সুখের_ঠিকানা #শারমিন_হোসেন #পর্ব২৪

0
247

#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব২৪

লিয়া নাস্তা হাতে ড্রয়িংরুমে আসলো।টি টেবিলে হাতের ট্রে টা রাখে।জারিফ লিয়াকে কিছু বলবে বলে উসখুস করছিলো।জারিফ হঠাৎ ক্ষীণ আওয়াজে বললো,,

“লিয়া।”

লিয়া জারিফের দিকে চাইলো।জারিফের মুখায়বে সিরিয়াস ভাবটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।লিয়াকে উদ্দেশ্য করে জারিফ একটু মৃদুস্বরে ফের বললো,,

“আই হেভ সিরিয়াস টক উইথ ইউ।লিয়া এটা অবশ্যই তোমার জানা জরুরী।আজকে এইসময় মূলত এইজন্যই আসা। কথাগুলো তোমাকে আর্জেন্ট বলা প্রয়োজন।”

লিয়া জারিফের দিকে কপাল কুঁচকে তাকালো। দৃষ্টি সরু করে চেয়ে অবাক হয়ে বললো,,”ওকে বলুন।”

জারিফ একটু নড়েচড়ে বসলো। আশেপাশে চাইলো। ইতস্তত কন্ঠে বললো,,”আসলে এখানে নয়।একটু নিরিবিলি স্পেস প্রয়োজন।”

লিয়ার বিস্ময়বোধ বাড়লো বই কমলো না।তবে লিয়া ভাবে জারিফ হয়তো সিরিয়াস কিছুই বলবে। অহেতুক কিছুর জন্য এভাবে অন্তত বলতো না।লিয়া জারিফের ইতস্তত বোধটা আন্দাজ করতে পেরে বললো,,”ঠিক আছে। নাস্তা করুন।তারপর ছাদে যাওয়া যাবে।”

জারিফ হালকা কিছু নাস্তা করলো।লিয়া কাজের মেয়েটাকে ডেকে বললো,,”এগুলো এখান থেকে নিয়ে যাও।আর আমরা একটু ছাঁদ থেকে ঘুরে আসছি। আম্মু জিগ্গেস করলে বলো ছাদে আছি,কেমন?”

কাজের মেয়েটা দুদিকে মাথা নাড়ালো আর বললো,,”আইচ্ছা আপামনি।”

পড়ন্ত বিকেল। ঝলমল করছে আকাশ।নীল আকাশের বুকে পেঁজা পেঁজা তুলোর ন্যায় সাদা মেঘ উড়াউড়ি করছে।হালকা বাতাস বইছে।ছাদের রেলিং ঘেঁষে লিয়া আর জারিফ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে।নাতাশা একটু দূরে পাকা করা বসার জায়গায় বসে ফোনে এন্জেলা গেইম খেলছে।জারিফ হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বললো,,
“তুমি নাতাশার মিস সুমিকে তো চেনো?”

লিয়া তড়িৎ ঘাড় নাড়িয়ে বললো,,”সুমি আপু। ফিজিক্স প্রাইভেট টিচারের মেয়ে সুমি আপুর কথা বলছেন।রাইট?”

জারিফ ছোট করে বললো,,”হ্যা।”

“চিনিতো। স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে গিয়েই অনেকবার কথা হয়েছিলো সুমি আপুর সাথে।”

একনাগাড়ে এতটুকু বলে কিছু মনে হতেই লিয়ার নিটোল কপালে ভাঁজের সৃষ্টি হয়।লিয়া ভাবে,বললো সিরিয়াস কিছু বলবে। এরমধ্যে আবার হুট করে সুমি আপুর কথা বলছে কেনো? অদ্ভুত!জারিফ দুইহাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে মাথাটা কিঞ্চিৎ নুইয়ে দাঁড়ালো। অপরাধীর স্বরে বললো,,”লিয়া তোমার নিশ্চয় এবছরের পহেলা ফাগুনের কথা মনে আছে।নাতাশাকে কেন্দ্র করে তোমার সাথে আমার একটা ভুলবোঝাবুঝি হয়েছিলো।তোমার নিশ্চয় মনে আছে।”

