সুখের_ঠিকানা #শারমিন_হোসেন #পর্ব৩১

0
250

#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব৩১

বিয়ে বাড়ি চারিদিকে লোকসমাগম সাথে হইহুল্লোড়।বর এসেছে শুনে অনেকে তো উৎসুক হয়ে গেইটে দেখতে গিয়েছে।বাড়ির বাচ্চা পার্টিরা গেইট ধরবে বলে মুখিয়ে ছিলো।গেইটে নাস্তার জন্য রাখা ট্রে গুলো একএক জনের হাতে।লিয়ার হাতে শরবতের ট্রে।ভিড়ের মধ্যে দিয়ে লিয়া সবার পেছনে ধীর পায়ে হেটে যাচ্ছে। লিয়ার মনে হচ্ছে জোরে হাঁটলেই গ্লাসে থাকা শরবত উপচে পড়বে। বিশালাকার গেইট বিভিন্ন রঙের মরিচবাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে।লাল শেরওয়ানি আলিফের সুঠাম ফর্সা দেহে দারুণ মানিয়েছে ।মাথায় পাগড়ি।এককথায় বর বেশে আলিফকে খুব আকর্ষণীয় লাগছে।তুলি আরো কয়েকটা কাজিন মেয়েরা হাতের ট্রে গুলো সুন্দর করে ডেকোরেট করা টেবিলের উপর রাখলো।সাথে বড় করে একটা সালাম দিলো।সবার ভিড় ঠেলে লিয়া টেবিলের কাছাকাছি আসতে থাকে। প্রথমে শেরওয়ানি পড়া আলিফকে একনজর দেখে নেয়।হালকা ভলিউমে মিউজিক চলছে।

“তেরে ঘার আয়া ম্যা আয়া তুজকো লেনে…দিলকে বাদলেমে দিল কা নাজরানা দেনে…

লিয়া শরবতের ট্রে টা টেবিলে নামাবে এমন সময় সামনে তাকাতেই লিয়ার দৃষ্টি থমকে যায়। স্কাই কালারের শার্ট, ব্লাক কালারের প্যান্ট ইন করে পড়া। শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো। ফর্সা হাতে কালো কালারের ব্রান্ডেড ঘড়িটা খুবই আকর্ষণীয় লাগছে।চোখে কালো সানগ্লাস।হাতে থাকা ফোনটা পকেটে পুরতে পুরতে গেইট বরাবর এগিয়ে আসছে জারিফ। স্লিকি স্ট্রেইট চুলগুলো পরিপাটি করা।জারিফকে খুব হ্যান্ডসাম লাগছে।লিয়া জারিফের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।লিয়া অবাক চাহনিতে চেয়ে হাতের ট্রে টা ওভাবেই ধরে আছে ।তুলির খোঁচাতে লিয়ার হুঁশ ফেরে।তুলি খোঁচা দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

“কি হলো?এভাবে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে থাকবি? শরবত রেখে কথা বল।আর মনে আছে তো কত টাকা দাবি করতে বলেছি?”

তুলির কথাশুনে লিয়া তড়িৎ নিজেকে ধাতস্থ করে।শরবতের ট্রে টেবিলের উপর নামিয়ে রাখলো।তুলির কথায় লিয়ার কোনো ভাবান্তর নেই।লিয়ার মনে এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, কি দরকার ছিলো শুধু শুধু নাটক করে মিছেমিছি আসব না হেনতেন বলার।সেই তো আসলো।লিয়ার ভাবনার মাঝেই জারিফ এসে আলিফের পাশে দাঁড়ায়।জারিফকে বরযাত্রীর সাথে এভাবে দেখে লিয়ার কপালে প্রগাঢ় ভাঁজ পড়ে।লিয়া কপাল কুঁচকে মুখটা কিঞ্চিৎ তুলে জারিফের দিকে চাইলো।জারিফ একহাতে সানগ্লাস টা খুলে লিয়ার মুখশ্রীতে স্থির সুগভীর নজরে চাইলো।লিয়ার দিকে শীতল চাহনিতে চেয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে মিটমিট করে হাসছে।তুলিও জারিফকে এখানে দেখে খানিকটা অবাক হয়।তবে সেটা সবার সামনে প্রকাশ না করে নিশ্চুপ রইলো। কিয়ৎক্ষন পর লিয়ার কানের পাশে মুখটা নিয়ে তুলি ফিসফিস করে বলল,

“এই লিয়া ব্যাপার কিরে?এ বাড়ির দুই জামাই একসাথে আসলো যে।আপুর সাথে তোরও আজ বিদায় নাকি? জারিফ ভাইয়া বর পক্ষের সাথে কেনো?”

