#শখের_সাদা_শাড়ি
১২.
দমকা হাওয়ার মতো মেঘনার জীবন টা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। তবে আবার সব কিছু ঠিক ঠাক হতে চলেছে। যদি ও বা গর্ভধারণকালে মেয়েরা মায়ের বাড়ি তে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তবে মেঘনা স্বামীর বাড়ি তে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব। মেয়েটার কাপড় গুছিয়ে দিচ্ছে উর্মি। সত্যি বলতে কল্পনা ও করতে পারে নি মেঘনার জীবন টা আবারো ক্যানভাসে রঙ তুলি তে ফুটে উঠবে। মেঘনার চোখে জল নেই যেটা আছে সেটা খুশি। প্রচন্ড খুশি দেখায় তাকে। কিন্তু উর্মির মন টা খুব একটা ভালো নেই। সে চেয়েছিল বাচ্চা হলেই মেঘনা স্বামীর বাড়ি যাবে। তবে নয়নের অনুরোধ আর মেঘনার জোড়াজুড়ি তে না রাজি হয়ে ও পারে নি। মেঘনা আচানাক বুকে টেনে নিলো উর্মি কে। মেয়েটা স্থির থেকে প্রশ্ন করে–
” কি হয়েছে আপা? ”
” তুই আমার মায়ের অভাব পূরণ করে দিলি বোন। যে কাজ টা আমার করা উচিত ছিল সেই কাজ টা তুই করেছিস। আমি হয়তো ভালো বোন হতে পারি নি তবে আমি গর্বিত আমার ভালো বোন আছে। আই মিস ইউ অল টাইম। ”
উর্মি কাঁদছে খুব কাঁদছে তবে মুখ থেকে না কোনো শব্দ বের হলো আর না বের হলো চোখের জল। মেয়েটি কে আলগা হাতে জড়িয়ে ধরলো।
” অন্তু এসেছে আপা। ”
” কই দেখি, কি রে মন খারাপ কেন? ”
” তুমি সত্যিই চলে যাচ্ছো বড় ফুপি? ”
” চলে যাচ্ছি আবার আসবো তো। এতে মন খারাপের কি আছে। দেখি আয় তো।”
খুব করে আদর করে দিলো অন্তু কে। বলা বাহুল্য নয়নের আদর টা এই বাড়ি তে বরাবর ই একটু বেশি। এই যে বড় ভাইয়া সে নিজ থেকে বাজার করলো আজ। বড় মাছ, খাসির পা। সেই খাসির লেগ রোস্ট করলো বড় ভাবি। তুলি অবশ্য এতো তেল মাখে নি। শুধু হেসে খেলে কথা বলেছে দু দন্ড। উর্মি একটু নিশ্বাস ফেললো। নয়নের নিকট গিয়ে বসলো। কেন যেন উর্মি কে বেশ বুঝে চলে নয়ন। খুব সাবধানী ছোট শালিকার ব্যপারে।
” কেমন আছেন নয়ন ভাই? ”
” ভালো তো। তোমার আপা কে নিয়ে যাচ্ছি যে। ”
” হুম। এত দিন পর এলেন। আমি তো ভেবেই রেখেছিলাম মন মালিন্য সপ্তাহের বেশি যাবে না। ”
” দেখো উর্মি ভুল সবার ই থাকে। তোমার আপা আর আমি দুজনেই ভুল করেছি। ভুল হয়তো আমার বেশি ছিল। আর সেই জন্য আমি ক্ষমা ও চেয়েছি। ”
উর্মি তাকিয়ে রইলো। এক টা সময় নয়ন খুব প্রিয় মানুষ ছিল ওর। খুব সম্মানের স্থানে ছিলো দুলাভাই নামক ভাই টি। ভাব ও ছিল। মেঘনার প্রতি যে ভালোবাসা নয়ন দেখিয়েছে এতে করে নয়নের প্রতি শ্রদ্ধা আসা দোষের ছিল না।
