হিয়ার_মাঝে ৪৬ #মেঘা_সুবাশ্রী ®️

0
517

#হিয়ার_মাঝে ৪৬
#মেঘা_সুবাশ্রী ®️

সকালের নাস্তা খেয়ে কোনো রকম সুপারমলে প্রবেশ করল জিতু। সকালের বিদঘুটে বিষয়’টা এখনো মাথায় ঘুরছে। নুবাহর চোখে জল দেখেছে। মেয়ে’টা কি এভাবেই রোজ কাঁদে তাহলে? মায়ের সাথে একবার কথা বলা দরকার তার। সদ্য মেয়ে’টা তাদের বাড়িতে এসেছে। এখনও একমাসও পেরুই নি। অথচ পুরোদস্তুর গৃহিণীর মত তাকে কাজ করতে হচ্ছে। তার উপর রান্না ভালো না হলেও কত কটুকথা শুনতে হচ্ছে মায়ের। আরও সময় দেয়া প্রয়োজন ছিল। এভাবে এত তড়িঘড়ি কেনো রান্নাঘরে পাঠালো নুবাহকে? বিষয়’টা বেশ ভাবাচ্ছে তাকে। কই তার ভাবীকে তো এত জলদি দেয়া হয়’নি সংসারের হাল। তাহলে নুবাহকে কেন?

চুপচাপ নিভৃতে বসলেও মন’টা গুমরে মরছে জিতুর। বড্ড ইচ্ছে করছিল নুবাহর চোখের জল মুছে দিয়ে তার মাথায় নিজের ভালোবাসার হাত রাখতে। অথচ সে মুখে কিছুই প্রকাশ করতে পারল না। হতাশায় মূর্ছিত হল সে। কেন এত অপরাগ? উঠে দাঁড়াল নিজের চেয়ার ছেড়ে। কাজের বাহানা খুঁজল। জামার নতুন কালেকশনগুলো দেখছিল। আচমকাই চোখ পড়ল তুঁত সিল্কের জাম বর্ণের এক জামার উপর। এই জামা নুবাহকে বেশ মানাবে। কিন্তু সমস্যা একটাই, তার মা’ নুবাহকে জামা পড়তে দেবে না এখন। তবে এই জামা সে বিক্রি করবে না। নিজের ডেস্কের ড্রয়ারে রেখে দিল। জামা রেখে ফেরত এল পুনরায় নিজের রুম থেকে।

তৎক্ষণাৎ ঘটল তার জীবনের সবচেয়ে বড় চমক। যা দেখে পুরাই অভিভূত। যেন কয়লার পাহাড়ে এক টুকরো হীরার খন্ড পাওয়ার মত উচ্ছ্বাস। স্কুল পড়ুয়া এক মেয়ে আসল তাদের দোকানে। মুখে মাস্ক নেই। তবে জামার উপর যে হিজাব পড়েছে, তা দেখেই সে রীতিমত অবাকের চরম পর্যায়ে। এই সেই হিজাব যেটা সে নুহাহকে দিয়েছিল। এই হিজাব বাজারে পাওয়ার কথা নয়। রেশম কাপড়ের মেরুন রঙা হিজাব, এর মাঝে তার নামের অক্ষর আর নুহার নামের অক্ষর যুক্ত করে অর্ডার দিয়ে বানিয়েছিল। এই হিজাব মেয়ে’টা পেল কোথায়? নিশ্চয়ই নুহার কেউ হবে? সে তড়িঘড়ি মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। তড়িৎ বলে উঠল,

‘তুমি এই হিজাব কোথায় পেয়েছো?’

আচমকাই এহেন বাক্যেই মেয়েটা ঘাবড়াল। উত্তর দিতে আমতা আমতা করল বেশ কিছু সময়। দু’চক্ষুর মণি অস্থিরভাবে বিচরণ করছিল তার। হঠাৎই বলে উঠল,
‘আ,,আ,,আমার বা,,বান্ধুবীর। সে আমাকে গিফট করেছে।’

জিতু মনঃক্ষুণ্ন হল বেশ। নুহাহ তার হিজাব অন্যেকে গিফট করেছে। কিন্তু ফের কিছুটা প্রশান্তিও পেল মনে। বলে উঠল,
‘কোন বান্ধুবী তোমার? বাড়ি কোথায়? তার ঠিকানা দিতে পারবে?’

