প্রেমাসক্তি #ফাতেমা_তুজ #part – 18

0
280

#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#part – 18

হোয়াই পাপা ?
তুমি তো জানোই আমার বিডি তে আসতে একদম ই ভালো লাগে না।
তবু ও কেন আসতেই হবে ?
আচ্ছা তুমি ই বলো বি ডি তে এমন কি আছে যা ইউ এস এ তে নেই।

মেয়ের কথাতে উচ্চ শব্দে হেসে উঠলেন সেলিম রহমান।
ইথিনা মুখ গোমড়া করে বসে রইলো।
তার পাপা যে এই বাংলাদেশ নামক ধুলো বালি, জ্যাম , কোলাহলপূর্ণ দেশ এ কি পায় তাহহ ইথিনা কোনো কালেই বুঝতে পারে নাহহ।
ইথিনা কানে হেটফোন গুঁজে গান শুনতে লাগলো।
সিলেট এর এই পাহাড় গুলো মোটামুটি ভলোই লাগছে তার।
একটা ছোট্ট করে নিশ্বাস নিয়ে বাইরের পাহাড় দেখতে লাগলো ইথিনা।

সেলিম রহমান মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
– তুমি জানতে চাইছিলে না এই দেশে আমি কি পাই ?
তবে শুনো তোমার পাপা কেন আজ ও নিজের দেশ কে আঁকড়ে ধরে আছে।
ইউ নো মামুনি , আমি এই দেশে তে তোমার মম কে পেয়েছিলাম।
তোমার মমের তখন ষোলো সতেরে বছর হবে।
আমরা ইউ এস এ থেকে সিলেটে এসেছিলাম আমার নানার বাসায়।

তখন এই যে সিলেট এর পাহাড় গুলো কে দেখছো এই পাহাড়ের ঢালের রাস্তা বেয়ে কাঁধে স্কুল ব্যাগ নিয়ে হেটে যাচ্ছিলো তোমার মম।

কেন জানি একটা অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করেছিলো।
বেশ অনেকক্ষণ চেয়ে থেকে তোমার মমের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
তোমার মম ফরমাল ড্রেস আপ পরা এই সাহেব কে দেখে খানিকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।
সেই ভয়ার্ত মাখা চোখ ই ছিলো আমাকে প্রেমের ফেলার একমাত্র মাধ্যম।
তারপর থেকেই তোমার মম আমার রাজ্যের রানি।
তো বুঝেছো এই দেশ আমার মাতৃভূমি ছাড়া ও আমাকে আমার অর্ধাংগিনী কে দিয়েছিলো।
তুমি তো জানো তোমার মম কে কতোটা ভালো বাসি আমি।
আমার কাছে এ দেশ হলো, প্রেম, স্মৃতি , বিশ্বাস , আশ্বাস , সব সব সব কিছু।
আর তাই প্রতি বছর আসি এই দেশে এ।
যদি ও তোমার মম আজকাল সিলেটে আসে নাহহ কারন তোমার মামা রা আমাদের সম্পর্ক মেনে নেন নিহহ।

ইথিনা তার পাপার কথা শুনে মৃদু হাসলো ।
তার কাছে মনে হলো তার পাপা সিনেমার ডায়লগ ঝারছে।
ইথিনা কানে হেড ফোন গুঁজে বাইরের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল পাহাড়ে এক সমতল ভূমি তে একটা লোক শুইয়ে আছে।
ইথিনা ড্রাইভার কে বলে গাড়ি থামিয়ে দ্রুত লোকটার কাছে গেল।
সেলিম রহমান ও মেয়ের পিছু ছুটে গেলেন।

ইথিনা লোকটার কাছে গিয়ে দেখলো মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে।
সাথে বুকে গুলি লেগেছে , ইথিনা ছেলেটার মুখ ঘুরিয়ে দেখতেই ইথিনার চোখ থমকে গেল।
এক মূহুর্তের জন্য সে হারিয়ে গেল সেই ছেলেটির মাঝে।
মনে হলো তার পাপার বলা কথা গুলো তার মাঝে ফুটে উঠছে।
আদৌ কি এ ও সম্ভব?
সেলিম হোসেন মেয়ে কে বললেন
– ইথি মামুনি ফাস্ট দেখো ছেলেটা আদৌ কি বেঁচে
আছে কি না।
কি রকম করে কেউ মেরেছে,, ইসসস।

