#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব২৬
“হবু বউ এককালে ছিলো।তবে এক্স কোনোকালেই না।কারন তাসনিমের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক কখনোই ছিলো না।ফোনে বা সামনাসামনি কোনোদিনই প্রেমের কথা হয়নি। তবে মিথ্যে বলবো না,আমার তাসনিমকে ভালো লাগতো না, এমন নয়।ভালো লাগতো বলেই হয়তো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলাম।বাড়ি থেকে যখন বিয়ের জন্য মা বারবার জিগ্গেস করতো আমার কোনো পছন্দ আছে কিনা।বরাবরের মতোই নেগেটিভ উত্তর দিতাম।মা যখন বিভিন্ন মেয়েদের ছবি নিয়ে আসতো। সেইসময় একদিন মাকে তাসনিমের কথা বলি।নাতাশার চিকিৎসা করতে গিয়ে পরিচয়।দেখতে শুনতে বেশ ভালো।তার উপর ওর কোমল স্বাভাবটা আমার ভালো লাগতো।যাইহোক এতটুকুই।আর আমি আগে থেকেই হালাল সম্পর্কে বিশ্বাসী।তাই যা কিছু হবে বিয়ের পর। বিয়ের কথা ঠিক হওয়ার পর তাসনিমের সাথে যে কয়েকবার ফোনে কথা হয়েছে সেটা নাতাশার অসুখের ব্যাপারেই। প্রেমের আলাপ কখনোই হয়নি।তবে একটা জিনিস আমি নোটিস করেছি আমার দিক হতে একটা দূর্বলতা থাকলেও তাসনিম কেমন যেনো এড়িয়ে যেতো।ছেলে মানুষ হয়তো ক্ষনিকের একটা মোহ ছিলো।ব্যস এতটুকুই।এর বেশি কিছুই ছিলো না।”
লিয়ার মুখটা মলিন হয়ে আসে। লিয়া সবটা জানে না এমন নয়। তারপরেও স্বামীর মুখে অন্য একজনকে ভালো লাগতো সে কথাটাই শুনতে কোনো মেয়েরই ভালো লাগবে নয়।ঠিক তেমনি লিয়ারও একদম ভালো লাগছে না।যদিও জারিফের কথায় স্পষ্ট মোহ ছিলো,ভালো লাগতো।ছিলো আর লাগতো কথা দ্বারা প্রুভ হয় অতীত।তবুও লিয়ার মুখটা ভার হয়ে আসে। জারিফ টেবিলের উপর রাখা লিয়ার দুইহাতের উপর নিজের হাত রাখলো। জারিফের স্পর্শে লিয়া একটু নড়ে উঠলো।জারিফ লিয়ার মুখশ্রীতে সুগভীর শান্ত নজরজোড়া নিবন্ধ করলো। মায়াময় স্বরে ফের বললো,,
“লিয়া আমি এক্টিং করতে পারিনা।আমি যেমন তেমনটাই প্রকাশ করতে ভালোবাসি।এক্টিং করলে হয়তো তোমাকে খুশি করার জন্য ঝুড়িঝুড়ি মিথ্যা কথার ডালা সাজিয়ে তোমাকে খুশি করতাম।লিয়া ট্রার্স্ট মি।ক্ষনিকের সেই মোহ আমার অনেকদিন আগেই কে’টে গিয়েছে।এখন আমার সবটা জুড়ে আমি শুধু তোমাকে নিয়েই ভাবি।কারন তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী।একটু দেরি হলেও আমি রিলাইজড করেছি,তুমি না চাইলেও আমার নিজের জন্য আমার তোমাকে প্রয়োজন। আমার নিজেকে ভালো রাখার জন্য আমার লাইফে তোমার মতো হাসিখুশি প্রাণোচ্ছল কোনো মেয়েকে নয়।আমার শুধু লিয়াকেই প্রয়োজন। তোমাকেই প্রয়োজন।জানিনা এই প্রয়োজনকে ভালোবাসা বলে কিনা?যদি বলে তবে এই সীমাহীন প্রয়োজনের মতো আমার ভালোবাসাটাও সীমাহীন।”
লিয়া জারিফের চোখে চোখ রাখলো। আবেগী হয়ে রাশভারী স্বরে বললো,,”আমিও যদি আপনার ক্ষনিকের মোহ হই তখন।হয়তো সময়ের সাথে সাথে এই মোহটাও কে’টে যাবে।”
