দমকা_প্রেমের_গল্প #Ayrah_Rahman #পর্ব_২৪

0
251

#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২৪
__________________

” আর কতক্ষণ এভাবে এমন একটা হাতির বাচ্চার ভর সামলাবো? এবার তো উপর থেকে সরেন। আমার হাড়গোড় তো সব পাউডার বানিয়ে দিয়েছেন। ওহ্ মা! ”

কথাটা কর্নোগোচর হতেই তড়িঘড়ি করে উঠতে গিয়ে স্লিপ কেটে আবার ও অরিত্রার উপর পড়তেই বেশ ব্যাথা পেলো অরিত্রা। হাড় ও মনে হয় ভেঙে গেছে দুয়েকটা। মুনতাসিম নিজেকে সামনে সাবধানে উঠে দাঁড়ালো। সে ভেবে পাচ্ছে না এই শুকনো ফ্লোর পিচ্ছিল হলো কি করে?

এইতো কিছু ক্ষন আগে সবটা শুকনো দেখে গেলো। মুনতাসিম অরিত্রার দিকে তাকাতেই অরিত্রা নাক মুখ খিঁচে আছে। কোমড়ে হাত দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। এই তো কিছু ক্ষন আগে মুনতাসিম সামনে এগুতেই অরিত্রার ফালানো তেলেই স্লিপ কেটে অরিত্রাকে নিয়েই খাটের ওপর ধপাস করে পড়লো। সেই ঘটনার কথা মনে হতেই সে চোখ খিঁচে বিড়বিড় করে বলল, ” এই জন্য ই বলে অন্যের জন্য গর্ত খুড়তে নেই, তাহলে সেই গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়! বোঝ এবার! ”

মুনতাসিম নিচের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে নিচ থেকে তর্জনি দিয়ে কিছু একটা লাগিয়ে আনলো। আঙুলে আঙুল ঘষা দিতেই বুঝলো এটা তেল।

” ফ্লোরে তেল ফেলার মতো মহৎ কাজ টা কে করলো?” মুনতাসিমের গম্ভীর কন্ঠে হকচকিয়ে উঠলো অরিত্রা। চোখ খুলে তাকালো মুনতাসিমের গম্ভীর মুখোশ্রীতে। অরিত্রা স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,

” আমি কি জানি? আমি তো জাস্ট… ”

” জাস্ট? ”

” জাস্ট আপনার রুমটা দেখার জন্য এসেছিলাম। বেশ সুন্দর রুম আপনার ” মিনমিনে কন্ঠে কথাটা বলেই চুপ করে গেলো অরিত্রা। মুনতাসিম এক ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে আছে অরিত্রার দিকে। অরিত্রার কথা যে তার এক বিন্দু বিশ্বাস হলো না তা বুঝতেই পারছে।

” ওও রিয়েলি? আমাকে কি তোমার কোন এঙ্গেলে বোকা, গর্ধব কিংবা হাঁদা টাইপের মনে হয়? ”

অরিত্রা তৎক্ষনাৎ নাকচ করে বলল, ” না তো ”

” তাহলে, তুমি আমাকে ছয় নয় বোঝাবা আমিও তোমার তালে তাল মিলাবো? ভাবলে কি করে? আর একজন অবিবাহিত ছেলের রুমে পারমিশন ছাড়া ঢুকা কেন ধরনের ম্যানার? মিস ভদ্রতা? ”

অরিত্রা আমতাআমতা করে বলল, ” মেহের যে বলল বাড়িতে কেউ নেই তাই তো বাড়ি টা ঘুরে দেখছিলাম। তাই আপনার রুম ও দেখতে আসলাম। তাতে এতো রিয়েক্ট করার কি আছে আজব। যেনো রুম শুধু আপনার ই আছে আর মানুষ সব ফুটপাতে আর গাছ তলায় থাকে!”

