প্রেমাসক্তি #ফাতেমা_তুজ #Part – 6 & 7

0
273

#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#Part – 6 & 7

আজাদ চৌধুরীর সাথে এক প্রকার রাগারাগি হয়ে গেছে নীলিমার।
নীলিমার মাথাতে আসে না সবাই কি করে এমন টা করতে পারে । সবাই কি এখন নীলিমা কে পাগল ভাবছে ?
রাত তখন সারে আটটা বাজে নীলিমা কিছুদিন যাবত পাবে গিয়ে বিয়ার খাচ্ছে না।
বাসাতেই বিয়ার নিয়ে আসে ,,,,,, নীলিমার মাথা টা আজ প্রচন্ড জ্বালা করছে।
এই মূহুর্তে নীলিমার করা করে কফি চাই।
নীলিমা গত চার বছর ধরে এই বাসার কারো কাছে কিছু চেয়ে নেয় নি।
কোনো কাজের লোক নীলিমার কাছে দাঁড়ানোর সাহস পায় না।
নীলিমার শরীর টা ও আজ বেশ দুর্বল।
হঠাৎ এমন হওয়ার কারন টা নীলিমা ঠিক ঠাওর করতে পারছে না।
হয়তো এলকোহল এর এফেক্ট পড়েছে।
কফি বানানোর জন্য সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই ডয়িং রুমে বসে থাকা মানুষ গুলো কে দেখে নীলিমার চোখ মুখে বিরক্তি ফুটে উঠলো।
নীলিমা যথাসম্ভব নিজেকে কন্টোল করে নিলো ।
তারপর নীলিমা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল,,,, আজাদ চৌধুরী মেয়ের যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে আবার কথা তে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
নীলিমা কিচেনে কফি বানিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসেই কফি টি শেষ করলো।
শরীর টা বার বার ছেড়ে দিচ্ছে তার,,,
নীলিমা চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে ডয়িং রুমে গেল।
ডয়িং রুমে তার পিতা সহ চাচার আলোচনা শুনে চোখ দুটো লাল বর্ন ধারন করলো।
কিছুদিন যাবত বাসাতে আছে দেখে কি এদের যা ইচ্ছে তাই করে নিবে।
জীবন্তলাশ টাকে ও ছাড়ছে না এরা।
রাগে নীলিমার চোয়াল শক্ত হয়ে যাচ্ছে।
আজ এতো কিছুর পর ও এরা এদের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছে।
আর নীলিমার বাবা ও সায় দিচ্ছেন।
নীলিমা দ্রুত গতিতে নিজের রুমে চলে গেল।
ড্রেস চেন্সজ করে চাবি নিয়ে বাইরের যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
কিন্তু বাধ সাধলেন আজাদ চৌধুরী,,,,,,
নীলিমা কিছু না বলে পাশ কাটাতে চাইলেই আজাদ চৌধুরী বললেন
– দেখ নীলিমা এভাবে যখন তখন ঘুরে বেড়ানো চলবে না তোমার ।
আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবার সাহেল এর সাথে তোমার বিয়ে টা দিয়েই দিবো।
এভাবে আর চলছে না ,,,,,
নীলিমা রহস্য ময় হাসি দিয়ে বলল
– আজাদ চৌধুরী এখনো আপনার স্বভাব গেল না।

আজাদ চৌধুরী কঠোর দৃষ্টি তে বললেন
– নিজের বাবার নাম ধরে ডাকছো ,, কি ধরনের অসভ্যতা এটা।

নীলিমা বাঁকা চোখে তাকিয়ে নিজের বাবা কে একবার দেখে নিলো।
তারপর ই বাইরের দিকে রওনা দিলো ,,, কিন্তু পা আটকে যায় তখন ই যখন আজাদ চৌধুরী বলেন
তোমার বাইরে বেরোনো চলবে না ।আর আমি ঐ সব ছাই পাস গেলার জন্য কোনো রকম টাকা খরচ করছি না।