লিয়া তুলির দিকে চাইলো।ক্ষীন আওয়াজে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”জানিনা আমি।আমাকে এসব জিজ্ঞেস না করে,যাকে নিয়ে তোর প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে।তুই বরং সরাসরি তাকেই জিজ্ঞেস কর।”

তুলি মৃদু আওয়াজে বলল,”এখন নয়।পরে শোনা যাবে। আগে তো বর পক্ষের থেকে টাকাটা উসুল করে নেই।”

আলিফ আর জারিফ দুজনে ফিসফিসিয়ে কিছু বলছে। লিয়া কানটা খাঁড়া করে শুনতে চাইলো।তবে ব্যর্থ হলো। শুধু ঠোঁট নড়াই দেখা গেলো।এছাড়া কিছুই শোনা সম্ভব হলোনা।আলিফ জারিফের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে।তা দেখে জারিফ ভ্রু বাঁকিয়ে ইশারায় বোঝায় “কোনো প্রবলেম?”আলিফ টিস্যু দিয়ে মুখটা মুছতে থাকে। সবার নজর এড়াতে মুখ মোছার ভঙ্গিমা করে একদম ক্ষীণ স্বরে বলল,”জারিফ সাহেব। প্রচন্ড গরম লাগছে। দ্রুত এদের দাবিদাবা মেনে নিয়ে ভেতরে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন।যা টাকা লাগে দিবো প্রবলেম নেই।”

জারিফ মৃদু হাসলো।চোখ দিয়ে ইশারা করে আশ্বাস দেয়।তবে জারিফের মনের ভেতর অন্যকিছু চলছে।সামনে দাঁড়ানো তার পিচ্চি বউটাকে একটু জ্বালাতে ইচ্ছে করছিলো।জারিফ অস্পষ্ট স্বরে বলল,”ভাই কিছু মনে না করলে,বলতে চাচ্ছি গেইটের টাকা টা আমি বেয়ার করি।না মানে বিয়েতে আমার পক্ষ থেকে সামান্য গিফট হিসেবে। প্লিজ বেয়াদবি নিবেন না।এমনিতেও তো ফ্রেন্ডরা বিয়েশাদীতে এসব ব্যাপারে কন্ট্রিবিউট করে থাকে।আপনি পারমিশন দিলে ফ্রেন্ড হিসেবে আমার পক্ষ থেকে সামান্য গিফট হিসেবে দিতে চাই।”

জারিফের ভদ্র নম্র স্বরে সাবলীল মার্জিত ভাষায় বলা আবদারটা আলিফ ফেলতে পারলো না।তাই চোখের পলক ফেলে ইশারায় হ্যা সম্মতি দেয়।জারিফ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানায় আলিফকে। এরমধ্যে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তুলি হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বলতে শুরু করে,”ঠান্ডা ঠান্ডা শরবত পান করে মন মেজাজ ফুরফুরে করুন।সাথে মস্তিষ্কটাকে কুল রাখুন।আর আমাদের ছোট্ট আবদার টা পূরণ করে বউ নিতে ভেতরে আসুন।”

কথাটা বলে তুলি দুইহাত বুকে গুঁজে স্ট্রেইট দাঁড়ালো। তুলি কথাগুলো বলায় জারিফ প্রতিত্তোরে কিছু বলতে ইতস্তত বোধ করছে। যেহেতু তুলি লিয়ার বড়। অল্প কয়েকমাসের ব্যবধান হলেও সম্মানে বড় তো।জারিফ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল।তবে নিজের মনকে বুঝ দিলো এখন বর পক্ষের সাথে যেহেতু এসেছে।তাই মাইন্ড টাকে সেদিকে রাখতে হবে।লিয়ার চোখে চোখ রাখল জারিফ। স্বাভাবিকভাবে স্পষ্ট গলায় বলল,”মেজাজ এখন একটু বেশিই ফুরফুরে আছে।সো প্রবলেম নেই।আপনারা আবদারটা করে ফেলুন।”

তুলি ভণিতা করে ঠোঁট চেপে বলল,”আগে শরবত পান করুন।না হলে শরবত আবার রা’গ করবে।বরপক্ষ তাকে ছুঁয়েও দেখলো না বলে।”

জারিফ একশব্দে বলল,”শিয়র।”

তুলি প্রথমে আলিফের দিকে একটা গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”জিজু নিন।”

আলিফ গ্লাসটা হাতে নিলেও খেতে ইতস্তত করে।কারন ফ্রেন্ডরা বলেছে,বিয়ের গেইটে যেসব নাস্তা,শরবত দেওয়া হয় তাতে ঝামেলা থাকে। ফাজলামো করে এটাসেটা মেশানো থাকে।তাই না খেয়ে হাতে ধরে রাখে।আলিফের বিষয়টা তুলি আন্দাজ করতে পেরে বলল,”চিন্তার কোনো কারন নেই জিজু।আপনি যা ভাবছেন তেমন কিছুই নেই।আপনার দুই শালিকার মন খুবই সফট।এই গরমে উল্টাপাল্টা কিছু করে আপনাদের হয়রানি করবে না।এতটা বিশ্বাস রাখতেই পারেন।”

