#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব২৭
লিয়া সোফায় শুয়ে গল্পের বই পড়ছিলো।কে আসছে সেটা জানতে একহাতে সামনে মেলে রাখা বইয়ে দৃষ্টি রেখেই লিয়া কাজের মেয়েকে উদ্দেশ্য করে হাঁক ছেড়ে ডেকে ফের জিগ্গেস করলো।এমন সময় কারো গলার এহেম এহেম শব্দ শুনে লিয়া বই থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ঘাড়টা সামান্য ঘুরিয়ে তাকায়।লিয়া হতবাক চোখে দুই সেকেন্ড খানেক চেয়ে থেকে দ্রুত শোয়া থেকে উঠে বসলো।ঘনঘন দুইবার পলক ফেললো।অবাক কন্ঠে তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো,,
“আপনি।”
কোনো প্রতিত্তর না দিয়ে জারিফ লিয়ার থেকে একটু দূরত্বে সোফায় বসলো। শান্ত নজরে লিয়ার দিকে চেয়ে কপাল কুঁচকে বললো,,”এই তুমি এখনো রেডি হওনি কেনো বলতো?রাতে এতবার বলে রাখলাম দশটার মধ্যে রেডি হয়ে থাকবে ।সেখানে এখন এগারোটা বাজে।অথচ এখনো তুমি রেডি হওনি।”
“ইয়ে।না মানে।রাতে আপনাকে বললাম না আমাকে যেতে হবে না।আপনি কিছু একটা আনলেই হলো।আর এও বলেছি আম্মু শপিং এ গিয়েছিলো আমার জন্য শপিং করে এনেছে। আব্বুও সেদিন কিনে এনেছে। আপাতত ঈদের শপিং কমপ্লিট।তাই শুধুশুধু দরকার ছিলো না।”
লিয়া খানিকটা জড়তা নিয়ে কথাগুলো বললো।কাল রাতে জারিফ ফোনে লিয়াকে আজ ঈদের জন্য শপিং করতে নিয়ে যাবে বলেছিলো।লিয়া বারবার না করেছিলো।জারিফ লাস্টে বলেছিলো,রেডি থেকে আমি কালকে আসছি।রাতের পর আর ফোনে কথা হয়নি জারিফের সাথে।তাই লিয়া জারিফের কথাটাকে অতটা গুরুত্ব দিয়েছিলো না।যেহেতু সকালে আর ফোন করে বলেনি তাই লিয়া বিষয়টা আমলে নেইনি।
লিয়ার কথাশুনে জারিফ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো।লিয়াকে উদ্দেশ্য করে নির্বিকার কন্ঠে বললো,,”লিয়া দরকার আছে কি নেই সেটা আমি বুঝবো।তোমাকে বুঝতে হবে না।আমার বউয়ের জন্য শপিং করে দেওয়া এটা শুধু আমার রেসপনসিবিলিটিই নয়। বরং এটা টোকন অব লাভ। চাইলেই আমি একাই তোমার জন্য কিনে আনতে পারতাম।তবে ভাবলাম তোমার সাথে আমার এই প্রথম ঈদ।আর আমি চাই দুজনে মিলে বিষয়টা ইনজয় করি।আর এটাও বলতে পারো,মেয়েলি পছন্দ সম্পর্কে আমি অবগত নই। সেইজন্য হলেও তোমার সাথে যাওয়াটা প্রয়োজন।”
জারিফ নিজে থেকে যখন এসে যাওয়ার কথা বলছে।না গেলে বিষয়টা বেয়াদবি দেখায়।তাই লিয়া আর না করলো না।লিয়া বিনিময় মৃদু হাসলো।জারিফ লিয়াকে প্রশ্ন করলো,,
“আন্টিকে দেখছি না।”
“আম্মু রাহবারের কোচিং এ গিয়েছে।আর আব্বু অফিসে আছে।”
জারিফ কিছু ভেবে বললো,,”ওহ্। আন্টি নেই।তাহলে ওয়েট করি। আন্টি আসলে তারপর আমরা বেরোবো।না কি বলো তুমি?”
