প্রেমাসক্তি #ফাতেমা_তুজ #part – 29

0
251

#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#part – 29

আট মাস পর

এয়ারপোর্ট এ যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন আজাদ চৌধুরী।
প্রিয় মানুষ গুলোর সাথে আজ বহুদিন পর দেখা হবে।
মিসেস চৌধুরী বাহারি খাবারের আয়োজন করছেন।
মেয়ে কে দেখেন না কতো দিন ,আজ আবার দেখা হবে।
আজাদ চৌধুরী ফোন করে ইনফর্ম করে দিলেন ছয় টা গাড়ি এয়ারপোর্ট এ রেডি করতে।
রাগ অভিমান এখন আর নেই , ভুল টা বুঝতে পেরেছেন খুব ই সন্তর্পণে।
এই ভুল গুলো আগে বুঝতে পারলে সবার জীবন টা অনেক আগেই রাঙিয়ে যেতো।

সন্ধ্যা সাত টা ফ্লাইট নেমেছে ঘন্টা খানেক।
আজাদ চৌধুরী, হানিফ চৌধুরী আর সাহেল অপেক্ষা করছে।
দশ মিনিটের মাথায় সবাই কে দেখতে পায় ওরা।
নীলিমা , আরিয়ান , রবিন , রায়না, ইথিনা, রিয়াদ , মহুয়া, সিনথি , সহ আরিয়ানের বাবা মা , রবিনের বাবা মা রিয়াদের বাবা মা , ও ইথিনার বাবা মা।
সবাই কে দেখেই আজাদ চৌধুরীর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরে।
সবাই একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় করলো।
সবার চোখেই পানি চিক চিক করছে।
অবশেষে সবাই কে নিয়ে চলে আসলেন নীলিমাদের বাসায়।
নীলিমার মা নীলিমা কে ধরেই কেঁদেই যাচ্ছেন।
বড্ড আবেগ মাখা মানুষ ওনি ।
সবার চোখে মুখেই ফুটে উঠলো খুশির ঝলকানি।

মিসেস চৌধুরী তার বড় জা কে নিয়ে সকলের খাবার আয়োজন করলেন।
সবাই খেয়ে যে যার মতো গল্প করতে লাগলো।

নীলিমা আরিয়ান কে নিয়ে ছাঁদে চলে আসলো।
মেঘলাটে আকাশে রুপোলি রঙা চাঁদ টা আফছা আফছা দেখা যাচ্ছে।
ফুরফুরে বাতাস এসে রাঙিয়ে দিচ্ছে নীলিমা আর আরিয়ান কে।
আরিয়ান নীলিমার কপালে আঁচড়ে পরা এলোমেলো চুল গুলো গোছাতে ব্যস্ত।
নীলিমা দু বাহু তে দু হাত গুঁজে হাত বুলাতে লাগলো।

আরিয়ান পেছন থেকে নীলিমার মাথায় চুমু এঁকে বলল
– শীত লাগছে ?
– উহুহু
– তাহলে?
– অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে, আবার বুকের ভেতর চিন চিন ব্যাথা ও হচ্ছে।

আরিয়ান নীলিমা কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আলতো করে কপালে চুমু খেলো।
নীলিমা শিউরে উঠলো , আরিয়ান নীলিমা কে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বলল
– তোমার আরিয়ান থাকতে কোনো ভয় নেই নীলি।

নীলিমা মূদু হাসলো , পেছন থেকে গলা খাকাড়ির আওয়াজ আসতে আরিয়ান ছিটকে সড়ে পরলো।
নীলিমা কাঁচু মাচু করতে লাগলো।
রায়না মুখ চেপে হাসছে , রবিন নীলিমার বড় ভাই তাই সে অস্বস্তি বোধ করছে।
রায়না গলা ঝেরে বলল
– কিহহহ রোম্যান্স চলছে ?
– মোটে ও না , তুই আমার ভাইয়ের সাথে রোম্যান্স করতে এসেছিস তাই বল।