জারিফ তড়িৎ বললো,,”আমি তোমাকে প্রথমেই বলে নিয়েছি ট্রাস্ট মি।তাই নতুন করে আর কিছু বলবো না।তুমি একটা বিষয়ে নিশ্চিত থাকো আমি তোমার মতো করে এভাবে কখনো কাউকে বলিনি।তাসনিমকেও নয়। এতো সব কিছুর পরেও আমার মনেহয়না তুমি আমার মোহ।যা কে’টে যাবে বা সময়ের সাথে সাথে মিইয়ে যাবে।লিয়া দিনকে দিন তোমার প্রতি আমার অনুভূতি বাড়ছে।যা আমি খুব করে বুঝতে পারছি। প্লিজ অন মাই রিকোয়েস্ট। আমার আর তোমার মাঝে কখনো তাসনিমকে টানবে না। ইভেন অন্য কাউকেই নয়।আর আমার কাছে তাসনিমের এখন একটাই পরিচয় আমার বউয়ের বড় বোন।আর এই সম্পকর্টা রেসপেক্টেবল।তাই নেক্সট ফা’জ’লা’মো করে হলেও এরকম কিছু বলবে না।”
জারিফ লিয়ার আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল রেখে লিয়ার হাত শক্ত করে ধরে।জারিফের স্পর্শে লিয়ার সারা শরীর মৃদু কম্পিত হলো।লিয়া জারিফের কথায় সন্তুষ্ট হয়।লিয়া শর্টকাটে তাসনিমের বিয়ের কথা বললো। মেডিকেলের ডক্টরের নাম শুনতেই জারিফ আলিফকে চিনতে পারলো।আলিফের মা দুইদিন আগে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসছিলো। আগে ফোনে তাসনিমের বাবার সাথে কথা বলে নিয়েছিলো।এদিকে তাসনিমের বাবা,চাচারা আলিফের খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে ছেলে ভালো।ফ্যামেলি ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো।তাই সহজেই সম্মতি দেয়।আলিফের মা দেখতে এসে বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে সাথে রিং পড়িয়ে যায়।আগে একবার একটা দূর্ঘটনা ঘটায়। তাসনিমের পরিবার আর ঘটা করে লোকজন কে রিং পড়ানোর বিষয়টা জানায়নি।ঈদের পর বিয়ের ডেট।জারিফ কৌতূহলবশত জিগ্গেস করলো,,
“এনগেজমেন্ট হলো তা তোমরা যাওনি যে।”
“আমার পরীক্ষা চলছিলো। আব্বু গিয়েছিলো।আর ওরকম ভাবে এনগেজমেন্ট হয়নি।কোনো প্রকারের জাঁকজমকপূর্ণতা ছাড়াই হয়েছে।আলিফ ভাইয়া আর ওনার মা আসছিলেন।ভাইয়ার নাকি বাবা নেই।তাই মা-ই প্রধান গার্ডিয়ান।বড় আব্বু রাজি হতেই। আন্টি নাকি রিং পড়ানোর কথা বলে। পড়িয়ে আপাতত বুকড করে রাখে।আর ঈদের পর বিয়ে।”
লিয়া জারিফের জন্য কেনা শার্ট টা জারিফকে দেয়।জারিফ স্মিত হেসে বললো,,”থ্যাংকস।লিয়া তুমি কি ঈদের গিফট আগাম দিয়ে রাখলে নাকি?ইউ আর সো ফাস্ট।আমি তো তোমার থেকে পিছিয়ে গেলাম দেখছি।”
লিয়া মিষ্টি করে হাসলো।বললো,,”নাহ তেমন নয়।আসলে দেখলাম আর পছন্দ হলো।তাই ভাবলাম আপনার জন্য নেই।”
আরো কিছু কথাবার্তা শেষে জারিফ বলে উঠলো,,
“আচ্ছা লিয়া পরীক্ষা তো শেষ এবার তো এডমিশন সামনে।আমি চাই তুমি ময়মনসিংহেই থাকো।বাইরের ভার্সিটিতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।তাই সেইভাবে নিজেকে তৈরি করো।ভালো করে প্রিপারেশন নাও,কেমন?”
