আশার_হাত_বাড়ায়|২৮| #ইশরাত_জাহান 🦋

0
244

#আশার_হাত_বাড়ায়|২৮|
#ইশরাত_জাহান
🦋
মিরাজ একটি মলম নিয়ে ফারাজের গলায় লাগিয়ে দিতে থাকে। ফারাজের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,”এবার থেকে তোমার প্রেশারের ঔষধের সাথে এই মলম রেখে দিও।তোমার যে অ্যাসিসট্যান্ট!কাজে লাগবে ভাই।”

“ফালতু বকবি না।”

“হ্যাঁ হ্যাঁ আমিই তো খালি ফালতু বকছি।সরাসরি তো সে ঘটিয়ে দিলো।তাও কি না পরপর দুইদিন।”

ফারাজ এই বিষয় এড়াতে বলে,”হয়েছে তোর মলম লাগানো?”

“হুম হয়েছে।কিন্তু আমি ভাবছি এমন কোনো মলম আছে যেটা বারবার ক্ষত হলেও স্পট পড়বে না।”

“না নেই।”

“তাহলে আর কি?এই মলমটাই তোমার কাছে রেখে দিতে হবে।”

ফারাজ এবার হাত উচু করে দেখায়।মিরাজ দিলো দৌড়।সিটের কাছে এসে দাড়াতেই অর্পা চলে আসে মিরাজের কাছে।এতক্ষণ শ্রেয়ার সাথে কথা বলছিলো।ফারাজ ফ্রেশ হয়ে চলে আসে।তারপর ল্যাপটপ বেড় করে শ্রেয়াকে বলে,”আমাদেরকে দুইদিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে।পরশু মিটিং।আমি ল্যাপটপে সব চেক করছি আপনি ফাইলগুলো দেখুন।”

মাথা ঘুরতে থাকলো শ্রেয়ার।ভাবছিলো এখন একটু ঘুমাবে।রাতে ঘুম হয়নি।এখন ফারাজ তাকে কাজ দিলো।শ্রেয়া মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না।অসহায় মুখ করে ফারাজের থেকে ফাইল নিয়ে দেখতে থাকে।মিমি মাঝখানে অসহায় এক পিচ্চি।একপাশে একজন ল্যাপটপ অপরপাশে আরেকজন ফাইল নিয়ে ব্যাস্ত।মিনিট দশ দুজনকে দেখার পর বিরক্ত হয়ে উঠে গেলো অর্পার কাছে।অর্পার কোলে বসে বলে,”ধুর!ওরা এত কাজ করে কেনো?প্লেনে আনন্দ না করে কাজ কাজ আর কাজ।ভালো লাগে না।”

অর্পা এবার মিরাজের দিকে তাকিয়ে মিরাজকে খোচা মেরে বলে,”তোমার ভাই এমন কেনো হ্যাঁ?কোথায় এখন একটু গল্পগুজব করবে।সবাই আনন্দ করবে তা না।উল্টো সে এখন কাজ নিয়ে ব্যাস্ত।”

অর্পাকে শান্তনা দিয়ে মিরাজ বলে,”রসে ভরা বর থাকতে তুমি ভাসুরের দিকে নজর দেও কেনো বউ?”

রেগে গেলো অর্পা।মিরাজের দিকে চোখ বড় বড় করে বলে,”কি বললে তুমি?আমি ভাসুরের দিকে নজর দেই?”

জিহ্বায় কামড় দিয়ে মিরাজ বলে,”আমি এটা বোঝাতে চাইনি।আমি বোঝাতে চেয়েছি তোমার বর তো অনেক রোমান্টিক।কিন্তু কাছে আসলেই তুমি দূরে ঠেলে দেও।তাহলে রসকষহীন ভাসুরকে রোমান্টিক হতে বলো কেনো?আমার ভাই কি তার বউয়ের সাথে আছে যে রোমান্টিক হবে?”