লিয়া তড়িৎ জারিফের মুখপানে চাইলো।লিয়া ভ্রু যুগল কুঁচকে ফেলে।জারিফের মুখে আজ ভুলবোঝাবুঝি শুনে লিয়ার বিস্ময় প্রকাশ পায়।আর এতদিন পর আজ হঠাৎ এসবই বা কেনো বলছে তা লিয়ার বোধগম্য হলো না।জারিফ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।লিয়ার মুখপানে সুগভীর শান্ত নজরে তাকিয়ে কন্ঠে অপরাধ বোধ নিয়ে ঠোঁট আওড়ায়,,

“আ’ম সরি।সেদিন আমি রং ছিলাম।আর সত্যিটা না জেনেই তোমাকে অনেক কিছু বলে ফেলেছিলাম।জানি এখন হয়তো আমার সরি-টা গ্রান্ড হবে না। তারপরেও বলবো,আ’ম রিয়েলি সরি। এবং আমি অনুতপ্ত ।”

লিয়া বিস্ময়কর চাহনিতে চেয়ে প্রশ্ন করে উঠলো,,
“আমি বুঝতে পারছি না।একটু ক্লিয়ার করে বলবেন প্লিজ।আর এতদিন পর এমন কি হলো যে,আপনি আপনার ভুলটা বুঝতে পারলেন।”

জারিফ বললো,,”সুমির আজকে বিয়ে জানো কি?”

লিয়া ঠোঁট উল্টে বললো,,”নাহ্।আর আমার জানার কথাও নয়।কারন সেই পহেলা ফাল্গুন থেকে আমি আর ফিজিক্স প্রাইভেট পড়তে ঐ স্যারের কাছে যাইনি। বলতে পারেন আপনার জন্যই যাইনি।সেদিন প্রচন্ড রাগ ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিলো আমার।আমি মনেমনে পণ করেছিলাম আপনার সাথে যেনো আর কখনো দেখা না হয়। সেইজন্য রা’গ করে ঐ প্রাইভেটে যাওয়া বাদ দিয়েছিলাম।”

একটু থেমে লিয়া হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফের মৃদু কন্ঠে বললো,,”তবুও সেই আপনার সাথে আমার ফের দেখা হলো।আর সেটা হলো বড় বোনের পাত্র হিসেবে।আপনাকে সেদিন দাদুবাড়িতে আপুর পাত্র হিসেবে দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম।”

এতটুকু বলে লিয়া থেমে যায়।মলিন হেসে বললো,,
“যাকগে সেসব বাদ দেন। বাই দ্যা ওয়ে।সুমির বিয়ে তাতে আপনার প্রবলেম টা কোথায়? বুঝলাম না।বাই এনি চান্স আপনি কি সুমিকে লাইক টাইক করেন।তাই সুমি আপুর বিয়েতে আপনার কষ্ট হচ্ছে।আর কষ্টের কথা শেয়ার করার মানুষ খুঁজে পাননি। অবশেষে আমার কাছে আসছেন শেয়ার করতে।এই আপনার সিরিয়াস কথা।”

লিয়া কপালে একহাত রেখে শেষের কথাটা বললো।জারিফ কটমট চোখে লিয়ার দিকে তাকালো।জারিফের মুখে স্পষ্ট রাগি ভাব ফুটে আছে।লিয়া জারিফের রাগি দৃষ্টি দেখেই ভড়কে যায়।শুকনো ঢোক গিলতে থাকে।জোর করে হাসার চেষ্টা করে।জারিফ দাঁতে দাঁত পিষে বললো,,

“তুমি না জেনেশুনে ফা’ল’তু এতো বকবক কেনো করো বলোতো?আর কোনো কথা ফিনিশিং করতে না দিয়ে একনাগাড়ে গড়গড় করে বলতেই থাকো।”

লিয়া বোকাবোকা চোখে তাকিয়ে একহাতে মাথা চুলকে নিয়ে ঠোঁট আওড়ায়,,”সরি।”

