দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা) #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্ব_৯৫

0
650

#দেওয়ানা(আমার ভালোবাসা)
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্ব_৯৫

.
🍂
ডাইনিং টেবিলের বসে আছে মায়ার পরিবারের সবাই, তাদেরকে খাবার সার্ভ করছে ফিহা ও আরিফে মা,, আরিফের মা প্রথমে ভেবেছিল ফিহার বড় লোক ঘরের মেয়ে হয়তো সকালে কখনোই উঠবে না, আর বাসার কাজ তো দূরে থাক, কারণ তিনি যখন মেয়ে শশুর বাড়িতে গিয়েছিল তখন তিনি ফিহাকে দেখছিল তখন ফিহা কথা বার্তা, চলা ফিরা সবকিছুই হাই সোসাইটি সাথে মিল রেখে, ফিহা আরিফের বউ হয়ে আসলে হয়তো তাদের পরিবেশটা মানিয়ে নিতে পারবে না সেই চিন্তায় প্রথমে তিনি রাজি ছিলেন না ঠিকই কিন্তু তিনি তাহ মুখে প্রকাশ করেন মেয়ের সংসারে ক্ষতি হবে ভেবে পরে আবার ফিহার আরিফকে বিয়ে করার জন্য পাগলামো দেখে তিনি আর কিছুই বলতে পারিনি সবকিছু কপালে কাছে ছেড়ে দেয়,, কিন্তু আজ সকালে যখন তিনি ঘুম থেকে উঠে ফিহাকে কিচেন রুমে দেখে কাজের মেয়ের সাথে কাজ করতে তখন তিনি (আরিফের মা) ভিষণ ভাবে চমৎকায় পরে আশ্চর্য হয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে ফিহার দিকে যেতেই ফিহা উনাকে সালাম করে জরিয়ে ধরে মেয়ে মতো করে, ফিহার আচরণে হতবাক হয়ে যায় আরিফের মা, তিনি কিছু বলতে যাবে উনাকে মা ডেকে এতো আপন করে নেই কেউ কখনো বললেই না ফিহা উনার নিজের মেয়ে না ছেলে বউ, তিনিও ফিহার এমন আচরণে বেশ খুশি হয়ে মায়ার জায়গায় বসায় ফিহাকে, তখন থেকে ফিহা উনার সাথে কিচেন রুমে আছেন,, অবশ্য আরিফের মা অনেক বার ফিহাকে নিজের যেতে বলেছে কিন্তু ফিহা সাফ সাফ যেতে মানা করে দিয়েছে,, ফিহা কোনো রকম কাজ না পারলেও শিখার চেষ্টা করছে মন থেকে আর ফিহার এমন চেষ্টার খুশি হয়ে সহায়তা করছে আরিফের মা,, তিনিও অবশ্য চাই না ফিহা কোনো কাজ করুক কিন্তু ফিহা এক প্রকার জেদ ধরেই কাজ শিখতে চাইছে উনার কাছ থেকে ।

.

এখন সকাল নয়টা ছুঁই ছুঁই সবাই যার যার মতো করে নাস্তা করছে, আরিফের বড় বোন ও দুলাভাই সাথে তাদের পাঁচ বছরের বেবিটা ও আছে আরিফদের বাসায়, এই মূহুর্তে সবাই ডাইনিং টেবিলের উপস্থিত সবাই থাকলে আরিফকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না কারণ আরিফ সবসময় একেবারে রেডি হয়ে নিচে নামে অফিসের জন্য তারপর নাস্তা করে। সবার খাওয়ার মধ্যে দিয়ে আরিফ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে ফর্মাল স্টাইলে অফিসে যাওয়ার জন্য, কালো সুট কালো পেন্ট, ভিতরে সাদা শার্ট, গায়ের কোটটা ভাজ করে হাতে রাখা, আরিফকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে দেখে ফিহা কিচেন রুম থেকে হা হয়ে থাকি থাকে আরিফের দিকে, আরিফের কিলার স্টাইল দেখে ফিহা মিন মিন করে নিজে নিজেই বলে উঠে…….

.

