#শখের_সাদা_শাড়ি
৫.
আধ ঘন্টা ধরে দরজা বন্ধ করে কি যে করলো উর্মি তা কেউ ই বুঝলো না। সর্বশেষ মুখ কালো করে বের হলো অন্তু। বেশ বকা খেয়েছে আজ। এমন অপকর্ম করলে বকা তো খেতেই হবে। ছাদে গিয়ে উর্মি দেখে পাশের বাসার এক বাচ্চার সাথে ইশারা করছে অন্তু। এতো পেকে গেছে? যখন টেনে ঘরে নিয়ে এসে প্রশ্ন করা হয় তখন অন্তু জানায় এটাই সেই মেয়ে যার গালে সেদিন চুমু দিয়েছিলো। তারপর উর্মি বেশ কড়া কে বোঝায় এই বয়সে এমন করা ঠিক কত টা অপরাধ। তাছাড়া এতে ফ্যামিলি তে নালিশ আসবে। পুরো বদনাম হয়ে যাবে। অন্তু বোধহয় বুঝেছে বিষয় টা। ছোট মানুষ সে, চারপাশে যা দেখে তাই করে বসে। তবু উর্মি নরম হলো না। আজ যদি শাসন না করা হয় তাহলে পরে ভুগতে হবে। যা চায় না উর্মি। সন্ধ্যায় উর্মি খেতে বসলো। কাচ কলার তরকারি। স্বাদ টা ভালো তবে কেন যেন পেটে জায়গা হলো না। আচমকাই বমি করে ভাসিয়ে দিলো মেঝে। এই অহেতুক বমির কারন অনুধাবন হলো না। মেঘনা চটজলদি সব পরিষ্কার করলো। বিছানায় এসে বসলো উর্মি।বোধহয় এতো টেনশন শরীরে কুলোয় না। রাত দিন খেটে বাড়ি তে এসে ও সেই টেনশন নিতে হয়। একটা মানুষের পক্ষে যন্ত্র সৃষ্টি সম্ভব তবে নিজে যন্ত্র যন্ত্র হয়ে যাওয়া টা একে বারেই অসম্ভব। নুন চিনির সরবত গুলিয়ে এনেছে মেঘনা। বাসায় স্যালাইন এর একটা প্যাকেট ও অবশিষ্ট নেই। সরবত টা খেয়ে নেয় উর্মি। ভীষণ বাজে লাগে এর স্বাদ টা। তবে সুস্থ না হলে কাল অফিস যেতে পারবে না। এতে করে সৌমেন স্যার রেগে যাবেন। জয়েন এর পর পর ই যদি এমন করে অসুস্থ হয় তাহলে কি চলবে নাকি? মাথার খুব নিকটে বসে মেঘনা আলগোছে মাথা টা কোলের উপর রাখে উর্মি।
” অন্তু কে থামাতে হবে আপা। না হলে পরে পস্তাতে হবে। ”
” কেন? সে আবার কি করেছে। ”
” অন্তু যাকে চুমু দিয়েছে সে জানিস কে? ”
” কে? ”
” সুলেখা ফুপুর বড় ভাইয়ের নাতনি। ঐ যে কিছু দিন আগে সৌদি থেকে আসলো না। ফুটফুটে একটা মেয়ে। নাম টা ভুলে গেছি। জানিস আজ দেখলাম ছাদ থেকে ঈশারায় কথা বলছে। আমার মাথা ঠিক নেই রে আপা। কিছু ভালো লাগে না। ”
” ধুর এতে টেনশন করার কি আছে। বাচ্চা রা তো খেলাধুলো করবেই। ”
” বুঝতে পারছিস না। এতে অনেক কিছু হতে পারে। ”
” তাহলে বাসায় জানাবি কথা টা? ”
” এটা আরো সমস্যার। বড় ভাবি জানতে পারলে অন্তু কে আরো লেলিয়ে দিবে। বড় লোকের মেয়ে, দেখতে সুন্দর সব মিলিয়ে বড় ভাবির রাজকপাল। এমন টাই বলবে পারলে এই বাচ্চা বয়সেই বিয়ে করিয়ে নিবে। আর ছোট ভাবি জানলে সুলেখা ফুপুর কান ভাঙাবে। তিনি কি কি করতে পারে সেটা তো ভালোই জানিস। ”
