#প্রেমাসক্তি
#ফাতেমা_তুজ
#part – 30 ( সমাপ্তি পার্ট )
মাম্মা , মাম্মা দেখো না রিনি আমার সাথে ঝগড়া করছে।
না সিনিয়র মাম্মা আমি নিয়ন এর সাথে ঝগড়া করছি নাহহ।
ওও ই আগে আমার চুল ধরে টেনেছে।
আর এখন মিথ্যে কথা বলছে।
_ নিয়ন তুই ওর চুল ধরে টেনেছিস ?
_ মাম্মা আমি তো ,,
_ নিয়ন সব সময় না বলি রিনি তোমার ছোট বোন হয় কেন ওর সাথে এমন করো ?
_ ওহ আমার বোন নাহহ মাম্মা।
শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে এক ভদ্র লোক রুমে ডুকলো।
নিয়নের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কেন নিয়ন ?
ওহহ তো তোমার বোন ই হয়।
নিয়ন রিনি কে ভেঙ্চি মেরে বলল
_ রিনি কে আমার বউ বানাবো।
তারপর ওর চুল ধরে টানবো।
আমার পা টিপাবো , ইচ্ছে মতো জ্বালাবো।
নিয়নের কথা শুনে রিনি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল
– দেখেছো সিনিয়র পাপা ও কেমন আমার সাথে ঝগড়া করে।
আমি ওকে বিয়ে করবো নাহহ ।
নিয়নের কথা শুনে নীলিমা আর আরিয়ান একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো।
দুজনেই সাত বছরের ছেলের কথা শুনে অবাক হয়ে গেছে।
এই টুকু নি ছেলে রিনি কে বিয়ে করবে বলছে।
রিনি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে লাগলো।
নিয়ন বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিলো।
রিনির চুল টেনে বলল
– আচ্ছা তোকে বিয়ে করবো নাহহহ যাহহ।
তোর সামনে অন্য বউ কে নিয়ে ঘুরবো।
কি যেন বলে হ্যাঁ তোর সতীন হবে।
আরিয়ান আর নীলিমা অবাক হয়ে এদের দেখতে লাগলো।
বড্ড পেকে গেছে দুটো তে।
রিনি রাগি চোখে ভেঙ্চি কেটে চলে যেতেই নিয়ন পিছু পিছু দৌড়াতে লাগলো।
দুটিতে লেগেই থাকে , রিনি যখন ই আসে নিয়ন তাকে কাদিয়েই ছাড়ে।
রিনি করিডোর দিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে আসলো।
রবিনের কাছে গিয়ে কাঁদতে লাগলো।
রবিন রিনির গালে চুমু খেয়ে বলল
_কি হয়েছে আমার মাম্মার ?
_পাপা নিয়ন আমার সাথে শুধু শুধু ঝগড়া করে।
নিয়ন অপরাধীর মতো করে তাকিয়ে রইলো।
রায়না নিয়ন কে টেনে নিয়ে বলল
– কি বাবু আমার মেয়েটার সাথে এতো ঝগড়া করিস কেন ?
_ আন্টি আমি কিছুই করি নি , আমি তো বলেছি রিনি কে বিয়ে করে আমার পা টিপাবো।
আর হা হলে অন্য কাউকে বিয়ে করে ওর সতীন বানাবো।
তুমি দেখেছো ও এখন অভিনয় করছে।
রায়না আর রবিন অবাক হয়ে বলল
_ তুই ওকে বিয়ে করবি ?
নিয়ন মাথা ঝাঁকালো, রবিন বলল
– আমি তোর কাছে আমার মেয়ে দিবো নাহ।
_ তুলে নিয়ে যাবো , তারপর বিয়ে করে হামি দিয়ে দিবো।
রিনি নিয়ন কে ভেঙ্চি কাটতে লাগলো।
আর নিয়ন রাগে গজগজ করতে লাগলো।
রায়না গলা ঝেরে বলল
– এই তুই এগুলো কোথা থেকে শিখেছিস রে ?