রায়না বড্ড খাপ ছাড়া মেয়ে , আরিয়ান রবিন কে নিয়ে ছাঁদের অন্য সাইটে চলে আসলো।

রায়না নীলিমার দুই বাহু জড়িয়ে ধরে বলল
– আপু সবাই কেমন ভালো হয়ে গেছে, এতো এতো প্রবলেম কেমন ঠিক হয়ে গেল।
সব টা স্বপ্নের মতো লাগছে।

নীলিমা আলতো হেসে রায়না কে নিয়ে দোলনায় বসলো।

*

ঐ তুই আমার কাছে আসবি নাহহহ।
একদম মেরে দিবো, ফাজিল ফায়দা লুটতে আসছিস।
যাহহহ ভাগ

ইথিনার কথা গুলো রিয়াদ ভাবলেশহীন ভাবে শুনে যাচ্ছে।
বিয়ের পর দুজনে প্রতি দু মিনিট অন্তর অন্তর লেগেই থাকে।
আবার একে অপর কে ছাড়া থাকতেই পারে না।

রিয়াদ ভেঙ্চি কেটে বেডে শটান হয়ে শুয়ে পরলো।

ইথিনার মাথায় রাগ চেপে উঠলো।
এমনিতে ও কোনো কথাই শুনে না , আজ বলার সাথে সাথে শুনে গেল।

ইথিনা ফোন হাতে বেডের এক কোনে বসে পরলো।

পাঁচ মিনিটের মাথায় রিয়াদ ইথিনার পেট জড়িয়ে শুয়ে পরলো।

ইথিনা রিয়াদের পিঠে কিল ঘুসি মারতে লাগলো।
রিয়াদ ছাড়ার বদলে উল্টো সুড়সুড়ি লাগিয়ে দিলো।

ইথিনা কিছু বুঝার আগেই রিয়াদ ইথিনার ঠোঁট আঁকড়ে ধরলো।
কিছু ক্ষণ পর ছাড়তেই ইথিনা ঠোঁট মুছতে লাগলো।
ইথিনা রাগে কটমট করতে করতে বলল
– দিনে কতোবার গায়ের উপর ঘষা ঘষি করিস ডাফার।
যখন তখন ছিহহ

– বহুত দিনের ইচ্ছে বুঝেছিস, দশ বছর নিজেকে দমিয়ে রেখেছি এখন আর নাহহ।

ইথিনা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল
– তার মানে তুই আগে থেকেই আমার দিকে বাজে নজরে

রিয়াদ বিরক্তিকর শব্দ তুলে বলল
– তোর মেন্টালিটি একদম বাজে , কোথায় হাসবেন্ড এর রোম্যান্স অনুভব করবি তা না করে এটা ওটা করছিস।

ইথিনা ভাব নিয়ে বলল
– কারন আমি তোর মতো নাহহহ।

রিয়াদ ভ্রু কুঁচকাতেই ইথিনা বলল
– আরে তুই তো আর ভার্জিন নাহহ।
আমি তো ভার্জিন

রিয়াদ দাঁতে দাঁত চেপে বলল
– এখনো নিজেকে ভার্জিন দাবি করছিস ?
আজ ননভার্জিন এর চিহ্ন ই বসিয়ে দিবো।

ইথিনা কে জড়িয়ে ধরতেই ইথিনা ছোটাছুটি করতে লাগলো।
রিয়াদ বাঁকা হেসে বলল
– চেচা তোর কথা এই চার দেয়ালের বাইরে যাবেই নাহহহ।
সাউন্ড প্রুফ কিহহ নাহহহ।

ইথিনা কাঁদো কাঁদো মুখ করে নিলো।
রিয়াদ বাঁকা হেসে ইথিনার গলায় লাভ বাইট বসিয়ে দিলো।