আলিফ আলতোকরে গ্লাসে ঠোঁট ডুবিয়ে একটু টেস্ট করলো। নাহ্ ঠিকঠাকই লাগছে।আপাতত খা’রাপ কিছুর আভাস পাওয়া গেলো না।তুলি আরো কয়েকজনকে শরবত দিতে থাকে। লিয়াকে ফিসফিসিয়ে বলল,”তোর বরের টা তুই দে।”

লিয়া মুখ ভেংচি কাটলো।জারিফের উপর মৃদু রা’গ জমেছে। শুধুশুধু ফোনে সেদিন অতো নাটকীয় কথাবার্তা বলল কেনো?আসছেই যখন। উফ্!লিয়া ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে একটা গ্লাস নিয়ে জারিফের দিকে বাড়িয়ে দেয়।জারিফ সামনের দিকে আরেকটু এগিয়ে আসলো। দুইহাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে লিয়ার দিকে ঝুকলো। ফিসফিসিয়ে বলল,”হাউ ইউ লুক ভেরি চার্মিং আর!আ’ম স্টানিং টু সি ইউ।প্লিজ টু গেট দিস সিচুয়েশন মোর চার্মিং।”

লিয়া ভ্রু বাঁকিয়ে ঠোঁট টিপে বলল,”ওকে ওকে।আ’ম বি কামিং ভেরি থান্ডার বিকজ,ইউ সেইড দ্যাট ইউ হ‌্যাড বিন নট কামিং ইন দিস অকেশন।”

একটু থেমে।কিছু ভেবে লিয়া অধর প্রসারিত করে ফের আওড়ালো,”বাই দ্য ওয়ে।আপনি না ফোনে বললেন শ্বশুর বাড়ি আসতে পারবেন না।এটাসেটা কত কি বললেন।সেই তো আসলেন। শুধুশুধু এতো নাটক করার কি ছিলো আমার মাথায় ধরছে না।”

“মোটেই আমি শ্বশুর বাড়িতে আসিনি।আর না তোমার বর পরিচয়ে এসেছি।তুমি ভালো করেই জানো। ডক্টর খানের সাথে আমার আগে থেকেই পরিচয় আছে।বলা চলে ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক। ডক্টর খাঁনের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আসছি।”

জারিফের এহেন কথাশুনে লিয়া বোকা বনে যায়।লিয়া মনেমনে আওড়ায়,এতো পুরাই ঘোল খাইয়ে দিলো। ভাবলাম কড়া করে আরো কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিবো। কিন্তু উল্টো এর ভাব বেড়ে গেলো।এসব কথা মনেমনে ভেবেই মাথা ঝাড়ল লিয়া।এমন সময় তুলি কনুই দিয়ে লিয়ার বাহুতে হালকা গুঁতা দেয়।লিয়া তুলির দিকে কটমট চোখে চেয়ে ইশারা করে বোঝায়,কি হলো?”তুলি অস্পষ্ট স্বরে বলল,”তোর বরের সাথে এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করার জন্য তোকে আনিনি।আর গল্প করার হলে রুমে নিয়ে গিয়ে গল্প কর।তোদের দিকে সবাই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে কিন্তু।”

লিয়া অপ্রস্তুত হলো। তড়িৎ হাতে থাকা গ্লাসের দিকে ইশারা করে বলল,”নিন।”

জারিফ শরবতের গ্লাসের দিকে একবার তাকালো ফের লিয়ার দিকে তাকায়।একটু নড়েচড়ে সটান দাড়িয়ে ঠোঁট আওড়িয়ে বলল,”চেক করে দিলে ভালো হতো।না মানে বলা তো যায়না শরবতে চিনির বদলে সল্ট বা স্পাইচ পাউডার থাকতে পারে।”

লিয়া সরু চোখে চেয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলল,”সবাই যেখানে খাচ্ছে কোনো প্রবলেম হচ্ছে না। সেখানে আপনার এই অবিশ্বাস ব্যাপারটা বড্ড বেমানান।চেক টেক করার কিচ্ছু নেই,হু।”

জারিফ ফের শীতল শান্ত গলায় বলল,”আমি আবার কড়া মিষ্টি পছন্দ করি।একটু চেক করে দিলে ভালো হতো।শরবতটা মিষ্টি হয়েছে কিনা পানসে হয়েছে।”

লিয়া নাক মুখ কুচকালো। তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে শরবতের গ্লাসে ঠোঁট ডুবিয়ে টেস্ট করে বলল,”আমার কাছে তো মিষ্টি ঠিকই লাগছে।আপনি টেস্ট করে দেখুন।আরো মিষ্টি লাগলে চিনির বয়াম ধরে এনে দেওয়া যাবে। প্রবলেম নেই।”

