শখের_সাদা_শাড়ি_২ ৬.

0
119

#শখের_সাদা_শাড়ি_২
৬.
সৌমেন এর খাবারে ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত করতে গিয়ে উর্মির হাত টা কেঁপে উঠলো। আজ দশ টা দিন হলো নিজেকে আড়াল করতে ছেলেটার খাবারে ঘুমের ঔষধ মিশায় সে। কখনো কখনো অনুসূচনা হয় আবার বা কখনো নিজের প্রতি রাগ হয়। সবার ভালো থাকার দায়িত্ব নিশ্চয়ই ওর কাধে না? তবে বার বার কেন নিজেকে অসুখী করে অপর কে সুখী করবে সে!
এসব ভাবতে ভাবতেই মেঘনার কল এলো। ভিডিও কল হওয়া তে সাগরিকার মুখ টা দেখতে পেল উর্মি। কি সুন্দর মায়াবি সেই চাহনী। ফোনের ওপাশ থেকে হাত নাড়াচাড়া করে। যেন ছুটে আসতে চায় উর্মির নিকটে। দু চোখ ছলছল করে উঠলো। একটু আগের কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়। সৌমেন এর খাবারে আর কখনো ঘুমের ঔষধ মিশাবে না বলে স্থির করে। সমীর এর সাথে আজ এক সপ্তাহ ধরে যোগাযোগ নেই। উর্মির মন ভীষণ ক্ষিপ্ত। শুকিয়ে যায় গলা। চোখ পিট পিট করছে। ভাঙা গলায় আওড়ায় সে ” ভাগ্যের উপর সব ছেড়ে দিলাম। যা হবার হবে। ”

মেঘনা ওপাশ থেকে বলে ” কি বলিস তুই। এভাবে বিড়বিড় কেন করিস? ”

” না রে আপা। কিছু বলছি না তো। সাগরিকা কে খাইয়েছিস? ”

” হ্যাঁ। একটু আগেই খেয়েছে। জানিস বোন মেয়েটা না খুব ই লক্ষী। এই যে এখন খেল সারা রাত না খেলে ও জেগে উঠে না। উল্টো আমি টেনে তুলে খাওয়াই। ”

চোখ হাসে উর্মির। সাগরিকার দিকে তাকিয়ে আপসোস এর সুরে বলে
” ওকে কোলে নিতে ইচ্ছে করছে রে আপা। ইস একটু যদি জড়িয়ে ধরতে পারতাম। ”

” আপসোস কেন করো উর্মি? তোমরা বেবি নিলেই তো পার। এখন তো সবাই খুব ফাস্ট। বিয়ের মাসে ও অনেক এর প্রেগনেন্ট হওয়ার খবর আসে।”

লায়লা এসে দাড়ালো। উর্মি মুখ ফুটে বললো ও না বসতে। সে নিজেই বসে পরলো পাশে। সৌজন্যতা রক্ষার্থে মেঘনা হাসলো। লায়লা হাত নাড়িয়ে মেঘনার সাথে কথোপকথন শুরু করলো ” ওয়াও, বেবির কি যেন নাম? ”

” সাগরিকা। ”

” ইয়াহ। সাগরিকা লুক লাইক আ পিন্সেস। খুব ই সুন্দর। ওর বাবার মতো হয়েছে রাইট? ”

মলিন দেখালো মেঘনার মুখ। বিরক্তি ঠেলে নিয়ে উর্মি বলল ” না। সাগরিকা আপার মতো হয়েছে। ”

” অহ আচ্ছা। বাট মেঘনা কে খুব একটা হোয়াটএভার। মেঘনা তোমার হাসবেন্ড কে তো দেখলাম না। ”

মেঘনা দিক বিভ্রান্ত হলো। উর্মির ভ্রু যুগল বেঁকে আছে। লায়লা যে ওদের খোচাতে এসেছে এই নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মেঘনার চোখ দুটো ভিজে একাকার। লায়লা অধর কোনে ক্রুর হাসি হাসে। উর্মি যেই না কঠোর জবাব দিবে ঠিক তখনি মেঘনার পেছন থেকে আলিদ বলে ” বাবু ঘুমিয়েছে মেঘনা? ”