*

বেশ আনন্দ উল্লাসে কেঁটে গেল তিনটে মাস।
সবাই ইউ এস এ তে ফিরে গেছেন মাস খানেক হলো।
শুধু আরিয়ান ও নীলিমা রয়ে গেছে।
আর ও মাস খানেক পরে তারা ও ফিরে যাবে।
কিছু দিন আগে খবর এসেছে ইথিনা কনসিভ করেছে।
সবাই বেশ খুশি , শুধু একজনের পাগলামি বেরে গেছে।
রবিন একটু আগে ফোন করে বলল সে হাঁপিয়ে গেছে।
কারন রায়না বেবির জন্য পাগল হয়ে গেছে।
আর রবিন এখন বেবি নিতে নারাজ।
কারন রায়নার বয়স কম , নিজেই বাচ্চা।
আরেকটা বাচ্চা কি করে সামলাবে ?

নীলিমা বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে রায়না কে বুঝালো।
রায়না বুঝে নিলে ও শর্ত দিয়ে এক বছর পর ই বেবি নিতে হবে।
রবিন এই মেয়ের পাগলামির সাথে পেরে না উঠতে পেরে রাজি হয়ে গেছে।

আরিয়ান মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
নীলিমা কিচেন থেকে পকোড়া সাথে চা নিয়ে রুমে ঢুকলো।
আরিয়ান কোনো পাত্তা দিলো না দেখে নীলিমা ভ্রু কুঁচকালো।
নীলিমা একটা পকোড়া মুখে নিয়ে আরিয়ানের পাশে গিয়ে বসলো।
আরিয়ান এখনো চুপ করেই আছে।
নীলিমা মৃদু হেসে বলল
– কি হয়েছে তোমার?
পকোড়া দেখে তো ঝাঁপিয়ে পরো।
আজ কেন কোনো সড়গোল নেই ?

আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– নীলি , আমার না বেবি নিতে ইচ্ছে হচ্ছে।

নীলিমা চমকে তাকালো, আরিয়ান ধীর কন্ঠে বলল
– তুমি ই তো বেবির জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলে।
এখন কেন পরে বলছো ?

নীলিমা প্রশ্ন এড়িয়ে যেতেই আরিয়ান টেনে ধরলো।
নীলিমা মৃদু হেসে বলল
– কিছু দিন পরে নেই ?

আরিয়ান আর কিছু বলল নাহহ।
আজকাল নীলিমা কেন যে বেবি নিতে চাচ্ছে নাহহ তা বুঝতে পারছে নাহহহ ওহহহ।

*

আরিয়ান বিডিতে বিজনেস এর জন্য একটা মিটিং এ গিয়েছিলো।
ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।
নীলিমাদের বাসায় গিয়ে কাউকে পেল নাহহহ।
আরিয়ান সামান্য ভ্রু কুঁচকে সবাই কে ফোন লাগালো কিন্তু নাহহহ কেউ ফোন ধরছে নাহহ।
আরিয়ানের বুকের ভেতর ধিম করে উঠলো।
রবিন এসেছে আজ পাঁচ দিন হলো।
আরিয়ান তখনি রবিন কে ফোন লাগালো।
রবিনের ফোন ও বন্ধ বলছে।
আরিয়ান পাগলের মতো আশে পাশে খুঁজতে লাগলো।
আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসতেই আরিয়ান চট করে ফোন টা রিসিপ করলো।
ফোনের ওপাশ থেকে শুধু হাসির শব্দ শোনা গেল।
তারপর ই কেঁটে দিলো।
আরিয়ান দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে লাগল।
পাগল পাগল লাগছে তাকে।

আবার সেই আননোন নাম্বার থেকে কল এলো।
আরিয়ান রিসিপ করতেই কেঁটে গেল।
আরিয়ান ছুঁড়ে ফোন টা ফেলে দিলো।
কিছু মুহুর্ত পর ই একটা ম্যাসেজ এলো
_ যদি তুই তোর স্ত্রী কে বাঁচাতে চাস তো রয়েল ট্রাওয়ার এ চলে আয়।

আরিয়ান চমকে উঠলো , নীলিমা কে কিডন্যাপ করেছে ?