লিয়ার হাতে থাকা গ্লাসে নিজের ডান হাতটা রাখলো জারিফ। ইচ্ছে করে লিয়ার আঙ্গুলে আলতোকরে চাপ দিলো।লিয়া শুকনো ঢোক গিলে নেয়।জারিফের স্পর্শে বুকের ভেতর দ্রিমদ্রিম শব্দ খেলে যায়।জারিফ গ্লাসটা নিয়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে নেয়। অতঃপর লিয়ার দিকে ঝুঁকে বিড়বিড় করে বলল,”এখন একদম পার্ফেক্ট মিষ্টি হয়েছে।তোমার মিষ্টি ঠোঁটের ছোঁয়া পেলে পানসে আর তিতা খাবারও আমার কাছে মিষ্টি লাগবে। আহ্!একদম অমৃত লাগছে।”

শেষের কথাটা বলে সবার আড়ালে চোখ টিপলো জারিফ। লিয়া জারিফের এহেন কর্মকান্ডে হকচকিয়ে উঠে।অথচ জারিফ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে আছে।ঢকঢক করে পুরো গ্লাসটা সাবাড় করে দেয় জারিফ।তুলি একহাতে স্লিকি চুলগুলো উড়িয়ে দিয়ে ভাব নিয়ে বলল,”বউ নিতে হলে গেইটে নগদ টাকা দিতে হবে।একহাতে নগদ টাকা দিবেন অন্যহাতে কেচি পাবেন।আর কেচি দিয়ে লাল ফিতা কে’টে ভেতরে যেতে পারবেন।এর আগে নয়, হুঁ।তাই বউ পেতে হলে নাজরানা হিসেবে আমাদের কে মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে হবে।”

উপস্থিত সবাই বিস্ফোরিত নয়নে তুলির দিকে চাইলো।জারিফ নির্বিকার থেকে একটু ভেবে নিলো। অতঃপর গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বলল,”অনলি ফিফটি থাউজেন্ড। আ্যমাউন্টটা একটু বেশি কম হয়ে গেলো না।”

জারিফের কথাশুনে এপাশের মেয়েরা মিটমিট করে হাসতে থাকে।আলিফের বাম সাইডে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে বয়স বড়জোড় ষোলো সতেরো হবে এমন।যেকিনা বারবার ঘাড় ঘুরিয়ে জারিফের দিকে চাইছে।মেয়েটা আলিফের রিলেটিভ এটা এতক্ষণে লিয়া আন্দাজ করতে পেরেছে।তবে মেয়েটার এভাবে তাকানোতে লিয়ার রাগ হচ্ছে।জারিফ একটু সময় নিয়ে ফের বলল,” বউ নিতে আসছে বড় ভাই। নাজরানা হিসেবে টাকা কেনো দেওয়া লাগবে?দিলের বদলে দিল নাজরানা হবে।”

জারিফের কথার মাঝেই তুলি বলল,”সে আপনাদের ভাই দিলের বদলে দিল কেনো যা খুশি তাই নাজরানা দিতেই পারে তার বউকে।তবে শালিকদেরও তো একটা ডিমান্ড আছে কি না? রোজরোজ তো আর শালিকারা এই সুযোগ পাবে না।”

লিয়া জারিফকে উদ্দেশ্য করে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলল,”এই আপনি বাগড়া দিচ্ছেন কেনো বলুন তো?টাকাটা জিজু দেবে।কোথায় জিজুকে ইন্সপায়ার করে বলবেন জলদি জলদি গেইটের ঝামেলা চুকে ফেলতে।তা না করে আরো কিপটামি বুদ্ধি শুদ্ধি দিচ্ছেন।বাই দ্য ওয়ে আপনি কি ব্রোকার হয়েছেন না-কি?”

লিয়া ভ্রু উঁচিয়ে জারিফের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।লিয়ার কথায় জারিফ ভ্যাবাচেকা খায়।জারিফ মনেমনে আওড়ায়,লে বাবা বউ তো আমাকে সরাসরি দালাল বলে ফেললো।কোথায় বর কে সম্মান দিয়ে কথা বলবে তা না করে। উফ্!জারিফ ঠোঁট গোল করে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল।সময় নিয়ে ফের বলল,”ব্রোকার না বলে হেল্পিং হ্যান্ড বলতে পারো। আলিফ ভাই তো নতুন জামাই মানুষ মনে অনেক কথা জমা হলেও লোকলজ্জার ভয়ে বলতে পারবে না।আমি না হয় ভাইয়ের পক্ষ থেকে কিছু হলেও সেসব কথা বলে দিলাম।”

লিয়া ভাব নিয়ে বলল,”তাহলে ভাইয়ের পক্ষ থেকে টাকাটাও নাহয় আপনিই দিয়ে দিন।”

“ওকে।তুমি আ্যমাউন্টটা বলো ।তুমি যে পরিমাণ বলবে।তাই দেওয়া হবে।”

জারিফের কথায় লিয়া এবার বেকায়দায় পড়ে যায়।এখন লিয়াকে আ্যমাউন্ট বলতে বললো।আর তুলি আগেই বলে রেখেছে।এখন যদি তুলির কথার বিপক্ষে গিয়ে টাকার পরিমাণ কম করে বলে,তুলি নিশ্চয় সবসময় টিপ্পনি কে’টে বেড়াবে।আবার পঞ্চাশ হাজার টাকা একটু বেশিই হয়ে যায় কিনা।লিয়া কিছু বলার আগেই তুলি বলল,”এই এই ভাইয়া একদম চালাকি করা চলবে না।লিয়া আপনার দিকে ব্যায়াস হয়ে একদম পোর আ্যমাউন্ট বলবে। আচ্ছা এতো বারগেনিং করা বাদ দিয়ে আমি বলি, চল্লিশ হাজার দেন,কেমন?”

