প্রেমাসক্তি #ফাতেমা_তুজ #part – 21

0
232

#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#part – 21

নীলিমা রাস্তার ধার ধরে হাঁটছে আর এক হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে যাচ্ছে।
কিন্তু বেহায়া চোখ জোড়া থামছেই নাহহ।
চোখ দিয়ে যেন বৈশাখ মাসের তুমুল বর্ষন নেমে যাচ্ছে।
নীলিমার বার বার মনে পরছে ইথিনার বলা সেই কথা
– আমি তোমাকে আমার উডবি কে টাচ করার পারমিশন দিই নি।

ভাবতেই নীলিমার শরীর রি রি করে উঠছে।
ওহহ কি করে ভুল করতে পারে , সেই কন্ঠস্বর, সেই দৃষ্টি, সেই মানুষটা কিন্তু সে তার নয়।
সে নাকি তন্ময়, নীলিমার শরীর কাঁপছে আজ সকালের ঘটনা।

নীলিমা সারা রাত ঘুমোয় নি , ঘুমোবেই বা কি করে আরিয়ান কে হাড়ানোর ব্যথা যে তাকে তাড়া করে বেরায়।
তার চোখের সামনে মানুষ টা শেষ হয়ে গেল আর সে কিচ্ছু টি করতে পারলো নাহহ।
কাল দুপুর থেকে না খাওয়া সে , শরীর টা কাঁপছে।
বাসায় ড্রাই ফুড আছে , কিন্তু ড্রাই ফুড খেতে গেলে নীলিমার গলায় আটকে যায়।
ফ্রিজ থেকে ফলের জুস বের করে দেখলো এক গ্লাসের মতোই আছে।
নীলিমা ঢক ঢক করে ফলের জুস খেয়ে নিয়ে বাসা থেকে বের হলো নাস্তা করার জন্য ।
নীলিমা পথের ধার ধরে হেঁটে যাচ্ছে, কারন এখন তার কাছে গাড়ি নেই।
আর এখন লোকাল গাড়ি দিয়ে যেতে ইচ্ছে করে না তার।
নীলিমা ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট জিন্স প্যান্ট সাথে ব্ল্যাক টি শার্ট আর ব্লু জ্যাকেট পরে হাটছিলো।
খানিকটা শীত অনুভব হচ্ছে তার , যদি ও খুব কম পরিমানে ই শীত পরেছে।
নীলিমা ফুটপাত ধরে হাটছিলো আর ছোট ছোট পাথর পা দিয়ে এদিক ওদিকে ছুড়ছিলো।
হঠাৎ ই একটা রেড কালারের গাড়ি চোখে পড়লো , সচরাচর দেশে রেড কালারের গাড়ি চোখে পরে নাহহ।
গাড়ি টার মডেল আবার বিদেশি, অনেক এই গাড়ি টার দিকে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে থাকলে ও নীলিমার আগ্রহ হলো না তাই এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
কিছু দূর যেতেই দেখলো জ্যাম লেগেছে , গাড়ি টা জ্যাম এ দাড়িয়ে আছে।
নীলিমা ধীর গতিতে তার মতো আপন মনে হাঁটতে লাগলো।
নীলিমা গাড়ি টার থেকে দু হাত দূরে হঠাৎ ই তার চোখ পরে রেড কালারের গাড়ি টার বাইরের লুকিং গ্লাস এ।
নীলিমা থমকে যায় , এই তো তার আরিয়ান , নীলিমার মস্তিষ্কে আসে না আরিয়ান যে মারা গেছে । নীলিমা ছুটে যায় কিন্তু তখনি জ্যাম ছেড়ে দেয় , আরিয়ান কে একপলক দেখতে পায় সে কিন্তু ভাগ্য তার সহায় ছিলো না তাই সে আরিয়ান বলে ডাক দেওয়ার পূর্বেই গাড়ি টা বহু দূর চলে যায়।
নীলিমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায় , নীলিমার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরতে থাকে।
নীলিমা কোনো সাত পাঁচ না ভেবে দৌড়াতে থাকে উদ্দেশ্যে তার সুপার ম্যান।কারন তার বিশ্বাস ভাই নামক এই সুপার ম্যান সব ঠিক করে দিতে পারবে।
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস সুপার ম্যান এর বাসায় গিয়ে সে চমকের উপর চমক পায়।
নীলিমার মাথায় আসে নাহহ রবিনের বাসায় আরিয়ান কি করছে?
তাছাড়া আরিয়ান কেন বলছে সে তন্ময়, আর এই কি সেই তন্ময় যে নীলিমা কে হসপিটালে এডমিট করিয়েছিলো।
সে সেদিন ও আরিয়ান কে দেখেছিলো , কিন্তু হেলোসিনুয়েশন বলে ধরে নেয়।
কিন্তু আজ বুঝতে পারছে সেটা হেলোসিনুয়েশন ছিলো নাহহহ।