জারিফ লম্বা শ্বাস টেনে নিলো।ফের বলতে লাগলো,,
“গত শুক্রবার হঠাৎ করে সুমি আমাকে কল করে দেখা করার কথা বলে।একটা রেস্টুরেন্ট দেখা করার কথা বলে।আমি ফোনে বলতে বললেও সুমি আপত্তি করে বলে, সামনা-সামনি বলা নাকি জরুরী।তো আমি সুমির সাথে দেখা করতে যাই। সুমি সরাসরি বলে উঠে,অনেকদিন আগে থেকেই ও নাকি আমাকে পছন্দ করে। নাতাশাকে নিয়ে আসা -যাওয়া এভাবে আমাকে দেখতে দেখতে নাকি ও আমার উপর দূর্বলতা ফিল করে।এরকম আরো হেনতেন কথা বললো।এতে আমি অবাক হইনি।কারন একজনের ভালো লাগতেই পারে।সেটা একান্তই তার ব্যাপার।তবে মোদ্দাকথা হলো সুমি শেষে যা বললো তা শুনে আমি হতভম্ব হই।সুমির লাস্ট কথা ছিলো,, পহেলা ফাগুনে নাতাশার মাধ্যমে আপনাকে লাভ লেটার দিয়েছিলাম আজও তার উত্তর পাইনি।আর মেয়ে তো মুখফুটে বলতেও পারিনি। লজ্জা জড়তা কাজ করে। কিন্তু শেষমেষ না বলে থাকতে পারলাম না।আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।সামনের শুক্রবার বিয়ে।তবে আমি এই বিয়ে করতে চাইনা। সেদিন চিঠির উত্তর দেননি তবে রিয়াক্টও তো করেননি।আমি আপনার চুপচাপ থাকাকে এতদিন মনঃসম্মতি বলে কল্পনা করতাম।তবে আজ আর কল্পনা নয়। সরাসরি আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই।আপনি পাশে থাকলে এই বিয়ে উপেক্ষা করে আমি আপনার হাতে হাত রাখতে চাই।”

লিয়া বড়বড় চোখ করে জারিফের দিকে তাকিয়ে আছে।সেদিনের দোষকারী সুমি এতে লিয়ার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ হচ্ছে না।লিয়ার তো জানতে ইচ্ছে করছে।জারিফ সুমিকে জবাবে কি বলেছে?লিয়ার পেটের মধ্যে এই একটা প্রশ্ন গুড়গুড় করছে।তবে বলার সাহস পাচ্ছে না। আবার যদি ধমক লাগিয়ে দেয়।কথার মাঝে কথা বলায়।তাই অনেক কষ্টে লিয়া নিশ্চুপ রয়।জারিফ বলতে থাকে,,

“আমি আবার সুমিকে জিগ্গেস করি ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে নাতাশার কাছে লাভ লেটার আপনি দিয়ে ওকে আমার কাছে দিতে বলেছিলেন।সুমি হ্যা বলে।”

একটু থেমে জারিফ চোখ বন্ধ করে ছোট করে শ্বাস টেনে নেয়। অপরাধ বোধ নিয়ে ঠোঁট আওড়িয়ে ফের বললো,,”সরি লিয়া দোষটা সুমির ছিলো আর আমি তোমার কথা বিশ্বাস না করে তোমাকে অনেক কিছুই বলেছিলাম।”