জারিফ লিয়ার থেকে ইশারা করে।লিয়া এতে কি উত্তর দেয়।লিয়া আচমকা বলে উঠলো,”এতো দরকষাকষি বাদ দিয়ে,আমি একটা স্বাভাবিক আ্যমাউন্ট বলি।দুই দিকের ভারসাম্য বজায় রেখে আমি বলতে চাইছি,আপনি আপনার একমাসের বেতনের হাফ টাকাটা দিয়ে দিন।”

জারিফ লিয়ার দিকে তাকিয়ে চমৎকার হাসলো। মনেমনে হিসাব কষে নিলো। অতঃপর টাকা বের করে লিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,”এখানে বাইশ হাজার আটশো বিশ টাকা আছে।মাসে সর্বসাকুল্যে পাওয়া বেতনের হাফ আছে।”

তুলি দাঁত কিড়মিড় করে লিয়ার দিকে চাইলো। কাঁদো কাঁদো ফেস করে ঠোঁট চেপে বলল,”ভাইয়া খুব চিটিং হয়ে গেলো কিন্তু।বউকে দিয়ে পার পেয়ে গেলেন।”
.
খাওয়া-দাওয়া পর্ব শেষে বিয়ে পড়ানো হয়। স্টেজে আলিফ তাসনিম পাশাপাশি বসে। তাসনিমের মাথায় ঘোমটা টানা।দৃষ্টি নিচু করে আছে তাসনিম।ভারী ভারী গহনা সাথে ভারী লেহেঙ্গা পড়ে থাকায় তাসনিমের একটু বেশিই গরম লাগছে।গরমে তাসনিম হাঁসফাঁস করতে থাকে। তাসনিমকে হাঁসফাঁস করতে দেখে আলিফ তাসনিমের দিকে চেয়ে বলল,”এ্যনি প্রবলেম?”

তাসনিম আলিফের দিকে চাইলো।দুপাশে মাথা নাড়িয়ে বলল,”নাহ্।তেমন কিছু নয়।গরম লাগছে।”

আলিফ হাতে থাকা টিস্যু পেপার টা তাসনিমের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ইশারা করে মুখটা মুছতে বলে। তাসনিম স্মিত হেসে টিস্যু নিলো।হাসলে পরে তাসনিমের গালে টোল পড়ে।আলিফ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে বউ সাজে সজ্জিত নিজের ব্যক্তিগত নারীর দিকে চেয়ে রইলো।এইতো কিছুক্ষণ আগেই ধর্মীয় এবং আইননিও দুইভাবেই তাদের বিয়েটা সম্পন্ন হয়েছে।পাশে বসা রমণী আলিফের বউ, তার অর্ধাঙ্গিনী । ইশশ্!ভাবতেই আলিফের মেরুদন্ডের শির দ্বারা দিয়ে শীতল স্রোত বইয়ে যায়।আলিফ সবার আড়ালে তাসনিমের হাতের উপর নিজের হাতটা রাখলো। আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল দিয়ে হাতটা মুঠো করে ধরলো।আলিফের স্পর্শে তাসনিমের সারা শরীর জুড়ে বিদ্যুৎ খেলে যায়।দেহটা মৃদু কম্পিত হলো।আলিফ সফট ভয়েজে বলল,

“বউ সাজে তোমাকে চমৎকার লাগছে। মনে হচ্ছে আগের থেকে তোমার সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে।লাল রঙের পোশাকে তোমাকে টুকটুকে রাঙা বউ লাগছে। ডক্টর আলিফের রাঙা বউ। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রঙে রাঙানো তোমার কোমল ঠোঁটজোড়া খুবই আকর্ষণীয় লাগছে।”

থেমে আলিফ একহাত নিজের বুকের উপর রাখলো।চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টেনে নেয়।ফের নেশাক্ত কন্ঠে বলল,”বুকের ভেতর কেমন জানি মাতাল হাওয়া বইছে।তোমার দিকে তাকালেই উল্টাপাল্টা চিন্তা ভর করছে মস্তিষ্কে। নিজেকে কন্ট্রোল করাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।”

লজ্জায় তাসনিমের মুখে লাল আভা ছড়িয়ে পড়ে। তাসনিম ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে স্বাভাবিক রাখলো। দৃষ্টি নত রেখেই ক্ষীণ আওয়াজে বলল,”কুল কুল।আর জনাব,আপনি ভুলে গেলেন নাকি?আমি আপনার ছাত্রী হই। ছাত্রীকে দেখে উল্টাপাল্টা চিন্তা মাথায় আসা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়।”