নীলিমা পেছন ঘুরে নিজের বাবা কে স্ক্যান করে নিলো।
গত চার বছরে এই শব্দটা কখনো নীলিমার শুনতে হয় নি।
কিন্তু একদিন না একদিন তো শুনতে হবেই , তাই নীলিমা নিজের সমস্ত খরচ নোট করে রেখেছে।
নীলিমার ভেতর থেকে বিদ্রূপ আসছে। কি ধরনের মানুষ এরা, চার বছরে একটু ও বদলালো না।
সোফা তে বসে থাকা চাচা কে একবার দেখে তারপর নীলিমা বললো
– মিস্টার চৌধুরী আজ থেকে আপনার আর আমার রাস্তা আলাদা।

নীলিমা এক মুহূর্ত দেরি না করে পায়ে হেঁটেই রওনা দিলো।
আজাদ চৌধুরীর হাজারো ডাক ও নীলিমা কে আটকাতে পারলো না।
আজাদ চৌধুরী সোফাতে ধপ করে বসে পরলেন।
একি করলেন ওনি ,,,,,, সমস্ত টা যে শেষ করে দিলেন।
মেয়াটার সাথে আবার জেদ করে ফেললেন।
_______________________

নীলিমা এলোমেলো হয়ে হাঁটছে।
চোখে মুখে উপচে পড়া তাৎছিল্য,,,,
বিয়ে বিয়ে বিয়ে আর বিয়ে ,,, বিয়ে নামক অভিশাপ টাই তো তাকে শেষ করে দিয়েছে।
নীলিমার মুখটা বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে।
শরীরের নিউরন গুলো সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।
শরীর টা কেমন যেন লাগছে,,,,,
নীলিমি এক পা দু পা করে আগাতে লাগলো।
কোনে মতে পৌছোলো একটা বার এ,,,,
বার এ ঢুকতেই ম্যানেজার ঢোক গিলে নিলেন।
রাত প্রায় সাড়ে নয়টা এতো রাতে নীলিমা কেন এসেছে ?
নীলিমা কনারের একটা সোফাতে বসে নিলো।
ওয়েটার কে ইশারা করে বলল এক বোতল বিয়ার আনতে ।
ওয়েটার কাঁপা কাঁপা হাতে বিয়ার রেখে বলল
– ম্যাম,,,
আজকে এতো রাতে ,,,,
আর একটু পর ই তো বার বন্ধ করা হবে।

নীলিমা বিয়ার ঢালতে ঢালতে একবার ওয়েটারের দিকে আড়চোখে তাকালো।
তারপর ঢক ঢক করে এক গ্লাস বিয়ার শেষ করে নিলো।
মাথা টা জিম মেরে আছে,,,, কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না।
অবশ্য কোনে কালেই তো এই বিয়ার নীলিমা কে কব্জা করতে পারে নি।
ওয়েটার এখনো নীলিমার সামনে দাড়িয়ে আছে ,,,,এতোক্ষন হওয়ার পর ও যখন নীলিমার কাছ থেকে কোনো উত্তর পেলো না ওয়েটার দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিলো।
আশাহত হয়ে রিসিপশনে ফিরে গেল।
নীলিমা এক বোতল বিয়ার শেষ করে নিলো কিন্তু কিছুতেই মাথা ঠান্ডা হচ্ছে না।
আজাদ চৌধুরীর বলা কথা গুলো বার বার কানে বাজছে।
নীলিমা সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো,,,,
ম্যানেজারের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।

ম্যানেজার শুকনো গলায় বললেন
– ম্যাম কিছু লাগবে ?

নীলিমা টেবিলে থাকা কাঁচের খালি বোতল টা ঘোরাতে ঘোরাতে বলল
– আই নিড এ ডিলার।

ম্যানেজার মুখ কুঁচকে বললেন
– সরি ম্যাম।
নীলিমা বোতল থামিয়ে বলল
– আই নিড এ ফেনসিডিল ডিলার ।
ড্রাগ ডিলার ,,,,,, এ সুন এস ,,,,
এখনি দরকার।

