সুখের_ঠিকানা #শারমিন_হোসেন #পর্ব৩৫

0
218

#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব৩৫

ভার্সিটিতে প্রথম দিন এসে, প্রথম ক্লাসে নিউ টিচারকে দেখে লিয়া রীতিমত অবাক হয়েছে।আউট ফিটে দেখা হওয়া লোকটাকে এখানে টিচার হিসেবে দেখে লিয়ার চক্ষু চড়কগাছ হয়।সেদিনের কথা লিয়ার মনস্তাত্ত্বিকে ভেসে উঠলো। তৎক্ষণাৎ লিয়ার আনইজি শুরু হতে লাগলো। ইশশ্!কি বিচ্ছিরি একটা অবস্থা। উফ্!সেদিন লোকটার সাথে অহেতুক রুঢ় আচরণ করা হয়েছিলো। সামান্য একটা শার্ট নিয়ে একটু বেশিই রিয়েক্ট করা হয়েছিল।আমাকে নিয়ে নিশ্চয় ব্যাড ধারণা হতে পারে উনার।লিয়া মনেমনে এসব ভাবতে থাকে। ‌লিয়ার ভাবনার ছেদ ঘটে পাশে বসা অরিনের কথায়।অরিন চোখেমুখে উৎফুল্লতা নিয়ে মৃদুস্বরে ঠোঁট আওড়ালো,
“আয়হায়!ম্যা তো মা’র গায়া ইয়ার।”

লিয়া ভ্রু কুচকালো।অরিনের দিকে সরু চাহনিতে চাইলো।লিয়ার চাহনিতে কোনো প্রকারের ভ্রুক্ষেপ না করে অরিন প্রফুল্ল চিত্তে ফের বলল,”নিউ টিচার দেখতে কেমন হবে?আমি তো এতক্ষণ ইমাজিন করছিলাম।তবে এখন সরাসরি দেখে তো আমার কল্পনার থেকেও বেশি হ্যান্ডসাম আর ড্যাশিং লাগছে।আ’ম ক্রাশড অন হিম।”

লিয়া অবাক হলো। মাত্র দেখলো আর এখনই ক্রাশ টাশ খেয়ে ফেললো। পরক্ষণেই লিয়ার নিজের কথা মনে হলো।সেও তো জারিফকে দেখে ক্রাশ খেয়েছিলো। তাহলে অবাক হওয়ার কি আছে?এটা ভাবতেই লিয়ার সত্ত্বা বলে উঠলো, উঁহু!জারিফকে শুধু ফাস্ট দর্শনে দেখেই ক্রাশ খাইনি। বাইরের সৌন্দর্য দেখেই নয়।সেদিন আমার হয়ে খা’রাপ লোকদেরকে মে’রেছিলো।আমার হয়ে প্রতিবাদ করেছিলো।আর সর্বোপরি ওনার পার্সোনালিটি যা খুব করে আমাকে আকৃষ্ট করেছিলো।লিয়ার ভাবনার মাঝেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিউ টিচার অমায়িক হেসে বললেন,

“আ্যট ফার্স্ট টেক মাই সালাম।হাউ আর ইউ?”

সবাই একসাথে নম্রস্বরে উত্তর দেয়। এবং সৌজন্যতার খাতিরে শুধালো,”স্যার,এন্ড ইউ?”

একশব্দে বলল,”ফাইন।”

একটু সময় নিলেন।পুরো রুমজুড়ে দৃষ্টি বুলিয়ে নিলেন।এমন সময় লিয়ার দিকে দৃষ্টি যায়।লিয়াকে চিনতে একমিনিটও সময় লাগলো না। শপিংমলের সেই মনোমুগ্ধকর হাসির মালকিনকে দেখে কিছুটা বিস্ময় হয়।এর আগে মেয়েটাকে মনেমনে অনেক খোজা হয়েছে। শহরের অলিগলি,শপিংমলে চলাচলের সময় অনেকের ভিড়ের মাঝে মেয়েটির দর্শন একবারের জন্য হলেও,মনটা খুব করে পেতে চাইতো।ব্যাড লাক মেয়েটির দর্শন মেলেনি। তবে আজও মেয়েটির সেই হাসি মস্তিষ্কের মেমরিতে গেঁথে আছে।আরো মনে আছে মেয়েটির রিয়েক্ট করা। যা কিনা এখনও মনে উঠলে আনমনেই হেসে উঠে মানবটা।তবে হঠাৎ করে এভাবে মেয়েটির দর্শন মিলবে তা কখনো কল্পনাতেও আসেনি।আবার কিনা নিজের ছাত্রী হবে সেই অপ্সরা মেয়েটি। উফ্! প্রথম দিন। প্রথম ক্লাসে নিজেকে খুব সুন্দরভাবে প্রেজেন্ট করবে।তাই নিয়ে কিছুক্ষণ আগ অব্দিও মনের মধ্যে প্ল্যান করছিলো।সেখানে এখন সেইসব চিন্তার যায়গা দখল করে নিলো নাম না জানা, প্রথম দর্শনে হাসিতে ঘায়েল করা অপ্সরা মিষ্টি মেয়েটি।লিয়ার হাতে পেন।পেন টা হাতে ঘুরাচ্ছে আর কিছু ভাবছে। নিষ্পলক চাহুনিতে মানবটা লিয়াকে পরখ করলো। অতঃপর নিজেকে ধাতস্থ করলো।হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

“স্টুডেন্টস?ইট’স্ মাই ফার্স্ট ক্লাস।আই ওয়ান্ট টু লিসেন টু মি পলাইটলি?”

