অতুলনীয়া #পর্বঃ১১ #লেখিকাঃদিশা_মনি

0
100

#অতুলনীয়া
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফাতেমা এডভোকেট প্রত্যুষ চৌধুরীর সহিত তার কেবিনে এসে আসন গ্রহণ করেছে। প্রত্যুষ চৌধুরী ফাতেমাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,
‘বলুন আপনি কি খাবেন চা না কফি?’

ফাতেমা বলে,
‘আমার কিছু লাগবে না। আমার শুধু আপনার সাথে কিছু জরুরি কথা বলার ছিল।’

‘জ্বি, বলুন।’

ফাতেমা কিছুটা সময় নিয়ে বলে,
‘শুনলাম আপনি হিট এন্ড রান কেইসটা লড়ছেন?’

‘জ্বি, কিন্তু আপনি..’

‘আমি এই কেসে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী মিস্টার সোহেল হোসেনের প্রাক্তন স্ত্রী।’

প্রত্যুষ চৌধুরী কিছুক্ষণ নীরব থেকে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করবেন। অতঃপর দ্রুত শ্বাস ফেলে বলে ওঠেন,
‘জ্বি, বলুন আপনি কি বলতে চান।’

‘আমি এই কেইসের ব্যাপারে কিছু ইনফোরমেশন কালেক্ট করেছি। যতদূর বুঝলাম আপনার কাছে যথেষ্ট এভিডেন্স আছে এই কেইসটা জেতার জন্য। আমিও চাই আপনি এই কেইসটা জিতুন। যাতে করে একজন অসহায় ব্যক্তি ন্যায়বিচার পায়। তবে আমি আজ এখানে এসেছি একটা বিশেষ কারণে।’

‘কি কারণ?’

‘আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী লইয়্যার সোহেল হোসেনের ব্যাপারে আমার কাছে আগেও অনেক অভিযোগ আসত যে তিনি টাকার বিনিময়ে অনেক কেইস লড়েন আর টাকা দিয়ে অনেক মিথ্যা প্রমাণও যোগাড় করেন নিজের ক্লাইল্টের জন্য। যা একটা বড় অন্যায়।’

‘আমি বুঝতে পারছি ব্যাপারটা। তো আপনি কি চান?’

‘আমি চাই আপনি কোর্টে এই বিষয়টা তুলে ধরুন যাতে করে মিস্টার সোহেল উপযুক্ত শাস্তি পায়। এরকম একজন মানুষ তো শাস্তি ডিজার্ভ করে।’

প্রত্যুষ চৌধুরী বিচক্ষণ মানুষ। তাই তিনি বলেন,
‘আমি বুঝতে পারছি ব্যাপারটা। তবে আইন প্রমাণে বিশ্বাসী কারো মুখের কথায় না। আমি কোন প্রমাণ ছাড়া তো কোর্টে ওনার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারব না।’

ফাতেমা বলে,
‘প্রমাণ আছে আমার কাছে।’

এই বলে সে একটা সিডি বাড়িয়ে দেয় প্রত্যুষ চৌধুরীর দিকে। রাব্বির সাহায্যে অনেক কষ্টে সে এটা জোগাড় করেছে। রাব্বি সোহেলের সাথে তার ক্লাইন্টের কথা লুকিয়ে রেকর্ড করেছে। একই লয়্যার ফার্মে কাজ করায় এটা করতে তার কোন অসুবিধা হয় নি। ফাতেমা এই প্রমাণটা প্রত্যুষ চৌধুরীর হাতে তুলে দিয়ে বলে,
‘এখানে মিস্টার সোহেলের অপকর্মের সকল প্রমাণ আছে। আমি আপনার উপর অনেক বিশ্বাস করে আপনার হাতে এই সব প্রমাণ তুলে দিলাম। আশা করি, ও তার কাজের উপযুক্ত শাস্তি পাবে।’

প্রত্যুষ চৌধুরী আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে,
‘আমি আমার সর্বোচ্চ টুকু দিয়ে চেষ্টা করব যেন উনি নিজের অপরাধের শাস্তি চান।’

‘ধন্যবাদ মিস্টার চৌধুরী। আমি আপনার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আমি তাহলে এখন উঠি।’

‘জ্বি, আল্লাহ হাফেজ।’

‘আল্লাহ হাফেজ।’

২১.
ফাতেমা খুশি মনে বাসায় ফিরল। শ্রেয়া ফাতেমার খুশি অবলোকন করতে পারল। ফাতেমার কাছে এসে বলল,
‘তোকে খুব খুশি খুশি লাগছে? ব্যাপারটা কি?’