লিয়া বুঝতে পারলো জারিফ ইনডাইরেক্টলি লিয়াকে ওদের ভার্সিটিতে এডমিশন দেওয়ার কথা বলছে।আর জারিফের কথায় স্পষ্ট জারিফ লিয়াকে একলা অন্য শহরে যাওয়ায় রাজি না।লিয়া প্রতিত্তরে মৃদু হাসলো।আর ঘাড় নাড়ালো।যার মানে ঠিক আছে।
কয়েকদিন পর,,
রাজিয়া সুলতানা কিচেনে কাজের মেয়েটার সাথে এটা সেটা রান্না করতে ব্যস্ত।লিয়া হাতে হাতে সাহায্য করছে।ইফতারি গুলো সাজাচ্ছে।লিয়া ছুড়ি দিয়ে শসা কাটছিলো।এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠে।রাজিয়া সুলতানা লিয়াকে উদ্দেশ্য করে দরজা খুলে দিতে বলেন।আজকে জারিফদের বাড়ির সবাইকে ইফতারের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।চারদিন আগে জারিফরাও ইফতারের দাওয়াত করেছিলো।লিয়ার বাবা, চাচারা আর তুষার, রাহবার গিয়েছিলো।পরিবারের সবাইকে বললেও মেয়েরা কেউ যায়নি।লিয়া দরজা খুলতে যায়।লিয়া সাদার উপর সবুজের ছোটো ছোটো ফুলের সুতি থ্রি পিস পড়েছে। চুলগুলো খোঁপা করে কাঠের কাঠি দিয়ে আটকানো।লিয়া মাথায় ওড়নাটা টেনে দিলো।একটু আগে জারিফ ফোন করেছিলো। লিয়া ফোনে শুনে নিয়েছিলো কে কে আসছে। জারিফের বাবা,নীল জারা,নাতাশা আর জারিফের আসার কথা।লিয়া দরজা খুলে দেখে আনোয়ার রহমান জারা আর নাতাশা দাঁড়িয়ে।লিয়া নম্র স্বরে সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করে।আনোয়ার রহমান সালামের উত্তর দিয়ে ভালো-মন্দ জিগ্গেস করতেই এনামুল খাঁন আসেন।আনোয়ার রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন,,
“বেয়াই ভেতরে আসেন।”
লিয়া নাতাশাকে আদর করলো।জারা এক্সাইটেড হয়ে বললো,,”ভাবী কেমন আছো?”
জারার মুখ থেকে বিয়ের পর ভাবী ডাকটা সরাসরি সামনাসামনি এই প্রথম শুনলো তাই হালকা একটু লজ্জা অনুভব হলো।লিয়া স্মিত হেসে বললো,,”ভালো আছি। আন্টিদেরকে সাথে আনলে ভালো হতো।”
জারা মিষ্টি হেসে বললো,,”আসবে।আজ আসেনি তো পরে নিশ্চয় আসবে।”
লিয়া বারবার সামনে তাকাচ্ছিলো। নীল বা জারিফ দুজনের একজনকেও তো দেখা যাচ্ছে না। জারা লিয়ার নজরকে লক্ষ্য করে দুষ্টুমি করে বলে উঠলো,,
“ভাবী টেনশন করো না।তোমার বরও আসছে।ভাইয়া এক্ষুনি চলে আসবে। গাড়ি পার্ক করছে হয়তো।”
লিয়া দ্রুত এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো। অপ্রস্তুত হাসলো। প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে তাৎক্ষনিকভাবে বললো,,”ভেতরে চলো।”
জারা ভেতরে যেতে থাকে।নাতাশা লিয়ার একহাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।লিয়া ভেতরে যাবে এমন সময় জারিফ আর নীল দু’জনকে আসতে দেখে। দুজনের হাতেই ফলমূল, মিষ্টান্ন।আরেকটু কাছে আসতেই লিয়া লম্বা করে একটা সালাম দেয়।নীল লিয়াকে ফের সালাম দিয়ে বললো,,”কেমন আছেন ভাবী?”