আরিয়ান দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে লাগলো।
ঘন্টা খানেক এর মাঝেই রয়েল ট্রাওয়ার এ পৌছে গেল।

ঘন জঙ্গলের রাস্তার পাশেই গাড়ি থামিয়ে দিলো।
মাটির চিকন রাস্তা দিয়ে দ্রুত গতিতে আগাতে লাগলো আরিয়ান।
রয়েল ট্রাওয়ার টা পুরো গোডাউন এর মতো।
কিছু মালপত্র আশে পাশে দেখা যাচ্ছে।
আরিয়ান দৌড়ে ভেতরে ঢুকে পরলো।
ঘুটঘুটে অন্ধকার হওয়াতে ফোনের ফ্লাস জ্বালাতে চাইলো।
কিন্তু ফোন টা গাড়ি তেই ফেলে এসেছে।
আরিয়ান চিৎকার করে নীলি নীলি বলে ডাকতে লাগলো।
কিন্তু নীলিমার সাড়া পাওয়া গেল নাহহ।

আরিয়ান মাথা চেপে ধরে বসে পরলো।
সব কিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার।
হঠাৎ করেই পেছন থেকে লাইট জ্বলে উঠলো।
আরিয়ান চমকে তাকালো , নীলিমা , আজাদ চৌধুরী ও মিসেস চৌধুরী কে বেঁধে রেখেছে কেউ।
আরিয়ান দৌড়ে যেতে গেলেই , পেছন থেকে কেউ খিল খিল করে হেসে উঠে।

আরিয়ান পেছন ফিরে তাকাতেই দেখল সাহেল ও হানিফ চৌধুরী হো হো করে হেসে যাচ্ছে।
আরিয়ানের চোখ দুটো রক্ত বর্ন ধারন করে নিলো।
আরিয়ান কয়েকটি গালি দিয়ে আগাতে নিলেই শিস বাজানোর শব্দে থেমে গেল।

শিস বাজাতে বাজাতে পকেটে হাত গুঁজে হেটে আসছে রবিন।
রবিন কে দেখে আরিয়ান আকাশ সমান চমকালো।

আরিয়ান রবিনের কাছে ছুটে গিয়ে বলল
– রবিন তুই এখানে ?
দেখ ঐ কু*** বা** আমার নীলি কে তুলে নিয়ে এসেছে।

রবিন আরিয়ানের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আরিয়ানের মুখে ঘুষি মেরে দিলো।
আরিয়ান ছিটকে দূরে চলে গেল।
নীলিমা চিৎকার করতে লাগলো ।
মুখ বাঁধা হওয়াতে ভালো করে বোঝা ও যাচ্ছে নাহহ।

রবিন একটা হকি স্টিক হাতে ঘোরাতে ঘোরাতে বলল
– মামা হয় আমার , আর আমার ভাই , ভদ্র ভাবে কথা বল।

আরিয়ানের রাগ চোখে মুখে ফুটে উঠলো।
রবিনের কলার চেপে বলল
– তুই এদের সাথে হাত মিলিয়েছিস ?

রবিন বাঁকা হেসে আরিয়ানের থেকে কলার ছাড়িয়ে বলল
– তোহহহ , কি করবি মারবি ?

