দমকা_প্রেমের_গল্প #Ayrah_Rahman #পর্ব_২৭

0
232

#দমকা_প্রেমের_গল্প
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২৭
__________________

আকাশের রং টা ক্ষনে ক্ষনে পরিবর্তন হচ্ছে, এই গাঢ় নীল আবার সাদা মেঘে ঢেকে যাচ্ছে, মেঘ গুলো ঠিক তুলোর মতো আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। সবুজ ঘাসের উপর শুয়ে আকাশ দেখার আনন্দ সবাই পায় না। এটা ঠিক কতটা আনন্দ দেয় সেটা শুধু যে উপলব্ধি করতে পারে সেই বোঝে। অরিত্রা আর প্রাপ্তি পায় অনেক ক্ষন হলো সবুজ ঘাসের উপর শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখছে। নীরব একটা পরিবেশে ব্যঘাত ঘটাতে স্ব শব্দে একটা রিংটোন ই যথেষ্ট ছিলো। অরিত্রার ফোন বাজছে। অরিত্রা হাতড়ে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে লাউড স্পিকারে দিয়ে বলল,

” হ্যালো আম্মু বলো ”

” অরি কোথায় তুই? ”

” আম্মু আমি ভার্সিটি থেকে একটু দুরে আছি কিছু বলবা? ”

” অরি তোর মামা আসছে আমাদের নিয়ে যেতে, ভাইয়া বলছিলো কিছু দিন ওদের সাথে থাকতে তাই আর কি ”

অরিত্রা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল, ” তাই তুমি আর মানা করতে পারো নি তাই তো? এখন প্লিজ আমাকে বলো না আবার তোমাদের সাথে যেতে আমি আমার বাসায় ই থাকবো তোমার ইচ্ছে হলে যাও ”

” অরি, তোর মামা বারবার তোর কথা বলছে দেখ ভাইয়া কত আশা নিয়ে বসে আছে এখন আমি যদি মানা করি তবে ভাই কষ্ট পাবে আর তুই যদি না যাস আমি কষ্ট পাবো, তুই ই বল তোকে ছাড়া আমি কখনো কোথাও থেকেছি না তুই থেকেছিস! মা আমার মাত্র দুই তিন দিন তারপর চলে আসবো। ”

অরিত্রা কথার পৃষ্ঠে কথা খুঁজে পেলো না, ধীর কন্ঠে বলল, ” তুমি মামার সামনে যাও আমি কাজ শেষ করে চলে আসবো, আর এড্রেস টা মেসেজ করে জানিয়ে দিও। সাবধানে যেও ”

বলেই অরি ফোন কেটে দিলো। পাশ থেকে প্রাপ্তি বলে উঠলো, ” তোর মামা? আপন মামা? ”

” হুম ”

” মানে কি ভাই! এতোদিন পর তোর মামা কোথ থেকে উদয় হইলো ভাই? ”

অরিত্রা কপাল কুঁচকে আড় চোখে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে বলল, ” ফাস্ট অব অল আমি তোর ভাই না, সেকেন্ড হচ্ছে আমার মামা আগে থেকে ই ছিলো, ঠুস ঠাস আকাশ থেকে টপকাইছে না। এতোদিনে আমাগো খুঁজা পাইছে এটাই পার্থক্য। এহন আবার জিজ্ঞেস করিস না খুঁজে পেলো না কেন! আরেকদিন বলব এখন তাড়া আছে। আর তার আগে আমারে একটু ভার্সিটি নামিয়ে দিয়ে যাস ”

” হুম ঠিক আছে চল ”

প্রাপ্তি উঠে দাড়ালো। স্কুটিতে বসতেই অরিত্রা এসে পিছনে বসলো।

ভার্সিটির গেইটে নামিয়ে দিয়ে প্রাপ্তি চলে গেলো তার বাসায়। যদিও যেতে চায় নি অরিত্রা ই জোর করে পাঠিয়েছে। অরিত্রা চট জলদি লাইব্রেরি তে গেলো, ওই সময় প্রাপ্তির জন্য বইটা দেখতে পারলো না সে। তাই তো আবার আসা এখানে। লাইব্রেরির সবচেয়ে শেষের শেলফের সামনে গিয়ে দাড়ালো, হাত উচিয়ে বইটা বের করে কাঙ্ক্ষিত কালো রঙের চিঠিটা হাতে নিলো আর ব্যাগ থেকে নিজের হাতে লিখা চিঠি টা রেখে দিলো, অরি জানে না এই চিঠির মালিক কে? কি তার পরিচয়? দেখতে কেমন? নাম কি? কিছু ই জানা নেই তার। শুধু জানে এই চিঠির প্রতি যেমন তার তুখোড় অনুভূতি কাজ করে ঠিক তেমনি চিঠির মালিকের প্রতিও সে ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ছে, ভালোবেসে ফেলেছে সেই অচেনা অজানা চিঠির মালিককে।

