#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব৩৬
মেঘাচ্ছন্ন আকাশ সাথে ঝিরিঝিরি বাতাস। চমৎকার একটি দিন।লিয়া আর অরিন কৃষি অনুষদের গেইট পার হয়ে ধীর পায়ে হেঁটে যাচ্ছে আর কথা বলছে।অরিনের পরনে ব্ল্যাক কালারের টপস আর জিন্স। চুলগুলো ঝুঁটি করে বাঁধা। ফর্সা গায়ে কালো রঙটা বেশ ফুটে উঠেছে। দারুণ দেখাচ্ছে।অরিন একহাতে চুলগুলো কাঁধের উপর দিয়ে সামনে রাখতে রাখতে বলল,
“উফ্!গত কয়েকদিনের রেকর্ড তাপমাত্রার পরে আজকের মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়াটা খুব ভালো লাগছে ।গত কয়দিনের রোদের তাপে আমার গায়ের রঙটা নাকি তামাটে হয়ে গিয়েছে।এই কাঠফাঁটা রোদ্দুরের মধ্যে এত্ত এত্ত ক্লাসের পেশার।তার উপরে দুপুরে ঠিকমতো খাবার খাইনা।সেইজন্য দিনদিন শুকিয়ে যাচ্ছি সাথে গাঁয়ের রঙটাও তামাটে হয়ে যাচ্ছে। বাণীতে আমার আম্মু।”
এতটুকু বলে থামলো অরিন। শব্দ করে হাসলো।লিয়া বিনিময় মৃদু হাসলো। কিয়ৎক্ষন পরে অরিন ফের কণ্ঠে চঞ্চলতা নিয়ে বলল,
“এই লিয়া আমাকে ভালো করে দেখে বল তো।সত্যিই কি আমি দিনদিন রোগা পাতলা হয়ে যাচ্ছি?সাথে গাঁয়ের রঙটাও কি জামা কাপড়ের মতো ডিসকালার হয়ে যাচ্ছে?এরকম হলে তো মহা বিপদ। মিস্টার ফারহানকে ইমপ্রেস করবো কিকরে?এই টেনশনে আমি সারারাত ঠিকঠাক ঘুমোতে পারিনি।”
এই মেয়ে কথায় কথায় ফারহানকে টানে।যা লিয়ার মোটেও ভালো লাগে না।যেকোনো টপিকস নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে হুট করে তার ক্রাশ ফারহান কে টেনে আনা যেনো এর বাধ্যতামূলক কাজ।আর এই কাজ না করলে বড়সড় ক্ষমার অযোগ্য ভুল হয়ে যাবে।যা অরিনের কথাবার্তায় প্রকাশ পায়।লিয়া ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল। অরিনের দিকে চাইলো।চোখে মুখে অবাক হওয়ার এক্টিং করলো।কৌশলে প্রশ্নটা এড়িয়ে গিয়ে বলল,
“আরেব্বাস! ব্লাক কালারে তো তোকে হেব্বি লাগছে।ধবধবে দুধে আলতা গায়ের রঙটা আজ যেনো বেশি ফুটে উঠেছে। শুভ্র তুষারের মতো গায়ের রঙ, শুভ্র দন্তরাজি । উফ্ফ !আজ তোকে ভয়ংকর শুভ্রপরি লাগছে। মিস্টার ফারহান কেনো?যেকেউ তোর উপর ফিদা হতে বাউন্ড। হুঁ।”
অরিন একটু লজ্জা পেলো। লাজুক হাসলো।খুশিতে গদগদ হলো। একটু সময় নিয়ে অরিন ফের বলল,
“যেকেউ ফিদা না হলেও আমার চলবে ।আমার জন্য প্রে কর মিস্টার ফারহান যেনো ফিদা হয়।”
“তুই খুব মিষ্টি দেখতে।আমি প্রে করছি তুই যেনো ফারহান স্যারের থেকেও বেটার কাউকে লাইফ পার্টনার হিসেবে পাস।হ্যাপি?”
অরিন চোখ ছোট ছোট করে চাইলো।মুখটা ফ্যাকাসে করল।লিয়ার কথা অরিনের মনোঃপুত হয়নি।অরিন ঠোঁট উল্টে বলল,”কি হবে উনার থেকে বেটার কাউকে দিয়ে?যখন আমার স্বপ্নে উনি। আমার মাথা ভর্তি উনার চিন্তা।মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে উনার অবাধে পদচারণা। সেখানে বেটার কাউকে আমার চাই না।তুই তোর এই দোয়া তাড়াতাড়ি উঠিয়ে নে।আবার নতুন করে আমার জন্য প্রে কর।”
অরিনের ছেলেমানুষী কথা শুনে লিয়া ঠোঁট টিপে হাসলো। বলল,”আচ্ছা আমার ভুল হয়েছে।আর এরকম বলবো না।আমি আমার প্রে তুলে নিলাম।
এবার মন প্রাণ খুলে নতুন করে প্রে করছি তোর লাইফের ব্যক্তিগত পুরুষটি যেনো ফারহান স্যারই হয়।আরো দোয়া করি তুই ফারহান স্যারের শত সন্তানের জননী হ।এটা অবশ্য ইন ফিউচারের জন্য।”
অরিন লাজুক হেসে লিয়াকে থ্যাংকস জানায়। প্রফুল্ল চিত্তে বলল,”থেংকিউ জানু।এইজন্য তোকে এতো ভালো লাগে।তোর দোয়াটা একদম দিলে গিয়ে লাগছে। আহ্!কি শান্তি শান্তি লাগছে!”
