#তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
#পর্ব_১১
#সারিকা_হোসাইন
―তোমাকে কেনো এখানে তুলে এনেছি জানো?
প্রশ্নটি করে আহিয়ান স্বর্গের পানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো।
স্বর্গের কোনো ভাবান্তর না দেখে মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটিয়ে বলে উঠলো আহিয়ান
―আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই স্বর্গ।
কথাটি শোনা মাত্র স্বর্গের রাগের পারদ তরতর করে মাত্রা ছাড়ালো কিন্তু মুখে কিছুই প্রকাশ করলো না।
আহিয়ান আয়েশ করে স্বর্গের পাশে বসে আবার বলতে শুরু করলো
―আমি তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের (এ এফ এম সি) বেলকনিতে।
মুখে লাজুকতার ভাব নিয়ে আহিয়ান স্বর্গের পানে চাইলো
―তুমি দূতলার একটি বেলকনিতে কিছু মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলে।আমি ওইদিন বাবার সাথে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলাম কিছু কাজে।
কিন্তু তোমাকে দেখার পর আমি কিছুতেই সেই কাজে আর মনোযোগ দিতে পারিনি। তোমার হাসি মাখা মুখটাই শুধু আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
তোমার বড় বড় চোখের পাপড়ি ঝাপ্টানি আমার হৃদয় কে করেছে উত্তাল।সেদিন ই আমি তোমার মাঝে আমার সর্বনাশ দেখেছি মিস স্বর্গ।
তুমি তো জানো,
চাইলেই যেই কেউ ক্যান্টনমেন্ট এর ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না।
“কিন্তু আমি বিভিন্ন অফিসার এর সহযোগিতা নিয়ে ঠিক তোমাকে দেখে গিয়েছি।”
“তোমাকে দেখার লোভ আমার এজন্মে শেষ হবে না স্বর্গ।”
―”চাইলে আমার সামনে এসে এসব বলতে পারতেন আপনি!এমন কাপুরুষের মতোন তুলে এনেছেন কেনো?
ঝাঁঝালো স্বরে বলে উঠলো স্বর্গ।”
আহিয়ান মাথা নিচু করে ফুস করে নিঃশ্বাস নিলো ।তারপর একটু থেমে আবার বললো
―কাপুরুষ ই বলতে পারো।
“আসলে প্রেম নিবেদন,ভালোবাসার গপ্পো বলে মেয়ে পটানো এসব আমার ধাঁচে নেই।”
“আমি শুধু জানি যেটা আমার চোখে পড়েছে সেটা আমার লাগবে এবং সেটা শুধু আমারই।”
তোমার জন্য ওই দু টাকার মেজর মুহিতের চোখে আমি মুগ্ধতা দেখেছি।কতো বড় সাহস তার ,
―আমার সামনে থেকে তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়
বলেই রাগ সংবরন করতে না পেরে পাশে থাকা আয়নায় ঘুষি মারে আহিয়ান।
পেশীবহুল হাতের ঘুষিতে ঝনঝন শব্দে ভেঙে যায় দেয়ালে থাকা আয়না।
স্বর্গ চমকে উঠে কিন্তু একদম ভড়কায় না।
আহিয়ান এর হাত কেটে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত ঝরছে।
একজন ডক্টর হিসেবে স্বর্গের খারাপ লাগা স্বাভাবিক।কিন্তু তার লাগছে না।
এই লোকের কারনে তার বাবা,মা,ভাই সবাই অবশ্যই সাফার করছে।
আর মুহিত?
সে কী আমাকে খুঁজবে?নাকি অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত হয়ে যাবে?
★★★
পোর্ট মাস্টার এর কাছে ডেড সৌল এর নাম শুনে মুহিত আর সৌম্যের চোখ চকচক করে উঠে।তার মানে তারা সঠিক জায়গাতেই এসেছে।
পরক্ষনেই তাদের আশার প্রদীপ নিভে যায় যখন পোর্ট মাস্টার জানায় আগামী তিন মাসের মধ্যে এই জাহাজ এই ঘাটে নোঙর ফেলবে না।
বলেই শিডিউল বইটি মেজর নিকোলাস এর হাতে দিলো বৃদ্ধ ।
নিকোলাস আর ভলতেয়ার সব গুলো কাগজ উল্টে পাল্টে দেখে মুহিত কে ইংলিশে সব বুঝিয়ে দিলো।
মুহিতের মনে আগ্নেয়গিরির হুতাশন জ্বলে উঠলো।যেই আশা বুকে বেঁধে এখানে এসেছে তবে কি তা পূরণ না করে ব্যার্থ হয়ে ফিরে যেতে হবে?
