সুখের_ঠিকানা #শারমিন_হোসেন #পর্ব২২

0
212

#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব২২

হসপিটালের করিডোরের সামনে রাখা চেয়ারে বসে আছে লিয়া পাশে রাজিয়া সুলতানা সহ পরিবারের বাকি সদস্যরা। হাঁটুতে দুইহাত ভর দিয়ে মাথাটা চেপে ধরে আছে লিয়া। ক্রন্দনরত চোখদুটো ফুলে লাল হয়ে আছে। অতিরিক্ত কান্নার ফলে হেডেক হচ্ছে। নামি প্রাইভেট হসপিটালের ছয়তলায় অবস্থান করছে ওরা। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে এনামুল খাঁনকে। উচ্চ রক্তচাপের জন্য হঠাৎ করেই স্ট্রোক করেছেন এনামুল খাঁন।ডিউটিরত অবস্থায় অতিরিক্ত র’ক্ত চাপের কারনে হুট করেই মাথা ঘুরে পড়ে যান।জ্ঞান না ফেরায় ইমিডিয়েইটলি অফিস থেকেই দ্রুত হসপিটালে এডমিট করায়। ড্রাইভার আঙ্কেলের ফোনকলে এনামুল খাঁনের অসুস্থতার কথা শুনতেই লিয়া থমকে যায়।বাবা শব্দে মাত্র দুইটি অক্ষর।তবে এর বিশালতা ব্যাপক।বাবা মানেই এক আকাশ পরিমাণ আনন্দ।বাবা হলেন তপ্ত রোদের মাঝে শীতল ছায়া। প্রকাশ না করা ভালোবাসার মধ্যে বাবার ভালোবাসা সর্বশ্রেষ্ঠ।সব বাবাই তার সন্তানের জীবনে বটবৃক্ষের ছায়ার মতো। ধরণীতে সৃষ্টিকর্তার অনন্য এক সৃষ্টি বাবা।বাবার ভালোবাসা স্বার্থহীন। সন্তানের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানের মুখে হাসি ফোটায় বাবা।বাবা ডাকটাই যেনো কতো শ্রুতিমধুর।উফফ!সেই বাবার খা’রাপ নিউজ শুনলে সন্তানের ঠিক থাকা অসম্ভব।ফোনে যখন লিয়া শুনলো তার বাবাকে চেকআপ করে ডক্টর ফাস্ট লাইফ সাপোর্টে রাখতে বলেছেন এটা শোনার সাথে সাথে লিয়ার মাথা চক্কর দিয়ে উঠে।লিয়া চারিদিকে অন্ধকার দেখতে থাকে।মাকে কিকরে বাবার অসুস্থতার কথা বলবে?নিজেই যখন স্বাভাবিক থাকতে পারছে না।লিয়া কান্নায় ভেঙে পড়ে। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতেই মাকে বাবার অসুস্থতার কথা বলে। হসপিটালে আসতেই তাসনিমের সাথে ফাস্ট দেখা হয়।ডিউটিতে থাকা ডক্টরের সাথে কথা বলছিলো।লিয়ারা আসার আগেই তাসনিম হসপিটালে আসে। ড্রাইভার আঙ্কেল একএক করে সবাইকে নিউজটা দেয়। তাসনিম মেডিকেলে ছিলো ওখান থেকে সবার প্রথম আসে। লিয়ারা আসার কিছু সময় পর দাদিমনিসহ বাড়ির সকলেই আসে। ডক্টর বলেছেন পেশেন্ট খুব সিরিয়াস।আমরা সাধ্যমতো ট্রিটমেন্ট করছি আর আপনারা সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করুন।

রাত দশটা বাজতে চললো।এইতো কিছুক্ষণ আগে লিয়ার বড়মা,বড় আব্বু ওনারা চলে গিয়েছেন। হসপিটালে এতো লোকজনের ভীড় না থাকাই ভালো।লিয়ার ছোটো চাচ্চু,জান্নাত বেগম আছেন।লিয়া তাসনিমের কোমড় জড়িয়ে পেটে মুখগুজে আছে। তাসনিম তখন থেকে লিয়াকে বাসায় যাওয়ার কথা বলছে অথচ লিয়া রাজি হচ্ছে না। তাসনিম হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে লিয়ার মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে আদূরে গলায় ফের বললো,,

