সুখের_ঠিকানা #শারমিন_হোসেন #পর্ব৩২

0
260

#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব৩২

“বউকে নিজের বাড়ি নিয়ে একেবারে দরজা,জানালা লক করে তারপর রোমান্স করবো।এর আগে কখনো না।তওবা তওবা। সব সময় আমার রোমান্টিক মুডের বারোটা বাজিয়ে অস্বস্তিতে ফেলতে উস্তাদ পাবলিক।এখন থেকে বউয়ের থেকে সব সময় দুই ফিট দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে।সব সময় সবাই রং টাইমে এন্ট্রি নেয়।”

জারিফ বিড়বিড় করে কথাগুলো বলল।লিয়া স্পষ্ট না শুনলেও অস্পষ্ট করে কিছুকিছু কথা কর্ণগোচর হয়। লিয়া কটমট চোখে জারিফের দিকে চাইলো।লিয়ার চোখের ভাষা জারিফ খুব সহজেই পড়তে পারলো।লিয়ার চোখের ভাষা বলছে,এহেন লজ্জাকর পরিস্থিতির জন্য স্বয়ং জারিফ দায়ী।জারিফ লিয়ার এভাবে তাকানো দেখে শুকনো ঢোক গিলে নেয়।জারিফ হালকা কেশে ইভাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।লিয়া লজ্জায় আড়ষ্টতায় মূর্ছা যাওয়ার ন্যায় হয়েছে।পা যেনো অবশ হয়ে আসছে।ইভা চোখের উপর রাখা নিজের হাতের আঙ্গুল একটু ফাঁকা করে চোখ পিটপিট করে চাইলো।জারিফের প্রস্থান করা বুঝতে পেরে তড়িৎ চোখ থেকে হাতটা সরিয়ে নেয়।লিয়ার দিকে ব্যাকা চোখে চাইলো।ইভার কিশোরী মনটা এইতো মিনিট তিনেক আগেই ভেঙ্গে খন্ডখন্ড হয়ে গিয়েছে। জারিফকে প্রথম দেখেছিলো আলিফের বাসায়।বিয়ের একদিন আগে।আলিফ বিয়ের প্রোগ্রামের ব্যাপারে জারিফের সাথে বিভিন্ন আলাপ আলোচনা করছিলো। কোন ডেকোরেটর নাম করা আরো এটাসেটা বিষয় নিয়ে। জারিফ যেহেতু এই শহরের স্থানীয়।আর এই শহরে কাছের মানুষ হিসেবে আলিফ জারিফকেই বেছে নেয় প্রোগ্রামের ব্যাপারে ভালোমন্দ আলোচনার জন্য। যেহেতু আগে থেকেই পরিচিত।জারিফ দেখতে হ্যান্ডসাম।একজন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ।যে কোনো মেয়ে দেখলেই ক্রাশ খাবে বা ভালো লাগবে আকর্ষিত হবে।এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।আর কিশোরী বয়সটাই আবেগের।এই বয়সে কাউকে ভালো লাগলে অবুঝ মন তাকে নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ডুবতে থাকে।ঠিক তেমনি ইভার কিশোরী মনটাও জারিফকে নিয়ে অনেক কিছুই ভাবতে শুরু করেছিলো।জারিফকে দেখলেই মনটা পুলকিত হচ্ছিলো।এমন সময় লিয়া আর জারিফের এতটা ক্লোজ দৃশ্য দেখে মনটা ব্যাথিত হয়ে উঠলো। মনেমনে লিয়ার প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি হতে থাকে।কেমন মেয়ে মানুষ সুদর্শন ছেলে দেখছে আর অমনি পটিয়ে ফেলেছে।সোজা কিস আদান প্রদান শুরু করছে।আর জারিফই বা কেমন চরিত্রের?ইভার মনে এখন এই কয়েকটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কিশোরী মনটা আবার আনমনেই জারিফের দিকে সাফাই গাইলো।ছেলে মানুষ। সুন্দরী মেয়ে দেখেছে তাই হয়তো কন্ট্রোল করতে পারেনি।মেয়েটার তো একটু লাজ লজ্জা থাকা দরকার।যেই সুদর্শন ছেলে দেখেছে আর অমনি জাদুটোনা করেছে।এসব কথা ভাবতেই ইভার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।ইভা মোটাচোখে লিয়ার দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“ইউ নো হাউ টু ল্যুর আ বয়”

লিয়া এবার মাথাটা কিঞ্চিৎ তুলল।ইভার দিকে অবাক চোখে চেয়ে শক্ত কণ্ঠে বলল,”হোয়াট?হোয়াট ডু ইউ মিন?”