লিয়া হাসিমুখে বললো,,”আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি?”
নীল একহাতে কপালের ঘাম মুছে নেয়। অতঃপর বললো,,”ভালো আর আছি কই।যা গরম ওয়েদার ভালো থাকাই তো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।বউও নেই যে এই গরমে পাখা দিয়ে শীতল বাতাস করবে।যাকগে কষ্টের কথা নাহয় নাইই বললাম।এই যে ভাবী ঈদের সালামি হিসেবে একটা বোন টোন তো গিফট করতে পারেন।দেবরটাকে বিয়ের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।”
জারিফ নীলের দিকে কটমট চোখে তাকালো।নীল থেমে গেলো।নীল শুকনো ঢোক গিলে নিয়ে জোর করে হাসার চেষ্টা করে ।লিয়ার হাসি পাচ্ছে।লিয়া ঠোঁট টিপে হাসতে থাকে।নীল একহাতে টিশার্টের কলারের কাছে একটু ফাঁকা করে ঠোঁট গোল করে ফু দিয়ে ভেতরে ঢুকতে থাকে।লিয়া ভদ্রতার খাতিরে জারিফকে উদ্দেশ্য করে বললো,,
“প্যাকেটগুলো আমার কাছে দিন।”
জারিফ লিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে দিতে থাকে।মাথায় ঘোমটা দেওয়া অবস্থায় লিয়াকে একদম বউবউ লাগছে।নাকের ডগার উপর বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে।লিয়াকে দারুণ দেখাচ্ছে।জারিফ নির্নিমেষ চাহনিতে লিয়ার দিকে তাকিয়ে রয়। লিয়া জারিফের হাত থেকে প্যাকেট নিয়ে মাথাটা কিঞ্চিৎ তুলতেই জারিফের সাথে চোখাচোখি হলো। এরমধ্যে
“এই ব্রো আর হাফ আওয়ার ওয়েট কর।রোজা রমজানের দিন এভাবে তাকিয়ে থাকলে কিন্তু রোজা হালকা হয়ে যাবে।তাই বলছি সন্ধ্যার পর এভাবে দুজন চোখেচোখে হারিয়ে যাস,কেমন।”
নীল কয়েক কদম পিছিয়ে এসে কথাটা বলে।নীলের এমন কথাশুনে জারিফ লিয়া দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে যায়।লিয়া দ্রুত ভেতরে চলে যায়।জারিফ একহাতে নীলের কান ধরে টান দিয়ে বলে,,”সব সময় তোর আজেবাজে কথা।তোর থেকে সিনিয়র হই। তারপরেও সবসময় ইয়ার্কি করিস।কবে বাঁদর থেকে মানুষ হবি বলতো?তোর বাঁদরামি স্বভাব কবে যাবে?”
