#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্ব_৯৩
.
🍂
রিদের তীক্ষ্ণ মাইন্ডের কথা গুলো শুনে মূহুর্তে আসিফ চমকে উঠে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে রিদের দিকে,, রিদ যে কতটা মাস্টার মাইন্ডে তা আসিফ হারে হারে বুঝতে পারে,, কিছু করার আগেই রিদের চোখে সবকিছু ধরা পরে যায়,, রিদ আট দশটা স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে একটু ভিন্ন তা এতদিনে আসিফ তা বুঝে গেছে……….
.
রিদ স্বাভাবিক বগিতে কথা গুলো শেষ করে নিজের মতো করে আবারও মায়ার দিকে তাকায় মায়া তারই চাচাতো বোনের সাথে ঝগড়া করছে আরিফে জুতা নিয়ে,, মায়া কৌশলে চাচাতো বোনদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আরিফের জুতা জোড়া চুরি করলেও এই গুলো কোথায় লুকাবে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সেটা নিয়ে বড্ড উন্মাদ হয়ে আছে মায়া । নিজের এমন চিন্তা ভাবনায় মাঝেই চারপাশে ভাবুক দার্শনিকের মতো দৃষ্টি ফেলে চিন্তা করতে থাকে একহাতে জুতা জোড়া নিয়ে অন্য হাতে নক কামড়াতে থাকে । মায়া এমন চিন্তা ভাবনায় মাঝেই হঠাৎ চোখ যায় রিদের দিকে, মায়া রিদকে ভ্রুঁ কুচকে তাকিয়ে থেকে আস্তে করে নিজের হাতে জুতা জোড়া দিকে তাকায়, এক পলক জুতা জোড়া গুলোকে দেখে নিয়ে আবারও নিজের ভ্রুঁ উঁচু করে বাঁকা চোখে রিদের দিকে তাকায়, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর হঠাৎ করেই মায়া ঠোঁট প্রসারিত করে হেঁসে উঠে, নিজের এতো এতো চিন্তা ভাবনা শেষ করতে পেরেছে বলে আর কোনো দিক না তাকিয়ে সোজা রিদ বরাবর দৌড় লাগায় ।
.
মায়ার রিদের সামনে হাসি মুখে দাড়াতেই রিদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় মায়া দিকে, মায়ার একহাতে জুতা জোড়া দেখে কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে রিদ, কারণ রিদ শুরু থেকেই মায়াকে লক্ষ করছে মায়া বড্ড টেনশনে আছে আরিফের জুতা নিয়ে, নিজের বোনদের সামনে হারতে চাই না বলে সেই কখন থেকে জুতা চুরি করে এই গুলো নিয়ে টেনশনে ভুগছে, রিদ এতোকিছু দেখেও মায়াকে কিছু বলেনি কারণ এটা একটা বাঙালি প্রর্থা তাই সেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু এখন মায়াকে নিজের সামনে জুতা নিয়ে হাজির হতে দেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় রিদ, মায়া কি করতে চাইছে সেটা দেখার জন্য মূলত রিদের চুপ থাকার মূল কারণ ।
মায়া রিদের দিকে ঠোঁট প্রসারিত করে হেঁসে উঠে ঠাস করে রিদ পায়ের কাছে বসে পরে এতো মানুষের সামনেই, রিদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই মায়া রিদকে কিছু বলতে না দিয়ে সাথে সাথে রিদের পায়ের থেকে রিদের জুতা খুলে নিয়ে নিজের চুরি করা আরিফের জুতা জোড়া পরিয়ে দেয় রিদের পায়ে,,
.
মায়ার এমন কাজে আসিফ হা হয়ে তাকিয়ে থাকে মায়ার দিকে,, রিদ কখনো নিজের ব্যান্ড ছাড়া অন্য কারও টিস্যুও স্পর্শ করে না সেখানে অন্য জন্যের ব্যবহারকৃত জুতা রিদকে কি সুন্দর পরিয়ে দিলো,, আর সেটা নিয়ে রিদও কোনো রকম রিয়েক্ট না করে বউয়ের কাজে সুমিত জানাচ্ছে । আসিফের এমন সব চিন্তা ভাবনা মাঝেই মায়া রিদের জুতা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে রিদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে………
.