কেনো মুহিত সব জেনেও স্বর্গের জন্য নাফিজ মাহমুদ কে বলে তখন থেকেই দেহ রক্ষীর ব্যবস্থা করলো না।
মুহিত রাগে,কষ্টে নিজের উপর অভিমান করে জমে থাকা বরফের স্তুপে অনবরত পাঞ্চ করতে থাকলো।
সৌম্য দৌড়ে গিয়ে মুহিত কে কোনো ভাবে ম্যানেজ করলো।বিধস্ত মুহিত শরীরের ভার ছেড়ে দিলো সৌম্যের উপর।
আর কি কি হারালে নিয়তি তাকে ক্ষমা করবে?
প্রবীণ আরো কিছু কাগজ ঘেটে আরেকটি পোর্ট সম্পর্কে ওদের জানালো।
―ইউ ক্যান চেক দ্যাট পোর্ট
বলে একটা কাগজ নিকোলাস এর হাতে দিলেন।
বৃদ্ধ কে থ্যাঙ্কস জানিয়ে তারা দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করলো।
●●●
পেরিয়ে গেছে বারো দিন।এখনো স্বর্গের কোনো পাত্তা পাওয়া যায়নি।সমস্ত নিউজ পোর্টাল এ ঘুরছে বড় বড় হেডলাইন
―মেজর জেনারেল নাফিজ মাহমুদ এর কন্যাকে অপহরণ করা হয়েছে।
কোনো প্রমাণ ছাড়া আহিয়ান এর ছবিও কেউ পোস্ট করতে পারছে না।
দুইদিন ধরে নাফিজ মাহমুদ মুহিতের সাথে যোগাযোগ করেও ব্যার্থ হচ্ছেন।মুহিতকে লাইনে পাওয়া যাচ্ছে না।চিন্তায় মাথা টনটনে ব্যাথা করছে।
কি থেকে কি হয়ে গেলো এক নিমিষেই !
হায় মাবুদ সহায় হও!
তনুজা ঠেলে ঠেলে কোনোমতে নিজেকে চালাচ্ছেন।তার বিশ্বাস একদিন না একদিন হয় ভালো খবর আসবে না হয় মন্দ।
যখন নাফিজ মাহমুদ বিদেশে মিশনে যেতেন তনুজা কে বুঝাতেন―
” আমি আর না ফিরলে বুঝবে আমি ওপারে চলে গিয়েছি”।
“তোমাকে শক্ত হতে হবে তনুজা।তুমি একজন দেশ রক্ষকের স্ত্রী।তোমার মন দুর্বল হলে কিভাবে চলবে তনুজা?”
প্রথম প্রথম তনুজা অনেক ভয়ে ভয়ে থাকতো
নাফিজ ফিরবে তো?
কিন্তু ধীরে ধীরে তনুজা সেই ভয়কে জয় করে মন কে কঠিন করতে পেরেছে।
তবে আজ কেনো সেই কঠিন মনে আবার ভয় এসে হানা দিচ্ছে?
মাতৃ হৃদয় বলেই কি এমন?
আর ভাবতে পারেনা তনুজা।
স্বর্গের নিষ্পাপ মুখটা মনে পড়তেই কপোল বেয়ে ভারী বর্ষণ নেমে আসে।
সুখের দুস্টুমি কমে গিয়েছে।সেও গুটিয়ে রয়েছে,অনলাইনে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে কিভাবে তার বোন কে উদ্ধার করতে পারবে?
সুখ মনে মনে প্রমিস করেছে আপু ফিরলে আর কখনো অকারনে জ্বালাবো না।
খেপাবো ও না।ভালো ছেলে হয়ে বোনের কেয়ার করবো।
মিসেস তারিন এখনো কিছুই জানেন না।তাকে জানতে দেয়া হয় না।অসুস্থ মানুষ ঘর থেকে বেশি বের ও হন না।এজন্য তিনি এখনো নিশ্চিন্তে একটু আরামে আছেন।
***
পোর্ট মাস্টারের কথা অনুযায়ী সমস্ত খোঁজ খবর নিয়ে তারা এখন উপস্থিত হয়েছে ―
নভোরোসিয়স্ক বন্দরে।
এই বন্দরটি বরফ মুক্ত হওয়ায় বেশিরভাগ জাহাজ এখানে অবতরণ করে।বন্দরটি আকারে বিশাল বড়।
শত শত জাহাজের ভীড়ে কোথায় পাবে সেই ডেড সৌল??