ইভা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।ইভার এরকম হাসির কারন ঠিক না বুঝলেও,লিয়ার কাছে হাসিটা ভালো লাগলো না।লিয়ার এবার রা’গ হলো।লিয়া ঠোঁট মেলে বলল,”শোনো।না জেনে কারো সম্পর্কে ভুলভাল কিছু বলতে আসবে না।তুমি না জেনেই হয়তো ভুলভাল ভাব

লিয়ার কথায় ব্যাঘাত ঘটে তুলির ডাকে।তুলির কথায় লিয়া থেমে সামনে তাকায়।তুলি একহাত উঁচু করে কর্কশ গলায় বলল,”লিয়া এই লিয়া।কখন আসছিস এখানে।আমি তো ভেবেছি ঘুমিয়ে টুমিয়ে পড়লি নাকি।”

তুলির কথায় লিয়া অপ্রস্তুত হলো।কিছুক্ষণ আগের কথাগুলো ফের লিয়ার মনস্তাত্ত্বিকে ভেসে উঠলো।তুলি কিঞ্চিৎ সময় পর ফের ঠোঁট চেপে বলল,”ওদিকে আরেকটু বাদেই বিদায়।সে খেয়াল আছে তোর।কখন টাকাটা তুলবো,হ্যা। তাড়াতাড়ি আয়।”

লিয়া কপাল কুঁচকে বলল,”একটু ওয়েট কর।আমি ওর সাথে কিছু কথা বলেই আসছি।”

ইভাকে দেখিয়ে লিয়া বলল।তুলি নাছোড়বান্দার মতো লিয়ার কোনো কথা শুনলো না। লিয়ার একহাত ধরে টেনে নিয়ে আসলো।ইভা মুখ ভেংচি কে’টে ফিরে আসতে থাকে।ধ্যাত এখন আর জুতা কেনো হিরে খোঁজারও কোনো মুড নেই ইভার। হিরোর মতো দেখতে ছেলেটা অন্য কাউকে কিস করছে।এটা ইভার অবুঝ মন মেনে নিতে পারছে না।মন , চোখ সবই যেনো আজ ইভার সাথে বেইমানি করছে। ইশশ্!না চাইতেও বারংবার ঐ রোমান্টিক সীনটা ভাসছে দুচোখেতে।সাথে সাথেই মনটাও ব্যাথিত হচ্ছে।

আলিফের পাশে এসে তুলি সহ আরো কয়েকটা মেয়ে কাজিন দাঁড়িয়েছে।তাদের এক দফা এক দাবি।জুতা ফেরত পেতে হলে নগদ দশ হাজার টাকা দিতে হবে। এখানে নয় হাজার নিরানব্বই টাকা দিলেও চলবে না।পুরো দশ হাজারই দিতে হবে।আলিফ বিষয়টা নিয়ে মজা করতে চাইলো।চোখে মুখে একটু অসহায়ত্বের ছাপ টেনে আনলো। তাসনিমের দিকে সরু চোখে চেয়ে বলল,

“আমার জুতার দাম মাত্র তিন হাজার টাকা। সেখানে জুতা ফেরত পেতে হলে আমাকে নাকি দশ হাজার টাকা দিতে হবে।এইটা কোনো কথা হলো।তোমার বোনদের দাবিটা একটু বেশিই হয়ে গেলো না।আমি তো এই ডাবল টাকা দিয়ে আরো দুইজোড়া জুতা কিনতে পারবো অনায়াসেই।তাই তুমিই বলো তিন হাজারের বদলে সাত হাজার টাকা ডোনেশন দেওয়া ঠিক হবে কি?”