মুনতাসিম চোয়াল শক্ত করে অরিত্রার দিকে তাকালো, মেয়েটা ইদানীং বেশি কথা বলে।

” শুনো মেয়ে.. ” মুনতাসিমের কথার ভিতর দিয়েই অরিত্রা বলে উঠলো, ” অরিত্রা! আমার নাম অরিত্রা ”

” সো হুয়াট? ”

” সো হুয়াট মানে? আপনি জানেন না একজন মেয়েকে নাম জানা শর্তেও “এই মেয়ে “বলা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ ”

মুনতাসিম চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল, ” তাই নাকি? ভাগ্যিস তুমি বললে! নয়তো জানতাম ই না ”
অরিত্রা বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে মুনতাসিমের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলল, ” তাহলে আপনি থাকেন আমি যায়, কেমন? ”

বলেই অরিত্রা ভৌ দৌড়। যেন এখান থেকে যেতে পারলেই সে বাঁচে। বাইরে বের হয়ে অরিত্রা স্ব স্থির নিঃশ্বাস ফেলল। এতো ক্ষন যে কি বলেছে সেটা হয়তো সে নিজেও জানে না। অতিরিক্ত নার্ভাসনেসে মুখ দিয়ে উল্টো পাল্টা কথা বের হয়েছে।

কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই মেহেরের রুমে ঢুকলো অরিত্রা। মেহের তখন ও অংক করছে। অরিত্রা চেয়ারে বসতেই মেহের অরিত্রার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলো। হাতে থাকা খাতাটা অরিত্রার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ” আপু সময় হয়ে এলো, বাকি গুলো কাল করে রাখব নে। আজ কয়েকটা দেখো। ”

অরিত্রা মেহেরের খাতাটা দেখে পড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। কিছু একটা ভেবে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে প্রাপ্তির নাম্বারে কল দিতেই দু বার রিং হতেই অপর পাশে থেকে প্রাপ্তি কল রিসিভ করলো,

” হে সখিনা বল ”

অরিত্রা ভ্রু কুঁচকে বলল, ” তুই কি আমাকে বললি? ”

” হুম, কি বলবি বল। রেডি হচ্ছি। ”

” তুই তোর স্কুটি টা নিয়ে মজুমদার ভিলায় আসতো। আমি অপেক্ষা করছি ”

” ঠিক আছে আসছি। ”
______________________

” আম্মা! ওওও আম্মু! কই তুমি? আম্মু ওও আম্মা ”
সায়রের এমন ষাঁড়ের মতো চিৎকারে বিরক্ত হলেন অরুনা। নাক দিয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলতেই পাশ থেকে তৃষা বেগম বলে উঠলো, ” যা রে মেঝো, তোর বাচ্চা কাঁদছে! গিয়ে ফিডার দিয়ে আস ” কথাটা বলেই ঠোঁট টিপে হাসলো তৃষা বেগম।

অরুনা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, ” তুমি মজা নিচ্ছো ভাবি! এই ছেলেকে নিয়ে আমি আর পারি না বাপু। দিন যাচ্ছে আর উনি কচি বাবু হচ্ছে। সারাক্ষণ শুধু ম্যা ম্যা করতেই থাকে। আমার হাড় মাংস জ্বালিয়ে খেলো। ”

বলেই শাড়ির আচলে হাত মুছতে মুছতে রান্না ঘরের থেকে বের হয়ে এলেন অরুনা। সায়র তখন মা মা করতে করতে রান্না ঘরের দিকে ই আসছিলো। অরুনা কে দেখে মায়ের দিকে এগিয়ে গেলো,

” ও মা বাইরে একটা গাড়ি ও নাই কেন? আমি কি দিয়ে যাবো ভার্সিটি? ”

