প্রেমাসক্তি #ফাতেমা_তুজ #part – 13

0
277

#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#part – 13

চোখে পানির ছিঁটে পড়তেই জ্ঞান ফিরলো নীলিমার।
চোখের পাতা দুটো খুলেই প্রিয় সেই মুখ কে দেখতে পেলো নীলিমা।
অন্য দিকে মুখ ফিরে দাঁড়িয়ে আছে আরিয়ান।
হাত টা মুষ্টিবদ্ধ,,রাগে কপালের রগ ফুলে উঠছে।ঠোঁট কামড়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার পুরো চেষ্টা করে যাচ্ছে।
নীলিমা আরিয়ানের দিকে অশ্রু ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
কিন্তু আরিয়ান ফিরে ও তাকাচ্ছে নাহহহ।
নীলিমা কারো বাহু ডোরে আবদ্ধ আছে,,,,।
হঠাৎ ই নীলিমার মাথায় খেলে গেল কে তাকে ধরে আছে।
নীলিমা মাথা ঘুরিয়ে রেহান কে দেখতে পেলো।
রেহানের চোখে কৌতুহলের ছাঁপ সাথে কিছুটা দুশ্চিন্তা গস্ত।
রেহান ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি তে নীলিমার দিকে তাকিয়ে আছে আর নীলিমা আপাতো রেহান এর বাহু ডোরে আবদ্ধ আছে।
নীলিমা যথাসম্ভব নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে গেল।
রেহান উঠে দাঁড়িয়ে বলল
– তুমি ঠিক আছো নীলু?

নীলিমা উত্তর দিলো নাহহহ ,,, আরিয়ানের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো।
ছেলেটা বুঝি সত্যি ই বিয়ে করে নিবে।
ভাবতেই চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
নীলিমা বা হাত দিয়ে পানি মুছে নাক টেনে বলল
– মিহি কোথায়?

রুমি ছোট্ট করে বলল
– কনা আর তন্নি আপু মিহি কে সাজাতে গেছে।

নীলিমা ভ্রু কুঁচকে বলল
– মানে ?

রুমি নীলিমা কে ধরে চেয়ার টেনে বসিয়ে বলল
– মানে মিহির বিয়ে আজ ,,,,

রুমির কথা শুনে নীলিমা কয়েক সেকেন্ড স্থির হয়ে বসে রইলো।
বিষয়টা তার মাথাতে ঢুকছে নাহহহহ ।
রুমির দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টি তে তাকাতেই রুমি দীর্ঘশ্বাস টেনে সম্পূর্ণ ঘটনা টা খোলসা করে বলল।

নীলিমার চোখে মুখে উপচে পড়া খুশি ফুটে উঠলো।
রুমি কে জড়িয়ে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলল।
রুমি ছাড়িয়ে বলল
– কি হয়েছে নীলু ?

নীলিমা মৃদু হেসে বলল
– নাহহহ তেমন কিছু নাহহ।

রুমি পাল্টা কিছু প্রশ্ন করলো নাহহহ।
করিডোরে মিহি কে দেখতে পেল নীলিমা।
নীলিমা মৃদু হেসে ধীর গতিতে মিহির কাছে গেল।
মিহি কে জড়িয়ে কনগ্রেচুলেশন জানালো।
মিহি মৃদু হেসে বলল
– সব কিছুর ক্রেডিট তো আরিয়ান ভাইয়ার।
ওনাকে ছাড়া সম্ভব ই হতো নাহহহ।
আর তিন্নি আপু ও অনেক হেল্প করেছে।
দুটিতে কে রাজি করাতে কি বেগ টাই নাহহ পেতে হয়েছে।
তবে ভেবে খুশি লাগছে যে ,,ফাইনালি সব হচ্ছে,,,, তবে খারাপ লাগছে বাসায় কাউকে জানাতে পারবো নাহহ।