আলিফের কথায় তাসনিম বাদে বাকি সবাই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। তাসনিম রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আলিফের দিকে।আলিফ ফাঁকা ঢোক গিলে নেয়। তাসনিম সামনে দাঁড়ানো বোনেদের দিকে একপলক তাকিয়ে ফের আলিফের দিকে তাকায়।আলিফের দিকে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলল,”এই আপনি তো খুব কিপটে দেখছি।আমার বোনেরা মাত্র দশ হাজার টাকা দাবি করেছে।এটা খুব বেশি নয়,হু।আর আপনি কিনা কয়জোড়া হয় লাভ -লস হিসাব করছেন।হায়! আল্লাহ!এরকম হাড় কিপটের সাথে সংসার করবো কিকরে?”

আলিফের মুখটা থমথমে হয়ে যায়। ‌যাহ! মশকরা করে কথাগুলো বলল।আর বউ কিনা উল্টো বুঝল। এইটা কোনো কথা হলো?একদম ডিরেক্ট হাড় কিপটে উপাধি দিয়ে ফেলল।যাক তাও ফিসফিসিয়ে বলেছে। সামনে দাঁড়ানো জঞ্জাল পার্টি। উফ্ সরি শালিকা পার্টিরা শুনতে পায়নি।না হলে এতক্ষণ মজা নিতে ভুলতো না।আলিফ মনেমনে এসব ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়। কিয়ৎকাল পর আলিফ তাসনিমকে উদ্দেশ্য করে একদম ক্ষীন আওয়াজে বলল,
“আরে আমি তো তোমাকে পরখ করতে চেয়েছিলাম।যে তুমি কোন দিকে থাকো। নিজের বরের দিকে নাকি তোমার বোনেদের দিকে।তুমি তো আমার দিকে থাকলেই না আরো উল্টো আমাকে কথা শুনালে।”

তাসনিম স্মিত হেসে ক্ষীন আওয়াজে বলল,”আমিও তো আপনাকে বাজিয়ে দেখছিলাম, আসলে কেমন কিপটে আপনি?”

“তা কি বুঝলে?

আলিফের কথার মাঝেই তুলি বলল,”কি হলো জিজু?বউয়ের সাথে এত কি ফুসুরফুসুর করছেন?বউ কে হাত করেও লাভ হবে না। জলদি জলদি টাকাটা দিয়ে দিন,কেমন।”
তুলির কথায় আলিফ সোজা হয়ে বসলো।পকেটে হাত দিয়ে টাকা বের করে মুঠোর মধ্যে করে।হাতটা তুলির সামনে বাড়িয়ে বলল,”এইযে শালিকারা আপনাদের এনামি নিন।আমার পক্ষ থেকে সামান্য কিছু।”

তুলি কপাল কুচকালো।হাতের মধ্যে বেশ কয়েকটা একহাজার টাকার নোট আছে।তা দেখা যাচ্ছে।তবে এটা তো জানা যাচ্ছে না আসলে কত টাকা আছে।তাই তুলি বলল,”জিজু নিজের ছোট বোনকে বিশ্বাস করে ঠকলাম।ছোট বোন কিনা বরের দিকে ব্যায়াস হলো।আর সেখানে আপনাকে বিশ্বাস করি কিভাবে?বলা তো যায়না দশ হাজারের থেকে কিছু কম আছে।তাই বলছি গুণে দিন।”

“সম্মানিত শালিকা কাউন্ট করার প্রয়োজন নেই।ঠকবেন না। এতটুকু বিশ্বাস করতেই পারো।”

তুলির অবুঝপনা মন আলিফের কথা মানতে পারলো না।তুলির কাঠকাঠ জবাব সামনের উপর কাউন্ট করে দিতে হবে।আলিফও মজা করতে তুলির কথার বিরোধিতা করছে। এরমধ্যে তাসনিম বলল,
“এই টাকাগুলো আমার কাছে দিন।আমি দেখছি।”

আলিফ হাতের টাকা তাসনিমের দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল,”বউয়ের আদেশ মানতেই হবে।নিন ম্যাডাম।”

তাসনিম বিনিময় স্মিত হাসলো।টাকা টা গুনতে থাকে। অবশেষে দেখা গেলো দশ হাজার নয়।বিশ হাজার টাকা। তাসনিম ছোট বোনদের হাতে টাকাটা দিয়ে দেয়। তাসনিম মৃদুস্বরে বলল,”ভালোই তো ফান করতে পারেন।আপনাকে আজ যতো দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।একের পর এক চমক দেখাচ্ছেন। গম্ভীর এটিটিউডের মালিক ডক্টর আলিফ শাহরিয়ার খান আজকে একেক রুপে ধরা দিচ্ছে।আর এই দেখে আমি বিস্মিত হচ্ছি।”