” আমার মাথা দিয়ে যা ” দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বললেন অরুনা বেগম। সায়র ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, ” তোমার মাথা দিয়ে যেতে পারলে কি আমার আব্বাজান এতো এতো টাকা নষ্ট করে গাড়ি কিনতো নাকি! কি ভাগ্য দেখো আমার! বাড়ি তে তিন তিনটা গাড়ি থাকতেও আমার মতো অভাগা ভালো মানুষটার জন্য একটা গাড়ি ও নাই। একটা নিয়েছে আমার আপন মায়ের পেটের আপন ভাই, আরেকটা নিয়েছে আমার হিটলার বাপ আর আরেকটা নিয়ে গেছে আমার গুনধর চাচা জান। আমার মতো ইনোসেন্ট একটা বাচ্চার জন্য একটাও রেখে গেলো না। এই বৈষম্য জাতি কিছু তেই মনে রাখবে না থুক্কু মেনে নিবে না। ”

অরুনা বেগম চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে সায়রের দিকে। ছেলেটা এতো বেশি কথা বলে!

” মায়ের দৃষ্টি লক্ষ্য করে সায়র বলল, ” কি ভাবছো মা? ”

” ভাবছি তুই কবে থেকে ভালো মানুষ আর ইনোসেন্ট হলি? ”

” কেনো আমি তো সবসময় ই গুড বয় ”

” মজার কৌতুক বলতে পারিস ” বলেই অরুনা বেগম সায়রের দিকে তাকালো, মায়ের দৃষ্টি লক্ষ্য করে খুশিতে গদগদ হয়ে বলল, ” আমাকে কি আজ বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে আম্মাজান? ”

” গোবর গণেশ ”

বলেই তিনি আবারো রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালেন।

সায়র মুখ গোমড়া করে বাইরে বের হলো উদ্দেশ্য একটা গাড়ি নিয়ে সোজা ভার্সিটি।

” এই যে জামাই? গাড়ি পাচ্ছেন না বুঝি? আহারে!

পিছনে থেকে পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে পিছনে তাকালো সায়র। প্রাপ্তি মাথায় হেলমেট ঝুলিয়ে স্কুটিতে বসে আছে৷ সায়র ওকে পাত্তা না দিয়ে পুনরায় গাড়ি দেখতে মনোযোগ দিলো। প্রাপ্তি স্কুটি টা এগিয়ে সায়রের সামনে আসতেই সায়র আড় চোখে তার দিকে তাকালো,

” হেই জামাই! চলেন আপনাকে নিয়েই যাবো। উঠেন বাইকে ”

” নো থেঙ্কস ”

প্রাপ্তি চোখ রাঙিয়ে বলে উঠলো, ” আপনি উঠবেন নাকি কোলে করে উঠাবো? ”

” তুমি উঠাতে পারবে আমায়? দেখতে তো লিলিপুটের মতো গায়ে শক্তির ছিটাফোঁটা ও তো মনে হয় নেই ”

” বেশশি কথা বলেন। উঠতে বলছি উঠেন তো। না হয় আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। ”

প্রাপ্তির কথা শুনে সায়র বিড়বিড় করে বলল, ” তোমার চেয়ে খারাপ এমনিতেও কেউ নেই, ফাজিল মেয়ে ”

” কিছু বললেন? ”

সায়র মাথা দু দিকে নাড়িয়ে বলল,

” নাহ, আমি কি বলব! ” বলেই প্রাপ্তির পিছনে বসলো, সাথে সাথে প্রাপ্তি স্কুটি টান দিতেই অরিত্রা দৌড়ে এসে রাস্তায় দাঁড়ালো, ততক্ষণে প্রাপ্তি বহুদুর।

” এটা কি হলো! ”

ব্যাগ থেকে ফোন টা বায়োব্রেট মুডে বেজে উঠতেই অরিত্রা ফোন টা বের করে কানে ধরলো,

” দোস্ত মেসেজ টা চেক কর ”

বলেই প্রাপ্তি ফোন টা কেটে দিলো। অরিত্রা মেসেজ অপশনে গিয়ে দেখলো এই মাত্র প্রাপ্তি একটা মেসেজ পাঠিয়েছে। অরিত্রা তা অপেন করতেই দেখলো,