নীলিমা মৃদু হাসলো,,,,, অবশেষে মিহি আর রিসব এর বিয়ে অর্থাৎ রেজিস্ট্রি সম্পূর্ণ হয়ে গেল।
সবাই ঠিক করলো একটু আশে পাশে ঘুরবে।
দ্যান লান্স করে ,,, মিহি আর রিসব কে আলাদা সময় কাটানোর জন্য ছেড়ে দিবে।
দুজন ঘুরে ফিরে বিকেলের মধ্যে যে যার বাসায় চলে আসবে।
কিন্তু আরিয়ান বার বার তাড়া দিচ্ছে,, তার ভালো লাগছে না বলে।
আরিয়ান চলে যেতে চাইছে,,,সবাই আটকাচ্ছে।
অবশেষে ঠিক করলো সে লান্স করেই চলে যাবে।
সবাই রেস্টুরেন্ট এর দিকে পা বাড়াতেই নীলিমা মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিলো কিন্তু আরিয়ান ধরে ফেলল।
মিহি তড়িঘড়ি করে এসে বলল
– নীলু তোর কী হয়েছে ?
বার বার সেন্সলেজ হয়ে যাচ্ছিস।

নীলিমা মাথা চেপে ধরে বলল
– মাথা টা কেমন ঘুরছে রে।

আরিয়ান অন্য দিকে ফিরে বলল
– আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি উইক।
আই থিংক আপনার রেস্ট প্রয়োজন সাথে ডক্টর দিয়ে চেইক আপ করা ও দরকার।

নীলিমা কিছু বলল না শুধু স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
রেহান আগ বাড়িয়ে বলল
– আচ্ছা নীলু চলো তোমায় চেইক আপ করিয়ে আনি।

মিহি সহ সবাই সায় দিলো।
নীলিমা বারন করে বলল
– তোরা সবাই এমন সময় আমার জন্য চলে যাবি আমার কষ্ট হবে।

আরিয়ান এতোক্ষন দাড়িয়ে সব শুনছিলো।
মিহি কে উদ্দেশ্যে করে বলল
– ওনি ঠিক বলছেন মিহি ,,,, তোমাদের চলে যাওয়া টা ঠিক হবে না।
এমনি তে রেসটুরেন্ট এর খাবার আমার ভালো লাগে নাহহ।
আমি ওনাকে হসপিটাল থেকে চেইক আপ করিয়ে এনে বাড়ি পৌছে দিবো।
তোমরা ইনজয় করো ,,,,,,

👇
সকাল থেকেই শরীর মন কোনো টাই ভালো নেই।চারিদিকে চিৎকার র হাহাকার,,,, কতো মানুষ জীবন যুদ্ধ করতে করতে হাঁপিয়ে ঢলে পরছে প্রকৃতির বুকে।
দীর্ঘ তিন ঘন্টা সময় নিয়ে এতো টুকু লিখলাম , বোনাস পার্ট হিসেবে ধরে নিবেন।
মাথা প্রচুর ব্যথা করছে,,, জানি নাহহহ রাতে গল্প লেখার সুযোগ হবে কি না ।
তবে আমি চেষ্টা করবো কাল গল্প দেওয়ার।
আশা করি এই পার্ট এ সবার সব কিছু ক্লিয়ার হয়ে গেছে।
তবু ও কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে কমেন্ট এ জানাবেন।
সবার গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি, গল্প ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

নীলিমা মিহির হাত ধরে বলল
– চিন্তা করিস না তুই ,,, আমি ঠিক আছি,, তোরা ইনজয় কর।
ওনি যেহেতু রেস্টুরেন্ট এ যেতে চাইছেন নাহহহ ,,, তো আমাকে নিয়ে হসপিটালে যেতেই পারেন।

মিহি নীলিমা কে জড়িয়ে বলল
– মিস ইউ ডিয়ার।

– মিস ইউ টু

– নীলু বাসায় গিয়ে রেস্ট নিবি হ্যাঁ?
একদম চিন্তা করবি না,,,, তোর চোখ দুটো কেমন হয়ে গেছে রে।

রুমি আর কনা এসে আর ও কিছু উপদেশ দিলো।
নীলিমা মৃদু হেসে বলল
– তোদের সব উপদেশ মেনে চলবো,,,, ইনজয় ইউর টাইম।

নীলিমা আর আরিয়ান সবাই কে বিদায় জানিয়ে চলে আসলো।
একটা টেক্সি ডেকে নীলিমা কে নিয়ে উঠে পড়লো।

দুজন ই নীরবতা পালনে ব্যস্ত।
নীলিমা হঠাৎ করেই আরিয়ানের হাত স্পর্শ করলো।
আরিয়ান চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো মেয়েটাকে কষ্ট দিতে চেয়ে ও পারছে নাহহ।
আরিয়ান কিছু বললো নাহহ , চুপ করে রইলো।
নীলিমা মৃদু হেসে খানিকটা গা ঘেঁষে বসলো।
আরিয়ানের কাঁধে মাথা রেখে নীলিমা নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো।
নীলিমার চোখের পানি এসে আরিয়ানের কাঁধে পরতে লাগলো।
নীলিমা কে এভাবে কাঁদতে দেখে আরিয়ানের ইচ্ছে হচ্ছে একদম বুকের সাথে মিশিয়ে নিতে কিন্তু আরিয়ান কিছু ই করলো নাহহ।
নীলিমা হিচকি তুলে কাঁদতে লাগলো।

