#প্রিয়তম
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-৫
ইফাদ বুদ্ধিমান ছেলে। বাসর রাতে বউয়ের কথাগুলো শুনেই সে বুঝে গেছে তার বউটা মোটেও বোকা নয়।
বউয়ের মনে সে নেই। আর থাকবেই বা কীভাবে!
তাদের মধ্যে তো শিক্ষক-ছাত্রীর সম্পর্ক ছিলো। পড়াশোনা বাদে অন্য টপিক নিয়ে তো কোনোদিনই কথা হয়নি দু-জনের। সে নিজেই তো প্রেমে পড়েছিলো
হঠাৎ করে। বিয়েটাও করেছে নাটকীয়ভাবে।
যেখানে আদুরে বউটাকে বিয়ের কথাটা আগেভাগে বলে নাওয়াখাওয়া বন্ধ করে দিতে চায়নি, সেখানে বউ
তাকে উল্টো বুঝছে, ভুল বুঝছে। ভাবছে অংক স্যার তাকে ঠকিয়ে, মিথ্যে বলে বিয়ে করেছে৷ কিন্তু আদতে তা সত্য নয়। সেজন্য অনেক ভেবেচিন্তে ইফাদ ঠিক করলো যে করেই হোক বউয়ের মনে সে নিজের
জায়গা তৈরি করে নেবেই নেবে। মন না ছুঁয়ে সে কিছুতেই শরীর ছুঁবে না। কিন্তু তাই বলে যে একেবারেই আদর-ভালোবাসা দেবে না তাও নয়। রিতুর রাগ-ক্ষোভ সব নিজের ভালোবাসা দিয়ে একদিন ঠিকই ভুলিয়ে দেবে। তখন রিতু শুধু ইফাদ ইফাদ করবে।
এদিকে অংক স্যারের বাড়ির মানুষজন অর্থাৎ শ্বশুরবাড়ির সবাইকে খুব ভালো মনে হলো
রিতুর কাছে। ইফতি, তৌফ, রাজি, অমি, নাবিলা,
রুফি সবার সাথে মিশতে ওর খুব একটা বেগ পেতে হলো না৷ তারা সবাই এতটাই মিশুক যে এক সপ্তাহেই রিতুকে তাদের একজন করে নিলো। রিতু প্রথমদিকে একটু দ্বিধায় থাকলেও পরবর্তীতে মিশুক আচরণের কারণে সবার সাথে নিদ্বির্ধায় মিশে যেতে পারলেও একমাত্র অংক স্যার অর্থাৎ নিজের বরের সাথেই মিশতে পারলো না ও৷ বরের সাথেই ওর দা-কুমড়া সম্পর্ক। লোকটার ঠোঁটকাটা, বেঁফাস কথাবার্তার জন্য মাঝে মাঝে বাড়ির মুরুব্বিদের সামনেও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় ওর। এর শোধও ও ভালোভাবেই নেয়৷ কখনো ইফাদের পছন্দের শার্টের স্লিভ বা বোতাম ছিঁড়ে, টি-শার্টের বুক ফুটো করে, প্যান্টের জিপার নষ্ট করে। কখনোবা হাতঘড়ি লুকিয়ে রেখে, পারফিউম শেষ করে, জুতোয় কাদা মাখিয়ে, চিরুনি লুকিয়ে আবার কখনো ফোনের চার্জ শেষ হলে ড্রয়ারে তালা মেরে রেখে। রিতুর এসব কান্ডে ইফাদ অবশ্য বিরক্ত হয় না। শুধু বউ ইগনোর করলে
ওর সেটা ভালো লাগে না। এছাড়া যা ইচ্ছে হয় করুক, শুধু ওর আশেপাশে থাকলেই চলবে। তবে মাঝেমধ্যে সে শোধও নেয়৷ অন্যভাবে। শক্ত করে বউয়ের চোখে-মুখে চুমু বসিয়ে। রিতু না পারতে তখন প্রমিজ করে আর এসব করবে না। কিন্তু পরক্ষণেই সুযোগ পেলে প্রতিজ্ঞা ভুলে সে আবার একই কাজ করে। যতক্ষণ না ইফাদকে নাস্তানাবুদ করতে পারছে ততক্ষণ ওর শান্তি নেই! এরমধ্যেই ইফাদের গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ পড়ে গেলো। তিনদিনের জন্য ওকে যেতে হলো চট্টগ্রামে। রিতু স্বস্তি পেলো। ঠকবাজটার হাত থেকে কয়েকদিনের জন্য নিষ্কৃতি পাওয়া গেলো।
এর দু’দিন পরই বিকেল বেলা ইশিতার স্বামী এজাজ আর বাবুল মিয়া মেয়ের শ্বশুরবাড়ি এলেন দশকেজি ফল-মিষ্টি, পান-সুপারি নিয়ে। উদ্দেশ্য মেয়ে আর