রাশিয়ান আর্মিদের অত্যন্ত সমীহ করে চলে এই দেশের জনগণ।চাইলেই তারা ক্ষমতার ব্যাবহার করে যা খুশি তাই করতে পারে।
পোর্টে আর্মি জিপ দেখেই কিছু পোর্ট অথরিটি দৌড়ে কাছে আসলো এবং অত্যন্ত সম্মানের সহিত জানতে চাইলো
কি প্রয়োজন?
নিকোলাস মুহিতের ট্যাব নিয়ে জাহাজের ছবি বের করে সবাইকে দেখিয়ে সবিস্তারে কাহিনী খুলে বললো।
পোর্ট মাস্টার সকল জাহাজের সিডিউল চেক করে একটি ঘাট দেখিয়ে নির্দেশ করলেন যে―
আগামী মাসের নয় তারিখে জাহাজটি এখানে নোঙর করবে।
মুহিতের নিভে যাওয়া আশার প্রদীপ দপ করে জ্বলে উঠলো।
গ্রাউন্ড ফোর্সের জেনালের এর সাথে কথা বলে নৌবাহিনীর জাহাজের সাথে কথা বললেই কাজ অর্ধেক কমপ্লিট।
এরই মাঝে সন্দেহ জনক দুটি ছেলেকে পাওয়া গেলো,হঠাৎই তারা পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছিলো।
টহল রত দুজন সোলজার দক্ষতার সহিত ছেলে দুটো কে ধরে ফেললো এবং গাড়িতে করে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে এলো।
ছেলে দুটোকে হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে আটকে রাখা হলো।
সকাল হলে তাদের বিষয়ে খোঁজ লাগিয়ে একশন নিবে।
~~~স্বর্গ চতুরতার সহিত বিদেশি মেয়েটাকে বোকা বানিয়ে আহিয়ান সম্পর্কে অনেক তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে।
স্বর্গ মেয়েটিকে বলেছে আমি আহিয়ানের হবু স্ত্রী।তুমি যদি তার কি পছন্দ কি অপছন্দ তার দুর্বলতা কিসে?এসব না জানাও আমাকে তাহলে আহিয়ানের কাছে তোমার নামে উল্টা পাল্টা বলে সমুদ্রের তল দেশে সলিল সমাধি দিয়ে দেব।
সুন্দরী মেয়ে দের সঙ্গ আহিয়ানের মারাত্মক পছন্দ।এই একটি বিষয়েই সে দুর্বল।সাথে নেশাপানি।
এই কুলকিনারা হীন সমুদ্র থেকে কোনো প্রকার চতুরতা করেও স্বর্গ ফিরতে পারবে না।যোগাযোগ এর ও কোনো মাধ্যম নেই।যা আছে তা হচ্ছে ওয়াকিটকি।
নিজের এমন দুর্ভাগ্য দেখে আনমনে ঠোঁট কামড়ে কেঁদে উঠলো স্বর্গ।
◆◆
আশরাফ চৌধুরী এই নিয়ে ছাপ্পান্ন বার তার ছেলের নম্বরে কল করেছেন।বরাবরই সংযোগ বিচ্ছিন্ন।রাগে বিতৃষ্ণায় মুখে বাজে গালি এসে গেলো তার।
মনে মনে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন তিনি।
তার এই ছেলের জন্য যদি নিজের ধীরে ধীরে গড়া সম্রাজ্যের সামান্য টুকু ফাটল ধরে তাহলে তিনি তার ছেলেকে জ্যন্ত পুতে ফেলবেন।
****
থেমে নেই পিউ।নিজের ডাক্তারি ডিউটি পালনের পাশাপাশি সে তার বাবাকে বেশ ভালো নজরদারি তে রেখেছে।এমন ভাবে সকল কাজ করে বেড়াচ্ছে পিউ যেনো তার বাবা কিচ্ছুটি টের না পায়।
নাসের হায়দার এর বড্ড কু অভ্যাস হচ্ছে মদ খেতে খেতে মাতাল হয়ে ধ্যান জ্ঞান হারানো।
সেই সুযোগ টাই লুফে নিলো পিউ।
ঘড়িতে সময় রাত বারোটা বেজে ত্রিশ মিনিট।
নাসের হায়দার নেশায় চূর হয়ে এলোমেলো ভাবে বিছানায় পরে রয়েছেন।
পা টিপে টিপে পিউ নাসের হায়দার এর শয়নকক্ষে প্রবেশ করলো।সন্তপর্নে আশেপাশে তাকিয়ে তার বাবার ফোনের অনুসন্ধান চালাচ্ছে।
হঠাৎই ফ্লোরে পায়ের ধাক্কা লেগে খালি হয়ে যাওয়া মদের বোতল গড়গড় শব্দ তুললো।
ভয়ে পিউ আলমারির সাথে সেটে রইলো।