ম্যানেজার কাঁপা কাঁপা স্বরে বললেন
– কিন্তু ম্যাম।

নীলিমার মেজাজ চরে গেল।
নীলিমা কোনো কথা না বলেই কাচের খালি বোতল টা আছার মারলো।
সঙ্গে সঙ্গে কয়েক টুকরো হয়ে বোতলের টুকরো গুলো মেঝেতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো।
শব্দ শুনে বারের সবাই নীলিমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো।
ম্যানেজারের শরীর বেয়ে ঘাম ঝড়তে লাগলো।
ম্যানেজার রুমাল দিয়ে ঘাম মুছে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললেন
– নিয়ে যাচ্ছি ম্যাম।

নীলিমা আর কিছু না বলে ম্যানেজার এর সাথে যেতে লাগল।

7
হাই ডোজ এর ড্রাগ নিলো নীলিমা।
চোখে ভেসে আসছিলো চার বছর আগের সব রঙিন স্মৃতি।
নীলিমার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো দু ফোঁটা অশ্রু কনা।
নীলিমার ড্রাগ নেওয়া শেষ হলে ম্যানেজার বলল
– আর ইউ ওকে ম্যাম?

নীলিমা কোনো উত্তর দিলো না।
ম্যানেজারের হাত পা অসম্ভব ভাবে কাঁপছে।
এসির ঠান্ডা হাওয়াতে ও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে যাচ্ছে।
এলকোহল নীলিমা কে কব্জা করতে না পারলে ও ড্রাগ নীলিমার শরীরে প্রভাব ফেলল।
তবে রিয়্যাকশন টা পুরো পুরি উল্টো,,,, পুরোনো স্মৃতি নীলিমার মাথায় চরাও হতে লাগল।
ড্রাগ এলকোহল সব প্রকার আসক্তি তুচ্ছ হয়ে গেল প্রেমাসক্তির কাছে।
নীলিমা এলোমেলো পায়ে বার থেকে বের হয়ে গেল। সবাই জানে নীলিমা মাঝে মাঝে ড্রাক নেয় , কিন্তু নীলিমা গত চার বছরে ড্রাগ ছুঁইয়ে ও দেখে নি।
প্রথম বার ড্রাগ তা ও করা ডোজ এর,,, আর তারউপর রোজ এলকোহল নেওয়া।
যত ই হোক শারীরবৃত্তীয় কার্য তে তো ব্যাঘাত ঘটেছেই শুধু মন থেকে মুছে ফেলতে পারে নি আসক্তি , প্রেমাসক্তি।

নীলিমা রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে রাত প্রায় বারো টা ছুঁই ছুঁই।
এই দিকটা জঙ্গলের দিকে গিয়েছে তাই জনমানবশূন্য ফাঁকা পুরো রাস্তা।
নীলিমা এলোমেলো পা ফেলে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলো।
আর পুরনো সব স্মৃতি নীলিমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো।

নীলিমা রাস্তার মাঝখানে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো।
গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগলো।
কেন কেন তার সাথে এমন হলো।
পৃথিবীর বুকে সে কি এমন পাপ করেছিলো যার ফলে এতো বড় শাস্তি।
নীলিমার চোখের পানিতে রাঙা হলো রাস্তা।
মাথার উপর দিয়ে নিশাচররা উড়ে বেড়াচ্ছে।
নীলিমা রাস্তায় মাথা ঠেকিয়ে দিলো।
এই বিতৃষ্ণা কর পৃথিবীর উপর তিক্ততা জমে আছে।
এই পৃথিবী ওর থেকে সব কেড়ে নিয়েছে।
সমস্ত সুখ , শান্তি , আশা , ভালোবাসা সব সব।
থমকে গেছে নীলিমার পৃথিবী,,, মাথার উপর দিয়ে বেশ কিছু বাজ পাখি ঘুরতে লাগলো।
কিন্তু নীলিমার বিন্দু মাত্র ভয় হলো না।
জীবনের প্রতি যার কোনো মায়া নেই তার কিসের ভয়।
নীলিমা চোখ মুছে রাস্তা থেকে উঠে দাড়ালো।
রাস্তার মাঝ দিয়ে হাঁটতে লাগলো।
শরীর অষাঢ় হয়ে যাচ্ছে,,, ড্রাগ এর প্রভাব বাজে ভাবে ছড়িয়ে গেছে।
নীলিমা হাঁটতে গিয়ে বার বার হোঁচট খাচ্ছিলো।
মাথা টা ঘুরছে,,, নীলিমা রাস্তার মাঝ বরাবর ধরে অজানা গন্তব্যে হাঁটতে লাগলো ।