—” ভাই বোন দুটোই কিউটনেস এর টেবলেট খাই নাকি, কি দরকার এতোটা কিউট হওয়ার কিছু কম হলে কি এমন হতো আল্লাহ জানে, যে দেখে সেই ফিদা হয়ে যায় এদের প্রতি, ঐ দিকে আমার রিদ ভাই আর এদিকে আমি এদের নিয়ে বড্ড জ্বালায় আছি, কখন কে জানি দখল করার জন্য হামলে পড়ে উফফ, সব দোষ আমার শাশুড়ীর মার নিজেও কিউট সাথে ছেলে মেয়েদেকেও কিউট জন্ম দিয়েছে আমাদের জ্বালিয়ে মারার জন্য হুহহহ…….

.

কথা গুলো মিন মিন করে বলেই ফিহা এক ঝুলি কষ্ট নিয়ে আবারও কাজ করতে থাকে কিচেন রুমে, আর আরিফ নিচে নেমে ডাইনিং টেবিলের সামনে এসে নিজের চেয়ারটা টানতে টানতে চারপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে চেয়ারে বসতে থাকে ফিহা কোথায় আছে সেটা দেখার জন্য, কিন্তু ফিহাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে কপাল কুচকে চেয়ার বসতেই আরিফের মা সামনে থেকে আরিফকে অফিসের জন্য রেডি হতে দেখে কপাল কুচকে বলে উঠে……

.

—” কিরে আজ কিসের অফিস তোর, তুই অফিসের জন্য রেডি হয়েছিস কি জন্য, কাল বিয়ে হতে হতে আজ অফিসে যেতে হবে তোর?…..

.

মায়ের এমন কথায় আরিফ নিজের প্লেট উল্টাতে উল্টাতে বলে উঠে…….

.

—” বিয়ে করেছি তো কি হয়েছে কাজ কাজই হয় মা, আর তাছাড়া কাল সবাইকে মায়ার বিয়ে জন্য খান বাড়িতে যেতে হবে পরে আবার সেখান থেকে সুইজারল্যান্ডে যেতে হবে আমাদের, এতো দিন অফিসে যেতে পারবো না তাই আজকে সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে আসবো যাতে পরে কোনো সমস্যা না হয় তাই আজ যেতে হবে মা……..

.

—” কিন্তু ফিহা……

.

পাশ থেকে ফিহা নাস্তা প্লেট হাতে নিয়ে আসতে আসতে বলে উঠে……..

.

—” আমি কি মা, তুমি আছো না আমার সাথে, তোমার আর বাবা সাথে আমার সময় বেশ কাটবে কিন্তু তাই না বাবা………

.

ফিহার এমন কথায় চমকে উঠে আরিফ পাশ ফিরে তাকায় ফিহার দিকে ফিহাকে আকাশি কালার মধ্যে একটা শাড়ি পড়তে দেখে আরও একধাপ বেশি চমকায় আরিফ, ফিহাকে কখনো আরিফ শাড়ি পরতে দেখে আজ প্রথম ফিহাকে আকাশি কালার শাড়িটা পরতে দেখে আরিফের কাছে ফিহাকে আসমানী পুরী চেয়েও কোনো অংশে কম লাগছে না। চুল গুলো সব ছাড়া পিঠের উপর, শাড়ীর আঁচলটা পাকা গিন্নিদের মতো করে কমড়ে গুঁজানো, সবমিলিয়ে আরিফকে পাগল করা টাইপ, আরিফ হা হয়ে ফিহার দিকে তাকানো অবস্থায় পাশ থেকে আরিফের বাবা ফিহাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে……

.

—” একদমই ঠিক বলেছিস মা, আমার একটা মেয়ে চলে গেছে তো এখন আরেক মেয়ে পেয়েছি আমি, তোর কোনো চাওয়াই অপূরণ রাখবো না আমি, তুই আমার লক্ষী মা….(ফিহার মাথা হাত বুলাতে বুলাতে)

.