এক হাত বুকে রেখে অভিনয়ের সুরে অরিন বলল।আর খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।কোনো রকমে হাসিটা থামিয়ে ফের কণ্ঠে চঞ্চলতা নিয়ে বলল,”এই লিয়া আমার যদি বড় ভাই থাকতো না,তোকে ঠিক ভাবী বানাতাম।আমি তো বাসায় আম্মুর কাছে তোর এত্ত এত্ত গল্প করি। আর বলি, ইশশ্!আমার সদ্য কলেজ পড়ুয়া ভাইটা আর যদি দুই বছরের বড় হতো না।তাহলে তোকে ভাবী বানাতাম।সেম এইজ বা দুই চার ছয় মাসের ছোট হলেও সমস্যা ছিলো না।তবে আমি ভেবেছি আমার নিজের ভাইয়ের বউ বানাতে পারলাম না তাতে কি হয়েছে?আমার কাজিনের তো আর অভাব নেই।তোর সাথে যাতে যায়।এরকম একটা কাজিনের সাথে তোর বিয়ের ঘটকালি করবো ভেবেছি। কেমন আইডিয়া?”
অরিন ঝকঝকে বত্রিশটি দাঁত বের করে হেসে উত্তরের আশায় আছে।টেপ রেকর্ডার একটা। উফ্! একনাগাড়ে গড়গড় করে বকবক করেই চলছে যেনো।লিয়া মনেমনে এসব ভেবে মাথা ঝাড়ল।লিয়া কোনো প্রকারের হেঁয়ালি ছাড়াই স্পষ্ট করে বলল,”আইডিয়া মন্দ নয়।এককথায় বললে আইডিয়াটা দুর্দান্ত।তবে এসব আকাশ কুসুম স্বপ্ন বাদ দে।কজ এসব সম্ভব নয়।তোর এই ঘটকালি আইডিয়ার কথা শুনলে আমার বর আ্যটাক ফ্যাটাক করে বসবে।আর তার বউকে নতুন করে বিয়েতে বসার জন্য ইন্সপায়ার করছিস শুনলে, তোর নামে মামলা দায়ের করবে।”
লিয়া মজার ছলে শেষের কথাগুলো বলে।তবে অরিনের চোখ যেনো কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার ন্যায়।অরিন বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে আছে লিয়ার দিকে।বর?অরিনের মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরছে। অরিন অবাক কণ্ঠে শুধালো,” বর মানে?আর ইউ ম্যারিড?”
“হ্যাঁ।”
লিয়া ছোট করে জবাব দিলো।অরিন কপাল সংকুচিত করে কৌতুহল বশত ফের বলল,”তাই!আমি তো সারপ্রাইজড ইয়ার।তা তোর শ্বশুর বাড়ি কোথায়?আর একটা কথা তুই তোদের বাসায় থাকিস নাকি?না মানে তোর আব্বুর ড্রাইভার দিয়ে যায় আবার নিতে আসে বলিস।তাই বলছি আরকি?”
“শ্বশুর বাড়ি এই শহরেই***।আর আমার বিয়ে হয়েছে। বাট এখনো উঠিয়ে নেওয়া হয়নি।”
কথাগুলো লিয়া খানিকটা জড়তা নিয়েই বলে।অরিন এক্সাইটেড হয়ে বলল,”আচ্ছা দোস্ত।জিজুর সাথে মিট করিয়ে দিস।সাথে ট্রিট চাই আমার।”
লিয়া স্মিত হাসলো।বলল,”ওকে। ঠিক সময় মতো মিট করিয়ে দেবো। সারপ্রাইজড হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাক।”
লিয়ার কথার মাঝেই অরিন লিয়াকে ইশারা করে বলল,”এই লিয়া দেখতো ঐটা ফারহান স্যার কিনা?”
ফারহান ফোন কানে ধরে আছে।কারো সাথে কথা বলছে হয়তো।এখান থেকে বেশ খানিকটা দূরত্বে।লিয়া তাকিয়ে দেখল। ছোট করে শ্বাস ফেলল।বলল,”হুঁ।”
“আমি স্যারের সম্পর্কে সব খবরাখবর যোগাড় করেছি।স্যার আনম্যারিড। টিএসসির উপরে ব্যাচেলরদের জন্য থাকার ব্যবস্থা আছে। সেখানে স্যার থাকে এও শুনেছি।”
লিয়ার এসব কথা শোনার কোনো আগ্রহ নেই।আর না তো লিয়া কোনো আগ্রহ দেখায়।অরিন এক্সাইটেড হয়ে ব্যতিব্যস্ত কণ্ঠে বলল,”এই লিয়া পা চালিয়ে চল।স্যারের সাথে কুশলাদি বিনিময় করি।চল।”
লিয়া কপাল কুঁচকে বলল,”বাদ দে এসব। ক্লাসের সময় হয়ে আসছে।এখন ফাস্ট ক্লাসে চল। স্যারের সাথে হাই,হ্যালো এসবের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।কেমন?”
