শখের_সাদা_শাড়ি_২ ৩.

0
116

#শখের_সাদা_শাড়ি_২
৩.
সাগরিকার শরীর টা ভালো না থাকাতে খাবার খেয়েই চলে এলো মেঘনা রা। অন্তু আবার বাদরামো শুরু করেছে। তবে সেই মেয়ের সাথে কোনো ঝামেলা নয়। সমস্যা হচ্ছে পিংকির কাজিন রাতুল কে নিয়ে। ক্লাস ফাইফে পরে রাতুল। অন্তুর স্কুলেই। একটু ভীতু প্রকৃতির। আর সেই ছেলে কে বাঘে পেয়ে যা তা কান্ড করে যাচ্ছে অন্তু। বাচ্চা বয়সেই বাদরামো! ভাবা যায় এসব। সে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত জোৎস্না। ছেলেটা বুঝি মানুষ হলো না!
এক টা গাড়ি তে গাদাগাদি করে বসেছে পাঁচ জন। সামনে বসেছে সৌজন্য আর পেছনে বড় ভাবি, বড় ভাইয়া, অন্তু আর মেঘনা। মেঘনার কোলে আবার শুয়ে আছে সাগরিকা। ভ্যাঁপসা গরমে যা তা অবস্থা। সৌজন্য এক মনে সিগারেট টানছিল। একদম ভেঙে গুড়িয়ে গেছে ছেলেটা। সিগারেটের ধোঁয়ায় সাগরিকার অস্বস্তি হচ্ছে। বিষয় টা খেয়াল হতেই সৌজন্য আধ খাওয়া ফিল্টার টা ফেলে দিলো। পেছন ফিরে বলল ” আগে বলবি না ওর সমস্যা হচ্ছে। আমি তো ভুলেই গেছি আমাদের সাথে এখন নতুন সদস্য আছে। ”

” আমি ও বুঝতে পারি নি। ”

” দে ওকে আমার কোলে। ”

সাগরিকা কে কোলে নিলো সৌজন্য। মুখ থেকে সিগারেট এর গন্ধ আসছে।
” অন্তু বাবা চকলেট বা গাম হবে? ”

অবিলম্বে একটি গাম বাড়িয়ে দিলো অন্তু। প্যাকেট খুলে গাম চিবুতে শুরু করেছে সৌজন্য। বাতাস নেই একদম। তবু বুদ্ধি করে জানালা খুলে দিলো। এতে কিছু টা গরম কম লাগছে। টিস্যু দিয়ে বার বার কপাল মুছতে হচ্ছে না। যদি ও রাত্রী অনেক টা তবে সেসব পরোয়া করলো না ওরা। ড্রাইভার কিছু টা আতঙ্কিত। তবে বাচ্চা টার অবস্থা দেখে ঘাপটি মেরে রইলো। সাগরিকার মুখের দিকে চেয়ে বুকের ভেতর শূন্যতা অনুভব হয় খুব। এই তো গত বছর তুলি কে বলেছিল একটা বাচ্চা নেওয়ার কথা। তুলি বলেছিল ” তুমি এতো তাড়াহুড়ো করছো কেন? আর সময় কি ফুরিয়ে গেল নাকি! আমরা আগে সেভিংস করি। তারপর একটা বাবু নিবো।”

তুলির কথায় তখন তাল মিলিয়েছিল সৌজন্য। ভেবেছিল তুলি রাইট। আগে সেভিংস করে নিলে ভবিষ্যতে বাবু কে কষ্ট করতে হবে না। চাকরির বাজারে যা অবস্থা! তবে সেসব ছিল কেবল দুঃস্বপ্ন। অদ্ভুত হাসলো সৌজন্য। এক রাশ ঘৃনা হলো নিজের প্রতি। কেন এখনো সেই মানুষ টার কথা ভাবে যাকে নিয়ে ভেবে কেবল দুঃখ পেতে হয়।