পহেলা ফাল্গুন সেদিন যা ঘটেছিল,,
রোজকার মতো জারিফ নাতাশাকে মিসের বাসা থেকে আনতে যায়।জারিফ গেইটের সামনে গাড়ি রেখে ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তার ওপাশে চলে যায়।এমন সময় লিয়া আর রুপন্তীকে প্রাইভেট পড়তে আসতে দেখে।লিয়ার হাতে টকটকে একটা লাল গোলাপ।যেটা আসার সময় রুপন্তী দিয়ে বলেছিলো, ভালোবাসা দিবসে সব বফ গফকে আর গফ বফকে ফুল দেয়।আমার তো কোনো বফ নেই।আর আমার বাগানে ফুটে থাকা টকটকে লাল গোলাপ টা দেখে ভাবলাম আমার বেস্টুকে দেওয়া যাবে।তাই তুলে আনলাম তোর জন্য। রুপন্তী এই বলে লিয়াকে ফুলটা দেয়।লিয়া ফুলের ঘ্রাণ নিতে নিতে পথ দিয়ে আসছিলো।জারিফ ফোনে কথা বলছিলো স্পষ্ট এটা দেখতে পায়।এদিকে নাতাশা মিসের সাথে গেইটে আসে।সুমি নাতাশার হাতে একটা সুন্দর ডিজাইন করা লাভ লেটার দেয়।আর বলে,ঐযে তোমার মামা ফোনে কথা বলছে।এটা গিয়ে তোমার মামাকে দিবে কেমন।নাতাশা ঘাড় নাড়িয়ে ঠিক আছে বলে।সুমি নাতাশাকে বায় জানিয়ে বাসার ভিতরে চলে যায়। সাহস করে প্রেমপত্র দিলেও ভিতরে ভিতরে সুমির লজ্জা লাগছিলো।তাই দ্রুত ভিতরে চলে যায়।লিয়া আর রুপন্তী গেইটের কাছাকাছি আসতেই নাতাশাকে দেখতে পায়। নাতাশার সাথে লিয়া কথাবলে।নাতাশা লিয়াকে মিষ্টি আন্টি বলে ডাকে আর অনেক পছন্দ করে।লিয়া হাতে থাকা ফুলটা নাতাশাকে দিয়ে বলে,কিউটি পাই এটা তোমার কেমন।নাতাশা হাসিমুখে নেয়।তারপর নাতাশা রাস্তা পার হয়ে জারিফের কাছে যাবে বলে ঠিক করে।নাতাশা এক ছুটে দৌড় দেয়।এমন সময় একটা কার আসতে থাকে।লিয়া নাতাশাকে দেখেই জোরে নাতাশা বলে চিৎকার দেয়।জারিফ চিৎকার শুনে ঘাড় ঘুরাতেই যা দেখলো তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। জারিফ ছুটে আসতে থাকে।কারের চালক নিজে রিস্ক নিয়ে কার ব্রেক করে।নাতাশা ভয় পেয়ে রাস্তায় হাঁটু গেড়ে পড়ে যায়।জারিফ দৌড়ে এসে নাতাশাকে বুকে জড়িয়ে নেয়।জারিফের সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে থাকে।লিয়াও এগিয়ে আসে।এদিকে নাতাশার তেমন কোনো ক্ষতি হয়না পড়ে যাওয়ার ফলে হাঁটু একটু ছিলে যায়।