“লিয়া টেনশন করিসনা সব ঠিক হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ।দেখ তুই যদি এভাবে কান্নাকাটি করিস তাহলে মেজোচাচিমার তো আরো খা’রাপ লাগবে।তাই বলছি এভাবে ভেঙ্গে না পড়ে শক্ত হ।আর চাচিমাকে সান্ত্বনা দে। আল্লাহর কাছে প্রে কর।”

তাসনিম একটু থেমে ফের মৃদু আওয়াজে বলতে থাকে,,”চাচিমা লিয়ার তো পরশু থেকে এক্সাম।এভাবে কান্নাকাটি করে নির্ঘুমিয়ে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বে।তুমি একটু ওকে বুঝিয়ে বলো না, প্লিজ।”

রাজিয়া সুলতানা হাতের উল্টো পাশ দিয়ে গাল বেয়ে পড়া পানিটুকু মুছে নিলেন। মূর্তির ন্যায় বসেই ভারী গলায় ঠোঁট আওড়ালেন,,”লিয়া তাসনিম ঠিকই বলেছে।আমার মনেহয় এত লোকজনের ভীড় না থাকাই ভালো।তাই তুই বাসায় যা। আম্মাও তো অসুস্থ মানুষ।তুই তাসনিমের সাথে তোর দাদিমনি আর রাহবারকে নিয়ে বাসায় যা।আমি আর তোর ছোটো চাচ্চু আছি তো।আর ফোনকরে সবসময় খোঁজ খবর নেওয়া যাবে।”

অবশেষে মায়ের কথামতো লিয়া তাসনিমের সাথে দাদিমনি আর রাহবারকে নিয়ে বাসায় ফেরে। ছেলের অসুস্থতার কথা শুনে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন জান্নাত বেগম।বৃদ্ধা মহিলা কিচ্ছুতেই হসপিটাল থেকে আসতে চাইছিলেন না।ছোটো ছেলে আর তাসনিম অনেক করে বলে কয়ে শেষমেষ রাজি করায়। বাসায় এসে তাসনিম ফ্রিজ খুলে কিছু খাবার দেখতে পায়। সেগুলো গরম করে ‌এতরাতে রান্না করতে ইচ্ছে করলো না।আর রান্না করেও লাভই বা কি কেউ যে আর খাবার খাওয়ার পরিস্থিতিতে নেই।গলা দিয়ে মনেহয়না খাবার নামবে। ‌উফ!

খাবার রেডি করে রাহবারকে প্রথমে খাওয়িয়ে দেয়।হালকা কিছু খেয়ে রাহবার আর খায়না। তাসনিম রাহবারের গায়ে চাদরটা টেনে দিয়ে লাইট অফ করে দিয়ে রুম থেকে বের হয়। অতঃপর দাদিমনির খাবার আর সাথে ঔষধ দেয়। সবশেষে লিয়ার রুমে যায়।লিয়া রুমটা অন্ধকার করে চেয়ারে বসেছিলো। উফ্!লিয়ার মনে হচ্ছে জীবন যেনো একের পর এক চমক দেখাচ্ছে। কিছুদিন আগেই নিজের সাথে এতবড় একটা দূর্ঘটনা ঘটলো।যার শেষটা কিহবে তা আজও অজানা লিয়ার।আবার বাবা নামক সবথেকে আপন জন আজ মৃ’ত্যু’র সাথে লড়ছে।চোখ বন্ধ করতেই টসটসে দুফোঁটা নোনাজল গাল বেয়ে পড়লো লিয়ার। এরমধ্যে রুমে আলো জ্বলে উঠলো। তাসনিম খাবার হাতে লিয়ার রুমে আসে। লিয়াকে বলে কয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে।একলোকমা ভাত মুখে নিয়ে লিয়া চিবুতে থাকে।গলায় আজ মনে হচ্ছে কেউ যেনো বেড়ি পরিয়ে রেখেছে।খাবারটা গলা দিয়ে নামানো যাচ্ছে না।বাবার সকল স্মৃতি চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ভাসতে থাকে। ইশশ্!আজ বাবা সুস্থ থাকলে বাসায় আসার সাথে সাথেই ছেলে মেয়ের খবর নিতো। রোজ কিছু না কিছু হাতে করে আনে।দুইভাইবোনের জন্য আলাদা আলাদা চকলেট বা আইসক্রিম বক্স।মা বকলেও বাবা কখনো ব’কে’না।সব মেয়েদের কাছে বাবা একটু বেশিই প্রিয় হয়।লিয়া অনেক কষ্টে মুখে থাকা খাবারটা গলাধঃকরণ করে ভারী গলায় বললো,,