ইথিনা দ্রুত চেইক করে নিলো।
প্রান আছে , তবে হার্ট খুব স্লো বিট করছে।
ইথিনা একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট হওয়াতে খুব সহজেই বুজে গেল গুলিটা হার্ট থেকে বেশ অনেকটা উপরে লেগেছে।
যার ফলে ছেলেটা এখনো বেঁচে আছে। তবে ছেলেটার গায়ে মিনিট চার পাঁচেক আগে গুলি লেগেছে।
ইথিনা সেদিন আরিয়ান কে নিয়ে হসপিটালে ভর্তি করায়।
আরিয়ান বেঁচে তো যায় , তবে কোমায় চলে যায়।
ইথিনা দিন রাত আরিয়ানের সেবা করে।
কিন্তু বাংলাদেশের ট্রিটমেন্ট সিস্টেম এতো লো যে আরিয়ানের বাঁচা দায় হয়ে যায়।
আরিয়ানের কন্ডিশন দিন কে দিন খারাপ হতে থাকে।
ইথিনা ও তার বাবা দ্রুত আরিয়ান কে নিয়ে ইউ এস এ তে চলে আসে।
ইউ এস এর বড় একটা প্রাইভেট হসপিটালে এডমিট করায়।
হসপিটালের মালকিন ডক্টর রুবিনা আবরার ছিলেন ইথিনার বাবার বন্ধুর ওয়াইফ।
ইথিনা মিসেস আবরারের সাথে মিলে দিন কে দিন পরিশ্রম করে।
তিন মাস পর আরিয়ান কোমা থেকে বের হয়।
পাহাড়ের উপর থেকে পরে গেলে ও অন্য আরেক পাহাড়ের গায়ে আটকে গিয়েছিলো আরিয়ান যার ফলে বেঁচে তো যায়।
তবে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পায়।

আরিয়ান কোমা থেকে বের হয়েই প্রথম চোখ খুলে দেখতে পায় রুবিনা আবরারের মুখ আর তার পাশে ছলছল নয়নে দাড়িয়ে আছে কিছু মানুষ ।
আরিয়ান মাথা চেপে ধরে বুঝার চেষ্টা করে সে কোথায়। কিন্তু বুঝে উঠতে পারে নাহহহ।
আরিয়ান পাগলামি শুরু করে দেয় , কারন তার কিচ্ছু মনে নেই।

মিসেস আবরার দু হাতে সামলায় আরিয়ান কে।
আরিয়ান ছলছল নয়নে তাকাতেই মিসেস আবরার বলেন
– তুই ইউ এস এ তে আছিস।
তুই আমার ছেলে ,, আমার তন্ময়।

আরিয়ান যেন আকাশ থেকে পরে।
আরিয়ানের কিচ্ছু মনে নেই , আরিয়ান মাথা চেপে ধরতেই মিসেস আবরার সমস্ত ঘটনা খুলে বলেন।
আরিয়ান মাথা চেপে ধরে বলে তাহলে ও কি করে ওনার ছেলে হয়।

মিসেস আবরার ছল ছল নয়নে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
– সেদিন ইথি যখন তোকে ইউ এস এ তে নিয়ে আসে।
আমি তোর চিকিৎসা করবো বলে ঠিক করি।