সবাই বলল,”শিয়র স্যার শিয়র।”

লিয়া একটু নড়েচড়ে বসলো। ক্লাসে মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করলো।লিয়া মনেমনে প্রে করছে স্যার যেনো লিয়াকে চিনতে না পারে।লিয়া মনেমনে আওড়ায়, কয়েক মাস আগের কথা। এতদিনে স্যারের নিশ্চয় আমার ফেস বা সেদিনের ঘটনা কোনোটাই মনে নেই। উফ্!এ নিয়ে শুধুশুধু হেজিটেশন ফিল করার কোনো মানেই হয়না।লিয়া নিজেকে বুঝ দিতে থাকে।

“আই ওয়ান্ট টু ফ্যামিলিয়ার উথদ এভরিবডি ইচ আদার।”

একটু থেমে ফের বলল,”আগে আমার পরিচয় দেই।অবশ্য তোমরা সবাই না জানলেও অনেকে হয়তো আমার পরিচয় জানো।আমি ফারহান আহমেদ।আজ থেকে তোমাদের সয়েল সায়েন্স ক্লাস নিবো।”

অরিন মৃদুস্বরে বলতে থাকে,”এই স্যার তো নিজেই বলল।পরিচিত হওয়ার কথা।এই সুযোগ হাতছাড়া করা মোটেও সমীচিন হবে না।তাই সুযোগটা ফটাফট লুফে নিতে হবে।স্যারকে জিজ্ঞেস করি স্যারের বউ, বাচ্চা কাচ্চা আছে কিনা।হে গড!স্যারের আনসার যেনো নেগেটিভ হয়।”

কথাটা শেষ করে অরিন বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে নেয়।অরিনের কথা আর হাবভাব দেখে লিয়া তড়িঘড়ি করে অরিনের হাত চেপে ধরলো।অরিন নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো। এরূপ ধরার কারন কি?লিয়া ফিসফিসিয়ে বলল,”এই তুমি কি সত্যি সত্যিই এসব কিছু স্যারকে জিজ্ঞেস করবে নাকি?”

অরিন বাঁধা পেয়ে আর উঠলো না।সোজা হয়ে বসলো। স্বাভাবিক মুখায়ব করে ঠোঁট মেলে বলল,”হ্যা।”

লিয়া তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল।মুখায়ব গম্ভীর করলো।ফের অধর প্রসারিত হলো,”মাথা ঠিক আছে তোমার?স্যার পরিচিত হওয়ার কথা বলেছে।এর মানে এই নয়যে এসব পার্সোনাল বিষয় সম্পর্কে বলবে।এরকম বললে,সবাই হাসাহাসি করবে।বিষয়টা বাজে হবে।তাই বলছি এখন এভাবে প্রশ্ন করো না।এসব ব্যাপার নিয়ে যদি সত্যি তোমার ইন্টারেস্ট থেকে থাকে তবে পরে জেনে নিও। আর এমনি এসব বিষয় জানা যাবে।আমার মনেহয় স্যারকে এটা প্রশ্ন করা ঠিক হবে না।আমার কথাটা একটু ভেবে দেখো,কেমন?”

অরিন ঠোঁট উল্টালো।ভাবতে শুরু করলো। এরমধ্যে গম্ভীর কণ্ঠের আওয়াজ আসলো,”এইযে ইউ স্ট্যান্ড আপ।”

লিয়া আর অরিনের কথোপকথন নজরে আসে ফারহানের। অবশ্য নজরে আসলে বললে ভুল হবে।নজরটা কেমন জানি ঘুরেফিরে বারংবার লিয়ার দিকে আসছিলো।লিয়া একবার পাশে বসা অরিনের দিকে চাইলো তো ফের হোয়াইট বোর্ড বরাবর সামনে দাঁড়ানো সুঠামদেহী সুশ্রী স্যারের দিকে চাইলো।লিয়া বিষয়টা এখনো ঠাহর করতে পারছে না।ফারহান এক আঙ্গুল নাড়িয়ে বলল,”ইউ? দাঁড়াও।”

লিয়া এবার সিউর হয়।ওকেই বলছে।তবে লিয়া ভাবছে।কথাতো লিয়া একা বলেনি অরিনও বলেছে।তবে শুধু তাকে কেনো দাঁড়াতে বলছে।এসব সব কথা মনেমনে ভাবলেও মুখে কিছুই বলল না।লিয়া মুখটা মলিন করে উঠে দাড়ালো। নম্র স্বরে বলল,”ইয়েস স্যার।”

ফারহান লিয়াকে স্ক্যান করলো।লিয়া মাথাটা নিচু করে আছে।হয়তো সবার মাঝে মেয়েটাকে এভাবে দাঁড়াতে বলায় অস্বস্তি হচ্ছে।ফারহান কপাল কুঁচকে শুধালো,”নাম কি তোমার? ক্লাস চলাকালীন সময়ে এভাবে গল্প করছো কেনো?আমি কিছু বলছিলাম তো।সব কিছুরই একটা ডিসিপ্লিন আছে।এটা নিশ্চয় গল্প করার জায়গা নয়।”

সবার দৃষ্টি লিয়ার দিকে।সামনের দিকের ছেলেমেয়েরা ঘাড় ঘুরিয়ে লিয়ার দিকে চেয়ে আছে।কেউ আবার মুখ টিপে হাসছে। সাথে কানাঘুষা করছে।

লিয়া মাথা নুইয়ে রেখেই অপরাধীর স্বরে বলল,”সরি স্যার।”

লিয়ার থেকে স্যরি শব্দটা শোনার কোনো ইচ্ছেই ফারহানের ছিলো না।সে তো একচুয়েলি লিয়ার নাম কী সেটা জানতে আগ্রহী। এতএত স্টুডেন্টের মধ্যে হুট করে তো আর কাউকে এভাবে নাম জিজ্ঞেস করা যায়না।যখন লিয়ার সাথে কথা বলার একটা ছোট্ট স্কোপ পাওয়া গেলো।তখন ফারহান সেটা হাতছাড়া করতে চাইলো না। তাই তো ক্লাসে গল্প করার অজুহাত দেখিয়ে লিয়াকে দাঁড় করালো।আর কৌশলে নামটাও জিজ্ঞেস করলো।লিয়ার থেকে আসল উত্তরটা না পেয়ে ফারহান কণ্ঠে গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে ফের বলল,
“ইট’স্ ওকে। নেক্সট খেয়াল রাখবে। প্রশ্নের উত্তর পেলাম না।”

লিয়া মনে করার চেষ্টা করলো।সবাই এভাবে তাকিয়ে থাকায় লিয়ার অতটা খেয়াল ছিলো না।আর সবার মাঝে নিজেকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে লিয়ার সার্কাসের মতো লাগছে।লিয়া ছোট করে শ্বাস টেনে নিলো। বলল,”লিয়া।”

ফারহান তৎক্ষণাৎ রিপিট করলো,”লিয়া।তো মিস লিয়া সামনে পেছনে কিছু নেই?নাকি শুধুই লিয়া?”

সবাই শব্দ করে হেসে উঠলো। তৎক্ষণাৎ ফারহান বজ্রকণ্ঠে বলল,”সাইলেন্ট।”

একশব্দে পুরো ক্লাস নিশ্চুপ হয়ে যায়।সবাই যার যার মতো সোজা হয়ে বসলো।লিয়া আমতা আমতা করে বলল,”ইয়ে মানে স্যার।আমার পুরো নাম এনাবুল জান্নাত খাঁন লিয়া।”

উফ্ফ!মেয়েটা যেমন দেখতে মিষ্টি।ঠিক তেমনি তার নামটাও মিষ্টি।মেয়েটার নামের মতোই সুখানুভূতি হচ্ছে ফারহানের হৃদয়ে। ইশশ্! ফারহানের মনে হচ্ছে প্যারাডাইসের শীতল হাওয়া যেনো বইছে এই ক্লাস রুমটা জুড়ে।কেমন জানি অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে।ফারহান মনের অনুভূতিকে ধামা চাপা দিয়ে রাখলো।বাইরে সেটা চুল পরিমাণও প্রকাশ পেতে দিলো না।ইশারায় লিয়াকে বসতে বললো। ফারহান নিজের মন, নজরজোড়া সবকিছুকে যথাসাধ্য নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করলো। ক্লাসে মনোযোগী হলো।মুখে গম্ভীরতার ছাপ টেনে নিয়ে স্বাভাবিকভাবে বলল,

“স্টুডেন্টস?আজকে যেহেতু প্রথম ক্লাস। প্রথমে সাবজেক্ট সম্পর্কে জানবো।দেন অধ্যায় ভিত্তিক জানবো।”

কয়েকটা টপিকের উপর গুরুত্বপূর্ণ লেকচার দেন স্যার। অবশেষে টাইম শেষ হতেই স্যার চলে যায়। ক্লাস চলাকালীন সময়ে লিয়া আর টু শব্দ করেনি। প্রথম দিন এসেই এই অরিন নামক আধ পা’গ’লী মেয়েটার জন্য ভরা ক্লাসে লিয়াকে দাঁড়াতে হলো। স্যার ওরকম করে বলল।অনেকে কানাঘুষা করেছে লিয়াকে নিয়ে।তা দেখে লিয়ার লজ্জার সাথে ভীষণ রাগও হয়।আর স্যারই বা কেমন।কথা বলল দু’জনে আর একজনকে দোষারোপ করলো।স্ট্রেইন্জ!লিয়া বিড়বিড় করলো এই স্যার নিশ্চয় সেদিনের শোধ তুললো।সেদিন শার্টটা নিতে পারেনি।তাই আজকে হালকার উপর একটু রা’গ মেটালো। ওহ্, আল্লাহ!এরপর থেকে আমার জন্য কি কি ওয়েট করছে?তা শুধু তুমিই জানো।এই ব্যাটা ফারহান। উফ্!স্যরি ফারহান স্যার যেনো পছন্দের শার্টটা না পাওয়ার রা’গ আমার উপর আর না ঝারে। হেল্প মি আল্লাহ। এরমধ্যে অরিন চোখ ছোটো করে লিয়ার দিকে চাইলো।ফেসটা দুঃখী দুঃখী করে ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,

“স্যরি গো।আমার জন্যই তোমাকে দাঁড়াতে হলো।আমার উপর রা’গ করো না।যাও এই গরমে তোমাকে এক বক্স কোণ আইসক্রিম দেবো, তবুও মুখ ভার করে থেকো না।আমার সাথে কথা বলো। ‌আমি আবার কথা না বলে বেশিক্ষণ থাকতে পারিনা।”

লিয়ার এবার হাসি পেলো।তবে হাসলো না। পাশে বসা অরিনকে পরখ করলো।গায়ে কমলা রঙের একটা কুর্তি, জিন্স প্যান্ট,গলায় ওড়নাটা পেঁচিয়ে রাখা।দেখতে বেশ সুন্দরী।তবে কথা বলে মনে হচ্ছে মনটা ভীষণ ভালো।ঐ যাকে বলে,প্যাচ গোচ নেই সহজ সরল।লিয়া ফোনটা বের করলো। স্ক্রল করতে করতে শুধালো,

“এখন কি ক্লাস আছে?”

“এগ্রোনমি।”

“এর উপরও কি ক্রাশ টাশ খেয়েছো নাকি?”

অরিন কানের পাশে একহাত নাড়ালো। ভ্রু যুগল কুঁচকে বলল,”ধূর!আমাকে কি তোমার লেসবিয়ান মনে হয়?একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের উপর ক্রাশ খাবো। এগ্রোনমি ম্যাম নেয়।দেখতে খুব স্মার্ট। ওয়েট করো আসলেই দেখতে পাবে।”

একটু থেমে,অরিন উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে ফের বলতে লাগলো,”জানো। প্লান্ট প্যাথলজির একজন টিচার আছে শুনেছি খুবই হ্যান্ডসাম।সিনিয়ররা পর্যন্ত ক্রাশ খায়।এখনো দেখিনি।স্যারের নাকি এক্সাম চলছে।এখনো আমাদের ক্লাস নিতে আসেননি। আচ্ছা সেই টিচারকে তোমার জন্য রেখে দিলাম।তুমিও তো খুব সুন্দর।তারসাথে তোমার সেটিঃস করার ক্ষেত্রে যেকোনো প্রকারের হেল্প লাগলে বলো। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো হেল্প করার।তবে তার আগে তোমাকে কিন্তু আমাকে হেল্প করতে হবে।ফারহান স্যারকে কি করে প্রোপোজ করবো?আইডিয়া দাও তো।”

লিয়া মুচকি হাসলো।লিয়া বেশ বুঝতে পারলো অরিন জারিফের কথা বলছে।সেই হ্যান্ডসাম সবার ক্রাশ যে লিয়ার বর।তার সাথে নতুন করে কোনো প্রকারের সেটিঃসের প্রয়োজন নেই।বিয়ে নামক মেইন সেটিং সেই কবেই তো হয়েছে।মনের সাথে মনের সেটিংও হয়ে গিয়েছে।লিয়া আনমনেই হেসে ফেলে।অরিন কপালে প্রগাঢ় ভাঁজ ফেলে।বলল,”কি হলো হাসছো কেনো?আইডিয়া দাও।ভালো ভালো কিছু বুদ্ধি দাও।”

লিয়া নিজেকে ধাতস্থ করে।সোজা হয়ে বসলো জড়তা নিয়ে বলল,”কই কিছু না।এমনি।আর আমি কি আইডিয়া দেবো? এসব ব্যাপারে আমার তেমন এক্সপ্রিয়েন্স নেই।”

“যেমন এক্সপ্রিয়েন্স আছে তেমনই দাও।”

লিয়া এবার বি’রক্ত হলো।একে কিকরে বোঝাবে?আর এতো নাছোড়বান্দা দেখা যাচ্ছে। ক্লাসে ম্যাডাম আসতেই লিয়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।এই অরিনের থেকে আপাতত বাঁচলেও,ম্যাডামকে দেখে লিয়া বিস্মিত হয়। লিয়া অবাক হয়ে ভাবে,আজকে যেনো একের পর এক চমক দেখছি। ব্লা ব্লা প্রথম দিন এসেই আমি তো সারপ্রাইজড হয়ে গেলাম।এটা তো সেই ডানাকাটা সুন্দরী।যাকে রুপম ভাইয়ার শ্বশুর বাড়িতে জারিফের সাথে কথা বলতে দেখেছিলাম।এতটুকু ভেবেই লিয়া থামলো।ফের কিছু মনে হতেই আওড়ালো,ও তারমানে জারিফের কলিগ ইনি।ধ্যাত!আমি আরো সেদিন উল্টাপাল্টা কিসব ভেবেছিলাম।

কবিতা ক্লাস নিয়ে বের হয়।পরপর দুইটা ক্লাস শেষ হয়। অনেকে তো উঠে করিডোর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে।আবার কেউকেউ তো বাকি ক্লাস না করে চলে যাচ্ছে। লিয়া তিনটা ক্লাস শেষ করে বাসায় ফেরে। জারিফের সাথে সেদিন দেখা হয়না।
.
পড়ন্ত বিকেল। সুন্দর রোদ ঝলমলে দিন।রোদের তাপ মিইয়ে এসেছে। সূর্য পশ্চিম আকাশের দিকে ঢলে যাচ্ছে। ঝিরিঝিরি মৃদু বাতাস বইছে। সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে।ছাদে নীল আর নাতাশা বল খেলছে।নীল বাসায় ফ্রি ছিলো নাতাশা হঠাৎ বায়না ধরলো খেলবে বলে।নীল তাই নাতাশাকে সঙ্গ দিতে ফুটবল খেলতে ছাদে আসে।নাতাশা বলটা নীলের দিকে কিক করে।নীল তুলনামূলক আস্তে কিক করে আসছিলো।এবার আচমকা একটু জোরে কিক লেগে যায়।আর ওমনি দূর্ঘটনা ঘটে।কারো ‘আহ্ ‘ শব্দে নীল সামনে তাকায়।কথা ফোন স্ক্রল করতে করতে ছাদে আসছিলো।কয়েক কদম আসার পরে হঠাৎ করে একটা বল তেড়ে আসে। আর কথার গাঁয়ে লাগে।হাতে থাকা ফোনটা সাথে সাথে হাত থেকে নিচে পড়ে যায়।কথা রাগে গজগজ করতে করতে ফোনটা তুললো।এতো দামি ফোনটার উপরের কাঁচ টা ফেটে যায়।নীল কয়েক কদম এগিয়ে আসলো।নাতাশা পিছপিছ এসে বলল,

“এইরে নীল মামু দিলে তো কথা খালামনির ফোনটা ভে’ঙ্গে।এইজন্য ছোটো নানু তোমাকে সবসময় বলে তুমি কোনো কাজেরই না।খেলতে এসেও কিনা একটা এক্সিডেন্ট করে দিলে।”

নীল কনিষ্ঠ আঙুলের নখ দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে আছে।এই কথা নিশ্চয় এমনি এমনি নীলকে ছেড়ে দিবে না।এটা ভাবতেই নীলের হাত পা হিম শীতল হয়ে আসছে।কথা ফোনের দিকে একবার অসহায় দৃষ্টিতে চাইলো।ফের নীলের দিকে কটমট চোখে চাইলো।নীল নাতাশার কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে কথার এভাবে তাকানোতে ফাঁকা ঢোক গিলে নেয়।আমতা আমতা করে বলল,

“ইয়ে আমার কি দো’ষ?তুমিই তো ভুলভাল যায়গায় চলে এসেছো।আর হুট করে ভুলভাল যায়গায় এন্ট্রি নেওয়া তোমার স্বভাব ।”

কথার এবার রাগ হলো।একে তো দোষ করেছে।এতো সাধের ফোনটার এহেন দশা করে ছাড়লো।আবার তাকেই কিনা দোষারোপ করছে।কথা দাঁত কিড়মিড় করে বলল,”মানে?কিসব উল্টাপাল্টা বকছো,হ্যা?আর তুমি এতবড় একটা হাতির মতো ছেলে হয়ে কিনা এইটুকু একটা বাচ্চার সাথে খেলছো।তাও আবার এতজোরে কিক মা’রে।বাই চান্স যদি নাতাশার গায়ে লাগতো।তোমার তো কোনো কমন সেন্স নেই দেখছি।দিলে তো আমার ফোনটাকে ভেঙ্গে।”

“তুমি তো একটা অটিসটিক দেখছি।বল লাগলো তোমার কাঁধ বরাবর।আর তাতেই তোমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো।আর অমনি হাত থেকে ফোন নিচে পড়লো।”

কথার কপাল সংকুচিত হয়ে আসলো। কথা ছোট ছোট চোখ করে চাইলো।ফাজিল একটা। কাঁধে লাগার ফলেই তো হাতটা আচমকা নড়ে যায়।আর অমনি ফোন পরে যায়।সেখানে এই আস্ত খাটাশ টা আমাকে কিনা অটিসটিক বলে ফেললো।কথা দাঁত কটমট করে মনেমনে আওড়ায় তবে মুখে এসব বলল না।

“এর সাথে কথা বলাই বেকার।”

এটা বলতে বলতে কথা রাগে গজগজ করতে করতে ছাদে বসার জায়গায় গিয়ে বসলো।ফোন স্ক্রল করতে থাকে। নীল আর নাতাশা ফের খেলায় মেতে উঠলো।এমন সময় জারা কাঁচের মাঝারি আকারের একটা বোল হাতে ছাদে আসে।কথার পাশে গিয়ে বসলো।বোলের থেকে এক টুকরা পেয়ারা মাখানো মুখে পুরে নিলো।কথাকে ইশারা করে দেখিয়ে বলল,

“কথা আপু পেয়ারা মাখানো খাও। হেব্বি টেস্টি হয়েছে। আহ্!সেই স্বাদ।”

জারা ঝালে শোশাচ্ছে আর খাচ্ছে।কথা কপাল কুচকালো বোলের দিকে একনজর দেখলো।ফের জারার দিকে।কথা নাকমুখ কুঁচকে বলল,

“এখানে তো শুধু পেপার পাউডার দেখা যাচ্ছে।না বাবা আমি এতো ঝাল খেতে পারি না।তুমিই খাও।”

জারার নাকে চোখে পানি চলে আসার উপক্রম।জারা বলল,

“তুমি শুধু পেপার পাউডার দেখলে। কাসুন্দি দিয়েছি সাথে।খেয়েই দেখো না।খুব টেস্টি হয়েছে। আমাদের গাছের পেয়ারা।একটু আগেই গাছ থেকে পেরেছি।একদম তরতাজা।”

“না জারা। আমি একদম ঝাল খেতে পারি না। ঝাল খাবার দেখলেই ভ’য় লাগে। সেখানে লাল টকটক করছে তোমার পেয়ারা মাখানো।আমি পারব না।”

এমন সময়।নীল ধপাস করে জারার পাশে বসলো।বলল,”যার কথায় সব সময় ঝাল ঝরে।তার কিনা ঝাল খাবার খেতে ভ’য় লাগে। লাইক সিরিয়াসলি?ঠু ফানি।”

নীল কথাটা শেষ করেই শব্দ করে হাসতে থাকে।নীলের এরুপ হাসি দেখে কথার গা জ্বলতে থাকে।কথা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”অন্যকে নিয়ে চর্চা না করে নিজেকে নিজের চরকায় তেল দাও।আর তোমার খেতে ইচ্ছে হলে,তুমি খাও।”

কথার বলার সাথে সাথেই নীল এক টুকরো পেয়ারা তুলে মুখে দেয়।কথা মুখ বাঁকিয়ে বলল,”আরো খাও।”

নীল কয়েক টুকরা গালে পুরে দিলো। চিবাতে চিবাতে বলল,”দেখলে আমি একসাথে কতগুলো নিলাম।আর তোমার তো এক টুকরাও মুখে দেওয়ার সাহস হলো না।”

কথা এবার রা’গে জিদে এক টুকরো মুখে নিলো।কোনো রকমে গলাধঃকরণ করে।ফের জিদ করে নীলকে দেখিয়ে দিবে বলে আরেক টুকরো নেয়।নীলের ফর্সা মুখ লাল হয়ে আসছে ঝালে।ওদিকে কথারও সেম অবস্থা।কথার চোখের জল আর নাকের জল এক হয়ে আসছে।কথা ধপ করে উঠে দাড়ালো।একহাতে মুখের সামনে বাতাস করে চেঁচিয়ে বলল,”পানি।”

কথা আর কোনো কথা না বলে এক ছুটে নিচে নামতে থাকে পানির উদ্দেশে।নীল বুকে একহাত রাখে।গাল ফুলিয়ে কয়েকবার নিঃশ্বাস ফেলে ঝাল কমানোর চেষ্টা করে।জারা মুখ টিপে হাসছে।নীল জারার মাথায় একটা চ’ড় দেয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“এই শাকচুন্নী এতো ঝাল কেউ দেয়।ভাব নিয়ে বলতে গিয়ে নিজেই বাঁশ খেলাম।এখন তো আমার ভরা দীঘিতে ডুব দিতে ইচ্ছে করছে।ভরা দিঘির পানিতে ডুবে থাকলে,তাতে যদি ঝালটা নিমিষেই যেতো।”

নীল আর বেশি কথা বলতে পারলো না।এখন ফাস্ট নিচে যাওয়া দরকার।আর ফ্রিজ খুলে মিষ্টি খেতে হবে।তা ছাড়া এই ঝাল যাবে না।নীল চলে যেতেই জারা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। এরমধ্যে জারিফ ছাদে এসে জারার থেকে খানিকটা দূরত্বে থেকেই শুধালো,
“কি ব্যাপার জারা? নিশ্চয় কোনো ঝামেলা করেছিস।একা একা খিলখিলিয়ে হাসছিস।ওদিকে কথা আর নীল ওভাবে ছুটে নিচে গেলো দেখলাম।তুই কিছু করেছিস নিশ্চয়। ‌”