বাবা ও ফিহার এমন বন্ধ শুলবিদ্ধ আচারণ দেখে হা হয়ে থাকা মুখটা আরও হা হয়ে যায় মূহুর্তেই, আরিফ এতটুকু বুঝতে পেরেছে ফিহা প্রথম দিনই সবার মন জয় করে নিয়েছে, সাথে সবাইকে আপন করেও নিয়েছে, ফিহা যেন আরিফকে চমোকের পর চমক দিচ্ছে আর সেটা আরিফ চুপচাপ হজম করছে, সে ফিহাকে ভুল বুঝে নিজের থেকে দূরে রেখে ছিল, আরিফ ভেবেছিল ফিহা বিদেশি সংস্কৃতিতে বড় হয়েছে বলে সে কখনো বাঙালি পরিবারে মর্যাদা দিতে পারবে না, আরিফের পরিবারকে কখনো আপন করতে পারবে না আর মূলত সেই জন্যই প্রথম দিন থেকে ফিহাকে দূরে দূরে রাখছে নিজের থেকে পরিবারে জন্য কিন্তু আজ ফিহা আরিফকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে মূহুর্তেই সবাইকে আপন করেনিয়েছে, আর সেটা দেখে আরিফ নিজের ভুল বুঝতে পেরে ভাবতে থাকে ফিহা মনের দিক থেকে খারাপ নয়, অবশ্য সৌন্দর্য ও মাশাল্লাহ, বউ তো তার সব দিক থেকেই মাশাল্লাহ তাহলে বউকে কেন তার থেকে আর দূরে দূরে রাখবে, আজই নাহয় বউয়ের ভালোবাসায় সারা দিবে সে বউকে আপন করে নিবে,, আরিফ কথা গুলো এক মনে ভেবে নিয়ে হালকা হেসে বাঁকা চোখে ফিহার দিকে তাকায় ফিহাকে নিজের খেয়ালে দেখে আরিফ চুপচাপ খেয়ে থাকে আর বারবার আরচোখে ফিহাকে দেখতে থাকে…….

.

আরিফ খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে বসে আছে আধা ঘণ্টা ধরে, এতক্ষনে মূলত আরিফের নিজের অফিশিয়াল থাকা কথা কিন্তু অফিসে না গিয়ে ফিহার জন্য অধির আগ্রহ নিয়ে বসে আছে রুমে মধ্যে কিন্তু যার জন্য বসে আছে তার কোনো রকম দেখা পাচ্ছে না আরিফ, কিন্তু ফিহাকে যে ডাকবে সেটার উপায় পাচ্ছে না আরিফ কারণ আজ সকালের কথা গুলো ভেবে, তাই গাল ফুলিয়ে রেগে বোম হয়ে বসে আছে, আরিফ এমন রাগের মধ্যে দিয়েই ফিহা গুনগুন করতে করতে রুমে প্রবেশ করে, আরিফকে সোফায় বসে থাকতে দেখে একটা ভ্রুঁ উঁচু করে তাকিয়ে থাকে হেলতে দোলতে ডেসিন টেবিলে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হালকা হালকা গুঁছিয়ে নিচ্ছে আর বারবার আরিফের দিকে তাকাচ্ছে আরচোখে আরিফ কি করে সেটা দেখার জন্য কিন্তু আরিফকে নিজের দিকে রেগে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফিহা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আবারও চলে যেতে নেই রুম থেকে, কিন্তু ফিহা রুম থেকে বের হওয়ার আগেই আরিফ উঠে এসে সজোরে টান দিয়ে দেয়ালে সাথে চেপে ধরে সাথে সাথে, আকস্মিক ঘটনায় তাল সামলাতে না পেরে ফিহা ভয় পেয়ে সাথে সাথে নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে, ফিহাকে চোখ মুখ হিচকে বন্ধ করতে দেখে শান্ত হয়ে যায় আরিফ এক দৃষ্টিতে ফিহার ফেস দিকে তাকিয়ে থাকে চুপ চাপ। ফিহা কারও কোনো রকম শব্দ না পেরে আস্তে আস্তে পিটপিট করে নিজের চোখ খুলে তাকায় পরে আরিফকে নিজের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে কপাল কুচকে বলে উঠে……

.