নীলিমা পথের ধারে একটা গাছের গুড়ি তে বসে।
চুল গুলো খামচে ধরে কারন কষ্ট হচ্ছে তার আরিয়ান তাকে চিনতে পারলো না?
এ ও কিহহ আদৌ সম্ভব ?
তবে কি সময়ের সাথে সাথে ভালোবাসা ফিকে হয়ে যায়?
আর ইথিনার সাথে নাকি ওর বিয়ে ও হতে চলেছে।
নীলিমার ইচ্ছে হচ্ছে এখনি মরে যেতে, জীবনে এমন পরিস্থিতির সাথে পরিচিত হতে হবে সে স্বপ্নে ও ভাবতে পারে নি।

নীলিমা মুখে হাত গুঁজে কাঁদতে লাগলো।
আজ খুব বেশি ই নিঃস্ব মনে হচ্ছে, আরিয়ান তাকে চিনতে পারবে না এটা ভাবতেই বুক ফেটে হাহাকার নেমে আসছে।
মাথার মধ্যে চরাও হচ্ছে তবে কি সত্যি সে ভুল ভাবছে, ঐ ছেলেটা তন্ময় আরিয়ান নয়।
এ ও কি সম্ভব ?
জীবন কি সিনেমা হয়ে যাচ্ছে?
নীলিমা আর ভাবতে পারছে নাহহহ বুকের ভেতর তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে।
গত চার বছরে ও বোধহয় এমন যন্ত্রণা হয় নি তার।
প্রিয় মানুষ টার থেকে দূরে থাকা গেলে ও অবহেলা সহ্য করা যায় নাহহ।

কে বলেছে অপেক্ষা করার থেকে মৃত্যু শ্রেয় ?
তার কাছে তো মনে হচ্ছে অবহেলা পাওয়ার থেকে ও মৃত্য শ্রেয় ।

*

ইথিনা রাস্তায় বসেই কাঁদছে।
কিন্তু তার মাথায় আসছে নাহহহ তন্ময় নীলিমা কে তার নীলি কেন বললো ?
তবে কি তন্ময়ের সব মনে পরে গেল ?
ইথিনার চোখ থেকে অশ্রু বর্ষন নেমেই যাচ্ছে।
বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে । মনে হচ্ছে মৃত্যু তার বহু কাছে । সব কিছু এলো মেলো লাগছে । হয়তো তন্ময় কে আর পাওয়া হবে নাহহ ।
ইথিনা মাথায় দু হাত গুঁজে কাঁদতে লাগলো।
আশে পাশের অনেক মানুষ দাড়িয়ে দাড়িয়ে কানা কানি করছে।
এতে ও ইথিনার ভ্রূক্ষেপ হলো নাহহ। যখন প্রিয় মানুষ টা কেই সে হাড়িয়ে ফেলল তখন এই সব রাস্তার অচেনা আগন্তুক কি বলল তাতে কি যায় আসে ?

মহুয়া আর সিনথি ছাঁদের চারপাশে ঘুরে সেলফি নিচ্ছিলো।
সোশাল মিডিয়া নামক স্থানে ছবি পোস্ট করাই মূলত এর উদ্দেশ্যে।
মহুয়া সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে দিলো সঙ্গে সঙ্গে লাইক কমেন্টস এর ছড়াছড়ি হতে লাগলো।
এতো এতো কমেন্টস রিয়েক্ট দেখে মহুয়া উল্লাসে মাততে লাগলো।
সিনথি ভ্রু কুঁচকে বলল
– এতো লাফালাফি করছিস কেন ?