বাড়ি তে পৌছেই উর্মি কে কল করে পৌছানোর খবর জানালো মেঘনা। বেশ ঘেমেছে আজ। সাগরিকা কে বেডে রেখে হালকা করে গা মুছিয়ে দিল। বাচ্চা টার সবে মাত্র সার্জারি হয়েছে। তবে ডাক্তার বলেছেন বাচ্চার বয়স কম হওয়াতে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে সার্জারি করা হয়েছে। এতে করে কাঁটা ছেড়া করতে হয় নি। এতে অবশ্য ভালোই হলো। মেঘনা জামা বদলে এলো। মাথা টা ও ভিজিয়েছে কিছু। শরীরের নোংরা জলে একদম ই বাজে অবস্থা। সাগরিকার উপর পাতলা চাদর টেনে দিয়ে জানালার কোনে বসেছে সবে। অন্তু এসে হাজির। হাতে মিষ্টির বাটি। একটু অবাক হলো মেঘনা। সৌমেন দের বাসা থেকে মিষ্টি দিয়েছে বলে মনে পরলো না। কি সব হাবিজাবি দিয়েছে যেন। তাই তেমন ঘাটলো ও না। অন্তু কে বলল ” বাবুর খেয়াল রাখ আমি একটু চা বানিয়ে আনি। ”

” ঠিক আছে। ”

” তুই খাবি? ”

” না। ”

” কোথাও যাস না আবার। ”

” আমি এখানেই আছি ফুপি। তুমি যাও তো। ”

অন্তুর দিক থেকে চোখ সরিয়ে কিচেনে এলো। আদা চা করলো সে। মাথা টা ধরেছে বেশ। চা শেষ করে বসার ঘরে আসতেই চোখ পরলো আলিদ এর উপর। শুভ্র সাদা পাঞ্জাবী পরে। মুখ টা কেমন গোমড়া। চোখাচোখি হতেই চোখ সরালো মেঘনা। ভদ্রতার খাতিরে দাঁড়িয়ে রইলো।
” তুই এসেছিস? এই দেখ কখন থেকে এসে বসে আছে ছেলেটা। সাথে আবার এক গাদা জিনিস পত্র এনেছে। পাগল ছেলে। অথচ তোকে ডাকতে দিচ্ছে না। তোরা বরং বোস আমি চা নিয়ে আসি। ”

নীরবে সম্মতি জানায় মেঘনা। জোৎস্না চলে যায়। আলিদ এর নাক বরাবর বসে। আলিদ মুখ খুলে
” শুনলাম উর্মির বিয়ে হয়ে গেল। ”

” হ্যাঁ। এই তো হলো। ”

” কিন্তু এটা কি করে সম্ভব? সমীর নামের এক ছেলের সাথে উর্মির সম্পর্ক ছিল তাই তো? ”

” হুম। ”

” তবে এটা ”

” ভাগ্য। ”

” আমি এটা মানতে পারছি না মেঘনা। কেন যেন খচখচ করছে বুক টা। ”

কথা বদলাতে মেঘনা বলল ” আপনার থাইল্যান্ড ট্যুর কেমন হলো? ”

” ভালো। তবে এখন দেখছি না গেলেই ভালো হতো। ”

” কেন? ”

” জানি না। শুধুই মনে হলো। ”

” ওও। ”

” আচ্ছা শোনো বাবুর জন্য একটা জিনিস এনেছি। প্লিজ না করবে না। ”

বলতে না বলতে পকেট থেকে একটা চকচকে পাথর সহ গোল্ড এর চেইন বের করে আলিদ। দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে মেঘনা।
” এসবের কী দরকার ছিলো? ”

” বাবু কে কিছুই তো দেই নি তাই এনেছি। প্লিজ এটা রাখবে। আমি তো তোমার জন্য কিছু দিচ্ছি না। ”