“আমার যে স্যারকে ভালো লাগে এটা আকার ইঙ্গিতে স্যারকে বোঝাতে হবে না।অনুভবে না বলা কথা বুঝিয়ে দিতে হবে না? সেইজন্য হলেও হাই,হ্যালো এসবের দরকার আছে।”
এই মেয়েকে বুঝিয়ে লাভ নেই।লিয়া হতাশ হয়ে হাল ঝেড়ে দিলো।আর কোনো বাক্য প্রয়োগ করল না।
ফারহান কল কাটল। এরমধ্যে অরিন আর লিয়াও সামনে এগিয়ে আসছে। ফারহান পা বাড়াবে এমন সময় পেছন থেকে মেয়েলি কোমল কণ্ঠস্বর আসল,
“আসসালামুয়ালাইকুম স্যার।”
অরিন নম্র স্বরে সালাম দেয়।ফারহান পেছন ফিরল।লিয়া আর অরিনকে দেখতে পায়।লিয়ার দিকে নিটোল নজরে কয়েক সেকেন্ড চাইল। অতঃপর দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিয়ে মুখায়বে গাম্ভীর্য ভাব টেনে নিয়ে সালামের উত্তর দেয়।অরিন গলার স্বর নামিয়ে ফের বলল,”কেমন আছেন স্যার?”
লিয়া অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল। মনেমনে আওড়ালো, উফ্!এতো খেজুরে আলাপ জুড়তে বসছে দেখছি।লিয়ার ভাবনার মাঝেই ফারহান হালকা কেশে গম্ভীর গলায় বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তোমরা কেমন আছো?”
অরিন প্রফুল্ল চিত্তে বলল,”ভালো স্যার।”
লিয়া চুপচাপ ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।ফারহান আড়চোখে লিয়াকে পরখ করলো।লিয়ার থেকে উত্তর না পেয়ে একটু হতাশ হলো। ফারহান ফের শুধালো,
“এখন কি ক্লাস তোমাদের?”
“প্লান্ট প্যাথলজি।”
লিয়া ফট করে বলল।লিয়া এখান থেকে প্রস্থান করার জন্য মনেমনে হাঁসফাঁস করছে।
জারিফ টানা পায়ে হেটে করিডোর দিয়ে যাচ্ছিলো।এমন সময় খানিকটা দূরত্বে লিয়াকে একটা মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে দেখতে পায়।সামনে দাঁড়ানো ফারহানকে দেখে কপাল সংকুচিত হয়। ফারহানকে চেনে সয়েল সায়েন্সের নিউ টিচার হিসেবে ।তবে এখনো কথা হয়নি।জারিফের মনে প্রথমে বিষয়টা নিয়ে কিছু প্রশ্ন জাগে। পরক্ষণে মনেহয়,টিচার হয় তাই কথা বলতেই পারে। অস্বাভাবিক কিছু নয়।তারপরেও মনের কোণে কোথাও একটা জেলাস ফিল হতে থাকে।চোখ দুইটা ঐদিকে চম্বুকের ন্যায় টানছে।মনেও এলোমেলো ভাবনারা ভর করছে।একটা ইয়াং টিচারের সাথে লিয়াকে কথা বলতে দেখে জারিফ জেলাস হতে থাকে।সাথে রা’গেরও সৃষ্টি হচ্ছে।
অরিন আবার আলাপ জুড়ে দেয়।’স্যার আপনার দেশের বাড়ি কোথায়?’হেনোতোনো কথা শুরু করে দেয়। ফারহানও কোনো প্রকারের বিরক্তি প্রকাশ না করে।বেশ স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছে।এদিকে অরিন যেমন আলাপ জুড়ে বেশ প্রফুল্ল চিত্তে আছে।ঠিক ফারহানের চোখে মুখেও কোনো তাড়া নেই। রিল্যাক্স মুডে কথা বলছে।মাঝখানে লিয়া চিপায় পড়েছে।স্যারের সামনে কিছু বলতেও পারছে না।আবার পাশ কাটিয়ে চলেও যেতে পারছে না।লিয়া নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে।এমন সময় হঠাৎ করে বাতাসে কড়া পারফিউমের পরিচিত সুঘ্রাণ নাকে বারি খায় লিয়ার।লিয়া ঘাড়টা ঘুরাতেই ডান সাইডে জারিফকে দেখতে পায়।জারিফ হাঁটার গতি স্লো করে লিয়ার দিকে চাইল। দু’জনের চোখাচোখি হয়।লিয়া অপ্রস্তুত হয়।চোখের পলক ঝাপটায়।লিয়া ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা নিয়ে জারিফের দিকে চেয়ে রয়। লিয়া ভাবছে জারিফ লিয়াকে কিছু বলবে ।লিয়ার সাথে কথা বলবে।লিয়া নিজেও কথা বলার জন্য ঠোঁট প্রসারিত করবে।এমন সময় লিয়ার সেই ভাবনায় বক্ষ্মপুত্র নদের সমস্ত পানি ঢেলে।লিয়ার সেসব ভাবনাকে পানির স্রোতে ভাসিয়ে দিয়ে জারিফ হন্তদন্ত পায়ে চলে যায়।লিয়ার রা’গ হতে থাকে।জারিফ ইগনোর করে চলে গেলো।এটা ভাবতেই লিয়ার সারা শরীর রাগে গজগজ করতে থাকে।সাথে মুখটাও মলিন হয়ে আসে।লিয়া রা’গে ফুঁসছে আর ভাবছে এখানে স্যারের সামনে আমার সাথে কথা বলতে ওনার সম্মানে লাগত নাকি?নাকি আমাকে বউ হিসেবে পরিচয় দিতে ওনার প্রেস্টিজে লাগছিলো?
