শখের_সাদা_শাড়ি ৪.

0
190

#শখের_সাদা_শাড়ি
৪.
বড় ভাইয়ার ছেলের নাম অন্তু। সবে ক্লাস থ্রি তে পড়ে। একদম ই শান্ত নয়। পুরো ঘর মাতিয়ে তুলে। তবে কিছু দিন ধরে বেশ চাপ যাচ্ছে পড়াশোনা নিয়ে। সেই জন্যই বের হয় নি ঘর থেকে। আজ ফ্রি। উর্মি গোসল করে চুল মুচছিলো। ওমনি করেই চুলের মধ্যে টান। আহ করে ককিয়ে উঠে উর্মি। আর হাসে অন্তু।
” বাদরামো শুরু হয়ে গেছে? ”

” ইসস কতো দিন তোমায় জ্বালানত করি না বলো তো ফুপি। ”

” হ্যাঁ অনেক দিন হলো রে। এক্সাম কেমন হয়েছে রে? লেটার মার্ক থাকবে তো। ”

” একদম। সব গুলো তে প্লাস। ”

” যাক টেনশন মুক্ত। ”

” কোথাও যাচ্ছো? ”

” হ্যাঁ রে বাবা, অফিস যেতে হবে না। ”

” তাহলে তোমার ভারসিটি? ”

” অর্নাস তো শেষ। টাইম ম্যানেজ করে মাস্টার্স করবো রে। তুই শোন, বড় ফুপি কে দেখে রাখবি। আপু কাজ করলে হেল্প করিস বাবা। ”

” ওকে। তুমি টেনশন নিও না। ”

” আমার সোনা ছেলে। ”

অন্তুর গালে চুমু দিলো উর্মি। মুহুর্তেই লাল হয়ে গেল তার মুখ। এমন লজ্জা পাওয়ার রহস্য কি?
” ফুপি একটা কথা বলবো। ”

” বল। ”

” কাল কে না আমি একটা কাজ করেছি।”

মুখ ভর্তি রুটি নিয়ে প্রশ্ন করে উর্মি।
” কি কাজ। ”

” একটা মেয়ে কে চুমু দিয়েছি। ”

মেঘনা এদিকেই আসছিলো। অন্তুর কথা শুনে হাসতে হাসতে হামাগুড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। উর্মি চটজলদি দরজার দিকে তাকালো। না কেউ নেই। দরজা লাগিয়ে বলল–
” কি করেছিস বেয়াদব। ”

” আই লাইক হার। জানো কি সুন্দর ওর ঠোঁট টা। ”

” ইয়াক ছিই, কি অশ্লীল কথা। ”

উর্মি কে নাক কুচকাতে দেখে মেঘনা বলল–
” তুই সর তো। আমাকে কথা বলতে দে। ”

” পেকে গেছে এই ছেলে। ”

” হ্যাঁ রে অন্তু। তারপর কি হলো? ”

” বলছি। কাল আমার এক্সাম শেষ হলো। আমি রোজ ঐ মেয়ে টাকে দেখতাম। টু তে পড়ে। আমাদের হলেই সিট পরেছে। ”

উর্মি উদ্বিগ্ন গলায় বলল–
” ঐ মেয়ে কে দেখার চক্করে এক্সাম খারাপ দিছ নি তো। কি রে বল। ”

” আরে ধুর শোনো না। ”

উর্মি দমে গেল। খাবার নামছে না গলা দিয়ে। এই টুকু ছেলে এমন নির্লজ্জ আর পাকা!
” শোনো বড় ফুপি, তো পরীক্ষা শেষ হলে আমি বললাম ওকে দাঁড়াতে। মেয়ে টা দাড়ালো। আমি একটা চকলেট দিতেই ও নিলো। আর তখনি ওর গালে টুপ করে চুমু দিয়ে দৌড়।”

মেঘনা হেসে কুটি কুটি। এদিকে চিন্তায় পরলো উর্মি। এই ছেলে দেখি বাড়িতে নালিশ আনাবে। অফিস যাওয়ার আগে ভালো করে বুঝালো উর্মি। আর এসব কথা কাউ কে না জানাতে নির্দেশ দিলো। বিশেষ করে তুলির কানে যেন না যায়।