– লাফালাফি করবো না কেন ?
বি ডি তে এসে ছবি পোস্ট দিতেই হুর হুর করে ফলোয়ার বেরে যাচ্ছে।
সব মিলিয়ে বেশ জমে গেছে।

সিনথি ভেঙ্চি কেঁটে বলল
– এখন যদি আপনার ছবি পোস্ট দেওয়া হয়ে থাকে তো আমাকে কিছু ছবি তুলে দেন।

মহুয়া মুখ বাকিয়ে বলল
– এতো ঢং এর প্রয়োজন নেই, আমি এমনিতে ই তুলে দিবো।

সিনথি আর কিছু না বলে নানা পোস নিয়ে ছবি তুলতে লাগলো।

মহুয়া একের পর এক ছবি তুলেই যাচ্ছে কিন্তু সিনথির ছবি তোলা শেষ ই হচ্ছে নাহহ।

মহুয়া বিরক্ত হয়ে বলল
– আপু আর কতো ?

সিনথি আবেদনের সুরে বলল
– প্লিজ মহু আর একটা এটাই লাস্ট।

মহুয়া বিরক্তিকর শব্দ করে বলল
– ওকে।

– আচ্ছা মহু যদি ছাঁদের সাইটে এ গিয়ে পেছন থেকে ছবি তুলি ভালো দেখাবে?

মহুয়া দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– হুম ভালো দেখাবে।

– আরে সত্যি করে বল নাহহ ?

– সত্যি ই ভালো লাগবে , এখন প্লিজ তুমি পোস নাও।
আমার মাথা ব্যথা হয়ে গেছে।

সিনথি মহুয়া কে ফ্লাইং চুমু দিয়ে ছাঁদের সাইটে গেল পোস নিতে।
নিচের দিকে চোখ যেতেই দেখলো কেউ একজন মাটিতে বসে আছে।
সিনথি ভ্রু কুচকে ভালো করে দেখলো।
কিন্তু বারো তলার উপর থেকে বোঝা যাচ্ছে না ঠিক।
কিন্তু তাদের গাড়ির কাছে বসে আছে দেখে ইথিনা মহুয়া কে ডাক দিলো।
মহুয়া মুখ গোমড়া করে বলল
– কি হয়েছে কি ?

– মহু দেখ নিচে।

মহু ভ্রু কুঁচকে নিচের দিকে দেখলো দেখেই বলল
– আপু এটা তো ইথি আপু মনে হচ্ছে।
কিন্তু এভাবে ,,,

এই টুকু বললেই সিনথি বলল
– তাড়াতাড়ি নিচে চল।

সিনথি আর মহুয়া ছুট লাগালো।
লিফ্ট এ উঠে সোজা গ্রাউন ফ্লোর এর বোতাম ক্লিক করে দিলো।
মিনিটের মধ্যে নিচে এসে পরলো ওরা।
সিনথি আর মহুয়া দৌড়ে রাস্তার কাছে গেল।
ইথিনা কে এভাবে দেখে দুজনেই আপু বলে চিৎকার করলো।

ইথিনা কোনো কথা বলল নাহহহ।
মহুয়া আর সিনথি ব্যস্ত হয়ে পরলো।
কিন্তু ইথিনা কোনো উত্তর দিলো নাহহহ।
মহুয়া রবিন আর তন্ময় কে ফোন দিলো কিন্তু তাদের ফোন সুইচঅফ বলছে।

অগত্যা তারা বাসায় কল করলো।

ইথিনা চোখ মুখ মুছে উঠে দাঁড়ালো কিন্তু মুহূর্তেই চোখ ভেসে গেল।
মহুয়া আর সিনথি ইথিনা কে জড়িয়ে ধরলো।
ইথিনা পাগলের মতো কাঁদতে কাঁদতে বলল
– আমার তন্ময় চলে গেল , আমি হারিয়ে ফেললাম আমার তন্ময় কে।

ইথিনার কথা মহুয়া কিংবা সিনথি কারোর ই বোধগম্য হলো নাহহ।
ইথিনার অবস্থা নাজেহাল দেখে আর বারতি প্রশ্ন করলো নাহহ।

*

তন্ময় পাগলের মতো রাস্তা দিয়ে দৌড়াচ্ছে।
চোখ চারিদিকে নিবদ্ধ আছে , কোথাও নীলিমা কে দেখা যাচ্ছে না ।
এই টুকু সময়ের মধ্যে মেয়েটা কোথায় চলে গেল।
রাস্তার অনেকেই হা হয়ে দেখছে , দুটো যুবক ছেলে লোকাল রাস্তা দিয়ে ছুটে যাচ্ছে ।
সবার চোখে মুখে কৌতুহল, সচরাচর এমন ঘটনা ঢাকার মতো ব্যস্ত লোকালয়ে ও দেখা যায় নাহহ।