“ছাত্রী থেকে সেই কবেই তো পাত্রী হয়েছো।আবার বউও হলে।এখন আমার বেবির মাম্মাম বানানোর মিশনে নামতে হবে।হেলায় ফেলায় সময় ন’ষ্ট করা আলিফ শাহরিয়ার খান কখনোই পছন্দ করে না।সব কাজে খুব সিরিয়াস আমি।আর এই মিশনের কাজটাও ফাস্ট নাইট থেকেই শুরু হবে।যদি তুমি রাজি থাকো তবেই।কি বলো রাজি আছো তো?রাজি হলে তোমারই লাভ বরের অফুরন্ত আদর পাবে।তাই দেরি না করে হ্যা সম্মতি দিয়ে ফেলো।”

আলিফ ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করে।তাসনিমের কান মূহূর্তেই উষ্ণ হয়ে যায়। দৃষ্টি নুইয়ে নেয়।ভেতরে ভেতরে লজ্জা আর অস্বস্তিতে আড়ষ্ট হয় তাসনিম।আলিফের দিকে চোখ তুলে চাইতে পারছিলো না। তাসনিম বিড়বিড় করে বলে,মানুষটা তো বড্ড বেলাজ। লাগামহীন তার কথাবার্তা।আগে তো কখনো এভাবে নিজেকে প্রেজেন্ট করেনি।নাকি প্রত্যক স্বামীই তাদের বউয়ের কাছে অসভ্য হয়? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে তাসনিম।
.
একটা টেবিলে জারিফ,নীল , লিয়ার ছোটো চাচ্চু আরো কয়েকজন বসে কথাবার্তা বলছে।লিয়ার সাথে আর কথা বলার স্কোপ পায়নি জারিফ।মনটা বারবার লিয়াকে পাশে চাইছে।তবে লিয়া থাকছে দূরে দূরে।আর এতএত লোকজনের ভীড়ে লিয়া আসবেই বা কিকরে?বড়রা আছে। আবার সবার মাঝে জারিফেরও লিয়ার পাশে গিয়ে ভালোমন্দ কথা বলতে ইতস্তত বোধ হচ্ছে।তাই চুপচাপ চেয়ারে বসে আছে।সবার সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করছে।লিয়া দূর থেকে জারিফকে দেখছে।ছোটো চাচ্চুর সাথে কথা বলছে। কথা বলছে কম তবে মনোযোগ দিয়ে শুনছে। হঠাৎ লিয়ার কাঁধে কেউ হাত রাখে।লিয়া চকিতে ঘাড় ঘুরিয়ে চাইলো।তুলিকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।লিয়া কিছু বলার আগেই তুলি আদেশের সুরে বলল,

“এই লিয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বরকে দেখা বাদ দে।তখন তো বরের প্রতি ব্যায়াস হয়ে গেইটে কম টাকা বলেছিলি।এখন গেইটের সেই টাকার পরিমাণ ঠিক করতে হবে তোকেই।তুই আলিফ ভাইয়ার জুতা লুকাবি।আর তার বদলে এখন মন মতো টাকা তুলবো।”

লিয়া মুখটা অসহায় করে বলল,”আবার এসব কেনো?বাদ দে না।”

তুলি কাঠকাঠ গলায় বলল,”উঁহু! বাদ দেওয়া যাবে না।আর এটাকে ইনজয় কর কেমন?আপুর বিয়ে তো আর ফিরে আসবে না।এইদিন তো আর পাবো না।তাই যতটুকু মজা করা যায়।করে নেই,কেমন। এছাড়া তেমন কিছুই না,ইয়ার।”

“ওকে।”

তুলি মৃদুস্বরে কোথায় লুকাতে হবে সেটা হাত দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে বলল।লিয়া ঘাড় নাড়িয়ে বুঝালো,”বুঝতে পেরেছি।” তুলি মিষ্টি নিয়ে গিয়ে সবাইকে মিষ্টি দিতে থাকে।বর বউয়ের পাশে গিয়ে মিষ্টি দিতে গিয়ে আলিফের সাথে এটাসেটা বলে আলিফকে ব্যস্ত রাখে।ওদিকে বেশি মানুষ না থাকায়।লিয়া চুপিচুপি জুতা জোড়া নিয়ে ওড়নার আড়ালে রাখলো।কেউ একজন দূর থেকে লিয়ার কারবার দেখল।লিয়া জুতা জোড়া তুলির বলা জায়গায় রেখে দুইহাত ঝেড়ে নিলো। প্রশান্তির হাসি হেসে পা বাড়াল। স্টেজের পেছনে ফাঁকা জায়গা।জায়গাটা বলা চলে পরিত্যক্ত হয়ে আছে।এদিকটায় লোকজন নেই। লিয়া ঘুরে দাঁড়ায়। প্রস্থান করার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।এমন সময় লিয়ার চুলে টান পরে।লিয়া কপাল কুঁচকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়।লিয়া থতমত খায়।জারিফ একহাতে লিয়ার চুলগুলো পেচাতে পেচাতে এক পা দু পা করে লিয়ার নিকট এগিয়ে আসতে থাকে।লিয়ার কাছাকাছি এসে হাতে পেঁচানো চুলগুলো ছেড়ে দিলো।লিয়ার পিঠজুড়ে চুলগুলো দোল খেতে থাকে।লিয়া ঘুরে জারিফের দিকে হয়ে কপাল কুঁচকে তাকায়।জারিফ লিয়ার ঘা ঘেঁষে সামনা-সামনি দাঁড়ায়।লিয়া ফাঁকা ঢোক গিলে নেয়।লিয়া কাঁপাকাপা গলায় প্রশ্ন করে উঠলো,

“ক কি ব্যাপার আপনি এখানে?”