হঠাৎ ই সাদা রঙের একটা গাড়ি এসে পড়লো।
গাড়ির হেডলাইট নীলিমার চোখে পড়তেই নীলিমা চোখের সামনে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।
নীলিমার থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে গাড়ি টা ব্রেক হলো।
একটুর জন্য নীলিমার আঘাত লাগে নি।
নীলিমা বিন্দুমাত্র ভয় পেলো না,,,, জীবনের প্রতি খুব বেশি ই অভিমান নীলিমার।
বাঁচা মরায় খুব বেশি যায় আসে না ওর।

গাড়ি থেকে একটা ছেলে নেমে এলো ।
প্রায় ছয় ফুট লম্বা, উজ্জ্বল গায়ের রঙ,কালো ব্লেজার অফ হোয়াই টি শার্ট।
ছেলেটা ধীর পায়ে নীলিমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।
নীলিমা কিংবা ছেলেটা কেউ কারো মুখ দেখতে পেলো না।
কারন নীলিমা এখনো হাত দিয়ে আলো কে আড়াল করছে।
ছেলেটা নীলিমার কাছে এসে মৃদু স্বরে বলল
– এক্সকিউজ মি আপনি কি ঠিক আছেন ?
এতো রাতে নির্জন রাস্তা তে একা একা কি করছেন?

ছেলেটার কন্ঠ শুনতে পেয়ে নীলিমা চোখের সামনে থেকে হাত সরালো।
নীলিমার শরীর অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে।
কাঁপা হাত সরিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে ছেলেটার দিকে তাকাতেই নীলিমার চোখ স্তব্ধ হয়ে গেল।
কিছু বলতে গিয়ে ও বলতে পারলো না।
নীলিমা তার আগেই জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়লো ,,,। নীলিমা পড়ে যাওয়ার আগেই ছেলেটা দু হাতে নীলিমা কে আঁকড়ে ধরলো।
ছেলেটার দু চোখ পানি তে টুইটুম্বর হয়ে গেল।
সাথে চোখে মুখে খুশির ঝলকানি।

পাঁচ বছর আগে,,,

ঘুমু ঘুমু ফেস নিয়ে বসে আছে নীলিমা।
আজ এইসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দেওয়া হবে।
টেনশনে সারা রাত ঘুমাতে পারে নি নীলিমা।
যে যতো ভালো স্টুডেন্ট রেজাল্ট নিয়ে টেনশন তার তত বেশি।
নীলিমা স্কুল টপার হয়ে ও সারা রাত ঘুমাতে পারে নি।
সকাল এগারো টা বাজতে ই চোখ জ্বলছে।
আর এক ঘন্টার অপেক্ষা ,, মনে হচ্ছে নীলিমা এখনি হার্ড ফেল করে বসবে।
নীলিমা এক গালে হাত দিয়ে অন্য হাতের নখ কামড়াতে লাগলো ।
নখ কামড়ানোর মতো বাজে অভ্যাস টা নীলিমা আজ ও ত্যাগ করতে পারলো না।
বারো টা বাজতেই নীলিমা সহ নীলিমার পরিবার ল্যাপটব হাতে বসে পড়ল।
কিছুক্ষণ পর ই নীলিমা লাফিয়ে উঠলো ।
শান্ত শিষ্ট নম্র ভদ্র মেয়ে টা মাঝে মাঝে একটু বেশি ই প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠে।
নীলিমা গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে সঙ্গে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রথম হয়েছে।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

পরবর্তী পার্ট পেতে পেইজ এ ফলো দিয়ে রাখুন
https://www.facebook.com/Fatema-tuz-ফাতেমা-তুজ-110123584545542/

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here