শখের_সাদা_শাড়ি_২ ৭.

0
117

#শখের_সাদা_শাড়ি_২
৭.
হসপিটালে প্রবেশ মাত্র উর্মি কে মুখোমুখি হতে হলো সমীর এর ছোট ভাই সিয়াম এর নিকট। উর্মি কে চিন্তে অসুবিধা হয় নি ওর। ছেলেটার চোয়াল শক্ত। পর পর হাতের মুষ্টিবদ্ধ করলো ” কেন এসেছেন? ”

” তুমি? ”

উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না সে। উর্মির উপর চেচাতে লাগলো ” লীলা! লীলা খেলা দেখাতে এসেছেন। আমার ভাইয়ার জীবন টা শেষ করে দিয়ে এখন সুখে সংসার গড়েছেন। স্বার্থপর একটা। ”

” তোমার ভাইয়া এখন কেমন আছে? ”

” চুপ একদম কথা বলবেন না। বেরিয়ে যান বলছি। আমার ভাইয়ার মুখ দর্শন ও করবেন না আপনি। ”

” সিয়াম দেখো, তোমার ভাইয়ার সাথে দেখা করা জরুরী। ”

” কোনো দরকার নেই। বেরিয়ে যান এখনি। লাগবে না কাউ কে। আমার ভাইয়া এমনি তেই সুস্থ হয়ে যাবে। ”

আবার ও চেঁচাতে লাগলো সিয়াম। উর্মি উদাশীন ভাবে বেরিয়ে যেতে নিয়ে ও গেল না। চোখের কোন থেকে পানি মুছে সিয়াম কে অবজ্ঞা করে ছুটতে লাগলো। পথিমধ্যে শৌখিন কে পেয়ে গেল।
” শৌখিন ভাই সমীরের কি অবস্থা? ”

” ঠিক আছে এখন। ”

” আমি দেখা করতে পারি? ”

” মেইবি। দেখো ফাইফ জিরো থ্রি কেবিনে আনা হয়েছে। ”

” ধন্যবাদ। ”

ফাইফ জিরো থ্রি কেবিনে এসে থমকে গেল উর্মি। বাহিরে দাঁড়ানো সমীর এর বাবা সওলাত খান। ভদ্র লোক কে চিনে উর্মি। বিখ্যাত একজন মানুষ! অস্বস্তি ঠেলে দাড়ায় উর্মি।
” আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল। আমি উর্মি, সমীর এর বন্ধু। ওর সাথে দেখা করা যাবে? ”

সওলাত খান উত্তর দেওয়ার পূর্বেই সিয়াম বাঁধা হলো।
” বললাম না চলে যেতে। এখনো যান নি কেন। লাজ লজ্জার লেশ মাত্র নেই। ”

” ভদ্র ভাবে কথা বলো। আমি তোমার বড়। ”

” অভদ্রতার কি দেখেছেন? অভদ্র প্রতারক তো আপনি। ”

” আমি প্রতারক। সব ঠিক আছে। প্লিজ এখন জেতে দাও। ”

” না কোথাও যেতে পারবেন না আপনি। ”

সওলাত খান মাঝ থেকে এবার বললেন ” ওকে যেতে দাও সিয়াম। ”

রাগের মধ্যে আর ও রাগ জেগে উঠে সিয়াম এর। সওলাত খান কে দু চোখে সহ্য হয় না ওর। ছেলের দৃষ্টি তে ঘৃনা দেখে আহত হলেন তিনি। তবু বললেন ” ভেতরে যাও উর্মি। ”

চলে গেল উর্মি। রাগে কটমট করতে করতে চলে যাচ্ছে সিয়াম। যাওয়ার সাথে সাথে ওয়েটিং চেয়ার গুলো তে লাথি মেরে গেল। সওলাত খান দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললেন। ছোট ছেলে সম্পর্কে যতো টুকু জানতেন এ যেন বিপরীত চিত্র। মানুষ বুঝি এভাবে পরিবর্তন হয়?

সিয়ামের করা বেয়াদবি শোনা মাত্র রেগে গেল সমীর। উর্মি করুণ চোখে তাকালো শৌখিন এর নিকট। শৌখিন বলল ” থাক ছেলেটা কে আর কিছু বলিস না। ”

” সেটাই। ছোট মানুষ বুঝে উঠে নি ঠিক। তাছাড়া কোনো কিছুই তো মিথ্যে নয়। ”

” চুপ করো তুমি। ওর সাহস কি করে হয় এমন বেয়াদবি করার। এমন হলে তো চলবে না। ”

” বাদ দাও এসব। এখন চুপ করে শুয়ে থাকো তো। ”

” শুয়েই তো আছি। ”