ফাতেমা মৃদু হেসে বলে,
‘আমার প্রতি অন্যায় করে দুজন ভেবেছিল খুব সুখে থাকবে। তাদের একজনের ব্যবস্থা অলরেডি করে এসেছি। এখন বাকি রইল আরেকজন। তার ব্যবস্থাও খুব শীঘ্রই করব ইনশাআল্লাহ।’

শ্রেয়া বলল,
‘কি করেছিস তুই?’

ফাতেমা শ্রেয়াকে সব ঘটনা খুলে বলে৷ সব শুনে শ্রেয়া তো ভীষণ খুশি হয়ে যায়। বলে,
‘বেশ হয়েছে। আমার তো খুব ইচ্ছা ছিল ঐ সোহেল আর নয়নাকে নিজের চোখের সামনে তড়পাতে দেখব।’

ফাতেমা বলে,
‘কাল আমার সাথে কোর্টে চল। আমিও নিজের চোখে ওদের ধ্বংসের আরম্ভলগ্ন দেখতে চাই। কথা দিয়েছিলাম যে, ওদের সুখী থাকতে দেব না। এত তাড়াতাড়ি সুযোগ পেয়ে যাব ভাবিনি।’

‘এটা তো কেবল শুরু মাত্র। দেখবি ওদের কষ্টের কোন শেষ থাকবে না। কতটা জালিম হলে একটা মায়ের বুক থেকে তার সন্তানকে কেড়ে নিতে চায়। উপরে আল্লাহ তায়ালা আছেন। তিনি সব দেখছেন। তিনি নিশ্চয়ই ঐ জালিমদের শাস্তি দেবেন। আমি তো আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ ওদের এমন শাস্তি দিক যে ওদের রুহ কেপে উঠুক।’

২২.
ফাতেমা ও শ্রেয়া আজ কোর্টে চলে এসেছে। উদ্দ্যেশ্য নিজের চোখের সামনে সোহেলের পতন দেখবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। জজ সাহেব প্রথমে সোহেলকে বলার সুযোগ দেয়। আর সোহেলও নিজের মন মতো গল্প বানাতে শুরু করে দেয়। সে বলে,
‘আমার মক্কেল সম্পূর্ণ নির্দোষ হুজুর। এই হিট এন্ড রান কেইসের সাথে তো ওনার কোন লেনাদেনাই নেই। ইন ফ্যাক্ট, ঘটনার দিন তো উনি দেশেই ছিলেন না। আমার কাছে তার যথেষ্ট প্রমাণ আছে। সব কিছুর পেছনে আছেন ওনাদের ড্রাইভার। আর আমার মক্কেলকে শুধু শুধু ফাসানো হচ্ছে।’

এসব শুনে শ্রেয়া ফাতেমা বলে,
‘দেখছিস কিরকম নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছে। গোটা দেশ ভাইরাল সিসিটিভি ফুটেজটা দেখেছে। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে গাড়ি ঐ লোকটাই চালাচ্ছিল অথচ এই সোহেল কিভাবে টাকা খেয়ে সত্যটা উলটে দিতে চাইছে।’

ফাতেমা বলে,
‘তুই শুধু দেখে যা। মিস্টার প্রত্যুষ চৌধুরী যখন সব সত্য সবার সামনে তুলে ধরবে তখন দেখিস ঐ সোহেলের অবস্থা কি হয়।’

এরইমধ্যে জজ সাহেব প্রত্যুষ চৌধুরীকেও বাদীপক্ষের হয়ে বলার সুযোগ দেন। তখন তিনি বলা শুরু করেন,
‘আমার বিপক্ষের উকিল এতক্ষণ যা বললেন তার কোনটাই সত্যি নয়, ঘটনার দিন ওনার মক্কেল এই দেশেই ছিলেন, শুধু তাই নয় গাড়িটাও উনি চালাচ্ছিলেন। উনি যে দেশে ছিলেন আর গাড়িটাও উনি চালাচ্ছিলেন সেই সব প্রমাণ আমার কাছে আসে।’