মেয়ে জামাইকে দাওয়াত করা। রিতু রান্নাঘরে বসে শ্বাশুড়িকে বাদামের খোসা ছাড়াতে সাহায্য করছিলো। বসার ঘর থেকে বাবার গলা শুনে প্রথমে চমকালেও পরক্ষণেই দৌড়ে গেলো। বাবাকে দেখেই রিতু স্থান-কাল-পাত্র ভুলে হু হু করে কাঁদতে কাঁদতে বাবার বুকে লুটিয়ে পড়লো। এজাজ শালীর কান্ড দেখে হাস্যরসাত্মক কৌতুক করে লাগলে বাবুল মিয়া হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
— কেমন আছিস রে মা?
রিতু নাক টেনে বলেন বলল,
— ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
— আমি ভালো আছি।
রিতু অভিমানী গলায় বলল,
–আমাকে দেখতে এতদিন পর এলে? ভুলে গেছো আমাকে তাইনা? তোমার সাথে কথাই বলবো না!
বাবুল মিয়া মেয়ের অভিমান বুঝলেন। তিনি হেসে ওঠলেন উচ্চস্বরে,
— আচ্ছা বলিস না, আগে নাকটা তো মুছ। এখনো ছোটই রয়ে গেলি…
সবাই আছে এখানে, এরমধ্যে বাবা ওকে এভাবে বললো? রিতু ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলো। ইফাদের বাবা রউফ সাহেব মসজিদ থেকে ফিরেই বাবুল মিয়াকে দেখে এগিয়ে এসে কোলাকুলি সেরে ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা করলেন। রিতু বাবার হাত আঁকড়ে ধরে বসে রইলো। নাজিয়া ইসলাম রান্নাঘরে গিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করতে লাগলেন। এরমধ্যেই ইফাদ চট্টগ্রাম থেকে তিনদিনের কাজ সেরে বাড়ি ফিরলো। শ্বশুর এসেছে শুনে তার সাথে দেখা করতে ও সরাসরিই বসার ঘরে এলো। সালাম জানিয়ে কুশল বিনিময় করে ভদ্রতাসূচক আলাপন সারার পর বাবুল মিয়া নিমন্ত্রণের ব্যাপারটা জানালেন ইফাদকে। ও হাসিমুখে দাওয়াত গ্রহণ করলো। লং জার্নি করায় খুব ক্লান্ত লাগছিলো ওর। তিনদিন পর কাজ সেরে বাড়ি ফিরেছে। কোথায় বউ এগিয়ে এসে তাকে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করবে, আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে দেবে। শরবতের গ্লাস এগিয়ে দেবে। তা না, পাষন্ডীটা বাবা পেয়ে বরকে ভুলে গেছে। ইফাদের ভীষণ রাগ হলো মনে মনে। শ্বশুরের সঙ্গে আলাপ সারার পর বাবার হাত আঁকড়ে ধরে বসে থাকা রিতুকে ইশারায় ঘরে যেতে বলছিলো বারবার। কিন্তু রিতু দেখেও না দেখার ভান করছিলো। আচমকা এসব চোখাচোখি বাবুল মিয়ার চোখে পড়তেই তিনি সশব্দে কেশে ওঠলেন। রিতুর লজ্জায় মাথা কাটা গেলো। তিনটা দিন শান্তিতে ছিলো, এখন ফিরেই আবার নির্লজ্জ কাজকর্ম শুরু করে দিয়েছে। ছিহ! শ্বশুরের সামনে তার মেয়েকে কেউ এভাবে ইশারা করে? এই লোকের যন্ত্রণায় সে অতিষ্ঠ! বাবাকে কতদিন পর
কাছে পেয়েছে রিতু। অথচ ঠকবাজ স্যারটা ওকে দু-দন্ড শান্তিতে বসতেও দিচ্ছে না। রাগে কিলবিল করে ওঠলো মস্তিষ্কটা। জেদ চেপে গেলো মনে। ঠিক করলো আজ কিছুতেই যাবে না ঘরে ও। ইফাদ তাও কতক্ষণ আকার, ইঙ্গিতে ডাকতে লাগলো বউকে, কিন্তু বউয়ের কোনো পাত্তা না পেয়ে ও থম মারা চেহারা নিয়ে একটা সময় নিজের ঘরে চলে এলো। রিতু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। বাজে লোক একটা…
.