পুরো কথা টা কানে আসলো না উর্মির। দু চোখ এখনো ভেজা। সমীর এর নিকট আসতেই আর ও বেশি জ্বালা করছে চোখ। শৌখিন চলে গেছে। সমীর উঠে বসার চেষ্টা করলো ” উঠো না। ”

” কিছু হবে না। তুমি কাঁদছো কেন? ”

” কান্না করবো না? তুমি কি বলো তো। কেন এমন করছো। না খেয়ে থেকে আবার সিগারেট এর গন্ধ শুকতে গেছো। পাগল তুমি? ”

” পাগল ই তো। এটা তো তুমি ভালোই জানবে। ”

” চুপ করবে প্লিজ। ”

কিছু সময় চুপ রইলো সমীর। ঘড়ির দিকে নজর যেতেই বলল ” রাত এগারো টা বাজে। বাড়ি ফিরতে হবে তো। ”

” উহু যাবো না। ”

” পাগল হলে? ”

” কেন? ”

” শশুর বাড়ি তে তুমি। এখনো গেস্ট আছেন ঐ বাসায়। কি ভাববে সবাই? ”

” যা ভাবার ভাবুক। আর কিসের শশুর বাড়ি? বিয়েই তো না। ”

” আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। বিয়ে না হোক। ঐ টা তোমার দায়িত্ব ছিলো বোকা। আর দায়িত্ব পালন করবে না? ”

” একদিন ই তো। ”

” অনেক টা সময়। কাল না হয় আবার এসো। আজ যাও প্লিজ। ”

উঠে এলো উর্মি। যাওয়ার পূর্বে ভেজা চোখে তাকালো। ছেলেটার কপালে বার বার ঠোঁট ছোয়াতে ইচ্ছে হচ্ছে। তবে কেন যেন কাজ টা করতে পারছে না। দরজার নিকটে এসে রুখে দাড়ালো। আচানাক ছুটে এসে সমীর এর হাত মুঠো বন্দী করলো। ছেলেটার কপালে শুষ্ক চুমু দিয়ে বলল ” আমার মরণ কেন হয় না বলো তো। আমি যে সমস্ত কুল হারিয়ে ফেললাম। ”
.

সৌমেন এর মেজাজ গরম। কারণ গত দুদিন ধরে উর্মি কে দেখতে পায় নি সে। মাইশা মাইশা করে পুরো বাড়ি মাতিয়ে ফেলেছে। এদিকে ওকে সামলাতে গিয়ে সবার হীমসীম অবস্থা। উর্মি গত দুদিন ধরে নিজের বাসায় অবস্থান করছে। সে যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ! সৌমেন এর খাবারে আর মেশাবে না ঔষধ। এখন কি উপায়? ঔষধ না মেশালে যদি কোনো কিছু ঘটে যায়। এ সকল চিন্তা থেকেই দুদিন নিজের বাসায় থাকলো সে। তবে আজ যেতেই হবে। ফোন এসেছে। সৌমেন পাগলামি করছে। বউ বউ করে মাথা নষ্ট করে দিচ্ছে। অথচ উর্মি ওর বউ ই না। অবশ্য কাগজে কলমে এ কথা মিথ্যে। মনের সত্যতায় যায় আসে কার? সব তো কাগজের খেলা। রিক্সায় উঠলো উর্মি। গেটের কাছে এসে দাড়িয়েছে মেঘনা। কোলে সাগরিকা। উর্মি লক্ষ্য করলো চার তলার ব্যলকনিতে দাঁড়ানো আলিদ। উর্মি হাসলো। আজ কাল কেমন যেন ভালোবাসায় তিক্ততা অনুভব হয়। তবে আলিদ কে দেখলে প্রশান্তি মেলে।ঐ যে ছেলেটা কেমন করে আগলে চলেছে মেঘনাকে। বিলাসবহুল বাড়ি গাড়ি ছেড়ে পুরনো বাড়ি টায় ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠেছে। শুধু মাত্র মেঘনার নিকটে থাকার জন্য। বাচ্চা টাকে নিয়ে পরে থাকে সারাক্ষণ। গত রাতেই কথা হয়েছে উর্মির সাথে। আলিদ জানিয়েছে সাগরিকা কে নিজের সন্তানের স্নেহ দিতে চায়। মেঘনা যেহেতু চায় না সম্পর্ক হোক সেহেতু নাই বা হলো সম্পর্ক। তবে বাচ্চা টার ভালো মন্দে পাশে থাকাই তো যায়?
উর্মি বিশেষ কিছু মতামত দেয় নি। কারন ও জানে একদিন না একদিন দুটি হৃদয় এক হবে। অবশ্য সেটার জন্য খুব বেশি কসরতের ও দরকার নেই। উর্মি তো ভেবেই নিয়েছে। কিছু দিন পর এই নিয়ে পারিবারিক এক সভায় বসবে। পাছে ভয় যদি কেউ বাজে কথা শোনায়। আজকাল এর পরিস্থিতি আর মানুষের বিবেচনা বোধ নিয়ে প্রশ্ন না করাই ভালো। মেঘনা ছুটে এসে বোনের হাত টা ধরলো।
” কি হলো আপা? ”