“পাশে মিমি আছে এটা ভালো করে দেখো।”

অর্পার বলতে দেরি মিমির পাল্টা প্রশ্নের দেরি নেই।মিমি বলে,”রসকষহীন কি কাকিয়া?”

“দেখেছো?বলেছিলাম না?মিমির সামনে এসব আর বলবে না।”

“এই বিষয়ে আগে আমি না আগে তুমি বলেছো।যেটা মিমি শুনেছে।সুতরাং দোষ এবার আমার না দোষ তোমার।”

“একদম আমার নামে দোষ দিবে না।তুমি দোষী।”

“হ্যাঁ সেই।দোষ বর করুক আর বউ।দোষী তো বরের হবেই।”

মিমি এদের ঝগড়া দেখে চিল্লিয়ে বলে,”তোমরা ঝগড়া করছো কেনো?”

মিমির চিৎকার শুনে ফারাজ সহ অনেকেই ঘুরে তাকালো।ফারাজ আর শ্রেয়ার সিট কাছে থাকায় ওরা শুনতে পেলো খুব তাড়াতাড়ি।ফারাজ বলে ওঠে,”কি হয়েছে তোমার?”

মিমি অর্পার কোল থেকে উঠে ফারাজের কাছে এসে বলে,”আচ্ছা পাপা রসকষহীন মানে কি?তুমি নাকি ওটা।আমি জিজ্ঞাসা করলাম রসকষহীন মানে কি?কাকীয়া আর কাকাই এখন এই নিয়ে ঝগড়া করছে।”

অর্পা এবার শুকনো ঢোক গিলে।এখন যে কথার প্রেক্ষিতে এই শব্দটি উচ্চারণ হয়েছে ওই কথা আবার না উঠে আসে।ফারাজ চোখ গরম করে মিরাজের দিকে তাকিয়ে মিমিকে আবার ওদের মাঝখানে বসিয়ে দিলো।শ্রেয়া ঝিমিয়ে পড়েছে।ঘুম আসছে তার।এরমধ্যে প্লেনের খাবার আসলো।শ্রেয়া খাবার দেখে ভাবছে,”হাত দিয়ে খাওয়া যাবে তো নাকি এদের মত ভদ্রলোক দেখাতে চামচ আর টিস্যু দিয়ে পেঁচিয়ে খেতে হবে?”

শ্রেয়ার ভাবনার মাঝেই শ্রেয়ার সামনে কড়া করে বানানো কফির কাপ রাখলো ফারাজ।বলে,”আপনাকে টায়ার্ড দেখাচ্ছে মিস শ্রেয়া।এটা নিন।একটু পরেই আমরা পৌঁছে যাব।এখন ঘুমালে ব্রেনের সমস্যা হবে।”

ফারাজের দিকে তাকিয়ে শ্রেয়া মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে।আজ কাছের মানুষ বাদেও কেউ তার খোঁজ নিলো।এইটুকু যত্ন তো মেয়েরা তার কাছের মানুষের থেকে ডিজার্ভ করে।শ্রেয়া সবসময় চাইতো রনি তাকে একটু বুঝুক।তাকে নিয়ে বড় বড় ক্যাফেতে না যাক অন্তত ছোট একটি পার্কে নিয়ে যাক।রিক্সায় করে ঘুরতে না যাক একে অপরের হাত ধরে পায়ে হেঁটে ঘুরতে যাক।কিন্তু আফসোস এগুলোর কিছুই হয়নি।ফারাজ আর রনিকে নিয়েএই চিন্তা ধারার মাঝেই শ্রেয়ার মাথায় আসলো সে ডিভোর্সী।তার উপর সে গরীব। ফারাজকে নিয়ে চিন্তা করা তার উচিত না।একজন ডিভোর্সী আর গরীব মেয়ে হয়ে ফারাজের মত প্রভাবশালী লোকের দিকে তাকানো বেমানান।কিন্তু শ্রেয়ার এই দোটানা মন তো একেকবার একেক কথা বলে।কখনও ভালো লাগার দৃষ্টিতে ফারাজের দিকে মোহিত হয়ে যায় আবার কখনও বাস্তবে ফিরে আসলে নিজেকে ধিক্কার জানায়।শ্রেয়ার ভাবনার মাঝে মিমি বলে,”তোমাকে তো নানু খাবার দিয়েছিলো।ওগুলো কোথায়?”