বাবুল সাহেব আর এজাজ নাস্তা করতে করতে মহানন্দে গল্প জুড়ে দিয়েছেন বাড়ির ছোট-বড় ছেলেমেয়েদের সঙ্গে। ইশিতার স্বামী বাচাল প্রকৃতির
না হলেও শ্বশুরের সাথে থাকলে সেও বাচালের মতো আচরণ করে। রিতু নিজেও সাগ্রহে দুলাভাই আর বাবার গল্প শুনে হাসছিলো। তখনি নাজিয়া ইসলাম ওকে ডেকে পাঠালেন। রিতু যাবার পর তিনি সরু
গলায় বললেন,
— রিতু মা! একটু ঘরে যাও তো…
— কেন আন্টি?
— ইফাদ ডাকছে তোমায়…
রিতু মিইয়ে যাওয়া গলায় বলল,
— একটু পরে যাই? আসলে বাবা দারুণ একটা জোক্স বলছে, শুনছিলাম আরকি…
নাজিয়া ইসলাম হেসে বললেন,
— ওহ। বাবাকে এতদিন পর পাশে পেয়েছো। তাহলে থাকো…
— থ্যাংক্স আন্টি…
বলে রিতু সেখান থেকে চলে এলো। ডাকছে কেন শ’য়’তানটা? ডাকুক, ডাকতে ডাকতে গলা শুকিয়ে ফেলুক। রিতুর বয়েই গেছে তার ডাক শুনতে। যাবে না সে, একদম না। রিতু তাই বাবার পাশে পাশে রইলো ডিনারের সময় পর্যন্ত। তবে খাবার টেবিলে ইফাদকে দেখা গেলো না৷ জ্বর আসার দোহাই দিয়ে ঘরেই রইলো। নাজিয়া ইসলাম খাবার বেড়ে রিতুর হাত
দিয়ে ঘরে পাঠাতে চাইলে ও বাহানা দিলো,
— আসলে বাবার মাছের কাঁটা বাছতে অসুবিধা হয়…
নাজিয়া হেসে বললেন,
— তাহলে বেয়াইকে মাছটা বেছে দাও। আমি ইফতিকে দিয়ে পাঠাচ্ছি…
বলে মেয়ে ইফতিকে ডাকতে তিনি চলে গেলেন। তখনি রিতু স্পষ্ট শুনতে পেলো ঘর থেকে গ্লাস ভাঙার আওয়াজ। বাবুল মিয়া হতচকিত হয়ে তাকাতেই রিতু মিনমিন করে বলল,
— তুমি খাও!
.
বাবুল মিয়া আর এজাজ বিদায় নিয়ে চলে গেলো। শ্বশুরকে বিদায় দিতে অবশ্য ইফাদ জ্বর নিয়েই নিচে এসেছিলো। ওদেরকে বিদায় দিয়ে চলে আসার সময় সিঁড়ি ঘরে দাঁড়িয়ে ইফাদ রিতুকে আটকে দিলো। অভিমান আর রাগ মেশানো গলায় ওকে বলল ঘরে আসতে। কিন্তু রিতু বলল,
–রুফি আপুদের সাথে থাকবো। রাতে
মুভি দেখা হবে, আজ মুভি নাইট …
ইফাদ রেগে ওর হাত চেপে ধরে বলল,
— দেখতে হলে আমার সাথেই দেখবে। ওদের সাথে কোনো মুভিটুভি দেখা হবে না।
রিতু হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
— আপনার সাথে আমি মুভি দেখব? হাউ ফানি…
— আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি!