অরিত্রা লাইব্রেরি তে বসেই চিঠির ভাঁজ খলল,

__________
প্রিয় কৃষ্ণ কুমারী,

কৃষ্ণ বতী সম্বোধন টা আমার বড্ড প্রিয় তার চেয়ে প্রিয় কৃষ্ণ কুমারী। এর মধ্যে যে মায়া আছে আমার মায়াবতী! যতই মায়া থেকে মুক্তি চাইছি! ততই জড়িয়ে পড়ছি তোমার মায়ায় আরো জোরালো,তীব্র ভাবে। মুক্তির পথ মিলছে না। দিনক্ষণ ঠিক করে ভাবি এবার মুক্তির ঘোষনা দিবো। জানি,দিনক্ষণ ঠিক করে শুধু জন্ম,মৃত্যু হয়। মুক্তি না।
তবে জরিয়ে যাওয়াই কি সমাধান? সেখানেও শংকা।
মুক্তি শব্দতে শ্বাসকষ্ট হয় তা বাড়ে শব্দের গতিতে।
উভয় সংকট।

সমাধান মিলছে না কোথাও।আমি আত্মকেন্দ্রিক মানুষ। শুধুমাত্র চিন্তা হয় মুক্তি নয় জরিয়ে যেতে চাই তীব্রভাবে। মুক্তি নয় তোমার ভালোবাসায় ডুবন্ত সাবমেরিন হয়ে পাড়ি দিতে পাঁচটি মহাসাগর। তোমার মনে তীব্র হোক আমার প্রতি অনুভূতি।

সব ছাপিয়ে নিজের জৌলুশতা হারাচ্ছি নব্বই দশকের সাদা দো’তলা বাড়ির মতো। বাড়ির সিমেন্ট, বালু খসে পড়ছে সামান্য বৃষ্টিতে,কড়া রোদে।
বাড়িতে মানুষের আনাগোনা কমছে।মাকড়সা বাসা বাঁধছে।গেটের গলায় টু-লেট ঝুলছে সতেরো মাস।
ইলেকট্রিসিটি বিল বকেয়া পড়েছে চার মাসের।
জীবন চলেছে ঐ নব্বই দশকের বাড়ির মতো কিংবা শেষ শতাব্দীর ধীর গতির ট্রেনের মতো।

বারেবারে আমি ক্লান্ত হচ্ছি ।প্রচন্ড ভেঙ্গে পড়ছি।যতবার ভেঙ্গে পড়ছি?
ততবারই চিন্তা করি ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে। মাঝেমধ্যে নিরুদ্দেশ হওয়ার চিন্তা এলেও ভীতু হওয়ার দরুণ সম্ভব হচ্ছে না। হিসাবও মিলছে না। ক্রমশ জটিল হচ্ছে।
খাতায় হাবিজাবি হিসাব কষছি। মাঝেমধ্যেই তোমাকে পড়ে শোনাচ্ছি কল্পনায় ।দিন দশেক বাদে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছি।বেখেয়াল হচ্ছি জীবন থেকে।মানুষ থেকে।

কিন্তু বিশ্বাস করো,
আমি তোমাকে ভালোবাসি।
এতো কিছুর পরেও তোমাকে ভালোবাসছি আমি কৃষ্ণ কুমারী ।
তুমি দেখো না।শোনো না।কিছুই করো না।
দিব্যি হেঁটে বেড়াও খোপা খুলে আমার ভেতরের শূন্য মরুভূমির এ-প্রান্ত থেকে সে-প্রান্তে…। দেখি না তোমায়! কল্পনায় জলরঙা ছবি আকি, মুখ দেখা যায় না।
চোখ বুঝলে তোমার ছবি ভেসে উঠে ।