তোর বুকের ডান পাশের সূক্ষ্ম যে কালো দাগ টা আছে সেটা দেখেই আমার বুক কেঁপে উঠে।
কারন বাইশ বছর আগে আমার ছেলে তন্ময় কে আমরা হারিয়েছিলাম কার এক্সিডেন এ।
আর আমার ছেলের গায়ে ও এই জন্মদাগ ছিলো।
আমি তোর গলায় লকেট পেয়েছি যেটার মধ্যে আমার ছেলের ছবি ছিলো।
কিন্তু এতে ও আমার শান্তি হয় নি আমি শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএন এ টেস্ট করাই।
আর ডি এনএ টেস্ট পজিটিভ আসে।
তুই আমার ছেলে , আমার তন্ময়।
আরিয়ানের চোখ ছলছল করে উঠে।
প্রথম কয়েক মাস আরিয়ান মানতে পারে না সে তন্ময়।
ধীরে ধীরে বুঝে সে তার ফ্যামিলি কে সে কষ্ট দিচ্ছে এভাবেই আরিয়ান (তন্ময়) তার বাবা মা কে ফিরে পায়।
কিন্তু ভুলে যায় তার আসক্তি কে।
পুরনো স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করলে ও নিজের পরিবার কে পেয়ে মাথায় চাপ দেয় নাহ ।
পুরনো সব স্মৃতি ফেলে পরিবার কে আঁকড়ে ধরে বাঁচে।
অথচ কেউ একজন হাজার হাজার মাইল দূরে প্রতি নিয়ত তার জন্য শেষ হতে থাকে।
ইথিনার সাথে তার ভালো বন্ধুত্ব হয় ,কারন সে তার প্রান রক্ষা করেছে।
তবে রবিন আরিয়ান কে আঁকড়ে ধরে ।
কারন ছোট বেলার স্মৃতি মনে না থাকলে ও বেস্ট ফ্রেন্ড নামক একজনের প্রতি অদৃশ্য টান ছিলো তার।
রবিন হাস্যউজ্জল করে ছোট বেলার বেস্ট ফ্রেন্ড কে বাঁচিয়ে তুলে,, আরিয়ান পেয়ে যায় এক পৃথিবী।
আর ইথিনা আরিয়ানের মায়ায় একটু একটু করে ডুবতে থাকে।

ইথিনা চোখের কোন থেকে পানি মুছে নেয়।
তন্ময় কে হারাতে পারবে না সে।
আর তন্ময়ের তো কিছু মনে ই নেই।
তাছাড়া তন্ময় তো ওকে ভালোবাসে, হ্যাঁ কখনো সেভাবে বলে নি তবে তন্ময় তো ইথিনা কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।
আর মাস চারেক বাদেই তো ওদের বিয়ে।
যদি ভালো ই না বাসে তবে কেন রাজি হবে বিয়ে তে।
ইথিনা চোখের পানি মুছে নিয়ে ড্রাইভ করতে থাকে।
যথাসম্ভব তন্ময় কে নিয়ে ইউ এস এ তে ফিরে যেতে হবে।

*

হসপিটাল থেকে একটা ক্যাফে এ তে এসেছে রবিন আর নীলিমা ।
একদম নির্জন ক্যাফ টা আর নীলিমার কথা শোনার জন্য একদম উপযুক্ত পরিবেশ ও।

রবিন কফি কাপে চুমুক দিয়ে বলল
– নীহু এবার তো বল কি হয়েছে গত সাত বছরে।

নীলিমা ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।
রবিনের কথা তে কোনো প্রতিউত্তর করলো না সে।
রবিন নীলিমার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– নীহু বল এবার ।
নীলিমা মৃদু হেসে বলল
– জানো ভাইয়া , তোমার নীহু একজনের প্রতি আসক্ত , খুব ভালোবাসে তাকে।
কিন্তু এক দমকা হাওয়া শেষ করে দিলো ওকে, শেষ হয়ে গেলাম আমি ও।

রবিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
– পুরোটা বল ,,

নীলিমা মৃদু হেসে বলতে লাগলো ,, নীলিমার সমস্ত স্মৃতি যেন রবিনের চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
নীলিমা যখন তার সাথে আরিয়ানের দুষ্টুমিষ্টু স্মৃতি গুলো বলছিলো তখন অদ্ভুত এক হাসি ছিলো তার মুখে ।
শেষের দিকে এসে নীলিমার হাসি হাসি মুখটা মলিন হয়ে কান্নায় পরিনত হলো ।
নীলিমা কাঁদতে কাঁদতে বলল
– ওরা ওকে মেরে ফেলল ভাইয়া , মেরে ফেলল ওরা।
বাঁচতে দিলো না আমার আরিয়ান কে , বাঁচতে দিলো না।