আরিয়ান নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ হয়ে পড়লো।
নীলিমা কে এক হাতে জড়িয়ে নিলো।
দুজন ই এক ঘোরের মধ্যে চলে গেল।
দুজনের বিতৃষ্ণা মন একে অপরের উষ্ণতা পেয়ে স্নিগ্ধ হতে লাগলো।
কিন্তু বেশিক্ষন সে সুখ রইলো নাহহহ ।
ড্রাইভার গাড়ি ব্রেক করতেই আরিয়ান নীলিমা কে ছাড়িয়ে দূরে চলে গেল।
কিছুক্ষণ জ্যামে বসে থাকলো ওরা।
তারপর গাড়ি চলতে লাগলো,,, হসপিটালের কাছে এসে গাড়ি থামলো।
নীলিমা কে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে হসপিটালে চলে আসলো আরিয়ান।

নীলিমার হাত ধরে খুব যত্নে রাস্তা পার করালো ,,, আরিয়ান।
নীলিমা আরিয়ানের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।
যেন নীলিমা স্বপ্ন দেখছে,,,,,
আরিয়ান হসপিটালে ঢুকে কিছু ফরমালিটিস পূরন করে ডক্টর এর চেম্বারে নিয়ে আসলো।
ডাক্তার খুব ভালো করে চেইক আপ করে,,,,বললেন
– মিস নীলিমা,,, আপনি খুব উইক হয়ে আছেন।
ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছেন না,,, বোধহয়।
এভাবে থাকলে পরবর্তী তে খুব সমস্যা হয়ে যাবে।

আরিয়ান খানিকটা চিন্তিত হয়ে বলল
– আপাতত কি করতে হবে ডক্টর।

ডক্টর মৃদু হেসে বললেন
– ডোন্ট ওরি মিস্টার আরিয়ান ,,,, আপাতত কিছু ভিটামিন লিখে দিচ্ছি সাথে নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করলেই হবে।

আরিয়ান মাথা ঝাকিয়ে বলল
– ডাক্তার আর কোনো টেস্ট করাতে হবে।

নীলিমা স্থির দৃষ্টিতে আরিয়ান কে দেখছে।
এই মানুষ টা কতোটা কেয়ার করছে ওর।

ডাক্তার ভিটামিন লিখতে লিখতে বললেন
– যেহেতু আজ দুবার সেন্সলেজ হয়ে গেছেন ওনি ,,
তাই আজকে একটা সেলাইন দিয়ে যাবেন।
আর নিয়মত ঘুমাতে হবে ,,,,, ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুমানো যাবে না।
ওনার ওপর কোনো প্রেসার ক্রিয়েট করা একদম চলবে না।

আরিয়ান ডাক্তার এর কাছ থেকে পরামর্শ বুঝে নিয়ে নীলিমা কে সেলাইন দেওয়ার জন্য নিয়ে গেল।
যেহেতু সেলাইন দিতে টাইম লাগবে,,,, আর অলরেডি দুটো বাজতে চললো।
তাই আরিয়ান নীলিমার জন্য সুপ আনতে গেল।

নীলিমা বেডে শুইয়েআছে,, হাতে ক্যানেলা বাঁধা।
মুখে অদ্ভুত প্রশান্তি,,, এই টুকু কেয়ার পেয়েই যেন নীলিমা জগৎ জয় করে নিয়েছে।

এই সময় টুকুর মধ্যে আরিয়ানের সাথে একটা কথা ও হয় নি নীলিমার।
আরিয়ান কে ডোর দিয়ে কেবিনে ঢুকতে দেখে নীলিমা উঠে বসার চেষ্টা করলো।

আরিয়ান নীলিমা কে উঠে বসতে সাহায্য করলো।
সুপের বাটিতে সুপ নিয়ে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগলো।