কীয়তক্ষন অপেক্ষা করার পর ও যখন নাসের হায়দার এর কোনো সাড়া শব্দ পেলো না তখন পিউ পা টিপে টিপে বিছানার কাছে আসলো।
ঐতো উনার পিঠের নিচেই ফোনটা দেখা যাচ্ছে।যেকোনো প্রকারে ফোনটা পিউয়ের হাতে চাই।
নিজের কথা চিন্তা না করেই পিউ ফোনের দিকে হাত বাড়ালো,নাসের হায়দার কে কিচ্ছুটি টের না পেতে দিয়ে বের করে আনলো মোবাইল ফোন।
আনন্দে পিউ এর ঠোঁটে সূক্ষ্ণ হাসি ফুটে উঠলো।
বিপত্তি বাধলো লক খুলতে গিয়ে।ফিঙ্গার নয় কোড প্রেস করে লক খুলতে হবে।
জানা অজানা সকল নম্বর দিয়ে ট্রাই করে ব্যার্থ হলো পিউ।
হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।যেভাবেই হোক কোড জানতে হবে।
মাথায় খেলে গেলো দারুন বুদ্ধি।
“কালই একবার ল্যাবে যেতে হবে।প্রধান কাজ হচ্ছে ফিঙ্গার প্রিন্ট পাউডার কালেক্ট করা।
মোবাইলটা পূর্বের জায়গায় রেখে ধীরে ধীরে প্রস্থান নিলো পিউ।
■■
কেটে গিয়েছে চুয়াল্লিশ টি দিন।কারো চোখে ঘুম নেই।কবে জাহাজ কিনারায় ভিড়বে,কবে উদ্ধার হবে স্বর্গ?
স্বর্গকে ওই দিনের পর আহিয়ান একটা আচড় ও লাগতে দেয়নি।যখন স্বর্গের উপর রাগ হয়েছে সে নিজেকে নিজে আঘাত করেছে।
আহিয়ান স্বর্গকে বোঝাতে চায় যে,
“সে অমানুষ হলেও তার ভালোবাসা নিখাদ।”
মুহিত কে টেক্কা দিয়ে স্বর্গকে দূর দেশে নিয়ে এসেছে এর চাইতে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে?
এখানে কোনো আর্মি পুলিশ কিছুই করতে পারবে না তাকে।কে দিবে তার নামে প্রশাসনের কাছে বিচার?
কেউ কি ঘূর্ণাক্ষরে টের পেয়েছে সে কোথায় যাবে বা যাচ্ছে?
রাশিয়া পৌঁছেই স্বর্গকে যেভাবেই হোক বিয়ে করে ফেলতে হবে।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওকে আমার সাথেই থাকতে হবে।
আমি না পেলে কেউ ওকে পাবে না।
দরকার হলে স্বর্গকে টুকরো টুকরো করে সমুদ্রে ফেলে দিবে আহিয়ান।
যেই জিনিস আহিয়ান চৌধুরী চুজ করেছে সেই জিনিসে আর কারো অধিকার নেই।
স্বয়ং নাফিজ মাহমুদ এর ও না।
――――――――――
পোর্ট মাস্টারের দেয়া ডেট শেষ হয়ে গিয়েছে আরো দুদিন আগে।মুহিত দের ফিরে যাবার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মুহিত কোনো কাকুতি মিনতি করেও কিছু করতে পারেনি।
যাবার আগে শেষ বারের মতো মুহিত আজকে আবার পোর্টে এসেছে।আজকে সাথে সৌম্য আসেনি।সৌম্য ফিরে যাবার সমস্ত কিছু রেডি করছে।
হঠাৎ ই জাহাজ কিনারায় ভিড়ার শব্দ পেলো।
বিশাল বড় পোর্ট ,এক সাথে অনেক গুলো জাহাজ তীরে ভিড়ছে।যাত্রী,মালামাল, খদ্দের এর ভিড় সব মিলিয়ে এক গোলক ধাঁধার মধ্যে পড়ে গেলো মুহিত।
জেটি ঘাট নিমিষেই লোকে লোকারণ্য হয়ে গেলো।
স্বর্গের চারপাশে আহিয়ান কয়েকজন রুশ মেয়ে নিয়োজিত করে দিলো।আর কঠিন হুঁশিয়ারি জারি করলো।
পোর্টে স্বর্গ কোনোরূপ ঝামেলা করলে ওকে শেষ করবে তো করবেই সাথে নিজের বাবা ,মা ,ভাইকেও তার দাম চুকাতে হবে।
ভয়ে ,ঘৃণায় স্বর্গ নিষ্প্রাণ হয়ে রইলো।
এতো এতো ভিড়ের মাঝে হঠাৎই মুহিতের বুকের বাঁ পাশ টা ধক ধক করে উঠলো।
এমনটা মুহিতের আগেও হয়েছে,যখন স্বর্গ তার আশেপাশে থেকেছে।তবে আজ কেনো এমন পরিস্থিতিতে ধারকান বেড়ে যাচ্ছে?