_ সিনেমা তে দেখেছি , হিরো ভিলেন কে মেরে হিরোইন কে তুলে নিয়ে বিয়ে করে তারপর হামি দিয়ে দেয়।
রবিন আর রায়না একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো।
এদের দুজনের ভবিষ্যত যে কি হবে তা বোঝাই যাচ্ছে।
দরজা দিয়ে রিদিতা কে আসতে দেখেই রিনি আর নিয়ন ছুটে গেল।
নিয়ন রিদিতা কে বলল
– রিদি দেখ রিনি আমার সাথে ঝগড়া করছে।
রিদিতা নাক কুঁচকে বলল
– তোকে না বলেছি আমাকে আপু বলতে।
– তুই আমার ছয় মাসের বড় , আপু কেন বলবো ?
– বড় তো বড়ই হয়।
– পারবো না বলতে ।
– তোর বলতে হবে নাহহহ যাহহহ। রিনি নিয়ন তোকে বকেছে নাহহহ ?
রিনি কাঁদো কাঁদো মুখ করে মাথা ঝাকালো।
রিদিতা নিয়ন কে ভেঙ্চি কেটে রিনি কে নিয়ে চলে আসলো।
রিনি মেকি হাসি দিয়ে নিয়ন কে ভেঙ্গাতে লাগলো।
নিয়ন বাঁকা হাসলো হাত দিয়ে ইশারা করলো পরে দেখে নিবে।
রিনি ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেল।
আরিয়ান আর নীলিমা নিচে আসছিলো । রিদিতা কে দেখে নীলিমা বলল
– রিদি মামুনি মাম্মা আর পাপা আসে নি ?
রিদিতা মৃদু হেসে বলল
– পাপা আমাকে নামিয়ে দিয়ে বলল পাঁচ মিনিট পর মাম্মা কে নিয়ে ভেতরে আসছে।
নীলিমা আর আরিয়ান মৃদু হাসলো । ইথিনা আর রিয়াদ এখনো আগের মতোই লেগে থাকে ।
রিয়াদ তো যখন তখন রোম্যান্স করে বসে।
*
নীলিমা মাত্র ই শাওয়ার নিয়ে এসেছে।
ভেজা চুল গুলো পিঠ ছাড়িয়ে কোমরে গিয়ে ভিজিয়ে যাচ্ছে।
আয়নাতে নিজেকে দেখতে দেখতে চুল মুচছিলো নীলিমা।
দুদিন বাদে বিডি তে যাবে সবাই ।
তাই আজকে শপিং এ বেরিয়ে ছিলো।
প্রতি বছরের শুরু তেই সবাই এক মাসের জন্য বিডি তে ভিজিট করে।
এবার কাজের চাপ থাকায় অক্টোবর হয়ে গেছে।
প্রায় দুবছরের কাছাকাছি বিডি তে যাওয়া হচ্ছে নাহ।
তাই সবাই দু মাসের জন্য বিডি তে টুর নিবে।
আরিয়ান বাইরে থেকে এসে শাওয়ার নেওয়ার জন্য বাথরুমে ঢুকছিলো।
নীলিমার ভেজা চুল গুলো দেখে থমকে গেল।
কি মায়াবি ই না লাগছে মেয়েটাকে।
আরিয়ানের চোখে ঘোর লেগে গেল।
নীলিমা চুলে ট্রাওয়াল পেঁচিয়ে পেছন ঘোরারা আগেই আরিয়ানের বাহু ডোরে আবদ্ধ হয়ে গেল।
নীলিমা উসখুস করতে করতে বলল
– আরিয়ান ছাড়ো কেউ এসে পরবে তো।
আরিয়ান নীলিমার কাঁধে থুতনি রেখে নেশাতুর কন্ঠে বলল
– উহু কেউ আসবে নাহহহ।
– নিয়ন এখনি এসে পরবে , ছাড়ো তুমি।
– উহু আসবে নাহহহহ ।
ও আজ আম্মু আব্বুর কাছেই থাকবে।
– তোমায় কে বলল ?