“আমার জানে জিগার, কলিজার দোস্ত। তুই তো জানিস সায়রের বাচ্চা রে পটাইতে কি পরিমাণ পরিশ্রম করছি! আজ একটা সুযোগ পেয়ে কিভাবে হাত ছাড়া করি তাই ওকে নিয়ে চলে আসলাম। বাট আই সয়্যার আগামী এক সপ্তাহ তোর ড্রাইভারি করুম আমি। ট্রাস্ট মি দোস্ত! ”

অরিত্রা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দাঁতে দাঁত চেপে আশেপাশে তাকালো গাড়ি পাওয়ার উদ্দেশ্যে।

______________

” এই মেয়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়? এটা তো ভার্সিটির রাস্তা না ”

প্রাপ্তি কোন কথা না বলে আনমনে চুপচাপ স্কুটি চালাচ্ছে। সায়র বেশ বিরক্তি হয়ে বলল, ” তোমাকে কিছু বলছি প্রাপ্তি ”

” হুম বলেন ”

” কোথায় যাচ্ছো? এটা তো ভার্সিটির রাস্তা না ”

” গেলেই তো দেখতে পাবেন, এখন চুপ থাকুন ”

প্রায় মিনিট পাঁচেক পর প্রাপ্তি একটা জায়গায় স্কুটি পার্ক করে বলল, ” নামেন ”

সায়র স্কুটি থেকে নেমে আশেপাশে তাকাতেই দেখলো তার সামনেই একটা সাইনবোর্ডে বড়ো বড়ো করে লেখা ” কাজি অফিস “।

সায়র চমকে উঠলো প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে বলল, এখানে কি করবে?”

” মানুষ যা করে তাই করবো। বিয়ে করব আপনাকে! ”

সায়র লাফ দিয়ে দুরে সরে বলল, ” মাথা ঠিক আছে তোমার? আমি এখনো বাচ্চা, কিসের বিয়ে করব, বললেই হলো নাকি? ”

প্রাপ্তি স্কুটির সাথে হেলান দিয়ে বলল, ” আমি বিয়ে করব মানে বিয়ে করব আর আপনাকেই করব ”

“হাহ্ মামার বাড়ির আবদার। বললাম আর হয়ে গেলো ”

” আমি কিছু জানি না। আমার বিয়ে করার ক্রেভিং উঠছে তাই আমি বিয়ে করব, ব্যস! ”

সায়র মুখ বাঁকিয়ে বলল, ” হ্যা সেটাই। এখন বিয়ে করার ক্রেভিং উঠছে তাই বিয়ে করবা তারপর কিছু দিন পরে বাচ্চার ক্রেভিং উঠবে পরে আমাকে এসে আবার পাগল বানাবা আমার বাচ্চা লাগবে, এখুনি লাগবে এখুনি লাগবে। আমি বাবা এসব পাগলের মেলায় নেই। ”

প্রাপ্তি ঠোঁট টিপে হাসলো, ছেলেটাকে জ্বালাতে এতো কেন ভালো লাগে! বেচারার টেনশনে হাত পা মনে হয় বরফ হয়ে গেছে, মনে করেছে সত্যি সত্যি ই প্রাপ্তি তাকে জোর করে বিয়ে করবে!

প্রাপ্তি হাসতে হাসতে স্কুটি তে উঠে বসলো। ঘাড় ঘুরিয়ে সায়রের দিকে তাকিয়ে বলল, ” নেন উঠেন। বিয়ে করতে হবে না আপনার। ভিতুর ডিম একটা ”

চলবে…

[ অনেক দেরি হবার জন্য দুঃখিত কিন্তু অনেক কষ্ট করে লিখেছি, একেতো আজকের লেখাটা কেমন খাপছাড়া এলেমেলো হয়েছে তার উপর নিজের মোবাইল এখন আপাতত মায়ের কাছে! ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here