এই বলে তিনি সেই ভাইরাল সিসিটিভি ভুটেজ জজ সাহেবকে দেখান। পাশাপাশি তিনি এটার প্রমাণও দেন যে আসামীপক্ষ প্রমাণ হিসেবে যে পাসপোর্ট আর বিমানের টিকেট দেখাচ্ছেন সেটাও ভুয়া। সব দেখে জজ সাহেব সত্যিটা বুঝতে পারেন। তিনি বলেন,
‘এসব কিছু থেকে প্রমাণ হয়ে যায় যে, মিস্টার আব্দুল মান্নানই আসল অপরাধী। তিনি এই হিট এন্ড রান কেইসের আসল অপরাধী। আদালত ওনাকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করছে।’

প্রত্যুষ চৌধুরী তখনই বলে ওঠেন,
‘শুধু এটাই না, মিস্টার সোহেল হোসেনের বিরুদ্ধেও আমার কাছে প্রমাণ আছে। যেখান থেকে আপনি স্পষ্ট বুঝতে পারবেন যে উনি কিভাবে টাকার বিনিময়ে মিথ্যা প্রমাণ জোগাড় করেন।’

বলেই প্রত্যুষ চৌধুরী জজ সাহেবকে ফাতেমার দেওয়া সিডিটা দেন। যা চালু হতেই সোহেলের সব অপকর্ম সবার সামনে আসে। সোহেল ভয়ে ঘামতে থাকে। সোহেলের চুপসে যাওয়া মুখটা দেখে ফাতেমার মনে ভীষণ শান্তি অনুভূত হয়৷ নিজের মুজরিমকে কোন না কোন ভাবে তো শাস্তি পারছে সে।

জজ সাহেব সবটা দেখে সোহেলকে তিরস্কার করে বলেন,
‘আপনি একজন উকিল, আপনার কাজ আইনের রক্ষা করা, মানুষকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দেওয়া। তা না করে আপনি আইনের অপব্যবহার করছেন। লজ্জা হওয়া উচিৎ আপনার। আপনার মতো মানুষের উকিল হওয়ার কোন অধিকার নেই। কোর্ট আপনার উকিলের লাইসেন্স বাতিল করছে। শুধু তাই নয় দশ লাখ টাকা জরিমানাসহ আপনার দুই বছরের জন্য সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করছে।’

‘না…’

সোহেল অনেক অনুনয় বিনয় করে কিন্তু তা কোন কাজে আসে না। জজ সাহেব নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। ফাতেমা খুশিতে শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে। শ্রেয়া বলে,
‘আমি ভীষণ খুশি ফাতেমা। তুমি পেরেছ!’

ফাতেমা উঠে দাঁড়ায়। সোহেলের সামনে গিয়ে বলে,
‘বলেছিলাম না, আমি তোমায় শাস্তি দেব। আজ আমি আমার কথা রাখতে পেরেছি। মিস্টার প্রত্যুষ চৌধুরীকে তোমার সব অপকর্মের প্রমাণ আমি জোগাড় করে দিয়েছি।’

‘তুমি..তুমি এমনটা করলে ফাতেমা। আমি তোমার…’

‘কেউ না তুমি আমার। আর যদি হতেও তবুও আমি তোমার অপরাধের শাস্তি দিতাম। এখন যাও জেলের ভাত খাও। নিজের সব অপকর্মের ফল ভোগ করো।’

ততক্ষণে পুলিশ এসে সোহেলকে নিয়ে যায়৷ ফাতেমার আজ ভীষণ খুশির দিন। এত খুশির দিন তার জীবনে আগে কখনো আসেই নি। সে বারবার আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। অতঃপর প্রত্যুষ চৌধুরীর সামনে গিয়ে বলে,
‘আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি না থাকলে আমি সোহেলকে শাস্তি দিতে পারতাম না।’

‘ধন্যবাদের কোন প্রয়োজন নেই এটা আমার ডিউটি ছিল।’

শ্রেয়া ভীষণ ইম্প্রেসড হয় প্রত্যুষের উপর। মনে মনে বলে,
‘আজকালের যুগেও এত সৎ মানুষ আছেন!’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨
(সোহেলের শাস্তি দেখে আপনাদের কেমন লাগল কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।)

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here