মেয়েটা পুনরায় আরও একবার অস্থিরভাবে চোখের মণি নাড়াল। গলার স্বরও কিঞ্চিৎ কাঁপছিল তখন।
‘আসলে ওর বাড়ি এখান থেকে অনেক দূর।’

‘যতদূর হোক একবার আমাকে নাম বল।’

‘আসলে আমি জায়গার নাম জানি না। তবে জায়গা চিনি।’

জিতু কিছু একটা ভাবল দ্রুতই। অন্য একটা হিজাব মেয়েটার হাতে দিয়ে বলল,
‘এই হিজাব পরে এস। তোমাকে আমি এই মলের সবচেয়ে দামী হিজাব দিয়েছি। কিন্তু দয়া করে, আমাকে তোমার পরনের হিজাব’টা খুলে দাও।’

হতভম্ব হয়ে পড়ল মেয়েটা। জোর গলায় বলতে গিয়েও বলতে পারল না এই হিজাব সে ফেরত দেবে না। তর্ক করার কিঞ্চিৎ সাহসও নেই। উল্টো ভয়ে নিজমনে দোয়া পড়ছে। অগত্যা জিতুর দেয়া হিজাব ট্রায়ালরুম থেকে পরে আসল। নিজের পরনের হিজাব খুলে জিতুর হাতে দিল।

অধরকোণে নিষ্প্রভ হাসি। নেত্রকোণ বেয়ে এক ফোঁটা চোখের জল গড়ালো জিতুর। হিজাবখানা হাতের মাঝে মুষ্টিবদ্ধ করল সে। এক শুভ মুখশ্রী উদয় হল মুহুর্তে। ভাবল নুহাহ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আনমনে নিজের বাম পাঁজরের সাথে জড়াল হিজাবখানা। অদ্ভুত এক প্রশান্তি বিচরন করছে তার তনুমনে। মেয়েটাকে বলে উঠল,

‘তুমি আমায় রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যাবে। জলদি এস আমার সাথে।’

ধীর পায়ে মেয়েটা আগালো জিতুর সাথে। ভয়ে তটস্থ সে। কি হবে এবার তার সাথে। তার মিথ্যা কথা বুঝে যাবে না’তো। জিতুর সাথে গাড়িতে গিয়ে বসল। অথচ মন তার অস্থিরতায় মূর্ছিত।
. . .

বির্তক ক্লাবে উপচে পড়া ভীড়। ম্যাথ বিভাগের সাথে আজ কেমেস্ট্রি বিভাগের প্রতিযোগিতা হবে। তার জন্য দু’বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীতে কোণঠাসা পুরো ক্লাব। নুবাহ কেমেস্ট্রি বিভাগের ১ম বক্তা। ২য় বক্তা ২য় বর্ষ এবং দলীয় নেতা চতুর্থ বর্ষ কেমেস্ট্রি বিভাগের। নুবাহ বিমূঢ় হয়ে বসে আছে। জিতুর আচরণগুলো ভীষণ অদ্ভুত লাগে আজকাল। তাকে কাছেও টানে না, আবার দূরেও ঠেলে দেয় না। কেমন চোরের মত তার দিকে তাকিয়ে থাকে। অথচ সরাসরি তাকালেই তো পারে। সে কি নিষেধ করেছে। অবশ্য তাকাবেই কেন? হুট করে অন্তঃকরণে বিষাদে পূর্ণ হল তার। প্রিয় হয়েও আজ বড্ড অপ্রিয় মানুষ’টা।

বির্তকের জন্য নিজের স্ক্রিপ্ট ফের একবার রপ্ত করল। কিন্তু মন’টা আকুপাকু করছে জিতুকে দেখার জন্য। একবার নিজের মাথা উঁচু করল। আশেপাশে চোখ বুলালো বেশ কিছুসময় ধরে। নিজের প্রিয় মানুষ’টা আছে কি’না আড়চোখে দেখল। না, কোথায় নেই। জিতুর বন্ধুমহল মাত্রই প্রবেশ করল। ক্লাবের সামনের সিট দখল করে বসল তারা। তবে বহুদিন পর জিমানকে দেখল। গত কিছুদিন ধরে ভার্সিটি আসেনি। অবশ্য আর দু’দিন বাদেই তারও বিয়ে। হয়তো এজন্য এখন ছুটিতে আছে। জুঁই, চিন্ময়, রকি, সানি, লরিন, সিমি ও মুবিন একসাথে বসে আছে। কিন্তু জিমান এগিয়ে এল তার দিকে। সে ক্লাবের এককোণে বসে ছিল চুপচাপ। ইস্ততঃবোধ করছিল বেশ। জিমান এগিয়ে এসে সালাম দিল। নুবাহও সালাম নিল। ফের নিজেও সালাম দিল। মুচকি হাসল জিমান। গলার স্বরে রসিকতা ফুটে উঠল।
‘ভাবী আমার ভায়রা ভাই কই? আজকাল বউ পেয়ে নিজের বন্ধুদেরও একদম ভুলে গেছে সে।’