নীল মুচকি হেসে বললো,,”আমার এ বাঁদরামি স্বভাব কোনোদিন যাবে না।”
সোফায় বসে আছে এনামুল খাঁন, আনোয়ার রহমান আর জারিফ,নীল, জারা , নাতাশা। এরমধ্যে রাজিয়া সুলতানা আসেন সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে। ভালোমন্দ এটা সেটা বলার মাঝেই নীল রাজিয়া সুলতানাকে উদ্দেশ্য করে বললো,,
“আন্টি নাতাশা কিন্তু বাতাসা খাওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে আমাদের পিছুপিছু চলে এসেছে।তাই বলছি বাতাসা গুলো কিন্তু সাবধানে রাখবেন।নাতাশার নজর পড়লে সব শেষ করে দিবে।”
লিয়া কিচেন থেকেই নীলের কথা শুনে হাসতে থাকে। উপস্থিত সবাই মৃদু হাসলো।নাতাশা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো দুইহাত কোমড়ে রেখে চোখ উল্টে তাকালো।রাগি স্বরে বললো,,”উফ্! নীল মামু তুমি এই বাতাসা বাতাসার কাহিনী কবে শেষ করবে বলো তো?উফফ!আমি আর কতবার তোমাকে বলবো আমি বাতাসা খাইনা।”
নাতাশা রাজিয়া সুলতানার পাশে দাঁড়ালো। মাথাটা তুলে মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,,”এই মিষ্টি নানুমনি তুমি খুব করে নীল মামুকে বকে দাও তো।নীল মামু না খুব পঁচা।সব সময় আমাকে রাগিয়ে দেয়,হু।”
রাজিয়া সুলতানা নাতাশার গালে হাত রাখলেন।আদূরে গলায় বললেন,,”ঠিক আছে সোনা নীলকে আচ্ছা করে বকে দিবো।তুমি রাগ করোনা,কেমন?আর নাতাশা বেবি নীল তো মজা করে বলে তোমাকে রাগিয়ে দেয়।তুমি যদি না রাগো তাহলে দেখবে নীল আর বলবে না,হুম।”
কিছুক্ষণ আগেই ইফতার শেষ হয়েছে। আনোয়ার রহমান এনামুল খাঁনের সাথে মসজিদে নামাজ আদায় করতে গিয়েছেন।নীল জারিফ দুজনেও গিয়েছিলো।তবে ওরা চলে এসেছে।নীল সোফায় বসে ফোন স্ক্রল করছে।আর পাশে বসা রাহবারের সাথে খেলাধুলা নিয়ে এটাসেটা বলছে। নাতাশা লিয়ার রুমের বিছানায় বসে খেলনা নিয়ে খেলছে।জারা লিয়ার সাথে গল্প করছে। এমন সময় লিয়ার ফোন বেজে উঠলো।লিয়া টেবিলের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে জারিফের নামটা দেখে কপাল কুঁচকে ফেলে।জারিফ তো বাসায়ই আছে।তাহলে এখন কল দেওয়ার কারন?কারন ভেবে না পেয়ে লিয়া ফোন রিসিভ করে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো,,
“আমি ছাদে ওয়েট করছি।কাম সুন।ফাইভ মিনিটের মধ্যে চলে আসো।নো মোর এসকিউজ।”
লিয়া কিছু বলার আগেই কল কে’টে যায়।লিয়া ফোন রেখে ঠোঁট কামড়ে ধরে একবার বিছানায় বসা জারার দিকে চাইলো।এখন জারাকে ফেলে রুম থেকে বের হওয়া কিরকম দেখায়।আবার ওদিকে না গেলে জনাব তো রা’গ করে থাকবে।এটা ভাবতেই লিয়া দোটানায় পরে। অবশেষে লিয়া জারাকে বললো,,”জারা তুমি থাকো ।নাতাশাকে দেখো। আমি একটু ওদিকটায় দেখে আসছি ,কেমন।”