লিয়ার ভাবনার সুতো ছেঁড়ে ফারহানের কথায়।ফারহান হঠাৎ লিয়াকে বলল,”এনাবুল জান্নাত খাঁন লিয়া।”
লিয়া চকিতে মাথাটা কিঞ্চিৎ তুললো। বিস্ময় চাহনিতে চাইল।বেশ অবাক হলো।সেদিন একবার নাম শুনেই পুরো নামটা মনে রেখেছে।এটা ভেবে লিয়ার বিস্ময়ের পারদ বাড়তে লাগলো।লিয়া নম্রস্বরে বলল,
“জ্বি স্যার।”
ফারহান স্ট্রেইট দাঁড়িয়ে।নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,
“তোমাকে আ্যবসেন্ট মাইন্ড দেখাচ্ছে।এ্যনি প্রবলেম?”
ফারহান লিয়াকে নোটিস করে লিয়া কিছু নিয়ে ভাবছে হয়তো।লিয়াকে বিরস মুখায়বে দেখে হঠাৎ করেই প্রশ্নটা করে বসে ফারহান।লিয়া মৃদুস্বরে বলল,
“নাহ্,স্যার।ঠিক আছি।”
“ওকে।ফাইন। আচ্ছা তোমাদের কখনো কোনো প্রবলেম হলে আমাকে বলো।আমার সাবজেক্ট নিয়ে কোনো সমস্যা হলে নির্দ্বিধায় আমাকে বলতে পারো।আমি যথাসাধ্য হেল্প করার চেষ্টা করবো।”
অরিন উৎফুল্ল হয়ে বলে উঠল,”থেংকিউ স্যার।কোনো টপিক বুঝতে প্রবলেম হলে দরকার পড়লে আপনার চেম্বারে গিয়ে বুঝে আসবো।”
ফারহান খানিকটা অপ্রস্তুত হলো।লিয়া ড্যাবড্যাব করে অরিনের দিকে চাইল।লিয়া জোর করে মুখায়বে হাসির রেখা ফুটিয়ে নিয়ে দ্রুত বলল,”এখন আসি স্যার। ক্লাসের টাইম হয়ে আসছে।”
ফারহান একশব্দে বলল,”সিউর।”
লিয়া অরিনের একহাত ধরে হালকা টান দিয়ে বড় কদমে এগোতে থাকে।অরিন লিয়ার সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে থাকে।
নয়টা বাজতেই জারিফ ফাস্ট ইয়ারের ক্লাস নিতে ঢোকে। ক্লাসে গিয়ে জারিফ সারারুমে দৃষ্টি বুলায়। কাংখিত ফেসটা দেখতে না পেয়ে কপালের রগগুলো ফুলে উঠে।লিয়া এখনো ক্লাসে আসেনি।এখনো বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিশ্চয় ঐ ইয়াং টিচারের সাথে গল্প করছে।এটা ভাবতেই জারিফের রা’গ তরতর করে বাড়তে থাকে।জারিফ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল। ক্লাসে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করল। কতটুকু মনোযোগ দিতে পেরেছে জারিফ তা নিজেও জানে না, তবে পড়ার টপিক নিয়ে আলোচনা করতে থাকে।
লিয়া আর অরিন ক্লাস রুমের দরজার সামনে দাঁড়ায়। ক্লাসে আসতে গিয়ে অরিন আবার ওয়াশরুমে যায়।এইজন্য দেরি হয়ে যায়।ভেতরে স্যার থাকায় কার্টেসি মেইনটেইন করতে দু’জনে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পরে।লিয়ার জারিফের উপর অভিমান জমেছে।তাই নিজে চুপ থেকে অরিনকে বলতে বলে।অরিন মৃদু আওয়াজে বলল,
“স্যার আসতে পারি?”
জারিফ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো।লিয়ার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিলো। অতঃপর গম্ভীর কণ্ঠে বলল,”কয়টা বাজে?”
অরিন অপ্রস্তুত হাসলো।লিয়া মাথা তুলে জারিফের দিকে চাইল।লিয়া জারিফের এহেন প্রশ্নে হতভম্ব হয়।লিয়া জারিফের এরূপ প্রশ্ন কল্পনাও করেনি। লিয়া ভেবেছিলো জারিফ একশব্দে ইয়েস বলবে।ভেতরে আসতে বলবে।অরিন প্রত্যুত্তরে বলল,”নয়টা বাজে স্যার।”
“এই লিয়া স্যারের কাছে কি ঘড়ি নেই নাকি?স্যার আমাদের কাছে টাইম শুনতে চাইছে।”
অরিন ফিসফিসিয়ে বলল।লিয়া চোখ পাকিয়ে তাকাতে অরিন থামলো।জারিফ নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,
“আ্যকুরেট টাইম বলো।”
লিয়া হাতে থাকা ঘড়িতে সময় দেখে নেয়।মুখটা ভার করে ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,”নয়টা দশমিনিট সতের সেকেন্ড।”
জারিফ কণ্ঠে কঠোরতা নিয়ে বলল,”ক্লাস কয়টা থেকে ছিলো?”