নুবাহ বিচলিত হল প্রথমে। কিন্তু পরক্ষনেই মুখের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল। তার চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে হল। আপনার ভাই বউ নয়, প্রেমিকার জন্য আপনজনকেও ভুলতে পারে। কিন্তু জড়তায় বলতে পারল না। তবে মুখে জবাব দেয়ার প্রয়োজন হল না তার। চিন্ময় এসে হাজির। সে এদিক ওদিক খুঁজল জিতুকে। তাকে বলেছিল সে আসবে। কিন্তু এখনো পৌঁছালো না দেখে কিছুটা হতাশ হল। তবে নুবাহকে ধীরগলায় জবাব দিল,
‘ভাবী মন খারাপ করবেন না, জিতু আসবে।’

জিমান হা’ হয়ে আছে চিন্ময়ের কথায়। ‘জিতু আসবে’ সেই কথা নুবাহর হয়ে সে বলছে। সে চিন্ময়কে ইশারা করল, কাহিনী কি? চিন্ময় হতাশার সুর তুলল মুখে। জিমান যা বোঝার বুঝে নিল। ইচ্ছে করছিল জিতুকে ইচ্ছেমত থাপড়াইতে। ভেবেছিল এবার অন্তত বউ পেয়ে পাগলামি কমবে তার। কিন্তু নাহ, পাগলে না বুঝে সংসারধর্ম। গর্দভ একটা। নিজমনে অজস্র গালি ছুঁড়ল জিতুকে।

সময় গড়ালো। বির্তক শুরু হতেই আর কিছু সময় বাকি। ম্যাথ বিভাগের প্রতিযোগি’রা মাত্রই বির্তকের ক্লাবে প্রবেশ আসল। নুবাহ নিজের স্ক্রিপ্ট ফের একবার দেখে নিল। তার নজর নিচের দিকে তখনো। আচমকাই চোখ তুলে তাকালো সামনের দিকে। কিন্তু এমন এক দৃশ্য দেখল, যা কল্পনার অতীত। চোখদুটো একবার কচলে নিল। সত্যিই তো! সে নিজের মঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে টপ টপ। দ্রুতই পায়ের কদম বাড়িয়ে ম্যাথ বিভাগের মঞ্চের সামনে দাঁড়াল। তার এমন অতর্কিত আগমনে প্রতিযোগী থেকে শুরু করে উপস্থিত লোকজনও হতভম্ব।

নুবাহ উদ্বাস্তুদের মতই দাঁড়িয়ে আছে। দিগবিদিক শূন্য সে হঠাৎই হামলে পড়ল একজন মেয়ে প্রতিযোগীর উপর। দু’ঠোঁট নাড়িয়ে অস্পষ্ট সুরে বলে উঠল, ‘তমা।’
বাকিদের মধ্যে চরম উত্তেজনা তখন। তার পাশে বসা বাকি প্রতিযোগী’রা বলে উঠল,
‘কে ও তিলোত্তমা? চেনো তুমি?’

নুবাহকে ছাড়িয়ে রুক্ষভাষায় বলে উঠল,
‘কে আপনি? এমন অভদ্রের মত আচরণ করছেন কেন?’

চলবে,,,,

★★★
দুঃখিত গল্প দিতে না পারায়। আসলে ঈদের আগের দিন থেকেই ব্যস্ত। কিন্তু চাঁদরাতে গল্প লিখে তারপর বাড়িতে গিয়েছি। এজন্য সেদিন গল্প দেয়া সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে চট্রগ্রাম, মিরসরাই আছি। বাহানা দেবো না গল্প লেখার সুযোগ পায়নি। কিংবা আমি ফ্রি ছিলাম না। তবে গল্প লিখতে নিজস্ব স্পেস লাগে। বেড়াতে গেলে ব্যক্তিগত স্পেস থাকে না। তাই গল্প লিখাও হয়ে উঠে নি। কালকে নিজের বাসায় ফিরব। আশা করছি, এবার নিয়মিত গল্প পাবেন।

গল্প নিয়ে কিছু কথা,,,,,,

জিতু নুবাহর এত কষ্ট কেন? সহ্য হচ্ছে না।

আমার উত্তর:
‘রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে।’ বাকীটা নিজে’রা বুঝে নেন। ধন্যবাদ,,★★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here