তুমি কেমন আছো মায়াবতী ?
জানো,
আমি আগের থেকে আরও বেশি দীর্ঘ-নিঃসঙ্গতায় ভুগছি।
ক্রমশ ফুরিয়ে আসছি বেকারের শেষ সিগারেটের মতো। অ্যাশ-ট্রেতে ছাই হয়ে জমছি। মাঝেমধ্যেই দমকা হাওয়ায় উড়ছি।
নিঃশেষে বিভাজ্য হচ্ছি ক্লাস থ্রি’র বাচ্চার অঙ্কের মতো।
নামতার মতো দশের ঘরে গিয়ে থেমে যাচ্ছি।
বৃদ্ধাশ্রমের ছিয়াশি বছরের বৃদ্ধার মৃত্যুর মতো শোকহীনতা চলছে।
চলছে সবকিছুই।
চলছে পথও মাইলের পর মাইল।
অন্ধকার ঘনীভূত হয়েছে অনেক আগেই।আলো আর আমার পথের পার্থক্য কতদূরে কে জানে?
‘মায়াবতী’ !
“তুমি কি জানো আলো কতদূরে?
আমি বসে আছি এখনো…।”
আলো হয়ে ধরা দিবে কি আমার ঘুনে ধরা জীবনে???

ইতি
তোমার প্রিয় অপ্রিয়র মাঝে আটকে থাকা তোমার
শ্যামসুন্দর পুরুষ…

________________

অরিত্রা বুকে জরিয়ে ধরলো চিঠিটাকে। খানিকটা মুচরে গেলো কাগজটা তবুও শক্ত করে জরিয়ে ধরে ই থাকলো, ঠিক যেন ছেড়ে দিলে হারিয়ে যাবে। হঠাৎ মোবাইলে একসাথে তিনটা মেসেজের শব্দে ঘোর কাটে তার। চিঠিটা হাতে রেখেই ব্যাগ থেকে মোবাইল খুলল অরিত্রা। মেসেজ অপশন অন করে দেখে আননোন নাম্বার থেকে তিনটা মেসেজ।

” এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখলে তো কন্ট্রোললেস হয়ে পড়বো কৃষ্ণ বতী ”

” আমার ও ভীষণ ইচ্ছে হয় তোমাকে ঠিক এভাবেই জড়িয়ে ধরে হাজার বছর কাটিয়ে দেই কৃষ্ণ কুমারী! ”

” ভালোবাসি! ভীষণ ভালোবাসি আমি আমার মায়াবতী কে! এভাবে আর যেখানে সেখানে জড়িয়ে ধরে বসে থেকো না মায়াবতী! আমার হিংসে হয়, অঙ্গ জ্বলে উঠে আমার! তোমায় জড়িয়ে ধরার অধিকার শুধু আমার আর কারো না, হোক সে জড় কিংবা জীব! আমার কষ্ট হয় তো মায়াবতী! আর কখনো এমন করো না লক্ষীটি! ”

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় অরিত্রা। একবার চিঠির দিকে তাকায় তো আরেকবার মোবাইলের স্ক্রিনে। কেমন জেনো এলোমেলো লাগছে সব। তবে এতটুকু মাথায় ঢুকেছে এই মেসেজ টা চিঠির মালিকের দেওয়া তবে কথা হচ্ছে এই লো ক তাকে চেনে? নাম্বার কোথায় পেলো সে?

অরিত্রা চুপচাপ থম মেরে বসে থাকলো কিছু ক্ষন। ছেলেটা তাকে চেনে! কথাটা যেনো তার ঠিক ঠাক হজম হচ্ছে না।

তখনই কল এলো তার ফোনে, স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে তানু লেখা তারমানে তানহা কল পিক করে কানে দিলো,

” কিরে কামের বেটি সখিনা কই তুই? ”

অরিত্রা টেবিলে মাথা হেলিয়ে বলল, ” লাইব্রেরি তে ”

” তুই লাইব্রেরি তে কি করস? ”

” কাবাডি খেলি, খেলবি? ” অরিত্রার স্বাভাবিক কন্ঠ, তানহা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,

” যার জন্য কল দিলাম, দোস্ত জানোস! আমার ভাই মেয়ে দেখতে যেতে রাজি হইছে, মেয়ে কে জানি না তবে ভাইয়া যে রাজি হইছে এই ঢের ”

” মনে হইতাছে তোর ভাইয়ের বিয়া লাগছে বেদ্দপ বেডি, যেমনে লাফালাফি করতাসস মনে হইতাছে তোর ভাইয়ের বিয়া শেষ! রাখ বেদ্দপ!”

বলেই ফোন টা কেটে দিলো। ওদিকে তানহা অরিত্রার রাগের আগামাথা কিছু ই বুঝতে পারলো না।

চলবে,,,

[ সবাই বলেন অরিত্রার কাহিনি আর চিঠি কম দেই তাই আজকে বড় একটা চিঠি দিলাম, কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here