“এখনই এতো অবাক হয়ো না। কিছুটা তুলে রাখো।কারন সামনে আরো চমক থাকছে। স্পেশাল চমক তো রাতে থাকছেই।”

তাসনিম দৃষ্টি নত করে ফেললো।সাথে লজ্জায় আড়ষ্ট হলো।
.
জাহানারা বেগম,রাজিয়া সুলতানা লিয়া পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। জাহানারা বেগম সবার থেকে একএক করে বিদায় নিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়ালেন। সন্ধ্যা হয়ে আসছে বাড়ি ফিরবেন।নীল ড্রাইভিং সিটে বসে দুই হাত স্ট্রিয়ারিংয়ের উপর ভাঁজ করে বসে আছে। আনোয়ার রহমান অপর দিকের ডোর খুলে গাড়িতে বসলেন।জারিফ এপাশের ডোর খুলে দেয়। লিয়া জাহানারা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল,”আন্টি আজকে থেকে যান না, প্লিজ। আঙ্কেল কে রাজি করিয়ে থাকেন।আসলেন মাত্র এইটুকু সময় থাকলেন।সবার সাথে তো ভালো করে কথাবার্তাই হয়নি।তাই বলছি রাতটা থেকে যান।”

জাহানারা বেগম অমায়িক হাসলেন।লিয়ার কাঁধে একহাত রাখলেন।অপর হাত লিয়ার মাথায় বুলিয়ে বললেন,”নাহ্,সোনা।আজ নয়।অন্যদিন এসে থাকবো।নাতাশাকে রেখে আসছি।জারার পরীক্ষা দুইদিন পর থেকে।নাতাশা জারাকে জ্বালাবে।আর ছোটও বাড়িতে আছে।বাড়িতে কোনো ছেলে মানুষ নেই।ওরা দুজন একাএকা কিকরে থাকবে। ভালোমন্দ-র কথা বলা যায়না।কখন কি প্রয়োজন হয়?তাই আজ আসি,কেমন।মন খা’রাপ করো না।”

লিয়া অভিযোগের সুরে বলল,”নাতাশাকে আনতে পারতেন ।সাথে ছোটো আন্টি,জারা আসলে খুব ভালো হতো। আচ্ছা মানলাম জারার এক্সাম আসতে পারলো না।আর ছোটো আন্টিও নাহয় জারার জন্য থেকে গিয়েছে।তবে নাতাশা।নাতাশাকে অন্তত নিয়ে আসতেন।”

জাহানারা বেগম মৃদু হাসলেন। কণ্ঠে একরাশ মায়া মিশিয়ে ফের বললেন,”নাতাশা জার্নি করতে পারে না। লং জার্নি করতে গেলেই বমি টমি করে অসুস্থ হয়ে পড়ে।আর ওতো এমনিতেও অসুস্থ।তাই ওর উপর স্ট্রেচ দেইনি সহজে।”

একটু থেমে লিয়ার গালে হাত রেখে বললেন,”মন দিয়ে পড়াশোনা করো।সামনে তো তোমার এডমিশন।জারিফ বলছিলো ওদের ভার্সিটিতে ভর্তি হলে সব দিক দিয়ে ভালো হতো।এখানে থেকেই পড়াশোনা করা যেতো।অন্য জায়গা যাওয়ার থেকে নিজ জেলাতে থাকলেই সব দিক দিয়ে ভালো হয়।সব কিছু চেনা জানা থাকে।তার উপর জারিফ থাকবে।কোনো সমস্যা হলে জারিফ হ্যান্ডেল করতে পারবে।”