জারা ঘাড় নাড়িয়ে হ্যা সূচক উত্তর দেয়।লিয়া বিনিময় মিষ্টি করে হাসলো।লিয়া একপা দুপা করে রুম থেকে বের হয়।রাজিয়া সুলতানা নামাজ শেষ করে মাত্রই রুম থেকে বের হলেন। লিয়াকে দেখতে পেয়ে ডেকে বললেন,,
“এই লিয়া।কিচেনে আয় তো।একটু হেল্প করবি।”
লিয়া কিঞ্চিৎ বি’রক্ত হলো।ধ্যাত ডাকার আর সময় পেলো না।তবে মুখে সেটা প্রকাশ না করে মায়ের সাথে কিচেনে যায়।রাজিয়া সুলতানা লিয়াকে খাবারগুলো বোলে রাখতে বললেন। লিয়া এবার কাঁদো কাঁদো ফেস করলো।খানিকটা করুণ সুরে বললো,,
“ওহ্ আম্মু।এখনই কেনো রেডি করছো বলো তো।আরেকটু পর খাবার রেডি করলেই তো পারতে। আঙ্কেল তো এখনো বাইরে থেকে আসেনি দেখছি।”
“আসেনি ।তবে যেকোনো সময় চলে আসবে।আর এসে দেরি করবে না।রোজার দিন তাদেরও তো বাসায় ফিরতে হবে।জোর করে দেরি করানো ঠিক হবে না।”
লিয়া খাবারগুলো সাজাতে থাকে। ইচ্ছে থাকলেও লিয়ার আর ছাদে যাওয়া হয়ে উঠলো না।ওদিকে জারিফ ছাদে কিছুক্ষণ ওয়েট করলো। পাঁচ মিনিট গিয়ে বিশ মিনিটে রুপ নিলো।তবুও লিয়ার দেখা মিললো না ছাদে।জারিফ লিয়ার উপর বিরক্ত হলো।জারিফ অস্পষ্ট স্বরে বললো,,এই লিয়াকে বললাম আসতে।শুনলোই না।আর এদিকে আমি ওর জন্য মশার কামড় খেয়ে ছাদে প্রহর গুনছি। অবশেষে বিরক্ত হয়ে জারিফ বাসার ভেতরে চলে আসে। রান্না রুমের কাজ শেষ করে লিয়া বের হয়। ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখতে পায় জারিফ সোফায় বসে ফোন স্ক্রল করছে।লিয়া রাহবারের পাশে ফাঁকা জায়গায় বসে।নীল এটাসেটা বলছে।লিয়া হ্যা হু করছে।লিয়া বারবার জারিফের দিকে তাকাচ্ছে।অথচ জারিফ একবারো লিয়ার দিকে তাকাচ্ছে না। লিয়া মনেমনে ভাবলো জারিফ নিশ্চয় রা’গ করে আছে। এরমধ্যে নাতাশা আইসক্রিম খেতে খেতে আসে। লিয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,,
“মামী আইসক্রিম খাবে?”
“না সোনা তুমিই খাও।”
নাতাশা এবার একটু ঘুরে জারিফের কোলের উপর গিয়ে বসলো। জিহ্বা দিয়ে চেটে খেতে খেতেই বললো,,
“মামা মিষ্টি নানুমনি আমাকে আইসক্রিম দিয়েছে।খুব টেস্টি খেতে।”
জারিফ মৃদু হেসে বললো,,”খাও।”
নাতাশা একটু নড়তে গিয়ে আইসক্রিম থাকা হাতটা জারিফের শার্টের সাথে লাগে।আর জারিফের শার্টে আইসক্রিম মেখে যায়।জারিফ দেখতে পেয়ে একহাতে শার্টটা একটু টেনে ধরলো।লিয়া বলে উঠলো,,
“এ হে শার্টের সাথে তো একদম মেখে গিয়েছে আইসক্রিম।”
নাতাশা ঠোঁট উল্টিয়ে মুখটা ভার করে বললো,,”সরি।আমি বুঝতে পারিনি।”
জারিফ হাসলো।নাতাশার গালে হাত রেখে বললো,,
“ব্যাপার না সোনা।তুমি মন খা’রাপ করো না।”
নাতাশা এবার ঠোঁট মেলে হাসলো।জারিফ লিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,,”ওয়াশরুমটা কোন দিকে?”