আনমনে মেয়ে গুলোর ভিড়ে হাঁটছে স্বর্গ।নিজেকে সে সপে দিবে আহিয়ান এর কাছে।এই বিদেশ বিভুঁইয়ে কেউ তাকে রক্ষা করতে আসবে না।নিজেকে কোরবান দিয়ে যদি বাবা,মা,ভাইকে বাঁচিয়ে রাখা যায় ক্ষতি কি?
চোখের জ্বল মুছে সামনের তাকিয়ে হাঁটা ধরলো স্বর্গ।
হঠাৎই পরিচিত পারফিউম এর ঘ্রাণ নাকে এসে লাগলো স্বর্গের।
মুহিতের কথা মনে পড়তেই দু চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো মোটা মোটা অশ্রু দানা।
“আপনাকে আমার ভালোবাসার কথাটা জানানো হলো না মেজর।”আমি আপনাকে ভালোবাসি মেজর মুহিত ওয়াসিফ।ভালোবাসি।
আহিয়ান চোখ মুখ ঢেকে দ্রুত বেগে পোর্ট থেকে বেরিয়ে গেলো।পোর্ট অথরিটির সাথে কিছু কাজ আছে,সেগুলো কমপ্লিট করে দ্রুত বের হতে হবে এখান থেকে।
যাবার আগে মেয়ে গুলোকে নির্দেশ দিয়ে গেলো কোথায় কিভাবে স্বর্গ কে পৌঁছাতে হবে।
শীতের তীব্রতায় মুহিত নিজেকে এমন ভাবে ঢেকে রেখেছে শুধু চোখ দুটো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
মুহিত দিকবিদিক শূন্য হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।কোনো ভাবেই হৃদপিন্ডের লাফানো থামছে না।বুকে সূক্ষ্ণ ব্যাথার আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এই স্পন্দন।
এতো এতো মানুষের ভিড়ে হঠাৎ ই স্বর্গের চোখ যায় ডিপ ব্রাউন ট্রেঞ্চ কোট পরিহিত এক যুবকের দিকে।
চেহারা দৃশ্যমান নয়।গ্রে কালারের মাফলারে সে মুখ গলা ঢেকে রেখেছে শুধু চোখ গুলো বের করা।
পরনে হালকা ব্রাউন সোয়েটার,ব্ল্যাক জিন্স আর বুটস।
এই চোখের দৃষ্টি স্বর্গের বহু চেনা।সমুদ্রের স্বচ্ছ নীল জল রাশির মতো অক্ষিদ্বয় এর মালিক তার মনের অনেক কাছে বাস করে।এই চোখের গভীরে সে তো কবেই ডুবে মরেছে।শুধু চোখের মালিক কে জানানো হয়নি ।
পরক্ষণেই সে মনকে বুঝ দেয়
―সে এখানে কিভাবে আসবে?”
“সবই তোর মনের ভ্রান্ত ধারণা স্বর্গ।
“তাকে পাবার লোভ আর করিস না।”
অবাধ্য মনের নিষেধ অমান্য করে ―
মরীচিকার পিছনে পিপাসার্ত বেদুইন যেভাবে ছোটে সেই ভাবে স্বর্গের ও ওই যুবক টির কাছে যাবার জন্য অন্তর পিপাসার্ত হয়ে উঠলো।
মেয়ে গুলোর চোখ ফাঁকি দিয়ে যুবকটির কাছ ঘেষে দাঁড়ালো এবং হাত চেপে ধরলো স্বর্গ।
আকস্মিক কারো হাতের স্পর্শ পেতেই চমকে উঠে মুহিত।
সামনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অবাধ্য নোনা জ্বলের ধারা।
#চলবে