— আই ডোন্ট কেয়ার…
— তিনদিন দূরে ছিলাম। তুমি এই ব্যবহারটা করতে পারছো? আমার ঘুম আসবে না ওই ঘরে তোমাকে ছাড়া…
— তাতে আমার কী? আপনার না জ্বর, ঔষধ খেয়ে শুয়ে পড়ুন।
— তুমি….
রিতু ওর কথা না শোনার ভান করে চলে গেলো রুফির ঘরে। এরপর নাবিলা আর রুফির সাথে লুডু খেললো, গল্প করলো এবং চা খেতে খেতে একটা হরর মুভি দেখা শুরু করলো। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত দেড়টা। মুভি তখন টানটান উত্তেজনাময় হয়ে ওঠেছে। ঠিক সেসময়
রুফির ঘরের দরজায় ঠকঠক শব্দ হলো। নাবিলা মুভিটা পজ করে বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতেই তৌফ হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকলো। এরপর মেজাজ খারাপ
করে বলল,
— ইফাদ ভাইয়া রেগে আগু’ন হয়ে আছে। মনে হচ্ছে
মাথাটাথা গেছে…
রিতু, নাবিলা, রুফি তিনজনই একসাথে তাকালো তৌফের দিকে। কেউই কিছু বুঝতে পারলো না। রুফি কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
— মানে? কীসব বলছিস?
তৌফ যথাসম্ভব নিচু স্বরে বলল,
— ভাইয়া এতরাতে ছাদে বিছানা করে শুয়ে আছে।
মশা কামড়ে ছালচামড়া ওঠিয়ে ফেলছে এরপরেও জ্বর নিয়ে শুয়ে আছে। আমি আর অমি মিলে কতক্ষণ টানাটানি করে এলাম। অমিকে তো রেগে থাপ্পড়ই বসিয়ে দিয়েছে গালে। কিছুতেই ঘরে আসছে না। শুধু বলছে আজ রাতেই ডেঙ্গু বাঁধিয়ে সে ম’রে যাবে…
রিতু সব শুনছিলো। ভীষণ অবাক হলো নাটকবাজ লোকটার এরকম আচরণের কথা শুনে। এবার সরু গলায় সে তৌফকে জিজ্ঞেস করলো,
— ওনি এরকম করছেন কেন?
তৌফ অকপটে বলল,
— কেন মানে? কার জন্য করছে সেটাই জিজ্ঞেস
করুন।
রিতু থতমত খেয়ে জিজ্ঞেস করল,
— কার জন্য?
— আপনার জন্য ভাবি…
— আমার জন্য?
— আরে আসার পর ভাইয়াকে নাকি একগ্লাস শরবতও দেন নাই? ইগনোর করতেছেন! তাই ভাইয়া রেগেমেগে ফায়ার হয়ে গেছে! অমিরে রাইখা আসলাম আপনারে খবরটা জানাইতে…
রিতু লজ্জা আর বিস্ময় নিয়ে বলল,
— এই সামান্য কারণে!
— আপনার কাছে যেটা সামান্য সেইটা আপনার জামাইয়ের কাছে অসামান্য। যান, নিজের চোখে দেইখা আসেন আপনার বিরহে আমার ভাইয়ের কি অবস্থা…
নাবিলা ঠোঁট টিপে হেসে বলল,
— এক সপ্তাহেই ভাইয়া এত বউপাগল হয়ে
গেলো?
তৌফ ওর মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
— গেলো তো!