লিয়া রাশভারী কণ্ঠস্বরে বলল,”নয়টা।”
সোজা ক্লাসে ঢুকতে বলবে তা না করে এতোশত কৈফিয়ত চাইছে জন্য লিয়ার জারিফের উপর খুব রা’গ হচ্ছে।জারিফ কঠোরতা নিয়েই ফের বলল,”আমার ক্লাসে উপস্থিত থাকতে হলে সঠিক সময়ে আসবে।আর দেরি করে আসার জন্য বাইরে ফাইভ মিনিটস দাঁড়িয়ে থাকো। দেন ক্লাসে ঢুকবে।”
লিয়া বড়বড় চোখ করে চাইল।কি সাংঘাতিক লোক রে বাবা! মাত্র টেন মিনিটস লেট হওয়ার জন্য পানিশমেন্ট স্বরুপ বাইরে ফাইভ মিনিটস দাঁড় করিয়ে রাখছে।আর এমন বিহেভ করছে আমাকে চেনেই না।মনে হচ্ছে আমি বোধহয় অন্য গ্রহ থেকে টুপ করে আজকেই এই পৃথিবী নামক গ্রহে অবতরণ করেছি।আর আজকেই ওনার সাথে ফাস্ট দেখা হলো। শুনেছি ভালোবাসার মানুষের জন্য সাত খু’ন কেনো সহস্র খু’নও মাফ করা যায়।আর একিনা আমাকে পানিশমেন্ট স্বরুপ বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখলো।লিয়া কাঁদো কাঁদো ফেস করে নিশ্চুপ রইলো।লিয়ার প্রচন্ড রাগের সাথে ভীষণ কান্নাও পাচ্ছে।তবে ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যায়।
জারিফ ফের ক্লাসে মনোযোগী হয়।জারিফ ইচ্ছে করে লিয়াকে দাঁড় করিয়ে রাখে। ফারহানের সাথে গল্প করতে গিয়ে লেট করে আসায়।জারিফ খানিকটা ক্ষোভ মেটায়।ফাইভ মিনিটস হতেই জারিফ গম্ভীর গলায় বলল,
“এবার আসতে পারো তোমরা।”
লিয়া জারিফের দিকে না তাকিয়ে গটগট করে গিয়ে পেছনের দিকে বসে পড়ল।বাকি ক্লাস টাইম জারিফ সবার নজরের আড়ালে লিয়াকে নোটিস করে।লিয়া একবারো জারিফের দিকে তাকায়নি। জারিফ বুঝতে পারে বউ তার রে’গে বো’ম হয়ে আছে।যাইহোক পরে বউয়ের অভিমান ভাঙ্গাতে কাঠখড় পোহাতে হবে তা জারিফ ভালোই বুঝতে পারল।জারিফ এইভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
.
পরপর ক্লাস শেষ হয়ে লাঞ্চ টাইম আসল।জারিফ নিজের রুমের চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে লিয়ার নম্বরে কল দিলো। রিং হয়ে বেজে গেলো।তবুও রিসিভ হয়না।জারিফ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে আওড়ায়, মহারানী ভীষণ ক্ষেপেছে নিশ্চয়।ফোন তুলবে বলে মনেহয়না।জারিফ ছোট্ট করে মেসেজ টেক্সট করলো,”টিএসসিতে আসো।আমি ক্যান্টিনে আছি।”
লিয়া ফোন সাইলেন্ট করে বসে আছে। ইচ্ছে করে জারিফের কল তুলছে না।লিয়া মনেমনে পণ করলো ভার্সিটিতে উনি যখন আমাকে বাকি সবার মতো টিট করলো।তখন আমিও বাকি স্যারদের মতোই ওনাকে টিট করবো।ওনার সামনে পড়লে,নো কথা। ক্যাম্পাসে থাকাকালীন ওনার সাথে কোনো যোগাযোগ করবো না,হু। ফোনে আলো জ্বললো।মেসেজ নোটিফিকেশন আসলো।লিয়া বুঝতে পারলো জারিফই হয়তো মেসেজ দিয়েছে। লিয়া মেসেজটা সীন করলো না।ওদিকে অরিন লিয়ার কানের পাশে প্যানপ্যান করতে লাগল,
“এই লিয়া ক্যান্টিনে চল।আমার ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে। তখন থেকে বলছি নড়ছিসই না তো।এমনিতেই আমি নাকি দিনদিন শুকিয়ে যাচ্ছি।তার উপরে ঠিকমতো খাবার না খেলে আরো শুকিয়ে যাবো তো।নিজে না খেলেও আমার কথা ভেবে চল না,ইয়ার।”
লিয়া অবশেষে অরিনের সাথে যেতে থাকে।জারিফ লিয়ার জন্য ক্যান্টিনের সামনে ওয়েট করছিলো।এমন সময় স্টাইলি মেয়েলি স্বর শুনে জারিফ সেদিকে তাকায়।
“হাই? মিস্টার জারিফ”
কবিতা লাঞ্চ করার জন্য আসছিলো।জারিফকে দেখে দাঁড়িয়ে পরে।জারিফ বলল,
“হ্যালো।”
“কেমন আছেন?দিনকাল কেমন যাচ্ছে?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
কুশলাদি বিনিময় শেষে কবিতা কোমল গলায় বলল,”লেট আস হ্যাভ দ্য লাঞ্চ।”
জারিফ এদিক ওদিক তাকালো লিয়ার কোনো চিহ্নই নজরে পড়লো না।জারিফ ভাবে, লিয়া রা’গ করে আছে আসবে না।অবশেষে সৌজন্যতার খাতিরে কবিতার কথায় হ্যা সূচক উত্তর দেয়।জারিফ কবিতা একটা টেবিলে বসেছে।দুইজন সামনা-সামনি চেয়ারে।কবিতা জারিফকে শুধায়,
“হোয়াট ডিশেস ডু ইউ হ্যাভ?মিট অর ফিস?”