“তার আগে বলো তুমি কি করছো এখানে?তাও একলা একলা।”

লিয়া মিনমিনে গলায় বলল,”আপনি যা করছেন আমিও তাই,হু।আপনি যেমন দাঁড়িয়ে আছেন।আমিও তেমন।এছাড়া কিছুই না,হুম।”

লিয়া ভেতরে ভেতরে টেনশনে আছে।জারিফ দেখে ফেলেছে কিনা?এই নিয়ে।তবে বাইরে সেসব প্রকাশ না করে নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়।জারিফ লিয়াকে একটান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।একহাতে লিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে।অন্যহাতে লিয়ার মুখের উপর থাকা চুলগুলো কানের পাশে ঠেলে দেয়।লিয়া নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে থাকে।জারিফ শক্ত করে লিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে লিয়ার চোখে চোখ রেখে বলল,

“আমি তো তোমার সাথে রোমান্স করার জন্য এখানে আসছি।তুমিও কি সেইজন্য।যা ভালোই হলো আমিও যা চাইছি।আমার বউও তাই চাইছে।শুধু অনুকূল পরিবেশের অভাব হচ্ছে।”

লিয়া তড়িৎ বলে উঠলো,”মোটেই এরকম কিছু নয়।আজেবাজে কথা রাখুন ‌।আর আপনি না আমার বর পরিচয়ে এই বাড়িতে আসেননি।আমার দিক হতে দাওয়াত খেতে আসেননি। বরযাত্রী হয়ে।আলিফ ভাইয়ার ফ্রেন্ড হয়ে আসছেন।তাহলে আমাকে স্পর্শ করছেন কোন সাহসে?হ্যা।”

লিয়া মেকি রা’গ দেখিয়ে শেষের কথাটা বলে। জারিফ মৃদু হাসলো।লিয়ার নাকে নাক ঘষতেই,লিয়া রাগি দৃষ্টিতে তাকালো।জারিফ মিছেমিছি ভ’য় পাওয়ার অভিনয় করে বলল,”এভাবে তাকিয়ো না। মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে ভষ্ম করে দিবে।কোন পক্ষের হয়ে এলাম গেলাম।সেসব মেটার করছে না।আমি তোমার বর। এটাই তোমাকে স্পর্শ করার প্রধান হাতিয়ার আমার।”

লিয়া ঠোঁট বেঁকিয়ে বললো,”ছাড়ুন তো।এখন মিষ্টি মিষ্টি কথায় আমাকে ভুলাতে আসবেন না।আপনি যেহেতু আমার দিক হতে আসেননি।তাই আজকে আমাকে টাচ করার রাইটও আপনার নেই, হুঁ।”

জারিফ লিয়াকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।ফোনটা পকেট হতে বের করলো।একটা ভিডিও অন করতেই লিয়ার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে লিয়া জুতা জোড়া চুপিচুপি নিয়ে অতঃপর লুকিয়ে রাখছে।লিয়া জারিফের দিকে বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে ভাবে,কি সাংঘাতিক লোক!কখন করলো এসব?

জারিফ ফিচেল হাসলো।একহাতে চুলগুলো ব্যাক ব্রাশ করে নিয়ে বলল,”ভাবো এই ভিডিও টা ডক্টর খান সহ সবার সামনে দেখালে কেমন হবে?”

লিয়া কাঁদো কাঁদো ফেস করলো।
Hero tu mera hero hai ,Villain jaisa kam na kar
Sapny ko iss rani koo aisay tu badname na kar

লিয়ার ইচ্ছে করছিলো এভাবে গানের মতো করে বলতে।তবে এভাবে না বলে।জোর করে হালকা হাসার চেষ্টা করে লিয়া।হাসি হাসি মুখায়ব করে নরম কন্ঠে বলল,”এটা সবাইকে দেখালে আপনার বউয়েরই তো বদনাম হবে।আর আপনার বউয়ের বদনাম মানে,আপনার নিজেরই,হু।আমি জানি এই ভিডিও আপনি বাইরে কাউকে দেখাতে পারবেন না।”

লিয়া দাঁত বের করে হাসলো।জারিফ মুখায়বে গম্ভীরতার ছাপ টেনে নিয়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,”উঁহু!আজ আর আমার সম্মানে লাগবে না। ‌কজ আমি তো বর পক্ষের সাথে আসছি ‌। একটু আগে তুমিই তো সব বললে। এখনই ভুলে গেলে।”