আর কারের চালক কে দেখে জারিফ অবাক হয়। ডক্টর আলিফ ছিলেন গাড়িতে।সেই থেকে আলিফের প্রতি জারিফের রেসপেক্ট আকাশসম হয়।একে তো আগে থেকেই ট্রিটমেন্টের সূত্রে আলিফ চেনাজানা আছে।আবার নিজে রিস্ক নিয়ে নাতাশাকে বাঁচায়।এতে আলিফের প্রতি জারিফের কৃতজ্ঞতাবোধ সর্বোচ্চ হয়।আলিফের কপালে হালকা আঘাত লাগে।আলিফের জায়গায় অন্যকেউ হলে হয়তো এতটা মানবতা দেখাতো না।আর ঘটতো বড় একটা দূর্ঘটনা।অকালে ঝরে যেতো একটা নিষ্পাপ প্রাণ।এই পর্যন্ত সব কিছু ঠিকই ছিলো।জারিফ নাতাশাকে যখনই জিগ্গেস করলো তখনই বিপত্তি ঘটলো।জারিফ নাতাশাকে এভাবে ছুটে আসার কারন শুধাতেই নাতাশা হাতের দিকে দেখিয়ে বললো,, তোমাকে এটা দিতে আসছিলাম।জারিফের নজর টকটকে গোলাপের দিকে যায়। অতঃপর কার্ডের দিকে।কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখে একটা লাভ লেটার।জারিফ লিয়ার দিকে একনজর চাইলো অতঃপর নাতাশাকে প্রশ্ন করলো,এই ফুল তোমাকে কে দিয়েছে?নাতাশা লিয়ার কথা বললো। জারিফ ভাবে ফুল সমেত লাভলেটার লিয়া দিয়েছে।মূহুর্তেই জারিফের কপালের রগগুলো ফুলে যায়।জারিফ নাতাশাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে আসে। অতঃপর লিয়াকে ডেকে বলে,তোমার কোনো শিক্ষাদীক্ষা নেই। এইটুকু বাচ্চা মেয়ের কাছে কেউ এসব পাঠায়।লিয়া অবাক হয়ে বলে আমি এসব দেইনি।জারিফ পাল্টা বলে স্পষ্ট ফুলটা তোমার হাতে দেখেছিলাম।লিয়া বারবার বলতে থাকে ফুলটা দিলেও কার্ডটা দেইনি। দুর্ভাগ্য বশত কার্ডে নাম লেখা ছিলো না। এমনি সুন্দর করে মিষ্টি মিষ্টি প্রেমের প্রোপোজাল ছিলো।আরেকটু হলে নাতাশা এতক্ষণ হসপিটালে থাকতো।আর নয়তো বেচেই থাকতো না। এটা ভাবতেই জারিফের লিয়াকে দোষী মনে হচ্ছিলো।জারিফ লিয়ার কথা বিশ্বাস না করে কড়া করে লিয়াকে অনেক কিছুই বলে ফেলে।নাতাশার চিন্তায় জারিফের মস্তিষ্ক কেমন জানি ওলটপালট হয়ে যায়। ঠান্ডা মাথায় না ভেবে রিয়াক্ট করে বসে জারিফ।
.
জারিফ বললো,,”তোমার থেকে সরি বলবো।সবটা তোমাকে জানাবো গত সপ্তাহেই ভেবেছিলাম। এরমধ্যে পরেরদিনই আঙ্কেলের অসুস্থতার খবর শুনি।তাই একয়দিনে জানানো হয়নি।”