—” আপনি কিন্তু একদমই আমার চুরি করা জুতা জোড়া নড়চড় করবেন না কেমন, এই গুলো আরিফ ভাইয়ের জোতা আমি চুরি করে এনেছি 😁, আমাকে ভাই পাঁচ হাজার টাকা দিলে এই জোতা গুলো পাবে নয়তো খালি পায়েই থাকবে । আমার বোনদের কেও দিবেন না কেমন….
.
মায়ার এমন কাজে রিদ খানিকটা ইতস্তত বোধ করে নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে থেকে আবারও মায়ার দিকে তাকায়, মায়ার মুখে হাসি দেখে রিদ কিছু না বলে মূহুর্তেই চুপ হয়ে যায় । রিদ ব্যান্ড ছাড়া কখনো অন্য কিছু কখনোই পড়ে না, আর একি জুতা দ্বিতীয় বার পড়া তো দূর চোখের সামনেও থাকে না, রিদের পার্সোনাল সের্কেটারি সরিয়ে রাখে রিদের পছন্দ না বলে । কিন্তু আজকে মায়ার ঠোঁটের ওপর হাসিটা বজায় রাখার জন্য রিদ চুপ থাকে । রিদ চুপ থাকলেও মায়ার বোকা বোকা কথা এই মূহুর্তে আসিফ চুপ থাকতে পারছে না, তাই আসিফ কৌতুহল নিয়ে মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে…………
.
—” পাঁচ হাজার টাকা জন্য এতো কষ্ট করছেন ভাবি, আপনি চাইলে পাঁচ হাজার কেন পাঁচ কোটিও পাবেন এই মূহুর্তে, ভাই দিবে আপনাকে এখন আর আপনি সামনে এই কইটা টাকার জন্য ভাইকে(রিদ) সামিল করছে জুতা চুরিতে । আপনার হাতে যে ভাইয়ের (রিদ) জুতা গুলো আছে সেটার দামও এই জোতা গুলোর থেকে ত্রিশ গুণ বেশি হবে আর আপনি…….
.
আসিফের বাকি কথা গুলো শেষ করার আগেই মায়া আসিফকে রিদের জুতা গুলো দিতে দিতে বলে উঠে…….
.
—” তাহলে আপনিই আপনার ভাইয়ের জোতা গুলো রেখে দিন এই গুলো দিয়ে আমি কি করবো,, আমার পাঁচ কোটি টাকা লাগবে না, আমার পাঁচ হাজার টাকাই লাগবে তাও এই জুতা জোড়া থেকেই বুঝতে পারছেন আপনি……..
.
রিদ মায়াও আসিফের কপোথাকন শুনে হালকা মুচকি হাসে, কারণ আসিফ মায়াকে খানিকটা টাকার ভাষা বুঝাতে চাইছে যাহ কোনো কালেই মায়ার বুঝে উঠতে পারবে না । মায়া টাকার ভাষা বুঝে না মায়া ভালোবাসার ভাষা বুঝে, তাই এতো শত বুঝিয়েও বরাবরই শূন্যতে ফলাফল থাকবে, রিদ আসিফকে কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে আর আসিফ রিদের জোতা জোড়া গুলো হাতে নিয়ে মায়ার কথা পাল্টা উত্তরে বলে উঠে……..
.
—” তাহলে আপনি আরও বেশি চান ভাবি, পাঁচ লাখ চান আপনার ভাইয়ের (আরিফ) থেকে এই জোতা জোড়ার জন্য তাহলেই তো হয়…….
.
মায়ার আসিফের আজগবি কথা শুনে মূহুর্তেই রেগে যায়, কখন থেকে উল্টা পাল্টা কথা বলছে সামান্য জুতা জোড়ার জন্য। সামান্য এক জোর জোতার জন্য কেউ কি আর কখনো পাঁচ লাখ চাইবে নাকি । মায়ার এই মূহুর্তে আসিফকে বড্ড পাগল টাইপ কিছু মনে হচ্ছে, আর এই মনে হওয়া ভাবটা বজায় রেখে কমড়ে দুহাত দিয়ে আসিফকে কপাট রাগ দেখিয়ে উচ্চ স্বরে বলে উঠে…….