লিয়ার নিজের উপর রা’গ হলো।আবার মানুষটা কথার প্যাঁচে ফেলে ফাসাচ্ছে।লিয়া গাল ফুলিয়ে রাখলো।জারিফ ব্যাকা হেসে মোবাইলটা লিয়ার সামনে ধরলো। বলল,”এক শর্তে আমি এই ভিডিওটা এখন ডিলেট করতে পারি।যদি তুমি শর্তে রাজি থাকো,আরকি।”

লিয়া চোখে মুখে একরাশ আশা নিয়ে চঞ্চল কন্ঠে শুধালো,”কি শর্ত?”

জারিফ শয়তানি হেসে বলল,”যদি নিজে থেকে আমাকে কিস করো তবেই।আজকে নাকি তোমার ধারের কাছেও যাওয়া মানা। আর আমার যথেষ্ট পার্সোনালিটি আছে।তাই নিজ থেকে কিছুই করতে পারছিনা।তাই শুরুটা তুমিই করো,কেমন?”

“অসম্ভব।আমার দ্বারা এসব সম্ভব নয়।”

লিয়ার কাঠকাঠ জবাব।জারিফ বলল,”ওকে যাই আমি।থাকো।আলিফ ভাইয়ের একটু উপকার করে আসি।”

জারিফের শীতল গলার হুমকি স্বরূপ কথাটা শুনে লিয়ার হাত পা জমে আসছে।এই বান্দা আচ্ছা একটা বাজে লোক।এসব চুরি করার দৃশ্য অন্য কাউকে দেখালে লিয়ার লজ্জা লাগবে।তুলির উপর রা’গ হচ্ছে।দিলো তো লিয়াকে ফাঁসিয়ে।এখন লিয়া কি করবে ভেবে পায়না।লিয়ার সত্তা বলে উঠলো,বর-ই তো একটা চুমোই তো চাইছে।বেশি কিছু নাতো।আর বাইরে আলিফ ভাইয়ার সামনে এই ভিডিও দেখালে ভীষণ লজ্জা লাগবে।লিয়া কিছুক্ষণ দ্বিধাদ্বন্দ্বে থেকে অবশেষে ভারী গলায় বলল,”ঠিক আছে।”

জারিফের দাবি আগে কিস করতে হবে দেন লিয়া ফোন হাতে পাবে।তার আগে ডিলিট করার সুযোগ দেওয়া যাবে না।লিয়া মুখায়ব কাচুমাচু করে জারিফের দিকে এগিয়ে যায়।আলতোকরে নিজের ঠোঁটজোড়া জারিফের ঠোঁটে ছুঁইয়ে দিয়ে তড়িৎ মুখটা সরিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।জারিফ একটু ধমকের সুরে বলল,”এইটা কি হলো?কিছুই তো বুঝলাম না।কোনোই ফিলিংস আসলো না।এতো কম সময়।আর এতো শুকনো চুমো।এটাকে আদৌ চুমো বলা যায়।এই তুমি সিনেমা দেখোনি। কখনো সিনেমাতে কিসিং দৃশ্য দেখোনি?সেইভাবে দিতে হবে।তাছাড়া হবে না।”

লিয়ার এবার প্রচন্ড রাগ হলো। দাঁত কটমট করলো।তবে বাইরে প্রকাশ না করে কাঁদো কাঁদো ফেস করে অবাক কণ্ঠে বলল,”আবার।”

জারিফ ইশারায় বোঝালো হ্যা।একটু সময় নিয়ে লিয়া জারিফের কাঁধে একহাত রাখলো। অন্য হাতে জারিফের পেছনের চুল আলতোকরে মুঠো করে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো।জারিফ মুচকি হেসে লিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরলো।লিয়া আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়।এমন সময় হঠাৎ মেয়েলি কণ্ঠস্বরে দু’জন ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ায়।

“এই এই আমি কিছু দেখিনি।”

কথাটা বলে চোখের উপর একহাত রাখলো ইভা।লিয়া লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারছে না।জারিফ নিজেও অস্বস্তিতে পরে।লিয়া একনজর দেখেই মেয়েটাকে চিনতে পারে। কিছুক্ষণ আগেই লিয়া শুনেছে।গেইটের সেই মেয়েটা আলিফের কাজিন।নাম ইভা।ওদিকে এতক্ষণে বরের জুতা পাওয়া যাচ্ছে না তা জানাজানি হয়েছে।ইভা বেচারি বড় ভাইয়ের জুতার অনুসন্ধান করতে করতে এমন জায়গা এসে পরে।আর সাথে চোখে পরে সিনেমার রোমান্টিক দৃশ্য।

চলবে,,,

#কালেক্ট_গল্প_কথা
Story Link-গল্পের লিংক (রিভিউ+আলোচনা)💓https://facebook.com/groups/329590663119170/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here