নীলিমার মাথায় হাত বুলিয়ে রবিন বলল
– কাঁদিস না নীহু , সব ঠিক হয়ে যাবে।

নীলিমা কে সান্ত্বনা দিলে ও রবিনের বুক টা ফেটে যাচ্ছে।
তন্ময় যে আরিয়ান তা বেশ বুঝতে পারছে রবিন।
কিন্তু তন্ময়ের যে কিছু ই মনে নেই। আর এখন তো ইথিনার সাথে তন্ময়ের বিয়ে ও ঠিক হয়ে আছে।
রবিনের বুক টা মোচর দিয়ে উঠলো , বোনের ভালোবাসা বাঁচাবে কি করে?
অন্য দিকে ইথিনার মতো মিষ্টি মেয়েটার জীবন তছনছ করবেই বা কি করে ?
কিন্তু তন্ময় যে শুধু নীলিমার , ইথিনার দিক থেকে দেখলে ইথিনা অসহায় কিন্তু নীলিমা?
নীলিমা তো তার থেকি বেশি অসহায়।
চার চারটে বছর ধরে বেঁচে থেকে ও মরে গেছে।
আর যদি আজ রবিন চুপ করে থাকে , ইথিনার সাথে তন্ময়ের বিয়ে হয়ে যায়।
যদি কখনো তন্ময়ের স্মৃতি ফিরে আছে তাহলে তন্ময় কি করবে তখন ?
তন্ময়ের স্মৃতি ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব ই কম তবে এ অন্যায় মেনে নেওয়া টা কতোটা উচিত ?
আজ রবিন নিজের বোনের দিক টা ভাবছে নাহহ তবে একজন মানুষ হিসেবে দেখলে ও নীলিমা বেশি অসহায়।
রবিন তন্ময়ের বিষয় টা চেপে গেল , কারন তন্ময়ের ব্যবহার কেমন অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে।
তাছাড়া তাড়াহুড়া করা যাবে না।
রবিন মাথা চেপে ধরে বসে রইলো , কি ভাবে সামাল দিবে সব বুঝে উঠতে পারছে না।
তন্ময়ের সাথে দেখা হলে নীলিমা ই বা কি করবে ?
তন্ময় তো সেদিন নীলিমা কে দেখেছে নীলিমা ও এক পলক দেখেছে।
তবে হেলোসিনুয়েশন বলে ধরে নিয়েছে সে।
রবিন সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য নীলিমা কে বলল
– নীহু আরিয়ানের ছবি আছে ?

নীলিমা ছলছল চোখে তাকিয়ে পকেট থেকে আরিয়ানের হাস্যউজ্জল ছবি বের করে দেখালো।

রবিন ছবি টা হাতে নিয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নিল।
আরিয়ান ই তন্ময়, এখন কি হবে রবিনের মাথায় আসছে নাহহ।

নীলিমা নাকি ইথিনা আর তন্ময় এই তিন জনের জীবন ই হুমকির মুখে।
সাথে আছে কিছু রাঘব বোয়াল,,, সব কিছু কি করে ঠিক করবে ওহহহ।

রবিনের মাথা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
এবার নিশ্চিত কোন বড় সর দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে।

*

ইথিনা পাগলের মতো করছে, অঝোরে কেঁদে যাচ্ছে।
তন্ময় মাথা চেপে বসে আছে ,, এখন পুরোপুরি সুস্থ ওও।
ইথিনার দিকে তাকালেই আরিয়ানের মায়া হচ্ছে।
কিন্তু মেয়েটার কি এমন হলো যার জন্য আজ ই ইউ এস এ তে ফিরে যেতে চাচ্ছে।

ইথিনা তন্ময়ের পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে তন্ময়ের দু হাত জড়িয়ে বলল
– প্লিজ তন্ময়, আজ ই আমরা চলে যাবো।
প্লিজ তন্ময়

তন্ময় ইথিনার হাত ছাড়িয়ে বলল
– প্লিজ ইথিনা , এখন ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।

ইথিনা চোখের পানি মুছে বলল
– কেন সম্ভব নয় তন্ময়?
কেন তুমি বি ডি তে থাকতে চাচ্ছো ?