আসলে মিমি জানে ওটাতে কেক আছে।যেটা মিমির খুব বেশি ভালো লাগে।বাসায় থাকতেই মিমি দুই পিচ খেয়েছিলো।শ্রেয়া আর ওর ভাগের কেক খেতে পারলো না।মিমির এই ভালোলাগা দেখে নিজের জন্য পিচ করা কেক মিমিকে দিয়েছিলো।এখন মিমির মুখের দিকে তাকাতে বুঝতে পারলো মিমি কেক খাওয়ার জন্য এমন করছে।আলতো হেসে শ্রেয়া বাটি খুললো।ওখানে ঘরোয়াভাবে বানানো পাস্তা আর দুই পিচ কেক আছে।কেক মিমির খুব পছন্দের খাবার।প্লেনে দিয়েছে সেন্ডুইস আর ড্রিংক।যেটা মিমির খেতে ইচ্ছা করছে না।শ্রেয়া মিমিকে কেক দিলো।কেক নিয়ে খেতে থাকে মিমি।ফারাজ দেখেও কিছু বলেনি।মেয়ে তার আনন্দে আছে এটাই অনেক।শ্রেয়ার বাটিতে আরো একটি কেক আছে।আর পাশে ফারাজ বসে আছে।শ্রেয়া খেতে যেয়েও খেতে পারলো না।বিবেগে লাগলো।তাই মিমির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,”এটা তোমার পাপাকে দেও।”

মিমি খুশি হয়ে সাথে সাথে ফারাজকে কেক দিয়ে বলে,”পাপা এই নেও কেক।আন্টি দিয়েছে।”

“তোমার আন্টি খায়নি কিছু।তাকেই খেতে বলো।আমি খাবো না।”

মিমি জানে ফারাজ একবার যখন বলেছে খাবেনা তখন খাবে না।মিমি এবার কেকটা অর্ধেক করে অল্প একটু ফারাজের মুখের কাছে নিল।ফারাজের ঠোঁট ছুই ছুঁই কেক হওয়ায় কেকটি ফারাজ খেয়ে নিলো।বাকি কেকটুকু শ্রেয়ার কাছে দিয়ে বলে,”এটুকু তুমি খাও।আচ্ছা পাপা কেক কেমন হয়েছে?”

কেক খেয়ে ফারাজ বলে,”হুম টেস্টি ছিলো।তোমার ভালো লাগলে বলো।নেক্সট টাইম এই রেষ্টুরেন্টের থেকেই কেক অর্ডার দিবো।কিন্তু হাইজেনিক খাবার হলে কিনে দিবো।নাহলে না।”

ফোকলা দাঁতে হাসি দিয়ে মিমি বলে,”এটা আন্টি বানিয়েছে।আজ সকালে।”

ফারাজ আড়চোখে দেখলো শ্রেয়াকে।তারপর আবারও ল্যাপটপে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।মিমি মুখটা আবারও ফ্যাকাশে করে বসে রইলো।শ্রেয়া মিমির মুখের ভাব দেখে ফাইল পাশে রেখে মিমির হাত ধরে।মিমিকে নিজের কাছে এনে গল্প করতে থাকে।তারপর অর্পা ও এনির সাথে সবাই প্লেনে আড্ডা দিতে থাকে।