– আরে নিয়ন ই বলেছে, ও ওর দাদুর কাছে থাকবে।
– কিন্তু,,
– কোনো কিন্তু না ,,, আজ আমি তোমায় এত্তো গুলো ভালোবাসা দিবো।
– ছিহহ , কথার কি ছিড়ি তোমার।
– লজ্জা করে না , নিজের স্বামী ভালোবাসা দিতে চায় আর তুমি উপেক্ষা করো ?
– এই তুমি ছাড়ো তো , বাইরে থেকে এসেছো শাওয়ার নিয়ে আসো।
যাওওও
আরিয়ান ছেড়ে দিলো , ট্রাওয়াল হাতে বাথরুমে গিয়ে আবার চলে আসলো।
নীলিমা চোখ দিয়ে ইশারা করতেই আরিয়ান নীলিমার গালে চুমু খেয়ে নিলো।
নীলিমা চোখ গরম করে তাকালো , আরিয়ান মেকি হাসি দিয়ে ভো দৌড় মেরে দিলো।
নীলিমা হাসতে হাসতে বেডে বসে পরলো।
কে বলবে এই ছেলেটা 37 বছরের শক্ত পোক্ত পুরুষ মানুষ।
নীলিমা হাসতে লাগলো ,,
সেদিন যখন নীলিমার গুলি লেগেছিলো আরিয়ান পাগলের মতো করছিলো।
নীলিমার মুখে হাত দিয়ে বার বার বলছিলো তোমার কিচ্ছু হবে না নীলি।
তুমি আমাকে প্রমিস করেছিলে আমাকে একা ফেলে কোথাও যাবে নাহ।
তুমি তোমার প্রমিস ব্রেক করতে পারো নাহহহ।
নীলিমা তখন কথা বলতে পারছিলো নাহহহ।
বার বার চোখ বুজে আসছিলো।
নীলিমা কে দ্রুত হসপিটালে নেওয়া হয় ।
নীলিমার অপারেশন সাকসেসফুল হলে ও দুদিন কোনো জ্ঞান ছিলো নাহহ।
আরিয়ান নীলিমার হাত ধরেই বসে ছিলো।
সে যেন তার জীবনীশক্তি ই হারিয়ে ফেলেছিলো।
দুদিন বাদে যখন জ্ঞান ফিরে নীলিমা কে জড়িয়ে আরিয়ান বাচ্চা দের মতো কেদেছিলো।
তখন নীলিমার চোখ থেকে শুধুই অশ্রু ঝরেছিলো।
নীলিমা যেহেতু কনসিভ করেছিলো তাই তিন মাস নীলিমা কে হসপিটালে এডমিট থাকার জন্য বলা হয়।
কিন্তু সপ্তাহ গেলেই আরিয়ান নীলিমা কে নিয়ে আসে।
হসপিটালে বেশি দিন থাকলে একজন সুস্থ ব্যক্তি ও অসুস্থ হয়ে পরে।
বিডি তে এক মাস প্রপার ট্রিটমেন্ট করে নিয়ে আসে ইউ এস এ তে।
আর তারপর ই সাত মাস পেরিয়ে নীলিমার কোল জুড়ে আসে ছোট্ট নিয়ন।
আজ যার বয়স সাত বছর।
আরিয়ানের ডাকে নীলিমার ঘোর কাটলো।
আরিয়ান চুল মুছতে মুছতে বলল
– কি ভাবছো নীলি ?