তন্ময় কোনো উত্তর দিলো না।
ইথিনা তন্ময়ের পা জড়িয়ে ধরলো ,, তন্ময় ইথিনা কে ছাড়িয়ে বলল
– এটা কি করছো ইথিনা ?
এমন কেন করছো কি হয়েছে তোমার?

ইথিনা উঠে দাড়িয়ে তন্ময় কে জড়িয়ে বলল
– I love you Tonmoy.
I can’t live without you.
Please don’t leave me alone.

তন্ময়ের বুক টা ফেটে যাচ্ছে।
কি করবে কি এখন ?

তন্ময় ইথিনার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
– হঠাৎ এসব কেন বলছো ইথিনা ?

ইথিনা তন্ময়ের বুকে মাথা রেখে বলল
– আমি জানি না আমি কি করছি , কি সঠিক ভুল আমি জানি না।
আপাতত আমি তোমাকে নিয়ে ইউ এস এ তে যেতে চাই।
প্লিজ তন্ময় চলে যেওনা আমায় ছেড়ে।

তন্ময় কিছু বলছে না দেখে ইথিনা তন্ময়ের দু হাতে মুখ গুজে বলল
– আমায় ভালোবাসো তন্ময়?

তন্ময়ের চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো।
বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে, জীবন তাকে কোন দিকে ফেলে দিলো।
এ কেমন পরিস্থিতি, সব থেকে বেশি অসহায় তো সে।
অথচ তাকে ঘিরে ই আকুলতা।
সে কি করবে এখন , মানুষ বলে স্বার্থপর হইয়ো নাহ।
আদৌ কি সে স্বার্থপরের মতো কাজ করছে এখন ?

ইথিনার জন্য কোনো কালেই কি সেই আসক্তি তৈরি হয়েছিলো ?
তবে তিন মাস আগে যখন তার মা বলল তখন বিয়ে তে কেন রাজি হয়েছিলো সে ?
শুধু কি মানবিকতার খাতিরে ?
তন্ময় নিজের মাথা চেপে ধরলো , সে তো ইচ্ছে করে এমন করে নি।
তার জীবন তাকে বাধ্য করেছে।
একটা মেয়ে গত চার বছর ধরে কষ্ট পাচ্ছে আজ যখন সব কিছু তার হাতের মুঠোয় সে কি করে সেই যন্ত্রণায় ফেলে রাখবে তাকে।
আর ইথিনা সে ও কি তার দিক থেকে ঠিক নয় ?
তবে ঠিকের মধ্যে ও অধিক ঠিক কে ?
তন্ময় মাথার চুল টানতে টানতে বলল
– হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন ইথিনা ?
কি হয়েছে বলো আমায় ?

ইথিনা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকিয়ে বলল
– তুমি কেন বলো না আমায় ভালোবাসো তুমি ?
কেন তন্ময়?
একটু কি ভালোবাসা যায় না আমায়?
ভালোবেসে বুকে জড়িয়ে নিতে পারো না আমায় ?
একটু কি ভালোবাসা দিতে পারো না আমায়।

ইথিনার কথা গুলো তন্ময়ের বুকে এসে লাগলো।
ইথিনার আকুলতা তাকে দূর্বল করে দিচ্ছে।
তন্ময় ছলছল নয়নে তাকিয়ে ইথিনার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।
ইথিনা তন্ময়ের বুকে মাথা গুঁজে দিলো।
কিন্তু পরক্ষণেই তন্ময়ের বুকে কষ্ট হতে লাগলো মনে পরে গেল একজনের সেই আকুলতা

আমায় আপন করতে না পারলে একটু শক্ত করে জড়িয়ে কপালে চুমু তো খেতে পারো।
দিবে আমায় সেই সুখ টুকু খুব প্রয়োজন , প্লিজ।

তন্ময় চোখ খিচে বন্ধ করে নিল।
ইথিনা কে ছাড়িয়ে বলল
– রেস্ট নাও সন্ধ্যায় তো সবাই কে পিক করতে হবে।