” আপা এসেছিস। বোস একটু। আমি আসি। ”
নয়নের পাশে রেখে উর্মি চলে যায়। নয়ন মাথা টা নিচু করে বলে–
” স্যরি মেঘনা। ”
” ঠিক আছে। তুমি প্লিজ বার বার স্যরি বলো না। ”
” আমি বুঝতে পারি নি। ”
” আরে বাবা ঠিক আছে তো। ”
মেঘনা কেঁদে দিলো এবার। নয়নের বুকে মাথা রেখে একদম ই শান্ত হয়ে গেল। এই সময় টা প্রিয় মানুষ কে কাছে পাওয়া ঠিক কতো টা জরুরি সেসব ভাষায় প্রকাশ একে বারেই অসম্ভব।
সমীরের মায়ের নাম মিষ্টি। সেই জন্য সমীর আবার ভালোবেসে ডাকে মিষ্টি মা। মায়ের নাম ধরে ডাকা টা নিশ্চয়ই অশুভ লাগলে ও বস্তুত সমীর নাম হিসেবে নয় মিষ্টি হিসেবেই ডাকে। এই যে সকাল সকাল ডেকে উঠলো।
” মিষ্টি মা, কোথায় গেলে তুমি। আমার লেট হচ্ছে তো। ”
মা সাড়া দিলেন না। তবে সাড়া দিলো ছোট ভাই সিয়াম। ছেলেটা এবার খুব একটা ভালো রেজাল্ট করে নি। সেই জন্য রেগে আছে সমীর।
” মিষ্টি মা, মিষ্টি মা। ”
” মা বাসায় নেই। ”
“কোথায় গেছে? ”
” বাজারে। ”
সমীর কিছু বলতে নিয়েছিল তবে সিয়াম দ্রুত বলল–
” আমি বলেছিলাম আমি যাই। তবে মা যেতে দিলো না আমায়। ”
কথা বললো না সমীর। শার্ট গায়ে দিলো। সিয়াম পিছু ঘুরছে। বার বার সাফাই গাইছে।
” সত্যি বলছি মা নিলো না আমায়। তোর জন্য নাকি নিজে বাজার করবে। ”
” সর। ”
” ভাইয়া শোন না। ”
” কি বলবি? ”
” স্যরি। ”
” বলা শেষ? আমি যাচ্ছি এখন। ”
” এই ভাইয়া। ”
সমীর শুনছে না কোনো কথা। সিয়াম পেছন থেকে জাপটে ধরলো। বাচ্চা দের মতো টেনে ধরলো। সমীর এর মন গলছে না। ফোন এলো। উর্মির নাম টা ভেসে বেড়াচ্ছে। বিরক্ত হয়ে দ্রুত বলল–
” যা মাফ করে দিয়েছি। ”
উর্মির সাথে কথা বলছে সমীর। মেয়েটা দেখা করতে চাইছে। সমীর খুশি হলো। সত্যি বলতে সে নিজেই বলতো দেখা করার কথা। তবে উর্মিই বলে দিলো। হেসে উঠে উর্মি।
” তাহলে কাল দেখা করছো? ”
” হুম। যাওয়ার আগে দেখা করেই যাবো। ”
” ওকে। তাহলে সেই কথাই রইলো। ক্যাফে তে অপেক্ষা করবে। ”
” ঠিক আছে বাবা। ”
” আমার লেট হলে ও অপেক্ষা করবে বুঝেছো। ”
” করবো রে। এখন বলো কি করছো। ”
” কি করছি আবার। কথা বলছি। ”
” এটা বাদে কি করছো। ”
” হাটছি, হাসছি। আর বকা দিচ্ছি। ”
” বকা? ”
” হুম। ”
” কাকে? ”
” তোমাকে। এই গাঁধা টাইপ প্রশ্ন করার জন্য। ”
গগন কাঁপিয়ে হাসলো সমীর। উর্মি ঠোঁট চেপে সেই হাসি শুনতে লাগলো। এতো সুন্দর হতে হয় বুঝি!
