বিশাল এক পাব রেস্টুরেন্টে বসে গ্লাসের পর গ্লাস বিয়ার খাচ্ছে নীলিমা। রোজকার অভ্যাস তার, এটাই তার জীবন।
কালো জিন্স প্যান্ট এর সাথে ব্লু কালার জিন্স এর শার্ট , হাতা টা ভাজ করে রাখা। পায়ে কালো সু হাতে স্টিল এর ব্রেসলেট। রাত ১০ টা বেজে গেছে। পাবের বিশাল ঘড়িটা জানান দিচ্ছে, এখনি পাব বন্ধ করে দেওয়া হবে। নীলিমা ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যর হাসি রেখে আর ও এক গ্লাস বিয়ার নিয়ে একদমে খেয়ে নিল। আজব হলে ও সত্য যে এত বিয়ার খাওয়ার পর ও এই মেয়েটার নেশা ধরে না। কিছুতেই কাঁবু হয় না। মাতাল হয় তবে তাল হারায় না।
নীলিমা সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো তারপর কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে চলল কাউন্টারে। কাউন্টারে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে লল
-হয়ার ইজ ইউর ম্যানেজার?
কাউন্টারে বসে থাকা লোকটা চমকায়। হালকা ঢোক গিলে বলে
– ম্যাম স্যার একটু বাইরে গেছেন।একটু পর ই এসে পড়বেন।
আপনি কাইন্ডলি একটু অপেক্ষা করুন। আমি স্যার কে ইনফ্রর্ম করছি, প্লিজ ম্যাম টেক ইউর সিট।
নীলিমা কোনো কথা ছাড়াই টেবিলে রাখা বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে ডেস্কের উপর জোরে আ ঘা ত করে দেয়।
বিয়ারের বোতল সম্পূর্ণ ভেঙে কত গুলো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে, সাথে তরল পদার্থ মেঝেতে পড়ে গড়াগড়ি খেতে লাগল।
বোতল ভাঙার শব্দে কাউন্টারে থাকা লোকটা পুনরায় চমকে তাকালেন। যেহেতু গান বাজছিল না , আর সবাই নীরবতার সঙ্গে যে যার কাজ করছিল তাই বোতল ভাঙার শব্দ টা দ্বিগুণ গতি তে ছড়িয়েছে। ম্যানেজার পাবের মেইন ডোরের বাইরেই ছিলেন , এত জোরে শব্দ শুনে হনহনিয়ে পাবে প্রবেশ করলেন। আশে পাশের সবাই নীলিমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু এতে যেন নীলিমার কোনো কিছু যায় আসেই না। কাউন্টারে বসে থাকা লোকটা নীলিমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছেন , তার মাথায় আসে না , একজন মানুষ রোজ এত বিয়ার খায় তা ও তার নেশা হয় না। তাল হারায় না কিছুতেই। বিগত চার বছর ধরেই নীলিমা বিয়ার খেয়েই যাচ্ছে, ডেস্পারেট হয়ে গেলে নাকি ড্রাগ ও নিতে যায়। কিন্তু কি ভেবে যেন আবার নেয় না। ম্যানেজার কোনো মতে কপালে থাকা সূক্ষ্ম ঘাম টুকু মুছে নিয়ে নীলিমার সামনে এসে দাঁড়ায়।
দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে বলেন
– আম সরি ম্যাম।
নীলিমা কিছু না বলে টেবিলের উপর রাখা বিয়ারের বোতল থেকে আর ও এক গ্লাস বিয়ার ঢালতে ঢালতে থাকে।
– বিল কত হয়েছে ম্যানেজার?