“আপু আর নয়।জোর করো না, প্লিজ।আমার ভালো লাগছে না।কোনো কিছুই ভালো লাগছে না।”

তাসনিম খাবার প্লেটটা রেখে হাত ধুয়ে নেয়। তাসনিম লিয়াকে এটাসেটা বুঝ দিতে থাকে। তাসনিম বিছানার একসাইডে বসে লিয়া তাসনিমের কোলের উপর মাথা রেখে দুইহাতে কোমড় জড়িয়ে ধরে পেটে মুখগুজে নিশ্চুপ রয়।তাসনিম লিয়ার চুলের মধ্যে বিলি কাটতে থাকে।এভাবে কিছুক্ষণ থাকতে থাকতে লিয়া ঘুমিয়ে পড়ে। লিয়াকে বালিশে শুয়িয়ে দিয়ে লাইট নিভিয়ে তাসনিম সন্তর্পণে রুম থেকে প্রস্থান করে।ফোন করে হসপিটালে খোঁজ নিবে সেইজন্য ব্যাগ থেকে ফোন বের করতেই আলিফের একগাদা মিসড কল দেখতে পায়।ফোন সাইলেন্ট থাকায় খেয়াল করেনি।আগে ছোটো চাচ্চুর সাথে কথা বলে হসপিটালের খোঁজখবর নেয়। অতঃপর আলিফের নম্বরে কল দেয়।কল রিসিভ করতেই তাসনিম মৃদু আওয়াজে সালাম দেয়।ওদিকে ফোনের ওপাশ থেকে আলিফ ব্যতিব্যস্ত হয়ে চিন্তিত গলায় শুধালো,,

“এই তাসনিম তোমার কিহয়েছে বলো তো?এতোবার ফোন দিচ্ছি রিসিভ করছো না যে।ঠিক আছো তুমি? কোনো সমস্যা হয়নি তো? খোঁজ নিয়ে জানলাম তুমি হোস্টেলেও নাকি নেই।তুমি বাড়িতে গিয়েছো?”

ডক্টর সাহেবের উতলা হয়ে একনাগাড়ে এতগুলো প্রশ্নশুনতে তাসনিমের মন্দ লাগলো না।ডক্টর সাহেব যে এতো এতো ব্যস্ততার মাঝেও এতবার কল করেছে ইভেন হোস্টেলে পর্যন্ত খোজ নিয়েছে এটা শুনতেই তাসনিমের খুব ভালো লাগলো। প্রত্যেকটা নারীই চায় তার প্রিয় মানুষ সকল ব্যস্ততার মাঝেও তার খোজ নিক। যেখানে তাসনিম এতটা আশাই করিনি সেখানে ডক্টর সাহেব তো একদম টিনেজারদের মতো উতলা প্রেমিক হয়ে গিয়েছে দেখছি।কি সাংঘাতিক ব্যাপার স্যাপার। অজান্তেই তাসনিমের মনটা পুলকিত হলো। তাসনিম ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো।একহাতে ফোন কানে ধরে ঘাড়টা একটু হেলিয়ে অন্যহাতে লোহার গ্রিল খুঁটতে থাকে আর মৃদুস্বরে বললো,,

“রিল্যাক্স জনাব রিল্যাক্স।এতো হাইপার হওয়ার কিছু নেই।আমি ঠিক আছি।তবে একটা বড় সমস্যা হয়েছে।”

প্রথম কথাগুলো শুনে হাফ ছেড়ে বাঁচতে না বাঁচতেই তাসনিমের শেষের কথা শুনে তাৎক্ষনিক আলিফের ভ্রু যুগল ঈষৎ কুঞ্চিত হলো।সাথে সাথেই চিন্তিত গলায় প্রশ্ন করে উঠলো,,

“কি সমস্যা?কি হয়েছে?”

তাসনিম শর্টকাটে সবটা বলে।আলিফ মনোযোগ সহকারে সবটা শোনে।আলিফ ছোট শ্বাস ফেলে সান্ত্বনা দিয়ে বলে,,”চিন্তা করো না।সব ঠিক হয়ে যাবে। আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। সৃষ্টিকর্তাকে বেশি বেশি স্মরণ করো। ট্রিটমেন্ট চলছে ইনশাআল্লাহ আঙ্কেল সুস্থ হয়ে যাবেন।”

একটু থেমে ফের ইতস্তত করে বললো আলিফ,,” ভাবছি কালকে আক্কেলকে একবার দেখতো যাবো ।তুমি থাকছো তো?”

তাসনিম ব্যালকনিতে থাকা চেয়ারে গা এলিয়ে বসলো। অতঃপর বলল,,”হুম।তবে কি পরিচয় দিবেন?আমার পরিবারের সদস্যরা তো থাকবে। তখন কি বলবো? বিষয়টা কিরকম হবে না?”

আলিফ স্মিত হাসলো। নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,,
“তাইতো?ভেবে দেখিনি তো।এখন দেখছি পরিচয়ের জন্য হলেও আর ওয়েট করা যাবে না। খুব দ্রুতই তোমার বাড়িতে প্রস্তাব পাঠাতে হবে।”

একটু থেমে সম্মোহনি স্বরে ডাকলো,,”এই তাসনিম।”

তাসনিম ছোট করে বললো,,”হুম।”

“জানো যখন আমার একের পর এক কল তুমি তুলছিলে না।তখন আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।এতোএতো অক্সিজেন থাকা সত্ত্বেও আমার মনে হচ্ছিলো,আমি বোধহয় সাফোকেটিংয়ে ভুগছি।বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছিলো।ভাবছিলাম,হুট করে বাড়ীতে গিয়ে আবার বিয়ের পিঁড়িতে বসোনি তো।আবার যদি এরকম হয়,আমি কিন্তু সত্যি তোমাকে জোর করে হলেও বিয়ের আসর থেকে তুলে নিয়ে আসবো।তাই ভুলেও এই ভুল দ্বিতীয়বার করতে যেয়ো না। এলার্ট করে রাখলাম।”

তাসনিম একহাতে কপালের উপর আসা চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে ক্ষীণ আওয়াজে বললো,,”ধ্যাত আমি টেনশনে আছি।আর আপনি ফা’জ’লা’মো করছেন।”

আলিফ লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে বললো,,”তোমার কাছে ফা’জ’লা’মো মনে হলেও,আমি কিন্তু মোটেই ফা’জ’লা’মো করছি না ‌।আ’ম সিরিয়াস যাইহোক, টেনশন করো না।খাবার খেয়েছো?”

“হুম।”

“আচ্ছা রাত অনেক হয়েছে এবার ঘুমিয়ে পড়ো।বায় টেক কেয়ার।”

“ওকে।বায়।”
.
পরেরদিন,,,
পড়ন্ত বিকেল।জারিফ ড্রয়িংরুমে বসে ল্যাপটপ কোলের উপর রেখে কিছু একটা করছিলো।এমন সময় জাহানারা বেগম এসে জারিফের পাশে বসেন।জারিফ ল্যাপটপ থেকে মাথাটা তুলে ডান সাইডে ঘাড় ঘুরিয়ে মাকে একনজর দেখে মৃদুস্বরে বললো,,”কিছু বলবে মা?তোমাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে।কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করছো নিশ্চয়।”

জাহানারা বেগম মুখটা মলিন করে চিন্তিত গলায় ঠোঁট আওড়ালেন,,”জারিফ বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছে তোর বাবা এখনো বাসায় ফিরলো না যে। দুপুরে লাঞ্চ করতে আসেনি।আর রোজ তো চারটার দিকেই অফিস থেকে চলে আসে।আজ এখনো আসছে না।তারউপর কয়েকবার কল করলাম ফোন তুললো না।বেজে বেজে কে’টে গেলো।”

জারিফ ল্যাপটপ অফ করে পাশে নামিয়ে রাখলো।কপাল কুঁচকে মায়ের মুখপানে চাইলো। ব্যস্ত কন্ঠস্বরে বললো,,”আচ্ছা আমি বাবার অফিসে ফোন করে দেখছি।বাবা অফিসে আছে কিনা?”

ফোন ওপেন করতেই নীলের নম্বর থেকে একটা মিসড কল দেখতে পায়। ভার্সিটি থেকে বাসায় আসার পর ফোন চেক করা হয়নি। হয়তো দুপুরে রুমে ছিলনা এমন সময় নীল কল দিয়েছিলো।তবে জারিফ ভাবে আগে বাবার অফিসে কল দিয়ে নেই। নীলের সাথে পরে কথা বলা যাবে। কন্টাক্ট লিস্ট থেকে বাবার অফিসের টেলিফোন নম্বর খুঁজতে থাকে। আনোয়ার রহমান সরকারি চাকরি করেন****অধিদপ্তরের নবম গ্রেডের একজন কর্মকর্তা।আর বছর খানেক আছে চাকরীর বয়স।এরমধ্যে নিরুপমা বেগম এসে দাড়িয়ে শাড়ির আঁচলে হাতটা মুছতে মুছতে বললেন,,”নীলেরও তো কোনো খবর নেই।সেই সকালে বেরিয়েছে দুপুরে খাবার খাওয়া নেই গোসল নেই।কোথায় টইটই করে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা আল্লাহ জানে আর ও জানে।আজ আসুক ওকে আচ্ছাকরে ব’কতে হবে।পড়ালেখার নাম গন্ধ নেই শুধু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বেড়ানো।”

এরমধ্যে কল্পনা বেগমও এসে সোফায় গা এলিয়ে বসেন। হঠাৎ কলিংবেলের শব্দ হয়। নিরুপমা বেগম দরজা খুলে দেন।জারিফ মাত্রই কল করতে যাবে তখন আনোয়ার রহমান আর পিছনে নীলকে দেখতে পায়।আনোয়ার রহমান সিঙ্গেল সোফায় গা এলিয়ে বসেন।একহাতে শার্টের হাতার কাছের বোতাম খুলতে থাকেন। জাহানারা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“জারিফের মা একগ্লাস ঠান্ডা পানি দাও তো।”

জাহানারা বেগম উঠে দাঁড়িয়ে ডায়নিংএ গিয়ে পানি এনে বাড়িয়ে দিয়ে কপাল কুঁচকে শুধালেন,,”এতো দেরি হলো যে। দুপুরে লাঞ্চ করতেও আজ আসোনি যে।কল দিলাম তুললে না।”

নীল জারিফের পাশে ফাঁকা জায়গায় ধপ করে বসে পড়ে। টিশার্ট এর উপরের বোতাম খুলে সোফায় গা এলিয়ে দেয়। নিরুপমা বেগম ছেলের দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে আছেন।তবে বড় ভাসুর উপস্থিত থাকায় কিছু বলতে পারছেন না।না হলে এতক্ষণ ইচ্ছে মতো ঝাড়তেন।

আনোয়ার রহমান ঢকঢক করে পানিটুকু খেয়ে গ্লাস টা জাহানারা বেগমের হাতে ধরিয়ে দিয়ে একটু নড়েচড়ে বসলেন।মুখায়ব টানটান করে গম্ভীর গলায় বললেন,,”হসপিটালে গিয়েছিলাম।লিয়ার বাবা এনামুল খান খুব অসুস্থ।গতকালকে স্ট্রোক করেছেন। দেখতে গিয়েছিলাম।”

জারিফ তড়িৎ বাবার দিকে মুখটা তুলে চাইলো।জারিফের ভেতর প্রশ্নের সৃষ্টি হয় বাবাকে খবর দিলো কে?জারিফ কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করেই উঠলো,,”বাবা তোমাকে কে বললো?না মানে তুমি কিভাবে শুনলে?”

আনোয়ার রহমান ছেলের মুখশ্রীতে একনজর চাইলেন।হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গম্ভীর মুখায়ব করে বললেন,,
“তোমার তো একটিবার হলেও যাওয়া উচিৎ ছিলো জারিফ।আর আমাকে খবরটা নীলের কাছ থেকে শুনতে হয়েছে।নীল দুপুরে ফোন দিয়ে বললো।অফিস থেকেই সরাসরি হসপিটালে গিয়েছিলাম।ওখানে গিয়ে নীলকে দেখতে পাই।”

জারিফ নীলের দিকে একবার তাকালো আবার বাবার দিকে তাকিয়ে ক্ষীন আওয়াজে বললো,,”আমি জানতাম না।আর খবরটা তোমার কাছ থেকেই ফাস্ট শুনছি।”

আনোয়ার রহমান গম্ভীর কন্ঠেই বলতে থাকেন,,”তুমি জানতে না সেই ব্যর্থতা তোমার।তুমি নিজেকে তাদের কাছে সেইভাবে প্রেজেন্ট করতে পারোনি।যে তাদের সুখ বা দুঃখের যেকোন পরিস্থিতির কথা তোমার কাছে শেয়ার করবে।তোমাকে কোনো খবর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করবে।নিজেকে এতটা ইম্পর্ট্যান্ট করে তুলতে পারোনি তুমি।সেই ব্যর্থতা সম্পূর্ণ তোমার।”

জারিফ মাথাটা নুইয়ে চুপচাপ থাকে। জাহানারা বেগম কিছুটা বিরক্তিকর ফেস করে বললেন,,”নীল তুই কিকরে জানলি?আর তোর বড় আব্বুকে জানানোর সময় জারিফকে একবার ফোন দিয়ে জানাসনি কেনো?”

নীল আমতা আমতা করে বললো,,”আমি লিয়ার থেকে শুনেছিলাম।আর ব্রো কে জানাতে কল করেছিলাম ব্রো হয়তো ব্যস্ত ছিলো তাই রিসিভ করেনি বা খেয়াল করেনি।তারপর ব্রো কে হটস আ্যপে মেসেজ দিয়েছিলাম।মেসেজ বোধহয় এখনও সীন করেনি।”

জারিফ বললো,,”তোর কল আমি খেয়াল করিনি। ‌এই একটু আগে তোর কল দেখলাম । ভার্সিটি থেকে আসার পর অনলাইনে আর যাইনি।তাই মেসেজ সীন করা হয়নি।”

জারিফ মনেমনে আওড়ায়,লিয়া নীলকে খবরটা দিয়েছে।অথচ আমাকে দেওয়ার একবারো প্রয়োজন বোধ করলো না।তারমানে লিয়ার সাথে নীলের রেগুলারলি কথা হয়।

লিয়ার ফেসবুক আইডির সাথে নীল এ্যড আছে। খুব কমই কথা বলা হয়।আজকে দুপুরে লিয়া একটা পোস্ট করে।যেখানে লিয়ার বাবার আইসিইউতে থাকা একটা ছবি।সাথে লেখা সবাই আমার আব্বুর জন্য দোয়া করবেন।দুপুরে এই পোস্টটা দেখার সাথে সাথেই নীল লিয়াকে কল করে।তখন সবটা জানতে পারে। আনোয়ার রহমান জারিফকে উদ্দেশ্য করে ফের বললেন,,”জারিফ সন্ধ্যার পর তুমি হসপিটালে যাবে।যাইহোক যেহেতু জানতে না।এখন তো জানলে।”

জারিফ হ্যা সূচক বলে। এমন সময় কল্পনা বেগম ফোড়ন কে’টে বললেন,,”ভাইজান তুমি মিছেমিছি ছেলেটাকে এভাবে বলছো কেনো বলোতো?তারা না জানালে এখানে জারিফের কি দোষ? আর তাড়াই বা কোন আক্কেলের লোক একবারো জানানোর প্রয়োজন বোধ করলো না।আমার মনেহয় ভাইজান যেখানে ওনারা নিজে থেকে জানাইনি সেখানে জারিফের না যাওয়াই ভালো। জারিফ কেনো হুদায় যেতে যাবে। যেখানে একটাবারো ফোন করে জানালো না।সেখানে নিজ থেকে না গেলেই ভালো হয় ‌।”

আনোয়ার রহমান শান্ত কন্ঠে বললেন,,”এটা কোনো বিয়ে বা কোনো অনুষ্ঠান নয়, যে ফোন করে জনেজনে বলবে।আর সেখানে বিনা দাওয়াতে যাওয়া যাবে না। একজন মানুষ অসুস্থ সেখানে দেখতে যাওয়া হিউম্যানিটির মধ্যে পড়ে।তাদের পরিবারের একজন গুরুত্বর অসুস্থ সেখানে তাদের মনমানসিকতা নিশ্চয় ভালো নেই। তারা বললো না সেইজন্য আমি আমার দায়িত্ব পালন করলাম না এটা কোনো মনুষ্যত্ববোধ সম্পন্ন মানুষের কথা নয়।আগে পরিস্থিতিটা বুঝতে হবে।”

কল্পনা বেগমের মুখটা মূহূর্তেই কালো হয়ে যায়।মুখটা থমথমে হয়ে যায়।কথার পিছে বলার মতো কিছুই খুঁজে পেলেন না। জাহানারা বেগম ওনার স্বামীকে শুধালেন,,”ভদ্রলোককে এখন কেমন দেখলে।না মানে খুব সিরিয়াস কি?”

আনোয়ার রহমান বললেন,,” ডক্টর বলেছেন আটচল্লিশ ঘন্টা না যাওয়া অব্দি বলা যাচ্ছে না ডেঞ্জার মুক্ত কিনা।যাইহোক সবাই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করো,যাতে করে মানুষটা সুস্থ হয়ে যায়। বাচ্চা ছেলে মেয়ে আছে।তাদের জন্য হলেও যেনো আল্লাহ ওনাকে হায়াত দান করেন।”

জারিফ উঠে রুমে যায়।কোনো রকমে রেডি হয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
.
লিয়ার ছোটো চাচ্চু কাজের জন্য একটু বাইরে গিয়েছে। হসপিটালে লিয়া আর রাজিয়া সুলতানা দুজনে আছে।লিয়া দুপুরে আসছে।রাজিয়া সুলতানা করিডোরের সামনে চেয়ারে বসে আছেন ‌।লিয়া মায়ের পাশে মায়ের কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছে।রাজিয়া সুলতানা লিয়াকে বললেন,,

“লিয়া সন্ধ্যা হয়ে আসছে।যা বাসায় যা।তোর দাদিমনি রাহবার একলা আছে।তুই যা।আর এমনিতেও তোকে বাসায় যেতে হবে।কালকে তোর পরিক্ষা।তাই এখন ড্রাইভারের জন্য বসে না থেকে রিকশা নিয়ে বাসায় চলে যা।”

লিয়া মৃদুস্বরে বললো,,”একটু পরে যাই।ভালো লাগছিলো না বাসায়।”

রাজিয়া সুলতানা ফের বললেন,,”আরেকটু দেরি করলে সন্ধ্যা হয়ে যাবে তো।তখন একা একা কিকরে যাবি? তার থেকে এখনই চলে যা কেমন।”

লিয়া মায়ের কাঁধ থেকে মাথাটা তুলে বাম সাইডে তাকাতেই দেখতে পায় জারিফ আর তাসনিম পাশাপাশি হেঁটে কিছু বলতে বলতে আসছে। তাসনিম আর জারিফকে পাশাপাশি দেখে লিয়ার মনের ভেতর কালবৈশাখীর ঝড় শুরু হয়। মূহুর্তেই মনটা বিষাদে ছেয়ে যায়।লিয়া তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে মনেমনে আওড়ায়, উফ্ফ!আপুর সাথে উনার কন্টাক্ট হয়। তারমানে উনি এখনো আপুকে চায়।”

চলবে,,,
(সামনে রোমান্টিক পর্ব থাকবে। বেশি বেশি রেসপন্স করবেন। রেসপন্স না করলে রোমান্টিক পর্ব দিমুনা,হু। নিরামিষ মিলমিশ দিয়ে শেষ করে দিমুনি, হুম।যাইহোক, তাড়াতাড়ি রিচেইক দিয়েছি ভুল থাকতে পারে।ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।হ্যাপি রিডিং।)

#কালেক্ট_গল্প_কথা
Story Link-গল্পের লিংক (রিভিউ+আলোচনা)💓https://facebook.com/groups/329590663119170/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here