তুলির সাথে বোধহয় সৌজন্যের ঝগড়া চলছে। বিষয় টা টাকা পয়সা নিয়েই। উর্মি কিছু কথা শুনতে পেল। এক পর্যায়ে চলে এলো করিডোর থেকে। দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করলো। বাবার স্বপ্ন ছিলো পুরো পরিবার কে নিয়ে সুখে বাস করার। তবে ভদ্রলোক জীবনে সুখ পেলেন না। উর্মির হাত দুটো প্রায় বুকে চেপে ধরে বসে থাকতেন। শেষ বেলায় এসে খুব করে বলেছিলেন আমার সোনা মেয়ে তুই। আমি জানি তুই পারবি। তোকে বাঁচাতে হবে আমার পরিবার কে। দুজন রাক্ষসী এনেছে সংসারে। এরা ভালো থাকতে দিবে না এই সংসার কে। তুই বাঁচিয়ে রাখিস মা। উর্মি স্থির নয়নে চেয়ে থাকতো। বাবা কে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি ভাই ভাবি দের নিয়ে সাফাই গাইতো। বলতো ওরা খুব ভালো বাবা। তবে তিনি শুধুই চোখের পানি ঝরাতেন। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলতেন তোর ভাই দুটো বউ সোহাগী। এটা দোষের না। তবে বাবার কথা ভুলে যায়। তোদের বোন দুটো কে ও মনে রাখবে না দেখিস। তবে আমি বলছি তুই কখনো ওদের ঠকাবি না। ওদের জন্য জান দিবি সব সময়। আমার সোনা মেয়ে থাকবি তুই। ওরা তোকে কোলে পিঠে করে বড় করেছে এটা মনে রাখবি। ঠোঁট দুটো কামড়ে চোখের জল আটকালো উর্মি। বাবার কথা খুব মনে পরছে আজ। এলাম বাজলো। উর্মি উঠে গেল। খুব দেড়ি হয়ে গেল যে। রান্না ঘরে গেল দ্রুত। পায়েস আর চিড়ার পোলাও রান্না করলো। সমীর এর প্রিয় খাবার। মাছ মাংস নিলো না। তবে ফুলের চপ বানালো কয়েক টা। সমীর খেতে খুব পছন্দ করে। ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে সাত টা। একটু লেট হয়ে গেল। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো বেটারি লো। ইসস একদম মনে নেই চার্জ দিতে। রিক্সা পাওয়া ও যাচ্ছে না। একি অবস্থা!
ওয়েটার এসে বললেন–
” স্যার অর্ডার। ”
” কফি দিয়ে যান। ”
” ওকে স্যার। ”
গালে হাত রেখে বসলো সমীর। মেয়েটা ফোন ধরছে না কেন। আবার কল করতেই সুইচ অফ বলে। এই সকাল সকাল উর্মির ফোন বন্ধ কেন বলে। উর্মির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। তখনি মা কল করলেন। সময় সাড়ে নয় টা। দশ টায় এয়ারপোর্ট পৌছাতে হবে। সমীর আর ও কিছু সময় অপেক্ষা করলো। তবে উর্মি কে দেখতে পেল না। লাগাতার কল করছে সিয়াম। রিসিভ করে ধমকে উঠলো। যদি ও বা কোনো দোষ ছিলো না। দশ টা বাজার পাঁচ মিনিট আগে বের হলো সমীর। হতাশ তার চেহারা। গাড়ি তে উঠে ও পেছনে তাকিয়ে রইলো। যদি একবার উর্মির দেখা মিলে।
ভীড় ঠেলে বের হলো উর্মি। পুরো পথ হেঁটে এসেছে। যানবাহন নেই। রাস্তা ছিলো পুরো ব্লক। ঘেমে যা তা অবস্থা। দরজা ঠেলে প্রবেশ করে দেখল সমীর নেই। ঘড়ি ঢং ঢং করে জানান দিলো এগারো টা। সাড়ে আট টার সময় দেখা করার কথা ছিলো। উর্মি উদাসীন। হাতে সব খাবার দাবার আর এক টা গোলাপ ফুল। একদম লাল টকটকে গোলাপ। ভালোবাসি বলার জন্য এতো আয়োজন করেছিল। অথচ কোনো কিছুই হলো না। উর্মি দ্রুত কল করলো। সমীরের ফোন সুইচ অফ বলছে। চুপচাপ বেরিয়ে এলো ক্যাফ থেকে। হাতের ফোন টা কে আছাড় মারতে ইচ্ছে হয়। সাথে রাগ হয় নিজের প্রতি। কাল কোন আক্কেলে ফোন চার্জ করে নি।
চলবে….
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
#পর্ব_১৩
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=155906800303556&id=100076527090739
সবাই ফাতেমা তুজ এ ভোট দিন।
https://www.facebook.com/groups/1552453528455509/permalink/1656120028088858/?app=fbl