.
—” এই আপনার মাথা ঠিক আছে কখন থেকে আজেবাজে কথা বলেই চলছেন, তিন হাজার টাকা জুতা জন্য কি আমি এখন পাঁচ লাখ টাকা চাইবো নাকি, আর এতো টাকা দিয়ে আরিফ ভাই তো হাজারটা জুতা জোড়া কিনতে পারবে,, আর আপনার এই বুদ্ধির জন্য আমার পাঁচ হাজার টাকাও হারাতে হবে……
.
মায়াকে টাকার প্রতি কোনো রকম আকৃষ্ট হতে না দেখে আবাক হয় আসিফ, পরে মায়ার দিকে আবাক করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে……
.
—” ভাবি আপনি একবার চেয়েই দেখুন হয়তো টাকা ঘর আপনার সামনে হাজির হয়ে যেতে পারে…….
.
আসিফের কথায় মায়া রিদের দিকে রেগে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে……..
.
—” আচ্ছা এই লোকটা এমন কেন সেই কখন থেকে টাকা টাকা করেই চলছে আজব পাবলিক, আমি এতো টাকা দিয়ে আমি কি করবো বলুন তো, আর এই লোকটা পাগল পাবলিক নাকি…..
.
কথা গুলো শেষ করেই মায়া আসিফের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হনহনিয়ে হেঁটে আগে অবস্থানের চলে যায়, রিদ মায়া যাওয়ার দিকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেও আসিফ হা হয়ে তাকিয়ে থাকে সেই দিকে, আসিফ এতো দিনে বুঝতে পারছে রিদ কেন মায়ার জন্য এতোটা পাগল পারা হয়ে থাকে সবসময় । রিদের এতো শত হাজার হাজার কোটি টাকা থাকা শর্তেও মায়ার তাতে বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই, সে নিজের মতো করে আছে, সাথে মায়ার চেহেরায় যেন আলাদা একটা কিউটনেস ভাসে সবাইকে পাগল করার মতো, আর এজন্য রিদ মায়াকে এতটা চাই যাহ আজ কথা বলে আসিফ বুঝতে পারে, হয়তো রিদও তাই চাইছিল যে আসিফ বুঝতে পারুক মায়াকে কেন রিদের এতোটা পছন্দ তাই তো আসিফ এতটা সময় মায়ার সাথে কথা বলছে অথচ রিদ একটুও রিয়েক্ট করেনি এটা নিয়ে । আসিফ কথা গুলো ভেবেই রিদের দিকে তাকায় পরে প্রশ্ন সিক্ত কন্ঠে বলে উঠে………
.
—” ভাই আপনি ভাবির সততায় আর সচ্চরিত্রে, জন্যেই হয়তো ভালোবাসতে বাধ্য হয়েছেন ভাবিকে তাই না….
.
আসিফের এমন কথায় রিদ মায়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে……
.
—” আমি আমার বউয়ের সবকিছুতেই আকৃষ্ট, হাঁসি, কান্নায়, পাগলামো, বোকামি কথাই, আচারণে, সবকিছুতেই…….
.
