প্রেমাসক্তি #ফাতেমা_তুজ #part – 3

0
349

#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#part – 3

সেই সকাল 10 টায় নীলিমা কলেজে গেছে এখন বিকেল চারটে বেজে গেছে।
কিন্তু নীলিমার আসার নাম ই যেন নেই।
নামে মাত্র পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে নীলিমা।
একসময় কলজের টপার ছিল সে।
আজ সেই নীলিমার কোনো রকম একটা রেজাল্ট হলেই চলে।
দুপুর দুটো থেকে নীলিমার মা বসে আছেন মেয়ের জন্য খাবার নিয়ে। কিন্তু নীলিমা তো আসলই না।
নীলিমার মা দরজার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছেন।
কখন তার নারীছেড়া কলিজার টুকরা নীলিমা বাসায় আসবে ।
মিষ্টি মেয়েটা কেমন হয়ে গেল।
জীবনের রঙ বোধহয় এভাবেই বদলে যায়।
কত শত মানুষ হয়তো এভাবেই একটু একটু করে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
শুধুমাত্র কিছু মানুষের জেদ আর ভুল বজায় রাখার জন্য ।
নীলিমার জীবন টা ও তো বিষিয়ে গেল।
সেদিন যদি তিনি সাহস করতে পারতেন, তো আজকে এই দিন টা দেখতে হতো না। তার ফুলের মতো হাস্যউজ্জল ফুটফুটে মেয়ারটার জীবনটা আজ নরকের মতো রঙহীন, হাহাকার, যন্ত্রণা দায়ক হতো না।
আর না আজ ওনাদের আত্মগ্লানি, অনুশোচনা তে ভুগতে হতো।
মেয়ের মুখে সেই মায়া ভরা, ব্যাথা হীন হাসি দেখেন না চার চারটে বছর হয়ে গেল।
যে মেয়েটা সারাক্ষণ হাসি খুশি তে মেতে থাকতো। যাকে সবাই বলত স্মাইল কুইন , আর আজ সেই স্মাইল কুইন হাসে না। মুখের কোনে দেখা যায় শুধু তাচ্ছিল্যের হাসি।
আচ্ছা তার মেয়েটা কি আর স্বাভাবিক হবে না।
এভাবেই কি একটু একটু করে নিজেকে শেষ করে দিবে।
আর কখনো কি দেখতে পাবেন না নীলিমার সেই ভুবন ভোলানো হাসি।
একটা নিষ্পাপ প্রান কি এভাবেই শেষ হয়ে যাবে?

এমন চলতে থাকলে মেয়েটা যে আর বেশিদিন বাঁচবে না।
মা হয়ে মেয়ের মৃত্যু কীভাবে মেনে নিবেন তিনি।
এ ও কি সম্ভব?
কি করে হবেন তিনি কঠোর, পাথর।
নিজের গর্ভের সন্তান কে হারিয়ে কি করে বাঁচবেন ওনি ?
ছোট থেকে মেয়েটার গায়ে একটা ফুলের টোকা ও লাগতে দেন নি।
আর আজ কি সব বাজে চিন্তা করতে হচ্ছে।
আদরের সেই নীলিমা, কি আর কখনো আম্মি বলে জড়িয়ে ধরবে না।
খাবার নিয়ে বসে মিসেস চৌধুরী এই সব ভাবতে লাগলেন ।
আর চোখ দিয়ে টুপ টুপ করে অশ্রু ঝরতে লাগলো।

কিছুক্ষণ পর ই নীলিমা কে মেইন ডোর ই ঢুকতে দেখলেন মিসেস চৌধুরী।
মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে আসে নীলিমা ।
রুমে এসেই কাঁধের ব্যাগ টা ছুড়ে ফেলল বেডে।
তারপর বেডে শুয়ে কপালে হাত গুঁজে দিলো।
বেশকিছুক্ষন পার হয়ে গেল,,, তারপর নীলিমা বাথরুমে
চলে গেল ফ্রেস হতে।
তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বাথরুম থেকে বের হলো।
তারপর টেবিলের লক করা ড্রয়ার থেকে নোট পেড টা বের করে আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলো।
কিছুক্ষণ পর নোট পেড টা ওপেন করলো ।
প্রথম পাতাটি তে বড় বড় করে লেখা।