দুপুরের লাঞ্চ সেরে থানায় এসেছে শিহাব।নিজের চেয়ারে বসেছে মাত্র।থানায় বসে কি কি কেস আছে এগুলো দেখছিলো।এক সময় ক্লান্ত অনুভব করে তাই এখন বিশ্রাম নিতে থাকে।ফোন বেড় করে কিছু রিলস দেখছিলো।যেহেতু শিহাব পুলিশ তাই সে সবসময় দেশের বিষয়ে খোজ নেয়।খবরের কিছু পেজে তার ফলো দেওয়া আছে।কিছু ভিডিও দেখতে দেখতে শিহাবের নজরে আসলো ফারাজ আর শ্রেয়ার একটি ভিডিও।পাঁচ মিনিটের ভিডিও।এই ভিডিওতে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছিলো ফারাজ আর শ্রেয়া।শিহাব মনোযোগ দিয়ে দেখে।অল্প সাউন্ড দেওয়া ছিলো।ভিডিও দেখে জেলের দিকে চোখ যায় শিহাবের।রনি বসে আছে জেলে।সামনে পাহারাদার।মুচকি হেসে শিহাব ফোনের সাউন্ড বাড়িয়ে দিলো।শুরু থেকে আবারও ভিডিও চালু করলো।রনির কানে পৌঁছালো সকল কথা।শ্রেয়ার সফলতার কথা শুনতে পাচ্ছে রনি।মনে মনে ভাবছে,”জীবন কাকে কিভাবে পাল্টে দেয় এটা বোঝা মুশকিল।এতদিন আমি আরাম আয়েশে ছিলাম আজ আমি জেলে।আর যে ছিলো জেল নামক সংসারে আজ সে আরাম আয়েশে।একেই বলে ভাগ্য।”

শিহাব এবার ফোন বন্ধ করে পাশে থাকা রফিককে বলে,”বুঝলে রফিক।কিছু পুরুষ মানুষ আছে হীরে চিনতে ভুল করে।তাদের মনেই থাকে না বৈধ স্ত্রীর মর্যাদা কি।বাইরের চাকচিক্য দেখে ঘরের সৌন্দর্যের মর্যাদা দিতে তাদের মন সায় দেয় না।কিন্তু সময় কি সবার এক যায়? উহু যায় না।তাই তো সময় ঘুরেফিরে তার কর্মের ফল দেখিয়ে দেয়।”

রনির চোখ বেয়ে আজ পানি পড়ছে।সত্যি সে তার জীবনের মূল্যবান সম্পদের কদর বুঝলো না।এখনও মনে পড়ে শ্রেয়া চলে আসার দিন কতটা স্নিগ্ধ লাগছিলো তাকে।কিন্তু রনি ওইদিনও শ্রেয়াকে চিনলো না।বউয়ের মর্যাদা দিলো না।একসময় শ্রেয়া বাচ্চা নেওয়ার জন্য কত আকুতি মিনতি করেছিলো।কিন্তু রনি বাচ্চা হতে দেয়নি।এখন রনি ভাবছে,”একটা বাচ্চা হলে হয়তো আজ আমার সংসার ভাঙতে পারতো না।আমিও আজ এখানে আসতে পারতাম না।”

ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রনি।এখন আর এসব ভেবে লাভ নেই।অন্যকে যেমন জীবন উপহার দেওয়া হয়েছে আজ সে তেমন জীবনটাই পাচ্ছে।

মাত্র নিজেদের জন্য বুক করা রিসোর্টে আসলো সবাই।এনি ইভা ও লিজা এক রুমে,শ্রেয়া মিমি ও অর্পা এক রুমে,ফারাজ ও মিরাজ এক রুমে থাকবে।রুমে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে শ্রেয়া।ঘুমন্ত শ্রেয়ার বামপাশে শুয়ে পড়ে মিমি।ঘুমের ঘোরে মিমিকে জড়িয়ে রাখে। মিমিও শুয়ে শুয়ে শ্রেয়ার চোখমুখ দেখতে থাকে।ভালো লাগে মিমির কাছে।শ্রেয়ার গলার কাছে নাক নিয়ে কিছু শুকতে থাকে।মনে মনে বলে,”মায়েদের গা থেকে কি এই গন্ধটা আসে নাকি অন্য গন্ধ!আমার কাছে তো আন্টির গা থেকে আসা গন্ধটা ভালো লাগছে।”

কিছুক্ষণ শ্রেয়াকে দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যায় মিমি।অর্পা গোসল করে এসে দেখে শ্রেয়া ও মিমি একে অপরকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।অর্পা সাথে সাথে ছবি তুলে নেয়।শ্রেয়ার মুখে উপর ফুলের স্টিকার দিয়ে স্টোরি দিলো অর্পা।ফ্রেন্ডলিস্টে ফারাজ থাকার কারণে দেখলো অর্পার স্টোরি।মেয়ের বুকের উপর শ্রেয়ার হাত আর মিমির হাত দেখে বোঝা যাচ্ছে সেও জড়িয়ে আছে শ্রেয়াকে।ফারাজ একটি কেয়ার রিয়েক্ট দিলো।কিছু একটা ভেবে অর্পাকে লিখলো,”ছবিটা আমাকে দেও।”

অর্পা দিলো ছবিটি। আরো কিছু কিছু ছবি আছে সেখানে শ্রেয়া ও মিমির।ইচ্ছা করেই এই সব ছবি দিয়েছে।ফারাজ দেখছে মাতৃত্বের স্বাদ ছাড়া বেড়ে ওঠা মিমি এখন অজানা এক নারীর বক্ষে সুখ খুঁজছে।মেয়ের এই সুখ দেখতেই তো তাকেও এনেছে কক্স বাজারে।যতটুকু সময় যাক মেয়ে তার হাসিখুশিতে সময় কাটাক।

*****
সকালে ঘুম থেকে উঠে রিমলি কিছু কাগজপত্র গোছাতে থাকে।আজকে কলেজে ভর্তি হবে।এই তো বাসার কাছেই তার কলেজ।পায়ে হেঁটে গেলে পনেরো কি দশ মিনিট লাগবে।রিমলি টাকা ও কাগজ ব্যাগে গুছিয়ে নিতে নিতে সৃষ্টি বেগম ঘরে ঢুকলেন।বোরকা ছাড়া সৃষ্টি বেগমকে দেখে রিমলি রাগ দেখিয়ে বলে,”তুমি এখনও রেডি হওনি!ওদিকে দেরি করে গেলে ভিড় হবে তো।তখন রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে তোমারই কষ্ট হবে।কতবার বলছি তাড়াতাড়ি করো।দরকার হলে আজ বাইরে লাঞ্চ করবো।কিন্তু তারপরও দেরি হয় তোমার?”

“ওরে মা থাম তুই।আমি যাবো না তোর সাথে।”

অবাকের সাথে রিমলি বলে,”তাহলে কে যাবে?আম্মু তুমি ছাড়া আমি একা একা গেলে আবার তুমিই চিন্তা করবে।তখন আরেক ঝামেলা।”

“আমার মত একজন হ্যান্ডসাম পুলিশ থাকতেও আন্টির চিন্তা হবে এটা তো মানা যায় না।”

শিহাবের মুখে এমন কথা শুনে পিছনে তাকালো রিমলি।মিনমিন করে বলে,”ফেবিকল।”

মিসেস জুঁই নিজেও এসেছেন।সৃষ্টি বেগমের সাথে সময় কাটাবেন তাই।সৃষ্টি বেগম রিমলির দিকে তাকিয়ে বলেন,”আমি তো ঢাকা শহরের কিছুই চিনি না।শুধু শুধু তোর সাথে যেয়ে সময় নষ্ট।শিহাব বাবা তো ছেলে মানুষ।তোকে তাও বুঝেশুনে ভর্তি করিয়ে দিবে।আমি নাহয় অন্যদিন যাবো।”