ইথিনা মাথা ঝাঁকিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেল।

ইথিনা চলে যেতেই তন্ময় রুম লক করে দিলো।
ওয়াসরুম থেকে মুখে পানি ছিটিয়ে নিতেই মনে হলো কেউ একজন খিল খিল করে হেসে বলছে।
তন্ময় আবরার আজকাল মানুষ ঠকাচ্ছে।
এতো আধিপত্য, সুখ তাকে অন্ধ করে দিচ্ছে না তো।

সে কিহহহ ভয় পাচ্ছে এই আধিপত্যে হারাতে।

তন্ময় মাথা চেপে ধরে বলল
– নাহহহ তুমি ভুল বলছো আমি এই সব কিছুর জন্য এমন করছি না।

তন্ময়ের কথা শুনে যেন কেউ তাচ্ছিল্যর হাসি হাসছে।
তন্ময় চারদিকে ঘুরে বলল
– কে তুমি কেন হাসছো।

আবার সেই অদৃশ্য শব্দ ভেসে আসলো।
আরিফুল আরিয়ান তার ছোট্ট পৃথিবীতে এক বুক ভালোবাসা একে ছিলো।
একটি মানুষ কে ঘিরেই তার পৃথিবী ছিলো।
কিন্তু তন্ময় আবরারের পৃথিবী তো অনেক বড় , আর তার মনে অনেক মানুষের বাস ।
অথচ সে ভুলে যাচ্ছে, একটি মানুষ তাকে ঘিরে মরে ও বেঁচে আছে।
অথচ সে জানেই নাহ তার আরিয়ান এখন আর তাকে ভালোইবাসে নাহহ।

তন্ময় চিৎকার করে বলল
– নাহহহ মিথ্যে এসব সব কিছু মিথ্যে সে ভালোবাসে ।
খুব ভালোবাসে আরিয়ান তার নীলি কে খুব ভালোবাসে।
সে কখনো তাকে ঠকায় নিহহহ।

আবার সেই তাচ্ছিল্যর হাসি এসে বলে যাচ্ছে।
তবে কেন সে বলতে পারছে না তন্ময় আবরার তাকে ভালোবাসে?
আরিয়ান ঠকায় নি , কিন্তু তন্ময় আবরার ?
সে তো ঠকাচ্ছে, তন্ময় আবরার কেন পারছে না সত্যির মুখোমুখি হতে ?

তন্ময় মাথা চেপে ধরে হেয়ার স্প্রের বোতল আয়নায় ছুড়ে মারলো।
আয়না টুকরো টুকরো হয়ে বিছিয়ে গেল।
তন্ময় মাথা চেপে ধরে চিৎকার করতে লাগলো।
আজ তন্ময় আবরার পৃথিবীর সব থেকে বড় অসহায়।
তার পৃথিবীতে আরিয়ান নামক অস্তিত্ব সে চেয়ে ও ফিরিয়ে আনতে পারছে নাহহ।
বার বার তন্ময় আবরার ফিরে আসছে।
আর তন্ময় আবরার নীলিমার নয় , তন্ময় আবরার ইথিনার।
অথচ মনের সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে নীলিমা।
কি করবে কি তন্ময়?
আরিয়ান নাকি তন্ময়,,,, কোন অস্তিত্ব নিয়ে বাঁচবে সে ?
এক অস্তিত্ব জুড়ে শুধু নীলিমা , আর অন্য অস্তিত্ব তে আছে মা , বাবা , ইথিনা, বন্ধু, আর আত্মীয়স্বজন রা।
তন্ময় কেন পারছে না আরিয়ান হয়ে ফিরতে?

তবে সে কি ঠকাচ্ছে ?
তবে কাকে ঠকাচ্ছে নীলিমা কে নাকি ইথিনাকে ?
নাকি দুজন কেই?

নতুন টপ রিডার্স
1- Sra Roza
2- Salim Reja
3- Usha chowdhury
4- MD Ripan Ahmed

পরবর্তী পার্ট পেতে পেইজ এ ফলো দিয়ে রাখুন

https://www.facebook.com/Fatema-tuz-ফাতেমা-তুজ-110123584545542/

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here