আরিয়ানের যেন বিশ্বাস ই হচ্ছে নাহহ।
রবিন এই নরপশু দের সাথে হাত মিলিয়েছে।

সাহেল এসে আরিয়ান কে হকিস্টিক দিয়ে মারতে আসে।
একবার মারতেই আরিয়ান হকি স্টিক ঘুরিয়ে দিয়ে সাহেল কে মারতে থাকে।
হানিফ চৌধুরীর লোক এসে আরিয়ান কে টেনে নিয়ে যায়।
সাহেলের মুখ ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।
হানিফ চৌধুরী কিছু গালি মেরে বলল
– শালা রাস্তার ধারে বড় হয়ে আমার ছেলের গাঁয়ে হাত দিস।
তোকে তো মেরেই ফেলবো।

সাহেল কে উঠিয়ে রবিন হানিফ চৌধুরী কে থামিয়ে বলল
– মামা একটু দাঁড়াও, একে তো আমি ই মারবো।

এই টুকু বলেই রবিন আরিয়ান কে মারতে থাকে।
আরিয়ান রবিনের দিকে হাত বাড়াতেই সাহেল নীলিমার গলায় ছুড়ি ঠেকিয়ে দেয়।

আরিয়ান চিৎকার করে উঠে। সাহেল হো হো করে হেসে বলে রবিনের গায়ে আঘাত দিলে নীলিমা শেষ।
আরিয়ান থেমে যায় রবিন আরিয়ান কে মারতে থাকে।

কিছুক্ষণ পর আরিয়ানের মুখ থেকে রক্ত বমি ঝরতে থাকে।
রবিন থেমে গিয়ে হানিফ চৌধুরীর পাশে বসে।
হানিফ চৌধুরী কিছু গালি মেরে বলে
_ কি ভাগ্নে থেমে গেলি কেন?

রবিন হানিফ চৌধুরীর কাঁধে হাত রেখে বলল
_ কি মামা এতো আগেই মেরে দিবো।
একে আমার স্টোরি শুনাবো নাহহ ?
মরার আগে কিছু টা জ্বালিয়ে নেই।

হানিফ চৌধুরী ভ্রু কুঁচকাতেই রবিন চেয়ার থেকে উঠে সাহেল এর কাঁধে হাত রাখে।
সাহেল মৃদু হাসে , রবিন ও হাসে।
রবিন দীর্ঘ করে শ্বাস নিয়ে বলা শুরু করে
_ তো যেটা হলো আমি আর ও আট মাস আগেই সাহেলের সাথে হাত মিলিয়েছি।
তোদের সাথে ভালো ব্যবহার সব ছিলো ন্যাকামি।
আমি নীহু কে চাইতাম , আর সাহেল রা মেঝো মামার সম্পত্তি।
যদি ও বড় মামার সাথে আমাদের একটু ঝামেলা ছিলো।
তাতে কি যায় আসে ?
আমার সব থেকে বড় শত্রু ও তুই ছিলি আরিয়ান।
সাহেল এর ও সব থেকে বড় শত্রু তুই।
আর শত্রুর শত্রু বন্ধু হয়।

এই টুকু বলেই সাহেল আর রবিন হাসতে লাগলো।
হানিফ চৌধুরী বেশ আমোদ করে পান চিবুচ্ছেন।

আরিয়ান ব্যঙ্গ করে বলল
– তোর বাবা মা কে না তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো।
কাজ টা তো হানিফ চৌধুরী ই করেছিলেন।
ভুলে গেছিস সব

রবিন নাক মুখ কুঁচকে বলল
– আমার যায় আসে নাহহ , আমার তো নীহু কে চাই।

আরিয়ান বাঁকা হাসলো , হানিফ চৌধুরী পানের সিপি ফেলে বললেন
– আমার ভাগ্নের মন নরম করতে চাচ্ছিস কোনো লাভ হবে নাহহহ।

রবিন আর সাহেল ও হাসলো।

আরিয়ান রক্ত মাখা থু থু ফেলে বলল
– বলতেই হয় হানিফ চৌধুরীর মাথা আছে।
তবে আমি বুঝতে পারছি নাহহহ , আঙ্কেল কে কি করে ফাসানো হলো।
আমার তো মনে হচ্ছে অন্য কেউ ই ফাসিয়েছে আর আপনি তার ফায়দা নিচ্ছেন।
যাকে বলে কাপুরুষকতা ,

এই টুকু বলতেই হানিফ চৌধুরী রেগে গেলেন।
কয়েকটা গালি মেরে বললেন
– আমি তোর মতো কাঁচা খিলারি নাহহহ।
আমি ম্যানেজার কে টাকার লোভ দেখিয়ে বিজনেস থেকে নিজের নামে টাকা ট্রানসফার করিয়ে নেই আর এন্ট্রি করাই আলতাফ এর নামে।
বিষয়টা খুব কঠিন ছিলো , কিন্তু আমি এমন ভাবে গল্প সাজাই যার ফলে আজাদ কে খুব সহজেই বুঝিয়ে দেই।

আর তোকে তো সেইদিন ই গুলি করে মেরে দিয়েছিলাম।
কিন্তু তুই বেঁচে গেলি , এবার আর বাঁচতে পারবি নাহহহহ।

আরিয়ান নাক মুখ কুঁচকালো।
দুটো লোক সবার মুখের বাঁধন খুলে দিলো।

আজাদ চৌধুরী নিজের বড় ভাই কে ধিক্কার জানাতে লাগলো।
রবিনের উপর সবাই রেগে গেল।
ভালো মানুষির অভিনয় করেছে সে ,ভাবতেই নীলিমার ভেতর থেকে গা গুলিয়ে আসলো।
এতো নিজ মানসিকতা তার ভাইয়ের।
সাহেল তো ছোট থেকেই জানোয়ার ছিলো কিন্তু রবিন ছিইইই।

নীলিমা কাঁদতে লাগলো।
আরিয়ানের ঠোঁট কেঁটে রক্ত ঝরছে।

আরিয়ান নীলিমার দিকে তাকিয়ে হাসলো হাত দিয়ে ইশারা করলো সে ঠিক আছে।

সাহেল একটা প্রপার্টি পেপারস নিয়ে সবাই কে সই করাতে গেল।
আজাদ চৌধুরী সই করবেন নাহ।
এমন নিজ মানসিকতার মানুষ গুলো কে কিছুতেই প্রপার্টি দিবেন নাহহহ ওনি।

হানিফ চৌধুরী কয়েকটা লোক দিয়ে নীলিমা কে নিয়ে আসলেন।
গলায় ছুড়ি ধরতেই আজাদ চৌধুরী সাইন করে দিলেন।
আরিয়ানের কাছে আসতে আরিয়ান বিনা বাক্যে সাইন করে দিলো।

সাহেল আর হানিফ চৌধুরী বুক ফুলিয়ে হাসতে লাগলো।
রবিন ও বাঁকা হাসছে।

আরিয়ান মাটি থেকে উঠে রক্ত মাখা শরীর টা ঝেরে নিলো।

ধীর পায়ে উঠে গিয়ে শিষ বাজালো।
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
হানিফ চৌধুরী আশে পাশে ঘুরতেই তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো।
সব কিছু কেমন ঘোলাটে হয়ে গেল।
পুলিশ , প্রেস দিয়ে ঘিরে গেছে পুরো ট্রাওয়ার।

হানিফ চৌধুরী নিজের লোক দের ইশারা করলো।
কিন্তু তারা কোনো প্রতিক্রিয়া করলো নাহহহ।

সাহেল আর হানিফ চৌধুরী বিস্ময়ে রবিনের দিকে তাকালো।
রবিন বাঁকা হেসে নখ কামড়াচ্ছে।

আরিয়ান কপালের রক্ত টা মুছে নিয়ে বেশ আমোদ এর সুরে বলল
– জানতাম কুকুরের লেজ কখনোই সোজা হয় নাহহহ।
ভালো মানুষির অভিনয় করলেন ঠিক ই কিন্তু ভালো মানুষ হতে পারলেন নাহহহ।
ভেবেছিলেন তন্ময় আবরার কে গেইম খেলিয়ে দাবার চাল পাল্টে দিবেন।
মানতেই হয় মাথার বোকা পোকা রা কিল বিল করতেই থাকে।
আমার নীলি কে মাঝে টানলি কেন ?

রবিন দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– মামা দেখেছি, কিন্তু শকুনি মামা দেখি নি ।
আজ তো সেটা ও দেখে নিলাম।

আরিয়ান আর রবিন হো হো করে হেসে উঠলো।
সাহেল রাগে কটমট করতে লাগলো।
হানিফ চৌধুরী কে উদ্দেশ্যে করে বলল
– আব্বা বলেছিলাম নাহহহ , এই হারামজাদা রে বিশ্বাস নাই।
তাই তো এই হারামজাদারে না জানিয়েই নীলু দের নিয়ে এসিছিলাম।
কিন্তু এই কু******* কেমনে আইসা পরলো।
তখনি আমার সন্দেহ হইছিলো।
প্রথম থেকেই মাথায় আসছিলো নাহহহ।
শালা তোকে ও ছাড়বো না।
এই বলেই রবিনের দিকে তেড়ে গেলেই আরিয়ান বাঁধ সাজে।
আরিয়ান ধাক্কা মারতেই সাহেল নিচে পরে যায়।
হাতের কাছে ছুড়ি পেয়ে নীলিমাকে আক্রমন করে।
সবাই থমকে যায় , আরিয়ান সবাই কে আগাতে বারন করে।
সাহেল নীলিমার গলায় ছুড়ি তাক করে আছে , সবাই কে সামনে থেকে সড়ে যেতে বলে।
সবাই সরে যায় , সাহেল ধীর পায়ে আগাতে নিলেই পেছন থেকে রিয়াদ সাহেল কে ঘুসি মারে।
সাহেল ছিটকে যায় , পুলিশ সাহেল কে ধরে নেয়।

নীলিমা দৌড়ে আরিয়ানের কাছে আসে।
আরিয়ান কে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে।
সবাই যেন প্রান ফিরে পেল । ইথিনার চোখে পানি চিক চিক করছে।
সবাই এতো টা রিক্স নিয়েছে।

হঠাৎ ই নীলিমা আরিয়ান কে ধাক্কা মারে।
আরিয়ান ছিটকে পরে , আর একটা গুলি এসে লাগে নীলিমার বুকে।

হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে সবাই।
সাহেল পুলিশের পকেট থেকে কৌশলে বন্দুক নিয়ে আরিয়ানের দিকে গুলি ছুঁড়ে আর নীলিমা আরিয়ান কে বাঁচাতে নিজের উপর গুলি নিয়ে নেয়।

আরিয়ান নীলি বলে চিৎকার করে।
নীলিমার চোখ দুটো ফেঁটে অশ্রু গড়িয়ে পরে।
বুক থেকে রক্ত ঝরছে , আরিয়ানের শরীর কাঁপছে।
নীলিমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে।
নীলিমা ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে ধীর কন্ঠে বলল
– আরিয়ান আমি মা হতে চলেছি।
তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য বলতাম বেবি নিবো নাহহ।
আজ বিকেলেই জানতে পেরেছি আমি।

আরিয়ানের কানে সেসব কিছু পৌছালো নাহহ।
আরিয়ান নীলি নীলি বলতে চিৎকার করতে লাগলো।
সবাই অঝোরে পানি ফেলছে।
সাহেল আর হানিফ চৌধুরী কে পুলিশ নিয়ে গেল।
নীলিমা অস্ফুটন স্বরে বলল
– ভলোবাসি আরিয়ান, খুব ভালোবাসি।

আরিয়ান শক্ত করে নীলিমার হাতে চুমু খেল।
চোখ দিয়ে অঝোরে নোনা জলের ধারা নেমে যাচ্ছে।

(গল্পের এই পার্ট টা কেমন খাপ ছাড়া হলো)

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here