রিতু ওদের সামনে একপ্রকার লজ্জায়ই পড়ে গেলো। সেইসাথে রাগও হলো স্যারের ওপর। সারা বাড়ির
মানুষ ঘুমে, আর লোকটা জ্বর গায়ে ছাদে বসে ড্রামা করছে? এত মেলোড্রামা জানে লোকটা? রিতু ভীষণ রেগেই ছাদের দিকে গেলো। ও ছাদে পা রাখতেই
কোথা থেকে অমি এসে গালে হাত দিয়ে ভার গলায় বলল,
–আপনের জামাই আপনে সামলান ভাবি।
আমার চাপা শেষ…
বলে মন খারাপ করে অমি নেমে গেলো। রিতু দেখলো ছাদের মেঝেতে বিছানা করে শুয়ে থাকা অংক স্যারকে। ও রেগে কোমড়ে হাত রেখে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকাতেই ইফাদ মুখ ঘুরিয়ে অন্যপাশে ফিরে শুলো। রিতু চোখ বুজে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
— আমি এক থেকে তিন গুণবো। এরমধ্যে যদি ছাদ খালি না হয় তাহলে যা হবে এরজন্য আমাকে কেউ দায়ী করতে পারবে না।
বলেই রিতু কাউন্ট শুরু করলো,
— ওয়ান…
–টু …
‘থ্রি’ বলার আগেই ইফাদ ঝট করে শোয়া থেকে ওঠে দাঁড়ালো এবং রিতুকে পাঁজাকোলা করে নিলো। রিতু হড়বড়িয়ে বলে ওঠলো,
— হচ্ছেটা কী? নামান আমাকে…
— চুপ…
রিতু অনুভব করলো অংক স্যারের গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। চোখজোড়া জ্বরের কারণে রক্তিম হয়ে আছে।
ও আরকিছু বলার সাহস পেলো না। চুপ রইলো।
ঘরে আসার পর ইফাদ ওকে নামিয়ে দিয়ে বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো। ইফাদ নিজের ঘাড় মালিশ করতে করতে রিতুকে বলল,
— তিনদিনে এত ওজন বাড়িয়েছো নিজের?
কী এমন হাতি-ঘোড়া খেলে?
রিতু ফুঁসে ওঠল,
— বাজে কথা কম বলুন…
— কমই বলছি। ছাদ থেকে তোমাকে কোলে করে নিয়ে আসতে আমার যে দু-কিলো ওজন কমে গেলো সেটা কীভাবে ফুলফিল হবে?
রিতু অবাক গলায় বলল,
— এরমধ্যেই দু-কিলো ওজন কমে গেলো?
— আমাকে কি মিথ্যেবাদী মনে হয়?
রিতু রাগ চেপে বলল,
— আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আপনি সত্যের রাজা।।তো রাজামশাই কী করলে আমার অপরাধ আপনি মার্জনা করবেন?
— আমাকে খাইয়ে দিলে, তোমার হাতে!
— বয়েই গেছে আমার…
ইফাদ শক্ত মুখে বলল,
— আমার অসুস্থ অবস্থায়ও তুমি এরকম নির্দয়ের
মতো আচরণ করবে? ধর্মে সইবে তো?
রিতু ভ্রুকুটি করে তাকালো। অংক স্যার বললেন,
— আচ্ছা যাও লাগবে না। আমি ঘুমাবো। তুমি কিন্তু
ঘরেই থাকবে…
ইফাদ মুখ ভার করে শুয়ে পড়লো। এদিকে রিতু মহা মুশকিলে পড়লো। অসুস্থ অবস্থায় লোকটা খেতে চেয়েছে। না করে কি ঠিক করলো? কতক্ষণ দ্বিধাদ্বন্দে ভুগলো ও। একসময় মানবিকতার খাতিরেই ফ্রিজ
খুলে খাবার গরম করে নিয়ে এলো। এরপর অস্বস্তি নিয়েই জ্বরে ভুগতে থাকা অপছন্দের বরটাকে
খাইয়ে দিলো সে। ইফাদ খেয়েদেয়ে খুশিমনে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে বলল,
— আমি একজন অসুস্থ আর দুঃখী মানুষ। আমার
মিষ্টি বউটা আমাকে দু-চোখ সহ্য করতে পারে না। অনুগ্রহ করে আমাকে সরিয়ে দেবেন না ম্যাডাম…
রিতু দাঁতে দাঁত চেপে সবটা সহ্য করলো। এই চতুর লোকটা দুঃখী মানুষ? ও মিষ্টি বউ? অনুগ্রহ ভিক্ষে? হুহ! অসুস্থ বলে, নয়তো ওর বয়েই গেছিলো অংক স্যারের এসব নাটক সহ্য করতে।
_______________
[ঝগড়ুটে দু’জনের গল্প। কেউ একজন বাড়াবাড়ি না করলে ঝগড়া তো জমে না তাইনা? ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।]
চলবে….
মনে হয় ডিলিট করে ফেলেছি 💔