লিয়া উঠে দাঁড়ালো।বললো,,”আমার সাথে চলুন।”
জারিফ লিয়ার সাথে যেতে থাকলো। লিয়া ওর রুমে এসে বললো,,”শার্টটা খুলে দিন।”
জারিফ চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বললো,,”বাহবা তুমি তো দেখছি আমার থেকেও ফাস্ট।সরাসরি কিনা খুলাখুলির কথা বলে ফেলছো।”
লিয়া চোখ পাকিয়ে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,”ধ্যাত।আজেবাজে কথা রাখুন।আর আপনার কথাই আপনাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি।কথা ফিনিশ করতে না দিয়ে আগেই কথা বলেন কেনো,হু।”
লিয়া দুইহাত বুকে গুঁজে বললো।একটু থেমে ফের বললো,,”আমি বলতে চাইছি। শার্টটা আমার কাছে দিন।আমি আইসক্রিম জড়ানো জায়গাটুকু পানি দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছি। ক্লিয়ার?”
জারিফ প্রশস্ত হাসলো। এক আঙ্গুল লিয়ার কপালে রেখে ঠোঁট আওড়ালো,,”আপনাকে কষ্ট করতে হবে না ম্যাডাম।আপনি শুধু ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিন তাতেই হবে।আমি নিজেই ক্লিন করে নিচ্ছি।”
জারিফের এমন আপনি করে সম্বোধনে লিয়া ঠোঁট চওড়া করে হাসে।ইশারা করে দেখিয়ে দেয়।জারিফ ওয়াশরুম থেকে একহাতে পানি দিয়ে বুকের পাশের জায়গাটা ধুয়ে নেয়।যেখানে আইসক্রিম লেগেছিলো।জারিফ ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখতে পায়।লিয়া ব্যালকনি থেকে টাওয়াল হাতে আসছে।লিয়া জারিফের দিকে টাওয়াল বাড়িয়ে দেয়।জারিফ এবার আবদার করে বললো,,
“উঁহু! এবার তোমার কাজ।তুমিই মুছে দাও।”
লিয়া মৃদু হাসলো।লিয়া একহাতের সাহায্যে টাওয়াল দিয়ে শার্টের ভেজা অংশটা মুছতে থাকে।জারিফ ভ্রু যুগল কুঁচকে শুধালো,,”এই আমি তোমাকে ছাদে যেতে বললাম। গেলে না যে।”
“আসলে আম্মু একটু কাজ করতে বললো।আঁটকে গিয়েছিলাম তাই যাওয়া হয়নি।আপনি এইজন্য রেগে আছেন কি?”
আচমকা জারিফ লিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে।একটানে নিজের সাথে মিশে নেয়।লিয়া অপ্রস্তুত হয়।শুকনো ঢোক গিলে নেয়।জারিফ একহাতে লিয়া মুখের উপর থাকা চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দেয়।জারিফের এত কাছে থেকে লিয়ার হৃদস্পন্দন ফাস্ট হতে থাকে। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে।জারিফ লিয়ার কপালে কপাল ঠেকিয়ে ঘনঘন কয়েকবার শ্বাস ফেললো।মৃদু আওয়াজে বললো,,”উঁহু।আমি ভেবেছিলাম এরকম কিছু একটা হবে।আর নয়তো সবার সামনে দিয়ে বাইরে আসতে তোমার অস্বস্তি হবে।তাই হয়তো আসছো না।”
লিয়া বিনিময়ে স্মিত হাসলো। জারিফের খুব ইচ্ছে করছিলো লিয়ার কপালে ঠোঁট ছোঁয়াতে।জারিফ দুই পাঁচ না ভেবে মনের ইচ্ছেটাকে প্রাধান্য দেয়।আচমকা লিয়ার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।লিয়ার কপালে প্রগাঢ় চুম্বন আঁকে।কোমড়ে পেঁচিয়ে রাখা জারিফের হাতের উপর লিয়া ফট করে একহাতে খামচে ধরলো। জারিফের স্পর্শে লিয়ার সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায়। লিয়া আবেশে হরিণী আঁখিযুগল বন্ধ করে ফেলে।লিয়া জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে কাঁপাকাপা গলায় বললো,,