নীলিমা পরম সুখে সুপ খেতে লাগলো।
সুপ শেষ করিয়ে আরিয়ান সোফাতে বসলো।
মেঝের দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে বসে রইলো।
সেলাইন দেওয়া শেষ হলে আরিয়ান নীলিমা কে নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে পড়লো।
নীলিমা আপাতত খানিকটা সুস্থ,,,,,
আরিয়ান আর নীলিমা পাশাপাশি রাস্তার ধার ধরে হাঁটছে।
আরিয়ান বার বার করে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু পারছে নাহহহ।
গলা ধরে আসছে ওর,,,,, আরিয়ান বুকে হাত দিয়ে নিজে কে সামলে নিলো।

বার কয়েক শ্বাস নিয়ে ধীর গতিতে বলল
– আমি হাত ধরলে সমস্যা হবে ?

নীলিমা আরিয়ানের দিকে অশ্রু ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো।
আরিয়ান নীলিমার উত্তরের আশা না করে খপ করে নীলিমার হাত ধরে ফেলল।

নীলিমার চোখ দুটো খুশিতে চক চক করে উঠলো।
আরিয়ান ভেজা কন্ঠে বলল
– নীলি একটা জায়াগায় নিয়ে যেতে চাই যাবে ?

আরিয়ানের মুখে নীলি ডাক টা শুনে নীলিমার গা শিউরে উঠলো।
নীলিমা মাথা ঝাঁকিয়ে ধরা গলায় বলল
– হুমমম ,,,,,

আরিয়ান বেশ কিছুক্ষণ নীলিমা কে নিয়ে হাটতে লাগলো।
অলি গলি পেরিয়ে একটা লেক এর সামনে এসে দাড়ালো।
ঢাকার মধ্যে ও এমন সুন্দর গ্রামীন ছোয়া লেক দেখে নীলিমার চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।

নীলিমা কে নিয়ে লেকের ধারে বসলো আরিয়ান। কোথাও কোনো কোলাহল নেই আছে শুধু শান্তি।
আরিয়ান আর নীলিমা লেকের টলটলে পানিতে পা ভেজাতে লাগলো।
আরিয়ান নীলিমার হাতের উপর হাত রেখে বসে রইলো।
নীলিমা মৃদু হেসে খানিকটা গা ঘেঁষে বসে কাঁধে মাথা রাখলো।
আরিয়ান মৃদু হাসলো ,,,, এই মেয়েটা কে উপেক্ষা করার শক্তি সে হাড়িয়ে ফেলছে।

বেশ কিছুক্ষণ পেরিয়ে গেল দুজন একে অপরকে অনুভব করতে ব্যস্ত।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে বেশ অনেকক্ষণ।
কিছুক্ষণ পর ই পশ্চিমা আকাশ ধেয়ে নেমে যাবে গোধূলি বেলা।
সময় টা কেন এতো তাড়াতাড়ি পেরিয়ে গেল ?
আরেকটুকু সময় থাকলে বুঝি খুব ক্ষতি হতো?
বোধহয় হতো ,,,,,,

আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস টেনে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
নীলিমা মুগ্ধ নয়নে প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে গোধূলি বেলা উপভোগ করতে লাগলো।
আরিয়ান ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে,,, মেয়েটার সুখ কি করে কেড়ে নিবে ওও ?
আদৌ কিহহহহ সম্ভব?
কিন্তু পরিস্থিতির কাছে বাধ্য আরিয়ান।

আরিয়ান নীলিমার হাত ধরে বলল
– একটা কথা বলব নীলি ?

নীলিমা মাথা ঝাকালো,,, আরিয়ান মৃদু হেসে নীলিমার হাতের পাঁচ আঙ্গুলে নিজের পাঁচ আঙুল ঢুকিয়ে বলল
– যাই হয়ে যাক না কেন কখনো পড়াশোনা ছাড়বে নাহহ।

কথা দিবে আমায় ?

নীলিমা মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো।

আরিয়ান মৃদু হেসে বলল
– জানো একটা ছোট্ট পৃথিবীতে ভালোবাসার সাগর জমে আছে।
কিন্তু সেই ভলোবাসা শুধু মাত্র একজন কে ঘিরেই ,,,, তবে ভাগ্য কি বলে জানো ?
ভাগ্য বলে যার জন্য তুই ভালোবাসা জমালি সেই ভালোবাসা তাকে দেওয়ার মতো যোগ্যতা নেই রে তোর।