লিয়া জারিফের দিকে আড়চোখে তাকালো।জারিফ একহাতে মাথা চুলকিয়ে নিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করলো। জাহানারা বেগম রাজিয়া সুলতানাকে উদ্দেশ্য করে শান্ত স্বরে বললেন,”আপা।জারিফের বাবা ভাইজানকে বলেছেন,লিয়াকে আমাদের কাছে নেওয়ার কথা।ভাইজান বলেছেন,সামনে লিয়ার এডমিশন।এখন নতুন করে লিয়া জারিফের বিয়ের অনুষ্ঠানাদি করলে লিয়ার পড়াশোনার উপর ইফেক্ট পড়তে পারে। তাই উনি বলেছেন,লিয়া ভর্তি হোক। ক্লাস করুক।তার কয়েকমাস পর।বড় করে অনুষ্ঠান করে সবাইকে জানিয়ে লিয়াকে উঠিয়ে নেওয়া যাবে।”

লিয়ার লজ্জা লাগছে।সাথে অবাক হচ্ছে ।ওর অগোচরে কখন এসব কথাবার্তা হলো।আর জারিফ সে কি লিয়ার মতোই জানে না?নাকি এসবের পেছনে জারিফের হাত আছে। লিয়া এসব কিছু ভাবতে থাকে।রাজিয়া সুলতানা অমায়িক হেসে বললেন,”ঠিক আছে আপা।সবাই মিলে আলোচনা করে যা ভালো বোঝে তাই হবে।টেনশন করবেন না।আমার মেয়ে হলেও এখন ও আমার কাছে আপনাদের আমানত।আমাদের মেয়ের উপর আমাদের যতটা অধিকার আছে।ঠিক ততটাই আপনাদের আছে। বরং বেশিই।একটা মেয়ের বিয়ের পর তার প্রধান গার্ডিয়ান হয় তার স্বামী।আর আমার মনেহয় অধিকার ছেড়ে দিয়ে অধিকার ধরে রাখা ঠিক নয়।মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।এখন একমাত্র মেয়ে বলে এটাওটা বলে নিজের কাছে রেখে দেবো।এটা মোটেই একজন সুস্থ বিবেক সম্পন্ন মানুষের কাজ নয়।মা হিসেবে এতটুকু দাবি সব সময় রাখবো,মেয়ের কখনো কোনো ভুলত্রুটি হলে,ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে শুধরে নিতে সাহায্য করবেন।নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখবেন।আর আমার বিশ্বাস।আমার মেয়ে কপাল করে এমন একটা শ্বশুড়বাড়ি পেয়েছে।সবাই আমার মেয়েকে স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবে।”

জাহানারা বেগম আশ্বাস দিয়ে বললেন,”আপনার মেয়ে।আমার বাড়ির সম্পদ।আর নিজের বাড়ির সম্পদকে তো জান দিয়ে হলেও আগলে রাখতে হবে।”

“জারিফের মা সন্ধ্যা হয়ে আসছে যে। তাড়াতাড়ি করো।ওদিকে বাড়িতে ওরা দুজন বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে কি করছে।চলো।”

মেয়ে মানুষ কথা বললে সহজে থামতেই চায়-না।আবার যখন সবচেয়ে আদরের ধন সন্তান সন্ততি নিয়ে কথা হয়।তখন তো মাথায় অন্যকোনো চিন্তা থাকেই না। সন্তান সন্ততি নিয়ে আবেগ প্রবণ হয়ে এটাসেটা বলতেই থাকে। আনোয়ার রহমান যাওয়ার জন্য তাড়া দেওয়ায় জাহানারা বেগম কথা থামালেন।জাহানারা বেগম লিয়ার গালে আলতোকরে একহাত রেখে বললেন,”আমার ছেলেকে সারাজীবন ভালো রেখো।আমার ছেলেকে কখনো কষ্ট দিও-না।নিজের ছেলেকে ভালো রাখার জন্য এক মায়ের চাওয়া তুমি সকল মান অভিমান দূরে ঠেলে ভাইজানের কথাটা মেনে নিও কেমন।আমাকে তোমার স্বার্থপর মনে হতে পারে।মায়েরা তাদের সন্তানের জন্য একটু আধটু স্বার্থপর হয়ে থাকে।আমাকে নাহয় তাই ভেবো তুমি।তবুও আজ নিজের ছেলের জন্য স্বার্থপরের মতো তোমাকে মেনে নিতে বলায়,আমার লজ্জা অনুভব হচ্ছে না।আমার ছেলেটা খুব ভালো।হয়তো তোমাকে বিলাসীতায় ডুবিয়ে রাখতে পারবে না।তবে সুখে শান্তিতে রাখতে যা দরকার। আল্লাহর রহমতে আমার ছেলের সে সামর্থ্য আছে।আর জানো মা সুখে শান্তিতে থাকার জন্য বিলাসবহুল গাড়ি বাড়ি,কারিকারি টাকা পয়সার দরকার হয়না।সৎ চরিত্র ,সকল মানবীয় গুণাবলী থাকলেই সুখে শান্তিতে থাকা সহজ হয়।আমি জানি এসবের সবটাই আমার ছেলের মধ্যে আছে। নিজের ছেলে বলে বলছি না। যাইহোক তোমার কাছে আমার একটাই চাওয়া থাকবে,আমার ছেলেকে ভালো রেখো।”