লিয়া স্মিত হেসে বললো,,”ব্যাপার না।আমি আম্মুকে ফোন করে বলে দিচ্ছি।”
আর কাজের মেয়েটার কথা বলে বাসায় থাকবে। তাই সমস্যা নেই।জারিফ লিয়ার কথা শুনে বিনিময়ে ঠিক আছে বলে ধন্যবাদ দেয়।লিয়া রাজিয়া সুলতানাকে ফোন করে বলে নেয়। অতঃপর রেডি হতে যায়।জারিফ সোফায় বসে ফোন স্ক্রল করছে।এমন সময় লিয়া রেডি হয়ে এসে মিষ্টি করে হেসে বললো,,
“তৈরি।”
জারিফ ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে লিয়ার দিকে চাইলো। চমৎকার হাসলো। চোখের পলক নামালো।ইশারায় বোঝালো ঠিক আছে। অতঃপর জারিফ হাত থেকে ফোনটা সোফায় নামিয়ে রাখলো।দুইহাতে টিশার্ট টা একটু টেনেটুনে ঠিক করে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।সেই সময় লিয়া বললো,,”আপনি যেতে থাকেন।আমি আসছি।”
“ওকে।”বলে জারিফ পা বাড়িয়ে যেতে থাকে।লিয়া ডায়নিং এর দিকে যায়।লিয়া শপিং এ যেতে সহজেই রাজি হচ্ছিলো না এর একটা কারনও আছে।তবে সরাসরি জারিফকে বলতে লজ্জা হচ্ছিলো। তাই শেষ অব্দি বলে উঠতে পারেনি। অবশেষে জারিফ যখন বাসায় এসেই পড়েছে তাই আজকে যাওয়াটাই বেটার হবে।এইভেবে লিয়া আর দ্বিমত পোষণ করেনি।লিয়া টেবিলের উপর থেকে কাঁচের জগটা হাতে নিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে নেয়। অতঃপর ডান হাতে গ্লাসটা নিয়ে খেতে থাকে। হাত থেকে গ্লাসটা নামিয়ে রাখতেই লিয়ার শ্রবণন্দ্রিয়ে বারি খেলো । শান্ত কন্ঠে বলা,,
“এই তুমি রোজা নেই?”
জারিফ সিঁড়ির কাছ পর্যন্ত গিয়ে পকেটে হাত দিয়ে দেখতে পায় ফোন নেই। ব্রেনে চাপ দিয়ে মনে করে। ওহ্!সোফায় নামানো হয়েছিলো।তারপর হয়তো আর উঠানো হয়নি।তাই ফোনটা নিতে আসে।সোফার উপর থেকে একহাতে ফোন তুলতে তুলতে কথাটা বললো জারিফ।লিয়ার বেশ অস্বস্তি হলো।লিয়া ঠোঁট কামড়ে ধরে পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে ফ্লোর খুঁটতে থাকে।জারিফ বিষয়টা আন্দাজ করতে পেরে বললো,,
“লজ্জা পাওয়ার কিচ্ছু নেই।আমি তোমার বর হই।রাতে ফোনে অসুস্থতার কথা বলতে পারতে।”
একটু থেমে কিছু ভেবে জারিফ ফের বললো,,”ওহ্!এখন বুঝতে পারছি এইজন্য তুমি যেতে রাজি হচ্ছিলে না। আচ্ছা লিয়া তুমি যেহেতু অসুস্থ তাহলে থাক।আজকে যাওয়ার দরকার নেই।এখনো একসপ্তাহ সময় আছে।আমরা দুই চারদিন পরেই যাবো,কেমন?”
লিয়া মুখটা তুলে জারিফের দিকে তাকালো।চোখের পলক ফেললো।মৃদু আওয়াজে বললো,,”সমস্যা নেই।আমি ঠিক আছি। যাওয়া যাবে। প্রবলেম হবে না।”
জারিফ লিয়ার মুখশ্রীতে শান্ত চাহনিতে চেয়ে বললো,,”আর ইউ শিওর? ঘুরাঘুরি করতে গিয়ে যদি শরীর খা’রাপ হয়।থাক আজ যেতে হবে না।পরেই যাবো।তুমি বাসায় রেস্ট করো,কেমন।”
লিয়া এবার বি’রক্ত হলো। ভ্রু যুগল কুঁচকে ঠোঁট আওড়িয়ে বললো,,”ধ্যাত বলছি তো প্রবলেম হবে না।”
জারিফ মৃদু হাসলো।একহাতে মাথা চুলকিয়ে বললো,,”আস ইউর উইশ।”
.