অফিসে এসে ক্লান্ত লাগছে উর্মির। এক কাপ চা হলে মন্দ হয় না। এখানে চা কোথায় পাওয়া যায় কে জানে। আশে পাশের মানুষ গুলো কেমন স্থির। যেন কাজ করতে করতে যন্ত্র হয়ে গেছে। চেনা জানার মাঝে শুধু মাইশা। তার কেবিনে নক করা কি ঠিক হবে? কিছু একটা ভেবে নক করলো না আর। কাজের ফাঁকে সে নিজেই চা নিতে বের হলো। নিচ তলা তে ক্যান্টিন দেখেছিল। সেখান থেকেই চা নিয়ে এলো। এবার একটু শান্তি লাগছে। ক্লান্ত লাগলে ও কিছু করার নেই। কেউ তো বসে বসে বাইশ হাজার টাকা দিবে না। পরিশ্রমী উর্মি। তবে আজকাল এতো টেনশনে মাথা ঠিক থাকে না। সমস্ত ফাইল রেডি করে সৌমেন এর কেবিনে এলো। কিছু টা রেগে আছে সৌমেন। উর্মি কে দেখে রাগ খানা প্রশমন করলো। হাত বাড়িয়ে ফাইল নিলো।
” সন্ধ্যার পর কজন কাজ করবে সেট করেছো তো? ”

” হ্যাঁ স্যার। এখন মাইশা ম্যাম এর কাছে সাবমিট করবো কি? ”

” না দরকার নেই। তুমি গিয়ে দেখো কাজ কতো টুকু হয়েছে। ইটস ভেরি আর্জেন্ট। ”

” ওকে স্যার। ”

সৌমেন ফোন ঘাটতে ব্যস্ত। আড়চোখে দেখে নিয়ে কেবিন থেকে বের হলো। তখনি ধাক্কা লাগলো এক কলিগ এর সাথে। বয়স টা খুব বেশি নয়। পঁচিশ এর আশ পাশ।
” স্যরি আমি আসলে দেখি নি। ”

” ইটস ওকে। আপনি যেতে পারেন। ”

” থ্যাংকস। ”

সম্মান হিসেবে আগে যেতে বললো উর্মি কে। উর্মি চলে যেতেই সৌমেন এর কেবিন এ প্রবেশ করলো।

বিকেল এর দিকে ঘুম এসে গিয়েছিল। রাতে ঘুম না হওয়ার ফল। একটু রেস্ট নিয়ে কল করলো মেঘনা কে। মেঘনা ঘুমিয়ে ছিলো বিধায় বেশি সময় নিলো না উর্মি।শুধু বললো ঠিক মতো খাবার খেতে। কথা শেষ করবে তখনি সৌমেন এর কেবিন থেকে চেচামেচির আওয়াজ পেল। ভরাট কন্ঠের আওয়াজে কেঁপে উঠে উর্মি। ছুটে যায় কেবিন এর সামনে। আচমকাই বের হয় কল্লোল। চোখ মুখ গেঁধে গেছে কোটরে। দরজা খোলা থাকায় সৌমেন কে ও দেখতে পায় উর্মি। রাগে থরথর কাঁপছে ছেলেটা। মনে হলো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে সৌমেন। দ্রুত গতিতে কেবিনে ঢুকলো। সৌমেন এর শ্বাস এর গতি তীব্র। হাতের সাহায্যে ইশারা করলো। উর্মি চোখের পলকে ইনহেলার এনে দেয়। প্রায় দশ মিনিট সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে উর্মি। সৌমেন এখন বেটার ফিল করছে। উর্মি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
” থ্যাংকস উর্মি। আমার শ্বাসের রোগ রয়েছে। অধিক উত্তেজিত হলে এমন হয়। থ্যাংকস অ্যা লট। ”

উর্মি সাবলীল কন্ঠে বলল–
” আপনি তখন এমন রাগান্বিত হয়েছিলেন কেন? ”

” এমনি। নিজের কেবিনে যাও। ”

” ওকে স্যার। ”

” শুনো উর্মি। ”

” জী স্যার। ”

” আজকের সিডিউল চেঞ্জ। এখনি সবাই কে ছুটি দিয়ে দাও। আর তুমি ও চলে যাও। ”

” বাট স্যার,এতে তো কাল অনেক চাপ যাবে। ”