জীবন কখন মোর ঘুড়িয়ে দেয় কেউ বলতে পারে না।
শুধুমাত্র হতাশ হইয়া না।

লেখা গুলোর উপর আলতো হাত বুলালো নীলিমা।
তারপর এক নিশ্বাস নিয়ে লেখা গুলোর উপর চুমু খেলো।
নীলিমার চোখ দিয়ে পড়ছে অঝর ধারায় পানি।
পুরো পৃথিবীকে দেখায় তার চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি ও ঝরে না।
ওর চোখের সমস্ত পানি শেষ হয়ে গেছে, ওর মাঝে নেই কোনো অনুভূতি।
কিন্তু সবার আড়ালে ওর ও একটা ছোট্ট আলাদা পৃথিবী রয়েছে।
এই ছোট্ট নোট পেড টাই ওর পৃথিবী।
এই নোট পেড টা কে বুকে আকড়েই তো ও বেঁচে আছে।
ওর এই ছোট্ট পৃথিবীর কাছে এসে বাইরের কঠিন আবরন গলে পানি হয়ে যায়।
যা শুধু মাত্র ও আর ওর ছোট্ট পৃথিবীর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে।
পুরো পৃথিবী জানে নীলিমা কঠিন পাথর, অনুভূতি হীন , নির্বিকার ।
হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ নীলিমা কঠিন পাথর।
তাকে কঠিন পাথর হতে বাধ্য করা হয়েছে।
জীবন টা একটু একটু করে নিশ্বেষ হয়ে যাচ্ছে।
ও তো সেইদিন ই মরে গিয়েছিলো।
চার বছর আগেই ওর আত্মা শেষ হয়ে গেছে।
আছে শুধু রক্তে মাংসে গড়া এ শরীর।
শুধু মাত্র অপেক্ষা কখন এ দেহের শেষ অসিস্ত টা ও শেষ হয়ে যায়।

ডোরে মায়ের নক পেয়ে নীলিমা চোখের পানি মুছে নিলো।
নোট পেড টা বন্ধ করে অতি যত্নে টেবিলে লক করে রেখে দিল।
নিজেকে স্বাভাবিক করে দরজা খুলে দিলো।
নীলিমার মা রুমে প্রবেশ করেই মেয়ে কে জড়িয়ে ধরে বললেন
– মারে খাওয়া দাওয়া টা ঠিক মতো কর।
এই ভাবে তো শেষ হয়ে যাবি।

নীলিমা তাৎছিল্যর হাসি দিয়ে বলল
– অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছি।
আর আমার জন্য রোজ অপেক্ষা করো না।
এই সব লোক দেখানো ভালোবাসা আমার ভালো লাগে না।

নীলিমার মা কিছু বললেন না।
কারন সে জানে তার মেয়ে যতই মুখে এই কঠিন বুলি উচ্চারণ করুক না কেন , তাকে ভালোবাসে।
আর সে না খেয়ে অসুস্থ হয়ে যাবে বলেই , নীলিমা বাসায় খাবার খায়, যাতে তার মা ঠিক মতো খাবার টা তার সাথে খায়।
নীলিমার মা চোখের পানি আঁচল দিয়ে মুছে বললেন
– তুই আয় খাবার বারছি।

নীলিমা প্রতি উত্তরে আর কিছু বলল না।
নীলিমার মা চলে যেতেই নীলিমা দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে আবার কান্না জুড়ে দিলো।
সে পারছে না এই অভিনয় করতে, সে বাইরে টা যতই কঠিন দেখাক না কেন সে ভেতরে ভেতরে দুমরে মুচরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
নীলিমা এক বিকট চিৎকার দিলো , তারপর বলল
– কেন কেন হলো এমনটা আমার সাথে?
কেন আমাকে শেষ করে দেওয়া হলো।
কি ক্ষতি করেছিলাম আমি।
আজ আমি বেঁচে থেকে ও মরে গেছি।
আমার পৃথিবী নিশ্বেষ হয়ে গেছে।
দম বন্ধ হয়ে যায় আমার , আমি থাকতে পারছি এই পৃথিবী তে।
চোখ বন্ধ করতেই নীলিমার চোখে ভেসে উঠলো,,, সেই ভয়ঙ্কর মূহুর্ত।
ভয়ঙ্কর সেই গুলি শব্দ,,,,, যা শেষ করে দিয়েছিলো নীলিমার পৃথিবী।
নীলিমা চিৎকার করে বলল
– প্লিজ এমনটা করো না ,,, আমি বিয়ে করে নিবো।
দয়া কর তোমরা, দয়া কর , আমি মেনে নিবো তোমাদের সিদ্ধান্ত।
ওকে ছেড়ে দাও তোমরা ,,,, কিন্তু কেউ শুনলো নাহহ।
নীলিমার থেকে আলাদা করে দেওয়া হলো নীলিমার আত্মা কে।
নীলিমা চোখ মেলে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলো।
নীলিমার এলোমেলো হওয়া জীবন টা বড্ড কষ্ট দিচ্ছে ওকে।
নীলিমা কাঁদতে লাগল , এ কান্না কেউ দেখতে পেলো না আর না কেউ শুনলো।
একটা সময় পর চার দেওয়ালের মাঝেই বিলিন হয়ে গেল নীলিমার আর্তনাদ ।
বেশ কিছুক্ষণ পর নীলিমা নিজেকে সামলে ফ্রেস হয়ে নিচে চলে গেল।
নীলিমার মা নীলিমা কে খাবার বেরে দিচ্ছে, আর নীলিমা পাথরের মতো খাচ্ছে।
এতে নীলিমার মায়ের চোখ আবার পানিতে ভরে
উঠলো।

পরবর্তী পার্ট পেতে পেইজ এ ফলো দিয়ে রাখুন

https://www.facebook.com/Fatema-tuz-ফাতেমা-তুজ-110123584545542/

বি : দ্র :ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

🛑কিছু কারনে গল্প দিতে দেরি হলো তার জন্য আমি দুঃখিত।
সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক ফলো আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here