—” কি চাই হুমমম…..

.
শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আস্তে করে বলে উঠে…..

.
—” কি চাই মানে, বুঝতে পারছো না কি চাই…

.

ফিহা আরিফের কথার মানে বুঝতে পেরে ও না বুঝার ভান ধরে বলে উঠে…..

.
—” একদমই না, দূরে থাকুন তো আমার থেকে, রাতে কথা গুলো এখনই ভুলে গেছেন আপনি, এখন কেন আমাকে চেপে ধরেছেন ছাড়ুন বলছি…..

.
আরিফ আরও খানিকটা ফিহার দিকে এগিয়ে এসে নাহুচ সুরে বলে উঠে……

.

—” উঁহুম, ছাড়ার জন্য তো ধরে নি, তাছাড়া তুমি আমার কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য চটফট করছো কেন শুনি, বিয়ের আগের তো বেশ আমাকে জ্বালিয়ে মারতে, ( ভেবে নিয়ে) ওহ মনে পরেছে আমাকে জোর করে কিসসসস ও করেছিলে তুমি সেটা মনে আছে হুমমম হুম । (ভ্রুঁ নাচিয়ে) আচ্ছা এখন কই গেলো তোমার সেই সুপার পাওয়ার গুলো হুমমম……

.

আরিফের এমন কথায় ফিহা ইতস্তত বোধ করে আমতা আমতা করে বলে উঠে……

.

—” কখন কি হয়েছে আমার কিছুই মনে নেই ছাড়ুন বলছি আমাকে……

.

আরিফ ফিহার এমন কথায় ফিহার কপালে নিজের কপাল টিকিয়ে, একহাতে ফিহার গালের সাইড করতে করতে বলে উঠে……

.

—” তাই, আমার কিন্তু সব মনে আছে তুমি চাইলে আমি তোমাকে তোমার স্টাইলে মনে করিয়ে দিতে পারি কি বলো দিব হুম।

.

আরিফের এমন কথায় ও কাজে জান যায় যায় অবস্থা ফিহা, নিজের নিশ্বাস নিতে না পেরে আঁটকে আসা গলায় থেমে থেমে বলে উঠে…….

.

—” আমার কিছুই মনে করতে হবে না, আপনি ছাড়ুন বলছি আমাকে……

.

ফিহাকে কাঁপতে দেখে মূহুর্তেই নিচের ঠোঁটের সাথে ফিহার ঠোঁট চেপে ধরে আকস্মিক ভাবে, আরিফ এমন কিছু করবে সেটার জন্য কখনোই প্রস্তুত ছিল না ফিহা, নিজের দুই চোখ বড় বড় হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে দায় জায়গায়, আরিফ একমিনিট কিস করে, ফিহাকে ছেড়ে দিয়ে কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে উঠে…..

.

—” এখনের জন্য এতটুকুই, বাকিটা রাতে পুষিয়ে দিব কেমন লুক্ষী, এখন ছাড় পাচ্ছো বলে ভেবো না রাতে পাবে ছাড়, রাতে তোমাকে চুল পরিমাণও ছাড় দিব না বুঝে নিও কিন্তু…..

.

আরিফের এমন লাগাম হীন কথায় ফিহা তুমুল লজ্জা শিকার হচ্ছে এই মূহুর্তেই, নিজেকে সেই লজ্জা হাত থেকে বাচার জন্য আরিফ প্রাণপর্ণ দিয়ে জোরে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দৌড়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে, আর আরিফ কিছুটা দূরে সরে গিয়ে ফিহার পিছন থেকে বলে উঠে……

.

—” পালাও তুমি যতটা পালাতে পারো কারণ দিন শেষ রাতটা আমার কাছেই এসে ধরা দিতে হবে তোমাকে, তখন আমি নিজেও দেখে নিব কিভাবে পালাও তুমি……

.
(রি-চেক করেনি জানি অনেক ভুল আছে তাই এখন আর গ্রুপ এ গল্প পোস্ট করবো না। একেবারে সকালে করবো রি-চেক করার পর)

.

চলবে……………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here