ম্যানেজার হাতে একটা নোট নিয়ে বললেন
– চেক করে বলছি ম্যাম। একটু সময় দিবেন প্লিজ।
ম্যানেজার কে কোনো রকম উত্তর না দিয়ে নীলিমা আপন মনে বিয়ার খেতে লাগল। সে উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন ও মনে করে না। নিজের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারে না নীলিমা। মনে হয় শুধুমাত্র কষ্ট ই তার অস্তিত্ব,জীবনে সুখ , শান্তি , সমৃদ্ধি বলতে কিছুই নেই। যা আছে তা সব ই দুঃখ।এই সব ভাবতে ভাবতে ই নীলিমা ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যর হাসি ফুটিয়ে নিল। এক দম এ গ্লাসের সবটুকু বিয়ার ঢক ঢক করে পান করে নিল।
এখনো সবাই তীক্ষ্ম দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে নীলিমার দিকে।
সবাই বোধহয় জোক্স ই দেখছে। অবশ্য তাকে কে কি ভাবে এতে নীলিমার বিন্দু মাত্র কোনো ইন্টারেস্ট ই নেই।
ম্যানেজার নোট চেক করে বললেন
– ইটস 13200 ম্যাম।
নীলিমা তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলল
– আপনাদের আজাদ চৌধুরী স্যার এর থেকে নিয়ে নেবেন।
এই বলেই বোতল থেকে আরেক টুকু বিয়ার গ্লাসে নিয়ে এক ঢোকে খেয়ে গটগট করে পাব থেকে বের হয়ে গেল।
ম্যানেজার এক দৃষ্টি তে নীলিমার যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকলেন। নীলিমার এভাবে যাওয়াতে ম্যানেজার বিন্দু মাত্র অবাক হলেন না। কারন বিগত চারটি বছর ধরেই এমন হচ্ছে, নীলিমা রোজ বিল কত জিজ্ঞাসা করে কিন্তু নিজ হাতে কখনোই বিল পে করে নি।
নীলিমা চলে গেলে ম্যানেজার দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অদ্ভুত এ দুনিয়া , কত রঙের মানুষ ই না দেখলেন ওনি। কিন্তু নীলিমার মতো এমন রহস্যময়ী কাউকে দেখেন নি এ জীবনে।
__________________
নীলিমা পাব থেকে বেরিয়ে আসলেই ড্রাইভার এসে বলল
– ম্যাম আমি ড্রাইভ করে নিয়ে যাই?
নীলিমা ড্রাইভার কে একবার চোখের পলকে দেখে গাড়ি তে উঠে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করতে করতে চলে গেল।
কখনোই সিট বেল্ট লাগায় না নীলিমা। ড্রাইভার নীলিমার যাওয়ার দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি তে চেয়ে থাকল। যতক্ষণ পর্যন্ত নীলিমার গাড়ি দেখা গেল ড্রাইভার চেয়ে ই থাকল।
নীলিমার গাড়ি চক্ষু দৃষ্টির আড়াল হতেই ড্রাইভার পার্কিং থেকে গাড়ি বের করে চলে গেল।
নীলিমার বাবা ড্রাইভার কে রোজ পাঠান। তিনি জানেন তার মেয়ে কখনোই ড্রাইভার কে ড্রাইভ করতে দিবে না। কিন্তু যদি কখনো ড্রাইভার কে প্রয়োজন পরে তাই বিগত চারটি বছর ধরেই ড্রাইভার আসে কিন্তু নীলিমা একাই ড্রাইভ করে বাড়ি ফিরে।
নীলিমা গাড়ি নিয়ে বাসার সামনে আসতেই দারোয়ান গেট খুলে দিল। নীলিমা বাসার ভেতরে গিয়ে পার্কিং এ পার্ক না করে বাসার ভেতরে রাস্তাটিতেই রেখে দিল। বাসায় গিয়ে কলিং বেল বাজাতে হয় না নীলিমার, তার আগেই নীলিমার মা দরজা খুলে দেন। আজ ও তার ব্যতিক্রম হয় নি। নীলিমাকে গেট দিয়ে ঢুকতে দেখেই নীলিমার মা মিসেস চৌধুরী বাড়ির মেইন ডোর খুলে দাঁড়িয়ে আছেন।মা কে দেখে নীলিমার ভেতর থেকে সামান্য দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো। কিন্তু কিছু বলার ইচ্ছে বা পরিস্থিতি কিছুই নেই।
নীলিমা হাতে থাকা কোর্ট টা দরজার কাছে ফেলে রেখে গটগট করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলে।
নীলিমার মা মেয়ের যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলেন। মেয়ে চলে গেলে মেইন ডোর বন্ধ করে আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদলেন।
এটা ওনার রোজকার কাজ, চারটে বছর ধরে সব কিছুই একই ভাবে হয়ে চলছে। মনে হয় হাইলাইট করে সমস্তটা ফিরে দেখানো হচ্ছে। চারটে বছর ধরে একই ঘটনা ঘটে চলছে।
‘ রিভেঞ্জ অফ নেচার ‘
#প্রেমাসক্তি (১)
কলমে ~ ফাতেমা তুজ নৌশি
পরবর্তী পার্ট পেতে পেইজ এ ফলো দিয়ে রাখুন।
https://www.facebook.com/Fatema-tuz-ফাতেমা-তুজ-110123584545542/
বি : দ্র :ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।
⛔ আসসালামুআলাই রির্ডাস। গল্প কেমন হচ্ছে জানাবেন প্লিজ। আশা রাখছি এই গল্প থেকে 2000 ফলোয়ার পাবো।
সবার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা রইলো। আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক ফলো আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন।