তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল #পর্ব_১৩ #সারিকা_হোসাইন

0
296

#তোমার_জন্য_সিন্ধুর_নীল
#পর্ব_১৩
#সারিকা_হোসাইন

সমস্ত সাক্ষ প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত আহিয়ান কে ফা*সি*র আদেশ ধার্য করলো।
আশরাফ চৌধুরীর কাছে পুলিশ মারফত খবর পাঠানো হলো
সে যেনো একবার হলেও তার পুত্রকে দেখতে আসেন।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে নাকি সুরে কেঁদে খবর পাঠালেন―
–যেই ছেলে তার দেশ ও দেশের মানুষের ক্ষতি পৌঁছায় সে আর যাই হোক আশরাফ চৌধুরীর ছেলে হতে পারে না।

আমার এই জীবব্দশায় জেনে বুঝে কোনো দিন কোনো একটা পিঁপড়ে পর্যন্ত মারিনি,আর আমার ছেলে কি না —!

বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন আশরাফ চৌধুরী।

যেসব মেয়ে গুলোকে আহিয়ান পাচার করেছে এবং নির্মম ভাবে হ*ত্যা করেছে তাদের পরিবারের কাছে সংবাদ মাধ্যমে মিডিয়ার সামনে ক্ষমা চাইলেন।

আদালত যাতে দ্রুত তার ফাঁসি দিয়ে দেয় এটা নিয়েও তিনি কঠোর মতবাদ জানালেন।

যেই ছেলে বাবার আদর্শে মানুষ হতে পারেনি,যেই ছেলে অপকর্মে লিপ্ত হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষতি করে বেড়াচ্ছে ,সেই ছেলের বেঁচে থাকার হক নেই।

আশরাফ চৌধুরীর কান্নায় সারা দেশের সাধারণ জনগণের চোখেও জল এসে গেলো।
এই না হলো আদর্শ বাবা।

এমন বাবা ঘরে ঘরে হওয়া উচিত।সবাই আশরাফ চৌধুরী কে তালি সমেত বাহবা জানালো।

*******
জেলে বসে বসে আহিয়ান জীবনের হিসেব কষছে।
তার বয়স যখন ছয় বছর তখন সে তার মাকে তার বাবার হাতে খু*ন হতে নিজ চোখে দেখেছে।
শুধু তাই নয় ,এই বিষয়ে আহিয়ান যদি কাউকে কিছু জানিয়ে দেয় তাহলে তাকেও মায়ের মতো গলা টিপে চিরজীবনের মতো চুপ করিয়ে দেবে বলে হুমকি দিয়েছে।
মাতৃ ভালোবাসা হীন আহিয়ান বড় হয়েছে হেল্পিং হ্যান্ডের হাতে।বাবা আশরাফ চৌধুরী প্রতিদিন নিত্য নতুন মেয়ে নিয়ে এসে বাসায় ফুর্তি করে বেড়াতো।

বাবার শয়ন কক্ষে অন্য একটি মেয়ের যৌন শীৎকার আহিয়ান কে প্রচুর কষ্ট দিতো।প্রথম প্রথম সে দুই কান চেপে ধরে কান্না করতো।মাঝে মাঝে আলমারির ভেতরে লুকিয়ে পড়তো।

আশরাফ চৌধুরী প্রায় ই নেশায় বুদ হয়ে আহিয়ান কে প্যান্টের বেল্ট দিয়ে পেটাতো।

বাবার হাত থেকে রক্ষা পেতে আহিয়ান তার বাবাকে প্রতিশ্রুতি দেয় উনি যেভাবে চাইবেন আহিয়ান সেই ভাবেই নিজেকে প্রকাশমান করবে।

তবে আজ কেনো তার বাবার তার প্রতি এতো ঘৃণা?
এটা কি ঘৃণা নাকি নিজেকে বাঁচানোর নতুন নাটক?

আহিয়ানের এই একত্রিশ বছরের জীবনে সে কখনো দেখেনি আশরাফ চৌধুরী কে সামান্যতম বুকে ব্যাথা অনুভব করতে।

তবে এক রাতের ব্যাবধানেই হার্ট এট্যাক এসে গেলো?

আশরাফ চৌধুরীর সাজানো নাটক বুঝতে পেরে কষ্টে বুক ফেটে কান্না এলো আহিয়ানের।

সে তো বলেনি টাকার বড়াই দেখিয়ে তাকে এখান থেকে মুক্ত করতে!

সে শুধু চেয়েছে তার বাবা তার শেষ সময়ে এসে তাকে একবার হলেও দেখে যাক।
মমতা মাখা হাতটা মাথায় রেখে দুটো ভালো ভালো কথা বলে শান্তনা দিয়ে যাক।

গড়িয়ে পড়া জ্বল আঙুলের সাহায্যে মুছে টুকা দিয়ে দূরে ছুড়ে ফেললো আহিয়ান।

এর পর উঠে দাঁড়ালো,পাশে থাকা কারা রক্ষীকে কাছে ডাকলো।

কেটকেটে কন্ঠে কারা রক্ষী বলে উঠলো―

“”কী চাই””
আহিয়ান বাঁকা হেসে বললো―

“মেজর মুহিত ওয়াসিফ”

******

পুষ্টিকর খাবার,ইনজেকশন, ভিটামিন স্যালাইন আর বেড রেস্টের প্রভাবে কয়েক দিনেই অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছে স্বর্গ।

ঘরে বসে থাকতে তার একদম ভালো লাগছে না।
বাইরে যাবার জন্য মন হাঁসফাঁস করছে।

সুখ চলে গেছে গত কাল,নাফিজ মাহমুদ দুপুরে খেয়ে ভাত ঘুম দিয়েছেন।উঠবেন সেই সন্ধ্যায়।

কোয়ার্টার এর মাঠ টাতে হেটে বেড়াতে পারলে ভালো লাগতো।

বিকেলে ছোট ছোট বাচ্চারা কেউ সাইকেল চালায়,কেউ দৌড়াদৌড়ি করে,কেউ ব্যাট মিন্টন খেলে কেউবা আবার বসে বসে আড্ডা দেয়।
প্রত্যেকটা অফিসারের বাংলোর সামনে সুসজ্জিত ফুলের বাগান।দেখলেই মন ভরে যায়।সাথে কচি নরম ঘাস।

মাঝে মাঝে স্বর্গের মনে হয় সে যদি গরু হতো তাহলে মাঠের সব ঘাস এক দিনেই সাবাড় করে ফেলতো।বিশেষ করে জেনারেল এর বাংলোর সামনের ঘাস গুলো।

মনের সকল ভাবনাকে একপাশে সরিয়ে স্বর্গ তার কক্ষ পরিত্যাগ করে ড্রয়িং রুমে নেমে আসলো।

সেখানে কাউকে পরিলক্ষিত হলো না।

সোফায় ধপ করে বসে পড়লো স্বর্গ।আজকের বিকাল টা তার কাছে সাংঘাতিক অলস মনে হচ্ছে।

সোফায় হেলান দিয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে হঠাৎ মুহিতের কথা মনে পড়লো তার।
মুহিতের আজ অফ ডে।

ওকেই তো নিয়ে যাওয়া যাবে।

ভাবনা টা মাথায় আসতেই ইয়েস বলে তুড়ি মারলো স্বর্গ।
যেই ভাবনা সেই কাজ।পা টিপে টিপে স্বর্গ মুহিতের কক্ষের দিকে অগ্রসর হলো।

মুহিতের দরজার সামনে এসে দুরু দুরু বুকে ঠকঠক শব্দ করলো স্বর্গ।

বিছানায় বসে ল্যাপটপে কিছু ব্যাক্তিগত কাজ সারছিলো মুহিত।
হঠাৎ দরজায় নকের শব্দে কাজে ব্যাঘাত ঘটলো।

এই টাইম টাতে মামা মামী দুজনেই ঘুমায়।আর মা তো কখনো ই আসেনা।মুহিত ই কাজের ফাঁকে গিয়ে মায়ের সাথে সময় কাটায়।তাহলে কে আসলো?
কাজ বাদ দিয়ে ল্যাপটপ অফ করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো মুহিত।

খুট করে দরজা খুলে স্বর্গ কে নিজের রুমের দরজার সামনে দেখে ঠান্ডা সমীরণ বয়ে গেলো মুহিতের প্রাণে।

না চাইতেও ঠোঁটে ফোটে উঠলো প্রশস্ত হাসি।

স্বর্গ আজ মেরুন রঙের একটি কুর্তি পড়েছে সাথে ম্যাচিং করা প্লাজও,গলায় ঝুলানো স্কার্ফ।ঘাড় সমান বাদামি চুল গুলো দুই পাশে ছাড়া।মুখে কোনো প্রসাধনীর ছোয়া নেই তবুও তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে মোহনীয় মনে হয় মুহিতের।

স্যালাইনের প্রভাবে মুখটা গুলুমুলু লাগছে।

মুহিতের মনে হলো মেয়েটাকে একটা টুপ করে চুমু খেয়ে ফেললে মন্দ হয় না ।
কিন্তু চাইলেই কি মেজর জেনারেল এর মেয়েকে যখন তখন চুমু খাওয়া যাবে নাকি?

মন কে বহুত হুমকি ধামকি দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো মুহিত।
মুখে হাসি বজায় রেখে বলে উঠলো―

―আরে স্বর্গ আপনি?
“ভেতরে আসুন।””

মুহিতের মুখে আপনি সম্বোধন শুনে রাগের মিটার ছয়শত ফারেনহাইট হলো সামনে দাঁড়ানো মানবীর ।

তৎক্ষণাৎ পিছন ফিরে হাঁটা দিলো সে।

সাথে সাথে ই মুহিত বেক্কল বনে গেলো।

নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো ―

“”কী হলো মেয়েটার হঠাৎ””

মুহিত আবার বলে উঠলো―

“”কি প্রবলেম হয়েছে স্বর্গ আমাকে খুলে বলুন।ভেতরে আসবেন না?

স্বর্গ মুখে কাঠিন্য বজায় রেখে বলে উঠলো―

“”না যাবোনা””!

“”তখন মুড ভালো ছিলো এজন্য এসেছিলাম,এখন মুড খারাপ হয়ে গেছে তাই চলে যাচ্ছি।

“”দরজায় নক করে আপনার বিশেষ সময় নষ্ট করার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত, মাফ করবেন।

বলেই দুই হাত জোড় করে চলে যেতে উদ্দত হলো।

মুহিত জানে মেয়েদের মুড সুইং হয়।নিজের বোন কে দিয়েই জলজ্যান্ত প্রমান মুহিত।

তাই বলে সেকেন্ডের ব্যাবধানেই??

স্বর্গকে মুহিত অনেক দিন ধরেই দেখে আসছে।সেকেন্ডের মাঝেই এমন আমূল পরিবর্তন কখনোই চোখে পড়েনি।মেয়েটি যথেষ্ট ম্যাচিউর।

―তাহলে??

“”মুহিত কি কোনো অন্যায় করে ফেলেছে?

“”নিজের অজান্তেই কি স্বর্গের কোমল মনে আঘাত দিয়ে ফেলেছে?

ভাবনা থেকে বের হতেই মুহিত দেখতে পেলো স্বর্গ তার রুমের ত্রিসীমানায় নেই।
মুহিত মাথায় হাত দিয়ে চার পাশে উঁকিঝুঁকি মেরে চিল্লিয়ে উঠলো

―আরেহ পাখী গেলো কোথায়?

★★★
সৌম্য মিশন থেকে ফেরার পর থেকেই পিউ আর সৌম্যের ভ্যালেন্টাইন চলছে প্রতিদিন।লাভ বার্ড এর মতো সুযোগ পেলেই দুজন দুজনকে ছাড়া থাকতে পারছে না।

ডিউটি টাইম শেষ হতেই সৌম্য পিউকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়,নিজেদের মতো করে সময় কাটায়।

দুজনের বন্ডিং ও খুব ভালো।তারা দুজন দুজনের প্রতি যথেষ্ট লয়াল।
তাদের সম্পর্ক এখন মধুপুর্ন।
“”আপনি”” নামক সম্বন্ধ কে টাটা বাই বাই জানিয়ে “”তুমি””তে চলে এসেছে।

ক্যান্টনমেন্ট এর ভেতরে নির্ঝর আবাসিক এর লেকের পাড় দিয়ে হাত ধরে হেটে বেড়াচ্ছে সৌম্য আর পিউ।
হঠাতই পিউয়ের ফোনের কর্কশ রিংটোন এ প্রেমে ব্যঘাত ঘটলো তাদের।
ঝটপট ফোন বের করে স্বর্গের মায়ের নম্বর দেখতেই ভ্রু কুঁচকে এলো পিউ এর।
স্বর্গ তার ক্লোজ ফ্রেন্ড হলেও স্বর্গের মায়ের সাথে খুব কম কথাই হয়েছে তার।
চিন্তিত হয়ে ফোন রিসিভ করে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে স্বর্গের আওয়াজ পাওয়া গেলো।

পিউ কুশল বিনিময়ের জন্য প্রশ্ন করার আগেই স্বর্গ ঝনঝনানি কন্ঠে বলে উঠলো―
ওই হাব্লু মেজরের বডিগার্ড তোকে কি বলে সম্বোধন করে রে?

পিউ বুঝলো কোনো ঝামেলা নির্ঘাত হয়েছে।না হলে সৌম্য তাকে কি বলে সম্বোধন করে এসব সে কেনো জানতে চাইবে?

তাই স্বর্গ কে না ঘাঁটিয়ে সিধে ভাবে বলে দিলো–
তুমি বলে ডাকে।

তোকে আদর করে কি বলে ডাকে?

উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইলো স্বর্গ।

মাঝে মাঝে বাবু,জান, পাখি,টুকটুকি কখন কি বলে সেটা কথার মোডের উপর ডিপেন্ড করে “”
কেনো?
হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো?

স্বর্গ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠলো তোর ওই মেজরের বডিগার্ড কে বলবি―
প্রতিদিন যেনো ওই রসকস হীন করল্লা মেজরের এক ঘন্টা করে লাভ ক্লাস নেয়।
না হলে এতদিন মেজর একা পানিশমেন্ট দিয়েছে,এবার থেকে বাপিকে বলে বাপীকে দিয়েও ওর হালুয়া টাইট করাবো।

বলেই খট করে কল কেটে দিলো স্বর্গ

স্বর্গের এহেন রণমূর্তি দেখে ভড়কে গেলো পিউ।
পিউএর মুখের দিকে তাকিয়ে সৌম্য বলে উঠলো ―

কি হয়েছে বাবু?

ঠোঁট উল্টে পিউ বললো –
স্বর্গ তোমাকে পানিশমেন্ট দিবে।

সৌম্য বড় বড় চোখ করে জিজ্ঞেস করে―

“”সে কী?আমি কি করলাম আবার?

―তুমি কিছুই করোনি,করেছে মেজর।

সৌম্য অবাকের সহিত প্রশ্ন করলো

“”কী করেছে মেজর??

সেটা তো আমিও জানতে চাই,বলেই বিজ্ঞের ন্যায় ভান ধরলো পিউ।

◆◆◆
নামিরা এখন নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা।পেট টা অনেকটাই ফুলে উঠেছে।রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হয় তার,সোহাগ খেয়াল করেছে রাতের বেশির ভাগ সময় ই ওয়াশ রুমে কাটায় মেয়েটা।
খাবার দাবার এও চরম অনীহা এসেছে।

ডক্টর বলেছে এই টাইমটাতে প্রচুর সেইফলি চলাফেরা করতে হবে।
সোহাগ ভার্সিটি থেকে ছুটি নিয়েছে সে জন্য।

দিন যতো যাচ্ছে সোহাগ ততো ভয়ে সিটিয়ে যাচ্ছে,একা এই অচেনা দেশে সে কিভাবে সামলাবে নামিরা আর ছোট বাচ্চাকে?

সোহাগ মনে মনে ভাবলো নামিরার মাকে যদি এখানে আনা যায় তাহলে নামিরাও ভালো থাকবে,মা ও ভালো থাকবে।

অনেক ভেবে চিন্তে সোহাগ মুহিতের নম্বর ডায়াল করলো।

চারিদিকে ভ্যাপসা গরমে দম ফেলতেও যেনো কষ্ট হচ্ছে
সূর্যের উত্তাপ যেনো আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে ধরনীতে।এসির ঠান্ডা হাওয়ায় শরীর যেমন দ্রুত হীম হয় তেমনি বাইরে বের হলে যেনো গায়ে আগুন ধরে যায়।একটু বৃষ্টির শীতলতা উপভোগ করতে পারলে মন্দ হতো না।

মুহিত আজ অনেক ব্যাস্ত।অফিসিয়াল কাজে এক দন্ড রেস্ট নেবার ফুসরত মিলছে না।রোদের মধ্যে দৌড়াদৌড়ির কারনে ঘেমে নিয়ে একাকার অবস্থা।
এর মধ্যে জেল সুপার জরুরি তলব করেছে।

মুহিতের সাথে জেল সুপার এর কি কাজ?

সেটাই ভেবে চলেছে মুহিত।

ভাবনার সুতো ছিড়লো রিংটোন এর শব্দে।স্ক্রিনে সোহাগের নম্বর দেখে বুক কেঁপে উঠলো মুহিতের।
জরুরি দরকার ছাড়া সোহাগ কখনোই মুহিত কে কল করে না।

ফোন কানে তুলে হ্যালো বলতেই সোহাগের উচ্ছসিত কন্ঠ শোনা গেলো।
মুহিত কিছুটা শান্ত হয়ে কুশল বিনিময় পর্ব শেষ করলে।

সোহাগ ইতস্তত করে বলে উঠলো
―মুহিত নামিরার যেকোনো সময় লেবার পেইন উঠতে পারে,আমি একা এখানে সাহসে কুলাতে পারছি না।

“”তুমি জানো নামিরার মুখ থেকে একটু “আহ” মূলক শব্দ আমার হৃদয়ে কতোটা ব্যাথার সৃষ্টি করে।

লেবার পেইনে নামিরা এই বিদেশ বিভুঁইয়ে কাতরাবে এটা আমি সহ্য করতে পারবো না।
আর তা ছাড়া নামিরার একটা সাহস দেবার মানুষ প্রয়োজন।

জানি একটা অন্যায় আবদার করতে যাচ্ছি।তবুও নামিরার ব্যাপারে আমাকে একটু নয় অনেকটাই স্বার্থপর বলতে পারো।

সোহাগ অপরাধীর ন্যায় কন্ঠ খাদে ফেলে বললো

―””যদি কিছু মনে না করো মা কে একটু পাঠাবে?

মা তো অনেকটাই সুস্থ এখন।

,বলেই নীরব শ্রোতা হয়ে মুহিতের উত্তরের প্রতীক্ষায় রইলো সোহাগ।

স্মিত হেসে মুহিত উত্তর করলো

এতো ইতঃস্ততার কি আছে সোহাগ ভাই?

আমি মা কে বলে আপনাকে সব কিছু জানাবো।আপনি চিন্তা করবেন না ।
আরো বিভিন্ন কথা বলে সোহাগ কে ভরসা দিয়ে লাইন কেটে দিলো মুহিত।

――――――――――

মুহিত চিন্তিত মনে বসে অপেক্ষা করছে ক্রিমিনাল ভিজিটিং রুমে।

তার বোধগম্য ই হচ্ছে না আহিয়ান কেনো তার সাথে কথা বলতে চাইছে?
মুহিত তো সব কিছু সাবমিট করে দিয়ে ঝামেলা চুকিয়ে ফেলেছে।
তবে আজ কেনো আহিয়ান তাকে জরুরি তলব করেছে?

ঝনঝন শব্দে ধ্যান ভাঙলো মুহিতের।
হাতে হ্যান্ডকাফ, পায়ে বেড়ি দিয়ে মুহিতের সামনে বসানো হলো আহিয়ান কে।
দুদিন আগেই যেই ছেলেটার চেহারা জৌলুসে পরিপূর্ণ ছিলো আজ সেটা অনেকটাই মলিন।
কেমন যেনো কয়েক দিনের ব্যাবধানেই অনেকটা শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে ছেলেটা।
ক্লিন শেইভের চকচকে গাল গুলো খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে ভরে গেছে।
চোখের নিচে জমেছে কালি।

মুহিতের মনে হঠাৎ মায়ার উদ্রেক হলো।তবুও মুখে গাম্ভীর্য ভাব বজায় রেখে তাকে ডাকার হেতু জানতে চাইলো।

আহিয়ান বিষাদ পূর্ণ হাসি দিয়ে মুহিতের উদ্দেশ্যে বললো―
“”মেজর মুহিত আমাদের চোখের সামনে যা দেখি,যা ঘটে আমরা তাকেই সত্যি ভেবে নেই।

”’কিন্তু সত্যের পিছনেও সত্য থাকে।
আমরা সেটাকে যাচাই করিনা।

মুহিতের কপালে সূক্ষ্ণ ভাঁজ দৃশ্যায়মান হলো।
গমগমে কন্ঠে বলে উঠলো―
―হেঁয়ালি না করে যা বলতে চান তাই বলুন,সময় খুব কম আমার হাতে।

তাচ্ছিল্য পূর্ণ হেসে আহিয়ান বললো―
―””বাপ ভাইয়ের খুনি কে?

তা জানতে ইচ্ছে করে না মেজর মুহিত ওয়াসিফ??

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here