নীলিমা চোখের কোন থেকে পানি মুছে বলল
– সেই কালো দিন টার কথাই।
আরিয়ান মৃদু হেসে নীলিমা কে জড়িয়ে নিলো।
নীলিমা আরিয়ানের বুকে মাথা রাখতে ই আরিয়ান বলল
– সেই সব দিন গুলো কালো ছায়া ছিলো ।
এখন আর কোনো বাধা নেই।
কোনো আধার ও নেই , সব আলো তে ভরপুর।
নীলিমা মৃদু হাসলো , আরিয়ান নীলিমা কে উঠিয়ে কপালে ভালোবাসার পরস একে দিয়ে বলল
– তোমার বাবা তো বহু দিন আগেই নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন।
তাই তো ইউ এস এ তে চলে আসার পর যখন ওনাকে খবর দিয়েছিলাম।
ওনি বিনাবাক্যে আমাদের মেনে নেন।
কিন্তু সাহেল আর হানিফ চৌধুরী যখন সহমত দেন আমি মেনে নিতে পারছিলাম নাহহ।
আর রবিন কে সব কিছু বলতেই রবিন বলে এদের কে ভরসা করা যাবে নাহহ।
তারপর ই আমরা প্ল্যান করি, রবিন ধীরে ধীরে ওদের বিশ্বাস অর্জন করে।
আর আমি ওদের বিরুদ্ধে প্রমান জোগাড় করতে থাকি।
কিন্তু আমাদের কাছে যে প্রমান ছিলো তাতে কোনো না কোনো ভাবে ওরা সেই প্রমান কে নকল প্রমান করে দিতো।
তাই ভেবেছিলাম সব ওদের মুখ থেকেই স্বীকার করাবো।
সব ঠিক ই ছিলো কিন্তু মাঝে ওরা কিভাবে যে তোমাকে টেনে আনলো।
যা আমি বা রবিন কেউ ই জানতে পারি নি।
যখন আমাদের ভারাটে লোক খবর দেয় তখনি প্রেস আর পুলিশ দিয়ে ঘেরাও করে নেই।
কিন্তু তখন তোমাদের জীবন হুমকিতে ছিলো।
তাই রবিন আর আমি মিলে ঐ প্ল্যান টা সাজাই।
রবিন আমাকে মারতে থাকে আর আমি ওদের উত্তেজিত করে ওদের মুখ থেকেই সব স্বীকার করাই যা প্রেস আর পুলিশ রেকর্ড করে নেয়।
কিন্তু শেষ টা ,
আরিয়ান থমকে গেল, নীলিমা আরিয়ানের বুকে মাথা রেখে বলল
– আমি জানি তো তুমি আমাকে নিয়ে রিক্স নিতে চাও নি।
ওটা আমার ভাগ্যে ছিলো।
আর সব শেষে তো আমি বেঁচে আছি তাই নাহ।
আর আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন ও একদম সুস্থ আছে।
আরিয়ান মৃদু হেসে নীলিমা কে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।
নীলিমা ও পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।
কিছুক্ষণ পর আরিয়ান বলল
– এই নীলি , আমরা যদি আরেকটা ভালোবাসার চিহ্ন ভূমিষ্ঠ করি। ভালো হবে তাই না ?
প্লিজ নীলি ,
নীলিমা কিছু বলল না, আরিয়ান সম্মতি পেয়ে নীলিমার ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।
আরিয়ান নীলিমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
– এবার আমাদের রাজকন্যা আসার পালা।
নীলিমা লজ্জা পেয়ে আরিয়ানের বুকে মুখ লুকালো।
দুজন তাদের রাজকন্যা কে ভূমিষ্ঠ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলো।
এভাবেই শত বাঁধা বিপত্তি পেরেয়ি পূর্নতা পাক পৃথিবীর সমস্ত পবিত্র ভালোবাসা।
মনে রাখবেন যার বুকের বা পাঁজর থেকে আপনার সৃষ্টি সে আপনার হবেই।
নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা আমাদের জন্য উত্তম ভেবে রেখেছেন।
সবাই সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করুন আর ভালোবাসা কে পবিত্র ভাবে গ্রহন করুন।
সমাপ্ত।
স্বপ্নের প্রেয়সী সিজন 2 এর পোস্ট এ 196 টা রিয়েক্ট এসেছে। তাই আমার নেক্সট গল্প হবে
” স্মৃতির পাতাতে ”
আর যদি ঐ পোস্ট এ 200 রিয়েক্ট আসে তাহলে স্মৃতির পাতাতে শেষ করে স্বপ্নের প্রেয়সী সিজন 2 দিবো ।
আমার পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সবাই বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত করুন আর নিজের যত্ন নিন।
ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন।
আর সবাই জন্য এত্তো এত্তো ভালোবাসা রইলো আমার পেজ এ 2000+ ফলোয়ার দেওয়ার জন্য ।