চমকিত হয় মেঘনা। আলিদ কাছে আসে। লায়লার চোখ দুটো বড় বড়। আলিদ কে দেখে হতবিহ্বল! উর্মির ঠোঁট দুটো প্রসারিত হয়। একটু বাদে আলিদ ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে হাত নাড়ায় ” বোনের সাথে কথা হচ্ছে। এদিকে ভাইয়া কে ভুলে গেছিস তাই না? ”

” আপনাকে ভুলি কি করে আলিদ ভাই। ”

” হ্যাঁ। তা তো দেখছিই। আমার মেয়ে আর মেয়ের মায়ের সাথে কথা হচ্ছে অথচ আমার খোঁজ ও নিলি না। ”

উর্মি খুশি হয়। আর মেঘনা হয় অবাক। বোকার মতো তাকিয়ে থাকে লায়লা। সে যেন অবাকের শীর্ষে। যদি ও সব টা জানে সে। তবু ও মুখ খুলে না। পাছে যদি ফেসে যায়। পরিস্থিতি ঠিক না দেখে লায়লা বেরিয়ে যায়। শ্বাস ফেলে আলিদ। মেঘনা চোখ মুছে।
” স্যরি। এটা ছাড়া উপায় ছিল না। ”

উত্তর করে না মেঘনা। উর্মি বলে ” ভালো করেছেন আলিদ ভাই। উত্তম জবাব। আপা কে খোঁচা মেরেই প্রশ্ন করেছে। ”

” সেই জন্যেই ঐ সব বললাম। ”

টুকটাক কথা হলো উর্মির সাথে। উর্মি কল রাখতেই মেঘনা বলল ” কখন এসেছো? ”

” অনেকক্ষণ হলো। ”

” বসো কফি বানাই। ”

” উহু কফি খাবো না। ”

” তাহলে খালি মুখে যাবে? ”

” এই বাসাতেই তো থাকছি। প্রতিবেশি এখন। অন্য একদিন খাবো না হয়। ”

মেঘনা না বোঝার মতো করে থাকে। আলিদ সাগরিকার পাশে আধ শোয়া হয়ে শুয়ে বলে ” ইস সাগরিকা আমাদের মেয়ে হলে ও তো পারতো। ”

বাথরুমে এসে কেঁদে ফেলে মেঘনা। মানুষ টা কেন এখনো পরে আছে? কোন আশা তে পরে আছে। ওর নিকট তো কিছুই নেই। উল্টো ছেলে টা কে কষ্ট দিয়েছে। প্রতারণা করেছে। সত্যিই যদি সেদিন বাবার কথায় রাজি না হতো তাহলে হয়তো সাগরিকা ওদের মেয়ে হতো।

.