” যাবে না। এক মাসের সিডিউলে একটু একটু করে পুষিয়ে নিবো। ”

দীর্ঘশ্বাস নামায় উর্মি। কে জানে কি হয়েছে। একবার মনে হলো ক্ষমা চাওয়া প্রয়োজন।
” স্যার আম স্যরি। ”

” কেন? ”

” তখন আপনাকে প্রশ্ন করার জন্য। আসলে আমি ঠিক বুঝি নি। ”

” ইটস ওকে। এটা নর্মাল ই্যসু। নট অ্যা স্পেশাল অর সিক্রেট। ”

” থ্যাংকস স্যার। আমি তাহলে যাচ্ছি। ”

মৃদু হাসলো সৌমেন। মন টা স্থির করে কাজে মনোযোগ দিলো। সব কিছুর আগে নিজের কোম্পানি।

বাসে বসে বসে ফোন স্ক্রল করছে উর্মি। হঠাৎ ই একটা ম্যাসেজ এলো। আননোন নাম্বার। কেন যেন ম্যাসেজ টা চেইক করলো।
” হাই আমি সমীর। আপনার সাথে কিছু কথা আছে। কল করা যাবে? ”

ভদ্রতা দেখে অবাক হলো উর্মি। তবে ওর নাম্বার পেল কোথায়। নিজ থেকেই কল করলো। একবার রিং হতেই কল রিসিভ হলো।
” হাই, বিরক্ত করলাম তাই না। ”

” না না বিরক্ত করবেন কেন। বলুন আমি শুনছি। ”

” প্রচন্ড প্যারায় আছি বুঝেছেন। সৌমেন ভাই এর নাম্বার টা বিজি বলছে। একটু আগে কল করলাম
এখন বলে বন্ধ। তো সেই জন্য আপনাকে করা। ”

” ও আমি তো এসে গেছি। স্যার আগে ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। ”

” ও সীট। এখন কি করা যায় বলুন তো। ইটস ইমপরট্যান্ট। ”

” এক টা কাজ করুন আপনি মাইশা ম্যাম কে কল করুন। তিনি হয়তো কিছু বলতে পারবেন। ”

ওপাশ থেকে ঘন নিশ্বাসের শব্দ এলো। সমীর বলল–
” মাইশা কে কল করেছি আমি। সুইচ অফ বলছে। সেই জন্যই আপনাকে কল করা।”

” ও। ”

” তো বাসায় যান। রাখছি আমি। দেখি কি করা যায়। ”

কল কেটে নিজের মাথায় নিজেই চাটি মারে উর্মি। এতো টা গাঁধা কেন সে! এই টুকু কমনসেন্স নেই কাউ কে না পেয়েই তো সমীর তাকে কল করেছে। না হলে দুদিনের দেখা তে সোজা তাকেই কেন কল করবে।

সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরতে দেখে চমকে গেলেন জোৎস্না। মনে মনে কিছু টা ভয় ও পেলেন। দ্রুত বললেন–
” কি রে এতো দ্রুত ফিরলি যে। সব ঠিক আছে তো। ”

” হ্যাঁ ভাবি সব ঠিক ঠাক। কাজ শেষ তাই স্যার সবাই কে আগে ছুটি দিয়েছেন। ”

” ও তাই বল। আমি ভাবলাম কি না কি। তা ভাত খাবি তো? ”

” না ভাবি। রাতে একেবারে খাবো। অন্তু কই গো। ”

” দেখ ছাদে গিয়ে বসে আছে হয়তো। ”

” ছাদে কেন গেছে। কতো বার করে বলেছি ছাদে যেন না যায়। ”

” কথা শোনে না। ”

” ব্যাগ টা ধরো আমি ওকে নিয়ে আসি। ”

চিন্তা নিয়ে ছাদে ছুটলো উর্মি। চার তলা বিল্ডিং এর দোতলা টা ওদের। আর বাকি তিন তলা আরো তিন ফ্যামেলির। ছাদে যাওয়া নিয়ে একবার বেশ ঝগড়া হয়ে ছিলো। সেই থেকে বাড়ির ছোট দের ছাদে আসা যাওয়া পুরোপুরি নিষেধ।

চলবে
কলমে ~ ফাতেমা তুজ

পর্ব ৫
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=152985590595677&id=100076527090739

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here