হু হা করলো না মেঘনা। তবে অন্যমনস্ক হয়ে গেল। জোৎস্না চা নিয়ে এসেছে। আলিদ বললো বসতে তবে জোৎস্না বসলো না। অজুহাত দেখিয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে বললো আলিদ কে থেকে যেতে। আলিদের থাকার ইচ্ছে নেই। তবু ও একবার তাকালো মেঘনার পানে। কোনো রেসপন্স দেখলো না। তাই একে বারেই না করে দিলো। জোৎস্নার এতো জোড়াজোড়ি তে ও থাকলো না ছেলেটার। চলে গেল খানিক বাদেই। মেঘনা দরজায় দাড়িয়ে আছে। চোখ দুটো জ্বালা করছে। যেন এখনি ফেঁটে জল গড়াবে। পুরনো ঘা আবার নাড়া দিয়েছে। তবে যার সাথে দীর্ঘদিনের সংসার তাকে ভুলে যাওয়া অতো সহজ?
.
সমীর চলে গেছে অনেকক্ষণ। যাওয়ার আগে একবার বলে ও যায় নি। সেই নিয়ে জমায়েত হয়েছে আরেক অভিমান। রাগ হচ্ছে খুব,সাথে দুঃখ ফ্রি। উর্মি সমস্ত রাগ নামাচ্ছে পায়ের উপর। রক্তে ভেসে যাচ্ছে পা অথচ সে দিকে তোয়াক্কা নেই একটু ও। জানালা খোলা থাকাতে সমীরণ আসছে খুব। একটু একটু করে স্পর্শ করে যাচ্ছে উর্মির শরীর। হঠাৎ ই শরীরে কাটা দিয়ে উঠে। উর্মির মনে হয় সৌমেন যদি কিছু করার চেষ্টা করে। ভেবে কুল পায় না মেয়েটি। অন্তরে যন্ত্রণা লেপ্টে বিষের মতো অনুভূতি দেয়। সব মিলিয়ে নিজেকে যন্ত্র কিংবা সামগ্রী মনে হয়। সময় কেঁটে যায়। তখন মধ্যরাত্রী। উর্মি বসে আছে চুপচাপ। আচানাক দরজায় খটখট আওয়াজ। ভরকে যায় মেয়েটি। শরীরের বল নেই যেন। তবু ও সাহস জুগিয়ে আসে দরজা বরাবর। প্রথমে কোনো শব্দ না শুনতে পেলে ও কিয়ৎক্ষণ যেতেই বাহির থেকে সমীর এর কাজিন দের কন্ঠ। উর্মি হতাশ হয়। নিজেকে ঠিক করে দ্বার খুলে দেয়। প্রথমেই চোখ যায় সৌমেন এর নিকট। ছেলে টাকে লাল পাঞ্জাবী তে অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে। প্রশস্ত বুক টা যে কোনো নারীর হৃদয় কে স্তব্ধ করে দিতে পারে। উর্মি চোখ নামায়। অস্বস্তি হচ্ছে। সৌমেন হাসে। কাজিন রা লেপ্টে যায় গল্পে। উর্মি সরে দাড়ায় এক কোনে। হঠাৎ ই বিধু বলে ” ভাবি দূরে কেন? সামনে আসো। ভাইয়ার কাছে এসে বসো।”

” ঠিক আছি ভাইয়া। তোমরা গল্প করো। ”

” সেকি কথা। আরে ভাবি আসো তো। ”

উর্মি কে বসতে হয়। সৌমেন এর আচারণ খুব ই স্বাভাবিক। উর্মি একটু লক্ষ্য করে বুঝতে পারে ছেলেটা হুটহাট আবার কেমন বাচ্চামো করে। উর্মি ব্যথীত হয়। সেদিন বড় ভুল করেছিল কি না মেয়েটি।

বিয়ের কিছু দিন আগের ঘটনা। মাইশা সর্বদা চুলে উঁচু করে ঝুটি বাধে। আর উর্মি বিনুনী বা খোলা চুল। সেদিন বাইরে ছিল প্রচন্ড গরম। বাহির থেকে এসে উর্মি যেন প্রাণ হারায়। উপায় না পেয়ে উঁচু করে ঝুটি বাধে। মাইশা চলে যাওয়ার পর সমস্ত দায়িত্ব আসে উর্মির ঘাড়ে। আর উর্মি কে দেওয়া হয় মাইশার মতো পোষাক। আর সে দিন টাই উর্মির জন্য কাল হয়ে যায়। সৌমেন এর কিছু সাইন এর প্রয়োজন থাকাতে সৌমেন কে অফিসে নিয়ে আসা হয়েছিল। পেছন থেকে উর্মি কে দেখে মাইশা ভেবে নেয়। যখন মুখ টা দেখে তখন নির্লিপ্ত ভাবে তাকিয়ে থাকে। সময় যেতেই মাথা চেপে ধরে। আর তারপর পর উর্মি কে মাইশা ভেবে বসে। সেদিন এর পর থেকে উর্মির জীবন টা পুরো বদল হয়ে গেল। উর্মি শিউরে উঠে। দ্রুত সামলে নেয় নিজেকে।
” ভাবি কাঁদছো কেন? ”