” তাহলে কি করা যায় বল তো। ”
এতোক্ষণ পর মেঘনার কন্ঠে ও তীব্র ভয়ের আভাস। রুচিশীল ফ্যামিলির মানুষ হলে ও পয়সার দিক থেকে নগন্য। বাবার রেখে যাওয়া এই বাড়ির এক টা অংশ ব্যতীত আর কিছুই নেই। মোটামুটি ভাবে চলছে সংসার টা। এখন যদি অহেতুক কেচ্ছা রটে যায় তাহলে চরম মূল্য চুকাতে হতে পারে। সেসব ভেবে উর্মির চোখ দুটো অস্থির হয়ে এলো। তবে মেঘনার কথা মনে করে শান্ত হলো। বাচ্চা পেটে রেখে টেনশন করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। প্রসঙ্গ বদল করে উর্মি ঘুমাতে এলো।
সচরাচর বাস পাওয়া যায় না। আজ যেন উর্মির জন্যই অপেক্ষা করছিলো বাস টা। উর্মি সবার আগে অফিস পৌছালো। দারোয়ান সালাম দিতেই উর্মি বলল–
” সৌমেন স্যার কি এসেছেন? ”
” স্যার তো কাল অফিস থেকে যান ই নাই। এখানেই তো আছেন। ”
” ও। আর কেউ আছেন? ”
” না। আর কেউ ছিলো না। ”
ভাবনা নিয়ে এগোয় উর্মি। সৌমেন স্যার কাল বাড়ি ফিরেন নি। তাহলে অফিসের সবাই কে কেনো ছুটি দিলেন। হঠাৎ এতো রেগেই ছিলেন কেন। কি আছে এর আগে পিছে। ভাবতে ভাবতে লিফ্ট এর কাছে পৌছে গেল। একজন লোক বের হচ্ছে দেখে সাইট হয়ে দাড়ালো। লিফ্ট এ চরে নির্দিষ্ট ফ্লোরে প্রেস করে দিয়ে চুপ করে রইলো। নিজের ডেক্স এ এসে আবার সৌমেন স্যার এর কেবিনে এলো। সৌমেন উবু হয়ে শুয়ে আছে টেবিলের উপর মাথা রেখে। অদ্ভুত লাগলো দেখতে। একবার ভাবলো ডাকবে তারপর ভাবলো কোনো দরকার নেই। তবে হঠাৎ করেই চোখ গেল পরে থাকা ইনহেলার এর দিকে। সেটা তুলে দিয়ে যেই না ফিরবে তখনি চেচিয়ে উঠলো উর্মি। সৌমেন এর নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। একি মসিবত! সময় নষ্ট না করে দারোয়ান কে ডেকে নিয়ে আসে উর্মি। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসার জোগাড়। অফিসে সে প্রথম পা দিয়েছে। এতে করে সৌমেন স্যার এর এক বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি হলে ও এর জন্যে উর্মি কে সবার প্রথম নাকাল হতে হবে। হসপিটালে নিয়ে এসে আরো চিন্তায় পরে গেল। মেঘনা কে একটা কল করলো।
” হ্যাঁ রে উর্মি এই টাইমে তো কল করিস না। তুই ঠিক আছিস তো। শরীর খারাপ লাগছে কি। ”
” আপা আমি ঠিক আছি। তুই খেয়েছিস নাকি সেটা জানার জন্য কল করলাম। আর অন্তু কোথায় রে? ”
” অন্তু কে দেখলাম টিভি দেখে। আর আমাকে খাইয়েই তো বের হলি। ভুলে গেলি নাকি। ”
” ও হ্যাঁ। একদম ই ভুলে গেছি। আচ্ছা কাজ করতে দিলে দেখে শুনে করবি। ভারী কিছু তুলবি না। ছোট ভাবি কথা শুনালে ও না। ”