ভ্রুকুটি করে তাকালো রিমলি তার মায়ের দিকে।মিসেস জুঁই লক্ষ্য করলেন বিষয়টি। রিমলি যে বিষয়টি পছন্দ করছে না এটা বুঝলো।সৃষ্টি বেগম নিজেও প্রথমে এমন নাকোচ করেছিলেন।মিসেস জুঁই এই ব্যাপারে খুশি হলেন যে রিমলি অনেক বুদ্ধিমতি।এই বয়সে এসেও স্ট্রেট থাকে।গ্রামের মেয়েরা শহরে আসলে প্রথম দিকে ঘাবড়ে যায়। রিমলি এমন না।অবশ্য যশোর পৌরসভার পাশেই রিমলিদের বাসা।তাহলে শহরের কালচার জানবে না এটা ভাবা ভুল।হুবহু ঢাকার মানুষের মতো নাহলেও কোনো অংশে কম না যায় না যশোরের মানুষ।শ্রেয়ার থেকেও রিমলি এনাফ স্মার্ট।মিসেস জুঁই খেয়াল করেছেন তার ছেলে রিমলিকে নিয়ে সেনসিটিভ।কিন্তু ছেলে বাড়াবাড়ি কিছুই করবে না।আস্থা আছে তার মা হিসেবে।তারপরও চোখে চোখে রাখেন ছেলেকে।ভুল কিছু হওয়ার আগে তিনি সামলে নিবেন। রিমলির কাছে এসে মিসেস জুঁই বলেন,”চিন্তা করোনা।আমার ছেলে তোমাকে ভর্তি করতে সাহায্য করবে।আমি আমার ছেলেকে চিনি মা।আর যদি বান্দরগিরি করে আমাকে বলবে আমি ওকে শায়েস্তা করবো।”

রিমলি হেঁসে দেয়।সৃষ্টি বেগমকে জড়িয়ে ধরে বিদায় জানায়।শিহাব বাইক নিয়েছে। রিমলি বাইকের পিছনে বসেছে।শিহাবকে ধরেনি বরং মাঝখানে ব্যাগ দিয়ে রেখেছে।তাই রিমলিকে খোচা দিয়ে বলে,”দয়া করে রোমান্টিক উপন্যাস পড়বে।তাহলে বুঝবে হিরো হিরোইন কিভাবে চলতে হয়।”

“আমার হিরো আসলে আমি পড়বো।আপনাকে মাথা ঘামাতে হবে না।”

রিমলির হিরো অন্য কেউ হবে এটা শুনেই শিহাবের মাথা ঘুরে গেলো।জোরে স্প্রিড দিয়ে বাইক চালাতে শুরু করেছে।।রিমলি এবার টাল সামলাতে পারলো না।চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলে,”ও মা গো!ও আল্লাহ গো!আমকে এই পুলিশ না ফুলিশ ব্যাটা আজ শেষ করে দিলো।আমি আজ পয়দা হওয়ার দিন পটল তুলবো।”

বলতে বলতে শিহাবের কাধে হাত রাখে রিমলি।অল্প রাস্তা হওয়ায় পৌঁছে যায় কলেজের সামনে।এখনও চোখ বন্ধ করে শিহাবকে ধরে আছে সে।দুষ্টু হাসে শিহাব।বাইকের ছোট্ট আয়নায় রিমলির মুখ দেখে মিনমিন করে বলে,”তোমার জীবনের হিরো আমিই হবো।দরকার হয় এভাবে ভয় দেখিয়ে বা জোর করে।ভালো যখন বেসেছি তুমি আমারই হবে।”

চলবে…?

আমি অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করি।বর্তমানে পরীক্ষা নিয়ে খুব ব্যাস্ত।ষোলো তারিখে পরীক্ষা শেষ হবে।তারপর গল্প আবার আগের মত রেগুলার দিবো।রোজার মাসে এত গরম আর পরীক্ষার প্রস্তুতির ব্যাপার ছিলো তাই তখন থেকেই আমি ব্যাস্ত হয়ে পড়েছি।অন্তত এই ষোলো তারিখ পর্যন্ত আপনারা এভাবে গ্যাপে গ্যাপে গল্প পড়ুন।আমি তারপর সুস্থ থাকলে প্রতিদিন গল্প দিবো।যেমনটা আগে দিতাম।গল্প মিস দিতে আমারও ভালো লাগে না।কিন্তু আমি এখন না চাইতেই বাধ্য।আশা করি আপনারা বুঝবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here