জারিফ লিয়াকে নিয়ে প্রাইডে ঢোকে।শাড়ির কালেকশনের কাছে গিয়ে জারিফ লিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,,”শাড়ি চুজ করো।”
লিয়া তড়িৎ জারিফের দিকে বিস্ফোরিত চাহনিতে চাইলো।অবাক গলায় বললো,,”শাড়ি।”
জারিফ এক শব্দে বললো,,”হুম।”
লিয়া ঠোঁট উল্টে বললো,,”শাড়ি বাদ দিন।অন্যকিছু নেই।শাড়ি আমি কখনো পড়িনি।শাড়ি পরে ঠিকঠাক চলাচল করতে পারবো বলে মনেহয়না। শেষমেষ মানুষের মধ্যে মান সম্মানের বারোটা বাজবে।শাড়ির কুঁচি আমি সামলে চলতে পারবো না।ঠিক পড়ে টরে যাবো।আর নয়তো এলোমেলো হয়ে যাবে।”
জারিফ একটু ফিসফিসিয়ে বললো,,”তোমাকে এ নিয়ে টেনশন করতে হবে না।আমি আছি তো।আমি সামলে নিতে হেল্প করবো।”
কিয়ৎক্ষন থেমে ফের ফিসফিসিয়ে বললো,,”জানো লিয়া ছোটো মা যখন শপিং করার সময় হলুদ শাড়ি নেওয়ার জন্য তোমাকে বারবার বলছিলো, ফাস্ট দর্শনে তোমার মুখটা ভালো করে দেখার আগেই তোমার মেদহীন ফর্সা পেট দেখিয়েছিলে।সেটা মনে হতেই ভেবেছিলাম তোমার শাড়ি না পড়াই বেটার।শাড়ি পরে ঠিকঠাক সামলাতে পারবে না আর অন্যের আমানত পাবলিক দেখবে।তখন বুঝতে পারিনি অন্য নয়।আমার নিজের আমানতকেই সংরক্ষিত রাখার জন্য অজান্তেই তোমাকে লেহেঙ্গা নেওয়ার কথা বলি।”
লিয়া বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে বললো,,”এই আপনি কি মিন করছেন বলুন তো?দেখিয়েছিলাম মানে কি? সেটা কি ইচ্ছে করে নাকি? আমি বুঝতে পারিনি,হুম।”
লিয়া মেকি রা’গ দেখিয়ে দুইহাত বুকে গুঁজে দাঁড়ায়।জারিফ প্রসঙ্গ পাল্টাতে লিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে বলে উঠলো,,”নাও শাড়ি দেখো।”
লিয়া শাড়ি দেখতে থাকে।জারিফ একটা চকলেট কালারের সিল্কের শাড়ি চুজ করে লিয়াকে দেখালো।লিয়া ঘাড় নাড়ালো।যার মানে পছন্দ হয়েছে।শাড়ির সাথে প্রয়োজনীয় সব কিছু, আরো কয়েকটা থ্রি পিস কেনে।বিয়ের পর প্রথম ঈদ হওয়ায় জারিফ শ্বশুর বাড়ির সবার জন্য গিফট কেনে। জান্নাত বেগম থেকে শুরু করে ছোট বাচ্চা আরিয়ান পর্যন্ত সবার জন্য গিফট কেনে।একএক করে সবার জন্য কিনতে কিনতে অনেক দেরি হয়ে যায়।সবার জন্য সবকিছু কিনে অবশেষে লিয়াকে ড্রপ করে দিয়ে বিকেলে নিজের বাসায় ফেরে জারিফ।
.
আকাশের বুকে বাঁকা চাঁদ হেসে উঠেছে।সাথে যেনো ছোটো থেকে বড় সব মুসলিম উম্মাহ খুশিতে মেতে উঠেছে। মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলো দুইটা।একটা ঈদুল ফিতর আরেকটা ঈদুল আযহা।এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর আসে। ধৈর্য্য আর আত্মশুদ্ধির মাস শেষে শাওয়ালের চাঁদ উঁকি দিয়েছে গগনে।আজকে চাঁদ রাত।ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে রাত্রি নয়টা বাজবে।লিয়া রুমের বিছানায় বসে আছে।পা ঝুলিয়ে রাহবার বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। লিয়া রাহবারের হাতে মেহেদি ডিজাইন করে দিচ্ছে। একপর্যায়ে লিয়া ছোট করে শ্বাস ফেলে বলে উঠলো,,
“এই ভাই।তুই কি মেয়ে নাকি যে তোকে মেহেন্দি নিতে হবে?ছেলে মানুষের আবার এত শখ কিসের মেহেন্দি নেওয়ার,হ্যা।”
লিয়া মজার ছলে কথাগুলো বললো। রাহবার বিরক্ত হলো।কপাল কুঁচকে বললো,,”কেনো?কে বলেছে ছেলে হলে মেহেন্দি নেওয়া যাবে না?”
“আশ্চর্য!ছেলে মানুষ আবার এসব আল্পনা এঁকে সাজগোজ করে নাকি? এটা তো মেয়েরা করে।”
“শোন আপু।আমি ছোটো। তাই একটু আধটু নিতেই পারি,হুম। আর আমার ডিজাইন যদি ভালো না হয়।তবে তোর হাতের ডিজাইন লেপ্টে দিবো কিন্তু।নিজের থেকেও আমাকে খুব ভালো করে দিবি,কেমন।”
লিয়া বড়বড় চোখ করে তাকালো।মেকি রা’গ দেখিয়ে বললো,,”সাহস।এরকম করলে আম্মুকে বলে বকুনি খাওয়াবো,হ্যা।”
রাহবারের মেহেদী দেওয়া শেষ করে লিয়া নিজে নিতে থাকে। কিছুক্ষণ পর,এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো।ফোনের স্ক্রিনে জারিফের নাম দেখে লিয়ার ঠোঁটে হাসি ফুটলো।জারিফ হটস আ্যপে ভিডিও কল দিয়েছে।লিয়া একহাতে একটা বালিশ নিয়ে সামনে রাখলো তাতে ফোনটা হেলান দিয়ে রাখলো।ফোন তুলতেই জারিফের ছবি স্ক্রিনে ভেসে উঠে।ছাদে থাকা ক্রেডেলে বসে আছে জারিফ।ঈদ উপলক্ষে নীল পুরো ছাদ জুড়ে লাইটিং করেছে। বিভিন্ন রঙের আলো জ্বলছে ছাদে।সেই আলোয় ফোনের স্ক্রিনে জারিফকে আকর্ষণীয় লাগছিলো।গায়ে ব্লু টিশার্ট।লিয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে সালাম দেয়।জারিফ সালামের উত্তর দিয়ে বললো,,
“ঈদ মোবারক।ঈদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো ইয়া হাবিবী।”
লিয়া ঠোঁট চওড়া করে হাসলো। মিষ্টি কন্ঠে বললো,,
“ঈদ মোবারক।”
দুজনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। অতঃপর লিয়া একহাতে টিউব নিয়ে আবার মেহেদী দিতে থাকে বাম হাতে।জারিফ বললো,,
“মেহেন্দি দিচ্ছো।ভালো।তবে আমার নামটা তোমার হাতে লিখো আবার।এই কাপলরা যেমন লাভ টাভ একে ফাস্ট লেটার লেখে এমন আরকি।”
লিয়া কপাল কুঁচকে তাকালো। ঠোঁট আওড়িয়ে বললো,,”আপনি থাকলে আপনার হাতে লিখে দিতাম।আমার হাতে তো আজ আর লেখা যাচ্ছে না। অলরেডি কিছু লিখে ফেলেছি।নতুন করে আর কোনো নাম বা লেটার কিছুই লেখার জায়গা নেই।সো স্যাড।”
শেষের কথাটা বলে লিয়া ফেসটা দুঃখী দুঃখী করলো।জারিফ তড়িৎ ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো,,”কি লেখেছো দেখি দেখি?”
লিয়া ফোনের সামনে হাতটা মেলে ধরলো।লাভ সেপ এর মধ্যে A+J লেখা।জারিফের কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ পড়লো।জারিফ লিয়াকে প্রশ্ন করলো,,
“এই লিয়া।বুঝলাম না।”
লিয়া একহাতে কপালে হালকা চাপড় দিয়ে বললো,,
“এই বুদ্ধি নিয়ে মাস্টারগিরি করেন কিভাবে?আমার তো মাথায় ধরছে না। উফ্! আচ্ছা ব্যাপার না আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।ধরেন,আমার এনাবুল থেকে এ আবার জান্নাত থেকে জে।আবার এরকম ধরেন আপনার আয়মানের এ আর জারিফ এর জে।আপনি মানেই আমি।আমি মানেই আপনি।বুঝলেন। সুন্দর হলো না বিষয়টা।”
জারিফ ফোনের স্ক্রিনে বোকাবোকা চোখে চেয়ে রইলো।জারিফ লিয়ার এমন ব্যাখা শুনে তবদা খেলো যেনো।জারিফ থমথমে মুখাবয়ব করে গম্ভীর কন্ঠে বললো,,”অদ্ভুত তোমার লজিক। এর থেকে লিয়ার থেকে এল আর জারিফের থেকে জে নিতে পারতে।”
লিয়া নাকমুখ কুঁচকে বললো,,”আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আরো আমাকে এপ্রিসিয়েট করবেন।তা না করে অদ্ভুত লাগছে আপনার।”
এই বলে লিয়া গালটা ফুলিয়ে রাখলো।জারিফ ফোস করে নিঃশ্বাস ফেলে লিয়াকে বললো,,”খুব সুন্দর তোমার চিন্তা ভাবনা।এককথায় অভাবনীয় চিন্তা ভাবনা তোমার।আমি তো তোমার চিন্তাভাবনার উপর ক্রাশ খেয়ে ফেলছি।”
জারিফের মজা করে বলা কথাশুনে লিয়া ফিক করে হেসে ফেলে। কিয়ৎক্ষন পর জারিফ মায়াময় স্বরে ডেকে বললো,,
“এই লিয়া।”
লিয়া তড়িৎ মুখটা তুলে ফোনের স্ক্রিনে চাইলো। এত সুন্দর আদূরে ডাকে লিয়ার বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো।কেমন যেনো অদ্ভুত একটা অনুভুতি হলো।লিয়া চোখের পাতা নামিয়ে আবার উঠালো। চোখ দিয়ে ইশারায় বোঝালো “কি” । জারিফ ঠোঁট কামড়ে ধরে বললো,,
“কালকে শাড়ি পড়বে।রেডি হয়ে থাকবে।তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে আসবো।”
লিয়া প্রশ্ন করে উঠলো,,”কোথায়?”
জারিফ দুদিকে ঘাড় নাড়িয়ে বললো,,”উঁহু।বলা যাবে না। সিক্রেট।”
লিয়া আর জোড় করলো না।আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা শেষে কল কাটে।
.
পরেরদিন,,,
ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে জানান দিচ্ছে তিনটা বাজতে চললো। রাজিয়া সুলতানা কিচেনে কাজ করছেন। কিছুক্ষণ আগে রাহবারের কয়েকজন বন্ধু আসছিলো।তাদের নাস্তা দেওয়া বাসনগুলো নিয়ে পরিষ্কার করছে।কাজের মেয়েটা ছুটিতে গ্রামে গিয়েছে আজ দুইদিন।আরো দুই দিনের আগে আসবে না তা বলেই গিয়েছে।আবার একসপ্তাহ লাগতে পারে।রাজিয়া সুলতানা বেসিন থেকে হাতটা ধুয়ে নিলেন।এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। টাওয়াল দিয়ে হাতটা মুছে নিলেন।লিয়াকে একবার ডাকলেন দরজা খোলার জন্য। লিয়ার কোনো সাড়া না পেয়ে নিজেই গেলেন।দরজা খুলে জারিফকে দেখতে পায়।জারিফ সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করে।জারিফকে বসতে দিয়ে বললেন,,
“তোমার বাবা মা কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে।”
রাজিয়া সুলতানা অমায়িক হেসে বললেন,,”নাতাশাকে আনতে পারতে।”
জারিফ ভদ্রভাবে বললো,,”নাতাশা ঘুমাচ্ছিলো।আর আন্টি আপনার থেকে অনুমতি নেওয়ার ছিলো, লিয়াকে একটু ঘুরতে নিয়ে যেতে চাইছি। সন্ধ্যার পরপরই দিয়ে যাবো।”
জারিফের অমায়িক আচরণে রাজিয়া সুলতানা মুগ্ধ হন।এইযে লিয়াকে কোথাও নিয়ে যাবে তারজন্য পারমিশন চাইছে।আজকালকের ছেলেদের মধ্যে এই ধরনের মনমানসিকতা পাওয়া বিরল।তাদের তো সব সময় ডোন্ট কেয়ার ভাব থাকে। সৌজন্যতার খাতিরেও পারমিশন নেওয়ার ধারধারে না অনেকে।রাজিয়া সুলতানা শান্ত গলায় বললেন,,
“জারিফ বাবা ঠিক আছে।তুমি বসো আমি লিয়াকে ডেকে দিচ্ছি।”
লিয়া ফোনে রুপন্তীসহ আরো কয়েকজন বান্ধবীদের সাথে গ্রুপে চ্যাট করছিলো।রাজিয়া সুলতানা গিয়ে বললেন,,”লিয়া।”
লিয়া শোয়া থেকে উঠে বসলো।কপাল কুচকালো।রাজিয়া সুলতানা ফের বললেন,,”জারিফ আসছে।”
লিয়া ফোনটা রেখে ড্রয়িংরুমে আসে।জারিফ রাহবারের সাথে গল্প করছে।রাহবারকে ঈদের সালামি দেয়।জারিফ নেভিব্লু কালারের পাঞ্জাবি পড়েছে। পাঞ্জাবীর হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা। চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা। ফর্সা গায়ে নেভিব্লু কালারটা বেশ সুন্দর লাগছে।লিয়া হালকা কেশে জারিফের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।জারিফ লিয়ার দিকে একনজর তাকিয়ে বললো,,
“সময় টেন মিনিটস। এরমধ্যে ফাস্ট রেডি হয়ে নিবে।”
লিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,,”আগে বলবেন তো কোথায় যাবো?”
“গেলেই দেখতে পাবে।”
লিয়া আর কথা বাড়ালো না। কিচেনে গিয়ে নাস্তা নিয়ে আসলো। এরমধ্যে রাহবারের এক বন্ধু এসে ডাকায় রাহবার বাইরে চলে যায়।লিয়া নাস্তার ট্রে টেবিলে রেখে জারিফকে ইশারা করলো।জারিফ অসহায় মুখ করে বললো,,
“আজকে আর এই মিষ্টি জাতীয় কিছু খেতে পারবো না।বাসা থেকে মা একবার জোর করে খাওয়িছে।এমনিতেই আমি মিষ্টি জাতীয় জিনিস একটু কমই খাই। প্লিজ, জোর করো না।”
“তাহলে ভাত ,গোশ মানে ঝালঝাল কিছু খাবেন।আনছি।”
“এই লিয়া না।এখন কিছুই খাবো না।দুপুরে খাবার খেয়েই আসছি।”
“ওকে।”
লিয়া সিঙ্গেল সোফায় বসে জারিফদের বাসার সবার কথা জিগ্গেস করছিলো।জারা, নাতাশা কিকরে হেনতেন। এরমধ্যে জারিফের ফোন আসে।জারিফ রিসিভ করে সালামের জবাব দিয়ে কপাল কুঁচকে বললো,,”হ্যা মিস কবিতা বলুন।”
কোনো মেয়ের নাম শুনে লিয়ার কিওরিওসিটি হলো।লিয়া কানটা যতটা পারা যায় ততটা সজাগ রাখলো।ফোনের ওপাশ থেকে কবিতা বললো,,
“ঈদ মোবারক মিস্টার জারিফ।”
“ঈদ মোবারক।”
“কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি?”
জারিফ সৌজন্যতার খাতিরে ভালোমন্দ জিগ্গেস করে।কবিতা কন্ঠে একরাশ শীতলতা মিশিয়ে ফের বললো,,” ঈদের এই আনন্দঘন পরিবেশে একাএকা ছাদে দাঁড়িয়ে আছি। ভীষণ বোর লাগছে।এই মুহূর্তে আপনার কথা মনে হচ্ছিলো।ভাবলাম ঈদের শুভেচ্ছা জানাই।আপনি তো নিজ থেকে জানালেন না।যাইহোক মিস্টার জারিফ ঘুরতে আসেন আমাদের এখানে।ঈদের দিন তো সবাই কোথাও না কোথাও ঘুরতে যায়।সেই হিসেবেই নাহয় আজ আসলেন।”
জারিফ লিয়ার দিকে তাকালো।লিয়া ড্যাবড্যাব করে জারিফের দিকে তাকিয়ে আছে।লিয়া স্পষ্ট না শুনলেও হালকা হালকা কিছু শুনতে পারছে।লিয়ার এভাবে তাকানোতে জারিফ খানিকটা অপ্রস্তুত হয়।শুকনো ঢোক গিলে নেয়।জারিফ বলতে থাকে,,”আসলে মিস কবিতা সবারই একটা প্রাইভেট লাইফ আছে।বললেই তো হয়না। সরি!কোনোভাবেই আজ সম্ভব নয়।”
কবিতা আশাহত হয়ে মৃদুস্বরে বললো,,”ইটস্ ওকে। বি’র’ক্ত করলে সরি।”
জারিফ ভদ্রতার খাতিরে বললো,,”নাহ্।ঠিক আছে।ভালো থাকবেন।ঈদের এই দিনটা আপনার আনন্দে কাটুক।আই উইশ ইউর হ্যাপি ডে।”
“থ্যাংকস আ লট।আই উইশ ঠু ইউ।”
কল কে’টে জারিফ লম্বা করে শ্বাস নিলো।লিয়া মোটা চোখে চেয়ে আছে।লিয়ার চোখমুখের রিয়াকশন দেখে জারিফ নিজ থেকেই বললো,,”আমার একটা কলিগ ফোন করেছিলো।”
লিয়ার এবার চিন্তা আরো বেড়ে গেলো।একটা মেয়ে ফোন দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে সেখানেই লিয়ার রা’গ হচ্ছিলো।আবার যখন কলিগ শুনলো তখন রা’গটা তরতর করে বাড়তে লাগলো। লিয়ার মনে হচ্ছে এইজন্য সুদর্শন বর থাকলে এই এক টেনশন।তবে লিয়ার একটু পৈশাচিক আনন্দ হলো জারিফের মুখায়ব দেখে।যাকগে জারিফ একটু হলেও অন্যমেয়েদের সাথে কথা বলার সময় লিয়াকে ভয় ঢর করে।এই ভেবে লিয়া মুডটা চিল করতে থাকলো।জারিফ লিয়াকে প্রশ্ন করলো,,
“তোমার দাদুবাড়ি যাচ্ছো কবে?”
“আপুর বিয়ে তো এই সপ্তাহেই।এইতো পরশু যাবো। আব্বুর অফিসে ছুটি ছিলো না।আর আব্বু যেহেতু এবার একটু অসুস্থও আছে।তাই আব্বুকে একলা রেখে আম্মু গ্রামে গিয়ে ঈদ করতে রাজি হয়নি।”
“গ্রামে গিয়ে কতদিন থাকবে?ইয়ে মানে কবে নাগাদ আসবে?”
“উমম! তাড়াতাড়িই চলে আসবো।এসে আমাকে এডমিশনের প্রিপারেশন নেওয়ার জন্য কোচিং এ ভর্তি হতে হবে।তাই দ্রুতই চলে আসবো মে বি।”
রাজিয়া সুলতানা লিয়াকে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে।জারিফের দেওয়া চকলেট কালারের শাড়িটা পড়ছে লিয়া। প্রয়োজনের থেকেও বেশি করে পিন দিয়ে শাড়ি আটকিয়ে নিয়েছে। কুঁচিগুলো যাতে এলোমেলো না হয় সেইজন্য পিন দিয়ে আটকিয়ে দেয়।দীঘল ঘনকালো চুলগুলো খোলা রাখে লিয়া।চোখে সরু করে কাজল দেয় ।কপালের মাঝে ছোট্ট কালো টিপ দেয়। ঠোঁটে হালকা করে পিংক কালারের লিপিস্টিক দেয়।গলায় সব সময় পরে থাকার স্বর্ণের চিকন চেইন,কানে হালকা দুল।রাজিয়া সুলতানা ভারী গহনা পড়তে বললে,লিয়া না করে।আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিলো লিয়া।লিয়ার লজ্জা লাগছে।লিয়া নিজেকে আয়নায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে।এই প্রথম শাড়ি পড়েছে লিয়া।তাও আবার প্রিয় মানুষটার দেওয়া প্রথম গিফট। অদ্ভুত সুন্দর ফিলিংস হচ্ছে।জারিফের সামনে শাড়ি পরে যেতেই লজ্জা লাগছে।লিয়া নিজেই নিজেকে আয়নায় দেখে ক্রাশ খাচ্ছে সেখানে জারিফ কিভাবে নজর দিবে এটা ভেবেই লিয়ার অস্বস্তিবোধটা সর্বোচ্চ হয়।লিয়া একহাতে শাড়ির কুচি ধরে গুটিগুটি পা ফেলে যায়।জারিফের থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে ক্ষীণ আওয়াজে বললো,,
“আমি রেডি।”
জারিফ মাথাটা তুলে লিয়ার দিকে চাইলো।জারিফের দুচোখ আঁটকে যায় শাড়ি পরা লিয়ার মাঝে। ফর্সা গায়ে চকলেট কালারটা দারুণ লাগছে।লিয়ার কিছুচুল কাধের উপর একপাশ দিয়ে সামনে রাখা।মুখে কৃত্রিম সাজগোজ নেই।সবটা নেচারাল। সাধারণ সাজগোজ অথচ লিয়াকে অসাধারণ লাগছে।লিয়াকে ভয়ংকর সুন্দর লাগছে।জারিফের হার্টবিট যেনো মিস হলো।জারিফ লম্বা করে শ্বাস টেনে নিলো।নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,”চলো”
গাড়িতে বসে লিয়া সিট বেল্ট বেঁধে নেয়।জারিফ ড্রাইভিং সিটে বসে স্ট্রিয়ারিংয়ের উপর দুইহাত রাখলো।সিটে গা এলিয়ে দিয়ে মাথাটা সিটের উপর রাখলো। অতঃপর ঘাড়টা লিয়ার দিকে ঘুরিয়ে সম্মোহনি দৃষ্টিতে চেয়ে বললো,,”শাড়িতে তোমাকে ভয়ংকর সুন্দর লাগছে।তোমাকে এই ভয়ংকর সুন্দর লুকে দেখে আমার তো ভয়ংকর সব কাজ করতে ইচ্ছে হচ্ছে।আমার ভেতরকার দুষ্টু সত্তা আমাকে বারংবার উস্কিয়ে যাচ্ছে। কোনো দূর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার তোমাকে নিতে হবে।”
জারিফের কথা মস্তিষ্কের নিউরনে পৌঁছাতেই লিয়ার সাড়া শরীর যেনো লজ্জায় অস্বস্তিতে অবশ হয়ে আসছে।লিয়া ভেতরে ভেতরে লজ্জায় নুইয়ে পড়ছে।লিয়ার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে এমন অনুভূত হচ্ছে।লিয়া দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।লিয়ার লজ্জা পাওয়া মুখশ্রী দেখে জারিফের চোখেমুখে আরো দুষ্টুমি খেলে যায়।জারিফ ইচ্ছে করে লিয়াকে লজ্জায় ফেলতে ফের বললো,,
“তোমাকে হট লাগছে। ইচ্ছে করছে টুপ করে খেয়ে ফেলতে। উফ্!নিজেকে কন্ট্রোল করাই মুশকিল হয়ে যাবে।হাউ কান আই কন্ট্রোল?টেল মি লিয়া।”
লিয়া দৃষ্টি সরু করে চাইলো।একহাতে শাড়ির আঁচল শক্ত করে মুঠো করে ধরলো।লিয়ার বুকের ভেতর থাকা হৃদপিন্ড নামক সংকোচ প্রসারণ যন্ত্রটা যেনো সর্বোচ্চ গতিতে চলছে। উফ্!কেমন যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে।লিয়া বুক ভরে শ্বাস টেনে নিলো। জারিফের দিকে না তাকিয়ে দৃষ্টি সামনে রেখে ক্ষীন আওয়াজে বললো,,”আপনাকে দেখে আগে আমি আঁচও করতে পারিনি আপনি এতটা ঠোঁট কা’টা হবেন। আপনাকে দেখলে বোঝা যায়না আপনি এতোটা রোমান্টিক।ইভেন এখনো অন্যকেউ দেখলেও টের পাবেনা আপনি এরকম অসভ্য পুরুষ।আপনাকে দেখে ভাববে ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানেননা।অথচ এখন কিনা
এতটুকু বলে লিয়া থেমে যায়।জারিফ একহাতে লিয়ার থুতনি ধরে নিজের দিকে মুখটা ঘুরিয়ে নিলো।লিয়ার মুখশ্রীতে সুগভীর শান্তনজরে চেয়ে বাম ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করলো।যার অর্থ”থেমে গেলে কেনো?”
লিয়ার কোনো উত্তর আসলো না। জারিফ লিয়ার আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল ঢুকিয়ে হাতটা ধরলো। নির্বিকার কন্ঠে বললো,,”অন্য কেউ জানবে না আমি এতটা রোমান্টিক এটাই স্বাভাবিক নয় কি?অন্যরা কি আমার বউ?যে তাদের সামনে সেটা শো করবো।আগে তুমি বুঝতে পারোনি আগে তুমি আমার বউ ছিলে না। ক্লিয়ার?”
এইযে জারিফ বারবার বউ বউ বলে সম্বোধন করছে লিয়ার খুব ভালো লাগছে।জারিফের থেকে এই সম্বোধনটা বেস্ট মনেহয় লিয়ার।লিয়া হাঁফ ছেড়ে বাচতে প্রসঙ্গ পাল্টাতে কন্ঠে চঞ্চলতা নিয়ে বললো,,
“এখনো যে বললেন না কোথায় নিয়ে যাবেন?আর গাড়ি স্টার্ট না দিয়ে এভাবে বসে থাকলে সময় চলে যাবে না। আশ্চর্য!”
জারিফ একটু নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসলো। পাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করলো।লাল বক্স খুলতেই স্বর্নের একটা রিং চকচক করে উঠলো।জারিফ লিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,,”তোমার ঈদের গিফট।বলতে পারো ঈদের সালামি।”
লিয়া মুচকি হেসে বললো,,”তাহলে তো সালাম করতে হবে।”
জারিফ বিনিময় মৃদু হাসলো।বললো,,”আপনাকে সালাম করতে হবে না ম্যাম।আপনি শুধু হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে রিং টা গ্রহণ করে এই অধমকে ধন্য করুন।তাতেই চলবে।”
লিয়ার ঠোঁটের কোণের বিস্তৃত হাঁসিটা আরো বাড়লো যেনো। লিয়া হাসিমুখেই হাত বাড়িয়ে দেয়।জারিফ একহাতে লিয়ার হাতটা ধরলো।অপর হাতে রিং টা লিয়ার অনামিকা আঙ্গুলে পড়িয়ে দিলো।লিয়া আঙ্গুলের দিকে চেয়ে রইলো। রিং এর উপর ছোট্টছোট্ট করে ইংরেজি অক্ষরে লিখা জারিফ’স ওয়াইফ।লিয়ার কাছে মনে হচ্ছে কোনো স্বপ্নে আছে। অদ্ভুত স্বর্গীয় অনুভূতি হচ্ছে।জারিফ লিয়ার হাতের উপর ঠোঁট ছোঁয়ায়।লিয়া মৃদু কেঁপে উঠলো।জারিফ মাথা তুলে লিয়ার দিকে চাইলো। একদৃষ্টে তাকিয়ে বললো,,
“ঈদের দিন মিষ্টি মুখ না করলে কেমন হয় বলতো?ঈদটা পানসে লাগবে।তাই মিষ্টিমুখ করতে চাই।”
লিয়া দ্রুত বলে উঠলো,,”তখন বাসায় বললাম ।কিছুই তো খেলেন না।আবার এখন এরকম বলছেন, অদ্ভুত কথাবার্তা আপনার।”
জারিফ ভ্রু কুঁচকে লিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,,”পায়েস , জর্দা নয়। এরথেকেও কড়া মিষ্টি খেতে চাই।তোমার থেকে ঈদের রিটার্ন গিফট হিসেবে হলেও কড়া মিষ্টি টা তো আজ চাইই চাই।রিটার্ন গিফট হিসেবে আশা করা যায় কিনা?কি বলো তুমি?”
বিষয়টা যখন লিয়া বুঝতে পারলো তখন সাথে সাথেই দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো।জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।
চলবে,,,
(গল্পটা আরো বড় করবার কথা যদিও ভেবেছিলাম। কিন্তু কেমন জানি আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে।খালি ইতি টানতে ইচ্ছে করছে।ভুলত্রুটি গুলো ধরিয়ে দিবেন। পরবর্তীতে আমি শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করবো।বলুন তো জারিফ লিয়াকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে? সর্বোচ্চ রেসপন্স পেলে আগামীকাল স্পেশাল একটা পর্ব পাবেন।)