“আই প্রেফার ফিস টু মিট।”
কবিতা স্মিত হেসে বলল,”ওকে।”
খাবার অর্ডার দিয়ে কবিতা এটাসেটা কথা বলতে থাকে।জারিফ সাথে হ্যা,হু দুই একটা কথা বলছে।লিয়া অরিনের সাথে ক্যান্টিনে প্রবেশ করে। একটু নিরিবিলি ফাঁকা স্পেস খুঁজতেই লিয়ার নজর যায় খানিকটা দূরত্বে জারিফের দিকে।কবিতার সাথে একই টেবিলে দেখে লিয়ার রা’গ আকাশসম হয়।লিয়া মনেমনে আওড়ায়,আমাকে জাস্ট দেখানোর জন্য ফোন দিয়েছিলো বোধহয়।যাতে বলতে না পারি লাঞ্চের সময় ডাকলেন না। হেনোতোনো বলার স্কোপ রাখবে না বলেই ফোন দিয়েছিলো।আর এদিকে ফোন তুলিনি,আর উনি কিনা সুন্দরী কলিগ নিয়ে একসাথে লাঞ্চে আসছে।
অরিন একটা টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ইশারা করে লিয়াকে ডেকে উঠল,”এই লিয়া দাঁড়িয়ে আছিস যে।এখানে আস।”
জারিফদের পেছনের টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে অরিন বলে।জারিফ লিয়া নামটা শুনে দ্রুত সামনে তাকাতেই লিয়াকে দেখতে পায়।লিয়া চোখমুখ লাল করে তাকিয়ে আছে।জারিফ ফাঁকা ঢোক গিলে নেয়।আজকে মনে হচ্ছে জারিফের দিনটাই খা’রাপ।এমনিতেই বউ আ’গু’ন হয়ে ছিলো।এখন সেখানে নিশ্চয় কেরোসিন তেল পড়েছে।জারিফ লিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।লিয়া দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো। রা’গে গিজগিজ করতে করতে গিয়ে অরিনের পাশে দাঁড়ালো। শব্দ করে একটা চেয়ার টান দিলো।মনে হচ্ছে সব রা’গ যেনো চেয়ারের উপর ঝাড়ল।কেউ কেউ ঘাড় ঘুরিয়ে লিয়ার দিকে চাইল।তবে লিয়া সেসবে ভ্রুক্ষেপ না করে চেয়ারে ধপাস করে বসলো।লিয়ার সামনে অরিন।অরিনের পিছনে উল্টোদিকে জারিফ।লিয়া জারিফের পিঠ দেখতে পাচ্ছে।আর একপাশ দিয়ে কবিতার মুখ।
জারিফদের টেবিলে অর্ডারকৃত খাবার দিয়ে যায়।অরিন লিয়াকে বলল,
“কি খাবি বল?আমি তো মুরগীর ঝোল সাথে ইলিশ মাছ ভাজি আর ডাউল।”
লিয়ার ফর্সা মুখে যেনো অন্ধকার নেমেছে।লিয়া ভারী গলায় বলল,”আমি কিছু খাবো না। আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।”
“ওমা!সেকি কিছু খাবি না মানে?”
লিয়া তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,”এমনি ইচ্ছে করছে না।গরমে ভালো লাগছে না।মাথাটা ঝিমঝিম করছে সাথে কেমন জানি গা গুলিয়ে আসছে।”
অরিন অবাক হয়ে বলল,”একি গা গুলিয়ে আসছে মানে?আমার তো বিষয়টা সুবিধার ঠেকছে না।”
“হোয়াট? সুবিধার ঠেকছে না মানে?”
অরিন চোখে মুখে সিরিয়াসনেস ভাব নিয়ে বলল,”তুই বিবাহিত। তোর গা গুলানো বিষয়টা আর পাঁচজনের মতো স্বাভাবিক নয়। নিশ্চয় কোনো সুখবর টবর আসতে চলেছে।”
সামনের চেয়ারে বসা জারিফ অরিনের সব কথা স্পষ্ট শুনতে পায়। অরিনের কথাশুনে জারিফ খুকখুক করে কেশে উঠল।জারিফ মাত্রই কেবল এক লোকমা খাবার মুখে তুলেছে।এমন সময় অরিনের এহেন কথায় জারিফের বেষম উঠে।কবিতা পানির গ্লাসটা তড়িঘড়ি করে জারিফের দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল,
“পানি নিন।”
জারিফ পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে খেতে থাকে।কবিতা উদ্বিগ্ন হয়ে ফের বলল,”মিস্টার জারিফ আপনি ঠিক আছেন?”
জারিফ হালকা কাশলো। মনেমনে আওড়ায়,কিছুই করলাম না।আর এ কিনা সোজা সুখবরের কথা বলে ফেলল। অতঃপর গলা ঝেড়ে নিয়ে বলল,”ঠিক আছি। প্রবলেম নেই।”
কবিতার উদ্বিগ্ন হয়ে পানির গ্লাস এগিয়ে দেওয়া এসব দেখে লিয়ার মুখটা আগ্নেয় গিরির লাভার ন্যায় হয়।লিয়া সামনের কাঁচের গ্লাসটা শক্ত করে চেপে ধরলো।অরিন ফের শুধালো,”কয়দিন হলো**মিস গিয়েছে। টেস্ট করেছিস?”