” ওকে চলে যেতে বল না প্লিজ। আমার ভীষণ অস্বস্তি হয়। ”

” ধুর। অস্বস্তি কেন হবে? মানুষ টা তো ভালোই চায়। তাছাড়া এই বিষয়ে আমি বললে ও ভাইয়া শুনবে না। ”

অন্যমনস্ক ভাবে উত্তর করলো মেঘনা
” কি করি বল তো। ওর গরম সহ্য হয় না। অথচ তিন পাখা ওয়ালা লো পাওয়ারের ফ্যানের নিচে দিন কাটাচ্ছে। ”

” এতোই যখন চিন্তা তবে হাত পাখা নিয়ে বাতাস কর না। ”

মুখ চেপে হেসে নিলো উর্মি। মেঘনা ভ্রু কুচকে বলল
” সাবধানে যাস। ধকল তো কম যাচ্ছে না। ”

” হুম। হসপিটাল হয়ে তারপর ফিরবো। ”

” পৌছে কল করিস। ”

” হুম। ”

রিক্সা চলতে শুরু করলো। বাতাসের গতি খুব বেশি নয়। তবে গরম লাগছে না খুব একটা। শাড়ি পরেছে উর্মি। আঁচল টা হালকা উড়ে যেতেই একটা ঘটনা স্মরনে এলো। সমীর এর সাথে বন্ধুত্ব তখন। এক দিন দুজনেই রিক্সায় উঠেছে। মূলত লেট হয়ে গিয়েছিল। সেদিন ও শাড়ি পরেছিল উর্মি। আঁচল উড়ে গিয়ে রিক্সার চাকায় বিঁধে যায় একটুর জন্য দূর্ঘটনা ঘটে নি। তারপর থেকে সমীর সব সময় উর্মির আঁচল ধরে বসে থাকতো! বিষয় টা মজা দিতো ওকে। কত সুন্দর ছিল সেসব। অথচ দমকা হাওয়ায় এলোমেলো আজ। হসপিটালের ভেতরে চমক অপেক্ষা করছিল উর্মির জন্য। সৌমেন এর পুরো পরিবার দেখতে এসেছে সমীর কে। সৌমেন ও আছে। উর্মি কে দেখেই ছেলেটা রাগ করলো। সকলের সামনেই বকতে শুরু করলো ” দুদিন ধরে খোঁজ নেই তোমার। কোথায় ছিলে? আমায় ফেলে চলে যাওয়ার ধান্দা! এবার বেঁধে রাখবো।”

প্রতি টা মানুষের চোখ ওদের দিকে। লজ্জা লাগছে উর্মির। সমীরের সাথে চোখাচোখি হতেই সমীর হাসলো। এবার উর্মির কষ্ট হতে লাগলো। কিছু সময়েই সব টা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। সৌমেন সমীর এর নিকটে এসে পরলো। চোখ পিট পিট করে বলল ” এমন চেহারা করেছো কেন সমীর? বড্ড বেমানান লাগছে। ”

” কি করবো সৌমেন ভাই? আমি যে এমনি বেমানান। ”

” হা হা। হসপিটালের বেডে শুয়ে ও মজা করছো। ”

সমীর হাসলো। সৌমেন উর্মির নিকটবর্তী হলো। কতো টা স্বাভাবিক ভাব। খানিক সময় যেতেই কেমন করে যেন আবার পরিবর্তন এসে গেল। ভীষণ কান্না পাচ্ছে উর্মির। জীবনের সবটা অংশ জুড়েই কেমন ব্যথা। শখ সুখ কিছুই নেই।

কলমে ~ ফাতেমা তুজ
চলবে…..

** গত কাল সন্ধ্যার পর হুট করেই জ্বর এসে পরলো। কলেজ কোচিং এ এসির নিচে থেকে হুট করে আবার রাস্তায় প্রচন্ড গরমে বের হওয়া থেকেই মূলত এই জ্বর। দুদিন পূর্বেই এই পর্ব লিখে রেখেছিলাম। তাই পোস্ট করতে পারলাম। তবে পরের পর্ব কবে দিব?জ্বর নিয়ে লেখা কি সম্ভব? দোয়া করুন যাতে দ্রুত আরোগ্য লাভ হয়। একুশ তারিখ থেকে আবার সেকেন্ড টার্ম এক্সাম শুরু। প্রেশার নিতে নিতে হাপিয়ে উঠেছি। **

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here