রবিন তন্ময়ের হাত ধরে বলল
– তন্ময় এভাবে সম্ভব নাহহ, এভাবে আমরা নীহু কে খুঁজে পাবো নাহহ।
চল পাব গুলো তে দেখি, তন্ময় ও মাথা ঝাকালো।
দুজন ছুটে গেল আশে পাশের পাব গুলোতে কিন্তু নীলিমা সেখানে নেই।
তন্ময় আর রবিন মিলে পুরো শহরের অলি গলি খুঁজতে লাগলো, ফোনে ছবি দেখিয়ে লোক জন কে জিঙেস করতে লাগলো কিন্তু কেউ নীলিমা কে দেখে নি।
দেখবেই বা কি করে , এই নগরীতে মানুষ ছুটে পেটের দায়ে ,কে এলো গেলো তা দেখার সময় কোথায়, সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে গেছে কিন্তু নীলিমা কে খুঁজে পাওয়া গেল নাহহ।
তন্ময় চুল খামচে ধরে বলল
– মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে রে , মেয়ে টাকে আমি কষ্ট দিলাম।
খুব ভালোবাসে আমায়, খুব বেশি ই ভালোবাসে, তুই দেখেছিস ওর চাহনি কেমন ছিলো , আমাকে দেখে চোখ গুলো চিক চিক করছিলো ।
আর সেই আমি ওকে একবার জড়িয়ে ও ধরি নিহহহ।

রবিন তন্ময়ের কাঁধে হাত রেখে বলল
– তোর কি দোষ , পরিস্থিতি টাই এমন।
তবে চিন্তা করিস নাহহহ নীহু কে খুঁজে পাবো আমরা।

তন্ময় মাথায় হাত গুঁজে রাস্তার কোনে বসে পরলো।
রবিন মাটির দিকে দৃষ্টি রেখে ভাবছে নীলিমা কোথায় যেতে পারে।
মেয়েটা নিজের ক্ষতি করে দিবে না তো ?
এই কথা টুকু মাথায় আসতেই রবিনের বুকের ভেতর ছ্যাত করে উঠলো।
রবিনের মাথা টা ঘুরছে, প্রান প্রিয় বোন টাকে কি করে ফিরে পাবে সে।

রবিন ধপ করে রাস্তায় বসে পরলো।
তন্ময় ছলছল চোখে তাকাতেই রবিন কাঁপা কন্ঠে বলল
– তন্ময়, নীহু নিজের ক্ষতি করে দিবে নাহহ তো ?

এতোক্ষন তন্ময়ের মাথায় এই কথা টা আসেই নিহহ।
সত্যি ই তো নীলিমার মনের অবস্থা তো করুন, আর মানুষ মনের সঙ্গে হেড়ে গেলে যা তা করে বসে।
নীলিমা ও এই ভুল টা করে বসবে নাহহহ তো ?

তন্ময় আর রবিন উঠে আবার খুঁজতে লাগলো।
দুজন কেই পাগল পাগল লাগছে, দুজন ই উন্মাদ হয়ে নীলিমা কে খুজে চলেছে।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে, নীলিমার খোঁজ নেই।

তন্ময় আর রবিন দুজন কেই মনে হচ্ছে রাস্তার ভদ্র পাগল দেখাচ্ছে।
যাদের পোশাক আশাক তো ঠিক আছে , কিন্তু মুখ ,চুল এর অবস্থা পাগল দের মতো দেখাচ্ছে।
রবিন এক বোতল পানি কিনে এনে মাথায় দিয়ে তন্ময়ের দিকে এগিয়ে দিলো।
তন্ময় চোখে মুখে পানির ছিটে দিতেই মনে পরলো সেই লেকের কথা।
তন্ময়ের চোখে মুখে ফুটে উঠলো খুশির ঝলকানি।
রবিন কে ধরে বলল
– একটা জায়গা আছে, সেখানে নীলি যেতে পারে।