এরমধ্যে জারিফকে দেখতে পেয়ে নাতাশা জারিফের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।জারা উঠে দাঁড়ালো।জারিফের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,”পেয়ারা মাখাতে গিয়ে একটু বেশিই ঝালটা হয়ে গিয়েছিলো।এতো ঝাল নিজে খেতে পারছিলাম না। আবার ফেলে দিতে ইচ্ছে করছিলো না।তাই ছাদে নিয়ে আসি।ভাবলাম ওদের সাথে শেয়ার করে খাই।কথা আপু তো ঝাল খেতে পারে না।সে বেচারি দুই টুকরা মুখে দিয়েই তার নাস্তানাবুদ অবস্থা।আর এদিকে নীল ভাইয়া বেশি ভাব দেখিয়ে একসাথে কয়েক টুকরা খেয়েছে।সাথে সাথে তারও কেল্লা ফতে।”

জারা হাসিতে বেঁকে বেকে পড়ছে।জারিফ ধমকের সুরে বলল,”নিচে যা। ফ্রিজ থেকে ওদেরকে মিষ্টি জাতীয় খাবার দে।আর এরকম ফা’জ’লা’মো কখনো করিস না।কথার ঝালে এলার্জি আছে।যদি বেশি কিছু হতো।যাইহোক কখনো জেনেবুঝে এরকম কিছু করতে হয়না।যাতে করে কারো ক্ষতি হয়।”

জারা মাথাটা নুইয়ে ফেলে। অপরাধীর স্বরে বলল,”সরি ভাইয়া। নেক্সট কখনো এরকম হবে না।”

জারিফ স্মিত হাসলো।একহাতে জারার গালটা টেনে দিয়ে বলল,”ঠিক আছে।ছুটকি।কথার থেকে সরি বলে নিস।”

জারাও বিনিময় ঠোঁট চওড়া করে হাসলো।মাথা উপর নিচ করে হ্যা বলে।জারা নিচে নামতে থাকে।নাতাশা জারিফের হাতের এক আঙ্গুল ধরে ঝাঁকিয়ে মাথাটা তুলে বলল,”মামা।মামীকে দেখতে যাবো কবে?আর মামী আমাদের এখানে আসবেই বা কবে?অনেকদিন হলো মামীকে দেখি না।”

জারিফ স্মিত হাসলো। নাতাশার দিকে ঝুঁকে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।নাতাশার গালে হাত রেখে বলল,”উমম!সামনের সপ্তাহে নিয়ে যাবো তোমার মামীর কাছে,কেমন?”

মূহুর্তেই নাতাশার চোখেমুখে একরাশ খুশি দোলা দিয়ে যায়।নাতাশা উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল,”ইয়ে! কি মজা!মামীকে দেখতে যাবো।”

জারিফ নাতাশার হাত ধরে বসার জায়গায় আসলো।নাতাশাকে বসিয়ে দিলো। অতঃপর নিজে পাশে বসে বলল,”আসো তোমাকে তোমার মামীর সাথে কথা বলিয়ে দেই।”

জারিফ হটস আ্যপে লিয়ার কাছে ভিডিও কল দিতে থাকে।জারিফ মূলত এখন ছাদে লিয়ার সাথে কথা বলার জন্যই আসছিলো।আজকে লিয়ার ফাস্ট ক্লাস ছিলো। প্রথম দিন ভার্সিটিতে কেমন কাটলো।কোনো সমস্যা হয়েছি কিনা।এসব কিছু জানার জন্যই নিরিবিলি পরিবেশে ছাদে আসছিলো। লিয়া ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে টিভি দেখছিলো।এমন সময় সামনের কাঁচের টি টেবিলের উপর রাখা ফোনটা বেজে উঠলো।জারিফের ভিডিও কল দেখে লিয়া ফোনটা তড়িঘড়ি করে হাতে তুললো।তবে রিসিভ না করে রুমে আসলো। রুমে এসে বিছানায় বসে রিসিভ করে।ফোনের ওপাশ থেকে প্রথমে নাতাশাকে দেখা যায়। প্রথমে নাতাশার সাথে লিয়া কিছুক্ষণ কথা বলে। কিছুক্ষণ কথা বলে নাতাশা নিচে চলে যায়।লিয়া বিছানার হেডের সাথে হেলান দিলো।একহাতে একটা বালিশ কোলের উপর রাখলো।জারিফ মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,

“মিসেস জারিফের ভার্সিটিতে ফাস্ট ডে কেমন কাটলো?কোনো প্রবলেম হয়নি তো?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

“আমি ভেবছিলাম বউ আমার সাথে দেখা করার জন্য ক্লাস শেষে ওয়েট করবে।আমার এমন ভাবনা সে গুড়ে বালি।আমি এক্সাম শেষ করে এসে বউয়ের ছায়া পর্যন্তও দেখতে পেলাম না।পারব কিকরে বউ তো আমার জন্য ওয়েট না করেই চলে গিয়েছে।”

“আপনি আগে থেকে বলেনি ওয়েট করার কথা।আগে এরকম কথা হলে আমি ওয়েট করতাম।”

“এমনি মজার ছলে বললাম।”

“আপনার এক্সাম কেমন হয়েছে?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

আরো কিছু কথাবার্তা বলা শেষে জারিফ বলল,”আগামীকাল ভার্সিটি যাবে?”

“এখনোতো যাওয়ার চিন্তা ভাবনা আছে।তবে দেখি সকাল অব্দি চিন্তা টা ঠিক থাকে কিনা।”

জারিফ লিয়ার এমন জবাবে মৃদু হাসলো।ফের বলল,”আচ্ছা দেখে শুনে থাকো।কোনো সমস্যা হলে আমাকে সাথে সাথেই ফোন করে বলো।আর এই সপ্তাহটা আমি বিজি থাকবো।আমাকে থিসিসের ডাটা কালেক্ট করার জন্য ফিল্ডে যেতে হবে।তাই তোমার সাথে বোধহয় দেখা হবে না।”

একটু থেমে জারিফ মজার ছলে বলল,”আমি তো ইমাজিন করছি। ক্লাসে তোমার দিকে কোন নজরে তাকাবো। ছাত্রীর নজরে নাকি বউয়ের নজরে। পড়ানোর টপিক বাদ দিয়ে না আমার নজরজোড়া বারবার তোমার দিকেই নিবদ্ধ হয়।এই টেনশনে আছি।”

লিয়া শব্দ করে হেসে উঠলো। লিয়াও দুষ্টুমি করে বলল,”আমিও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি,বরের ক্লাস করার জন্য।বরকে টিচার রুপে দেখতে কেমন অনুভূতি হবে সেটা ইমাজিন করছি।”

দূর থেকে মাগরিবের আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে।জারিফ বলল,”আচ্ছা লিয়া এখন রাখছি।রাতে কথা বলবো। আল্লাহ হাফেজ।”

“ওকে। আল্লাহ হাফেজ।”
.

ছাদের রেলিং ঘেঁষে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে লিয়া আর জারিফ।লিয়া বেগুনি রঙের সিল্কের শাড়ি পড়েছে। শ্যাম্পু করা দীঘল ঘনকালো চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।জারিফের গায়ে নেভিব্লু টিশার্ট আর অফ হোয়াইট গ্যাভারডিং।জারিফ দুইহাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে সটান দাঁড়িয়ে আছে।লিয়ার কিছু চুল উড়ে এসে জারিফের মুখের উপর পড়ছে।জারিফের নাকে লিয়ার চুলের স্মেলটা কেমন যেনো মাদকতার সৃষ্টি করেছে।ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে উঠে আসা পেয়ারা গাছটার একটা ডাল বাঁকিয়ে লিয়া পেয়ারা পারতে চেষ্টা করছে। অল্পের থেকে লিয়া নাগাল পাচ্ছে না।হুট করে জারিফ লিয়াকে দুই হাতে শুণ্যে তোলে।লিয়া ভড়কে যায়। তৎক্ষণাৎ জারিফের দিকে চাইলো। জারিফ ইশারা করলো পেয়ারাটা ছিঁড়তে।লিয়া মুচকি হেসে একহাতের সাহায্যে পেয়ারাটা ছিঁড়ে নিলো। অতঃপর জারিফ লিয়াকে আস্তে করে নামালো।লিয়া পেয়ারা খেতে থাকে। জারিফকে খেতে বললে,জারিফ না করে।জারিফ মুগ্ধ নয়নে লিয়াকে দেখতে ব্যস্ত। লিয়া ইশারা করে বলল,

”কি দেখছেন?”

জারিফের নির্লিপ্ত জবাব,”তোমাকে।”

“আমাকে কি আজ নতুন দেখছেন নাকি?”

“তোমাকে যতো দেখি।আমার কাছে ততই নতুন লাগে।আর আমি বারংবার নতুন করে তোমার প্রেমে পরি।তোমার ছোট ছোট সব কিছু আমার কাছে এতো ভালো লাগে যা তোমাকে বলে বোঝানো যাবে না।এইযে তোমার কথা বলার ধরণ, তোমার হাটা চলা এক কথায় বললে তোমার সবকিছুতেই আমি মুগ্ধতা খুঁজে পাই। যাকে ভালো লাগে তার সব কিছুই নাকি ভালো লাগে।তবে আমি বলবো আমার ব্যক্তিগত রমণীর সব কিছুই সবার থেকে বেস্ট আমার দু’চোখেতে।”

“আর আমার শুধু আপনাকেই পছন্দ।আমার ইচ্ছে গুলো পূরণ হয়েছে।আমার স্বপ্নগুলো বাস্তব হয়েছে।আমি আপনাকে আমার করে পেয়েছি।আমার আকাঙ্ক্ষা আপনি ছিলেন।আমার প্রতিটা মোনাজাতে আপনি আছেন।আপনি জানেন কি?জানেন না?সুখ, শান্তি, প্রশান্তি যা বলুন না কেনো আমার সব কিছুই আপনি।এক কথায় বললে আপনি আমার সুখের ঠিকানা।”

জারিফ মৃদু হাসলো।ভাব নিয়ে বলল,”আই নো।”

একটু সময় নিয়ে জারিফ আকাশের দিকে চাইলো।নির্বিকার চিত্তে ফের বলল,”তুমি মেঘকে শুধাতে পারো,তারা তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার সাক্ষী।এমনকি বিস্তৃত আকাশ,খোলা প্রান্তর সব কিছুই জানে,আমি তোমাতেই অভ্যস্ত।তোমার ছোটো ছোটো পাগলামি আমি উপভোগ করি।যা আমার মন ছুঁয়ে দেয়।”

লিয়া বিনিময় চমৎকার হাসলো।জারিফ সুগভীর শান্তনজরে সেই হাসিটা দেখলো।আকাশে ঘন কালো মেঘ জমেছে।যেকোন সময় অঝোর ধারায় বর্ষণ হতে পারে।হালকা বাতাসের পরিমাণ বেড়ে গেলো মূহূর্তেই। গাছের ডালপালার ঝাপটানো বেড়ে গেলো। লিয়ার কাছে মনেহচ্ছে ডালপালা যেনো নৃত্য পরিবেশন করছে। সুন্দর একটা পরিবেশ বিরাজ করছে।হালকা অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে ধরণী।আবছা আলোকে ঢেকে দিয়ে অন্ধকারে মুড়িয়ে দিচ্ছে। মৃদু ঠান্ডা আবহাওয়ায় সুন্দর পরিবেশে জারিফের পাশে থাকতে খুব শান্তি শান্তি লাগছে।লিয়া শাড়ির আঁচল একহাতে নিয়ে একটু ঘুরলো। বাতাসে আঁচলটা কি সুন্দর উড়ছে।লিয়ার আঁচলটা জারিফের মুখের উপর পড়লো। জারিফ একহাতে আঁচলটা মুখ থেকে সরিয়ে দেয়।লিয়া জারিফের মুখশ্রীতে শান্ত নজরে চাইলো। মিষ্টি হাসলো। হঠাৎ গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠলো,

তুমহে বোলেনা পছনদ হ্যা,মুঝে বোলতি হোয়ে তুম
তুমহে হাসনা পছনদ হ্যা,মুঝে হাসতে হ্যা তুম
ব্যাস ইতনাহি ফারাক হ্যা,তেরি মেরি পছনদ ম্যা
তুমহে ইয়ে সব কুচ পছনদ হ্যা,অর মুঝে পছনদ হো তুম

আকাশে বিদ্যুৎ চমকালো।লিয়া ভয়ে একটু কেঁপে উঠল।জারিফ চোখের পলক ফেলে ইশারায় লিয়াকে বোঝায়, ভ’য় নেই।আছি তো।লিয়া সময়টা এনজয় করতে থাকে।এরপর বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে শুরু করলো।লিয়া দুইহাত মেলে ধরে আকাশের দিকে চাইলো। বৃষ্টির বেগ বাড়তে লাগলো।লিয়ার মুখ বেয়ে টপটপ পানি ঝরছে।জারিফ পেছন থেকে লিয়ার কোমড়ে হাত রাখলো। শাড়ির আঁচল ভেদ করে জারিফের হাত লিয়ার উন্মুক্ত পেট স্পর্শ করতেই লিয়ার সারা শরীরে শিরশিরানি বয়ে যায়।জারিফ লিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।একহাতে লিয়ার মুখের উপর থাকা ভেজা চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দেয়। অতঃপর জারিফ গাইলো,

তুমকো বারিষ পছনদ হ্যা,মুঝকো বারিষ ম্যা তুম
তুমকো বারিষ পছনদ হ্যা,মুঝকো বারিষ ম্যা তুম


শাড়িটা ভিজে লিয়ার গায়ের সাথে লেপ্টে গিয়েছে।লিয়া দুইহাত মেলে ধরে বৃষ্টিতে ভিজছে।জারিফ নিজের ভেজা চুলগুলো ব্যাক ব্রাশ করতে করতে ফের গাইলো,

ওহ তুমহো ভিগনা আচ্ছা লাগতা হ্যা,মুঝে ভিগতি হ্যা তুম

লিয়া শব্দ করে মৃদু হাসলো।একহাতের মুঠোয় বৃষ্টির পানি ধরে তা ছিটিয়ে দিতে দিতে গাইলো,

তো ফের বারিষ কি হে মৌসম, মেরি সাথ রেহনা তুম।

জারিফ লিয়ার ভেজা চুলের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে দিলো।লিয়া জারিফের কাঁধে মুখ লুকালো।

লিয়া ঘুমের মধ্যে নড়ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।এমন সময় ফোনের কর্কশ শব্দে লিয়ার ঘুম হালকা হয়ে আসে।লিয়া বি’র’ক্ত হয়।লিয়া চোখ মেলে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে।লিয়া ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো।লিয়া বুঝতে পারলো এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো।লিয়া একহাত গালে রেখে লাজুক হাসলো।খানিকটা লজ্জিত হলো। অতঃপর বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে অরিনের নম্বর দেখে কপালে ভাঁজ পড়লো।লিয়া বিরবির করে বলল,এই মেয়েটার জন্য গানটা শেষও হলো না।এত সুন্দর রোমান্টিক একটা স্বপ্নের বারোটা বাজিয়ে দিলো। গানটাও শেষ করতে দিলো না।এমনিতে তো ক্লাসে এ বকবকানিতে অস্থির করে ফেলে।লাইফে এই অরিন নামক নতুন এক প্যারা যোগ হয়েছে।লিয়া ফোন তুলল।ফোনের ওপাশ থেকে ব্যতিব্যস্ত গলায় অরিন বলল,

“এই লিয়া তুই কি আজ আসছিস ভার্সিটিতে?”

এক সপ্তাহ কে’টে গিয়েছে।এই এক সপ্তাহে লিয়া আর অরিনের মধ্যে ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে।দু’জনে এখন তুই করেই বলে।যদিও লিয়ার থেকে অরিন পাঁচ ধাপ এগিয়ে ছিলো।লিয়া বিরস কণ্ঠে বলল,”হুম।আসছি। কেনো কি হয়েছে?এত সকাল সকাল ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করছিস যে।”

“আজকে মিস্টার ফারহানের ক্লাস আছে।আমি তো হসপিটালের বেডে পরে থাকলেও আজকের ক্লাসটা মিস দিতাম না। উফ্! স্যার কত সুন্দর করে পড়া বোঝায়।”

লিয়া অবাক হলো।এই মেয়ের কানে আদৌতেও কি ফারহান স্যারের কোনো কথা ঢোকে।লিয়ার বিশ্বাস হয়না ঢোকে।হা করে ড্যাবড্যাব চোখে স্যারের দিকে চেয়ে থাকে।সে কিনা বলছে এই কথা।লিয়া বলল,”আচ্ছা।তাহলে রাখছি এখন। ক্যাম্পাসে দেখা হবে।বাই।”

“এই লিয়া?এক মিনিট।ওয়েট ওয়েট।”

লিয়া কপাল কুঁচকে শুধায়,”হ্যা বল।”

“ক্লাস শেষে ফারহান স্যারের সাথে আলাদা করে কথা বলার একটা স্কোপ নিবো।তুই কিন্তু হেল্প করবি।বুঝলি?”

“আমি।আমি কিভাবে হেল্প করবো?”

“ভার্সিটিতে আয়।সব বলছি।”

লিয়া ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল।আর কোনো বাক্য প্রয়োগ না করে কল কাটলো।লিয়া উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে রেডি হতে থাকে।জারিফ ফোন করেছিলো কিছুক্ষণ আগে।লিয়াকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলো।তবে লিয়া না করে।বলে শুধুশুধু উল্টো পথে আবার আসার কি দরকার ।আমি ড্রাইভার আঙ্কেলের সাথে চলে যাবো।পরে জারিফও আর কথা বাড়ায় না।ছোট করে ঠিক আছে বলে।
.
আজকে জারিফের নয়টায় ফাস্ট ইয়ারের ক্লাস আছে। জারিফ রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here