” ঠিক আছে। কিন্তু তোকে কেমন যেন অস্থির লাগছে। ”
” চাপে আছি তো তাই। রাখছি রে। ফলের জুস রেখে এসেছি। ফ্রিজ থেকে নিয়ে সরাসরি খাস না আবার। ঠান্ডা কমলে তারপর খাবি। ”
” ঠিক আছে ম্যাডাম। ”
ফোন রেখে হাঁটু তে মুখ গুজে দেয় উর্মি। ভালো লাগে না। মাথা টা কেমন ঝি ঝি পোকার মতো শব্দ করে। সৌমেন স্যার এর বিষয় টা ওকে আরো বিচলিত করে তুললো। কি দরকার ছিলো আগ বাড়িয়ে সৌমেন স্যার এর কেবিনে যাওয়া।
এক বোতল পানি কিনে এগিয়ে এলো সমীর। পথের ধারে বসে আছে উর্মি। কেমন যেন অগোছালো লাগছে। বোতল টা ব্যাগে রেখে উর্মির পাশাপাশি বসলো। অথচ উর্মি টের ও পেল না। মন দিয়ে কি এমন রাজকার্যের কথা ভাবছে মেয়েটা। সমীর নিশ্বাস চেপে রইলো। আর তারপর ই শুধালো–
” এখানে বসে আছেন যে। আমার জানা মতে এখন তো অফিস টাইম। ”
উত্তর আসে না। হাত টা এগিয়ে নিয়ে আবার গুটিয়ে ফেললো। খ্যাক করে কাশলো। এবার মনোযোগ এলো। ভীষণ ভাবে চিন্তিত দেখালো। উর্মি বোধহয় ঘোর এর মাঝে আছে।
” আপনি ঠিক আছেন? পানি খাবেন। আমার কাছে পানি আছে। ”
পানি বের করে দেয় সমীর। এক সেকেন্ড ব্যয় করলো না। ঢগঢগ করে পানি খেতে লাগলো। তারপর স্থির হয়ে বুঝতে পারে এতোক্ষণ কি ঘটেছে। বৃথা হাসার চেষ্টা করে উর্মি। তবে সমীর এর ধারালো দৃষ্টি।
” কি হয়েছে উর্মি। আপনাকে এমন অস্থির আর দুর্বল লাগে কেন? অফিসে যান নি?”
” গিয়েছিলাম,আবার চলে আসছি। ”
” অহ ঠিক আছে। তবে এখানে বসে বসে কি করছেন। কেমন যে আছেন সেটা যে মুখের ভঙ্গিমাতেই প্রকাশ। ”
” আসলে আমি ক্লান্ত। ”
” সেটা তো বুঝলাম। তবে ক্লান্তি টা শুধু কাজের প্রেসার থেকে নাকি আদার্স কোনো ইস্যু। ”
একটু থামে সমীর। তারপর আবার বলে
” আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন উর্মি। আমি কি পৌছে দিবো আপনাকে। ”
” না না এখন যেতে পারবো না। ”
” আচ্ছা ঠিক আছে। তবে এখানে কেন? ”
” স্যার হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পরেছেন। সেই জন্যই এখানে আসা। ”
” সৌমেন ভাই অসুস্থ! ও সীট, আমি তো ভাবলাম ভাই হয়তো আদার্স কোনো ইমপরট্যান্ট ওয়ার্ক নিয়ে বিজি। বাট! ”
সব টা খোলসা করে বললো উর্মি। এখন শান্তি লাগছে। পেটের কথা কাউ কে না বলে থাকা যায় নাকি? সব টা শুনে ব্যথিত হয় সমীর। সে জানায় সৌমেন কে দেখতে যাবে। উর্মি নিজে ও পিছু পিছু হাঁটে।
চলবে…..
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
পর্ব ৬
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=153222777238625&id=100076527090739