রবিন তন্ময়ের হাত ধরে বলল
– কোথায় ?
তন্ময় কোনো কথা না বলে রবিনের হাত ধরে একটা গাড়ি তে উঠে পড়লো।

*

নীলিমা দীর্ঘ তিন ঘন্টা ধরে একি জায়গাতে বসে আছে।
তার ভাবনা জুড়ে শুধু আরিয়ান।
কতো শত রঙিন স্মৃতি , ভাবতেই নীলিমার শরীর দিয়ে শিহরন বয়ে যাচ্ছে।
ভালোবাসার আসক্তি আজ কোন পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।
একটা সময় নীলিমার ইচ্ছে হতো চিৎকার করে বলতে ওহহহ পৃথিবী তোমরা ও আসক্তি তে বিলীন হয়ে যাও।
এ আসক্তি তে, যে সুখ আছে তা কোনো আসক্তি তে পাবে না।
এ যে প্রেমাসক্তি, সব আসক্তি কে হারিয়ে দেয়।
আজ ও নীলিমার ইচ্ছে হচ্ছে চিৎকার করে বলতে তবে বিলীন হতে নয় তার ইচ্ছে হচ্ছে পুরো পৃথিবী কে বলতে কেউ ভালোবাসা নামক মায়াজালে পরো না গো , এ যন্ত্রণা সহ্য করার মতো নাহহহ।
প্রতি নিয়ত মরতে হবে , এ যন্ত্রণা সব যন্ত্রণা কে হার মানিয়ে দিবে।

নীলিমা চোখের কোন থেকে পানি মুছে নিয়ে ভাবলো সে ভুল।
তার আরিয়ান কখনোই তাকে ভুলতে পারে নাহহ।
এ তো তার আরিয়ান নয় , এ যে ইথিনার তন্ময়।
নীলিমা চিৎকার করে বলল
– আমার আরিয়ান নেই , তার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে।
তবে তার নীলি আছে , আর নীলির মাঝে সমসময় আরিয়ান বেঁচে থাকবে ।

নীলিমা লেকের পার থেকে উঠে দাড়াতেই দেখলো তন্ময় আর রবিন দাড়িয়ে আছে।
নীলিমা মলিন হেসে রবিনের দিকে এগিয়ে বলল
– ভাইয়া চলো আমি বাসায় চলে যাবো।
ভালো লাগছে নাহহ আমার।

রবিন নীলিমার মাথায় হাত রেখে বলল
– নীহু তুই তোর আরিয়ান কে ফিরে পেতে চাস নাহহ?

নীলিমা চোখের পানি আড়াল করে জোড়পূর্বক হেসে বলল
– তুমি বোধহয় ভুলে গেছো ভাইয়া, আমি তোমায় বলেছিলাম চার বছর আগে আমার আরিয়ান মারা গেছে ।

তন্ময় চোখ খিচে বন্ধ করে নিল । নীলিমার এই কথাতে জড়িয়ে আছে এক পাল্লা সমান অভিমান।

রবিন কিছু বলল না। তন্ময় মৃদু হেসে পেছন ঘুরে তাকালো নীলিমা কে এক পলক দেখে নিলো।

রবিন তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে বোঝালো সে মেইন রাস্তা তে আছে।
তন্ময় সম্মতি জানালো , রবিন চলে যেতেই নীলিমা পেছন ঘুরে নিলো।
তার কান্না পাচ্ছে, সে জানে এটাই তার আরিয়ান।
ওহহহ কোনো তন্ময় নয়, আরিয়ানের প্রতিটি লোম কোপ নীলিমার চেনা।
সেই নীলিমা কি করে ভুল ভাবতে পারে ?

তন্ময় নীলিমার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
নীলিমা কে মাথা থেকে টা অব্দি দেখে নিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বলল
– আপনি খুব সুন্দর হয়ে গেছেন মিস। আগের থেকে ও বহু গুন রূপবতী ।
তবে চোখে লেপ্টে থাকা কাজল আর মুখে স্নিগ্ধ হাসি টার বড্ড অভাব।

নীলিমা অবাক হয়ে তন্ময়ের দিকে তাকালো।
তন্ময় মৃদু হেসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল
– আম আরিফুল আরিয়ান আপনি?