নীলিমা ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো।
আরিয়ান মৃদু হেসে বলল
– একদম কাঁদবে নাহ,,,,,, তোমাকে দেওয়ার মতো এই ছোট্ট সুখময় সময় টুকু ছাড়া আমার কাছে কিছুই নেই নীলি।
তোমার মন টাকে ভেঙে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই আমার কাছে।
তুমি আমার সম্পর্কে জানো নাহহহ ।

নীলিমা মৃদু হেসে বলল
– আমার কিচ্ছু জানা লাগবে না আরিয়ান।
শুধু তোমাকে চাই আমি ,,,, আগে পরে কিচ্ছু যায় আসে না আমার।

আরিয়ান হেসে বলল
– ভাগ্যবান আমি ,,,, তুমি আমাকে ভালোবাসো।
আপসোস এর স্বাদ নিতে পারবো নাহহহ।
সব কিছু অজানা থাকা টা ঠিক না নীলি।

আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– আমি অনাথ,,,, জানি না কে আমার বাবা মা,,,, আমার আত্মীয় স্বজন।
আদৌ কেউ বেঁচে আছে কি নাহহহহ আমার জানা নেই।
তিন বছর থেকে আমার জীবনের স্ট্রাগল শুরু হয়।
একা একা কতো রাত জেগে কাটিয়েছি,,,, প্রচুর কাঁদতাম।
একটা সময় শক্ত হয়ে যাই,,,,, নিজের চাঞ্চল্যতা কে জড়িয়ে ধরে বেঁচেছি।
কিন্তু নিজেকে সামলাতে সামলাতে নিজের অস্তিত্ব কেই হাড়িয়ে ফেলেছি ।
জানো আমার যখন জ্বর হতো খুব প্রিয় মানুষ কে মনে পড়তো।
কিন্তু ভালোবাসার জন্য কেউ ছিলো নাহহ।
কাউকে ভালোবাসা হয় নি কিন্ত হঠাৎ করেই তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি।
খুব খুব ভালোবেসে ফেলেছি,,,, আসক্তি তে পড়ে গেছি প্রেমাসক্তি তে পড়ে গেছি আমি ।

নীলিমার চোখ দিয়ে নেমে যাচ্ছে অশ্রুর ধারা।
আরিয়ান পেছনে ঘুরে মৃদু হেসে বলল
– কেঁদো নাহহহ নীলি,,,, আমি ভাগ্যবান হয়ে ও অভাগা।
তোমাকে নিজের করে পাওয়ার মতো সামর্থ্য আমার নেই।

নীলিমা কাঁদতে কাঁদতে বলল
– কেন নেই আরিয়ান ?
তুমি চাইলেই সম্ভব,,,,,

আরিয়ান আকাশের দিকে মুখ করে ফিরে চোখের পানি আটকালো।
পেছন ফিরে বলল
– সম্ভব নয় নীলি,,,,, এটা কোনো দিন হওয়ার ই নয়।

নীলিমা কাঁদতে লাগলো,,, কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়লো।
চিৎকার করে বলল
– তোমাকে চাই আরিয়ান খুব করে চাই।
ভালোবাসি আমি ,,,, খুব খুব ভালোবাসি।
নাও না আমাকে আপন করে,,, একটু জায়গা দাও না প্লিজ।
একটু জায়গা,, কথা দিচ্ছি অভিযোগের সুযোগ দিবো নাহহহ।

আরিয়ান মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসলো।
নীলিমার হাতে হাত রেখে বলল
– চলে যাও নীলি,,, এভাবে আমি ও দুর্বল হয়ে যাচ্ছি।
প্লিজ নীলি কষ্ট বাড়িয়ে দিও না তুমি ,,,,,,

নীলিমা চিৎকার করতে লাগলো।
লেকের ধারের গাছের পাখি রা নীলিমার বিকট চিৎকারে উড়ে গেল।

আরিয়ান উপরে তাকিয়ে রইলো।
তার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে ,,,, ওওও পৃথিবী কেন আমার সাথে এমন হলো।
আমি কেন অসহায়,,,, হয়ে রইলাম।
আমি কেন এই মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে নিতে পারছি নাহহহ।
কেন কেন ,,,,,,,,

কিন্তু কোনো কথাই বলল না আরিয়ান।
এভাবে আরিয়ান নীলিমাকে দূর্বল করে ফেলবে।
আরিয়ান নিজেকে সামলাতে থাকলো,,, কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলল
– কাঁদবে না তুমি,,,,, এভাবে কাঁদলে আমার মরা মুখ দেখবে তুমি।

নীলিমা স্থির হয়ে গেল,,,, বার বার কানে বাজতে লাগলো আমার মরা মুখ দেখবে।
আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– এখন তুমি বাসায় চলে যাবা নীলি,,,,, আর আমাকে ভুলে যাবা।

নীলিমা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
উসকো খুসকো চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে নিয়ে বলল
– তুমি পারবে ভুলতে ?