রিদের এমন কথা মানে আসিফ বুঝতে পেরে মূহুর্তেই চুপ হয়ে যায় আসিফ ভালোবাসা যে মানুষকে কতটা বদলাতে পারে সেটা রিদকে দেখে বুঝতে পারে আসিফ,, আসিফ আর কিছুই না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে রিদ পাশে,, আসিফ চুপ হয়ে গেলেও চুপ থাকতে পারছে না মায়ার চাচাতো বোনেরা, ওরা সবাই পর পর দিকে দেখে অনেকটা পাগল পারা হয়ে যায় রিদের জন্য, মায়ার বিয়ে হয়েছে সেটা জানে কিন্তু কার সাথে হয়েছে সেটা জানে না তাই মায়াকে রিদের সাথে কথা বলতে দেখে ওরা সবাইকে জ্বালিয়ে মারছে রিদের সাথে একটু কথা বলিয়ে দেওয়ার জন্য,, কিন্তু মায়ার চাচাতো বোনদের এমন সব পাগলামো মোটেও পছন্দ না বলে বার বার এড়িয়ে চলছে তাদের,, মায়ার চাচাতো বোনরা মায়া কাছে কোনো রকম পাত্তা না পেরে সবাই দলের বেধে চলে যায় রিদের সামনে,, রিদের সামনে ঘুর ঘুর করতে করতে রিদকে দেখতে থাকে আসিফ মেয়েদের এমন দৃষ্টি লক্ষ করলেও রিদের সেদিকে কোনো রকম খেয়াল নেই সে নিজের মতো করে ফোন টিপছে,, রিদের এমন ফোন চালানোর মধ্যে দিয়েই মেয়ে গুলো সব হাজির হয় রিদের সামনে কথা বলার জন্য, কাছ থেকে রিদের কিলার স্টাইল দেখে সবাই হা হয়ে তাকিয়ে থাকে রিদের দিকে কিন্তু রিদ একবারও চোখ তুলে তাকানোর প্রয়োজন বোধ মনে করছে না বলে ফোনের স্ক্রিনে দিকেই তাকিয়ে আছে । মেয়ে গুলো রিদের দিকে এমন হা করে তাকানোতে মায়া দূর থেকে লক্ষ করে। মায়ার তার বোনেদের এমন নেকামো ভাবটা মোটেও ভালো লাগছে না সেই কখন থেকে তার স্বামীর দিকে কুনজরে তাকিয়ে আছে আর সেটা সে বউ হয়ে মেনে নিবে না কোথায় কালেই । তাই মায়া রেগে হনহন করে হেঁটে আসতে থাকে রিদ ও আসিফের দিকে, আসিফ মেয়ে গুলোকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে বলে উঠে……
.
—” আপনাদের কি কিছু চাই,, চাইলে বলুন আমি এনে দিচ্ছি….
.
আসিফের এমন কথায় মেয়ে গুলো তেমন কোনো হেলদোল হলো না, উল্টো রিদকে দেখতে দেখতে তাদের মধ্যে থেকে একজন রিদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে…..
.
—” আচ্ছা আপনি এই বাড়ির সম্পর্কে কি হন, না মানে আমরা সবাই এই খান বাড়ির শালিকা হয় আরকি, এই বাড়ি বউ মায়া আমাদের বোন হয়………
.
মেয়েদের কথা শেষ করার সাথে সাথে রিদ ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে….
.
—” আর আমি তোমাদের জিজু হয় শালিকারা,,
.
রিদের এমন আগুন লাগানো কথায় মূহুর্তে যেন সবাই আসমান থেকে পড়ে, মায়ার বর এতোটা সুন্দর হতে পারে সেটা তাদের চিন্তা ভাবনায় বাহিরের ছিল, তাই রিদের কথায় তেমন এক বিশ্বাস করতে না পেরে সন্দেহ দৃষ্টিতে রিদের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে…….
.
—” মানে……
.
মেয়েদের এমন কথায় পিছন থেকে মায়া রেগে কটমট করতে করতে বলে উঠে……
.
—” মানে আমার বর তোদের দুলাভাই,,,
.
মায়ার এমন কথায় সবাই চমকে উঠে পিছন ফিরে তাকায় মায়ার রিদকে রিদও মায়ার দিকে তাকায় বাঁকা হেঁসে উঠে,, মায়া দ্রততা সঙ্গে মেয়েদের সামনে এনে দাড়িয়ে থেকে বলে উঠে…….
.
—” শুনেছিস সবকিছু হয়েছিস শান্তি, এবার যাহ তো সামনে থেকে ভালো লাগছে না…..
.
মায়ার এমন রাগী কথায় আর কেউ এক মূহুর্তেও না দাঁড়িয়ে সবাই যার যার মতো করে চলে যায় সেখান থেকে, সবাইকে চলে যেতে দেখে মায়া রাগী দৃষ্টিতে আসিফের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠে…..
—” এই আপনার মেয়ের সাথে এতো কথা বলার ইচ্ছা থাকলে অন্য কোথাও গিয়ে কথা বলুন না, আমার স্বামীকে কেন নষ্ট করছো আপনি…..
.
.
.
চলবে…………