নীলিমা মুখ চেপে কান্না করতে লাগলো।
নীলিমা কে কাঁদতে দেখে তন্ময়ের কষ্ট হচ্ছে না।
কারন সে জানে নীলিমা অভিমান করে আছে, কিন্তু বেশি ক্ষন এ অভিমান টিকবে নাহহ।
হলো ও তাই , নীলিমা চোখ মুছে নিয়ে বলল
– আমি কোনো আরিয়ান কে চিনি নাহহ।

– ওহহহহ আচ্ছা। আমি তো শুধুই মজা করছিলাম ।
আমি তন্ময় আবরার , উডবি অফ ,,,,,

এই টুকু বলতেই নীলিমা তন্ময় কে থামিয়ে দিয়ে বলল
– নো নিড টু ছে ।

তন্ময় মুচকি হেসে বলল
– আপনি কি জানেন এই তন্ময় আবরার আপনার প্রেমে পরেছে?

নীলিমা কোনো উত্তর দিলো নাহ্।
তন্ময় মাথায় হাত গুঁজে দিয়ে বলল
– এই যে মিস একটু তো শুনুন , তন্ময় আবরারের খুব ইচ্ছে হচ্ছে মিসেস আরিফুল আরিয়ান কে মিসেস তন্ময় আবরার বানানোর।

নীলিমা কোনো ভনিতা ছাড়াই বলল
– তন্ময় আবরার বাগদত্তা, সে বোধহয় ভুলে গেছে।

তন্ময় ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
– কিন্তু তন্ময় আবরার যে বিবাহিত, কোনো এক মেয়েকে বিয়ে করেছিলো সে।
কিন্তু তাকে তার ভালোবাসা কে পূর্নতা দেওয়ার আগেই মেরে ফেলা হয়েছিলো। সে কি করে বাগদত্তা হতে পারে ?
তার কি সাধ্য অন্য একজন কে ভালোবাসার?

নীলিমা চোখ বন্ধ করে কাঁদতে লাগলো।

তন্ময় ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে নীলিমার হাত ধরলো।
নীলিমা হাত ছাড়িয়ে বলল
– একদম টাচ করবেন নাহহ আমায় , গত চার বছরে কতো টা যন্ত্রণা সহ্য করেছি আমি আপনি জানেন সেটা ?
একা একা শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম আমি।
আমার আরিয়ান নেই ভাবতেই ইচ্ছে হতো নিজেকে শেষ করে দিতে।
কিন্তু আমি পারি নি সেই আরিয়ানের জন্য যে আমাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়েছিলো সে থাক বা থাক আমি যেন তার স্মৃতি ধরে থাকি।

তন্ময় ছলছল নয়নে তাকালো , মেয়ে টা আর কতো রকম ভাবে বোঝাবে সে যে প্রেমি।
এই মেয়ে টাকে তন্ময় যে খুব ভালোবাসে। কিন্তু কি আশ্চর্য মেয়েটার চোখের পানির কারন সে।
প্রথম থেকে আজ অব্দি নীলিমা চোখের পানি নিয়ে ই তো বেঁচে আছে।

নীলিমা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পরলো।
আরিয়ান নীলিমার পাশে বসে বলল
– আমায় ক্ষমা করা যায় নাহহহ?

নীলিমা মুখ ঘুরিয়ে নিলো।তন্ময় দীর্ঘশ্বাস টেনে বলল
– আমায় ক্ষমা না করতে পারো।
একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু তো খেতে পারো ?

নীলিমার কথাই নীলিমা কে ফেরত দিলো তন্ময়।
নীলিমা না চাইতে ও ঝাঁপিয়ে পরলো তন্ময়ের বুকে।
এ বুকে আবার মাথা রাখতে পারবে কখনো ভাবেই নি নীলিমা।
ভাগ্য তাদের আবার এক করে দিলো।
নীলিমা কাঁদতে কাঁদতে হিচকি তুলে ফেলল।
নাক টেনে বলল
– কষ্ট দিবে আবার আদর ও করবে এ কেমন নিষ্ঠুর আচরণ।
তন্ময় মৃদু হেসে নীলিমার মাথায় চুমু দিয়ে দিলো।
এখন থেকে আর কষ্ট দিবে না সে , এখন থেকে শুধু আদর ই দিবে।

পরবর্তী পার্ট পেতে পেইজ এ ফলো দিয়ে রাখুন

https://www.facebook.com/Fatema-tuz-ফাতেমা-তুজ-110123584545542/

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here