লিয়া নিজেকে দমিয়ে রাখতে না পেরে প্রশ্ন করে উঠলো,,”তা সুমি আপুকে কি উত্তর দিয়ছিলেন?”

জারিফ স্পষ্টভাবে বললো,,”সুমি মেয়ে না হয়ে ছেলে হলে সজোড়ে দুইগালে দুইটা চ’ড় পড়তো।তবে মেয়ে বলে বেঁচে গেলো। একজন টিচার হয়ে কিনা ছোট বাচ্চা মেয়েকে দিয়ে এসব পাঠায়।আর সেদিন যদি নাতাশার কিছু হয়েই যেতো তাহলে কিহতো? উফ্!”

লিয়া ফের বললো,,”সঠিক উত্তর টা এখনো পেলাম না।”

“সুমিকে বলে দিয়েছি আমি অলরেডি ম্যারিড।বিয়েটা করে নিন এটাই আপনার জন্য বেটার হবে।”

উফ্!লিয়া এতক্ষণে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।জারিফ লিয়ার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,,”লিয়া আমি অনেক ভেবেছি। অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আমি আমাদের সম্পর্কটা আগাতে চাই।তোমার আর আমার সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে চাই।লিয়া তুমি ভেবো না সুমির সত্যিটা জানার পর থেকে এটা ভেবেছি।রুপমের বিয়ে থেকে বাসায় গিয়ে তারপর থেকে আমি তোমাকে নিয়ে অনেক চিন্তা করেছি। রোহান যখন আমার সামনে তোমাকে ভালো লাগার কথা বলতো।আমার প্রচন্ড রাগ হতো।তারপর যখন বললো,তোমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে।তখন নিজেকে কাপুরুষ মনে হলো।বিয়েটা যেভাবেই হোক না কেনো তুমি আমার বউ।আর আমার সামনে অন্যকেউ তোমাকে ভালোলাগার কথা বলছে,ইভেন প্রস্তাব নিয়ে যাবে এসব কিছু আমার ইগোতে লাগে। ছোট্ট একটা জীবন হেলায় ফেলায় ন’ষ্ট না করে সুন্দর করে সাজিয়ে নেওয়াই বেটার।আর প্রথম দিকে এই বিয়েটার জন্য তোমাকে দায়ী করার জন্যও সরি।সেদিন এমনভাবে ঘটনাটা ঘটলো।আমি সহজেই মেনে নিতে পারছিলাম না। আর তাৎক্ষনিক ভাবে মেনে নেওয়া এতটা সহজও ছিলো না।যা কিছু হয়েছিলো না তোমার কোনো হাত ছিলো না আমার।হয়তো তুমি আমার ভাগ্যে ছিলে। আমি এই নিয়ে এই কয়দিনে অনেক ভেবেছি।শেষমেষ নিজেকে স্থির করেছি, তোমার আর আমার সম্পর্কটা আর সবার মতো স্বাভাবিক করবো। লোহা ফেলে রাখলে যেমন ঝং ধরে ঠিক তেমনি অবহেলায় অযত্নে সম্পর্ক ন’ষ্ট হয়ে যায়। একটা সম্পর্ক ঠিকঠাক রাখতে দু’জনের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি আমার দিক হতে সর্বোচ্চ ট্রায় করবো।লিয়া তুমি আমাকে বিশ্বাস করে দেখতে পারো।আর আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।তুমি কি চাও? আমাদের সম্পর্কটা আগাতে চাও কি চাওনা?”

লিয়া নিশ্চুপ থাকে।লিয়াকে নিশ্চুপ দেখে জারিফ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে। চোখেমুখে একরাশ আশা নিয়ে ফের বললো,,”নিরবতা সম্মতির লক্ষণ।তবে কি আমি তোমার নিরাবতাকে সম্মতি ধরে নিবো?”

লিয়া মৃদু হাসলো। নরমস্বরে বললো,,”বিয়ে, সংসার নিয়ে প্রত্যেকটা মেয়েরই রঙিন স্বপ্ন থাকে।আমি তাদের ব্যতিক্রম নই। স্বামী সংসার নিয়ে একটা সুখের ঠিকানা হবে এমন স্বপ্ন বুনেছি।আর বিয়েটা যেভাবেই হোকনা কেনো আপনাকে আমি মন থেকে স্বামী হিসেবে মানি।আর আপনাকে আমার সুখের ঠিকানার কারিগর ভাবী।”

লিয়ার কথাশুনে জারিফ সন্তুষ্ট হয়।জারিফ বিনিময়ে চমৎকার হাসে।এমন সময় ছাদে সেদিনের আন্টি আসতে থাকে।জারিফ একনজর দেখেই মাঝ বয়সী মহিলাকে চিনে ফেলে।লিয়ার সেদিনের কথার শোধ তুলতে জারিফ হুট করে নাতাশাকে ডেকে বলে উঠলো,,
“নাতাশা তুমি ওখানে না থেকে এখানে আসো।নাতাশা তোমার মামীর কাছে আসো।আর কিছুক্ষণ পর তো আমরা চলে যাবো।তাই বাকি সময়টা তোমার মামীর সাথে কাটিয়ে নাও।”

জারিফ কথাগুলো একটু জোরেশোরে বলছিলো।মহিলা কপাল কুঁচকে লিয়া আর জারিফের দিকে চাইলো।লিয়াকে মামী বলছে শুনে মহিলার কৌতুহল বাড়তে থাকে। ভদ্রমহিলা মনেমনে আওড়ায়,লিয়া তো অবিবাহিত আর ছেলেটা বাচ্চা মেয়েটাকে তোমার মামী মামী বলছে কেনো?আর বাচ্চাটার মামা এই সুদর্শন ছেলেটা।তবে কি?উনি প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য ছাদে না থেকে নিচে নামতে থাকেন।লিয়া এতক্ষণ তাকিয়ে জারিফের কাজ দেখছিলো।লিয়া ঠোঁট চেপে বললো,,

