম কার্ডটা লোড করেই ঝিলকে কল করল অভিনব। তরুণ জানিয়েছে মৌনতা ফোন রিসিভ করে নি। তাই ঝিলকে কিছুই জানানো যায় নি। অভিনব ভেবেছিল শুরুতেই মেয়েটি অভিযোগ করে বসবে। কিন্তু আশ্চর্য জনক ভাবে ঝিল কিছুই বলল না। শুধু একবার বলল, “আমায় কখনো ছাড়বেন না তো অভিনব?”
কি যন্ত্রণা! মেয়েটি এসব বলছে কেন? সে কি করে বোঝাবে হৃদয়ের সবটুকু জুড়ে যে একটিই নাম। ঝিল এবার কেঁদে ফেলল। ওর এই কান্নার শব্দ ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে।
“আপনি ভয় পেয়েছিলেন প্রজাপতি?”
“খুব।”
“একটা কথা বলছি। সবসময় মনে রাখবেন।”
“হুম।”
“আপনার অভিনব আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। প্রয়োজনে পৃথিবী ছেড়ে দিবে কিন্তু আপনাকে নয়। আপনি যে আমার সবত্র জুড়ে। হৃদয় যে ভীষণ ব্যকুল ঝিল। বলেন তো আপনাকে কি করে বোঝাই ভেতরের অবস্থা।”
ঝিলের কান্না থেমেছে। মেয়েটি হাতের তালুতে চোখ মুছে নিয়ে বলল, “মনে থাকবে আমার। কিন্তু আমার অপেক্ষার শেষটা যেন বিষণ্ণ না হয়।”
“হবে না। কথা দিচ্ছি আপনাকে।”
অনেক্ষণ কথা হলো ওদের। অভিনব বেশ কষ্টে চেপে যাচ্ছে অসুস্থতা। বারংবার শরীর শিরশির করে যাচ্ছিল।
রোহনের কাছে মিথ্যে বলতে খারাপই লেগেছে মৌনতার। ছেলেটি বোধহয় বুঝেছিল। তাই পুনরায় মৌনতার সাথে কথা বলে নি। এমনকি ওদের দেখাও হলো না আর। এসব নিয়ে মৌনতার বেশ খারাপ লাগছিল। তখুনি নজরে এল ফোনটা। ভুলে ফেলে এসেছিল। ভাগ্যিস মা পেয়েছিলেন। নতুবা ফোনটা আর পাওয়া যেত না। ফোনের লক স্ক্রিনে তরুণের মিস কল দেখে ভ্রু কুচকে গিয়েছে ওর। তখুনি কল করল সে।
“কি হয়েছে?”
“কি হবে। আপনিই তো কল করেছিলেন আমায়।”
“তো এগার ঘন্টা পর কল ব্যাক করবে!”
“শুনেন আমার কাছে ফোন ছিল না।”
“ও আচ্ছা ফোন বুঝি বয়ফ্রেন্ডের কাছে ছিল।”
“এসব বাজে কথা বললে মে রে আপনার নাক ফা টি য়ে দিব।”
“ওরে আমার ফাইটার। মেয়ে মানুষ আবার নাক ফা টা বে।”
“আপনি তো আস্ত এক ঝগড়াটে।”
“উফ তুমি বুঝি ভদ্র নাদান বাচ্চা!”
“তো?”
“ধুর, তোমার সাথে ঝগড়া করার মুড নেই আমার।”
“তো কল কেন করেছিলেন।”
“ও হ্যালো তুমি আমায় কল করেছ।”
“প্রথমে তো আপনিই করেছন।”
তরুণের সাথে ওর ঝগড়া চলল আরও কিছু সময়। তারপর সে জানাল অভিনবর কথাটা। পুরো ঘটনা শুনে মৌনতার চোখ কপালে। সে কল রাখতেই নজরে এল রোহন। চোখ দুটি ইষৎ লাল। মৌনতার বাহু চেপে ধরেছে। ভয়ে মেয়েটি প্রায় কেঁদে ফেলল।
“হাউ ডেয়ার ইউ লাই টু মি?”
ব্যথায় চোখ দিয়ে পানি বের হয় এসেছে। মৌনতার গলার স্বর কেমন নেতিয়ে পড়ল।
“রোহন ব্যথা পাচ্ছি আমি।”
“এমনটা কেন করলে তুমি? কেন সত্যটা চেপে গেলে।”
“আমি ব্যথা পাচ্ছি রোহন।”
“আনসার মি।”
“আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই মিথ্যে বলেছি।”
রোহন এবার আরও বেশি রেগে গেল। মৌনতার বাহু ছেড়ে দিয়েছে। যন্ত্রণা হচ্ছে মেয়েটির। এর থেকে বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে মনের ভেতরে। অশান্ত হয়ে উঠেছে হৃদয় মাঝার। রোহনের দুটি চোখে জ্বলছে আগুন। মৌনতার এমন আচারণ ওকে পুনরায় কষ্ট দিল।
চলবে…
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি
**আজ কিন্তু ফারহান ফারাবির গল্প আসবে। ৬০ টাকা রেডি তো পাঠকরা?**