আরিয়ান চোখ খিচে নিয়ে বলল
– তুমি আমাকে ভুলে যাও প্লিজ,,, আমি ও ভুলে যাবো।

এই কথা গুলো বলার সময় আরিয়ানের চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
নীলিমা মৃদু হাসলো,,,,, আরিয়ান চোখের পানি আড়াল করে বলল
– কথা দাও আমায় ভুলে যাবে?

নীলিমা উত্তর দিলো নাহহহ।
আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– কথা না দিলে আমি বুঝবো আমায় কখনো ভালোই বাসো নি।

নীলিমা তাচ্ছিল্যর সুরে বলল
– এতো সহজ ভুলে যাওয়া ?
আচ্ছা যাবো ভুলে তোমায় ,,,,,,
তবে কথা দেওয়া সহজ নয় ,,, আমি চেষ্টা করবো।

আরিয়ান মৃদু হেসে বলল
– তাহলে ই হবে নীলি,,,, যাও বাসায় যাও।
নিজের খেয়াল রেখো,,,

নীলিমা মৃদু হেসে পা বাড়ালো,,,, আরিয়ান চেয়ে রইলো।
নীলিমা খানিকটা পথ গিয়ে কি যেন মনে করে আবার ফিরে আসলো।
আরিয়ান কিছু বলল না স্থির দৃষ্টিতে নীলিমা কে পরখ করতে লাগলো।

নীলিমা মৃদু হেসে বলল
– ভুলেই তো যাবো।
তার আগে একটা ইচ্ছে পূরন করবে আমার ?

আরিয়ান ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে বলল
– বলো ,,,,

নীলিমা মৃদু হেসে বলল
– তোমার চোখে পানি কেন ?
সামলাতে না বললে আমাকে ?
এখন নিজেই বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছো ?

আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– বলো কি বলবে ?

নীলিমা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল
– আমায় আপন করতে না পারলে একবার শক্ত করে জড়িয়ে কপালে চুমু তো খেতে ই পারো ।
দিবে আমায় সেই সুখ টুকু,,,, খুব প্রয়োজন ,,, প্লিজ।

আরিয়ান কিছু বলল না ,,,, নীলিমার ছলছলা নয়নের আকুতি আরিয়ান কে পাগল করে দিচ্ছে।

নীলিমা আকুলতা,,, একটু জড়িয়ে ধরার ব্যাকুলতা আরিয়ানের বুক কাঁপিয়ে দিলো।
আরিয়ান ছুটে এসে নীলিমা কে জড়িয়ে ধরলো।
কপালে গভীর ভাবে চুমু খেয়ে একদম বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।
নীলিমা আরিয়ানের শার্ট খামচে ধরে বলল
– আপসোস এই সুখ টুকু সারা জীবন পাওয়া হবে না।
ইসসস সময় টা কেন থমকে যাচ্ছে নাহহহহ।

আরিয়ান ডুকরে কেঁদে উঠলো সাথে নীলিমা ওওওও।
দুজনেই দুজন কে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে,,, দুজনের একটাই ইচ্ছে ,,, ইসস সময় টা যেন থমকে যায়।
পড়ন্ত বিকেলের মাধুর্যতা পেরিয়ে সন্ধ্যার সূর্য অস্ত গেল।
দুটো হৃদয়ের আকুলতা পেরিয়ে দুজন ই চলে গেল দু দিকে।
নাহহহ আজ আর কেউ পিছে ফিরে তাকাবে নাহহহ।
দুজন ই নিজেকে শক্ত করে নিবে।
প্রকৃতি আবার ও সাক্ষী হলো প্রেমাসক্তিতে আসক্ত দুটি বিতৃষ্ণা হৃদয়ের আকুলতা ছাড়িয়ে শক্ত পোক্ত হয়ে যাওয়া পাথর মন দুটিকে।

পরবর্তী পার্ট পেতে পেইজ এ ফলো দিয়ে রাখুন
👇
https://www.facebook.com/Fatema-tuz-ফাতেমা-তুজ-110123584545542/

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here