লিয়া বিনিময় কিছুই না বলেইনিশ্চুপ রয়।আর একটা মেয়ের নীরবতাকে সাধারণত সবাই মৌন সম্মতি ধরে নেয়।ঠিক তেমনই জাহানারা বেগম লিয়ার নিরব থাকাকে সম্মতি হিসেবে ধরে নেয়। জাহানারা বেগম গাড়িতে উঠে বসলেন।জারিফ দরজা লাগিয়ে দিতে দিতে বলল,”মা বাসায় পৌছে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়ো।নীলকে বলেছি।ওর যা মন। ফোন দেওয়ার কথা মনে নাও থাকতে পারে।”

“জারিফ তুই তো এখন আলিফের ওখানে যাবি বোধহয়।বাসায় ফিরবি কখন?”

জারিফ কিছু ভেবে বলল,”দেখি কখন যাই।”

জারিফ নীলকে উদ্দেশ্য করে ফের বলল,”নীল দেখেশুনে ড্রাইভ করিস। গ্রামের এই রাস্তাটা তেমন ভালো নয়।আর রাত সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। মনোযোগ সহকারে কেয়ারফুলি ড্রাইভ করিস ,কেমন?”

নীল একশব্দে বলল,”ওকে।”

গাড়ি চলে যেতেই রাজিয়া সুলতানা বাড়ির ভেতরে চলে যান।এখন কনে বিদায় হবে।বিদায় ক্ষণ আসছে যতো। ততো সবার মনটা বিষাদে ছেয়ে যাচ্ছে।তাসনিমের বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে। তহমিনা বেগম মেয়ের সামনে আসতেই তাসনিম মা’কে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পরে। উফ্! তহমিনা বেগম মেয়ের সামনে যতই শক্ত থাকার চেষ্টা করছে।ততই যেনো ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে পড়ছেন। তহমিনা বেগমের চোখের কোলে জমে থাকা নোনাজল মূহূর্তেই গাল বেয়ে পড়লো। তহমিনা বেগম মেয়েকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,”কান্না করে না,সোনা।কালকেই তো আসছো। তোমাকে এভাবে কান্নাকাটি করতে দেখতে সবারই খুব খা’রাপ লাগছে।”

পাশে তুলি দাঁড়িয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। জান্নাত বেগম নাতনির সামনে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত রাখলেন। তাসনিম দাদিমনিকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কান্না করতে থাকে। তহমিনা বেগম তুলির কাঁধে হাত রেখে বললেন,”মেয়েটা এত কান্না করছে।মাথা ধরে যাবে তো।ও বাড়িতে প্রথম দিন একলা একলা মন খা’রাপ হবে ভীষণ।তাই বলছি তুই আর লিয়া সাথে যা, কেমন।তাহলে ওর একটু হলেও ভালো লাগবে।”

তুলি নাক টেনে নিয়ে বলল,”লিয়া যাবে না হয়তো।আর নতুন কুটুম বাড়ি আমি এভাবে একা যেতে পারবো না।কাউকে তেমন চিনি না।”

“আমি লিয়াকে বলছি।আমি বললে লিয়া যাবে।”

থেমে‌।এদিক ওদিক তাকিয়ে তহমিনা বেগম ফের বললেন,”লিয়া কই দেখছি না যে।লিয়াকে ডেকে আন আমি বলে দেখি।”

তুলি ঠিক আছে বলে।
.
জারিফ আর লিয়া পাশাপাশি দাঁড়িয়ে।লিয়া রাজিয়া সুলতানার পেছনে ভেতরে আসতে নেয়।এমন সময় জারিফ পিছু ডাকে।লিয়া বিরস মুখায়ব করে পিছন ফিরে তাকায়।জারিফ লিয়ার দিকে এগিয়ে আসে।কিছু বলার জন্য।জারিফ বলার আগেই লিয়া শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করে উঠলো,”আপনি আন্টিকে এসব বলতে বলেছেন? আব্বুকে রাজি করাতে আপনি বলেছেন আন্টি আঙ্কেল কে?”