” কাঁদি না তো, এমনি চোখে কিছু পরেছে হয়তো। তুমি বসো না। ”

” উঁহু তুমি আসো আমার সাথে। ”

উর্মি কে আবার চেপে ধরে বসিয়ে দেয় বুশরা। এদের কথার মাঝে উর্মির অসহায় ভীষণ অনুভব হয়। তাই বলে ” আমি কফি নিয়ে আসি। তোমরা খালি মুখে বসে আছো। ”

” সার্ভেন্ট কে বললেই তো হয়। ”

” সবসময় তো সার্ভেন্ট এর হাতেই কফি খেলে আজ আমি বানাই? ”

” ওয়াও ভাবি। তুমি তো আমাদের ফুললি ট্রিট করছো। কি বলিস বুশরা? ”

” ঠিক বলেছিস ভাইয়া। আমি ও যাবো ভাবি? ”

” না না বুশরা তুমি বসো। আমি নিয়ে আসবো এখনি। ”

সবাই কে ফাঁকি দিয়ে চলে আসে উর্মি। রান্না ঘরে এসে শিউরে উঠে। বাড়ির বড় রা সব ঘুমিয়ে জল। লায়লা কে গেস্ট হাউজে রাখা হয়েছে। কারন ওকে দেখলেই সৌমেন রেগে যাচ্ছে হুটহাট। উর্মি পানি বসায়। চুলো জালিয়ে চেয়ে থাকে অবাক ভঙ্গিতে। পানি ফুটে উঠে। দু চোখের নোনা জল মুছে ফেলে উর্মি। কফি নামিয়ে ট্রে হাতে নিতেই মনে পরে সমীর এর কথা। ছেলেটা একটা ম্যাসেজ বা ফোন কল করে নি অব্দি! দুঃখ হয় সাথে রাগ। উর্মি নানাবিধ চিন্তায় পরে। সমীর নিশ্চয়ই ভাবছে সৌমেন এর সাথে বাসর জমিয়েছে উর্মি।

মাত্র ই বুশরা আর বিধু উঠে গেল। যাওয়ার আগে কত শত গল্প ই না শোনালো উর্মি কে। কোনো টা মনোযোগ দিয়েছে আবার কোনো টায় মনোযোগ দেয় নি। তবে গল্পের প্রধান চরিত্র ই ছিল সৌমেন। ছেলেবেলার সব ঘটনা পরিষ্কার করে দেখালো বুশরা আর বিধু। বিধুর বয়স টা উর্মির থেকে কিছু টা বেশি তবে বুশরা ছোট। অনার্স শেষ বর্ষে পরছে এবার। বুশরার পড়াশোনা নিয়ে যখন কথা হলো তখন উর্মির একটা কথা মনে পরেছে। গত এক মাস যাবত ভার্সিটির কোনো খোঁজ নেই। সেই যে ভর্তি হয়ে এলো আর যাওয়া হয় নি। উর্মি দরজা লাগাতে গিয়ে অনুভব করলো ওর পিঠের খুব নিকটে কেউ দাঁড়িয়ে। চট জলদি ঘুরে তাকালো উর্মি। সৌমেন দাঁড়িয়ে। লম্বা চওড়া মানুষ টার নিকট উর্মি নেহাত ই পিচ্ছি। শুকিয়ে গেল গলা। সৌমেন কি এবার উর্মির উপর অধিকার চাইবে? মস্তিষ্কের ঘাটতি হলে ও শারীরিক ভাবে সুস্থ সৌমেন। একি ঘরে থাকা কালীন নিজেকে কি করে আড়াল করবে উর্মি?

চলবে….
কলমে ~ ফাতেমা তুজ

পর্ব ৪
https://www.facebook.com/100076527090739/posts/166516169242619/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here