লিয়া এবার অরিনের উপর বি’রক্ত হলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”তখন থেকে কিসব বলে যাচ্ছিস।কিসের সুখবর?তোকে বললাম তো আমি শ্বশুর বাড়িতে থাকি না।এখনো আমাকে উঠিয়ে নেওয়া হয়নি।”
“উঠিয়ে নেয়নি তাতে কি হয়েছে? বিয়ে তো হয়েছে।আমাদের পাশের বিল্ডিংয়ের এক আন্টির মেয়ের আকদ করে রেখেছিলো। যখন উঠিয়ে নেয়। সেইসময় সাতমাসের একটা বেবি পেন্ডিং এ ছিলো।তোর ক্ষেত্রেও বোধহয় এরকম কিছুই হবে।”
লিয়া ফের কর্কশ গলায় বলল,”তোকে কিকরে বোঝাই বলতো?আমার ক্ষেত্রে এরকম হওয়া ইম্পসিবল।”
“হুয়াই?”
অরিনের আবার একই প্রশ্নে লিয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে ফেলল,”কজ আমাদের মধ্যে সুখবর আসার মতো তেমন কিছুই এখনো হয়নি।”
অরিন মৃদু হাসলো।বলল,”এ্যা বিয়ে হয়েছে অথচ এও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে।এ কিনা ভার্জিন।যদি তোর কথা সত্যি হয়ে থাকে।তবে বলবো তোর বরের সমস্যা আছে। শুভাকাঙ্খী হিসেবে বলছি,জলদি ডক্টর দেখাতে বল।এইযে রাস্তার পাশে দেওয়ালে দেওয়ালে টাঙানো থাকে, কলিকাতা হারবাল এক ফাইলই যথেষ্ট।এসবের সাথে যোগাযোগ করতে বল।যেকোন অসুখই পুষে রাখতে নেই।আর লজ্জা না পেয়ে চিকিৎসা নিতে বল। আমার ধারণা তোর বরের এরকম কোনো প্রবলেম আছে।”
একনাগাড়ে গড়গড় করে বলে অরিন থামলো।ওদিকে জারিফের কাঁশতে কাঁশতে নাজেহাল অবস্থা।আর কবিতা উদ্বিগ্ন হয়ে গ্লাসে পানি অফার করছে।লিয়া এসব দেখে বি’রক্ত হয়ে জারিফকে শুনিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে প্রত্যুত্তরে বলল,”হতে পারে।”
একটু থেমে লিয়া রাগান্বিত স্বরে বলল,”অরিন।এখন চুপচাপ মুখে কুলুপ এঁটে খাবার খা।আর একটা কথা বললে আমি উঠে চলে যাবো কিন্তু।”
জারিফ আর খাবার খায়না। একবার খাবার মুখে তুলেই নাজেহাল অবস্থা। মনেমনে আওড়ায়,কি ভয়ংকর একটা ফ্রেন্ড জুটিয়েছে লিয়া।মুখে কোনো লাগাম নেই।এটা একটা মেয়ে নাকি অন্যকিছু।অরিনের ঠিক পেছনে জারিফের চেয়ার হওয়ায় সব কথা স্পষ্ট শুনতে পায়।আর জারিফের ধ্যান লিয়ার দিকে থাকায় আরো ইজি হয়।
বিল পে করার সময় জারিফ কবিতা দুজনেই যায়।জারিফ পকেটে হাত দিয়ে যেই ওয়ালেট টা বের করবে এমন সময় অন্যহাতে থাকা ফোনে শব্দ করে মেসেজ আসে।জারিফ আগে মেসেজটা চেক করে।যেখানে লেখা,’বিলটা নিশ্চয় আপনি দিবেন।খুব তো পরনারীর প্রতি সহৃদয় হয়েছেন।’
জারিফ শুকনো ঢোক গিলে পেছনে ফিরে লিয়ার দিকে চাইল।মহা মুশকিলে জারিফ পড়ল।এখন ভদ্রতার খাতিরে বিল দেওয়াটা জারিফ প্রয়োজনীয় মনে করছে।ওদিকে লিয়ার মেসেজ।কোনটা উপেক্ষা করবে জারিফ ভেবে পাচ্ছে না। এরমধ্যে কবিতা পার্স খুলে বিল দিতে যাবে।সেই মুহূর্তে জারিফ আমতা আমতা করে বলল,”মিস কবিতা আপনি রাখুন।আমি দিচ্ছি,কেমন?”
কবিতা স্মিত হেসে বলল,”ব্যাপার না আমিই দিচ্ছি।”
লিয়ার অগ্নি দৃষ্টি দুচোখে ভেসে আসতেই জারিফ আর জোর করে না।
দুপুরের পরের ক্লাসগুলো শেষ করে লিয়া বাসায় ফেরে।
.