জারিফ সহসা বলে উঠলো,”নাহ্।আমি মা’কে সরাসরি বলিনি।তবে হয়তো পরোক্ষভাবে বলেছি।”

“মানে?”

“মা গতকাল রাতে আমার রুমে এসে প্রথমে ভালোমন্দ কথাবার্তা বলে। অবশেষে বলে,কালকে যেহেতু লিয়াদের বাড়িতে যাচ্ছি।তাই লিয়ার আব্বুকে বলবো লিয়াকে আমাদের কাছে নিয়ে আসার কথা।নিজের বাড়ির বউকে এভাবে বাপের বাড়ি রাখা মোটেই ভালো লাগছে না।তাই ভাবছি দ্রুতই তোদের বিয়ের কথা সবাইকে জানিয়ে নিয়ে আসবো লিয়াকে।”

জারিফের কথার মাঝেই লিয়া বলল,”আন্টি যে মান অভিমান কথাটা বললো।আপনি না বললে জানলো কিকরে?”

জারিফ বি’রক্ত হলো। গম্ভীর গলায় বলল,”ও লিয়া।কথা ফিনিশ করতে দিবে তো।মা যখন তোমাকে আনার বিষয়ে বলছিলো,তখন আমি বলি লিয়া এখনো অনেক ছোটো।এখনো অনার্সে ভর্তি হয়নি।তাই ওয়েট করা যাক।এখন যেভাবে চলছে।এভাবেই চলুক।তিন চার বছর পর লিয়াকে আনা যাবে।”

একটু সময় নিয়ে জারিফ বলল,”যদিও কথাগুলো আমার মনের থেকে বলা ছিলো না।তবুও মা’কে এমনটা বলেছিলাম।কারন তোমার জিদ সম্পর্কে আমি অবগত আছি।তবে কি জানো মা’য়েরা তাদের সন্তানের মনের কথা পড়তে পারে।তাদেরকে মুখ ফুটে কিছু বলতে হয়না।মা হয়তো আন্দাজ করতে পেরেছে।সেই আন্দাজ থেকেই তোমাকে এরকমটা বলেছে।তবে লিয়া আমি কখনো তোমাকে জোর করবো না।মা বলেছে এইজন্য তোমাকে রাজি হতে হবে।এমন নয়।তুমি চিন্তা ভাবনা করে দেখো।তোমার যা ভালো মনেহয় তাই করবে।তোমাকে সরাসরি না করতে হবে না।আমি অন্যভাবে মা’কে বুঝিয়ে বলবো।আমি কজ দেখিয়ে সময়টা বাড়িয়ে নেবো।তোমার কথায়ই থাকবে।”

জারিফ দুই হাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে সটান দাঁড়ালো। শান্ত নজরজোড়া লিয়ার হরিণী চোখে রেখে শান্ত শীতল গলায় বলল,”আমার মা’য়ের এভাবে বলায় তুমি কি আমাকে দায়ী করছো?ভাবছো কি আমি মা’কে উকিল নিযুক্ত করে বাবাকে দিয়ে আঙ্কেলকে রাজি করিয়েছি?”

লিয়া কপালে প্রগাঢ় ভাঁজ ফেলে জারিফের মুখশ্রীতে শান্ত চাহনিতে চাইলো। ঠোঁট প্রসারিত করে বলল,

চলবে,,,

(আগামীকাল নেক্সট দেওয়ার চেষ্টা করবো।হয়তো রাতের আগে সম্ভব হবে না।আজকে এখনই প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।রিচেইক দিতে পারছিনা ঠিকঠাক।চোখের পাতা টেনে তুলতে হচ্ছে। ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here