“ছাড়ুন। দরজা খুলা।কেউ চলে আসবে তো।”
জারিফের কোনো ভাবান্তর না পেয়ে লিয়া ফের জড়ানো কন্ঠে বললো,,”জারিফ।”
জারিফ এবার মাথাটা তুলে লিয়ার দিকে তাকালো মুচকি হেসে বললো,,”তাড়াতাড়ি তওবা পাঠ করো।নিজের বরের নাম ধরে ডাকছো।”
লিয়া মাথাটা নুইয়ে নিলো।জারিফ দ্রুত বলে উঠলো,,
“আরে আমি তো মজা করে বললাম।তুমি আবার সিরিয়াসলি নাও-নি তো।তবে তোমার মুখে নিজের নামটা শুনতে আমার অদ্ভুত এক সুন্দর অনুভূতি হলো।”
জারিফ লিয়ার গলায় এক আঙ্গুল ছোঁয়ায়।মাদকতা মেশানো কন্ঠস্বরে বলতে থাকে,,”তোমার এই তিলটা আমাকে খুব করে টানে। বারবার ইচ্ছে করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে।তবে আগে তোমার গোলাপী পাতলা ওষ্ঠদ্বয়ের টেস্ট নিতে চাই।যা আরো বেশি আমাকে মাতাল বানিয়ে দেয়।তোমার উষ্ণ ঠোঁট আমার ঠোঁটের ছোঁয়ায় সিক্ত করতে চাই।”
কথাটা শেষ করে জারিফ লিয়ার ঠোঁটের দিকে এগোতে থাকে এমন সময় কারো আসার শব্দ পেয়ে জারিফ লিয়াকে ছেড়ে দেয়।লিয়া ছাড়া পেয়ে দ্রুত ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ায়।লিয়া বুক ভরে শ্বাস নেয়।উফফ!এতক্ষণ যেনো লিয়ার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। নাতাশা ধপধপ পা ফেলে রুমে আসে।লিয়া জারিফের উল্টোদিক হয়ে আছে।নাতাশা বললো,,”মামী খালামনি আমাকে খাইয়ে দিতে গিয়েছিলো।আমি বলেছি আমি তোমার কাছে খাবো।তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে?”
লিয়া যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচার একটা মুখ্য সুযোগ পেলো।লিয়া নাতাশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,,”হুম সোনা নিশ্চয় খাইয়ে দিবো।চলো এক্ষুনি দিচ্ছি।”
জারিফ একহাতে মাথা চুলকিয়ে হালকা হাসলো।লিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,,”ইশশ্! অল্পের জন্য হলো না।তবে লিয়া ঠিক সময় মতো টেস্টটা উসুল করে নিবো।রেডি থেকো,হাবিবী।”
লিয়া কথাটা শুনেও না শোনার ভান করে রুম থেকে চলে যায়।খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ করে ওরা রাতেই বাসায় ফেরে।
.
কয়েকদিন পর,,,
ঘড়ির কাঁটা বেলা এগারোটার ঘর ছুঁইছুঁই ।আজ শনিবার।রাজিয়া সুলতানা রাহবারের কোচিং এ গিয়েছে। কোচিং এ সব গার্ডিয়ানদের নিয়ে একটা মিটিং আছে সেখানে গিয়েছেন।বাসায় লিয়া আর কাজের মেয়েটা আছে।এমন সময় কলিংবেলের শব্দ হয়।লিয়া ড্রয়িংরুমের সোফায় গা এলিয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়ছিলো।লিয়া কাজের মেয়েটাকে ডেকে দেখতে বলে কে আসছে।
চলবে,,,
#কালেক্ট_গল্প_কথা
Story Link-গল্পের লিংক (রিভিউ+আলোচনা)💓https://facebook.com/groups/329590663119170/