“নাতাশার মামা নিজেকে খুব চালাক ভাবেন।তাইনা? আমি ঠিক ধরেছি। আন্টিকে জানান দিলেন এই জোরে জোরে তোমার মামী মামী বলে।”

লিয়ার কপালের উপর ছোটোছোট কিছু চুল ছিলো।জারিফ ঠোঁট গোল করে ফু দিয়ে সরিয়ে দেয়।লিয়া তড়িৎ আঁখিযুগল বন্ধ করে নেয়।জারিফ চমকপ্রদভাবে বললো,,”নাতাশার মামী কি নিজেকেই শুধু চালাক ভাবে?এটা ভেবে থাকলে ভুল।”

ভদ্রমহিলা নিচে নামতেই রাহবারের সাথে দেখা হলো। ভদ্রমহিলা কিওরিওসিটি আর আটকে রাখতে না পেরে জিগ্গেস করলো,,”লিয়ার সাথে ফর্সা উঁচু লম্বা দেখতে ছেলেটা কে?”

“কে জারিফ ভাইয়া? আন্টি জারিফ ভাইয়ার কথা বলছেন।”

মহিলার এবার রা’গ হলো। ভাই-বোন সমান ভাইও বোনের মতো উত্তর দিচ্ছে। ভদ্রমহিলা এবার একটু কর্কশ গলায় বললেন,,”আরে তোমাদের কি হয় তাই বলো। লিয়ার সাথে এর আগেও দেখেছি আজও দেখলাম।কি হয় তোমাদের?”

“আপুর বর।”

কথাটা বলেই রাহবার হনহন করে ভিতরে চলে যায়।মহিলা বড়বড় চোখ করে ভাবে,বর বিয়ে হলো কবে?তবে এমন কিছু হবে আগেই ভেবেছিলাম।”

জারিফ এনামুল খাঁনের সাথে দেখ করে কুশলাদি বিনিময় করে। অতঃপর রাজিয়া সুলতানার থেকে বিদায় নিয়ে যেতে থাকে।লিয়া নিচে নামে। গাড়ি অব্দি আসে।লিয়া কিছুটা ঝুঁকে নাতাশার দুইগালে হাত রেখে বলে,,”নাতাশা সোনা আবার এসো কেমন।আর ঠিকমতো খাবার খেয়ো।তুমি তো দেখছি আগের থেকে অনেকটা শুকিয়ে গিয়েছো।গুড গার্লের মতো নানুমনির কথা শুনবে হ্যা।”

নাতাশা ঘাড় নাড়ায়। তড়িৎ চঞ্চল কন্ঠে বলে উঠলো,,
“শুনিতো।আমি তো গুড গার্ল ।সবার কথা শুনি হ্যা।”

লিয়া নিঃশব্দে হাসলো।নাতাশার দুইগালে চুমো খেলো।জারিফ গাড়ির ডোর খুলতেই লিয়া সুন্দর করে নাতাশাকে বসিয়ে দিলো।জারিফ ডোর লকড করলো।পাশে দাঁড়ানো লিয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু আওয়াজে বললো,,”নাতাশার মামী বিদায় নাতাশা একা নিচ্ছে না আরেকজনও কিন্তু নিচ্ছে। তুমি চাইলে তাকেও এভাবে টুপ করে চুমু দিয়ে বিদায় দিতে পারো।আমি অবশ্য এতে মাইন্ড করবো না।”

চলবে,,,

(আপনারা অনেকে হয়তো ভুলে গিয়েছেন, প্রথম পর্বে ছিলো জারিফ লিয়ার মাঝে কোনো একটা ভুলবোঝাবুঝি আছে তা লিয়ার কথায় স্পষ্ট ছিলো।আর জারিফ বলছিলো,মানছি আমি নাতাশার ব্যাপারে পজেসিভ।তাইবলে মেয়েটাকে ওভাবে বলা ঠিক হয়নি।এরমানে,নাতাশাকে নিয়েই এই ভুলবোঝাবুঝি হয়েছিলো।ঈদের গিফট হিসেবে বোনাস পর্ব দিলাম। রিটার্ন গিফট হিসেবে ভালোমন্দ বড়বড় কমেন্ট চাই)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here