পড়ন্ত বিকেল। রাজিয়া সুলতানা রুমে ছিলেন। কলিংবেলের শব্দ হওয়ায় দরজা খুলে দেন।দরজা খুলে জারিফকে দেখতে পান।জারিফ সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করে।রাজিয়া সুলতানা জারিফকে ড্রয়িংরুমে বসতে দেয়। লিয়াকে ডেকে দেওয়ার কথা বলবে।সেই মুহূর্তে জারিফ ইতস্তত গলায় বলল,
“আসলে আন্টি লিয়া বলছিলো, ওর নাকি একটা চ্যাপ্টার নিয়ে প্রবলেম হচ্ছে।এখন ফ্রি ছিলাম তাই ভাবলাম বুঝিয়ে দিয়ে আসি।”
রাজিয়া সুলতানা অমায়িক হেসে বললেন,”আচ্ছা বাবা লিয়া রুমেই আছে। তুমি যাও।আমি নাস্তা রেডি করছি।”
জারিফ নম্র স্বরে বলল,”আন্টি ব্যস্ত হবেন না।আমি বাসা থেকে খেয়েই আসছি।”
রাজিয়া সুলতানা মায়াময় স্বরে বললেন,”আচ্ছা বেশি কিছু করবো না।লিয়া রুমেই আছো দেখো।”
কথাটা শেষ করে রাজিয়া সুলতানা কিচেনের দিকে পা বাড়ায়।জারিফ মনেমনে রাজিয়া সুলতানাকে ধন্যবাদ দেয়। শ্বাশুড়িকে মিথ্যে বলার জন্য মনেমনে লজ্জিত হয়।তবে কি করার হুটহাট শ্বশুর বাড়ি আসতেও কেমন জানি লজ্জা লাগে।তাই তো একটা অজুহাত দেওয়া।লিয়ার রুমের দরজাটা ভিড়ানো ছিলো।জারিফ একহাতে দরজাটা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে।দরজাটা পুনরায় আগের মতো চাপিয়ে রাখে।ধীর পায়ে লিয়ার বেডের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।লিয়া এলোমেলো হয়ে শুয়ে ঘুম পাড়ছে। প্লাজুটা একটু উপরে উঠে আছে। ফর্সা পায়ে পায়েলটা দারুণ নজর কাড়ছে।জারিফ কিছুক্ষণ লিয়ার পায়ে নজরকাড়া পায়েলটা দেখল।এই পায়েলটা জারিফের কাছেও ছিলো।জারিফের চিনতে বাকি রইলো না।কয়েক মাস আগের হলেও জারিফের স্পষ্ট মনে আছে।এটাই সেই পায়েল।লিয়ার গায়ে শর্ট কুর্তি।শুয়ে থাকার ফলে এলোমেলো হয়ে আছে।গায়ে ওড়না নেই।জারিফ লিয়াকে এই লুকে দেখে বড় করে শ্বাস টেনে নিলো।ফ্যানের বাতাসে লিয়ার খোলা চুলগুলো উড়ছে। বারবার মুখের উপর পড়ছে।লিয়া ঘুমের মধ্যে বিরক্ত হচ্ছে যা লিয়ার কপাল কুঁচকানোতে জারিফ আন্দাজ করল।জারিফ লিয়ার দিকে ঝুকল।একহাতে আলতোকরে লিয়ার মুখের উপর থাকা চুলগুলো সরিয়ে দেয়।লিয়া ঘুমের মধ্যে নড়লো।জারিফ মৃদু হাসলো।লিয়ার ঘুমন্ত ফেসটা একদম নিষ্পাপ লাগছে।জারিফ লিয়ার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়।লিয়া এবার নাক মুখ কুঁচকালো। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো।জারিফকে দেখে স্মিত হাসলো। ঘুমুঘুমু কণ্ঠস্বরে বলল,
“আবার আপনি আমার স্বপ্নে রোমান্স করতে আসছেন।আজকে দিনের বেলার স্বপ্নেও আপনাকে এতো কাছে পাচ্ছি।এরপর থেকে তো চোখ বন্ধ করাই আমার জন্য দায় হয়ে যাবে। হুটহাট স্বপ্নে এসে আমাকে লজ্জায় ফেলেন।এটা কিন্তু মোটেই ঠিক নয় ,জারিফ।”
জারিফ মুচকি হেসে বলল,”বাহবা। জানতাম না তো তোমার স্বপ্নে এসে রোমান্স করি।তবে একটু করে নেই রোমান্স।”
লিয়া ভড়কালো।অবাক হলো। এরমধ্যে জারিফ লিয়ার গলায় থাকা কালো তিলের উপর ঠোঁট ছোয়ালো। ইচ্ছে করে হালকা বাইট দিলো।লিয়া মৃদু ‘আহ্ ‘শব্দ উচ্চারণ করলো।জারিফ লিয়ার চোখে চোখ রেখে ফের বলল,”আজকের স্বপ্নে চিহ্ণ রেখে গেলাম।যখন আয়নার সামনে নিজেকে দেখবে তখন স্বপ্নের কথা স্মরণ করে লজ্জা পাবে।আর আমাকে মনে পড়বে।”
লিয়া তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো।ছোট ছোট চোখ করে চাইল।গলায় একহাত ডলতে ডলতে বিস্ময় নিয়ে বলল,”আপনি?আপনি এই সময়।আমার রুমে।”
জারিফ লিয়ার দিকে ঝুঁকে মৃদুস্বরে বলল,”হুম।আমি।আজকে আসতেই হলো। কিযেনো দুপুরে বলছিলে আমার কোনো প্রবলেম আছে কিনা?তার প্রুভ দিতে হবে না।বাট দুঃখের বিষয় পূর্বের কোনো এক্সপ্রিয়েন্স নেই।তাই রেফারেন্স টানতে পারছি না।তবে ব্যাপার না।তুমি আছো তো। তাই একদম প্রাকটিক্যালি প্রুভ দেওয়া যাবে।আর সার্টিফিকেট তুমি নিজে দিবে।হয়ে যাক প্রুভ?”
জারিফ বাঁকা হেসে ভ্রু নাচিয়ে শেষের কথাটা বলে।লিয়ার কান দিয়ে উষ্ণ ধোঁয়া বের হচ্ছে এমন অনুভূত হয়।লিয়া লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে চাইলো।
চলবে,,,
(আমার ছোট্ট একটা অনুরোধ থাকবে গল্পকে বাস্তবের সাথে মিলাবেন না।গল্পকে গল্প হিসেবে নিবেন, প্লিজ।)