সিগারেট ধরালো সমীর। এই নিয়ে পর পর আটাশ টা সিগারেট নষ্ট করেছে ছেলেটা। অথচ এক টা সিগারেটের এক অংশ ও বুকে টানার সাধ্য হলো না। হবেই বা কি করে! সিগারেটের ভোটকা গন্ধে ওর নিজের ই বমি আসে সেখানে খাওয়া তো দূরের কথা। তবে এক সপ্তাহের চেষ্টায় সিগারেট কে নাকের কাছে নেওয়ার মতো ক্ষমতা লাভ হয়েছে। জীবন টাই এমন। সময়ের সাথে সাথে সব কিছুই বদলে যায়। মানুষ এর স্বভাব কিংবা দীর্ঘদিনের অভ্যেস। সব ব‍দলাতে বাধ্য।
মিষ্টি মৃধা ছেলের পাশে এসে বসলেন। দ্রুত সিগারেট লুকালো সমীর। মায়ের দিকে তাকানোর সাহস হলো না। মিষ্টি মৃধা চুপ রইলেন। অন্য সময় হলে বিষয় টা ভিন্ন হতো। ছেলের গালে হাত বসাতে দু বার ভাবতেন না তিনি। আর সমীর নিজে ও এভাবে গুটিয়ে থাকতো না। মা ছেলের মৌনতা যেন কাটছেই না। হঠাৎ ই মায়ের কোলে মাথা এলিয়ে দিলো সমীর। বুকের ভেতর টা ধক করে উঠলো মিষ্টি মৃধার। ছেলের মাথায় হাত রেখে ক্ষনিকেই বুঝে গেলেন ছেলের ভেতরের অবস্থা। হাউ মাউ করে কাঁদতে চাইছে তার ছেলেটা। অথচ কান্না আসছে না। স্বভাবে নেই যে। কিছু সময় থেকে উঠে এলেন মিষ্টি মৃধা। বুকের ভেতর টা যন্ত্রণায় হাঁফসাঁফ করছে। কি করবেন ছেলেটার জন্য?

জীবনের বহু বছর পর সওলাত খান কে ফোন করলেন মিষ্টি মৃধা। দুজনেই চুপ। মিষ্টি মৃধা কথা বলছেন না দেখে সওলাত খান বললেন ” কে বলছেন? কথা বলুন। কে আপনি? ”

কয়েক বার চেষ্টা করে ও ব্যর্থ হলেন মিষ্টি মৃধা। কল কেটে দিয়ে চোখ বুজলেন। ছেলের মুখ টা মনে হতেই নতুন করে জেগে উঠলেন তিনি। আবার ও কল করলেন। এবার কথা বলার পূর্বেই সওলাত খান বললেন ” মিষ্টি? ”

শতেক সুচের আঘাতের মতো কথা টা কানে এসে লাগলো। মিষ্টি মৃধা কাঁদছেন। তবে সেটার প্রকাশ নেই। গলা টা ধরে আসছে তবে সেটার স্বর নেই। তিনি খুব ই স্বাভাবিক ভাবে বললেন ” মানেন বা না মানেন আমি এখনো আপনার স্ত্রী। কোনো দিন কিছু চাই নি আপনার নিকট। আজ চাইবো। আর সেটা দিতে ও হবে।”

সওলাত খান সাবলীল গলায় হেসে বললেন
” বলো তোমার কি চাই? ”

” আমার ছেলের সুখ। ”

সিয়াম এসে খবর দিলো সমীর নাকি জ্ঞান হারিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি মৃধার গলা টা কেঁপে উঠলো। ছুটে গেলেন তিনি। জীবনে কোন ঝড় আসতে চলেছে?

মাথা ধরেছে উর্মির। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কল টা রিসিভ করলো।
” কেন আমার ভাইয়ের জীবন টা নষ্ট করলেন? কি করেছিল আমার ভাইয়া। কি দোষ ছিল? বলেন কেন আমার ভাইয়া কে ধোঁকা দিলেন। ”

আকাশ থেকে পরলো উর্মি। সে বলল
” বুঝতে পারছি না কিছু। কে আপনি? ”

” এখন বুঝবেন ও না। রাজত্ব পেয়েছেন কি না। আপনার জন্য, শুধু মাত্র আপনার জন্য আমার ভাইয়া হসপিটালে শুয়ে আসে। গট ইট যদি আমার ভাইয়ার কিছু হয় আমি কাউ কে ছেড়ে দিবো না। ”

উর্মির হৃদয়ে আঘাত লেগেছে। সন্দেহ টা সঠিক হলো যখন শৌখিন ওকে কল করলো। হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো উর্মি। বার বার নিজেকে সব কিছুর জন্য দায়ী মনে হচ্ছে।

** কলেজ থেকে প্রচুর চাপ যাচ্ছে। ২১ তারিখ থেকে এক্সাম। অনিয়মিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই প্রিয় পাঠক রা। **

চলবে……
কলমে ~ ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here